ট্রিনিটি
সাইট: পারমাণবিক দানবের জন্মস্থান
ঠিক দু'টোয় বাস ছাড়লো। যে যার
মত বসেছে। আমাদের বাসে বেশ
কিছু কিশোর কিশোরী। বিজ্ঞানীদের অনেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে এসেছেন
কনফারেন্সে।
আমার পাশে বসেছেন চায়নিজ বিজ্ঞানী শিয়াং (Xiang)। খুব কম কথার মানুষ শিয়াং। ইন্ট্রোডাক্টরি আলাপ সেরেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। সামনে পিছনে পদার্থবিদরা যার যার গবেষণা সংক্রান্ত আলাপে মগ্ন। আমার চোখ গাড়ির জানালায়।
গাড়ি ছুটছে হাইওয়ে-টুয়েন্টি ফাইভ ধরে। ধূ ধূ মরুভূমি চারদিকে। নিউ মেক্সিকোর বিখ্যাত মরু এলাকা পাড়ি দিচ্ছি আমরা। রাস্তার পাশে রেললাইন। কিছু মরু উদ্ভিদ দেখা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। মাঝে মাঝে বিশাল বিশাল ক্যাকটাস। চারপাশে কোথাও কোন জনবসতি চোখে পড়ছে না। বেশ ভালো লাগছে।
শিয়াং হা করে ঘুমাচ্ছেন। তিনি কাজ করেন লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবে। মরুভূমির মাঝে লস আলামোস। প্রতিদিন দেখেন বলেই হয়তো তাঁর আর ভালো লাগছে না এসব। কিন্তু ট্রিনিটি সাইটে যাওয়ার ব্যাপারটা তো আলাদা। সেখানে তো সহজে যাওয়া যায় না।
ট্রিনিটি সাইট আলবুকার্কি থেকে একশ' আঠারো মাইল দক্ষিণে আলামোগোর্ডো (Alamogordo) বলে একটি জায়গায়। প্রায় দু'ঘন্টা লাগলো স্টেলিয়ন রেঞ্জে পৌঁছাতে। এখান থেকেই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা শুরু হয়েছে। ট্রিনিটি সাইট এখান থেকে সতের মাইল। পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে ইউ এস মিলিটারি। এখানে সিভিলিয়ানদের প্রবেশাধিকার নেই। বছরে মাত্র দু'দিন এখানে আসতে পারেন সিভিলিয়ানরা, এপ্রিল ও অক্টোবর মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার। আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির কল্যাণে আজ স্পেশাল পারমিশান পাওয়া গেছে ইউ এস সিকিউরিটির উঁচু পর্যায় থেকে। হাজার হোক এই ট্রিনিটি সাইট তো পদার্থবিজ্ঞানীদেরই সৃষ্টি।
একজন মিলিটারি প্রাইভেট উঁকি দিলো বাসের দরজায়। এর নাম চেকিং! রুটিন ওয়ার্ক। কোন কিছু হলে তাকে জ্ঞিজ্ঞাসা করা হবে, “ওয়েল প্রাইভেট, ডিড ইউ চেক দি বাস?”
তার উত্তরে
প্রাইভেট চোখমুখ কুঁচকে গলা ফাঁটিয়ে
চিৎকার করে বলবে,
“স্যার ইয়েস স্যার!”
