১৯৩০ সালে জুলিও-কুরিরা প্রতিযোগিতা করছিলেন পৃথিবীর অন্যান্য নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানীদের সাথে। যে ক’জন বিজ্ঞানী তখন পরমাণুর নিউক্লিয়াস নিয়ে গবেষণা করছিলেন তাঁরা হলেন ইংল্যান্ডে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, বার্লিনে লিজা মেইটনার, এবং কোপেনহ্যাগেনে নিল্স বোর। তখন পর্যন্ত নিউক্লিয়াসের ধারণা ছিল এরকম: পরমাণুতে শুধু ইলেকট্রন আর প্রোটন আছে। নিউট্রন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না কারো।
আইরিনের মা পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন ১৮৯৮ সালে। রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম ছিল মেরি কুরির সন্তানের মত। আইরিন ও ফ্রেড প্রচুর পোলোনিয়াম উৎপাদন করেন রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে। এই পোলোনিয়াম খুবই বিষাক্ত। ফুসফুস, প্লিহা ও যকৃতের খুব ক্ষতি করে এর তেজষ্ক্রিয় গ্যাস। ফ্রেড ও আইরিন ক্রমে ক্রমে এই বিষে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। ইতোমধ্যে তেজষ্ক্রিয়তার বিষে মাদাম কুরির শরীরের সমস্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি ভীষণ অসুস্থ। তারপরেও একটু সুস্থ বোধ করলেই তিনি ইনস্টিটিউটে চলে আসেন।
১৯৩২ সালে আইরিন রেডিয়াম ইনস্টিটিউটের গবেষণা-প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এসময় গবেষণাগারের জন্য একটা আধুনিক হফম্যান ইলেকট্রোমিটার কেনা হয় যার সাহায্যে বাতাসে তেজষ্ক্রিয়তার ফলে সৃষ্ট ইলেকট্রিক চার্জের পরিমাপ করা যায়। ফ্রেড দিনরাত খেটে এই ইলেকট্রোমিটার বসানোর কাজ করছেন। এদিকে ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও আবার মা হতে চলেছেন আইরিন।
এসময় জার্মান ফিজিসিস্ট ওলাল্টার বোথে’র একটা পেপার পড়ে খুব উৎসাহিত হয়ে ওঠেন আইরিন। বেরিলিয়ামের সাথে আলফা কণার সংঘর্ষ ঘটানোর পর দেখা গেলো বেরিলিয়াম থেকে কিছু একটা বেরিয়ে দুই সেন্টিমিটার পুরু সীসার পাত ভেদ করে চলে গেলো। বেরিলিয়াম থেকে এত শক্তিশালী কী বেরোচ্ছে? এটা কি কোন নতুন ধরনের গামা রশ্মি? আইরিন অসুস্থ শরীরে এই নতুন ধরনের গামা রশ্মি পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করলেন। তিনি বেরিলিয়ামের পাশে তেজষ্ক্রিয় পোলোনিয়াম রাখলেন। দেখলেন বেরিলিয়াম থেকে শক্তিশালী রশ্মি বের হয়ে সীসার পাত ভেদ করে চলে যাচ্ছে। এবার সামনে নানারকম পদার্থ রেখে পরীক্ষা করা হলো। প্যারাফিন ওয়াক্স (মোম) রেখে দেয়া হলো। মোম কার্বন আর হাইড্রোজেনে ভর্তি - প্রোটনের সমৃদ্ধ উৎস। দেখা গেলো মোম থেকে প্রোটন বেরোল প্রায় আলোর বেগের এক দশমাংশ বেগে। এর কারণ কী? প্রোটনকে এত জোরে ছুঁড়ে দেবার কাজ করছে কে? আইরিন আর ফ্রেড মনে করলেন এটা নতুন ধরনের শক্তিশালী গামা রশ্মি। দ্রুত গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন জুলিও-কুরি।
তাঁদের পেপার পড়ে রাদারফোর্ড বুঝতে পারলেন ভুলটা কোথায়। গামা রশ্মির কোন ভর নেই। তাই গামার পক্ষে প্রোটনের মত ভারী কণাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া সম্ভব নয়। তার মানে নিউক্লিয়াসে প্রোটন ছাড়াও আরো কিছু আছে যা প্রোটনের মতোই ভারী।
