ঘুম ভাঙলো সাড়ে ছ'টার দিকে। এত সকালে উঠার কোন ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু রুমের অন্যরা উঠে গেলে বাথরুম খালি পেতে সমস্যা হবে। বিছানা থেকে উঠে দেখি রুমের অবস্থা লন্ডভন্ড। আমার জিনিসপত্র বিছানায় তুলে রেখেছিলাম রাতেই। সেসব ঠিক আছে।
কিন্তু তিনকন্যার সমস্ত সম্পত্তি কার্পেটের ওপর ছড়ানো ছিটানো জামাকাপড়, টুথপেস্ট, জুতা, মোজা, হাতঘড়ি,
লিপস্টিক, রোদচশমা, অন্তর্বাস- কী নেই! অনেকে বলেন মেয়েরা নাকি তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র খুব গুছিয়ে রাখে। গুছিয়ে রাখার নমুনা এই! এরাই নাকি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছে!
সিলিন আর হ্যানেন লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বিছানার দোতলায় ডেফিন ঘুমাচ্ছে কুন্ডুলি পাকিয়ে।সেদিকে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলাম স্বাভাবিক লজ্জায়।একটা রাতপোশাক অন্তত পরা উচিত ছিলো এই মেয়ের।
জিম- জিমের বিছানা খালি। একটা শীতল ভাবনা ঘিরে ধরলো আমাকে। জিমই এদের জিনিসপত্রের এ অবস্থা করে কেটে পড়েনি তো? যাবার আগে নিশ্চয় খালি হাতে যায়নি সে। তার হলুদ ব্যাগ, রোলার ব্লেড কিছুই নেই রুমে। স্বাভাবিক স্বার্থপরতায় নিজের সুটকেসের তালা দেখলাম ঠিক আছে কিনা। না- সব ঠিক আছে। ঘড়িটাও আছে। জুতোর ভেতর রাখা একমুঠো আমেরিকান কয়েন- তাও ঠিক জায়গাতেই আছে। ওগুলো ঘুমানোর সময় আমার পকেটেই ছিলো। পকেটভর্তি কোয়াটার, ডাইম, নিকেল আর পেনি। পকেট থেকে বের করে রাখার কোন জায়গা না পেয়ে বিছানার পাশে খুলে রাখা জুতার ভেতরেই রেখেছিলাম। ঠিক আছে সব।
জিমের ওপর রাগ হচ্ছে আমার। কী দরকার ছিলো ব্যাটা তোর পূর্ব-ইতিহাস আমাকে বলার। কিছুদিন আগেও তুই চুরি করে বেড়াতি, এটা প্রকাশ করার মত কোন গৌরবের কথা হলো? আবার মনে হচ্ছে শুধু
শুধুই জিমকে সন্দেহ করছি। সত্যিকারের চোর হলে সে চুরির প্রসঙ্গ তুলতোই না। পৃথিবীর সব বড় বড় চোররা যে ভালোমানুষ সেজে থাকে, তা নিশ্চয় জিমের অজানা নয়।
শুধুই জিমকে সন্দেহ করছি। সত্যিকারের চোর হলে সে চুরির প্রসঙ্গ তুলতোই না। পৃথিবীর সব বড় বড় চোররা যে ভালোমানুষ সেজে থাকে, তা নিশ্চয় জিমের অজানা নয়।
এটা ওটা ভাবতে ভাবতে বাথরুম, শেভ, স্নান সারা হলো। সারাদিনের জন্য বেরিয়ে পড়া যাক এখন। কিন্তু এরা না ওঠা পর্যন্ত যাওয়াটা কি ঠিক হবে? যদি সত্যিই এদের কিছু হারানো যায়- এরা হয়তো আমাকেই সন্দেহ করবে। ‘কেষ্টা ব্যাটাই চোর’- বলার লোকের অভাব নেই এই শ্বেতমুল্লুকে।
মাত্র সোয়া সাতটা বাজে। এদের ঘুম দেখে মনে হচ্ছে এরা আজ আর উঠবে না। সারাদিন না হোক, অন্তত কয়েক ঘন্টা উঠবে না। ততক্ষণ একবার বাইরে থেকে ঘুরে আসা যায়।
হোস্টেলের করিডোরে অনেকেই হাঁটাহাঁটি করছে। কারো কারো গায়ে রাতের শিথিল পোশাক। সিঁড়ির মুখেই রান্নাঘর। সেখানে লম্বা টেবিলে অনেকগুলো পাউরুটি। এর মধ্যেই কয়েকজন খেতে বসে গেছে। টোস্টারে পাউরুটি চাপিয়ে অপেক্ষা করছে মোটা চশমার এক মহিলা। টেবিলে বালতি ভর্তি ঘন তরল, মেয়োনিজ বলে মনে হচ্ছে। এসবই তাহলে হোস্টেলের ফ্রি ব্রেকফাস্ট। এগুলো খেয়ে ফাস্টিং ব্রেক করার কোন ইচ্ছে হলো না।
রান্নাঘরের বেসিনের অবস্থা আমাদের রুমের বাথরুমের বেসিনের চেয়ে কোন অংশে উন্নত নয়। একটা ট্যাপ থেকে সারাক্ষণই পানি ঝরছে। অভ্যাসবশত বন্ধ করতে চাইলাম, বিশেষ সুবিধে হলো না। রান্নাঘরের কৌতূহল মিটে গেলো।
করিডোরের শেষ প্রান্তে লাইব্রেরি। একটি শেল্ফে বই আছে কিছু, ভ্রমণ গাইড, টেলিফোন ডাইরেক্টরি ছাড়াও বেশ কিছু থ্রিলার। একপাশে একটি কম্পিউটার দেখা যাচ্ছে। লগ ইন করার জন্য এক ডলারের একটি নোট ঢুকাতে হয় একটা ছোট্ট মেশিনে। কম্পিউটারের এমন মিটার আগে দেখিনি। করিডোরের লম্বা দেয়ালের একটা বোর্ডে অনেকগুলো গ্রিটিংস কার্ড লাগানো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে যারা এখানে রাত কাটিয়েছে- তাদের কেউ কেউ পাঠিয়েছে কার্ডগুলো।
হোস্টেলের গেটের বাইরে পা রাখতেই ফুটপাতে তারার মেলা। মোজাইক করা ফুটপাতে ব্রোঞ্জের স্টার, পাশে লেখা আছে তারকার নাম ও পেশা। হলিউড বুলেভার্ডের দু'পাশের ফুটপাত জুড়ে এই তারকার সারি চলে গেছে প্রায় দু'মাইল। হলিউড ওয়াক অব ফেইম। মেরিলিন মনরো থেকে জুলিয়া রবার্টস, ক্লার্ক গ্যাবল থেকে টম হ্যাংকস, আলফ্রেড হিচকক থেকে স্টিভেন স্পিলবার্গ, মাইকেল জ্যাকসন থেকে ব্রিটনি স্পিয়ার্স- কে নেই এখানে!
