কনফারেন্স: প্রথম দিন
আলবুকারকি কনফারেন্স
সেন্টারে ঢুকে হকচকিয়ে
গেলাম। বিশাল এর আয়তন,
বিস্তৃত এর অলিগলি
সিঁড়ি এলিভেটর। স্টিভেনও দেখলাম বেশ অবাক হয়েছে। এটা যে এত বড় তা সেও জানতো না। না জানলেও সে এটা
ওটা অনেককিছু বলে যাচ্ছিলো
হাঁটতে হাঁটতে। আলবুকার্কিতে এই কনফারেন্স
আয়োজন করার পেছনে
অর্থনীতির প্রশ্নটাও জড়িত। ছুটির
দিনে প্রায় মৃত এই শহরটাতে
কিছুটা অর্থনৈতিক প্রাণ সঞ্চারের জন্য এই সম্মেলনের আয়োজন এখানে। টিহেরাস আর মার্টিন
লুথার কিং ড্রাইভের
অনেকখানি জায়গা জুড়ে গড়ে
ওঠা এই বিশাল
কেন্দ্রে প্রায় দিনই কোন
না কোন বড় অনুষ্ঠান চলতে থাকে
আর তাকে ঘিরে
গড়ে উঠেছে আরো অনেকগুলো
প্রতিষ্ঠান।
কনফারেন্স সেন্টারটি দু'ভাগে বিভক্ত- ইস্ট কমপ্লেক্স
ও ওয়েস্ট কমপ্লেক্স। আজ সকালের
উদ্বোধনী বক্তৃতা কিভা (Kiva)
অডিটরিয়ামে। ইস্ট কমপেক্সে
ঢুকে এলিভেটরে চড়ে দোতলায়
ওঠার পরে ম্যাপ
আর দিক নির্দেশনা
দেখে দেখে ওয়েস্ট
কমপেক্সে পৌঁছলাম।
মার্টিন লুথার কিং ড্রাইভের
ওপর একটা স্কাইব্রিজ
ইস্ট আর ওয়েস্ট
কমপ্লেক্সকে সংযুক্ত করেছে। ওয়েস্ট কমপ্লেক্সের ২০৮ নাম্বার
গেট হলো কিভা
অডিটরিয়ামের গেট। সিকিউরিটি
গার্ডের আনাগোনা প্রায় সবখানে। বিশেষ করে প্রবেশ
পথে। বাঘ সাইজের
কিছু কুকুরও দেখা গেলো
লেজ আর মাথা
সমানে নাড়াচ্ছে। কী জানি-
এই কুকুরগুলোর র্যাংকও হয়তো তাদের
ঘাড়ের বেল্ট ধরে থাকা
অফিসারগুলোর র্যাংকের সমান।
অডিটরিয়ামে ঢুকে মনে
হলো কোন ইনডোর
স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েছি। আড়াই হাজার সিটের এই হল। বিশাল স্টেজ, হাজার রকমের আলোক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার
নিয়ন্ত্রিত প্রজেক্টর আর শব্দযন্ত্রের
বিশাল কর্মযজ্ঞ।
সকাল সাড়ে
আটটায় প্রথম বক্তৃতা শুরু হবার
কথা। এখনো মিনিট
পাঁচেক বাকি। স্টিভেন
কিছুক্ষণ পর পর উঠে
দাঁড়িয়ে কাকে যেন
খুঁজছে। এত বড় হলের দু'পাশের আলোগুলো নিভিয়ে দেয়া হলো। ওদিকের আসনগুলোর দরকার নেই। সাতশ
জনের মত ডেলিগেট
এই কনফারেন্সে, শ পাঁচেক
উপস্থিত রয়েছে বক্তৃতা শুনতে।
কনফারেন্স উদ্বোধন নামক কোন
প্রহসন হলো না। কোন সিনেটর বা মেয়র
টাইপ কেউ আমন্ত্রিত
হননি দেখে ভালো
লাগলো। আমাদের
দেশে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি ছাড়া একটা কাপড়ের দোকানও উদ্বোধন করা সম্ভব হয় না।
প্রথম বক্তৃতাটা দিলেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বিল জ্যাক। ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে কয়েক বছর আগে চালু
হওয়া রিলেটিভিস্টিক হেভি আয়ন
কোলাইডার (Relativistic Heavy Ion Collider) বা সংক্ষেপে
