মানুষের
জীবনে যতগুলো গোলমেলে ব্যাপার আছে- তাদের
মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলমাল যেটা করে তার নাম প্রেম। গোলমালের প্রধান কারণ হলো এর
দুর্বোধ্যতা। ঠিকমতো বুঝতে না পারলেই ভুল
বোঝাবুঝি, তারপর গোলমাল। প্রেম অনেকটা
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতো। ফাইনম্যানকে নকল করে বলা যায়, কেউ
যদি খুব বড়াই করে বলেন যে খুব বুঝতে পেরেছেন, তাহলে
বুঝতে হবে তিনি আসলে কিছুই বুঝতে পারেননি। কিন্তু
মজার ব্যাপার হলো - বুঝি বা না বুঝি-
প্রেম ছাড়া আমাদের চলে না। প্রেমে পড়বার জন্য আমরা পাগল
হই, প্রেমে পড়বার পর আরো পাগল হয়ে যাই। তখন
প্রচন্ড মুক্তিকামীও কেমন যেন বন্ধন-পিয়াসী
হয়ে ওঠেন।
স্বাধীনতা
ও মুক্তি সমার্থক। কিন্তু প্রেম আর মুক্তি - পরস্পর
১৮০ ডিগ্রি কোণ। এই যে সারা পৃথিবীব্যাপী মুক্তির আন্দোলন চলছে
- বুদ্ধির মুক্তি, চিন্তার
মুক্তি, জড়তা থেকে মুক্তি,
শোষণ থেকে মুক্তি - এরকম
সমস্ত মুক্তির আন্দোলনের মূল বিষয় যেখানে মুক্তি -সেখানে
এই মুক্তিকামী মানুষেরাই যখন প্রেমে পড়েন বা পড়ার জন্য ছটফট করতে থাকেন -
তখন তাঁদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে -
মুক্তি নয়,
বন্ধন, প্রেমবন্ধন। প্রেমিক-প্রেমিকা
তাঁদের নিজ নিজ ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার জন্য
কী না করছে দুনিয়াভর। মানসিক বন্ধন তো আছেই- শারীরিক বন্ধনও কত সহজেই হাসি হাসি মুখ করে বয়ে
বেড়ায় সবাই। আঙুলে, হাতে, কব্জিতে,
বাহুতে, গলায়,
পায়ে - ভালোবাসার
শিকল পরানোর জন্য তো বটেই, পরার
জন্যও মানুষের সে কি আকুলতা।
প্রেমের
ঘূর্ণিতে মানুষের অবস্থা যে কী হয় - রবীন্দ্রনাথের
লাইন থেকে কিছুটা বোঝা যায়:
"আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের
আশায়।
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথে যে জন ভাসায়।।
যে জন দেয় না দেখা, যায়
যে দেখে - ভালোবাসে আড়াল থেকে-
আমার মন মজেছে সেই গভীরের গোপন ভালোবাসায়।।"
গোপন
ভালোবাসা যে বেশিদিন গোপন থাকে না তা রবিবাবুও জানতেন। "গোপন
কথাটি রবে না গোপনে" তিনিই তো বলেছেন। গোপন প্রেমের
আবেশের আবেদন গত শতাব্দীতে যতটা ছিল - এই
টুইটার ফেসবুকের যুগে তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। তিলকে তাল করে প্রকাশ করার যুগ
এটা। নইলে স্ট্যাটাস ছ্যারাবেরা হয়ে যায়। সেই আমাদের প্রাচীন যুগেও গাছের গায়ে,
স্কুল-কলেজের
দেয়ালে, ক্লাসরুমের বেঞ্চে,
ব্ল্যাকবোর্ডের কোণে সুখেন + লাকি,
উর্মি + সাইফুল