এই স্টারগুলো মেধা বা যোগ্যতার মাপকাঠিতে লাগানো হয়নি। লাগানো হয়েছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। হ্যারি সুগারম্যান নামে এক ধুরন্ধর ব্যবসায়ীর মাথায় প্রথম আসে এই আইডিয়া। প্রাথমিক ভাবে নিজের পয়সায় কয়েকটি স্টার লাগিয়ে দেন তিনি। ১৯৬০ সালে জোয়ান উডওয়ার্ডকে দিয়ে শুরু। এখন প্রায় দু'হাজারের বেশি স্টার এই ফুটপাত জুড়ে। যে কেউ চাইলে যে কারো নামে এই স্টার লাগিয়ে নিতে পারে, এমনকি নিজের নামেও। হলিউড চেম্বার অব কমার্স থেকে কিনতে হয় এই স্টার এবং তা লাগানোর জায়গা। বেশির ভাগ স্টারই লাগিয়েছে স্টারদের ফ্যানক্লাব। এই স্টারদের নিয়মিত ধুয়ে মুছে ঝকঝকে রাখার খরচও তারাই বহন করে। আর যাদের ফ্যান নেই তাদের অনেকে গাঁটের পয়সা খরচ করে নিজেদের নামে স্টার লাগিয়ে নিয়েছে। সেজন্যই দেখা যাচ্ছে স্টিভেন স্পিলবার্গের পাশের স্টারটার নাম পরিচয় দেখার পরেও তাকে চেনা দায়।ডানপাশের ফুটপাত ধরে স্টার দেখতে দেখতে চলে গেলাম অনেকদূর পর্যন্ত।
ম্যাকডোনাল্ডস থেকে খাবার কিনে অন্যপাশের ফুটপাতের স্টার পড়তে পড়তে ফিরে এলাম হোস্টেলে। রুমে এসে দেখি তিনকন্যা উঠে গেছে। ছড়ানো জিনিসপত্র এখন অনেকটাই গোছানো। কারো চেহারাতেই উদ্বেগ বা চিন্তার কোন ছাপ নেই। আমাকে দেখে তিনজনই হৈ হৈ করে উঠলো। চুরি সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নয়, কেবল ‘গুড মর্নিং’।
জিমকে চোর ভেবেছি ভাবতেই খারাপ লাগছে এখন। হাতের খাবারটা শেষ করে বেরিয়ে পড়বো ভাবছি। কোথায় যাবো এখনো ঠিক করিনি। যে কোন একদিকে গেলেই হলো। কিন্তু আমার নিজস্ব পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো ফরাসি হস্তক্ষেপে।
ডেফিন, সিলিন, হ্যানেন তিনজন একসাথে কিছু বলছে আমাকে। এদের সমস্যা হলো একজন কোন একটা কথা শুরু করলে কয়েক সেকেন্ডের ভেতর দেখা যায় তিনজনেই সমানে
কথা বলছে। অনেকগুলো বাক্য ব্যয় করে তারা যা বললো, তার সারমর্ম হচ্ছে, আমার যদি ভীষণ কোন আপত্তি না থাকে- তাহলে চারজন একসাথে বেড়াতে বের হতে পারি কিনা। আমার ভীষণ কোন আপত্তি আপাতত নেই। সুতরাং-
কথা বলছে। অনেকগুলো বাক্য ব্যয় করে তারা যা বললো, তার সারমর্ম হচ্ছে, আমার যদি ভীষণ কোন আপত্তি না থাকে- তাহলে চারজন একসাথে বেড়াতে বের হতে পারি কিনা। আমার ভীষণ কোন আপত্তি আপাতত নেই। সুতরাং-
"চলো, বেরিয়ে পড়ি।"
"দাঁড়াও একটু, আমরা রেডি হয়ে নিই।"
তিনজনই পটাপট জামাকাপড় খুলতে শুরু করলো আমার সামনেই। অস্বস্তি এড়াতে চলে গেলাম রুমের বাইরে। তিনজন একসাথে চিৎকার করে উঠলো, ‘আমাদের ফেলে চলে যেও না কিন্তু’।
হলিউডে আসার সময় ডেফিনরা কিছু হোমওয়ার্ক করে এসেছে। কোথায় কোথায় যাবে, কী কী করবে ইত্যাদি। অস্ট্রেলিয়ায় দেখেছি শহরের মোড়ে মোড়ে ইনফরমেশান সেন্টার। এখানে অনেকক্ষণ খুঁজেও কোন ইনফরমেশান সেন্টারের খোঁজ পেলাম না। সিটিম্যাপগুলো অস্ট্রেলিয়ায় ফ্রি পাওয়া যায়, এখানে তা দু’ডলারে বিক্রি হচ্ছে দোকানে। এদেশে মনে হয় সবকিছুই দাম দিয়ে কিনতে হয়।
ফুটপাত ধরে স্টারের ওপর পা ফেলে ফেলে হাঁটছি। প্রিয় কোন স্টারের নাম দেখলেই তিন ফরাসিনী একসাথে লাফিয়ে উঠছে। আমিও দাঁড়াচ্ছি আমার প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীদের স্টারের সামনে।
একটা ডে-ট্যুরে যাবার সিদ্ধান্ত হলো। স্টারলাইন ট্যুরস এর অফিসটি বেশ খানিকটা দূরে। মনে হচ্ছে এরা মনোপলি ব্যবসা করছে এখানে। অন্য কোন ট্যুর কোম্পানি দেখলাম না আশেপাশে কোথাও। সোয়া ন’টা বেজে গেছে। ট্যুরবাসগুলো ইতোমধ্যেই চলে গেছে। যাবো কি যাবো না করতে করতে অনেকক্ষণ লাগিয়ে দিলো এই তিনজন। শেষপর্যন্ত টিকেট কাটলাম স্টারলাইন ট্যুর টু-এ। সারাদিনের ট্যুর। হলিউড সিটি ঘুরিয়ে দেখাবে, এরপর চিত্রতারকাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে।
ট্যুর শুরু হয়ে গেছে প্রায় পনেরো মিনিট আগে। ম্যানেজার মহিলা ফোন করলেন ট্যুর ড্রাইভারকে। তারা এখন হলিউড বাওলের (Hollywood Bowl) ওখানে। অন্য একটি গাড়িতে আমাদের পৌঁছে দেয়া হলো সেখানে। পনেরো জনের একটি টিম নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ল্যারি, ট্যুর ড্রাইভার প্লাস গাইড। পঞ্চান্ন বছরের বলিষ্ঠ যুবক ল্যারি।
হলিউড মিউজিক বাওল - সঙ্গীতের বাটি - দেখা হয়ে গেছে তাদের। আমরা যেহেতু শেষে এসেছি- ল্যারি আমাদের সময় দিলো দশ মিনিট। দশ মিনিটের মধ্যেই যেন আমরা হলিউড বাওল দেখে গাড়ির কাছে ফিরে আসি।
পিচ ঢালা ছোট্ট রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের উপর, হলিউড হিলের একদিকে। বামপাশে ছোট্ট একটি স্টিলের ওভারব্রিজ পার হলেই হলিউড মিউজিক বাওলে ঢোকার পথ। পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল একটি বাটির মত জায়গা। স্টেডিয়ামের গ্যালারির মত পাকা গ্যালারি তার তিনদিক জুড়ে।
হলিউড মিউজিক বাওলে ফরাসিনীদের সাথে |
আমরা ঢুকেছি বাটির পেট বরাবর। সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে কিছুদূর উঠার পরে দূরে পাহাড়ের গায়ে দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত ‘HOLLYWOOD’ সাইন। তিনদিক ঘিরে গ্যালারি- নিচের দিক থেকে স্তরে স্তরে উঠে গেছে অনেক উপরে। নিচে সামনের দিকটায় বিশাল একটি খোলা স্টেজ। প্রতিবছর সামারে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের লাইভ কনসার্ট হয় এখানে, একসাথে পনেরো হাজার দর্শক বসতে পারে।
খোলা স্টেজটির উদ্বোধন করা হয়েছে প্রায় এক শতাব্দী আগে। ১৯১৬ সালে জুলিয়াস সিজার অভিনীত হয় এখানে। সেই থেকে শুরু।
১৯২২ সাল থেকে শুরু হয় নিয়মিত কনসার্ট। এপর্যন্ত বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে এর অঙ্গসজ্জা। শেষবার বড় ধরনের নির্মাণ কাজ হয়েছে ১৯৮২ সালে। ২০০০ সালে পরিকল্পনা করা হয়েছিলো পুরোটাই ভেঙে আবার নতুন করে আরো বড় একটি বাটি নির্মাণের। আরো উন্নত সব সাউন্ড সিস্টেম বসানোর পরিকল্পনাও ছিলো। কিন্তু সংরক্ষণবাদীরা আদালতে মামলা করে দেয় এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। ফলে প্রকল্পটি ঝুলে আছে এখনো।
একপাক ঘুরে আসতেই দশ মিনিটের বেশি সময় লেগে গেলো। হলিউড বাওল মিউজিয়ামে আর ঢোকা হলো না।
গাড়ির কাছে এসে দেখি সবাই খুব অসহিষ্ণুভাবে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ল্যারি বললেন আমরা দেরি করে ফেলেছি। যেহেতু এটা সারাদিনের ট্যুর এবং অনেককিছুই দেখার আছে- সেহেতু সময়ের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
ল্যারি বুঝতে পেরেছেন সিলিনরা ইংরেজি ভালো বুঝতে পারে না। সুতরাং তাদেরকে সময়মতো তাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর দায়িত্ব দিলেন আমাকে। আমি একটু বিরক্ত হলাম, কিন্তু আপাতত কিছু করার নেই।
