বাংলাদেশের লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের প্রাণের মেলা একুশের বইমেলা। লেখকদের প্রাণের মেলা - কারণ তাঁদের সন্তানসম বইগুলোর বেশিরভাগই পাঠকের মুখ দেখে এই বইমেলায়। প্রকাশকদের প্রাণের মেলা - কারণ তাঁদের সারাবছরের লাভ উঠে আসে এই একটি মেলাতেই। বাংলা একাডেমির হিসেব মতে ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। প্রকাশক সমিতি অবশ্য তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে বাংলা একাডেমি বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে বলেছে। আসলে বিক্রি হয়েছে ৪০ কোটি টাকার বই।
বাংলাদেশের বই প্রকাশকরা কিছুতেই কত কপি বই ছাপানো হয়েছে, কত কপি বিক্রি হয়েছে তার সঠিক হিসাব প্রকাশ করতে চান না পাছে লেখক টাকা চেয়ে বসেন। কারণ হাতেগোণা কয়েকজন লেখককে ছাড়া আর কাউকেই কোন লেখক-সম্মানী দেন না বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রকাশক। তো ২৮ দিনের মেলায় ৪০ কোটি টাকার বই বিক্রি হওয়াটাও কম কিসে - যেখানে সবাই আজকাল facebook ছাড়া আর কোন book পড়তে আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ শোনা যায়।
বাংলাদেশের বই প্রকাশকরা কিছুতেই কত কপি বই ছাপানো হয়েছে, কত কপি বিক্রি হয়েছে তার সঠিক হিসাব প্রকাশ করতে চান না পাছে লেখক টাকা চেয়ে বসেন। কারণ হাতেগোণা কয়েকজন লেখককে ছাড়া আর কাউকেই কোন লেখক-সম্মানী দেন না বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রকাশক। তো ২৮ দিনের মেলায় ৪০ কোটি টাকার বই বিক্রি হওয়াটাও কম কিসে - যেখানে সবাই আজকাল facebook ছাড়া আর কোন book পড়তে আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ শোনা যায়।
এবারের বইমেলায় শুনেছি প্রায় সাড়ে চার হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন 'বোদ্ধা' লেখক/সমালোচক তাঁদের আকাশছোঁয়া নাক সিঁটকে বলতে শুরু করেছেন - এত বই অথচ তেমন মানসম্মত বই কোথায়? 'নতুন' লেখকদের সম্পর্কে এসব 'পুরনো' লেখকদের তাচ্ছিল্য দেখলে মনে হয় - তাঁরা এই সাড়ে চার হাজার বইয়ের সবগুলো পড়ে ফেলেছেন। বইয়ের মান যাচাইয়ের কি কোন সর্বজনগ্রাহ্য পদ্ধতি আছে? সব পাঠকের যে সব রকমের বই পছন্দ হবে তার কি কোন নিয়ম আছে? আর আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে লেখকের কোন 'নতুন' 'পুরনো' হয় না। অনেক বছর ধরে লিখছেন এমন লেখককেও নতুন লেখাই লিখতে হয়। নতুন বই-ই প্রকাশ করতে হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাঁরা লেখেন - তাঁদের বই প্রকাশিত হলেও অনেকের গাত্রদাহ হয়। গায়ের ঝাল মেটানোর জন্য লম্বা প্রবন্ধ লিখে ফেলেন তার বই প্রকাশের নিন্দা করে। নিজের কাজে মনযোগী না হয়ে অন্যের কাজের সমালোচনা করাটা অনেক সহজ এবং এই কাজে আমরা জাতিগতভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছি। তাই কোন লেখা না পড়ে শুধুমাত্র লেখকের নাম বা পরিচিতির ভিত্তিতেই লেখার সমালোচনা করতে বসে যাই। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় ব্যক্তিনিন্দা।
বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার শুনে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন 'অ্যাত্তো বেশি' বই দিয়ে আমরা কী করবো? বইমেলার পরে সারা বছরে খুব বেশি হলে আর পাঁচ শ নতুন বই প্রকাশিত হবে। তাহলে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নতুন বই। ষোল কোটি মানুষের দেশে এই সংখ্যা কি খুব বেশি? আমেরিকার লোকসংখ্যা আমাদের মাত্র দ্বিগুণ। অথচ সেখানে বছরে নতুন বই প্রকাশিত হয় তিন লাখ - যা আমাদের ৬০ গুণ। জাপানের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক কম - সেখানে বছরে ৮২ হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা মাত্র দুই কোটি ত্রিশ লাখ। সেখানে বছরে ২৮ হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। মালয়েশিয়াতে ১৫ হাজার, ইরানে ৭২ হাজার, এমনকি ছোট্ট দ্বীপ হংকং-এ বছরে প্রায় ১৪ হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বছরে প্রায় এক লক্ষ নতুন বই প্রকাশিত হয়। নতুন বইয়ের সংখ্যার দিক থেকে আমরা এখনো অনেকদূর পিছিয়ে আছি।
বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা সাড়ে চার হাজার শুনে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন 'অ্যাত্তো বেশি' বই দিয়ে আমরা কী করবো? বইমেলার পরে সারা বছরে খুব বেশি হলে আর পাঁচ শ নতুন বই প্রকাশিত হবে। তাহলে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নতুন বই। ষোল কোটি মানুষের দেশে এই সংখ্যা কি খুব বেশি? আমেরিকার লোকসংখ্যা আমাদের মাত্র দ্বিগুণ। অথচ সেখানে বছরে নতুন বই প্রকাশিত হয় তিন লাখ - যা আমাদের ৬০ গুণ। জাপানের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক কম - সেখানে বছরে ৮২ হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা মাত্র দুই কোটি ত্রিশ লাখ। সেখানে বছরে ২৮ হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। মালয়েশিয়াতে ১৫ হাজার, ইরানে ৭২ হাজার, এমনকি ছোট্ট দ্বীপ হংকং-এ বছরে প্রায় ১৪ হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বছরে প্রায় এক লক্ষ নতুন বই প্রকাশিত হয়। নতুন বইয়ের সংখ্যার দিক থেকে আমরা এখনো অনেকদূর পিছিয়ে আছি।
অনেক লেখক নিজের টাকায় বই প্রকাশ করেন। এই ব্যাপারটাকে বাংলাদেশের 'বড়' 'বড়' লেখকেরা এতটাই নিন্দনীয় ব্যাপার বলে প্রচার করতে শুরু করেছেন যেন বইমেলায় প্রথম বই প্রকাশ করাটা খুব লজ্জার ব্যাপার। প্রকাশকরাও অনেক 'বড়' 'বড়' কথা বলেন - তাঁরা ভালো পান্ডুলিপি পান না - ইত্যাদি। 'ভালো' পান্ডুলিপি কাহাকে বলে, কয় প্রকার ও কী কী? কেউ কি নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন? নিজের টাকায় টিভি নাটক বানালে সমস্যা হয় না, সিনেমা তৈরি করলে সমস্যা হয় না, চিত্রপ্রদর্শনী করলে কোন সমস্যা নেই, গানের ডিস্ক প্রকাশ করলে সমস্যা নেই - কেবল বই প্রকাশ করলেই সমস্যা? বাংলাদেশে হুমায়ূন আহমেদের অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের সবগুলো বই কাজী আনোয়ার হোসেন নিজেই প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের 'বড়' 'বড়' লেখকরা বই লিখে সম্মানী পান এবং অনেকে এই সম্মানীর জন্যেও লেখেন। কিন্তু কোন কিছু পাবেন না জেনেও শুধুমাত্র লেখার প্রতি ভালোবাসা থেকে যাঁরা লেখেন, বই প্রকাশ করেন এবং নিজের চেষ্টায় সেই বই পাঠকের কাছে পোঁছে দেন - তাঁদের সব বই পড়া হয়তো সবার পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু লেখক হিসেবে ন্যূনতম যে সম্মান তাদের পাওনা - সেই সম্মান থেকে যেন আমরা তাঁদের বঞ্চিত না করি।
No comments:
Post a Comment