ইত্যাদি লেখা দেখা যেতো। এখনো সেই পাবলিসিটি স্টাইলের পুরোটাই বিলুপ্ত হয়ে যায়নি।
কেবল নামগুলো হয়তো একটু আধুনিক হয়েছে।
ভালোবাসা
প্রকাশ করার ব্যাপারটা সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকমের
হয়। শাহজাহানের সামর্থ্য ছিল বলে ভালোবাসা দেখানোর জন্য প্রকট একটা তাজমহল বানিয়ে ফেলেছিলেন।
কিন্তু তাজমহলের আবেদনও এখন বেশ সেকেলে হয়ে গেছে। তাজমহলের সামনে গিয়ে এখনো হাজার
হাজার প্রেমিক-প্রেমিকা ছবি তোলেন ঠিকই,
কিন্তু তাতে তেমন একটা আধুনিকতার চার্ম থাকে না।
প্রেমের জগতে একেবারে একবিংশ শতাব্দীর কনসেপ্ট হলো লাভ লক -
প্রেমের তালা। আক্ষরিক অর্থেই একটা ধাতব তালায় প্রেমিক-প্রেমিকা
তাদের নাম বা প্রেমের সংলাপ লিখে কোন ব্রিজের রেলিং-এ
তালাটি লাগিয়ে দিয়ে চাবিগুলো নদীতে ফেলে দেয়। তারা বিশ্বাস করে তালাটি
যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিন তাদের দু'জনের
হৃদয়ের বন্ধনও খুলবে না।
প্রেমের তালা এরকম প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেয়ার
ধারণাটা ঠিক কার মাথা থেকে এসেছিল বা ঠিক কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা
সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। গুগলবাবার দেয়া তথ্য অনুযায়ী এটা ২০০০ সালের
পরবর্তী কোন এক সময়ে চীনের মাউন্ট হুয়াং থেকে শুরু হয়েছে। চীনের আনাচে কানাচে
প্রাচীন সংস্কারের ছড়াছড়ি।
ঘটনাক্রমে ২০০৭ সালে চীনের মাউন্ট হুয়াং বা
ইয়েলো মাউন্টেনে যাবার সুযোগ হয়েছিল। হুয়াংসান শহরে একটা সম্মেলনে গিয়েছিলাম।
সেখান থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ইয়েলো মাউন্টেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার
জন্য ভ্রমণপিয়াসীরা যেমন আসেন, তার চেয়েও অনেক বেশি চাইনিজ আসেন পাহাড়ের কাছে মানত
করার জন্য। চায়নিজ সহযাত্রীদের কাছ থেকে শুনেছি এই পাহাড়ে নাকি অমরত্বের ওষুধ
পাওয়া যায়। চায়নিজরা বিশ্বাস করে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে চীনের 'হলুদ সম্রাট'
হুয়াংডি এই পাহাড়ে গিয়েছিলেন অমরত্বের ওষুধ আবিষ্কার করার জন্য। সেই সময় এই
পাহাড়ের নাম ছিল - মাউন্ট ই। সম্রাট হুয়াংডি অমরত্বের ওষুধ পেয়েছিলেন কিনা জানি
না, তবে চায়নিজরা তাঁকে অমর করে রেখেছেন এই পাহাড়ে। ৭৪৭ সালে তাঁর নামানুসারে এই
পাহাড়ের নাম রাখা হয় হুয়াং। শরীরের অমরতা লাভ দুরুহ হলেও প্রেমের অমরতা লাভের জন্য
পাহাড়ে ওঠার সিঁড়ির রেলিং-এর সাথে অনেকেই প্রেমের তালা ঝুলানো শুরু করেন এখানে।
