পিয়ের ও মেরি
মেরি যখন কথা বললেন পিয়েরের সাথে দু’জনই মুগ্ধ হয়ে গেলেন। একদিকে পিয়েরের মেধা, প্রজ্ঞা আর সাবলীলতা, অন্যদিকে মেরির জ্ঞানের গভীরতা, নম্রতা আর অনুসন্ধিৎসায় তাঁরা পরস্পর মোহিত হয়ে গেলেন। মেরির গবেষণার কথা শুনে পিয়ের খুশি হয়ে ইপিসিআই’র ল্যাবে গবেষণা করতে আহ্বান জানালেন মেরিকে। মেরির ল্যাব সংক্রান্ত সমস্যা মিটে গেলো।
পিয়েরকে দেখে এবং কথা বলে মেরির এত ভালো লাগলো - মনে হলো পিয়ের যেন কোন স্বপ্নলোক থেকে উঠে আসা এক উদাসীন বিজ্ঞানী যার লক্ষ্য স্থির অথচ প্রাত্যাহিক জীবনের ব্যক্তিগত সুখদুঃখের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন। পিয়েরের সাথে যখন মেরির দেখা হয় তখন পিয়েরের বয়স ৩৫ - অথচ মেরির কাছে মনে হলো আরো কম।
পরদিন থেকেই ইপিসিআই-এ পিয়েরের ফিজিক্স ল্যাবে ইস্পাতের চৌম্বক ধর্ম সংক্রান্ত পরীক্ষা শুরু করলেন মেরি। চৌম্বক-ধর্ম সম্পর্কিত গবেষণায় ইতোমধ্যেই যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন পিয়ের। শুরু হলো মেরির সাথে গভীর বৈজ্ঞানিক আলোচনা।
পিয়ের তাঁর প্রায় পনেরো বছরের বৈজ্ঞানিক জীবনে কখনোই মেরির মত এমন দীপ্তিময়ী মহিলার সংস্পর্শে আসেন নি। পুরো ফ্রান্সে কোন মহিলা পদার্থবিজ্ঞানীর দেখা পাননি পিয়ের। মেরিকে যতই দেখছেন পিয়েরের মনে হচ্ছে মেরি যেন এক আশ্চর্যমানবী - কী অপরূপ তার রূপ, কত স্নিগ্ধ তার ব্যক্তিত্ব, কত গভীর তার পান্ডিত্য।
তারুণ্যে যাকে ঘিরে ভালোবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন - বিশ বছর বয়সে তাঁর সেই প্রেমিকার মৃত্যুর পর প্রেম-ভালোবাসার জগৎ থেকে নিজেকে জোর করে সরিয়ে রেখেছিলেন পিয়ের। যে প্যারিসে মেয়েরা পতঙ্গের মত ছুটে খ্যাতিমানদের পেছনে - সেখানে পিয়ের নিজেকে একেবারেই সন্ন্যাসী বানিয়ে ফেলেছিলেন। ধর্মে বিশ্বাস থাকলে হয়তো এতদিনে চার্চের পাদ্রীই হয়ে যেতেন তিনি। মেরির জন্য তাঁর মনের সব দরজা খুলে যাচ্ছে একে একে। মেরির প্রেমে পড়ে গেলেন পিয়ের।
এদিকে প্রচন্ড ব্যস্ত মেরি। গণিতের পড়াশোনা, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। তারপর যখন সময় পান ইস্পাতের ধর্ম পরীক্ষা। পিয়েরের সাথে দেখা হয় ল্যাবে। পিয়েরের সবকিছুই ভালো লাগছে মেরির। অথচ নিজের মন থেকেও যেন পালিয়ে বেড়াতে চাচ্ছেন মেরি। কাজিমির জোরাভস্কির কাছ থেকে পাওয়া অপমান তিনি এখনো ভুলতে পারেননি। তাছাড়া তিনি মনে করছেন ফ্রান্সের পড়ালেখা শেষ করে নিজের দেশ পোল্যান্ডে ফিরে যাওয়া তাঁর নৈতিক দায়িত্ব।
একদিন পিয়ের জানতে চাইলেন, “মেরি, তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছো তুমি?”