গাড়িতে অন্যান্য যাত্রীদের সবাই বুড়োবুড়ি। আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে এসে জড়ো হয়েছেন এখানে, নাকি কোন ওল্ডহোম থেকে তাঁদের জন্য ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে বুঝতে পারছি না। সবাই গোমড়া মুখে বসে আছেন। হয়তো আমাদের ওপর রেগে আছেন। বুঝতে পারছি আরো সমস্যায় পড়তে হবে সামনে। আমার মনে হচ্ছে হলিউড বাওলে এঁদের অনেকেই ঢোকেননি। আর যাঁরা ঢুকেছিলেন তাঁরাও বেরিয়ে এসেছেন দু'মিনিট পরেই। কারণ ভালোভাবে দেখতে হলে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে অনেকদূর। অতটা হাঁটুর জোর এঁদের কারোরই নেই। সুতরাং আজকের ট্যুর আমাদের জন্য খুব একটা উপভোগ্য হবে আশা করতে পারছি না।
গাড়ি চলছে হলিউডের অলিগলি পেরিয়ে। ল্যারি মাইক্রোফোনে ধারাবিবরণী দিচ্ছেন। হলিউড বুলেভার্ডের পরিচিত পথে এগোচ্ছি এখন। নানারকম মিউজিয়াম আছে এখানে। সময় করে ঢুকতে হবে এসব মিউজিয়ামে। গাড়ি থামলো কোডাক থিয়েটারের পাশে মান্স চায়নিজ থিয়েটারের (Maan’s Chinese Theatre) সামনে। রাস্তার ওপারেই আমাদের হোস্টেল।
তিন ফরাসিনীকে বললাম, “দয়া করে এখানে কোথাও আটকে থাকবে না। এই জায়গায় থাকি আমরা। সুতরাং যে কোন সময়ে দেখতে পারবো এটা। আপাতত দশ মিনিট যা খুশি করো।”
ল্যারি বলেছিলেন পনেরো মিনিট। আমি বেশি সিনসিয়ার হতে গিয়ে পাঁচ মিনিট হাতে রেখে দিয়েছি।
মান্স চায়নিজ থিয়েটারটি চায়নিজ স্থাপত্যের ধরণে গড়া একটি সিনেমা থিয়েটার। কোডাক থিয়েটারের গা ঘেঁষেই এর অবস্থান। অনেক পুরনো (১৯২৭ সালে তৈরি) হলেও এখনো ঝকঝকে নতুন দেখতে। এর খোলা চত্বরে ফ্লোর জুড়ে বিখ্যাত চিত্রতারকাদের হাত ও পায়ের ছাপ এবং তাদের অটোগ্রাফ। নরম সিমেন্টের ওপর তাদের ছাপ নিয়ে রাখা হয়েছে যখন যাকে রাজী করানো গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় আশিজন নায়ক নায়িকার হাত-পায়ের ছাপ আছে এখানে। লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দেখার জন্য। ছবি ওঠাচ্ছে, অবাক হচ্ছে, চিৎকার করছে, ট্যুরিস্টরা যা যা করে সবকিছুই করছে। টম হ্যাংকসের পায়ের ছাপে পা রেখে দেখলাম তাঁর জুতার সাইজ আমার জুতার সাইজের চেয়ে অনেক বড়। ড্যাঞ্জেল ওয়াশিংটনের হাতের মাপ আমার হাতের সমান। কিন্তু তাঁর অভিনয় ক্ষমতা? মাপার চেষ্টা না করাই ভালো।
কোডাক থিয়েটারের সিঁড়িতে |
এখান থেকে দু’পা বাড়ালেই কোডাক থিয়েটার। নতুন এই বিশাল থিয়েটার কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় অস্কার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আগে এখানে কী ছিলো আমি জানি না। পাঁচশো সাতষট্টি মিলিয়ন ডলারের এই কমপ্লেক্স এখন হলিউড রেনেসাঁর কর্নারস্টোন। পাঁচশো সাতষট্টি মিলিয়ন ইউএস ডলারে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
এই থিয়েটার কমপ্লেক্সে শত শত সৌখিন দোকান, রেস্টুরেন্ট, নাইটক্লাব, বিলাসবহুল হোটেল। চল্লিশ হাজার বর্গফুট ক্ষেত্রফলের একটি বলরুম আছে এখানে। কী নেই?
অডিটোরিয়ামের ক্ষেত্রফল একলাখ আশি হাজার বর্গফুট। থিয়েটারের মেন গেট থেকে অডিটোরিয়ামের সিঁড়ি পর্যন্ত দু’পাশে লাগানো আছে ১৯২৮ সাল থেকে শুরু করে এপর্যন্ত অস্কার পাওয়া সব শ্রেষ্ঠ ছবির নাম।অডিটোরিয়ামের নাম ‘কোডাক থিয়েটার’ রাখার জন্য কোডাক ফিল্ম কোম্পানি দিয়েছে পঁচাত্তর মিলিয়ন ডলার বা
সাড়ে চারশো কোটি টাকা।
সাড়ে চারশো কোটি টাকা।
চারদিকে চোখ ঝলসানো আলো। চাকচিক্যময় আহ্বান সবগুলো স্টোরের। কোন একটি স্টোরে ঢুকে গেলে তিন ফরাসিনীকে আর বের করা যাবে না। তাই তাড়া দিলাম তাদের। এক রকম জোর করেই নিয়ে এলাম গাড়ির কাছে।
বুড়োবুড়িদের একজনও ফিরে আসেননি এখনো। ল্যারি গাড়ির বাইরে অন্যান্য গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে কথা বলছেন। তাঁর বেঁধে দেয়া পনেরো মিনিট সময় পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। কিন্তু তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তাতে কিছু যায় আসে না। আমার মেজাজ এবার খারাপ হবার পথে। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখলে মেজাজ তো বিগড়াতেই পারে।
রাস্তায় এখন নানারকম নকল স্টার ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভালুক কিংকং, স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান, বায়োনিক ওম্যান, ব্যাটম্যান, মেরিলিন মনরো সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকে ছবি ওঠাচ্ছেন তাঁদের সাথে দাঁড়িয়ে। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য সম্মানী দিতে হয়। এটাই তাঁদের পার্টটাইম বা ফুলটাইম জীবিকা।
মান্স থিয়েটারের পাশে ফুটপাতের উপর চার্লি চ্যাপলিনের একটি মূর্তি। ব্রোঞ্জের এই মূর্তির পাশে একটি ছোট্ট মুভি ক্যামেরা আকৃতির ভিডিও প্লেয়ারে অনবরত চলছে চার্লি চ্যাপলিনের
সাইলেন্ট মুভি। চার্লি চ্যাপলিনের ডামিকেও দেখা গেলো মেরিলিন মনরোর সাথে হাঁটছেন। এই চ্যাপলিনকে দেখে বোঝার উপায় নেই আসল না নকল। এই হলিউডেই একবার আয়োজন করা হয়েছিলো চার্লি চ্যাপলিন সাজার প্রতিযোগিতা। চার্লি চ্যাপলিন নিজেও তখন সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি হয়েছিলেন তৃতীয়।
সাইলেন্ট মুভি। চার্লি চ্যাপলিনের ডামিকেও দেখা গেলো মেরিলিন মনরোর সাথে হাঁটছেন। এই চ্যাপলিনকে দেখে বোঝার উপায় নেই আসল না নকল। এই হলিউডেই একবার আয়োজন করা হয়েছিলো চার্লি চ্যাপলিন সাজার প্রতিযোগিতা। চার্লি চ্যাপলিন নিজেও তখন সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি হয়েছিলেন তৃতীয়।
নকল নায়ক নায়িকাদের ভীড়ে অবাক হয়ে দেখলাম একজন নকল ওসামা বিন লাদেনও আছেন। তাঁর সাথে অবশ্য কেউ ছবি ওঠাতে চাচ্ছেন না। এখানে ওসামা বিন লাদেনকে দেখে কেউ একটুও বিচলিত হচ্ছেনা। হলিউডে না হয়ে আমেরিকার কোন এয়ারপোর্টে এই মূর্তি দেখা দিলে হয়তো পুরো আমেরিকাই একসাথে লাফ দিয়ে উঠবে।
তিন ফরাসিনী দেখি একজন আমেরিকান ছোকরাকে ঘিরে কথা বলছে। কাছে গিয়ে দেখলাম তারা একটা কাগজে সাইন করছে। তাদের চোখে মুখে উপচে পড়া উচ্ছাস দেখে মনে হচ্ছে তারা যেন এইমাত্র লিওনার্দো ডি কাপ্রিও’র সাথে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলো।
কিন্তু আসল ব্যাপার হলো হলিউডের বিভিন্ন টিভি স্টুডিওতে প্রতিদিন অনেকগুলো প্রোগ্রাম রেকর্ড করা হয়। অসংখ্য ‘শো’ যেখানে দর্শকের দরকার হয়। চাহিদা অনুযায়ী নির্মাতারা দর্শক পান না এখানে। বিনা পারিশ্রমিকে একটি সেকেন্ডও দিতে রাজী নয় এখানকার মানুষ। তাই কোম্পানির এজেন্ট খাতাপত্র হাতে হলিউডের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে লোক ধরার জন্য। ট্যুরিস্টরাই প্রধান টার্গেট। টিভি রেকর্ডিং দেখা আর সাথে সাথে টিভি প্রোগ্রামে মুখ দেখানোর সুযোগের কথা ভেবে রাজী হয়ে যায় অনেকেই। সিলিনরাও খুব খুশি। ডেফিন আমাকেও অনুরোধ করছে তাদের সাথে সাইন করার জন্য। আমি রাজী হলাম না। কারণ রেকর্ডিং হবে রাতের বেলা আর টিভি স্টুডিওটাও অনেক দূরে। আসা যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নিজেকে। অতটা উৎসাহ আমার নেই।