সেই ২০০৭ সালে লোহার শিকলে ঝুলন্ত বেশ কিছু তালা দেখেছিলাম। আট বছরে সেই তালার
সংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েক হাজার গুণ। এখন শুধু চায়নিজ নয়, সারা পৃথিবী থেকে মানুষ
ইয়েলো মাউন্টেনে গিয়ে প্রেমের তালা ঝুলিয়ে চোখ বন্ধ করে চাবি ছুঁড়ে ফেলে দেয়
পাহাড়ের ঢালুর গাছপালা আর মেঘের ঝোঁপে।
তারপর প্রেমের তালার ব্যাপক বিস্তার দেখেছি
দক্ষিণ কোরিয়ায়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সওলে গিয়েছিলাম প্রোটন রেডিওথেরাপি
সংক্রান্ত একটা গবেষণার কাজে। দু'দিন কাজ করার পর কোরিয়ান সহযোগী ঘোষণা দিলো
পরবর্তী দু'দিন হাসপাতালে আসতে পারবে না সে। পরের দু'দিন ছিল শনিবার ও রবিবার।
কিন্তু সেজন্যে সে কাজে আসবে না তা নয়। গবেষণায় মাঝে মাঝে কোন উইকএন্ড থাকে না। সে
আসবে না কারণ সে ভ্যালেন্টাইন্স ডে এবং পোস্ট-ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করবে তার
ফিয়াঁসের সাথে। আমিও একটা সুযোগ পেলাম নিজের মতো করে সওল শহরটা ঘুরে দেখার। কিন্তু
ফেব্রুয়ারিতে মাইনাস ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সওল শহরে হেঁটে বেড়ানো মোটেও
উপভোগ্য নয় আমার জন্য। ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র পরদিন নামসান টাওয়ারে গিয়ে দেখি
ভ্যালেন্টাইনদের মেলা বসে গেছে। ঋণাত্মক তাপমাত্রার পড়ন্ত বিকেলেও সবাই পরস্পরের প্রেমের
উত্তাপে উষ্ণ। টাওয়ারের চত্বরে সারি সারি প্রেমের তালার ধাতব গাছ। শত শত প্রেমের তালা
ঝুলছে সেসব গাছে। আমার কোরিয়ান সহযোগীকে দেখলাম তাঁর ফিয়াঁসেকে আক্ষরিক অর্থেই
কাঁধে তুলে নিয়েছে, আর কোরিয়ান তরুণী প্রাণপন চেষ্টায় তালা বাঁধছে প্রেমের গাছের
মগডালে।
চীন ও কোরিয়ার পাশাপাশি তাইওয়ানেও প্রেমের তালার
বিস্তার ঘটলো অতিদ্রুত। কিন্তু তাইওয়ানিজরা নিজেদের সবসময় চাইনিজদের চেয়ে আলাদা
মনে করে, কিছুটা উন্নত বলেও মনে করে। তাই প্রেমের তালার কুসংস্কারকে তারা কিছুটা
বৈজ্ঞানিক যুক্তির মোড়কে পরিবেশন করলো। ফেংগুয়ান ডিস্ট্রিক্টের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনস্টেশনের
উপরের ফুটব্রিজে প্রেমের তালা ঝুলানো শুরু করার পর তাইওয়ানিজরা প্রচার করতে শুরু
করলো যে তাদের তালা শুধু 'লাভ লক' নয়, 'উইশ
লক' - ইচ্ছাপূরণের তালা। কীভাবে ইচ্ছাপূরণ হয়? ট্রেন চলার সময় নাকি ম্যাগনেটিক
ফিল্ড তৈরি হয়। সেখান থেকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি তৈরি হয়ে তালার ভেতর ঢুকে
ইচ্ছাপূরণ করে দেয়। প্রেম-পদার্থবিজ্ঞানের এই বিকট আবিষ্কার লইয়া আমরা কী করিব??