পিয়েরের চোখের মুগ্ধতা বুঝতে না পারার মত অনভিজ্ঞ মেরি নন। আলোচনা কোন্ দিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পারছেন তিনি। উত্তর দিলেন, “পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেই আমি পোল্যান্ডে ফিরে যাবো। ওখানে গিয়ে স্কুলে পড়াবো।”
“ফ্রান্স ছেড়ে একেবারেই চলে যাবে?”
“যেতে তো হবেই। ফ্রান্স তো আমার দেশ নয়।”
“ফ্রান্সকে তোমার নিজের দেশ করে নিতে পারো না?”
“মানে?”
“আমি তোমার অনাদর করবো না মেরি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। কেন বুঝতে চাইছো না?”
মেরি কোন উত্তর দিলেন না। বাসায় ফিরতে হবে তাঁকে। ফিরে রাত জেগে পড়তে হবে পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষায় প্রথম হতে হতে অন্যরকম মানসিক চাপ পড়ে পরীক্ষার সময়। শুধু পাশ করলেই তো এখন আর হবে না, প্রথম হতে হবে।
মেরির তাড়া দেখে পিয়েরের হঠাৎ ভয় হলো - মেরি কি রাগ করেছে? আর যদি কখনো দেখা না হয়? করুণ মুখে বললেন, “আমি কি তোমার সঙ্গে যেতে পারি?”
প্যারিসের সমাজ তখনো অনেকটাই রক্ষণশীল। মেয়েদের বাসায় অনাত্মীয় ছেলেদের প্রবেশ সামাজিক গুজব তৈরি করে। কিন্তু মেরি বা পিয়ের কেউই ওসব সামাজিক নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। মেরির সাথে পিয়ের গেলেন মেরির বাসায়। নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠলেন ছয়তলায়।
মেরির বাসায় বসার একটা নড়বড়ে চেয়ার আর একটা ক্যাম্প খাট ছাড়া আর কোন আসবাবই নেই। পিয়ের একটুও অবাক হলেন না। যেন এটাই স্বাভাবিক। মেরির ভালো লাগলো পিয়ের মেরির ঘর সম্পর্কে কোন মন্তব্য করলেন না দেখে।
পিয়ের মেরিকে আবারো বোঝানোর চেষ্টা করলেন, “দেখো মেরি, তোমার যে বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা আছে - তা শেষ হয়ে যাবে যদি তুমি পোল্যান্ডে ফিরে গিয়ে স্কুল মাস্টারি শুরু করো।”
মেরি নিজেও জানেন তা। দোটানায় ভুগতে থাকেন মেরি। পিয়ের চলে গেলে মেরি মেইলবক্স চেক করে একটা চিঠি পেলেন। ল্যামোটির চিঠি। মেরির প্রেমে ল্যামোটি এখনো একতরফা মজে আছেন। অনেকদিন মেরির দেখা না পেয়ে ল্যামোটি চিঠি লিখেছেন মেরিকে। সামনের পরীক্ষার জন্য শুভকামনা ইত্যাদি জানাবার পর ল্যামোটি লিখছেন - “তুমি বলেছিলে তোমাকে কিছুদিন না দেখলেই আমি তোমাকে ভুলে যাবো। কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি জানি হয়তো আমাদের আর দেখা হবে না। কিন্তু তুমি মনে রেখো - যদি কখনো কোনদিন আমাকে তোমার দরকার হয় - তুমি ডাকলেই আমাকে পাবে। তোমার জন্য আমি সবকিছুই করতে পারি।”
পিয়েরের ব্যক্তিত্বের কাছে ল্যামোটি কিছুই নন। কিন্তু পিয়েরের ব্যাপারেও মনস্থির করে উঠতে পারেন না মেরি। বর হিসেবে পিয়ের নিঃসন্দেহে উপযুক্ত। কিন্তু পিয়ের যে বিদেশী।
মনে পড়ে মেরির - ১৮৮৮ সালে তার বেস্ট ফ্রেন্ড কাজিয়া যখন এক জার্মান ছেলেকে বিয়ে করলো - রেগে গিয়েছিলেন মেরি। অনেক জাতীয়তাবাদী কথা শুনিয়েছিলেন তিনি তখন। এখন নিজেই যদি একজন ফরাসিকে বিয়ে করে ফেলে - নিজের দেশের প্রতি কি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না?