রুটিন ওয়ার্ক ঠিকমতো না করলেই
তাদের চাকরির পৌনে বারোটা
বেজে যায়।
ট্রিনিটি সাইট। পৃথিবীর প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এখানে ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই। ভোর ৫টা ২৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে এখান থেকেই শুরু হয়েছে পারমাণবিক যুগ। অবশ্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আরো বছর তিনেক আগে থেকে। ১৯৪২ সালের জুন মাসেই ম্যানহাটান প্রজেক্ট হাতে নেয় আমেরিকা। সেই সময় আমেরিকান গোয়েন্দারা খবর পেয়েছিল জার্মানি পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে। সুতরাং আমেরিকা তো আর বসে থাকতে পারে না।
ম্যানহাটান প্রজেক্টের তিনটি প্রধান ধাপ সম্পন্ন হয় তিনটি আলাদা আলাদা জায়গায়। টেনেসির ওকরিজে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম-২৩৮ থেকে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম-২৩৫ আলাদা করার কাজ চলে। আর মূল বোমা তৈরির কাজ শুরু হয় নিউ মেক্সিকোর লস আলামোসে।
লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবোরেটরির গোড়াপত্তন হয় এসময়। ডক্টর রবার্ট ওপেনহাইমার (Julius Robert Oppenheimer, জন্ম: নিউইয়র্ক, ২২ এপ্রিল ১৯০৪, মৃত্যু: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭)- এর নেতৃত্বে তৎকালীন অনেক বিজ্ঞানী কাজ করেছেন এই প্রজেক্টে।
প্রাথমিকভাবে দুটো বোমার ডিজাইন তৈরি করা হলো। একটিতে ব্যবহার করা হলো ইউরেনিয়াম, অন্যটিতে প্লুটোনিয়াম। ইউরেনিয়াম বোমাটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্দেহ দেখা দিলো প্লুটোনিয়াম বোমাটি নিয়ে। এ বোমার গঠনপ্রনালী বেশ জটিল। সন্দেহ সেখানেই। ঠিকমত বিস্ফোরিত হবেতো বোমাটি?
প্রজেক্ট লিডার ওপেনহাইমার সিদ্ধান্ত নিলেন একটি পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের। বিস্ফোরণের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো আর কলরাডো রাজ্যের মোট আটটি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে শেষপর্যন্ত নিউ মেক্সিকোর ট্রিনিটি সাইটকেই বেছে নেয়া হলো।
এই জায়গা ১৯৪২ সাল থেকেই সরকারী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে। নিউ মেক্সিকোর অ্যালামোগোর্ডা বোম্বিং রেঞ্জ হিসেবে মিলিটারিরা দখল করে রেখেছে বিশাল এলাকা। তাছাড়া এখান থেকে বোমা তৈরির ল্যাবোরেটরি লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাব খুব একটা দূরে নয়।
১৯৪৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে দলে দলে মিলিটারি আসতে শুরু করলো এখানে। সারা পৃথিবীর মানুষ কিছুই জানে না কী ঘটতে যাচ্ছে এখানে। রাতারাতি সিকিউরিটি চেক পয়েন্ট বসে গেলো চারদিকে। সঙ্গে আনুষঙ্গিক সবকিছু। শত শত মিলিটারি এসে ঘাঁটি গাড়লো এই মরুভূমিতে।
যে জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হবে তাকে বলা হচ্ছে গ্রাউন্ড জিরো। বোমা তৈরির মালমশলা সব প্রস্তুত। এবার ফিট করার পালা। গ্রাউন্ড জিরো থেকে দু'মাইল দূরে একটা বাড়ি আছে। ম্যাকডোনাল্ডস রেঞ্চ। ১৯১৩ সালে এক জার্মান ইমিগ্র্যান্ট এই ৮৫ ফুট বাই ৮৫ ফুটের বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। পরে ১৯৩০ সালে জর্জ ম্যাকডোনাল্ড নামে এক আমেরিকান বাড়িটির মালিক হয়ে কিছুটা সম্প্রসারণ করেন বাড়িটির।
ম্যাকডোনাল্ড রেঞ্চ |
১৯৪২ সালে
এ বাড়িটি চোখে পড়লো
কর্মকর্তাদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য