তাঁদের পেপার পড়ে রাদারফোর্ড বুঝতে পারলেন ভুলটা কোথায়। গামা রশ্মির কোন ভর নেই। তাই গামার পক্ষে প্রোটনের মত ভারী কণাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া সম্ভব নয়। তার মানে নিউক্লিয়াসে প্রোটন ছাড়াও আরো কিছু আছে যা প্রোটনের মতোই ভারী।
ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবে রাদারফোর্ডের ছাত্র জেমস চ্যাডউইক আইরিন ও ফ্রেডের পরীক্ষাটা করে একই ফল পেলেন। কিন্তু ফলাফল ব্যাখ্যা করলেন সঠিকভাবে। আবিষ্কৃত হলো নিউক্লিয়াসের আরেকটি উপাদান - নিউট্রন। অল্পের জন্যই নিউট্রন আবিষ্কারের কৃতিত্বটা আইরিন ও ফ্রেডের হাত থেকে ফস্কে চলে গেলো জেম্স চ্যাডউইকের হাতে। [নিউট্রন আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন চ্যাডউইক।]
১৯৩২ সালে আইরিন ও ফ্রেডের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো। আইরিন তাঁর বাবার নাম অনুসারে ছেলের নাম রাখলেন পিয়ের। হেলেন আর পিয়ের মাদাম কুরির চোখের মণি হয়ে উঠলো। সময় পেলেই মাদাম নাতি-নাতনিদের সাথে খেলতে চেষ্টা করেন। তাঁর কাজের অনেকটুকুই এখন আইরিন সামলাচ্ছেন। তবুও তিনি রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে যাওয়া থামাচ্ছেন না। ১৯৩৩ সালের সলভে কনফারেন্সে যোগ দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
এদিকে পিয়েরের জন্মের পর আইরিন আরো দুর্বল হয়ে পড়েছেন। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সেই তাঁকে অনেক বয়স্কা মনে হচ্ছে। যক্ষা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না কিছুতেই। কিন্তু কোনকিছুই তাঁকে ঘরে আটকে রাখতে পারলো না। তিনি কাজে ফিরে গেলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ল্যাবে গিয়েই নতুন পরীক্ষায় হাত দিলেন।
নিউট্রন আবিষ্কৃত হবার পর ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের গবেষণায় বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পেলেন। আইরিন ও ফ্রেড উইলসন ক্লাউড-চেম্বার ব্যবহার করে নিউট্রন নিয়ে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করলেন। তাঁরা দেখলেন ক্লাউড-চেম্বারে ইলেকট্রন-ট্র্যাকের পাশাপাশি নতুন ধরনের ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে - যা শুধুমাত্র সম্ভব যদি ইলেকট্রনের চার্জ পজিটিভ হয়। আইরিন ও ফ্রেডের আগে এ পরীক্ষা আর কেউ করেননি এবং এই পজিটিভ ইলেকট্রনের অস্তিত্ব সম্পর্কেও কেউ জানতেন না। তবে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী পল ডিরাক পজিটিভ ইলেকট্রনের সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেছিলেন। ডিরাকের পেপার আইরিন ও ফ্রেডের চোখে পড়েনি।
পজিটিভ চার্জের ট্র্যাক দেখে তাঁদের ফলাফল সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলেন আইরিন ও ফ্রেড। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (ক্যালটেক) কার্ল এন্ডারসন আইরিন ও ফ্রেডের পরীক্ষাটা করে একই রেজাল্ট পেলেন এবং সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করলেন যে এগুলো পজিট্রনের ট্র্যাক। আরো একটা যুগান্তকারী আবিষ্কারের কৃতিত্ব থেকে বঞ্চিত হলেন আইরিন ও ফ্রেড। [পজিট্রন আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেলেন কার্ল এন্ডারসন।]