১৮৯৪ সালের জুলাইতে রেজাল্ট বের হলো মেরির। গণিতে প্রথম হলেন মেরি কুরি। সুখবর নিয়ে বাবার সাথে সময় কাটানোর জন্য পোল্যান্ডে চলে গেলেন তিনি।
পিয়ের ভাবলেন মেরির সাথে সম্ভবত আর কখনোই দেখা হবে না। মনে হচ্ছে পৃথিবীটা আবারো খালি হয়ে গেল পিয়েরের। কিন্তু না, দশ দিন পরেই মেরির চিঠি পেলেন পিয়ের। তবে কি এখনো আশা আছে? পিয়ের চিঠি লিখলেন মেরিকে - “সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও আমরা তো পরস্পরের বন্ধু হয়ে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছি, তাই না? তুমি যদি তোমার মত না বদলাও আমরা তো বন্ধু হয়েই আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারি - তোমার দেশপ্রেমের স্বপ্ন, আমাদের মানবতার স্বপ্ন, এবং আমাদের বৈজ্ঞানিক স্বপ্ন। আমার কাছে বিজ্ঞানিক স্বপ্নগুলোকে সফল করাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। বৈজ্ঞানিক উন্নতির মাধ্যমেই আমরা সমাজের সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখলে এটাই ঠিক যে পোল্যান্ডের চেয়ে বর্তমানে ফ্রান্সেই বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্র অনেক বেশি উর্বর। এখানে আমরা যৌথভাবে যা কিছুই আবিষ্কার করি না কেন, যত ছোটই হোক, অর্জিত জ্ঞান হিসেবে থেকে যাবে তা। কিন্তু তুমি যদি ফ্রান্স থেকে দূরে থাকো - বছরখানেকের মধ্যেই আমাদের বন্ধুত্ব বড় বেশি প্লেটোনিক হয়ে যাবে - কারণ আমাদের যে দেখাই হবে না আর। তুমি কিছুতেই কি আমার সাথে থাকতে পারো না? আমি জানি আমার এ প্রস্তাব তোমাকে আবারো রাগিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কী করবো বলো। আমার নিজেকে সবদিক থেকেই তোমার অনুপযুক্ত মনে হচ্ছে।”
মেরি পিয়েরের প্রস্তাবের কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিয়ে জানালেন যে অক্টোবরে তিনি প্যারিসে ফিরছেন। নিজের একটা ছবিও পাঠালেন মেরি এবং পিয়েরকে আমন্ত্রণ জানালেন পোল্যান্ডে বেড়িয়ে যেতে।
পিয়ের বুঝলেন এখনো হয়তো আশা আছে। কিন্তু পোল্যান্ডে যাওয়াটা ঠিক হবে না মনে করে গেলেন না। বড়ভাই জাকোকে মেরির পাঠানো ছবিটা দেখালেন পিয়ের। জাকো খুব পছন্দ করলেন মেরিকে।
১৮৯৪ সালের অক্টোবরে প্যারিসে ফিরে এলেন মেরি। ব্রোনিয়াদের বাসার কাছে একটা এক রুমের বাসা ভাড়া করলেন। ইস্পাত পরীক্ষণের কাজটা শুরু করলেন আবার।
পিয়েরের সাথে দেখা হলো। কিন্তু পিয়েরকে বিয়ের ব্যাপারে পরিষ্কার ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কোনটাই বলছেন না মেরি। অস্থির হয়ে উঠলেন পিয়ের। এরকম সিদ্ধান্তহীনতা ভালো লাগে না তাঁর। তিনি দুটো প্রস্তাব রাখলেন মেরির সামনে - “বিয়ে করার জন্য আমাকে যতটুকু ভালবাসা দরকার যদি ততটুকু ভালোবাসতে না পার, তাহলে এটুকু কি করা যায় - যদি আমি তোমার বাসার পাশেই একটা বাসা নিয়ে থাকি - তবে কি বিয়ে না করেও জাস্ট বন্ধুর মত থাকা যায়? যদি তাতেও তোমার আপত্তি থাকে - তুমি তো পোল্যান্ডে ফিরে যাবার জন্যই আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো না তাই না? কারণ আমাকে বিয়ে করলে তোমাকে ফ্রান্সে থাকতে হবে। যদি সেটাই কারণ হয় - আমি তোমার সাথে পোল্যান্ডে গিয়ে থাকতে রাজী আছি। আমি সেখানের স্কুলে ফরাসি ভাষা শেখাতে পারবো। তাতে আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিছুই হবে না। তাতে কিছু যায় আসে না। তোমাকে পেলে আমি তাও মেনে নিতে পারবো। তুমি কি দয়া করে ভেবে দেখবে একটু?”
