গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়লো ‘ওয়েলকাম টু বেলিনা’। ঘড়িতে বাজে সাড়ে ছ’টা। ব্রিসবেনের সাথে সিডনি ও মেলবোর্নের সময়ের এখন কোন পার্থক্য নেই। ভোরের আলো সবে ফুটছে। একটু একটু ঠান্ডা হাওয়ায় আশ্বিনের ভোরের মতো লাগছে।
বেলিনা ছোট্ট জায়গা। আমাদের দেশের গ্রামের বাজারের মতো। এরা বলে টাউনশিপ। বাস থেমেছে একটা ফিলিং স্টেশনে। সাথে লাগানো বেশ কয়েকটা খাবারের দোকান আর নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ডিপার্টমেন্ট স্টোর। বেলিনা সেন্টারের ছাদে বিশাল এক চিংড়ি মাছের মডেল। সি-ফুডের পর্বত-প্রমাণ বিজ্ঞাপন।
ফুড সেন্টারের একপাশে বিশ্রামাগার এবং ‘ম্যান’ আর ‘ওম্যান’-এর ব্যবস্থা। সাধারণত টয়লেট শব্দটি ব্যবহার করা হয় না এখানে। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই ব্যবস্থাগুলো এখানে ঝকঝকে পরিষ্কার। রাতে যারা ভ্রমণে অভ্যস্ত তারা টুথব্রাশ, টাওয়েল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো সাথে রাখে। কারো সাথে না থাকলে এখানে বাথরুমে রাখা মেশিন থেকে কিনে নেয়া যায়। এক ডলারের একটা কয়েন মেশিনে ফেললে মেশিন থেকে বেরিয়ে আসে একটা ছোট ব্রাশ আর পেস্ট। ওয়ান টাইম ইউজ।
চোখে মুখে ঠান্ডা পানি দেয়ার পরে বেশ ঝরঝরে লাগছে। বেলিনা নামের এই জায়গাটিকেও দারুণ সুন্দর লাগছে। রাস্তার পশ্চিম পাশে বিশাল এক ফার্ম হাউজ দেখা যাচ্ছে। পূর্বদিকে লাল সূর্য উঁকি দিচ্ছে আস্তে আস্তে। আকাশে এক ফোঁটা মেঘও নেই কোথাও। আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আমরা এখনো কুইনসল্যান্ড রাজ্যে ঢুকিনি। বেলিনা নিউ সাউথ ওয়েলস-এর উত্তর সীমান্তের শহরতলি।
বেলিনা টাউন |
গাড়ি ক্রমশ এগোচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিকে। পূর্বে সমান্তরাল পাহাড় আর ইউক্যালিপ্টাস গাছের সারি। গাছের ফাঁক দিয়ে সোনালি রোদ। রাস্তার সাইন বোর্ড দেখে বুঝতে পারছি আমরা প্যাসিফিক হাইওয়ে নামক বিশাল রাস্তাটিতে উঠতে যাচ্ছি শীঘ্র।
একঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে এসে পড়লো ‘বায়রন বে’। এত সুন্দর কোন জায়গায় আমি এসে পড়েছি বিশ্বাস করতে সাহস হচ্ছে না। এই জায়গার সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়ার জন্য কোন ধরনের বর্ণনাকেই যথেষ্ট মনে হচ্ছে না।
রাস্তা উঁচুনিচু অথচ মসৃণ। ডানপাশে কিছুদূর পাহাড় তো বাঁ পাশে গভীর খাদ। খাদের ভেতর থেকে উঠে আসা বিশাল বিশাল গাছ মাথা তুলে যেন রাস্তা দেখছে। একটু পরপর রাস্তার পাশে পাহাড় জঙ্গল ঘেঁষে ছোট ছোট অবকাশ কেন্দ্র। প্রত্যেকটির সামনেই গাড়ি পার্ক করা আছে ঝোপঝাড়ের মধ্যে। মানুষ এখন ছুটি কাটাচ্ছে। মানুষ যত বেশি যন্ত্র তৈরি করছে আবার ততোই প্রকৃতি-প্রেমিক হয়ে উঠছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এই জঙ্গলে বসেও অনেকে ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যাংকিং করছে বা ভার্চুয়াল অফিস করছে।