রিক (RHIC)
থেকে প্রাপ্ত ডাটা বিশ্লেষণ
করলেন তিনি।
বড় বড় বিজ্ঞানীদের বক্তৃতা প্রায় সময়ই খুব
একটা ভালো হয় না। বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এর চেয়ে
সহজ করে বলা
হয়তো সম্ভবও নয়। উঁচু
ক্লাশের লেখাপড়া এখন এতটাই
গবেষণার পর্যায়ে চলে গেছে
যে সবার পক্ষে
সবকিছু বোঝা এখন
প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে চলে গেছে। স্টিভেন উঠে বাইরে
চলে গেছে বক্তৃতা
শেষ হবার আগেই। আমি মোটামুটি মনযোগ দিয়েই শুনেছি যদি কিছুটা
হলেও বুঝতে পারি। কিন্তু
খুব একটা সুবিধা
করতে পারলাম না।
প্রথম বক্তৃতা শেষ হবার
পর প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছে। দেখলাম পা
টিপে টিপে ডেবি এসে বসলো স্টিভেনের
ছেড়ে যাওয়া সিটে। ক্রিম
কালারের
স্যুট পরে এসেছে
আজ। বেশ এক্সিকিউটিভ ভাব
চলে এসেছে তার মধ্যে। পোশাক পরিবর্তনেই ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেকটুকু।
যদিও হাসিটা লেগেই আছে তাঁর ঠোটে। কানের কাছে মুখ
এনে বললো, "বিকেলে আসছো তো আমাদের রিসেপশানে?"
তাদের রিসেপশান মানে ফিজিক্যাল
রিভিউ আর ফিজিক্যাল
রিভিউ লেটারের সম্পাদকের সাথে পদার্থবিজ্ঞানীদের
সাক্ষাতের পার্টি। ডেবি আয়োজকদের একজন। আমাকে লোভ দেখালো সে-
"খাওয়া দাওয়ার ভালো ব্যবস্থা
আছে।" ভরসা দিলো - "আই উইল অ্যারেঞ্জ সাম সফ্ট ড্রিংক্স ফর
ইউ।"
দ্বিতীয় বক্তৃতা শুরু হলো। ফার্মি ল্যাবের হোসে ফ্রিম্যান
শুরু করেছেন ‘ডিজিটাল স্কাই সার্ভে’ বিষয়ে বক্তৃতা। কম্পিউটারের পর্দায় আকাশ তৈরি
করে তারা গণনা। অ্যাস্ট্রোনমিতে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল স্কেলে পয়সা ঢালছে
এখন বিভিন্ন কোম্পানি। আমি বক্তৃতার
মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। উশ্খুস করতে করতে একটু
পেছনে
ঝুঁকে বসতেই ডেবির মুখ ঠেকে গেলো
আমার কানে।
"তোমার ভালো লাগছে এগুলো?’ আমার কানে তার প্রশ্ন।
"না।"
"তবে বসে আছো
কেন? চলো বেরিয়ে
যাই।"
এই হলো
আমেরিকান স্পিরিট। ভালো না লাগলেই ঝটপট বেরিয়ে
চলে আসো। ডেবির পিছুপিছু
বেরিয়ে এলাম হল থেকে। অনেকেই হলের পেছনের
দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে
বক্তৃতা শুনছে। ভালো না লাগলেই বেরিয়ে যাচ্ছে যখন তখন। সবাই অস্থির এখানে। তাই দেখা
যাচ্ছে বক্তৃতা চলাকালীন কেউ বেরোচ্ছে,
কেউ ঢুকছে। এদের কাছে
মনে হচ্ছে এটা খুবই
একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
"ডিড ইউ স্লিপ ওয়েল লাস্ট
নাইট?" হাঁটতে হাঁটতে জানতে চাইলো ডেবি।
"জেট ল্যাগ এখনো কাটেনি। ঘুম
আসতে একটু দেরি হলেও ঘুমিয়েছি। তুমি?"