মেরির জন্য পিয়ের তাঁর সায়েন্টিফিক ক্যারিয়ার পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত! এত ভালোবাসেন তাকে! মেরি আপ্লুত হয়ে গেলেন। ব্রোনিয়ার সাথে আলাপ করলেন। ব্রোনিয়া সব শুনে আনন্দে হতবাক হয়ে গেলেন। তার আদরের ছোটবোনকে কেউ এত ভালোবাসে অথচ মেরি এখনো ‘হ্যাঁ’ বলতে ইতস্তত করছে? ব্রোনিয়া মেরিকে বোঝাতে শুরু করলেন।
পিয়ের জানতে পারলেন যে মেরি ব্রোনিয়াকে বলেছেন তাঁর কথা। তিনি ব্রোনিয়ার সাথে দেখা করলেন। পিয়েরের সাথে কথা বলে ব্রোনিয়া এতই মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে নিজেই মেরিকে সাথে নিয়ে পিয়েরের সঙ্গে চলে গেলেন প্যারিস থেকে সাড়ে ছ’মাইল দূরে স্সো (Sceaux)-তে পিয়েরদের বাড়িতে।
পিয়েরদের বাড়িতে গিয়ে পিয়েরের মা-বাবার সাথে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে গেলেন মেরি। বিশেষ করে পিয়েরের বাবা ডাক্তার ইউজিন কুরির সাথে কথা বলে মেরির মনে হলো - এমন ঋষিতুল্য মানুষ তিনি আর একটাও দেখেন নি। কী সৌম্য স্নিগ্ধ মানবিক - অথচ কত গভীর জ্ঞানী মানুষ ইউজিন। মেরির মনে হলো এই মানুষটা মানুষের উপকারের জন্য নিজের প্রাণ দিতেও এক মুহূর্ত চিন্তা করবেন না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন মেরি - প্যারিসে ফিরেই পিয়েরকে ‘হ্যাঁ’ বলে দেবেন।
পিয়েরের মা-বাবারও খুব ভালো লেগেছে মেরিকে। পিয়েরের মা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন যে তাঁর সন্ন্যাসী ছেলে বিয়ে করতে রাজী হবে কখনো। মেরি যে তাঁর ছেলের মন ফেরাতে পেরেছেন তাতেই তিনি খুশি। তিনি ব্রোনিয়ার হাত ধরে অনুরোধ করলেন যেন মেরিকে রাজী করান।
প্যারিসে ফিরে এসে পিয়েরের সাথে খোলাখুলি কথা বললেন মেরি। পিয়ের মেরির জন্য নিজের ক্যারিয়ার পর্যন্ত উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। মেরি তা হতে দেবেন না।
পিয়েরের সায়েন্টিফিক ক্যারিয়ার ইতোমধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠিত। পদার্থবিজ্ঞানে কত ভালো ভালো কাজ করেছেন পিয়ের। অথচ ফ্রান্সের বিজ্ঞানজগতে পিয়েরের কোন স্বীকৃতিই নেই। পিয়ের অনেক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন ঠিকই - কিন্তু নিজের ডক্টরেটটাই শেষ করেন নি। পিয়েরকে বললেন মেরি - “দেখো পিয়ের, আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকেই আমি বিয়ে করবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে তোমার ডক্টরেট ডিগ্রি কমপ্লিট করতে হবে। আমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা আমাদের উভয়েরই বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ারকে সামনে নিয়ে যাবে।”