সরকারি নির্দেশে বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে
মালিককে অন্য জায়গায়
চলে যেতে হলো। সরকারি নিয়ন্ত্রণেই আছে বাড়িটি
তখন থেকে। এ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হলো বোমা
প্রকল্পের বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের। এখানেই বোমা ফিট করার
সব ব্যবস্থা করা হলো।
তারপর সময় বেশ
দ্রুতই গড়াতে লাগলো।
১২ জুলাই ১৯৪৫। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস ফেরেলের কাছে এসে পৌঁছালো পারমাণবিক বোমার মূল শক্তি তেজস্ক্রিয় প্লুটোনিয়াম।
১৩ জুলাই ১৯৪৫, শুক্রবার। মধ্যরাতে লস আলামোস ল্যাবরেটরি থেকে মিলিটারি ট্রাকে রওনা হলো অন্যান্য বিস্ফোরক। সেদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেলো বোমা ফিট করার কাজ। গ্রাউন্ড জিরোতে তৈরি করা হয়েছে একশ' ফুট উঁচু একটি স্টিল টাওয়ার। এই টাওয়ারের নিচে বোমার সমস্ত কলকব্জা ফিট করা হলো। জুলাই মাসের প্রচন্ড গরমে জিভ বের হয়ে আসার অবস্থা সকলের। বিশ্রামের দরকার। বিশ্রাম বলতে ম্যাকডোনাল্ড র্যাঞ্চে গিয়ে চৌবাচ্চার পানিতে গা ডুবিয়ে বসে থাকা। তাই-ই করলো সবাই।
১৫ জুলাই সকালেই পুরো বোমাটি ১০০ ফুট উঁচু টাওয়ারের উপর তুলে দেয়া হলো। বিকেল পাঁচটার ভেতর সবগুলো ডেটনেটর লাগানোও হয়ে গেলো। এবার বিস্ফোরণের প্রতীক্ষা।
বাস সীমিত গতিবেগে চলছে ট্রিনিটি সাইটের স্টিলের তার ঘেরা ধূ ধূ তেজস্ক্রিয় বালির মাঝখানের পিচঢালা রাস্তা ধরে। একটু পরেই থেমে গেলো গ্রাউন্ড জিরো থেকে কোয়ার্টার মাইল দূরে পার্কিং এলাকায়।
পুরো এলাকাটি স্টিলের বেড়া দিয়ে ঘেরা। তেজস্ক্রিয়তার হলুদ সাইন ঝুলছে একটু পরপর। আর সবার জন্য নোটিশে লেখা আছে এখানে কোন ধরনের খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা নিষেধ। কারণ খাদ্য বা পানীয়ের সাথে সামান্য ধূলিকণা পেটে গেলেই শরীরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে। এখানের ধূলোমাটি এখনো স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি তেজস্ক্রিয়।
কোন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকেও বিরত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। গাড়ি থেকে নামার আগে অনেকে একটু লিপস্টিক বা ফেসক্রিম মেখে ফিটফাট হয়ে নামেন, বা অনেকে সূর্যরশ্মি থেকে ত্বক রক্ষার জন্য সান-ক্রিম মাখেন। এখানে এসে তা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
দূরে সারিবাঁধা পাহাড় আকাশের সাথে মিশে আছে। চারদিকে ন্যাড়া মরুভূমি। বাস থেকে নেমে সবাই হেঁটে চলেছি উত্তরে- গ্রাউন্ড জিরোর দিকে। আমাদের বাসের সাথে জিপ চালিয়ে এসেছেন জিম অ্যাকেলস। মাঝারী উচ্চতার মোটাসোটা মাঝবয়সী ভদ্রলোক- হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জের পাবলিক অ্যাফেয়ারস অফিসার। হোয়াইট স্যান্ডস ইউএস ফেডারেল প্রতিষ্ঠান। ট্রিনিটি সাইটের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে এই প্রতিষ্ঠান। মিলিটারিরা এই প্রতিষ্ঠানের কাজে প্রতিরক্ষা সহায়তা দেয়।
জিম নিজের হাতে গেটের তালা খুলে স্বাগত জানালেন গ্রাউন্ড জিরো এলাকায়। ১৯৪৫ সালের সেদিনের একশ ফুট টাওয়ারের জায়গায় এখন একটি মাত্র পোড়া খুঁটি মাটির উপর সামান্য মাথা তুলে সেদিনের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে আছে। এর পাশে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দশ ফুট উচ্চতার একটি গ্রাউন্ড জিরো মনুমেন্ট। কালের সাক্ষী।
কেমন বিস্ফোরণ
হয়েছিল সেদিন এখানে?