"আই ওয়াজ ভেরি টায়ার্ড। কিন্তু
ঘুম হয়নি একটুও। লুসিকে খুব মিস করছিলাম।"
"লুসি?"
"আমার বিড়াল।"
"তোমার বিড়াল আছে? কয়টা?"
"এখনো একটা। বাট লুসি ইজ
প্রেগন্যান্ট।"
কথা বলতে বলতে ইস্ট কমপ্লেক্সে
এসে গ্রাউন্ড লেভেলে নেমে গেলাম। এখানে বিভিন্ন রকম গবেষণার
পোস্টার প্রেজেন্টেশান চলছে।
বিশাল হলঘর। দেয়ালে লাগানো ছোট্ট একটা প্লেটে লেখা আছে
এই
ঘরের ফ্লোরের ক্ষেত্রফল এক লাখ
ছয় হাজার দুইশ' বর্গফুট। দেখে মনে
হচ্ছে ফুটবল খেলা যাবে
এখানে।
হলের মাঝখানে একটা লম্বা টেবিলে প্যাস্ট্রি আর কফি
রাখা আছে। পাশে একটা স্ট্যান্ডে লেখা: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তির
সৌজন্য এই ফ্রি
ব্রেকফাস্ট। দেখলাম কারো কোন
কৌতূহল নেই এই নাম না জানা
মানুষটির প্রতি। সবাই ব্যস্ত
যার যার কাপ-প্লেট নিয়ে।
একপাশে
আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির লোকজন বসে আছে
তাদের লিফলেট ইত্যাদি আনুষঙ্গিক অনেককিছু নিয়ে। তাদের
টেবিলের কাছে গেলেই
দিচ্ছে চকলেট, কলম ইত্যাদি। এখানে সবাই ডেবির
পরিচিত। কিছুক্ষণের জন্য সে মিশে গেলো তাদের
সাথে।
আমি দেখছি
ঘুরে ঘুরে। যারা
ওরাল প্রেজেন্টেশানের সুযোগ পায়নি তাদের জন্য পোস্টার
প্রদর্শনীর ব্যবস্থা। আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ পেপারগুলো সাধারণত পোস্টার আকারে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এখনো তেমন
জমে ওঠেনি পোস্টার প্রদর্শনী। কফির কাপ
হাতে নিয়ে পোস্টার
দেখছে অনেকে। বেশ কয়েকটি
বইয়ের স্টল আছে। ফিজিক্যাল সায়েন্সের বিখ্যাত প্রকাশকরা এসেছে তাদের নতুন বই আর ক্যাটালগ নিয়ে। পপুলার
সায়েন্সের বই এখনে
প্রচুর। সাথে খটমটে
গাণিতিক পদার্থবিদ্যার বইও কম নেই। এটা ওটা
নেড়েচেড়ে দেখছে সবাই। অন্যধরনের এক জ্ঞানের মেলা এখানে।
হলের এককোণায়
ইমেইল চেক করার
জন্য লম্বা লাইন। চারটা
পাবলিক কম্পিউটার আসলেই কম হয়ে
গেছে এতগুলো পদার্থবিজ্ঞানীর জন্য। তবে
অনেকেই তাদের ল্যাপটপে কাজ করছে
যা করার।
‘হ্যালো’
‘হাই’ চলছে অনেকের
সাথে। কয়েকটা বাক্য বিনিময়। তারপর নিজের মতোই ঘুরে
বেড়ানো। সবাই স্বাধীন
এখানে। কিছু ভারতীয়
ছাত্রছাত্রীর সাথে পরিচয়
হলো। তারা ছড়িয়ে
আছে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে।
দিবস স্যানাল
এসেছে নিউ জার্সি থেকে। কসমোলজি
নিয়ে পি-এইচ-ডি করছে
সে। বাঙালি বাবা-মায়ের অবাঙালি ছেলে। অবাঙালি বললাম কারণ একটুও বাংলা জানে না সে। বাংলা নাম দেখে আমি
হড়বড় করে বাংলায় বলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে আমার উৎসাহে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়ে
ঠান্ডা গলায় বললো, "সরি, আই ডু নট আন্ডারস্ট্যান্ড 'ব্যাংগালি'।"
তার 'ব্যাংগালি' শুনেই আমার মেজাজ
খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু পর মুহূর্তেই মনে হলো সে হয়তো ছোটবেলা থেকেই বাংলা শেখার
সুযোগ পায়নি। তার মা-বাবা তাকে বাংলা শেখাননি সেটা কি তার দোষ?