নতুন উদ্যম ফিরে পেলেন পিয়ের। মেরির উৎসাহ আর সহযোগিতায় চৌম্বকক্ষেত্রের ওপর প্রকাশিত পেপারগুলো সমন্বয় করে ডক্টরাল থিসিস লিখলেন পিয়ের।
১৮৯৫ সালের মার্চ মাসে ‘ম্যাগনেটিক প্রপার্টিজ অব বডিজ অ্যাট ডাইভার্স টেম্পারেচার’ শীর্ষক থিসিস জমা দিলেন সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে। জুন মাসে কৃতিত্বের সাথে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়ে গেলেন পিয়ের। তার কয়েকদিন পরেই মেরি ও পিয়েরের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। তাঁদের এনগেজমেন্টের খবর জেনে গেলো প্যারিসের একাডেমিক জগৎ।
মেরির একতরফা ফরাসি প্রেমিক ল্যামোটি খবরটি জানার পর ভীষণ হতাশ হয়ে গেলেন। মেরির সাথে পিয়েরের সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি পরাজয় মেনে নিয়ে মেরিকে অভিনন্দন জানালেন। মেরি যখন বললেন যে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বটা এখনো থাকতে পারে - রেগে গেলেন ল্যামোটি - “এরকম ভন্ডামির কোন মানে হয় না। আমি মনে করি আজ থেকে তুমি আমার কাছে মৃত এবং তোমার কাছে আমিও মৃত। আমার কথা আর কোনদিন মনে করো না।”
১৮৯৫ সালের ২৬শে জুলাই পিয়েরের মা-বাবার বাড়ির কাছে স্সো টাউন হলে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হলো মেরি ও পিয়েরের। পোল্যান্ডের মারিয়া স্ক্লোদভস্কা হয়ে গেলেন ফ্রান্সের মেরি কুরি।
খুবই অনাড়ম্বর বিয়ের অনুষ্ঠান। ওয়েডিং ড্রেস কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন মেরির বাবা। কিন্তু প্রচলিত সাদা ড্রেসের বদলে মেরি একটা নেভি ব্লু রঙের মোটা কাপড়ের ড্রেস তৈরি করালেন যেটা তিনি পরে তাঁর ল্যাবোরেটরিতে অ্যাপ্রোন হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি টাকা দিয়ে দুটো বাই-সাইকেল কিনলেন দু’জনের জন্য।
বিয়েতে মেরির পরিবার থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্রোনিয়া ও তাঁর স্বামী, পোল্যান্ড থেকে এসেছিলেন মেরির বাবা ও দিদি হেলা। আর পিয়েরের পরিবার থেকে পিয়েরের মা-বাবা, ভাই জাকো ও তার পরিবার। তাছাড়া পিয়ের ও মেরির কিছু ফরাসি বন্ধু-বান্ধব।
ধর্মে বিশ্বাস নেই কোন পরিবারেরই। তাই কোন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়নি বিয়েতে। কোন আংটিবদল হয়নি - এমনকি মেরি বা পিয়ের কারো জন্যই কোন আংটি কেনা হয়নি। কারণ তারা কেউই আংটি পরেন না এবং আংটির কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না। বিয়ের পর টাউন হল থেকে কয়েক মিনিট হেঁটে পিয়েরের বাবার বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে অতিথিরা বিদায় নেন।
_____________________
এ কাহিনি আমার "রেডিয়াম ভালোবাসা" বইতে প্রকাশিত হয়েছে।
No comments:
Post a Comment