গ্রাউন্ড জিরো |
সেদিন ১৬ জুলাই ১৯৪৫। গ্রাউন্ড জিরো পয়েন্ট থেকে দশ হাজার গজ দূরে তিনটি অবজারভেশন ডেক তৈরি করা হয়েছে আগেই। মাটি, পাথর আর কাঠ দিয়ে তৈরি মাটির নিচের এসব মজবুত বাংকার থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করা হবে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও বিস্ফোরণ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া। দক্ষিণ দিকের বাংকার হলো বিস্ফোরণ টেস্টের কন্ট্রোল রুম। লস আলামোসের প্রধান ব্যক্তি ডক্টর ওপেনহাইমার ছিলেন কন্ট্রোল রুমে। ম্যানহাটান প্রজেক্টের প্রধান জেনারেল গ্রুভস অবস্থান নিলেন গ্রাউন্ড জিরো থেকে দশ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি ভবনে।
ভোর চারটায় বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা। কিন্তু আগের রাত থেকেই শুরু হয়েছে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাত। এমন ঝড়ে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব নয়। কারণ তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে। আর এরকম আবহাওয়ায় পর্যবেক্ষণও সম্ভব নয়। ওপেনহাইমার একটু হতাশ হয়ে পড়লেন এরকম আবহাওয়া দেখে। ভোর পৌনে পাঁচটায় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানালেন দু'ঘন্টা পর বৃষ্টি থেমে যাবে এবং বাতাসের গতিবেগও অনেক কমে আসবে। এই-ই সুযোগ।
ভোর পাঁচটা দশ মিনিটে শুরু হলো কাউন্ট ডাউন। পাঁচটা উনত্রিশ মিনিটে ডক্টর ওপেনহাইমার নির্দেশ দিলেন বিস্ফোরণের। পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড পরেই প্রচন্ড আলোর বন্যায় ভেসে গেলো ট্রিনিটি সাইট।
পর্যবেক্ষণকারীদের মোটা রঙিন কাচ ভেদ করেও আলোর যে ঝলকানি এসে লাগলো তাতে মনে হলো সূর্য যেন নেমে এসেছে চোখের পাতার ওপর। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রচন্ড শব্দ আর তাপের ঝড়। গ্রাউন্ড জিরো থেকে একশ বিশ মাইল দূরের ঘরবাড়ির দরজা জানালাও ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো প্রচন্ড শব্দতরঙ্গে। বাড়ির ছাদ গেলো শূন্যে উড়ে। কিছুক্ষণ পরে স্বাভাবিক সূর্যোদয় হবার পর মনে হলো একই দিনে দু'বার সূর্য উঠলো নিউ মেক্সিকোর আকাশে।
ট্রিনিটি সাইটে পারমাণবিক বিস্ফোরণের কথা আমেরিকানদেরও জানানো হলো না। এক মাস পরে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা বিস্ফোরণের আগ পর্যন্ত ট্রিনিটির বিস্ফোরণের কথা গোপনই রইল। আমেরিকানদের জানানো হয়েছিল ১৬ জুলাই গোলাবারুদের গুদামে আগুন লেগেছিলো। এখনো কি সাধারণ মানুষকে জানানো হয় কিছু? সাধারণ মানুষ জানতে পারে ততটুকুই- যতটুকু তাদের জানতে দেয়া হয়, আর যেভাবে তাদের জানতে দেয়া হয়।
স্টিলের টাওয়ারের অবশেষ |
বিস্ফোরণের সাথে সাথেই একশ' ফুট স্টিলের টাওয়ার বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। গ্রাউন্ড জিরোর দশ মাইল ব্যাসার্ধের সবটুকু জায়গায় বালি পর্যন্ত গলে গেছে সীমাহীন তাপে। বেশ কিছুদিন পর এই গলে যাওয়া বালি আস্তে আস্তে জমাট বেঁধে এক ধরনের সবুজ জ্বলজ্বলে বস্তুর আকার ধারণ করলো। ভীষণ তেজস্ক্রিয় এই বস্তুগুলোর নাম দেয়া হলো ট্রিনিটাইট। বেশ কয়েক বছর পর ১৯৫২ সালে এই ট্রিনিটাইটগুলো সরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করে অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন। কিন্তু সবগুলো ট্রিনিটাইট সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। এখনো এখানে মাঝে মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তেজস্ক্রিয় ট্রিনিটাইট।