রাস্তায় একটু পর পর নানারকম সতর্কবাণী। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ- কখনো ঢালু, কখনো খাড়া। দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করলে গায়ের রক্ত জমে যাবার জোগাড় হয়। কিন্তু প্রকৃতি এখানে তার সম্মোহনী শক্তি দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে। চারপাশ এত সুন্দর যে দুর্ঘটনার কথা মনে আসার সময়ই পায় না। কবি বায়রনের নামে এই জায়গার নাম- বায়রন বে।
আমার মনে পড়ছে বিভূতিভূষণের আরণ্যকের কথা। আমিও যেন চলেছি এখন ফুলকিয়া বইহারের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। বইতে পড়া এই সৌন্দর্যের চেয়ে এখানকার সৌন্দর্য কোন অংশেই কম নয়। ডানপাশে প্রশান্ত মহাসাগর। তার একদম গা ঘেঁষে ছুটে চলেছে আমাদের বাস। মহাসাগরের এত বিশালত্ব এভাবে চোখে পড়েনি আগে। সাগরের অন্য তীর আদৌ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কেবল দেখা যাচ্ছে নীল আকাশ আর নীল সাগর একসাথে মিশে গেছে।
রাস্তার বাঁ পাশের পাহাড়ি ঢালে চোখ পড়লো। বিস্তৃত কলা বাগান। কতদিন পরে কলার বাগান দেখলাম। বেশ পরিপুষ্ট গাছ, তাজা তাজা, তাগড়া তাগড়া। কলার মোচাগুলো ছাই রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। তাপমাত্রার ওঠানামার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, নাকি অন্য কোন কারণে এই ব্যবস্থা তা জানি না।
সকাল নটায় বাস থামলো ‘টুয়েড হেডস’ নামে জায়গায়। ছোট্ট ছিমছাম বিচ টাউন। মহাসাগরের তীর ঘেঁষে এরকম অনেক অবকাশ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে শহরের আদলে। বিশাল বিশাল আকাশছোঁয়া ট্যুরিস্ট লজ দেখা যাচ্ছে। ট্যুরিস্টদের স্বর্গরাজ্য। এখানেই শেষ হচ্ছে নিউ সাউথ ওয়েলস এর সীমানা আর শুরু হচ্ছে কুইন্সল্যান্ড।
রাস্তায় দেখা যাচ্ছে সববয়সী নারীপুরুষ ছেলেবুড়ো সবাই চলেছে সাগরের দিকে। কাঁধে টাওয়েল আর পরনে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত পোশাক। ইংরেজিতে এই পোশাকেরও কত রকমের নাম আছে। অনেকের হাতেই সার্ফিং বোর্ড। ছোট্ট প্লাস্টিকের নৌকার মতো। সাগরের ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ভেসে বেড়ানো যায় এই ভেলায় চড়ে। এরই নাম সার্ফিং।
