সাড়ে আট বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়ে আরো গম্ভীর হয়ে গেলো আইরিন। দাদু যথাসম্ভব শোক সামলে নাতনিদের দেখাশোনা করতে লাগলেন আগের মতোই। মা প্যারিসের বাসা বদলে সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন স্সোতে। সেখানে তাদের নতুন বাসায় বেশ বড় একটা বাগান আছে। মা আইরিনকে বাগানের একটা অংশ দিয়ে দিলেন ইচ্ছেমত বাগান করার জন্য। সাত বছরের আইরিন নিজের হাতে বাগান করা শুরু করে - তাকে সাহায্য করেন দাদু।
দাদুর শরীর ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। বারো বছরের কিশোরী আইরিন যখনই সময় পাচ্ছে দাদুর সেবা করার চেষ্টা করছে।
১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দাদু মারা যান। আইরিনের পৃথিবীটা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। বাবার মৃত্যুর পর দাদু ছিল তার বন্ধু, শিক্ষক আর পথপ্রদর্শক। দাদুর কাছ থেকে যে ভালোবাসা, দেশপ্রেম, মানবতার শিক্ষা আইরিন পেয়েছে তার তুলনা নেই। দাদুকে হারিয়ে আইরিনের হঠাৎ ভয় করতে শুরু করলো - মাকেও যদি কোনদিন এমনি ভাবে হারাতে হয়! না, সে তার মা ও ছোট বোনকে দেখে রাখবে।
মেয়েদের শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি কড়া নজর মেরির। তিনি বিশ্বাস করেন ছেলেমেয়েদের শরীর সুগঠিত হলে কোন রোগজীবাণু তাদের আক্রমণ করতে পারবে না, মানসিক বিকাশও অনেক ভালোভাবে হবে। মেয়েদেরকে সাইকেল কিনে দিয়েছেন - তারা ইচ্ছেমতো সাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়ায় উন্মুক্ত প্রান্তরে। সাঁতার কাটা, ঘোড়ায় চড়া, নৌকা চালানো, স্কেটিং, স্কিইং, জিমনেস্টিক্স সবকিছু শিখিয়েছেন মেয়েদের। আইরিন দেখেছে - যে সাইকেলে চড়া তার মায়ের এত প্রিয় ছিল, স্বামীর মৃত্যুর পর একটা দিনের জন্যেও আর সাইকেলে চড়েননি তার মা।
মেয়েদের শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি কড়া নজর মেরির। তিনি বিশ্বাস করেন ছেলেমেয়েদের শরীর সুগঠিত হলে কোন রোগজীবাণু তাদের আক্রমণ করতে পারবে না, মানসিক বিকাশও অনেক ভালোভাবে হবে। মেয়েদেরকে সাইকেল কিনে দিয়েছেন - তারা ইচ্ছেমতো সাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়ায় উন্মুক্ত প্রান্তরে। সাঁতার কাটা, ঘোড়ায় চড়া, নৌকা চালানো, স্কেটিং, স্কিইং, জিমনেস্টিক্স সবকিছু শিখিয়েছেন মেয়েদের। আইরিন দেখেছে - যে সাইকেলে চড়া তার মায়ের এত প্রিয় ছিল, স্বামীর মৃত্যুর পর একটা দিনের জন্যেও আর সাইকেলে চড়েননি তার মা।
সারা বছর প্রচন্ড পরিশ্রমের পর গ্রীষ্মকালে তারা ছুটি কাটাতে যেতো কোন পাহাড়ি অঞ্চলে বা সৈকত শহরে। ইভ আর আইরিন - দু’বোন আচরণগত দিক থেকে সম্পূর্ণ দু’রকম। ইভ আর আইরিন দুজনই লম্বা, স্লিম, সুন্দর। আইরিনের চুল কিছুটা ধূসর সোনালী, ইভের চুল কুচকুচে কালো। দুজনেরই পরিষ্কার দৃষ্টি - কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা আলাদা। আইরিন তার বাবার মত ধীরস্থির গম্ভীর। কিন্তু ইভ চঞ্চল হাসিখুশি। আইরিন অপরিচিত কারো সাথে কথা বলে না। আর ইভ অপরিচিতের সাথে পরিচিত হতে মোটেও সময় নেয় না। কারো সাথে দেখা হলে - হাই হ্যালো ইত্যাদি বলার অভ্যাস নেই আইরিনের। এমনকি বিদায় নেবার সময় ‘বাই’ও বলে না আইরিন।