পনেরো মিনিটের জায়গায় আধঘন্টা কাটিয়ে হেলেদুলে গাড়িতে এসে বসলেন আমার সহযাত্রীরা। আশা করেছিলাম ল্যারি তাঁদের কিছু বলবেন আর তাঁরাও সরি টরি কিছু বলবেন। কিন্তু ল্যারিও তাঁদের কিছু বললেন না, তাঁরাও মনে হলো সময়ের ব্যাপারে ভীষণ উদাসীন হয়ে গেলেন। রাগে আমার সর্বাঙ্গ জ্বলে গেলো।
সানসেট বুলেভার্ড |
সানসেট বুলেভার্ডে সিলিন |
সানসেট বুলেভার্ডে ট্রেন-রেস্টুরেন্ট |
গাড়ি এবার হলিউড বুলেভার্ড ছেড়ে সানসেট বুলেভার্ডে ঢুকলো। ল্যারি বলে যাচ্ছেন এখানকার বিভিন্ন রাস্তা, বিল্ডিং আর প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস ভূগোল। আর্নল্ড সোয়ার্জনেগার- ঔপন্যাসিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য যাঁর নাম দিয়েছেন ‘দানবকুমার’- এখানে একটি বিলাসবহুল
হোটেলের মালিক। সিনেমা জগতের আরো অনেক তারকা থাকেন এদিক ওদিক। অভিনয়ের পাশাপাশি এঁরা অন্যান্য ব্যবসাও করেন। ইনকাম ট্যাক্স অ্যাডজাস্ট করার জন্য বা কালো টাকা সাদা করার জন্য তাঁদের ব্যবসা করতে হয়।
হোটেলের মালিক। সিনেমা জগতের আরো অনেক তারকা থাকেন এদিক ওদিক। অভিনয়ের পাশাপাশি এঁরা অন্যান্য ব্যবসাও করেন। ইনকাম ট্যাক্স অ্যাডজাস্ট করার জন্য বা কালো টাকা সাদা করার জন্য তাঁদের ব্যবসা করতে হয়।
সানসেট বুলেভার্ডকে বিলবোর্ডের সাম্রাজ্য বলা চলে। রাস্তার দু'পাশে বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন বোর্ড। একটু পর পরই রাস্তার পাশের অন্যসব দৃশ্য আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে এসব বিজ্ঞাপন। সিনেমার, অন্তর্বাসের, মদের, হাউজিং সোসাইটির, টেলিভিশন প্রোগ্রামের হাজারো রকমের বিজ্ঞাপনে ঢাকা রাস্তার
দু'পাশের দৃশ্য।
দু'পাশের দৃশ্য।
গাড়ি চলে এলো বেভারলি হিলস- লস এঞ্জেলেসের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। হলিউডের সুপারস্টাররা এখানেই থাকেন। বেভারলি হিল সিটি সেন্টারের কাছে গাড়ি পার্ক করলেন ল্যারি। আমাদের নামিয়ে দিয়ে বললেন এক ঘন্টা পরে এসে নিয়ে যাবেন। গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন ল্যারি।
চারপাশের উঁচু উঁচু বিল্ডিং, ডিপার্টমেন্ট স্টোর আর যত্নে সাজানো গাছপালা দেখে মন ভরে যায়। সবকিছুতেই সৌখিনতার ছাপ এখানে। হ্যানেন উচ্ছসিত হয়ে বললো, ‘প্রাউড টু বি এ ফ্রেঞ্চ’। গর্বিত হবারই কথা। বিশ্ববিখ্যাত সব ফরাসি কোম্পানির বিরাট বিরাট শো রুম এখানে।
মনভোলানো নানারকম সৌখিন পোশাকে ভর্তি এদিকের স্টোরগুলো। সৌখিন জামাকাপড়ের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নেই। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ছোটবেলা থেকেই নিজের প্রয়োজনকে অত্যন্ত ছোট পরিসরে বেঁধে রাখতে বাধ্য
হয়েছি। ফলে সৌখিন হতে শিখতে পারিনি কোনদিন। তাই বিশাল বিশাল ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর প্রতিও আমার কোন আকর্ষণ নেই। আমার কারণে সিলিনরাও ঢুকছে না কোন দোকানে। কিন্তু বিশেষ একটি স্টোরে তারা ঢুকবেই। কারণ কী? এই বিশেষ স্টোরেই ‘প্রিটি ওম্যান’ সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। সিনেমায় জুলিয়া রবার্টসকে এই স্টোরেই প্রথমে ঢুকতে দেয়া হয়নি- পরে নায়ক রিচার্ড গিয়ার এসে- ইত্যাদি ইত্যাদি মজার সব সিনেম্যাটিক ঘটনা। শুনে আমিও ঢুকলাম তিন ফরাসিনীর পিছু পিছু।
হয়েছি। ফলে সৌখিন হতে শিখতে পারিনি কোনদিন। তাই বিশাল বিশাল ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোর প্রতিও আমার কোন আকর্ষণ নেই। আমার কারণে সিলিনরাও ঢুকছে না কোন দোকানে। কিন্তু বিশেষ একটি স্টোরে তারা ঢুকবেই। কারণ কী? এই বিশেষ স্টোরেই ‘প্রিটি ওম্যান’ সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। সিনেমায় জুলিয়া রবার্টসকে এই স্টোরেই প্রথমে ঢুকতে দেয়া হয়নি- পরে নায়ক রিচার্ড গিয়ার এসে- ইত্যাদি ইত্যাদি মজার সব সিনেম্যাটিক ঘটনা। শুনে আমিও ঢুকলাম তিন ফরাসিনীর পিছু পিছু।
বেভারলি হিল্স-এর রাস্তায় |
‘প্রিটি ওম্যান’ ছবিতে রিচার্ড গিয়ার যে হোটেলে থাকতেন সে হোটেলটিও দেখা গেলো এখান থেকে কয়েক ব্লক পরে। ‘রিজেন্ট বেভারলি উইলশায়ার হোটেল।’ ভেতরে ঢুকতে যেতেই ভদ্রভাবে বাধা দিলো গেটের সিকিউরিটি অফিসার। হোটেলের গেস্টদের চেহারা কি এরা মুখস্ত করে রাখে? নাকি আমাদের চেহারা দেখেই বোঝা যায় যে এখানে খরচ
করার মত অর্থ আমাদের নেই। নাকি পোশাক? অনেক হোটেলেই ড্রেস কোড থাকে। এখানেও হয়তো আছে।
করার মত অর্থ আমাদের নেই। নাকি পোশাক? অনেক হোটেলেই ড্রেস কোড থাকে। এখানেও হয়তো আছে।
নির্দিষ্ট সময়ে ল্যারি এসে আমাদের উঠিয়ে নিলেন তাঁর গাড়িতে। কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি এসে ঢুকলো ফার্মার্স মার্কেটে। এখানকার ফার্মারস মার্কেট মেলবোর্নের ভিক্টোরিয়া মার্কেটের মতোই। এই মার্কেট প্রধানত খাবারের দোকানের জন্য বিখ্যাত। দেড়শোরও বেশি খাবারের দোকান আছে এখানে। প্রতিদিনই চলছে আন্তর্জাতিক খাদ্য উৎসব।
লাঞ্চ করা ও মার্কেট ঘুরে দেখার জন্য এক ঘন্টা সময় এখানে। এখানেও বেশ কিছু বড় বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর আছে। চোখ-ভোলানো মনভোলানো নানারকম আয়োজন ছড়িয়ে আছে এখানে। সিনেমার শ্যুটিং হচ্ছে এক জায়গায়। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে শখের চিত্র পরিচালক।
ফার্মার্স মার্কেটে |
এদিক সেদিক ঘুরে খাবারের দোকানের দিকে গেলাম। একটি গ্রিক খাবারের দোকানে ঢুকে মাছের অর্ডার দিলাম। অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় এখানে। অর্ডার পাবার পরেই এরা খাবার তৈরি করে।
ডেফিনরা অনেক হিসেবপত্র তর্কবিতর্ক করে আর গবেষণার পরে তিনজনে মিলে একটা পিৎজা অর্ডার দেবার ব্যাপারে একমত হলো। হাতে এখনো দশ-বারো মিনিট সময় আছে। ধীরে সুস্থে গল্প করতে করতে খাওয়া গেলো। আমার ফিস অ্যান্ড ফ্রাই দুটোই ফরাসিনীদের খুব পছন্দ। তারা নিঃসংকোচে আমার খাবারে হাত বসালো। কিন্তু তাদের চিজ দেয়া পিৎজা আমার একটুও পছন্দ নয়। আমার পছন্দ না হওয়াটাও তাদের খুব পছন্দ হলো।
নির্দিষ্ট সময়ের দু’মিনিট আগেই পৌঁছে গেলাম গাড়ির কাছে। দেখি সবাই আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছে। গাড়িতে উঠতেই পেছনের সিট থেকে কয়েকজন মন্তব্য করলেন আমাদের সময়জ্ঞান নিয়ে। আমি চোখ তুলে তাকালাম একটু, কিন্তু কিছু বললাম না। বুড়োবুড়িদের চোখেমুখে বিরক্তি। তাদের যদি সবকিছুতেই বিরক্তি লাগে তাহলে পয়সা খরচ করে বেড়াতে বেরোনো কেন? আর একঘন্টা সময় দিলে আধঘন্টা পরেই ফিরে এসে চলে যাবার তাড়া কেন?