বাস চলছে বেশ ধীরগতিতে। ঘন্টায় ষাট-সত্তর কিলোমিটারের বেশি হবে না। কুইন্সল্যান্ডের প্রথম স্টপ সারফারস প্যারাডাইস। জায়গাটার নামই এই- সারফারদের স্বর্গ। বাস এখানে থামতেই দেখা গেলো চার পাঁচজন তরুণ-তরুণী ছুটে এসে বাসের দরজার কাছে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেলো। প্রত্যেকের হাতে একটা করে সাইনবোর্ড। বোর্ডে বিভিন্ন মোটেলের বিজ্ঞাপন। বাস থেকে যারা নামছে তারা দেখছে বিজ্ঞাপনগুলো। পছন্দ হলে তরুণ তরুণীরা যাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের পছন্দের মোটেলে।
আমাদের বাস থেকে কয়েকজন নেমে গেলো এখানে। কেউ কেউ নতুন উঠলো। ড্রাইভার ‘অন দি স্পট’ টিকেট দিলেন তাদের। এখানকার ড্রাইভারদের কোন সহকারী নেই। যাত্রীদের মাল নামানো থেকে শুরু করে টিকেট বেচার কাজও একাই করতে হয় এই ড্রাইভারকে। আমাদের দুজন ড্রাইভারের একজন নেমে গেলেন এখানে। ট্যুরিস্টদের মক্কা নামে খ্যাত ‘গোল্ড কোস্ট’ শুরু হলো এই সারফার্স প্যারাডাইস থেকে।
এখন আর পাহাড় দেখা যাচ্ছে না কাছে কোথাও। মনে হচ্ছে সমুদ্র সৈকতে চলে এসেছি বিশাল এক বাস নিয়ে। সাউথ পোর্ট, ব্যানলি, গার্ডেন সিটি প্রভৃতি ছোট্ট অথচ ছবির মতো সুন্দর উপশহর ছাড়িয়ে বাস ছুটছে ব্রিসবেনের দিকে। রাস্তার ডান পাশে একটু দূরে দেখা গেলো সি-ওয়ার্লড। একটু পরেই রাস্তার বাঁ পাশে দেখা গেলো মুভি-ওয়ার্লড, অস্ট্রেলিয়ার হলিউড স্টুডিও। ব্রিসবেন থেকে একদিন এখানে আসতে হবে মুভি-ওয়ার্লড দেখার জন্য।
ব্রিসবেন সিটিতে ঢুকতেই আমি এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এমনিতেই আমার মুগ্ধ হবার ব্যারাম আছে বলে থাকেন অনেকে। কিন্তু তাঁরাও দেখলে স্বীকার করবেন ভীষণ সুন্দর এই জায়গা। নতুন নতুন রাস্তা তৈরির কাজ চলছে আরো। শহরে ঢোকার আগেই পুরো শহরটা দেখা যায় দূর থেকে। অস্ট্রেলিয়ার সবগুলো শহরের প্রবেশ পথই এভাবে তৈরি। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতেই গাইডের কাজ করে যাচ্ছেন। বলে চলেছেন ব্রিসবেন শহরের ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান, কোথায় কী করা যায়, কী খাওয়া যায় ইত্যাদি। সকাল সাড়ে এগারোটায় গাড়ি শহরে ঢুকে একটা বিশাল বিল্ডিং-এর চারতলার ছাদে উঠে থামলো।
ব্রিসবেন ট্রানজিট সেন্টার |
ব্রিসবেন ট্রানজিট সেন্টার। বিমানবন্দরের মতো সমস্ত সুযোগ সুবিধা সংবলিত কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। বাসের পেট থেকে ব্যাগটা নিয়ে ঢুকলাম ট্রানজিট সেন্টারের ভেতর। চারদিকে ঝকঝকে আলো ঝলমল করছে। এখন একটা হোটেল বা হোস্টেল খুঁজতে হবে। ট্রানজিট সেন্টারগুলোতে একটা তথ্যকেন্দ্রে অবশ্যই থাকে যেখান থেকে হোটেল, হোস্টেলগুলোতে সরাসরি ডায়ালিং সম্বলিত বিনাখরচের টেলিফোন বুকিং এর ব্যবস্থা থাকে।