তাইওয়ানে উইশ লকের সংখ্যা বাড়ছে তো বাড়ছেই।
মালয়েশিয়াও থেমে নেই। পেনাং হিল কমপ্লেক্সে
প্রেম চত্বর বানিয়ে প্রেমের তালা ঝুলানোর সুবন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে। গত বছর
এপ্রিল মাসে গিয়ে দেখে এসেছি প্রেমের তালা ঝুলতে শুরু করেছে। এই এক বছরে নিশ্চয়
কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেছে তালার সংখ্যা।
এশিয়ার কয়েকটি দেশে প্রেমের তালা দেখে আমার
ধারণা হয়েছিল - এটা মনে হয় শুধুমাত্র এশিয়ান কনসেপ্ট। কিন্তু এশিয়ায় শুরু হলেও
২০০৬-৭ সালের দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও ঝুলে পড়তে শুরু করে প্রেমের তালা।
ইতালিতে প্রেমের তালার ধারণা প্রবর্তনের কৃতিত্ব দেয়া হয় ইতালিয়ান সাহিত্যিক
ফেডেরিকো ম'চাকে (Federico
Moccia)। ২০০৬ সালে ফেডেরিকো ম'চার উপন্যাস 'I Want You' প্রকাশিত হবার
পর ইতালিয়ান প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রেমের তালার
হদিশ পায়।
অনেকটা আমাদের হুমায়ূন
আহমেদের উপন্যাস পড়ে জোছনা দেখা বৃষ্টিতে ভেজার মতো। উপন্যাস প্রকাশিত হবার এক
বছরের মধ্যেই সিনেমা তৈরি হয় উপন্যাসটার গল্প নিয়ে। সিনেমার নায়কের মতো ল্যাম্পপোস্টে
প্রেমের তালা ঝুলানো শুরু করলো রোমের তরুণ-তরুণীরা। উত্তর রোমের টাইবার নদীর ব্রিজের
উপর প্রেমের তালা ঝুলতে শুরু করলো - একটা দুটো করতে করতে হাজার হাজার। প্রেমের
তালা ঝুলাতে ঝুলাতে ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে ফেলেছে অনেকবার। দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেক।
কিন্তু প্রেম কি কেয়ার করে ওসব?
এদিকে সার্বিয়ার মানুষ দাবি করে প্রেমের তালার
সূত্রপাত হয়েছে তাদের দেশে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। সার্বিয়ার ভিয়স্কা বানিয়া (Vrnjacka Banja) শহর পর্যটকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়
শহর। গরম পানির ঝর্ণাধারায় স্নান করতে আসে এখানে অনেক দেশের মানুষ। প্রেমের তালার
ব্যাপারে এই শহরে যে গল্প চালু আছে তা এরকম:
তরুণী স্কুল শিক্ষিকা নাদা প্রেমে পড়েছে সার্বিয়ান আর্মি অফিসার
রেলিয়ার। ভিয়স্কা বানিয়ার একটি ছোট সেতুর উপর নির্জনে প্রেম করতো নাদা ও রেলিয়া।
না, তখন প্রেমের তালার কোন ব্যাপার ছিল না। একদিন রেলিয়া গ্রিসে চলে যায় যুদ্ধ
করার জন্য। কিন্তু প্রেমিকের মন থেমে থাকে না। রেলিয়া নাদাকে ভুলে গিয়ে দ্রুত প্রেমে
পড়ে যায় কর্ফু নামে এক গ্রিক তরুণীর। নাদাকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেয় যে রেলিয়া। মন
ভেঙে যায় নাদার। তারপর ব্যর্থ প্রেমিকারা সচরাচর যা করে - নাদাও তাই করলো। নিজেকে
অযত্নে শেষ করে ফেললো। সেই সেতুর উপর গিয়ে দিনরাত বসে থাকতো নাদা। প্রচন্ড
যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে একদিন সে মারা গেলো। ভিয়স্কা বানিয়ার তরুণ-তরুণীরা
নাদা-রেলিয়ার প্রেমকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে সেতুর রেলিং-এ প্রেমের তালা
ঝুলাতে শুরু করলো। কিন্তু অনেকবছর আগে শুরু হবার পরেও প্রেমের তালার সংস্কৃতি
ইউরোপের আর কোন শহরে বিস্তার লাভ করেনি সেই সময়।