সিলিন, ডেফিন, হ্যানেনের কে কী বললো তাতে কিছু যায় আসে বলে মনে হচ্ছে না। অবশ্য তারা হয়তো বুঝতেও পারছে না যে আমাদের নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে। তারা দিব্যি ফরাসি ভাষায় চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কথোপকথন। বুড়োবুড়িরা তাতেও বিরক্তি দেখাচ্ছেন। তাঁরা কেন ভাবছেন যে সবাই তাঁদের মত রামগরুড়ের ছানা হয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে! নাকি বুড়ো হয়ে গেলে পৃথিবীর সবাইকেই বুড়ো বলে মনে হয়!
উইলশায়ার বুলেভার্ড পেরিয়ে একটি পার্কের সামনে গাড়ি থামলো। পার্কের নাম হ্যানকক পার্ক (Hancock Park)। ভেতরে কি সব মোরগ-মুরগি নাকি? এ জায়গার নামও অদ্ভুত লম্বা, র্যাঞ্চো লা ব্রিয়া টার পিটস (Rancho La Brea Tar Pits)। ফরাসি নাম বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ফরাসিনীরা কোন তথ্য দিতে পারলো না এ ব্যাপারে। ল্যারির কাছে পরিষ্কার করে জেনে নিলাম কতক্ষণ থামবেন তিনি এখানে।
তিনি বললেন, "ফিফটিন মিনিটস অর সো।"
"গিভ মি আ ডেফিনিট নাম্বার ম্যান।"
"টুয়েন্টি মিনিটস।"
আমি আমার স্টপওয়াচ চালু করে দিলাম।
এই জায়গাটি প্রাগৈতিহাসিক। পার্কের ভেতরে গিয়েই দেখতে পেলাম নানারকম বিলুপ্ত প্রাণী ও উদ্ভিদের নমুনা রাখা আছে এখানে। একটা জলাভূমিতে বুদবুদ করে গ্যাস উঠছে। একজায়গায় ছোট একটা পুকুরের মত আছে- সেখানে বিশাল আকৃতির একটা ম্যামথ। চল্লিশ হাজার বছর আগে তুষারযুগে (Ice Age) এই লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘুরে বেড়াতো এসব ম্যামথ।
র্যাঞ্চো লা ব্রিয়া হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত জীবাশ্ম এলাকার (Fossil Locality) একটি। বেশ বড় একটি প্রত্নত্বাত্তিক জাদুঘর আছে এখানে, নাম পেইজ মিউজিয়াম (Page Museum)। প্রত্নতত্ত্ববিদ জর্জ পেইজের (George C Page) নামে এই জাদুঘর। কিন্তু সময় নেই সেখানে যাবার।
পার্কে গাছপালা বেশি নেই। কিছু বাঁশঝাড় আছে, আর আছে প্রাগৈতিহাসিক খনিজ কয়লা- যাদের বয়স কমপক্ষে চল্লিশ হাজার বছর।
পার্কের একপাশে একচক্কর দিতেই বারো মিনিট কেটে গেলো। ডেফিন আমার সাথে আছে। সিলিন আর হ্যানেন একটু পেছনে আসছে। সিলিন সিগারেট ধরিয়েছিলো। এখন তাতে শেষ টান দিচ্ছে।
গাড়ির কাছে এসে দেখি সবাই উঠে বসে আছেন আর ল্যারি নিচে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের জন্য। হাতের ইশারায় ডাকছেন আমাদের।
ডেফিন আর আমি যখন গাড়িতে উঠে বসলাম তখনো দু'মিনিট বাকি আছে বিশ মিনিট হবার। পেছন থেকে একজন মন্তব্য করলেন, “এ দু'জনকে ফেলে চলে যাও।”
ল্যারি অবশ্য তা করলেন না। সিলিন আর হ্যানেন যখন গাড়িতে উঠে বসলো তখনো ত্রিশ সেকেন্ড বাকী আছে দু'মিনিট হবার। আমি স্টপওয়াচ বন্ধ করলাম। গাড়িতে নানারকম মন্তব্য চলছে আমাদের নিয়ে।
একজন একটু বেশি স্মার্ট হয়ে উপদেশই দিয়ে দিলেন, "ইউ শুড হ্যাভ অ্যাটলিস্ট মিনিমাম
রেস্পনসিবিলিটি।"
রেস্পনসিবিলিটি।"
মাথায় আগুন ধরে গেলো আমার। এনাফ ইজ এনাফ। যথেষ্ট হয়েছে। ডেফিন আর আমি বসেছি সামনের সারিতে। উপদেশ দেয়া মানুষটি আমাদের পেছনের সারিতে বসা। আমি ঘাড় ফিরিয়ে তাঁর চোখে চোখ রেখে বললাম, "এক্সকিউজ মি মিস্টার। আপনারা নিজেদের কী ভাবছেন জানি না। ল্যারি বলছিলো এখানে বিশ মিনিট থামবে। সেই বিশ মিনিট হতে এখনো আধা মিনিট বাকী। আমরা কোনসময়ে একটুও দেরি করিনি- অথচ আপনারা যা খুশি বলে যাচ্ছেন আমাদের। আপনারা যদি ঠিকমত সময় কাটাতে না পারেন, তারজন্য আমরা দায়ী নই। আপনারা যে বললেন আমাদের ফেলে চলে যেতে, আমরাও কিন্তু আপনাদের সমান টাকা দিয়েই গাড়িতে উঠেছি। নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবেন তাতে কোন দোষ নেই, কিন্তু অন্যকে এত গাধা ভাবছেন কেন?"
উত্তেজিত হয়ে একটা লম্বা বক্তৃতাই দিয়ে ফেললাম মনে হচ্ছে। ডেবি ব্রডবার আমার ইংরেজি উচ্চারণে অস্ট্রেলিয়ান টান বুঝতে পেরেছিলো। এঁরাও নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে আমাকে যতটা মাটির মানুষ মনে করেছিলেন আমি ততটা নই।
এতক্ষণ ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলতে পেরে ভালোই লাগছে। গাড়িতে এখন পিনপতন নীরবতা। আমি পেছনে তাকাচ্ছি না আর। ডেফিন আমার বাম হাতটা চেপে ধরে আছে দু’হাতে। সে সম্ভবত খুব ভয় পেয়ে গেছে।
গাড়ি চলছে বেশ দ্রুত। কোনদিক থেকে কোনদিকে যাচ্ছে জানিনা। অনেকক্ষণ পরে ল্যারি কথা বলে নীরবতা ভাঙলেন। লস অ্যাঞ্জেলেস ডাউন টাউনের দিকে যাচ্ছি আমরা। বেশ উঁচু উঁচু বিল্ডিং এখানে। ডাউন টাউন সিভিক সেন্টার মলের কাছে মিউজিক সেন্টারের সামনে গাড়ি থামালেন ল্যারি। আমি নামলাম না এখানে। যাঁরা নামলেন তাঁরাও দেখি দ্রুত ফিরে এলেন গাড়িতে। বোঝাই যাচ্ছে কোথায় যেন তাল কেটে গেছে। আমার নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করেছে এখন। মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক করিনি। মোলায়েম করে কথা বলার আর্টটা শিখতে পারলাম না এখনো।
এরপর মেক্সিকান আর্ট সেন্টারের সামনে বিশ মিনিটের জন্য থামলো গাড়ি। এখানে মেক্সিকান মেলা বসেছে। সবাই নেমে গেলেন এখানে। ডেফিনের সাথে আমিও নামলাম। রাস্তার ওপাশে কয়েকটি গীর্জা। পাশেই মেক্সিকান-আমেরিকান কলোনি। খোলা স্টেজে মেক্সিকানদের নাচ-গান চলছে। বড় বর্ণিল সংস্কৃতি মেক্সিকান সংস্কৃতি। রঙিন ঘাগড়া জাতীয় ঝলমলে পোশাক পরে নাচছে মেক্সিকান মেয়েরা। মনে হচ্ছে এগুলোই ফ্লেমেঙ্কো নাচ।
ল্যারি ঘুরছেন আমাদের কাছে কাছে। নিজে উৎসাহিত হয়ে ছবি তুলে দিচ্ছেন আমাদের চারজনের। প্রায় সব কথাতেই হাসছেন। কিন্তু হাসিটা কেমন যেন কৃত্রিম মনে হচ্ছে আমার।