মেরি এসব সামাজিক সহবতকে খুব একটা প্রয়োজনীয় মনে করেন না। তিনি জানেন মানুষ নিজের যোগ্যতায় বড় হতে পারলে এসব সামাজিক সহবতে কিছুই যায় আসে না। তাই তিনি আইরিনকে এসব শেখানোর দরকার আছে বলে মনে করেননি।
আইরিন খেলাধূলায় খুবই দক্ষ। ইভ চমৎকার পিয়ানো বাজায়। আইরিনের ভাবনা-চিন্তার ধরন সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক, ইভের ভাবনাচিন্তা শৈল্পিক। পোশাকের ব্যাপারে ইভ ফ্যাশন-সচেতন, আর আইরিন ফ্যাশনের ধার ধারে না। তার কাছে পোশাক যথাযথ কাজের উপযোগী আরামদায়ক হলেই হলো।
ফ্রান্সের স্কুলের গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতির ওপর কোন আস্থা ছিল না মেরি কুরির। তিনি দেখছেন ফ্রান্সের স্কুলের শিক্ষার্থীরা দিন-রাত গাধার মত পরিশ্রম করছে, মুখস্থ করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে - কিন্তু শিখছে না কিছুই। তিনি এই সিস্টেমের অবসান করতে না পারলেও নিজের মেয়েদের এই শিক্ষার নামে ‘কলুর বলদ’ বানাবার বিপক্ষে। তাঁর কাছের বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে তিনি একটা অপ্রাতিষ্ঠানিক কো-অপারেটিভ স্কুল-ব্যবস্থার চালু করলেন।
ছয় জন প্রফেসরের দশজন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুরু হলো তাঁদের প্রচেষ্টা। প্রতি সপ্তাহে একেক জন প্রফেসর একেক বিষয়ে ক্লাস নেন। পদার্থবিজ্ঞানী জাঁ পেরি এবং পল লাঁজেভি পড়াতেন ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি ও গণিত। মেরি কুরি পড়াতেন এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্স। সাহিত্য, শিল্পকলা, সাধারণ বিজ্ঞান, ইংরেজি, জার্মান ইত্যাদি পড়ানোর জন্য সেসব বিষয়ের বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আসা হতো। একেক সপ্তাহে একেক প্রফেসরের বাড়িতে ক্লাস বসতো। দশজন ছেলেমেয়ের প্রত্যেকে প্রত্যেকের বন্ধু হয়ে যায়। আইরিনও খুব সহজ ছিল তার এসব বন্ধুদের সাথে। এই দশজনের বাইরে আইরিনের সারাজীবনে আর কোন ফ্রেন্ডসার্কেল গড়ে ওঠেনি।
আড়াই বছর চলার পর কো-অপারেটিভ স্কুলটি আর চললো না। প্রফেসররা নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্কুল উঠে গেলেও মেরি কুরি তাঁর ফিজিক্স স্কুলের একটা রুমে প্রতি বৃহস্পতিবার ছেলে-মেয়েদের সারাদিন পড়াতেন। মেরি বিশ্বাস করেন মৌলিক বিজ্ঞানে ভালো করতে হলে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বোঝার কোন বিকল্প নেই।
আইরিন চিন্তায় ধীরস্থির - গভীর মনযোগ দিয়ে চিন্তা করতে হয় তাকে। সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে তার, তবে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একদিন তার মা গণিতের ক্লাস নিচ্ছেন - আইরিনের মনযোগ কিছুক্ষণের জন্য অন্যদিকে চলে গেলো। এ অবস্থায় চারপাশে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই থাকে না তার। এসময় মেরি একটা প্রশ্ন করলেন আইরিনকে। আইরিন তার উত্তর দিতে পারলো না। মেরি আইরিনের খাতা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। আইরিন দেখলো তার খাতা খোলা জানালা দিয়ে উড়ে চলে গেলো বাইরে। সে চুপচাপ উঠে গিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে খাতাটা নিয়ে ক্লাসে এসে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রশ্নটির সঠিক উত্তর দিলো।