Thursday, 23 August 2018

কোন একদিন





"ধুত্তুরি ছাই! একটা কুকুরের জীবনও আমার চেয়ে ভালো। সারাদিন অফিসে গাধার মত খেটে এক পেট ক্ষিধে নিয়ে বাড়িতে আসি শান্তিতে দুটো ভাত খাবার জন্য। শালার ভাত! একটা কুকুরকেও তো মানুষ এর চেয়ে ভালো জিনিস রান্না করে দেয়। কিছু বললেই চোখে কান্নার সাগর বইয়ে দেবে! কোন্‌ কুক্ষণে যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম!!"

রাগে গজগজ করতে করতে ভাতের প্লেটে সশব্দে পানি ঢেলে দিল সুমনপ্লেট উপচে পানি গড়িয়ে পড়লো ডায়নিং টেবিলে। আস্তে আস্তে গড়িয়ে যাচ্ছে টেবিলের কিনারার দিকে। এসবের কিছুই খেয়াল করলো না সুমন। এক ধাক্কায় চেয়ার সরিয়ে ধুপধাপ ফ্লোর কাঁপিয়ে চলে গেল ড্রয়িংরুমে। সশব্দে বন্ধ করে দিলো ড্রয়িং রুমের দরজা।
           
এদিকে ডায়নিং টেবিলে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে তপুতার চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার ভাতের প্লেটে। প্লেটে পানি ঢেলে সেও উঠে পড়লো কাঁদতে কাঁদতে। চলে গেলো বেডরুমে। খাবার পর্ব এভাবেই শেষ হলো।
           
ড্রয়িংরুমে ঢুকে সোফার কুশনে মুখগুঁজে শুয়ে পড়েছে সুমন। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার। রাগে গজগজ করছে সে - কোন্‌ আক্কেলে যে মানুষ বিয়ে করে! কী কচু লাভ হলো আমার বিয়ে করে? এর নাম ফ্যামিলি লাইফ? এই-ই যদি তোমার ফ্যামিলি লাইফ হয়, তাহলে থাকো তুমি তোমার ফ্যামিলি লাইফ নিয়ে। আমি সংসার ত্যাগ করবো। এরকম ফ্যামিলি লাইফ লিড করার বদলে আত্মহত্যা করা অনেক ভালো।
           
মিনিট পনেরো পরে ড্রইংরুমের বাইরে হালকা পায়ের শব্দ হলো। মুহূর্তেই সতর্ক সুমন। 'সেই পুরনো কায়দা। ইচ্ছে হলেই তুমি অপমান করবে আমাকে, মনে করবে তোমার আরেকটি পোষা কুকুর! আর এখন এসেছো ভাব দেখাতে! কক্ষনো না। তোমার সাথে ভাব করার চেয়ে গলায় দড়ি দেয়া ভালো' - মনে মনে প্রস্তুত হতে থাকে সুমন।
           
খুব আস্তে আস্তে দরজা খুলে গেলো। দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দের জন্য অপেক্ষা করছে সুমন, কিন্তু সেরকম কোন শব্দ হলো না। সুমন বুঝতে পারছে রুমে ঢুকেছে সে, পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে সোফার দিকে। সুমন শক্ত হয়ে পড়ে রইলো সোফায় মুখ গুঁজে। রাগ এখনো কমেনি তার। মনে মনে বলে, "হুঁ! যতই তুমি মাফ চাও, সাধাসাধি করো - কোন কাজ হবে না। আমি জানি তুমি গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে এসেছো। কিন্তু কোন লাভ নেই। একটা কথাও তুমি বের করতে পারবে না আমার মুখ দিয়ে। এটাই ফাইনাল। দেখতে পাচ্ছো না আমি ঘুমাচ্ছি! তার মানে আমি তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।"
           
সোফার কুশনের আরো গভীরে মুখ গুঁজে দিলো সুমন। ঘুমের অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য মৃদু নাক ডাকার শব্দ করছে। কিন্তু মনে মনে কেমন যেন নরম হয়ে যাচ্ছে সে। পুরুষ মানুষও যে নারীর মতো ভেতরে ভেতরে এত দুর্বল তা তার জানা ছিল না। পুরুষ মানুষকে খুব সহজে কচলে তিক্ত করে দেয়া যায়, আবার একটু মিষ্টি হেসে মিষ্টিও করে ফেলা যায়।
           
পিঠের কাছে উষ্ণ শরীরের স্পর্শ পেয়েও দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত হয়ে থাকলো সুমন। সরে গেলো সোফার আরো ভেতরের দিকে। ঘুমন্ত মানুষের মতো পা দিয়ে পা ঘঁষলো একবার। মনে মনে নিজের সাথেই কথা বলে সে, "উঁ! এখন আমার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পিঠের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে! একটু পরেই আমার কাঁধে চুমু খেতে শুরু করবে। তপু ঠিকই জানে যে তখন আমি আর চুপ করে থাকতে পারবো না। যাই হোক, মাফ তো তাকে করতেই হবে। তার এ অবস্থায় আসলে তাকে খুব বেশি টেনশানে রাখা উচিত নয় আমার। শাস্তি হিসেবে আর এক ঘন্টা কথা বলবো না। এক ঘন্টা সে সাধাসাধি করুক। বুঝুক যে রাগ নামক একটা পদার্থ আমারও কিছুটা আছে। এক ঘন্টা পরে মাফ করে দেবো।"
           
সুমনের কান ঘেঁষে হাই তোলার শব্দ হলো এবার। পরপর কয়েকবার। কাঁধে তুলতুলে নরম ঠোঁটের স্পর্শে মুহূর্তেই গলে গেলো সুমন। গলায় যতটুকু সম্ভব মিষ্টতা ফুটিয়ে বললো, "এই শেষবারের মতো মাফ করছি তোমাকে। খুব কষ্ট পেয়েছো তো? সরি। আসলে ভুলটা আমার। আমার উচিত হয়নি সামান্য তরকারি নিয়ে এরকম বিচ্ছিরি ঝগড়া করা। উম্‌ম্‌ম্‌ ..." - চোখ বন্ধ রেখেই হাত বাড়িয়ে তপুকে জড়িয়ে ধরতেই চমকে উঠলো সুমন। কোথায় তপু! এ যে তপুর কুকুর ডায়না।

(আন্তন শেকভের গল্প "He Quarrelled with His Wife; an Incident" অবলম্বনে)

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Doesn't Rachi's death make us guilty?

  Afsana Karim Rachi began her university life with a heart full of dreams after passing a rigorous entrance exam. She was a student of the ...

Popular Posts