গ্রাউন্ড জিরোর
চারপাশে সাড়ে একান্ন
হাজার হেক্টর জমিতে এখনো ঘাস
পর্যন্ত জন্মায় না। এখনো
এই এলাকায় ঘন্টা খানেক থাকলে শরীরে আধা মিলিরন্টগেন রেডিয়েশন প্রবেশ করে। অবশ্য
এই পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা আমাদের শরীরের জন্য তেমন
বিপজ্জনক নয়। আমরা
সূর্যালোক থেকে বছরে
প্রায় চল্লিশ মিলিরন্টগেন তেজস্ক্রিয়তা শোষণ করি। কিন্তু তা হলো
এক বছরে। কিন্তু
এখানে থাকলে আমরা সেই
পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা আশি ঘন্টায়
শোষণ করে নেবো। সেই কারণে এখানে এক ঘন্টার
বেশি কাউকেই থাকতে দেয়া হয় না।
গ্রাউন্ড জিরো
এরিয়ার পশ্চিম পাশে একটা
শেল্টার আছে। এই শেল্টারটির নিচে ধরে
রাখা আছে ১৯৪৫
সালের বিস্ফোরণোত্তর গ্রাউন্ড জিরোর অবস্থা। জিম শেলটারের ঢাকনা তুলে দেখালেন। দেখলাম অনেক সাপ
মরে পড়ে আছে
সেখানে। মরুভূমির বিষাক্ত সাপ। আশ্রয়ের
খোঁজে ঢুকেছিলো হয়তো। কিন্তু
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ যে সাপের
বিষের চেয়েও মারাত্মক। শেল্টারে এখনো চিকচিক
করছে তেজস্ক্রিয় ট্রিনিটাইট। এই শেল্টারের খোলা
দরজায় বেশিক্ষণ দাঁড়ানোও উচিত নয়।
ক্রেটার শেল্টার |
উত্তরদিকের একটি জায়গায় ‘ফ্যাট ম্যান’ বোমার সাইনবোর্ড। জাপানের হিরোশিমা শহরে যে বোমাটি ফেলা হয়েছিলো তার নাম দেয়া হয়েছিলো ‘লিটল বয় (Little Boy)’। নাগাসাকি শহরে যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল তার নাম দেয়া হয়েছিলো ‘ফ্যাট ম্যান (Fat Man)’। এখানেই ‘ফ্যাট ম্যান’কে লোহার খোলের মধ্যে ঢোকানো হয়েছিলো।
ট্যুরের সবাই
কেমন জানি চুপচাপ
হয়ে গেছে। আতঙ্ক
নাকি অনুশোচনা? অনুশোচনা হচ্ছে সেদিনের অমানবিক পারমাণবিক বিস্ফোরণের জন্য? ট্রিনিটি সাইটে এসে আজকের
পদার্থবিজ্ঞানীদের কি মনে
হচ্ছে সেদিনের ‘লিটল বয়’
আর ‘ফ্যাট ম্যান’ এর নৃশংসতার
কথা! বোমা কেন
নৃশংস হতে যাবে?
নৃশংস তো তারাই
যারা এরকম বিধ্বংসী
মারণাস্ত্র বানাতে পারে। তাদের
চেয়েও নৃশংস তো তারাই
যারা যুদ্ধের নামে সেই
বোমা মেরে হাজার
হাজার মানুষ সমেত দু দুটো শহর ধ্বংস করে
ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তেরো হাজার টন টি-এন-টি’র সমান বিস্ফোরণ ক্ষমতা দিয়ে বানানো হয়েছিলো ইউরেনিয়াম বোমা ‘লিটল বয়’। ইউরেনিয়াম-গান টাইপের এই বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ ছিলো না। তারপরও তারা দ্বিতীয় একটি বোমা কেন বানালো? শুধুই কি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য? মোটেও না। করা হয়েছিল পুরো একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পৈশাচিক ইচ্ছায়।
দ্বিতীয় বোমাটি প্লুটোনিয়াম বোমা ‘ফ্যাট ম্যান’। এটার ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখার জন্যই একই রকম একটা বোমা এখানে এই ট্রিনিটিতে ফাটানো হয়েছিলো সেদিন।
আমার মনে হলো যেন দেখতে পাচ্ছি সেদিন বিস্ফোরণের পরে প্রজেক্ট-লিডার ডক্টর ওপেনহাইমারের হাসি হাসি মুখ। আধুনিক মারণাস্ত্র পেলে মাস্তানদের চোখে মুখে যেরকম হাসি চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে- সেটার সাথে সেদিনের ওপেনহাইমারের হাসির কোন পার্থক্য ছিলো কি?
