বিসিএস পরীক্ষা
নিয়ে যে জট লেগেছে তা যেন কিছুতেই ছাড়ানো যাচ্ছে না। ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক
কারচুপি হয়েছে বলে প্রমাণিত হওয়ায় প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে আবার মৌখিক পরীক্ষা
নেয়া হয়েছে প্রায় বছর খানেক ধরে। এর মধ্যে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদন পত্র জমা
নেয়া শেষ হয়েছে - তাও চার মাস হয়ে গেছে। ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্টের ব্যাপারে
মামলা চলছিলো, তাই রেজাল্ট দেয়া যাচ্ছিলো না বলা হচ্ছিলো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের
পক্ষ থেকে। সে মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে তাও প্রায় দু’মাস আগে। এখনো ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা
হচ্ছে না। ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার কার্যক্রমও শুরু করা হচ্ছে না। দেশের লক্ষাধিক
উচ্চশিক্ষিত কর্মপ্রার্থী অপেক্ষা করে আছেন - কখন বিসিএস পরীক্ষা হবে - কখন
কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিসিএস পরীক্ষা
পদ্ধতির সংস্কার করে কিছুটা আধুনিক করা হয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা রয়েই
যাচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষার প্রধান দুর্বলতা এর মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে মৌখিক
পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে অনেক দিন আগেই। ২৭তম বিসিএস
পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এই মৌখিক
পরীক্ষাও যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না তার প্রমাণ পাওয়া যাবে ফলাফল প্রকাশিত
হওয়ার পর। শুধুমাত্র ভাইভা-বোর্ডের সদস্য পরিবর্তন করলেই কি সব ঠিক হয়ে গেলো?
বিসিএস পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা এখনো পাস-ফেল নির্ধারণী পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষার
পাস-মার্ক না পেলে লিখিত পরীক্ষায় ফুল-মার্ক পেলেও প্রার্থী ফেল করবে। সে ক্ষেত্রে
মৌখিক পরীক্ষার মোট নাম্বার কত করা হলো তাতে তেমন কিছু যায় আসে না। একজন
পরীক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানো খুবই সহজ একটি কাজ, তেমনি সহজ পাস করানো।
লিখিত বা মনস্তাত্ত্বিক বা শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষার রেকর্ড থাকে। কিন্তু মৌখিক
পরীক্ষায় শুধু প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ছাড়া আর কোন রেকর্ড থাকে না। একজন
পরীক্ষার্থীকে কী কী প্রশ্ন করা হলো - পরীক্ষার্থী কী উত্তর দিলেন - কোন কিছুরই
কোন রেকর্ড থাকে না। সেক্ষেত্রে সকল পরীক্ষার্থীর প্রতি সমান আচরণ করার ব্যাপারটি
রক্ষিত হয় না। সহকারী সার্জন হবার জন্য যে ডাক্তার পরীক্ষা দিতে এসেছেন - তাঁকে ফরাসী
প্রেসিডেন্ট সারকোজির বান্ধবীর নাম না জানার অপরাধেও ফেল করানো সম্ভব। কারণ
অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর পক্ষে প্রমাণ করার কোন উপায় নেই যে তাঁকে অপ্রাসঙ্গিক
প্রশ্ন করা হয়েছে। আবার সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দেয়ার পরও যদি অন্য কোন কারণে
(ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক আদর্শ ইত্যাদি) প্রার্থীকে ফেল করানো হয় -
তাহলেও কারো কিছু বলার থাকে না। কারণ পরীক্ষার্থীর প্রশ্নোত্তরের কোন রেকর্ড থাকে
না।
বিসিএস মৌখিক
পরীক্ষাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা না করে বার বার পরীক্ষা নিয়ে আসলে যা
করা হচ্ছে তা হলো বই-এর টেক্সট ঠিক রেখে কভার বদলানোর মত। বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার
প্রশ্নোত্তর রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা করা যায় খুব সহজেই। প্রতিজন পরীক্ষার্থীর জন্য
যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় বরাদ্ধ করা হয় এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন-কাঠামো থাকে -
তাহলে পরীক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষকদের কথোপকথন টেপ করে রাখলেই হলো। আই-ই-এল-টি-এস
পরীক্ষার স্পিকিং অংশ যেভাবে রেকর্ড করা হয় - সেভাবে রেকর্ড করার জন্য কোন উন্নত
প্রযুক্তিরও দরকার নেই। যে কোন টেপ-রেকর্ডার, অডিও টেপ আর ব্যাটারি হলেই চলে। ২৮তম
বিসিএস পরীক্ষার ফরম এর মূল্য বাবদ দুশ’ টাকা এবং ফরম জমা দেয়ার সময় পাঁচশ’ টাকা - মোট
সাতশ’টাকা করে নেয়া হয়েছে প্রতিজন
পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে। এর খুব সামান্য অংশ খরচ করলেই মৌখিক পরীক্ষার কথোপকথন
রেকর্ড করা সম্ভব।
২২/১/০৮ তারিখে
প্রকাশিত বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির ১৯ নম্বর ধারায় প্রার্থীদের স্বাস্থ্যগত
যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হচ্ছে কোন পুরুষ প্রার্থীর উচ্চতা পাঁচ ফুটের কম এবং কোন
মহিলা প্রার্থীর উচ্চতা চার ফুট দশ ইঞ্চির কম হলে “তাঁরা কোন ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য শারীরিকভাবে যোগ্য
বলে বিবেচিত হবেন না”। এই ধারাটি
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। তাছাড়া
প্রযুক্তিগত উন্নতির এই যুগে শারীরিক উচ্চতা কোন কাজের জন্যই একটি পূর্বশর্ত হতে
পারে না। একজন ছেলে বা মেয়ে যে কোন উচ্চতা নিয়েই যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের
উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে আসতে পারে - তাহলে সরকারি কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবার
তো কথা নয়। এখন অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার মত দেশে সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্যও
শারীরিক উচ্চতার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় শারীরিক উচ্চতার
শর্তটি তুলে নেয়া উচিত।
2008
Melbourne
No comments:
Post a Comment