নীলবৃত্তের মাঝখানে স্মল লেটারের সাদা ‘আই’ চিহ্ন হলো অস্ট্রেলিয়ান ইনফরমেশন সেন্টারের প্রতীক। এটা পাওয়া গেলো ট্রানজিট সেন্টারের ঠিক সেন্টারে। দেখলাম মেলবোর্ন বা সিডনির চেয়েও এখানকার সেবার মান উন্নত। তথ্যকেন্দ্রের অ্যাঁসিস্ট্যান্ট পিটার নিজেই ফোন করলেন আমার পছন্দ মতো হোস্টেলে। দু’মিনিটের মধ্যে ‘অজি ওয়ে হোস্টেল’ এ আমার জন্য একটা সিঙ্গেল রুমের ব্যবস্থা হয়ে গেলো। পিটার বললেন, "আপনি দোতলায় নেমে ‘ডোনাট কিং’ এর সামনে অপেক্ষা করুন। হোস্টেল থেকে একজন মেয়ে এসে আপনাকে নিয়ে যাবে।"
পিটারের দেয়া ম্যাপ হাতে চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় নামলাম। ট্রানজিট সেন্টারের পুরো দোতলা জুড়ে নানারকম খাবারের দোকান; ফুড কোর্ট। চায়নিজ, মেক্সিকান, জাপানিজ খাবারের দোকান দেখা যাচ্ছে। আর বহুজাতিক ম্যাকডোনালডস, হাংরি জ্যাকস, কে-এফ-সি এসব তো আছেই সবখানে।
‘ডোনাট কিং’টা মাঝামাঝি জায়গা। বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে মোটা মোটা ডোনাট। বাংলা ভাষায় যার নাম হবে মোটা মোটা তেলের পিঠা। পুরো ফুডকোর্ট জুড়ে পাতা আছে চেয়ার টেবিল। সেন্ট্রাল ফুড কর্নারগুলো এরকমই হয়ে থাকে। যে কোন দোকান থেকে যে কোন খাবার কিনে যে কোন টেবিলে বসেই খেয়ে নেওয়া যায়। ডিসপোজেবল প্লেট চামচ বিনে ফেলে টিস্যুতে মুখ মুছে ফেললেই আহারপর্ব শেষ।
‘ডোনাট কিং’-এর সামনে গিয়ে একটি চেয়ার দখল করে বসলাম। ভাবছি যে আমাকে নিতে আসবে সে কি চিনবে আমাকে? আমার নাম সে জানে। পিটার টেলিফোনে আমার নামেই রুম বুক করেছে। আসলে চিনতে কোন কষ্টই হবে না তার। পুরো হলভর্তি চার-পাঁচশ’ মানুষের মাঝখান থেকে আমাকে আলাদা করা যাবে। কারণ এ পর্যন্ত আমার মতো বাদামি চামড়ার আর কাউকে চোখে পড়েনি এখানে। ব্রিসবেনে কি তবে আমাদের দেশের মানুষ খুব একটা নেই? থাকলেও তারা হয়তো এখানে আসেন না। কিন্তু হোস্টেলের মেয়েটা কি জানে আমি সাদা না কালো না বাদামি?
সামনের চেয়ারে আমার দিকে মুখ করে বসে আছে একটা মেয়ে। সেও হয়তো আমার মতো অপেক্ষা করছে। তাকে দেখেছি সারফারস প্যারাডাইস থেকে আমাদের বাসে উঠতে। শুধুমাত্র চেহারা দেখে কোন্ দেশি বোঝার উপায় নেই। সাদা বর্ণের মানুষগুলো ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকায় একই রকম দেখতে। আমার সাথে তার চোখাচোখি হলো কয়েকবার।
আমরা আমাদের গায়ের বর্ণের জন্যই হোক বা এদেশে খুব সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই হোক অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকি। সে দৃষ্টিতে কী থাকে তা জানি না। আমি মেলবোর্নে রপ্ত করা অভ্যেসবশত একটু হাসলাম আবার চোখাচোখি হতেই। সে মনে হলো এর জন্যই অপেক্ষা করছিলো। বললো, "ওয়েটিং ফর দ্যা হোস্টেল?"
"ইয়াহ, ইউ?"
মেয়েটি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে প্রশ্ন করলো, "হোয়ার ইউ ফ্রম?"
এখন আমার কী বলা উচিত? মেলবোর্ন না বাংলাদেশ? বললাম, "আমি বাংলাদেশি, মেলবোর্নে আছি কয়েক বছর ধরে।"
"আমি অস্ট্রিয়ান। কোথায় উঠছো এখানে?"