বিস্ফোরণের পরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ওপেনহাইমার বলেছেন, “বিস্ফোরণের শেষ তরঙ্গ পর্যন্ত অপেক্ষা করে শেল্টার থেকে বেরিয়ে এলাম। আমরা জানতাম যে এরপর থেকে পৃথিবী আর আগের মত নেই। এখন কেউ কেউ হাসবে, কেউ কেউ কাঁদবে, আর বেশিরভাগ মানুষ চুপ করে থাকবে। আমার মনে পড়লো হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ভগবদ্গীতার কিছু লাইন। সেখানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে যাই ঘটুক না কেন অর্জুনের উচিত কর্তব্য করে যাওয়া। তার জন্য ভগবান বিশ্বরূপ ধারণ করে বললেন, ‘আমি এখন বিশ্বব্রহ্মান্ডের বিনাশকর্তা’। আমারও মনে হলো আমরাও অনেকটা সেরকম ক্ষমতার অধিকারী হলাম আজ।”
নিজেদের সর্বশক্তিমান মনে হতেই পারে তাঁদের। পারমাণবিক বোমা হাতে নিলে মানবিকতা তো পালাবেই। তাই তো এর তিন সপ্তাহ পরেই ৬ আগস্ট সকাল বেলা জাপানের হিরোশিমা শহরের মাত্র ছয়শ' গজ উপর দিয়ে উড়ে গেলো বি-২৯ গ্রুপের ৭৭ নম্বর প্লেনটি।
একটু পরেই কমান্ড রিসিভ করলেন পাইলট মেজর চার্লস ডাবলিউ সোয়েনি (Charles W Sweeney)। নির্দেশ মতো শহরের উপর ছেড়ে দিলো তেরো হাজার টন টি-এন-টি’র ক্ষমতাসম্পন্ন ‘লিটল বয়’। সাথে সাথে নিভে গেলো এক লাখ ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণপ্রদীপ।
একটুও কি খারাপ লেগেছিলো সেদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের? একবারও কি মনে হয়নি যে তাঁর ‘ট্রুম্যান’ নামটি সভ্যতার কাছে একটি প্রচন্ড বিদ্রুপ? নাকি আসল সভ্য তারাই যারা এরকম করে মানুষ মেরে ফেলার হুকুম দিতে পারেন। তারাই আসল ‘ট্রু-ম্যান’।
তাই তো হিরোশিমা নিশ্চিহ্ন করে দেবার তিন দিন পরেই নাগাসাকি শহরে ছুঁড়ে মারা হলো বিশ হাজার টন টি-এন-টির সমান বিস্ফোরণ ক্ষমতার ‘ফ্যাট ম্যান’। মুহূর্তেই পঁয়তাল্লিশ হাজার মানুষ সমেত দুই বর্গমাইল এলাকা পারমাণবিক ছাইয়ে পরিণত হলো। সেদিন কোন্ ধর্মগ্রন্থের কথা মনে হয়েছিলো ডক্টর ওপেনহাইমারের?
সেদিন তাঁর কী মনে হয়েছিলো জানা না গেলেও প্রফেসর ওপেনহাইমার যে প্রচন্ড রকমের অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সাথে দেখা করতে গিয়ে ওপেনহাইমার বলেছিলেন, “মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমার হাতে রক্ত লেগে আছে।”
তারপর ইউ এস অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান হবার পর ওপেনহাইমার চেষ্টা করেছেন পারমাণবিক দানবকে নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু তা হতে দেবে কেন উচ্চাভিলাষী রাজনীতিকরা। ১৯৫৩ সালে আমেরিকায় যখন অ্যান্টি-কমিউনিজম সেন্টিমেন্টের নৃশংসতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে- ওপেনহাইমারকে কমিউনিস্ট অপবাদ দিয়ে সরিয়ে দেয়া হলো অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন থেকে। শুধু তাই নয়, কেড়ে নেয়া হলো তাঁর সিকিউরিটি পাস। পারমাণবিক বোমার জনক ওপেনহাইমার হয়ে গেলেন পারমাণবিক জগতে নিষিদ্ধ ব্যক্তি।