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-পদ্ধতিকে অপছন্দ করলেও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য পরীক্ষা দেয়ার জন্য আইরিনকে একটি প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হলো। দু’বছর সেই স্কুলে পড়ার পর উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আইরিন।
আইরিনের স্কুলে পড়ার সময়েই প্যারিসের প্রেস-মিডিয়া মেরি কুরির নামে কুৎসা রটানো শুরু করে। ১৯১১ সালে আইরিন যখন সবে চৌদ্দ পেরিয়ে পনেরোয় পা দিয়েছে - একদিন স্কুলে গিয়ে সহপাঠিনীর আনা সংবাদপত্রে মঁসিয়ে লাঁজেভির পাশে মায়ের ছবি এবং কুৎসায় ভরা প্রতিবেদনটি পড়ে হঠাৎ মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যায় আইরিন। সংবাদপত্র যে এত আজেবাজে কথা ছাপাতে পারে তা ভাবতেও পারেনি আইরিন।
একটু পরে মাদাম পেরি স্কুলে এসে আইরিনকে নিয়ে গাড়িতে উঠলে আইরিন দেখে মা ও ইভ ভয়ে অপমানে লজ্জায় থরথর করে কাঁপছে। তাদের বাড়িতে হামলা করেছে প্যারিসের কিছু গুন্ডাপান্ডা লোক। মানুষের এরকম কদর্য দিকের সাথে পরিচিত হয়ে আরো গম্ভীর হয়ে যায় আইরিন। কিন্তু বুঝতে পারে বাবার মৃত্যুর পর তার মায়ের ব্যক্তিগত জীবন কতটাই কঠিন হয়ে গেছে।
মা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যস্ত থাকেন তা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে আইরিন। কিন্তু মা যে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী তা বুঝতে পারে মায়ের সাথে স্টকহোমে গিয়ে। ১৯১১ সালে দ্বিতীয় বার নোবেল পুরষ্কার পেলেন মাদাম কুরি। প্রথমবার ১৯০৩ সালে যখন বাবার সাথে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন মা - তখন অসুস্থতার কারণে বাবা-মা কেউই স্টকহোমে আসতে পারেননি। এবার রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পাবার পর প্যারিসের প্রেসের শত কুৎসা অপবাদ আক্রমণের পরেও মা একটুও দমে যাননি। মাথা উঁচু করে সুইডেনে এসেছেন নিজের যোগ্যতার স্বীকৃতি - নোবেল পুরষ্কার নিতে।
অডিটোরিয়ামের চোখ ঝলসানো আলোয় সঙ্গীত মূর্ছনায় এবং প্রচন্ড করতালির সাথে রাজা পঞ্চম গুস্তাভের কাছ থেকে মা যখন নোবেল মেডেল নিচ্ছিলেন - গর্বে বুক ভরে গেছে আইরিনের। কিন্তু সেদিন একবারের জন্যও সে ভাবেনি যে চব্বিশ বছর পর তার নিজের জীবনেই সেরকম কোন ঘটনা ঘটবে।
১৯১২ সালে প্যারিসে ফিরে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন মাদাম কুরি। কিডনির ইনফেকশানের জন্য প্রায় এক বছর ধরে চিকিৎসা নিতে হয় তাঁকে। প্রেসের অপপ্রচার থেকে বাঁচার জন্য ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অনেকটা গোপনে চিকিৎসা করাতে হয় তাঁকে। আইরিন ও ইভ তখন পোল্যান্ডে তাদের মাসীর কাছে চলে গিয়েছিলো।