পরপর দু’বার সঠিক পরীক্ষণের মাধ্যমে আইরিন ও ফ্রেড নিউট্রন ও পজিট্রন আবিষ্কারে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের কাছে আইরিন ও ফ্রেডের গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ বেড়ে গেলো। ১৯৩৩ সালের সল্ভে কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হলেন তাঁরা। সল্ভে কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হওয়া মানে বিশ্বস্বীকৃতি পাওয়া। মাদাম কুরি তো সল্ভে কনফারেন্সের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে সবগুলো কনফারেন্সেই আমন্ত্রিত হয়েছেন। আইরিন ও ফ্রেডের এটাই প্রথম।
কনফারেন্সে যাবার আগে অনেকগুলো পরীক্ষা করলেন তাঁরা। পোলোনিয়ামের সামনে অ্যালুমিনিয়ামের পাতলা পাত রেখে দেখেছেন পোলোনিয়াম থেকে আলফা পার্টিক্যল এসে অ্যালুমিনিয়াম পাতে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে নিউট্রন ও পজিট্রন বের করে দিচ্ছে। বার বার পরীক্ষা করে একই রেজাল্ট পেয়েছেন আইরিন ও ফ্রেড।
১৯৩৩ সালের সল্ভে কনফারেন্সে আইরিন ও মাদাম কুরি |
১৯৩৩ সালের অক্টোবরে ব্রাসেল্সে সল্ভে কনফারেন্সে আইরিন ও ফ্রেডের পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করলেন ফ্রেড। আইরিন কথা বলতে পছন্দ করেন না, তাই তিনি চুপচাপ বসে আছেন অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে। কনফারেন্সে চল্লিশ জন আমন্ত্রিত বিজ্ঞানীর মধ্যে বিশ জন নোবেল বিজয়ী। চল্লিশ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন নারী বিজ্ঞানী - মাদাম কুরি, আইরিন আর লিজা মাইটনার।
ফ্রেডের বক্তৃতার পর লিজা মাইটনার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি নিজে বেশ কয়েক বার এই পরীক্ষাগুলো করে দেখেছি, কিন্তু একবারও কোন নিউট্রন বের হবার প্রমাণ পাইনি। সুতরাং জুলিও-কুরির ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
লিজা মাইটনার বিখ্যাত পরীক্ষণ-বিজ্ঞানী। তাঁর প্রভাব অনেক বেশি। তাই অনেকেই নবীন বিজ্ঞানী আইরিন ও ফ্রেডের ফলাফল বিশ্বাস করলেন না। কিন্তু নিল্স বোর ও উল্ফগং পাউলি ফ্রেড ও আইরিনের ফলাফলে খুবই খুশি। তাঁরা আইরিন ও ফ্রেডের কাজ খুবই সম্ভাবনাময় বলে মত দিলেন।
প্যারিসে ফিরে মাদাম কুরি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর গলব্লাডার অপারেশন করাতে হলো। পজিট্রনের দুঃখ ভুলতে আইরিন একটা বই লিখলেন - ‘লা ইলেকট্রন-পচিটিফ’ বা ‘দি পজিটিভ ইলেকট্রন’। ১৯৩৪ সালের শুরুতে আইরিন ও ফ্রেড পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন পোলোনিয়াম আর অ্যালুমিনিয়ামের পাত নিয়ে। তাঁরা দেখতে পেলেন পোলোনিয়ামের আলফা পার্টিক্যল অ্যালুমিনিয়ামের সাথে বিক্রিয়া করে নতুন ধরনের তেজষ্ক্রিয়তা তৈরি করছে। কীভাবে হচ্ছে?
অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাঁরা নিশ্চিত হলেন যে পোলোনিয়াম থেকে আলফা পার্টিক্যল বের হয়ে অ্যালুমিনিয়ামের নিউক্লিয়াসের সাথে সংঘর্ষ ঘটায়। তাতে অ্যালুমিনিয়ামের নিউক্লিয়াস থেকে একটি নিউট্রন বেরিয়ে আসে - ফলে অ্যালুমিনিয়াম নিউক্লিয়াস রূপান্তরিত হয় একটি তেজষ্ক্রিয় ফসফরাস নিউক্লিয়াসে। কয়েক মিনিট পর এই তেজষ্ক্রিয় ফসফরাস থেকে একটি পজিট্রন বের হয় - ফসফরাস নিউক্লিয়াস তার তেজষ্ক্রিয়তা হারিয়ে পরিণত হয় একটি সিলিকন নিউক্লিয়াসে। তার মানে তাঁরা কৃত্রিম তেজষ্ক্রিয়তার সন্ধান পেয়েছে!