"আই ক্যান স্পিক হিন্দি। ডু ইউ
স্পিক হিন্দি?"
এই তো সে ভারতীয় জাতীয় ভাষা জানে।
বাংলা জানে না তো কী হয়েছে। তবুও বাঙালির
ছেলে বাংলা জানে না শুনলে
একটু কেমন যেন
লাগে। মনে হয় বাংলা না জানলে
বাঙালি হবে কীভাবে
সে?
একটা পোস্টারে
সামান্য মনযোগ দিয়েছি- এসময় ডেবি এসে পিঠে আলতো একটা
চাপড় দিলো। ঘুরে
তাকাতেই হাতে একটা
প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
"এটা তোমার জন্য।"
"থ্যাংক ইউ" বলে খুলে
দেখলাম একটা টী-শার্ট। আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির মনোগ্রাম আঁকা।
"মাত্র কয়েকটা অবশিষ্ট ছিলো। এল সাইজে তোমার হবে তো?"
কেউ কিছু
উপহার দিলে তা নিয়ে উচ্ছসিত হওয়াটা পশ্চিমা সভ্যতার নিয়মের মধ্যে পড়ে। আমিও
সে নিয়ম মেনে
ডেবিকে জড়িয়ে ধরে বললাম, "ইটস ওয়ান্ডারফুল ডেবি। থ্যাংক
ইউ।"
"ইউ আর মোস্ট
ওয়েলকাম।"
পৌনে এগারোটা
বাজে প্রায়। এবার বিভিন্ন
গ্রুপের বারোটা সেশান শুরু হচ্ছে
একই সাথে বিভিন্ন
রুমে। স্টিভেনকে
কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। ‘রিসেন্ট
ডেভেলপমেন্ট ইন নিউক্লিয়ার
থিওরি’ সেশানে আমার আগ্রহ। ডেবির আগ্রহ নেই তাতে। তাই দু'জন দু'দিকে চলে গেলাম।
অধিবেশন কক্ষের নাম মেসিলা
(Mesilla)। ইস্ট
কমপ্লেক্সের দোতলায় ২১৫ নম্বর
ঘর এই মেসিলা। সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চললো চারজন
প্রফেসরের বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তর। বক্তৃতার খুব সামান্যই
বুঝতে পেরেছি আমি। যতই
শুনছি ততই মনে
হচ্ছে আমি আমার
অজ্ঞানতাকেই আবিষ্কার করছি এবং ততই
মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
বেরিয়ে দেখি স্টিভেন
আর ডেবি দাঁড়িয়ে আছে হলের
বাইরে। কনফারেন্স কমিটি কোন লাঞ্চের
ব্যবস্থা করেনি। যার ব্যবস্থা
তাকেই করতে হবে। আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির কনফারেন্সে নাকি খাবারের
ব্যবস্থা না করতে হলে রেজিস্ট্রেশন ফি অর্ধেকে কমিয়ে আনা যায়। ফলে অনেক বেশি
মানুষের পক্ষে কনফারেন্সে যোগ দেয়া সম্ভব হয়।
শনিবারের আলবুকারকি। বুকে ব্যাজ
লাগানো শত শত বিজ্ঞানশিশু ছাড়া আর সবকিছুই স্থির। দোকানপাট প্রায় সবই বন্ধ,
রাস্তাঘাট খালি। ছুটির
দিনের আলবুকারকি- মনে হচ্ছে
এক মৃতপুরী। সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউতে দুটো রেস্টুরেন্ট
খোলা আছে। ‘ওয়েলকাম টু এ-পি-এস ডেলিগেটস’
লেখা সাইন দেখে
বোঝা যাচ্ছে এরা ঝোপ
বুঝে কোপ মারছে।
প্রচন্ড ভীড় এখানে। আলবুকারকির ব্যবসায়ীদের কিছু এক্সট্রা
উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেবার
জন্যই নাকি ছুটির
দিনে শুরু করা
হয়েছে কনফারেন্স। অথচ ব্যবসায়ীরাই
এখানে আগ্রহী নয় ছুটির
দিনে দোকান খোলা রাখতে। কয়েকটা স্যুভেনির শপ খোলা
আছে। তাদের মালিক চায়নিজ। কিন্তু কোন চায়নিজ
রেস্টুরেন্ট চোখে পড়লো
না এদিকে। এমনকি হ্যাংরি-জ্যাকস, কে-এফ-সি বা ম্যাকডোনাল্ডসও চোখে পড়ছে
না। বিখ্যাত সাবওয়ে বার্গারও আজ বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে
হায়াত রিজেন্সির ডাইনিং হলেই ঢুকতে
হলো।
বেশ হাই
ফাই। কাচের দরজা ঠেলে
ঢোকার পরেই প্রশস্ত
বারান্দা। পিতলের টবে বিরাট
বিরাট গাছ দাঁড়িয়ে
আছে দেয়াল ঘেঁষে। ঠিক লাইন
ধরে না হলেও
অনেকেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে বারান্দায়।
গাঢ় খয়েরি
রঙের উর্দিপরা একজন ওয়েটার
এসে জ্ঞিজ্ঞেস করলো আমরা
ক'জন। উত্তর শুনে কিছু
না বলেই চলে
গেলো সে ভেতরে। আমি আর ডেবি একে
অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে
হাসি চাপার চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্টিভেন নির্বিকার থাকার চেষ্টা করছে।
ডেবি নিচু গলায় কী কী যেন বলছে- কিন্তু কিছুই ঢুকছে না আমার
কানে। ক্ষিধেয় পেট চোঁ
চোঁ করছে। এরা
সাথে না থাকলে
আমি দৌঁড়ে চলে যেতাম
৬৬ নম্বর রোডের ববের মাছ
ভাজা খেতে। কিন্তু
আজ কি সেটা
খোলা আছে? মনে হয় না। অবশেষে ফিরে এলো
ওয়েটারটি। তার পেছনে
স্টিভেন যাচ্ছে দেখে আমরাও
পিছু নিলাম।
ডাইনিং হলে হাঁটতে
হচ্ছে খুব সতর্ক
হয়ে। এখানে মনে হচ্ছে
স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ
সংখ্যক চেয়ার টেবিল বসানো হয়েছে। ঘরের একদম
কোণার দিকে একটা
টেবিল পাওয়া গেলো। এল শেইপের একটা লম্বা
বেঞ্চে তিনজনের বসার ব্যবস্থা। বেশ চকচকে ঝকঝকে মেনু। মেনুর
সাইজও বিশাল।
স্টিভেনের দিকে একটু
তাকাতেই সে বুঝে
গেলো আমার মতলব। বললো, “নো, নো। ইউ শুড বি গ্রোন
আপ। চুজ ইওর
ওন ফুড।”
বুঝলাম কাজ হবে না। কাল রাতে সে যা বলে দিয়েছে
তা মনে আছে
তার। ডেবির দিকে তাকালাম। কিন্তু সে নিজেই
আছে সমস্যায়। তাছাড়া কাল রাতে
তার চয়েজ দেখে
ভরসাও পাচ্ছি না তাকে
বলতে। নিজের খাবার নিজের পয়সায় যেমন কিনতে
হয়- তেমনি নিজেকেই পছন্দ করতে হয়। এটাই নিয়ম।
প্রথমবারের মত রেস্টুরেন্টের মেনু পড়লাম বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পড়ার মত মনযোগ দিয়ে। অপরিচিত
খাবার আন্দাজে অর্ডার দিলে বিপদে
পড়ার সম্ভাবনা আছে। ওয়েটারকে
জ্ঞিজ্ঞেস করে জেনে