সিলিন মেয়েটি খুব সাহসী বা বোকা। সে একজন ফায়ারফাইটারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেই দেখা গেলো ফায়ারব্রিগেডের গাড়িতে চড়ে বসলো ছবি তোলার জন্য পোজ দিতে। আমার বৃদ্ধ সহযাত্রীরা কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ালেন মেক্সিকান মেলায়।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করার পরে মনে হলো গুমোট মেঘ কেটে গেছে। স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছে এখন সবাই। গোমড়ামুখগুলোর কোন কোনটাতে হাসির রেখাও দেখা গেলো। ডাউন টাউনে চায়না টাউনের ভেতর দিয়ে, লিটল টোকিওকে পাশে রেখে বিভিন্ন রকম বর্ণনা দিতে দিতে ল্যারি এবার গাড়ি নিয়ে চললেন গ্রিফিথ পার্কের ভেতর দিয়ে।
গ্রিফিথ পার্ক আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিউনিসিপ্যাল পার্ক। এ পার্ক পুরো নিউইয়র্ক সিটি সেন্টারের চেয়ে দশগুণ বড়। চার হাজার একশ সাত একর জায়গা জুড়ে বিশাল পার্ক। পাকা রাস্তা এঁকে বেঁকে উঠে গেছে ১৬২৫ ফুট উঁচুতে গ্রিফিথ অবজারভেটরি অ্যান্ড প্ল্যানেটোরিয়ামে।
গাড়ি থেকে নেমেই মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো। প্ল্যানেটোরিয়ামের চত্বরে নিউটন, গ্যালেলিও, কোপারনিকাস আর কেপলারের শ্বেতপাথরের মূর্তি।
১৯৩৫ সাল থেকে এই প্ল্যানেটোরিয়াম লস অ্যাঞ্জেলেসের ল্যান্ডমার্ক। প্রশস্ত বাঁধানো চত্বর। পাশে রেলিং ঘেরা জায়গায় দাঁড়ালে লস অ্যাঞ্জেলেসের অনেকটাই দেখা যায়। সামনের পাহাড়ের নাম ‘মাউন্ট লি’। মাউন্ট লি’র চূড়োয় ঝকঝক করছে বিখ্যাত ‘HOLLYWOOD’ সাইন। খুব কাছে মনে হলেও মাউন্ট লি’র দূরত্ব কম নয় এখান থেকে। অনেক উঁচু থেকে দেখছি বলেই মনে হচ্ছে খুব কাছে।
HOLLYWOOD সাইনের এক একটি অক্ষরের উচ্চতা পঞ্চাশ ফুট। স্টিল পাতের তৈরি এই ল্যান্ডমার্ক বানাতে সেই ১৯২৩ সালেই খরচ হয়েছে একুশ হাজার ডলার। সে সময় এটি ছিলো রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্টের বিজ্ঞাপন। তখন শব্দটি ছিলো ‘HOLLYWOODLAND’।
১৯৩২ সালে প্যাগি নামে এক আমেরিকান তরুণী অভিনেত্রী ‘H’ অক্ষরের উপর থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে আত্মহত্যা করে। সে ঘটনার পর একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ করা হয় এখানে।
১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এই কেয়ারটেকার থাকতো এই ‘HOLLYWOODLAND’ সাইনের সাথেই। তার বাসা ছিলো প্রথম ‘L’ অক্ষরের পেছনে। ১৯৪৫ সালে হলিউডল্যান্ড হলিউড সিটির আন্ডারে চলে আসে। তখন ‘HOLLYWOODLAND’ থেকে ‘LAND’ কেটে বাদ দেয়া হয়।
_____________
এখান থেকে চারপাশে যতই দেখছি
ততই মুগ্ধ হচ্ছি। যার নামে
এই পার্ক- সেই গ্রিফিথ
সাহেব ছিলেন একজন ব্রিটিশ
কর্নেল। সাউথ ওয়েলসের
কর্নেল গ্রিফিথ জে গ্রিফিথ (Griffith J. Griffith, ১৮৫০-১৯১৯)। সোনার খনির ব্যবসা
করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক তিনি। ১৮৯৬
সালে তিনি হলিউড
সিটিকে তিন হাজার
একর জমি দান
করেন। শর্ত একটাই-
জনসাধারণের জন্য পার্ক
ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৯১৯ সালে তাঁর
মৃত্যুর পর আরো
অনেক টাকা পাওয়া
যায় এই খাতে
এবং সেই টাকায়
তৈরি হয় প্ল্যানেটোরিয়াম।
এই যে মানুষ গ্রিফিথ- এতবড় দাতা-
সেই গ্রিফিথ সাহেবই তাঁর স্ত্রীকে
খুন করতে চেয়েছিলেন। দু'বছর জেলও খেটেছেন
সেই অপরাধে। মানুষ বড় বিচিত্র
প্রাণী।
আরো কিছুক্ষণ
থাকতে ইচ্ছে করছিলো এখানে। কিন্তু সময় সীমাবদ্ধ। এবার ফেরার পালা। ল্যারির
গাড়িতে ফিরে এলাম
হলিউড বুলেভার্ডের স্টারলাইন অফিসের সামনে। আমাদের ট্যুরের প্রাথমিক অংশ শেষ
হলো।
এবার ট্যুরের
দ্বিতীয় অংশ। চিত্রতারকাদের বাড়ি দেখতে যাবার পালা। গাড়ি
বদলে অন্য একটি
গাড়িতে উঠতে হলো
এবার। আমাদের প্রবীণ সহযাত্রীরা যাচ্ছেন না এই ট্যুরে। এবারের গাড়িটি আগেরটার চেয়ে ছোট। ট্যুরিস্টদের সংখ্যাও কমে গেছে।
এবারের সহযাত্রীরা সবাই তরুণ
তরুণী। বেশ একটা
পিকনিক পিকনিক ভাব। ড্রাইভার
কাম গাইড অং লি একজন চায়নিজ-আমেরিকান মহিলা। ট্যুর শুরু হতেই
বুঝতে পারলাম অং লি ড্রাইভার হিসেবে খুব একটা
উন্নত মানের নয় এবং
গাইড হিসেবেও বড়জোর দ্বিতীয় শ্রেণীর। তার কথার
অর্ধেকটাই বোঝা যায়
না। কিছুক্ষণ পর পরই সে চিৎকার করে ওঠে
হলিউডের
চিত্রতারকাদের নাম ধরে।
হলিউডের সুপারস্টারদের বেশির ভাগই থাকেন
বেভারলি হিলে। এখানে তাদের প্রাসাদ। বেভারলি হিল্স হোটেলের পাশ দিয়ে
ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে
অং লি। এই হোটেল
ঘিরে কত স্বপ্ন
আর স্বপ্নভঙ্গ, কত রোমাঞ্চ
আর কত স্ক্যান্ডাল
জন্ম নিয়েছে হলিউডের ইতিহাসে। জনশ্রুতি আছে এই হোটেলেই প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি রোমান্টিক সময় কাটাতেন
মেরিলিন মনরোর সাথে। এলিজাবেথ
টেলর তাঁর আট স্বামীর মধ্যে কমপক্ষে ছয়জনকে নিয়ে বিভিন্ন
সময়ে উঠেছিলেন এই হোটেলরই
রাজকীয় বাংলোয়।
রাস্তার দু'পাশের গাছপালাতেও আভিজাত্যের ছাপ সুস্পষ্ট। মাঝে মাঝে ছোট
ছোট পার্ক। মনে হচ্ছে
এই পার্কগুলোতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। পরবর্তী দেড় ঘন্টা
ধরে গাড়ি ঘুরলো
বেভারলি হিলের অলিতে গলিতে।
চিত্রতারকাদের বাড়ি দেখাতে
নিয়ে যাবে বলতে
ভেবেছিলাম বাড়ির ভেতরটাও দেখতে পাবো। কিন্তু
না- সেরকম কোন সম্ভাবনাই
এখানে নেই। দু'পাশে
বিশাল বিশাল প্রাসাদ। ম্যাপ দেখে দেখে
অং লি বলে
যাচ্ছিলো কোন বাড়িতে
কে থাকেন। আর আমরা
গাড়িভর্তি মানুষ ঘাড় ফিরিয়ে
তাকাচ্ছি সে বাড়ির
দিকে। যদি কোন
তারকা-মুখের দেখা মেলে।
উঁচু উঁচু
দেয়াল আর ভারী
ভারী গেট সবগুলো
বাড়ির। গাছপালার ঝোপ ডিঙিয়ে
কোন বাড়িই দেখা যাচ্ছে
না ঠিকমত। চিত্রতারকারা জনসাধারণকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ
করেন। অবশ্য অন্য কোন উপায়ও
নেই। চিত্রতারকাদের প্রতি জনগণের ভালোবাসা উন্মত্ততায় পরিণত হতে সময়
নেয় না মোটেও।
১০৮৫ নম্বর
সামিট ড্রাইভে চার্লি চ্যাপলিনের বাড়ি। লোকে