ফ্রেড তো খুশিতে আত্মহারা। আইরিনও খুশি - তবে তাঁর তেমন কোন উচ্ছ্বাস নেই। ফ্রেড ছুটে গিয়ে মাদামকে খবর দিলেন। আবার ছুটে এসে আইরিনকে চুমু খেয়ে ছুটলেন ইপিসিআইতে পল লাঁজেভিকে খবর দিতে। একটু পর লাঁজেভিকে সাথে নিয়ে ল্যাবে এসে দেখলেন মাদাম ইতোমধ্যে আইরিনের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন কী কী ঘটেছে।
আইরিন ও ফ্রেড পুরো পরীক্ষাটা আবার করলেন মাদাম কুরি আর পল লাঁজেভির সামনে। পল লাঁজেভি আইরিন ও ফ্রেডকে অভিনন্দন জানালেন। আর মাদাম কুরিকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, “এবার আরো দুটো নোবেল পুরষ্কার আসছে কুরি পরিবারে”।
পরের বছরই পল লাঁজেভির কথা সত্যি হয়েছে। কিন্তু মাদাম কুরি তা দেখে যেতে পারেননি। কৃত্রিম তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর আইরিন ও ফ্রেড স্কি করতে স্যাভোই পাহাড়ে যাবার সময় মাদাম কুরি ছেলেমানুষের মত বায়না ধরলেন মেয়ের সাথে যাবার জন্য। কিছুতেই বোঝানো গেলো না ৬৬ বছর বয়স্কা শিশু মেরিকে। স্কি না করলেও বরফঢাকা পাহাড়ে উঠে হাঁটাহাঁটি করলেন তিনি এবং আছাড় খেয়ে পড়লেন। প্যারিসে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হলো তাঁকে।
একটু সুস্থ হয়ে বাড়িতে এসে মে মাসে শুধু একবারের জন্য ইনস্টিটিউটে পা রেখেছিলেন মেরি। তারপর আর হাঁটাচলা করতে পারেননি। ইভ সব কাজকর্ম ছেড়ে বাড়িতে মায়ের সেবা করতে লাগলেন। ত্রিশ বছর বয়সী ইভ বেশ কয়েকটি ভালোবাসার সম্পর্ক ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আইরিন ও ফ্রেড হেলেন ও পিয়েরকে নিয়ে প্রতিদিনই মাকে দেখতে আসেন। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মা ইনস্টিটিউটের সব খবর জানতে চান।
অনেক ডাক্তার এসে মেরিকে দেখে যাচ্ছেন। রোগ নির্ণয়ে নানারকম মতামত দিচ্ছেন। এখন বলা হচ্ছে তিনি মারাত্মক যক্ষায় আক্রান্ত। বাড়ির চেয়ে হাসপাতালেই ভালো থাকবেন। বিজ্ঞানী হিসেবে মাদাম যতটা ভালো রোগী হিসেবে ততটাই খারাপ। তিনি ডাক্তারের কোন পরামর্শ মেনে চলেন না। দুই বোন অনেক জোর করে মা-কে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। কিন্তু ক’দিন পর ডাক্তাররা বললেন তাঁর ফুসফুসের চেয়েও বড় সমস্যা তাঁর রক্তে। রক্ত পরীক্ষা করার পর ধরা পড়লো - লিউকেমিয়া। মাদাম কুরির তৃতীয় সন্তান রেডিয়ামের প্রতি ভালোবাসার ফল তাঁর ব্লাড ক্যান্সার।
আইরিন প্রতিদিনই অফিসে যাচ্ছেন, সব কাজ করছেন ঠিকমত। কিন্তু মায়ের জন্য তাঁর বুক ভেঙে যাচ্ছে। নিজের কষ্টের কথা বলার অভ্যাস নেই বলে কাউকেই বলতে পারছেন না মা তাঁর জীবনে কতখানি। জুলাইয়ের তিন তারিখ মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেলো। তিনি কাউকে আর চিনতে পারছিলেন না। ১৯৩৪ সালের ৪ঠা জুলাই সকালে মাদাম কুরি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মাদাম কুরির মৃত্যুর পর রেডিয়াম ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব নেন আইরিন। গবেষণার সাথে সাথে প্রশাসনিক কাজও বেড়ে যায় অনেক। ফ্রেডের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় এখন অনেক বেশি বিস্তৃত। জার্মানিতে নাৎসিদের উত্থান ঘটেছে। আইনস্টাইন সহ অনেক বিজ্ঞানী জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন। ফ্রেড কমিউনিস্ট পার্টির কাজকর্মে জড়িয়ে পড়তে শুরু করেছেন।
১৯৩৫ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেলেন আইরিন ও ফ্রেডেরিক জুলিও-কুরি। একই বছর নিউট্রন আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন জেম্স চ্যাডউইক। ডিসেম্বরের ১০ তারিখ স্টকহোমে নোবেল পুরষ্কার নেবার সময় সারাক্ষণই মায়ের কথা মনে পড়ছিল আইরিনের। চব্বিশ বছর আগে মায়ের সাথে এসেছিলেন আইরিন মায়ের নোবেল পুরষ্কার অনুষ্ঠানে। আজ যদি মা বেঁচে থাকতেন! পুরষ্কার দেবার সময় রাজা পঞ্চম গুস্তাভও মাদামের কথা বললেন আইরিনকে।
নিনির্মেষে তোমায় হেরে - তোর রহস্য বুঝি নেরে
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। বোঝা যায় না বলেই তো তা রহস্য।
Delete