ইতালিতে প্রেমের তালা ঝুলবে আর প্রেমের রাজধানী প্যারিসে
কিছুই হবে না তা কি হয়? ২০০৮ সাল থেকে প্যারিসের সেন (seine) নদীর ওপর পন ডিজ আর (Pont des Arts) ব্রিজ হয়ে ওঠে প্রেমের তালার
তীর্থক্ষেত্র। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পর্যটক প্যারিস শহর ভ্রমণে যায়। ভালোবাসার
মানুষকে নিয়ে পন ডিজ আর ব্রিজের রেলিং-এ একটা প্রেমের তালা ঝুলিয়ে দেয়াটা প্যারিস
ভ্রমণের পূর্বশর্ত হয়ে ওঠে অনেকের ক্ষেত্রে। ২০০৬ সালের আগে যেখানে একটা তালাও
দেখা যায়নি - ২০১৫ সালের মধ্যে সেখানে প্রায় সাত লক্ষ প্রেমের তালা ঝুলে পড়ে। শুধু
তাই নয়, এক ব্রিজ থেকে অন্যব্রিজে ছড়িয়ে পড়তে থাকে প্রেমের তালা।
কিন্তু বাস্তব সমস্যা দেখা দিতে দেরি হলো না। পন
ডিজ আর ব্রিজটি পথচারী ব্রিজ। ৭ লক্ষ ধাতব তালার ভর প্রায় ৪৫ টন। এই অতিরিক্ত ভর
সইবার ক্ষমতা এই ব্রিজের নেই। ব্রিজটির কিছু অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করে। শুধু তাই নয়,
সাত লক্ষ প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের প্রেমের তালার চৌদ্দ লক্ষ চাবি নিক্ষেপ করেছে সেন
নদীতে। প্রেমের নামে নদী ও ব্রিজের বারোটা বাজিয়ে ফেলতে সাত বছরও লাগেনি। কতৃপক্ষ
বাধ্য হয়ে প্রেমের তালা সহ সব রেলিং খুলে সরিয়ে নিয়েছে। অনেকেই 'হায় হায়' করেছে।
করার তো কথা। প্রেমের তালা সরিয়ে নেয়ার ফলে প্রেম সরে যাবে না তো আবার?
ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নেও প্রেমের
তালার বিস্তার ঘটেছে কয়েক বছর আগে। ইয়ারা নদীর ওপর ফ্লিন্ডার স্ট্রিট স্টেশন থেকে
সাউথ ব্যাংকের সংযোগকারী পথচারী ব্রিজটির বয়স এখনো দশ পেরোয়নি। ২০১৩ সাল থেকে এর
রেলিং-এ একটা দুটো করে প্রেমের তালা ঝুলতে শুরু করে ২০১৫'র মধ্যে তা বিশ হাজার
ছাড়িয়ে যায়। রেলিং-এর ধাতব তার তালার ভারে বেঁকে গেছে। চল্লিশ হাজার চাবি এখন
ইয়ারা নদীর তলদেশে।
মেলবোর্ন সিটি কাউন্সিলও তালাগুলো কেটে সরিয়ে
নিতে বাধ্য হয়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ঘটিত সংস্কারে এরকম ধাতব হস্তক্ষেপ পছন্দ
করছেন না অনেকেই। অনেকেই ভয় করছেন প্রেমের তালা কাটা পড়ার সাথে তাদের
সম্পর্কচ্ছেদের সম্পর্ক কতটুকু।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের ব্রিজেও প্রেমের
তালা দেখা যায়। তবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিও আছে সেগুলোর উপর। বাড়াবাড়ি দেখলেই কেটে
সরিয়ে দিচ্ছে। এই সুযোগে কিছু নতুন ব্যবসার পথও খুলে যাচ্ছে। পার্থ শহরের বেল
টাওয়ারে একটা আলাদা সংরক্ষিত এলাকা করা হয়েছে প্রেমের তালা ঝুলানোর জন্য। তবে
প্রেমের তালাটি কিনতে হবে তাদের কাছ থেকে ত্রিশ ডলার দামে।
প্রেমের তালায় সারাবিশ্ব বাঁধা পড়বে আর
বাংলাদেশে কিছু হবে না তা কি হয়? হাতির ঝিলের ব্রিজের রেলিং-এ প্রেমের তালা ঝুলতে
শুরু করেছে। অচিরেই তালাময় হয়ে উঠবে হাতির ঝিল। হাজার হাজার
নিকিতা ও হৃদয়ের হৃদয় বাঁধা পড়বে প্রেমের তালায়। ঘৃণার চেয়ে প্রেম অনেক বেশি
আনন্দময়। তবে সংস্কারমুক্ত মানুষও অনেক সময় প্রেমের সংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এটাই
শুধু কষ্টের।
No comments:
Post a Comment