এ বাড়ির নাম দিয়েছে
‘ব্রেক এওয়ে হাউজ’। এ বাড়ির
সবকিছু ভেঙে ভেঙে
পড়ে যাচ্ছে। চার্লি চ্যাপলিন নাকি তাঁর
সিনেমার গেট বানানোর
কাজে ব্যবহৃত মালমশলা দিয়েই তাঁর এই বাড়িটি বানিয়েছিলেন।
সানসেট ড্রাইভের আউল-উড (OWLWOOD)
নামের বাড়িতে থাকতেন মেরিলিন মনরো। ঘাড়
ঘুরিয়ে গাড়ির ভেতর থেকেই
দেখতে হয় যতটুকু
দেখা যায়। এখানে
কোন বাড়ির সামনেই গাড়ি থামানো
যায় না। সব বাড়ির সামনেই ‘নো স্টপ’
সাইন লাগানো।
মেরিলিন মনরোর জীবনটা একটি ট্র্যাজেডি। তাঁর আসল নাম
নরমা জিন। ১৯২৬
সালে জন্মের পর থেকেই
নরমা দেখছে তার মা পাগল। মানসিক হাসপাতালেই থাকে তার
মা। বাবাকে সে দেখেইনি
কোনদিন। শুনেছে তার বাবা
মারা গেছেন রোড অ্যাক্সিডেন্টে, তার জন্মের
আগেই।
সীমাহীন দারিদ্র্য আর আগুনের
মত রূপ নরমাকে
বাধ্য করে পর্নোগ্রাফিক
ম্যাগাজিনের মডেল হতে। নরমা জিন- হয়ে যান
মেরিলিন মনরো। পর্নো
ম্যাগাজিনের পাতা থেকেই
হলিউড চিত্রনির্মাতাদের চোখে পড়েন
মেরিলিন মনরো। এক্সট্রা
হিসেবে হলিউডের চিত্রজগতে প্রবেশ মেরিলিনের। সত্যিকারের অভিনয় প্রতিভা বলে তেমন
কিছুই ছিলো না মেরিলিন মনরোর। সবাই তাঁকে
ব্যবহার করেছে সেক্স-সিম্বল হিসেবে।
মেরিলিন মনরোর প্রথম বিয়ে হয় বেসবল প্লেয়ার জিম ডোহার্টির
সাথে। সে বিয়ে
টেকেনি। পরে নাট্যকার
আর্থার মিলার বিয়ে করেন
মেরিলিন মনরোকে। কিন্তু এই বিয়েতেও
সুখি হতে পারেননি
মেরিলিন।
শেষের দিকে মানসিক
ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। নিয়মিত
মনোচিকিৎসকের কাছে যেতে
হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
আর পারেননি জীবনের সাথে যুদ্ধ
করতে। ১৯৬২ সালের
৫ আগস্ট মেরিলিন মনরোর মৃতদেহ পাওয়া যায় তাঁর
আউল-উডের বাড়িতে। সবাই বলে আত্মহত্যা।
মানুষ একটি নির্দিষ্ট
সীমানার উপরে উঠে
গেলে বা নিচে
নেমে গেলে হয়তো
বড় বেশি একা
হয়ে যায়। একা
মানুষ, বন্ধুহীন মানুষ বড়ই অসহায়। মেরিলিন মনরো- যাঁর লাবণ্য
এখনো অসংখ্য মানুষকে মুগ্ধ করে- নিজে খুঁজে
পাননি একজন সত্যিকারের
মানুষ যাঁকে ঘিরে হলেও
তিনি পেতে পারতেন
বেঁচে থাকার প্রেরণা।
সানসেট বুলেভার্ডের পশ্চিম দিকে ঘুরতেই চেরিং ক্রস রোড। এখানেই বিশাল প্লেবয় ম্যানসন। পৃথিবী বিখ্যাত পর্নোম্যাগাজিন ‘প্লেবয়’। মনে হচ্ছে আজ কোন পার্টি হচ্ছে এখানে। অং লি জানাচ্ছে এরকম পার্টি এখানে সবদিনই থাকে। বি-এম-ডাবলিউ, পোরশে ইত্যাদি দামী দামী গাড়িতে ভর্তি হয়ে আছে ম্যানসনের বিশাল পার্কিং এরিয়া। কয়েকটি লিমোজিনও দেখা যাচ্ছে। এখানকার মানুষের পৃথিবী সাধারণ মানুষের পৃথিবী থেকে অনেক অনেক আলাদা।
একটু পরেই পার হয়ে গেলাম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বাড়ি। ৬৬৮ নম্বর বেল এয়ার রোডে থাকতেন রোনাল্ড রিগান ও ন্যান্সি রিগান হোয়াইট হাউজে যাবার আগ পর্যন্ত। শুরুতে এ বাড়ির নম্বর ছিলো ৬৬৬। কিন্তু বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে আছে ৬৬৬ নম্বরের সাথে শয়তানের একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। ন্যান্সি রিগান বাড়ির নম্বরটি বদলে ৬৬৮ করে নিলেন।
অং লি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলো ব্রিটনি স্পিয়ার্স, ম্যাডোনা, এ-ডি-মারফি, নিকোলাস কেইজ, গ্রেগরি পেক, হ্যারিসন ফোর্ড প্রমুখ সুপারস্টারদের বাড়ির সামনে দিয়ে। গ্রেগরি পেকের পাশের বাড়িতেই থাকেন হ্যারিসন ফোর্ড। ষাটোর্ধ এই যুবক সম্প্রতি আবার বিয়ে করেছেন তাঁর চেয়ে তেইশ বছরের ছোট ক্যালিস্টাকে। ক্যালিস্টা ফ্লকহার্টকে বিয়ে করার জন্য হ্যারিসন ফোর্ড তাঁর প্রথম স্ত্রী মেলিসাকে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। এরকমই এঁদের ব্যক্তিগত জীবন।
গাড়ির ভেতর একটু পরপরই ফ্লাশ লাইট জ্বলে উঠছে। সবাই তাদের প্রিয় নায়ক নায়িকার বাড়ির ছবি তুলতে গিয়ে তুলে নিচ্ছে অন্য কোন সহযাত্রীর ঝাপসা মুখ। গাড়ি ফিরছে হলিউড বুলেভার্ড ধরে। হোস্টেলের সামনে নেমে গেলাম আমি। ডেফিনরা চলে গেলো টেলিভিশন রেকর্ডিং দেখতে।
রুমে এসে দেখলাম জিম ঘুমাচ্ছে তার বিছানায়। পাথর ভেঙে বেচারা ক্লান্ত। সারাদিন গাড়ির ভেতর বসে থেকে আমার হাঁটাহাঁটি হয়নি আজ। সন্ধ্যাটা হাঁটা যাক হলিউডের রাস্তায়।
সবগুলো স্যুভেনির শপেই থরে থরে সাজানো অস্কার পুরস্কারের রেপ্লিকা। অ্যাকাডেমি পুরস্কারের অনুকরণে বেস্ট ফ্রেন্ড অব দি ইয়ার, বেস্ট মাম, বেস্ট সান ইত্যাদি। সবধরনেরই ‘বেস্ট’ পুরস্কার কিনতে পাওয়া যায় এখানে। একটি বড় শপে ঢুকে জামাকাপড়ের সেকশানে টুপি আর টি-শার্টে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখে মনটা ভরে গেলো।
কোডাক থিয়েটারের সামনে রাস্তার ওপারে ‘এল ক্যাপিটান’ থিয়েটার। প্রায় আশি বছরের পুরনো এই থিয়েটারের বর্তমান মালিক ওয়াল্ট ডিজনি। লাইভ শো চলছে এখানে। নোটিশ দেখলাম ‘প্রাইভেট প্রোগ্রাম’।
এখান থেকে কিছুদূর গিয়েই ‘রিপ্লে’স বিলিভ ইট অর নট’ মিউজিয়াম। বিরাট এক ডায়নোসর ছাদের উপর মাথা তুলে আছে। সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মিউজিয়াম। টিকেট কেটে ঢুকলাম ভেতরে।
সানসেট বুলেভার্ডের পশ্চিম দিকে ঘুরতেই চেরিং ক্রস রোড। এখানেই বিশাল প্লেবয় ম্যানসন। পৃথিবী বিখ্যাত পর্নোম্যাগাজিন ‘প্লেবয়’। মনে হচ্ছে আজ কোন পার্টি হচ্ছে এখানে। অং লি জানাচ্ছে এরকম পার্টি এখানে সবদিনই থাকে। বি-এম-ডাবলিউ, পোরশে ইত্যাদি দামী দামী গাড়িতে ভর্তি হয়ে আছে ম্যানসনের বিশাল পার্কিং এরিয়া। কয়েকটি লিমোজিনও দেখা যাচ্ছে। এখানকার মানুষের পৃথিবী সাধারণ মানুষের পৃথিবী থেকে অনেক অনেক আলাদা।
একটু পরেই পার হয়ে গেলাম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের বাড়ি। ৬৬৮ নম্বর বেল এয়ার রোডে থাকতেন রোনাল্ড রিগান ও ন্যান্সি রিগান হোয়াইট হাউজে যাবার আগ পর্যন্ত। শুরুতে এ বাড়ির নম্বর ছিলো ৬৬৬। কিন্তু বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে আছে ৬৬৬ নম্বরের সাথে শয়তানের একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। ন্যান্সি রিগান বাড়ির নম্বরটি বদলে ৬৬৮ করে নিলেন।