নেয়া যায় কোন্
খাবার কেমন। কিন্তু
তাতেও আমার সংকোচ
হচ্ছে। যা হয় হবে বলে চিকেন
আছে এরকম একটা
খাবারের অর্ডার দিলাম। ডেবি একটা
অদ্ভুত খটমটে নামের মেক্সিকান বস্তুর অর্ডার দিলো আর স্টিভেন অর্ডার দিলো ডাবল
চিজের একটা ডিস।
খাবার আসতে সময়
নিলো প্রায় পনের মিনিট। কোলের ওপর ন্যাপকিন
বিছানো ছাড়াও ছুরি কাঁটাচামচ
ধরারও নাকি একটা
আমেরিকান নিয়ম আছে। অস্ট্রেলিয়ায় দেখেছি ডান হাতে ছুরি
আর বাম হাতে কাঁটাচামচ
ধরে বেশিরভাগ মানুষ। অস্ট্রেলিয়ানরা এখনো নিজেদের
ব্রিটিশ সাবজেক্ট মনে করে। তারা সবকিছুতে ব্রিটিশদের অনুকরণ করবে তা স্বাভাবিক। আর এদিকে
আমেরিকানরা করে ব্রিটিশদের
ঠিক উল্টো। যেমন ক্রিকেট
ব্রিটিশদের খেলা বলে
আমেরিকানরা ক্রিকেট খেলেই না। তারা
নিজেদের জন্য ক্রিকেটদের
আদলে বেস-বল খেলাকে
তাদের জাতীয় খেলার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ব্রিটিশদের ভাষা ইংরেজিকে
কিছুটা বদলে নিজেদের
মত করে নিয়েছে,
যার নাম আমেরিকান
ইংলিশ। পুরো ভাষাটা
বদলে ফেলতে পারলে হয়তো তারা
তাই করতো। এখন
ছুরি কাঁটাচামচের কী ব্যবস্থা
করা যায়? ডানহাতে ছুরি ধরাটাই
সুবিধাজনক। এব্যাপারে ব্রিটিশদের থেকে আলাদা
হওয়া যায় কীভাবে?
তারা করলো কী-
কাটার সময় ছুরি
ডানহাতে ধরে আর কাঁটাচামচ ধরে বাঁহাতে। আর কাটা হয়ে
গেলে ছুরি প্লেটে
রেখে দিয়ে ডানহাত
দিয়েই কাঁটাচামচ ধরে। দেবী
একটু সংশোধনী দিলো স্টিভেনের
বর্ণনায়। ডানহাত বাঁহাত বললে নাকি
অনেকের জন্য একটু
পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়
সিস্টেমটা। কারণ যাঁরা
বাঁহাতি তারা কী করবেন? সেজন্য নিয়ম হলো
যে হাত দিয়ে
লেখে সে হাতেই
ছুরি ধরবে। ছুরির
কাজ শেষ হয়ে
গেলে সে হাত
দিয়েই কাঁটাচামচ ধরবে।
খাবার এসে গেছে। ছুরি কাঁটাচামচের ব্যবহার সম্পর্কে সদ্যলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করতে গিয়ে
মনে হচ্ছে বিপদেই পড়ব। প্লেটে
বেশ বড় এক পিস চিকেন দেখা যাচ্ছে
অনেকগুলো লাল মরিচের
মাঝখানে। খাঁটি মেক্সিকান খাবার। মনে হচ্ছে
ঝালে জিভ পুড়ে
যাবে। কিন্তু যতটা আশংকা
করেছিলাম ততটা নয়। খাবারটা ভালোই।
বেচারী ডেবির এবেলাও খুব একটা
ভালো যাচ্ছে না। প্লেটের
খাবার একটু মুখে
দিয়েই সে চোখমুখ
বিকৃত করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে খাদ্যের ব্যাপারে খুব চুজি
সে। খাদ্য নিয়ে খুঁতখুঁতানি
থাকলে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। খেতে খেতে
ডেবির দিকে তাকাতেই
সে হেসে ফেললো।
"ক্যান আই হ্যাভ
এ বাইট?"