১৯১৩ সালে কিছুটা সুস্থ হয়ে মেয়েদের প্যারিসে নিয়ে আসেন মেরি। সেই সামারে আইরিন ও ইভকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে যান মেরি। সেখানে আইনস্টাইনের সাথে দেখা হয় তাঁদের। আইরিন ও ইভের সৌন্দর্যে মুগ্ধ আইনস্টাইন। ইভের পিয়ানোর সাথে বেহালা বাজালেন আইনস্টাইন। ফ্রান্সে ফিরে রেডিয়াম ইনস্টিটিউট তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মাদাম কুরি। প্রশাসক ও ব্যবস্থাপক হিসেবে মায়ের আরেক রূপ দেখতে পেলো আইরিন।
মা নিজের কাজে এতই ব্যস্ত থাকেন যে আইরিন ও ইভ পুরোপুরি স্বনির্ভর হয়ে গেলো। বাসার কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য একজন গভর্নেস আছেন - তিনি রান্নাবান্না ও অন্যান্য কাজ করেন। আইরিন ও ইভ দুজনই যে যার নিজের কাজ করে নেয়। দু’বোন দু’রকম, দুজনের ইন্টারেস্টও দু’রকম।
আইরিন তার বাবার মতোই খুব স্বল্পভাষী, ধীরস্থির এবং গভীর চিন্তাশীল। বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে সবকিছু বিবেচনা করে দেখে আইরিন। কোন ব্যাপারেই সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নয় আইরিন। ফ্যাশনেবল প্যারিসে যেখানে মেয়েরা নিত্যনতুন ড্রেস আর রূপচর্চার পেছনে টাকা আর সময় খরচ করতে দু’বার চিন্তা করে না - সেখানে আইরিন কোন ধরনের প্রসাধন তো দূরের কথা ভালো কোন ড্রেসও কিনেনি কখনো। ঢিলেঢালা আরামদায়ক ও কাজ করতে সুবিধাজনক পোশাকই আইরিনের পছন্দ। তার জামার হাতায় পকেট থাকতো রুমাল রাখার জন্য। সময় বাঁচাবার জন্য তার সুন্দর কোঁকড়া চুল সে নিজেই কেটে ছোট করে রাখতো।
[তৃতীয় পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন]
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-পদ্ধতিকে অপছন্দ করলেও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য পরীক্ষা দেয়ার জন্য আইরিনকে একটি প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হলো। দু’বছর সেই স্কুলে পড়ার পর উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আইরিন।
আইরিনের স্কুলে পড়ার সময়েই প্যারিসের প্রেস-মিডিয়া মেরি কুরির নামে কুৎসা রটানো শুরু করে। ১৯১১ সালে আইরিন যখন সবে চৌদ্দ পেরিয়ে পনেরোয় পা দিয়েছে - একদিন স্কুলে গিয়ে সহপাঠিনীর আনা সংবাদপত্রে মঁসিয়ে লাঁজেভির পাশে মায়ের ছবি এবং কুৎসায় ভরা প্রতিবেদনটি পড়ে হঠাৎ মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যায় আইরিন। সংবাদপত্র যে এত আজেবাজে কথা ছাপাতে পারে তা ভাবতেও পারেনি আইরিন।
একটু পরে মাদাম পেরি স্কুলে এসে আইরিনকে নিয়ে গাড়িতে উঠলে আইরিন দেখে মা ও ইভ ভয়ে অপমানে লজ্জায় থরথর করে কাঁপছে। তাদের বাড়িতে হামলা করেছে প্যারিসের কিছু গুন্ডাপান্ডা লোক। মানুষের এরকম কদর্য দিকের সাথে পরিচিত হয়ে আরো গম্ভীর হয়ে যায় আইরিন। কিন্তু বুঝতে পারে বাবার মৃত্যুর পর তার মায়ের ব্যক্তিগত জীবন কতটাই কঠিন হয়ে গেছে।
মা যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যস্ত থাকেন তা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে আইরিন। কিন্তু মা যে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী তা বুঝতে পারে মায়ের সাথে স্টকহোমে গিয়ে। ১৯১১ সালে দ্বিতীয় বার নোবেল পুরষ্কার পেলেন মাদাম কুরি। প্রথমবার ১৯০৩ সালে যখন বাবার সাথে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন মা - তখন অসুস্থতার কারণে বাবা-মা কেউই স্টকহোমে আসতে পারেননি। এবার রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পাবার পর প্যারিসের প্রেসের শত কুৎসা অপবাদ আক্রমণের পরেও মা একটুও দমে যাননি। মাথা উঁচু করে সুইডেনে এসেছেন নিজের যোগ্যতার স্বীকৃতি - নোবেল পুরষ্কার নিতে।