আমার মতো সবারই কি সেদিনের কথা মনে পড়ছে? হয়তো পড়ছে। নইলে এই ‘ফ্যাট ম্যান’ বোমার অরিজিনাল সাইনবোর্ডের সামনে এসে এরকম গম্ভীর হয়ে যাবে কেন সবাই? এবার কি সবাই যুদ্ধবিরোধী হয়ে যাবে? বিজ্ঞানীরা বলবে তারা তো সবসময়ই যুদ্ধবিরোধী। যুদ্ধতো বাধায় রাজনৈতিক নেতারা। তাদের কারণেই মূল্য দিতে হয় অনেককে। এ নিয়ে বির্তক চলতে পারে। কিন্তু যুদ্ধপাগল বৈজ্ঞানিক কি একজনও নেই? স্ট্যানলি কুব্রিকের বিখ্যাত সিনেমা ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ অর হাউ আই লার্নড টু স্টপ ওয়ারিইং অ্যান্ড লাভ দি বম্ব’ (Dr Strangelove or: How I Learned to Stop Worrying and Love the Bomb)-এর ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ এখনো অনেক আছেন। খুঁজলে এই ট্যুরেই সেই রকম কয়েকজনকে পাওয়া যাবে।
১৯৪৫ সালের বিস্ফোরণের পরে প্রথমবারের মত এখানে লোক আসে ১৯৫৩ সালে। প্রায় সাড়ে ছয়শ' আমেরিকান সাধারণ নাগরিক এসে দেখে যায় কী ঘটেছিলো এখানে। এর কয়েকবছর পর থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম শনিবার এখানে বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
শান্তির জন্য প্রার্থনা! প্রার্থনা করে কি পৃথিবীতে শান্তি আনা সম্ভব? বরং প্রার্থনার পদ্ধতিগত পার্থক্যের কারণেই অনেক নতুন অশান্তির সৃষ্টি হয়। প্রার্থনা করে কোন শান্তি আনা সম্ভব নয়। শান্তি আসলে আসতে পারে হোয়াইট হাউজ থেকে।
১৯৭২ সালে এখানে স্টিলের বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৫ সালে এই ট্রিনিটি সাইটকে ‘ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক’ ঘোষণা করা হয়। এখন বছরে মাত্র দু'দিন জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে এই সাইট। এপ্রিল ও অক্টোবর মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার।
বাসে উঠে চলে এলাম দুই মাইল দূরের ম্যাকডোনাল্ড হাউজে। রাস্তা থেকে হেঁটে যেতে হয় অনেকটুকু ভেতরে। পায়ে চলা শুধু নয়, কোন পথেরই কোন চিহ্ন নেই এখানে। মরুভূমির বালির ওপর এখানে ওখানে গজিয়ে উঠেছে বুনো জংলি গুল্ম।
এই বাড়ি থেকে মাত্র দু'মাইল দূরে এতবড় বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও বাড়িটার খুব একটা ক্ষতি হয়নি। জানালা দরজা গুঁড়ো হয়ে গেছে, আর ছাদ গেছে উড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরলেও পড়ে যায়নি।
১৯৪৫ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত এবাড়িতে একটুও হাত লাগানো হয়নি। ১৯৮৪ সালে এই বাড়ির সংস্কার করে ১৯৪৫ সালের ১২ জুলাই তারিখে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় এনে রাখা হয়েছে এখন।
বাংলাদেশের গ্রামের মাটির বাড়ির মত একতলা বাড়ি। দেয়াল ইটের হলেও ওপরের প্লাস্টার দেখে মনে হয় মাটির দেয়াল। ঘরের ভেতর কিছু ফটোগ্রাফ। হয়তো সাথে করে এনেছিলেন সেদিনের বিজ্ঞানীদের কেউ। শব্দতরঙ্গে সবগুলো ছবির কাচ ভেঙ্গে গেছে। ছবিগুলো এখনো সে অবস্থাতেই রেখে দেয়া হয়েছে।
ঘরের বাইরে একটি উইন্ডমিলের ধ্বংসাবশেষ। উঠোনে যে চৌবাচ্চাটিতে গা ডুবিয়ে বসে থাকতেন সেদিনের ক্লান্ত বিজ্ঞানীরা- এক ফোঁটাও পানি নেই আজ সেখানে। কিছু মরু ক্যাকটাস জন্মেছে চৌবাচ্চার ফেটে যাওয়া তলার মাটিতে।