"ও শিওর। গো এহেড।"
এবার আমার
প্লেট থেকেই খেতে শুরু
করলো ডেবি। ভালো লাগলো
তার অন্তরঙ্গতায়।
আড়াইটা থেকে আরেকটা
সেশানে যোগ দিলাম। হেভি আয়ন রি-অ্যাকশান (Heavy Ion Reaction) বিষয়ক। রুম খুঁজে পেতে বেশ
বেগ পেতে হলো। ওয়েস্ট কমপ্লেক্সের ছিয়াত্তর নম্বর রুম। রুমের
নাম টাওস (Tous)। স্প্যানিশ নাম। নামের
অর্থ কী জানি
না। এবারের বক্তৃতা আরো খটমটে। দশ মিনিটের লেকচারের পরে দু'মিনিটের
প্রশ্নোত্তর পর্ব। দশ মিনিটের ভেতর অনেক
কিছু বলতে চাচ্ছেন
বলে জটিল বিষয়
আরো জটিল হয়ে
যাচ্ছে। চারটি বক্তৃতা কোনরকমে হজম করার
পরে আর পারলাম
না, বেরিয়ে এলাম।
তিনটায় ডেবিদের রিসেপশান। কিভা অডিটোরিয়ামের
লবিতে রিসেপশানের আয়োজন। লোকে গিজিগিজ
করছে জায়গাটা। প্রায় সবার হাতেই
মদের গ্লাস, বীয়ারের ক্যান। কেক, পেস্ট্রি, চিজ, আঙুর, কলা, আনারস থরে থরে
সাজানো। লম্বা লাইন খাবার
টেবিলের সামনে।
ডেবিকে দেখলাম
খুব ব্যস্ত। কথা বলছে
অনেকের সাথে। কাছে
যেতেই পরিচয় করিয়ে দিলো আমেরিকান
ফিজিক্যাল রিভিউর চিফ এডিটর
স্যাম আর ফিজিক্যাল
রিভিউ লেটারের অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ক্রিসের সাথে। স্যাম-
মানে প্রফেসর স্যাম অস্টিন মোটা চশমার
ভারী শরীরের রাশভারী মানুষ। ফিজিক্যাল রিভিউর প্রধান সম্পাদক হিসেবে অনেক ক্ষমতা
রাখেন। আবার নিয়মকানুন
আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা বলে বিশেষ
কোন ক্ষমতাই দেখাতে পারেন না। এরকম
বড় বড় মানুষের সাথে আমার
বেশিক্ষণ জমে না। তার চেয়ে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারের তরুণ সহকারী
সম্পাদক ক্রিস মানে ক্রিস্টোফার
ওয়েসেলবার্গের সাথে আড্ডা
জমানো অনেক সহজ।
ক্রিস বেশ হাসিখুশী
মানুষ। হাসতে হাসতে বললো তার নিজের
কথা। সায়েন্টিফিক ক্যারিয়ার চেয়েছিলো সে। পি-এইচ-ডি করার
পরে কয়েক জায়গায়
পোস্টডক ফেলোশিপ। তারপর স্থায়ী যে কাজ
ফিজিক্সের কাছাকাছি পেয়েছে তা হলো
বর্তমান সহকারী সম্পাদকের কাজ। প্রতিযোগিতার
আঁচ লাগলো গায়ে। যোগ্যতমের
উর্ধ্বতন হওয়ার ব্যাপারটা সহজ নয়। খালি পোস্টে গোল দেয়ার
সুযোগ এখন আর নেই। ফিজিক্সে পি-এইচ-ডি করাটা
এখন মিনিমাম যোগ্যতায় এসে ঠেকেছে।
পরিচয় হলো কোলকাতার
বিজ্ঞানী তরুণ দত্তের
সাথে। তিনি এসেছেন
কানেকটিকাট (Connecticut) থেকে। আমি কয়েকবার চেষ্টা করলাম তাঁর সাথে
বাংলায় কথা বলতে। কিন্তু তিনি সম্ভবত
আমেরিকায় আসার সময়
প্রতিজ্ঞা করে এসেছেন
যে একটি বাক্যও বাংলায় বলবেন না। মুখ
খুলে কথা বলতে
না পেরে কোকের
ক্যান খুললাম।
একটু দূরে
দাঁড়িয়ে দেখছিলাম অন্য একজন
ভারতীয়কে। বেশ চটপটে
ছিপছিপে ভদ্রলোক। এক সাথে
অনেকের সাথে কথা
বলছেন, হাসছেন, হাতের মদের গ্লাস
সামলাচ্ছেন মাত্র দুই আঙুলে। বোঝা যায় এ বিষয়ে তাঁর হাতেখড়ি
হয়েছে বহু বছর আগে। তাঁর আমেরিকান উচ্চারণে ভারতীয় টান একটুও
নেই। আমি কতক্ষণ
তাঁর দিকে তাকিয়ে
ছিলাম জানি না। তিনি আমার দিকে
তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো। এগিয়ে এলেন আমার
দিকে। হাত বাড়িয়ে
দিয়ে বললেন, "পারটিয়া ছাউডুরি।"
তাঁর ব্যাজে
যে নাম লেখা
আছে আমার উচ্চারণে
তা হয় পার্থ
চৌধুরি। ম্যাচাচুচেটস ইউনিভার্সিটি। আমার ব্যাজের
দিকে তাকিয়েই বললেন, "প্রদীপ! বাঙালি?"