অডিটোরিয়ামের চোখ ঝলসানো আলোয় সঙ্গীত মূর্ছনায় এবং প্রচন্ড করতালির সাথে রাজা পঞ্চম গুস্তাভের কাছ থেকে মা যখন নোবেল মেডেল নিচ্ছিলেন - গর্বে বুক ভরে গেছে আইরিনের। কিন্তু সেদিন একবারের জন্যও সে ভাবেনি যে চব্বিশ বছর পর তার নিজের জীবনেই সেরকম কোন ঘটনা ঘটবে।
১৯১২ সালে প্যারিসে ফিরে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন মাদাম কুরি। কিডনির ইনফেকশানের জন্য প্রায় এক বছর ধরে চিকিৎসা নিতে হয় তাঁকে। প্রেসের অপপ্রচার থেকে বাঁচার জন্য ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অনেকটা গোপনে চিকিৎসা করাতে হয় তাঁকে। আইরিন ও ইভ তখন পোল্যান্ডে তাদের মাসীর কাছে চলে গিয়েছিলো।
১৯১৩ সালে কিছুটা সুস্থ হয়ে মেয়েদের প্যারিসে নিয়ে আসেন মেরি। সেই সামারে আইরিন ও ইভকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে যান মেরি। সেখানে আইনস্টাইনের সাথে দেখা হয় তাঁদের। আইরিন ও ইভের সৌন্দর্যে মুগ্ধ আইনস্টাইন। ইভের পিয়ানোর সাথে বেহালা বাজালেন আইনস্টাইন। ফ্রান্সে ফিরে রেডিয়াম ইনস্টিটিউট তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মাদাম কুরি। প্রশাসক ও ব্যবস্থাপক হিসেবে মায়ের আরেক রূপ দেখতে পেলো আইরিন।
মা নিজের কাজে এতই ব্যস্ত থাকেন যে আইরিন ও ইভ পুরোপুরি স্বনির্ভর হয়ে গেলো। বাসার কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য একজন গভর্নেস আছেন - তিনি রান্নাবান্না ও অন্যান্য কাজ করেন। আইরিন ও ইভ দুজনই যে যার নিজের কাজ করে নেয়। দু’বোন দু’রকম, দুজনের ইন্টারেস্টও দু’রকম।
আইরিন তার বাবার মতোই খুব স্বল্পভাষী, ধীরস্থির এবং গভীর চিন্তাশীল। বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে সবকিছু বিবেচনা করে দেখে আইরিন। কোন ব্যাপারেই সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নয় আইরিন। ফ্যাশনেবল প্যারিসে যেখানে মেয়েরা নিত্যনতুন ড্রেস আর রূপচর্চার পেছনে টাকা আর সময় খরচ করতে দু’বার চিন্তা করে না - সেখানে আইরিন কোন ধরনের প্রসাধন তো দূরের কথা ভালো কোন ড্রেসও কিনেনি কখনো। ঢিলেঢালা আরামদায়ক ও কাজ করতে সুবিধাজনক পোশাকই আইরিনের পছন্দ। তার জামার হাতায় পকেট থাকতো রুমাল রাখার জন্য। সময় বাঁচাবার জন্য তার সুন্দর কোঁকড়া চুল সে নিজেই কেটে ছোট করে রাখতো।
[তৃতীয় পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন]
আইরিন কুরী সম্পর্কে পড়তে খুব ভালো লাগছে। ওর মাকে শ্রদ্ধা তার নতুন চিন্তার জন্য। ভাবনা আর তাকে বাচিয়ে তোলা নিজের জীবনে তাই দেখছি আর শিখছি
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ।
Deleteআইরিন কুরী সম্পর্কে পড়তে খুব ভালো লাগছে। ওর মাকে শ্রদ্ধা তার নতুন চিন্তার জন্য। ভাবনা আর তাকে বাচিয়ে তোলা নিজের জীবনে তাই দেখছি আর শিখছি
ReplyDelete