অং লি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলো ব্রিটনি স্পিয়ার্স, ম্যাডোনা, এ-ডি-মারফি, নিকোলাস কেইজ, গ্রেগরি পেক, হ্যারিসন ফোর্ড প্রমুখ সুপারস্টারদের বাড়ির সামনে দিয়ে। গ্রেগরি পেকের পাশের বাড়িতেই থাকেন হ্যারিসন ফোর্ড। ষাটোর্ধ এই যুবক সম্প্রতি আবার বিয়ে করেছেন তাঁর চেয়ে তেইশ বছরের ছোট ক্যালিস্টাকে। ক্যালিস্টা ফ্লকহার্টকে বিয়ে করার জন্য হ্যারিসন ফোর্ড তাঁর প্রথম স্ত্রী মেলিসাকে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। এরকমই এঁদের ব্যক্তিগত জীবন।
গাড়ির ভেতর একটু পরপরই ফ্লাশ লাইট জ্বলে উঠছে। সবাই তাদের প্রিয় নায়ক নায়িকার বাড়ির ছবি তুলতে গিয়ে তুলে নিচ্ছে অন্য কোন সহযাত্রীর ঝাপসা মুখ। গাড়ি ফিরছে হলিউড বুলেভার্ড ধরে। হোস্টেলের সামনে নেমে গেলাম আমি। ডেফিনরা চলে গেলো টেলিভিশন রেকর্ডিং দেখতে।
রুমে এসে দেখলাম জিম ঘুমাচ্ছে তার বিছানায়। পাথর ভেঙে বেচারা ক্লান্ত। সারাদিন গাড়ির ভেতর বসে থেকে আমার হাঁটাহাঁটি হয়নি আজ। সন্ধ্যাটা হাঁটা যাক হলিউডের রাস্তায়।
সবগুলো স্যুভেনির শপেই থরে থরে সাজানো অস্কার পুরস্কারের রেপ্লিকা। অ্যাকাডেমি পুরস্কারের অনুকরণে বেস্ট ফ্রেন্ড অব দি ইয়ার, বেস্ট মাম, বেস্ট সান ইত্যাদি। সবধরনেরই ‘বেস্ট’ পুরস্কার কিনতে পাওয়া যায় এখানে। একটি বড় শপে ঢুকে জামাকাপড়ের সেকশানে টুপি আর টি-শার্টে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখে মনটা ভরে গেলো।
কোডাক থিয়েটারের সামনে রাস্তার ওপারে ‘এল ক্যাপিটান’ থিয়েটার। প্রায় আশি বছরের পুরনো এই থিয়েটারের বর্তমান মালিক ওয়াল্ট ডিজনি। লাইভ শো চলছে এখানে। নোটিশ দেখলাম ‘প্রাইভেট প্রোগ্রাম’।
এখান থেকে কিছুদূর গিয়েই ‘রিপ্লে’স বিলিভ ইট অর নট’ মিউজিয়াম। বিরাট এক ডায়নোসর ছাদের উপর মাথা তুলে আছে। সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মিউজিয়াম। টিকেট কেটে ঢুকলাম ভেতরে।
অবিশ্বাস্য সব সংগ্রহের নমুনা এখানে। জিরাফের মত লম্বা গলার এক আফ্রিকান মহিলার মূর্তি। দুই মাথাওয়ালা একটি ছাগল। একটি গরু আছে যার ছয়টি পা। কাচের বাক্সের ভেতর রাখা বস্তুগুলো দেখতে বাস্তব বলে মনে হচ্ছে।
রবার্ট রিপ্লে (Robert Leory Ripley, জন্ম: ক্যালিফোর্নিয়া, ২৫ ডিসেম্বর ১৮৯৩, মৃত্যু: ১৯৪৯) সারাপৃথিবী ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন অত্যাশ্চর্য সব জিনিস। একটা মানুষের মাথা দেখা গেলো শুকিয়ে ছোট একটা বেলের আকার ধারণ করেছে। মেরিলিন মনরোর একটি মূর্তি এখানেও আছে। মূর্তিটি তৈরি হয়েছে দু'লাখ চৌষট্টি হাজারটি একডলারের ছেঁড়া নোট দিয়ে।
মিউজিয়াম থেকে বের হবার পথে দেয়ালে লাগানো আছে একটি স্বাভাবিক সাইজের বটপাতার ওপর মহাত্মা গান্ধীর মুখ। পাতার উপরিভাগ সূক্ষ্মভাবে সরিয়ে এই মুখ আঁকা হয়েছে। কোন রকম রঙ ব্যবহার করা হয়নি।
রাতের হলিউড। ফুটপাতে তেমন ভীড় নেই। ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু গৃহহীন মানুষ। হোস্টেলের সামনে রাস্তার ওপারে চার্লি চ্যাপলিনের মূর্তির কাছে পার্কিং এলাকায় কিছু ছেলেমেয়ের জটলা। খোলা আকাশের নিচে স্লিপিং ব্যাগ বিছিয়ে শোয়ার আয়োজন চলছে সেখানে। একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে পার্কিং মিটার আর পাবলিক টেলিফোন বুথের সাথে দড়ি বেঁধে। ব্যানারে লেখা আছে ‘ক্যাম্পেন ফর দ্যা চিলড্রেন’। ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো না। শিশুদের জন্য ক্যাম্পেন। শিশুদের কোন অধিকারের জন্য? কে জানে! দশবারোজন ছেলেমেয়ে দেখা যাচ্ছে এখন। কাল হয়তো এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
ঘুম আসছে না। এত তাড়াতাড়ি আসার কথাও নয়। হোস্টেলের বুক শেলফ ঘেঁটে আমেরিকা ভ্রমণের ওপর একটি বই নিয়ে এলাম। অনেকগুলো পাতা উধাও। যার যা লাগে কেটে নিয়েছে। কিছু সাধারণ তথ্য এখনো আছে বইতে। মনে হলো বেশ মজার তথ্য। ০৬/৯/১৯৯৫ তারিখের নিউইয়র্ক টাইমস-এ একটি জরিপ ছাপানো হয়েছিলো। আমেরিকানরা তাদের দিনের চব্বিশ ঘন্টা সময় কীভাবে কাটায় তার পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যানের ফলাফল এরকম:
ঘুম ৪৫৫ মিনিট
কাজ ১৪৮ মিনিট
টিভি ও ভিডিও দেখা ১৫৪ মিনিট
ঘরের কাজ ৬৬ মিনিট
বাড়িতে খাওয়া ৫৩ মিনিট
কাজে যাওয়ার রাস্তায় ৫১ মিনিট
পোশাক বদলানো ৪৯ মিনিট
লেখাপড়া ৪৩ মিনিট
রান্নাবান্না ৩৪ মিনিট
বাচ্চা ও পশুপাখির পরিচর্যা ২৬ মিনিট
বাইরে খাওয়া ২৪ মিনিট
সাধ আহলাদ ১৮ মিনিট
শপিং ১৬ মিনিট
ধর্মচর্চা ১৫ মিনিট
ব্যায়াম ৫ মিনিট
অন্যান্য ২৪৭ মিনিট
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, ০৬/৯/১৯৯৫
আমার মাথায় ঢুকছে না জরিপটা তারা কীভাবে করেছে? জরিপ নিয়ে সিরিয়াস হবার কিছু নেই। এদেশের বহুধরনের অদ্ভুত জরিপের এটাও একটি। এই পরিসংখ্যান কোন কাজে লাগে কিনা জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে বেশ নিদ্রাদায়ক। বাংলাদেশের টেলিভিশনে একটা লুঙ্গির বিজ্ঞাপনে বলা হতো, ‘এতো আরাম, পরলে ঘুম এসে যায়’। সেরকম এই পরিসংখ্যানের বেলাতেও বলা চলে, ‘পড়লে ঘুম এসে যায়’।
আমার মাথায় ঢুকছে না জরিপটা তারা কীভাবে করেছে? জরিপ নিয়ে সিরিয়াস হবার কিছু নেই। এদেশের বহুধরনের অদ্ভুত জরিপের এটাও একটি। এই পরিসংখ্যান কোন কাজে লাগে কিনা জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে বেশ নিদ্রাদায়ক। বাংলাদেশের টেলিভিশনে একটা লুঙ্গির বিজ্ঞাপনে বলা হতো, ‘এতো আরাম, পরলে ঘুম এসে যায়’। সেরকম এই পরিসংখ্যানের বেলাতেও বলা চলে, ‘পড়লে ঘুম এসে যায়’।
No comments:
Post a Comment