"অজি ওয়ে হোস্টেল।"
"আমিও। আমার নাম মিকি।"
"আমি প্রদীপ।"
মিকির বাড়ানো হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিলাম একটু। মিকি মেয়েটি খুব মিশুক। পাঁচ মিনিটের আলাপেই সে এমনভাবে কথা বলতে শুরু করলো যেন সে আমাকে ছোটবেলা থেকেই চেনে।
একটু পরেই ছোটখাটো একটা মেয়ে হাতে গাড়ির চাবি সামলাতে সামলাতে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
"আমি অজি ওয়ে হোস্টেল থেকে আসছি। প্রদীপ আর মিকিকে খুঁজছি।"
আমরা দুজনই তার জন্য অপেক্ষা করছি জেনে সে হাত বাড়িয়ে দিলো আমাদের দিকে। মেয়েটার নাম ‘কেই’। দ্বিতীয় প্রজন্মের চায়নিজ অস্ট্রেলিয়ান।
অজি ওয়ে হোস্টেলের গাড়িটা একটু পুরোনো ঝরঝরে টাইপের। হোস্টেলটা কেমন হবে কে জানে।
কেই জিজ্ঞেস করলো, "তোমার ব্যাগেজ কোথায় প্রদীপ?"
আমার ব্যাগটা যেন তার চোখেই পড়ছে না। অবশ্য তার দোষ নেই। মিকির ব্যাগটা মিকির চেয়েও বড় হবে আয়তনে। ছিপছিপে মেয়েটি এই বিশাল পর্বত পিঠে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দৃশ্য নিজে না দেখলে আমারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। এখানে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এই ঢাউস ব্যাগগুলো। নানারকম মোটা মোটা আরামদায়ক বেল্টের সাহায্যে পিঠের ওপর বেঁধে সহজেই চলাফেরা করা যায়। হাত দু’টা ফ্রি থাকে। গোটা একটা চলমান সংসার পিঠের ওপর। তবে আমি ‘ট্রাভেল লাইট, ট্রাভেল মোর’ কথাটা পছন্দ করি। তাই আমার ছোট ব্যাগ মাঝে মাঝে অন্যের চোখেও পড়ে না।
শহরের মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে কেই। ধারাবিবরণী দিচ্ছে কোন্টা কী, কেন, কীভাবে ইত্যাদি। এরা কি গাইড বই মুখস্ত করে বসে থাকে? আমি তার কথায় খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছি না। মনে হচ্ছে একটু পরেই তো নিজের চোখে দেখতে বেরোবো সব।
অজি ওয়ে হোস্টেল |
ট্রানজিট সেন্টার থেকে খুব বেশি দূরে নয় এই অজি ওয়ে হোস্টেল। ক্রিম রঙের ছোট্ট ছিমছাম তিনতলা বাড়ি। কারুকাজ করা চমৎকার বেলকনি বাড়ির সামনে পেছনে। গাড়ির চেহারার সাথে বাড়ির চেহারার কোন সাদৃশ্য নেই।
কেই একা কাজ করছে আজ। অফিস সামলানো থেকে ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং সবই তাকে করতে হয় এবং ছোটখাট এই মেয়েটি সবকিছুই সামাল দিচ্ছে হাসিমুখে। কাজের প্রতি তার আন্তরিকতা দেখে ভাবলাম এটা বুঝি তাদের পারিবারিক ব্যবসা। জ্ঞিজ্ঞেস করে জানলাম আমার ধারণা ঠিক নয়। সে এখানে কাজ করে সপ্তাহে তিনদিন।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা আমাদের নিজ নিজ রুমের চাবি পেয়ে গেলাম। দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই বাঁ দিকের ছোট্ট সিঙ্গেল রুমটা আমাকে দেয়া হলো। আর আমার ঘরের মুখোমুখি ডান দিকের ডাবল রুমে অন্য একজন মেয়ের সাথে মিকি।
No comments:
Post a Comment