এখানেও সবাই খুব গম্ভীর হয়ে আছে। সাথে আসা শিশুরাও কেমন জানি চুপচাপ। দস্যিপনা ভুলে গিয়ে তারাও দেখছে অবাক চোখে। বুঝতে চেষ্টা করছে কোন্ বিপ্লব ঘটে গেছে এ বাড়িতে। পরীক্ষাক্ষেত্রে এসেই সবার এরকম লাগছে! আর যদি নিয়ে যাওয়া যেতো সেদিনের হিরোশিমা নাগাসাকিতে! কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতো এই সভ্যতার বরপুত্ররা? মনে পড়ছে হেলাল হাফিজের কবিতার লাইনগুলো,
“নিউট্রন বোমা বোঝ,
মানুষ বোঝ না।”
এবার ফেরার পালা। বেলা পড়ে এসেছে। যেদিকে চোখ যায় ধূ ধূ প্রান্তর। ছোট ছোট মরুউদ্ভিদ আর বড় বড় ক্যাকটাস। মাঝে মাঝে হরিণ ছুটে বেড়াচ্ছে। চমৎকার লাগছে এই মরুহরিণগুলোকে তাদের নিজ পরিবেশে দেখতে। বাসের শব্দে একটু থমকে দাঁড়াচ্ছে, চোখ তুলে দেখছে, আবার দৌড়ে পালাচ্ছে।
দেড় ঘন্টা পর বাস থামলো আউল বারের (Owl Bar) সামনে। অকৃত্রিম মেক্সিকান বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। আমাদের জন্য টেবিল বুক করা ছিলো আগেই।
মাটির ঘরের মত একতলা বাড়ি। মেটে রঙের দেয়াল। ওয়েস্টার্ন ছবিগুলোর দৃশ্যের মত লাগছে সবকিছু। আসল ওয়েস্টেই চলে এসেছি- সবকিছু ওয়েস্টার্ন তো হবেই। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চায়ের দোকানের মত টুল টেবিল। সবকিছুর রঙই পাকা মরিচের মত টুকটুকে লাল। মিটমিটে আলো। এত কম ওয়াটের বাল্ব জ্বালায় কেন এরা?
একটি ঝাল বার্গারের অর্ডার দিলাম। মেক্সিকান ঝাল বার্গার নাকি একবার খেলে তিন দিন পর্যন্ত জিভ জ্বালা করে। দেখা যাক পরখ করে। একটু পরেই টেবিলে বার্গার রেখে গেলো মেক্সিকান-আমেরিকান ওয়েট্রেস। তার ড্রেসও টুকটুকে লাল।
ঝাল বার্গার মুখে দেবার পর মনে হলো যত গর্জে তত বর্ষে না। আমার স্বাভাবিক ঝাল-ধারণ ক্ষমতার চেয়ে একটু বেশি ঝাল- কিন্তু তাই বলে একেবারে তিন দিন জিভ জ্বলবার মত কিছুই নয়।
শিয়াং বসেছেন আমার টেবিলে। টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করছেন এখন। বুঝতে পারলাম তাঁর মৌনব্রত অবলম্বন করার কারণ। কারণ ইংরেজিতে দখল আসেনি এখনো। ইংরেজি আয়ত্ত করতে আমাদের চেয়ে তাদের একটু বেশি সময় লাগে।
এখানে টেবিলে বিল নিয়ে আসে না। কাউন্টারে গিয়ে বিল দিতে হবে। অন্যদের দেখাদেখি টেবিলে এক ডলারের একটি নোট রেখে কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলাম। আড়াই ডলারের বার্গার খেয়ে এক ডলার টিপস দিতে হলো এখানে!
কাউন্টারের সামনে দেয়াল জুড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কারেন্সি নোট লাগানো আছে। আর নানারকম ভাষায় বিভিন্ন রকম মন্তব্য লেখা। বোঝা যাচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ এসেছে এখানে। বাংলাদেশ থেকে মনে হয় আমিই প্রথম। সাথে বাংলাদেশী টাকা থাকলে এখানের দেয়ালে লাগিয়ে রেখে যেতে পারতাম। দেয়ালেই অটোগ্রাফ দেবার ব্যবস্থা আছে। মনে হচ্ছে এ রেস্টুরেন্টটি এ অঞ্চলের বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট। ভীড় লেগেই আছে রেস্টুরেন্টে। অবশ্য আশেপাশে আরো রেস্টুরেন্ট আছে কিনা জানি না। না থাকলে এখানে ভীড় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আলবুকার্কি সিটিতে যখন ফিরলাম রাত সাড়ে ন'টা বেজে গেছে। দেখতে দেখতে কেটে গেলো এই ক’টা দিন। পাট চুকলো এখানের। এবার লস অ্যাঞ্জেলেস যাবার পালা।
___________________
No comments:
Post a Comment