"হ্যাঁ।"
"আমি পার্থ। তুমি করেই
বলছি...।"
আলাপ জমে
গেলো। মনে হলো
এই বাঙালির পেটে জমে
উঠেছে অনেক বছরের
বাংলা। পার্থবাবু আমেরিকায় এসেছেন ১৯৭৬ সালে। পি-এইচ-ডি করতে
এসেছিলেন। একেবারে ফিরে যাওয়া
হয়নি আর। এখন
ম্যাচাচুচেটস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। খুব ভালো
লাগলো এই বাঙালি
আমেরিকান এক্সপেরিমেন্টাল নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্টের সাথে কথা
বলে।
সাড়ে পাঁচটায়
হায়াত রিজেন্সির গ্র্যান্ড প্যাভেলিয়নে আরেকটা রিসেপশান পার্টি। ওয়েলকাম রিসেপশান। ইতোমধ্যেই প্যাভেলিয়নের দু'দিকের দরজায় লম্বা লাইন। ঘরের
বাইরেও বেশ ভীড়। আমি নিজের রুমে চলে
গেলাম। ব্যাগটা রেখে নিচে
এসে প্যাভেলিয়নে যখন ঢুকলাম
প্রচন্ড ভীড় সেখানে। গতকাল ‘কোপেনহেগেন’ নাটকের সময় এর দশ ভাগের এক ভাগ লোকও
ছিল না। অবশ্য
গতকাল এরকম খাবারের
আয়োজন ছিলো না।
খাবারের লাইনের মাঝখানে ঢুকে পড়ার
কোন সুযোগ নেই। অনেক
লম্বা লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য্যও নেই। কী করি এখন? অন্য একটা
দরজা দিয়ে ঢুকে
গেলাম ভেতরে। হোটেলের উর্দিপরা লোকজন বিশেষ যত্নে আয়ত্তে আনা গাম্ভীর্য
নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,
এঁটো প্লেট ওঠাচ্ছে। বড় হোটেলের
সমস্যা হলো তাদের
সবকিছুতেই ট্রেডমার্ক লাগানো থাকে। প্লেট
থেকে শুরু করে
টিস্যু পেপারে পর্যন্ত। তাই এঁটো
প্লেট কাঁটাচামচ তাদের ধুয়ে পরিষ্কারও
করতে হয়। ওয়ান
টাইম ইউজ প্লেট
কাটলারি চলে না এখানে।
একদিকের টেবিলে দেখলাম বেশ কিছু
খাবার রাখা আছে,
কিন্তু কোন লাইন
নেই সেখানে। কাছে গিয়ে
দেখি ওটা ডেজার্টের টেবিল। মূল খাবারের পরবর্তী ধাপ। তাই
এখনো ভীড় নেই
সেখানে। মূল খাবার
খাওয়ার আগে মিষ্টি
খাওয়া যাবে না এরকম নিয়ম মানতেই
হবে এমন কোন
কথা নেই। সুতরাং
ডেজার্ট দিয়েই শুরু করি
ডিনার পর্ব।
আমার দেখাদেখি
পিছনে এসে দাঁড়ালো
লুই। স্কটিশ লুই আমার
সাথে একমত যে খাবারের ব্যাপারে ডিজঅর্ডার চলতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভাষা ব্যবহার
করে বলা চলে
‘ইট কমিউটস (commutes)।
কেক খেতে
খেতে গল্প করছিলাম
লুই’র সাথে। সে অ্যাস্ট্রোনমিস্ট (Astronomist), উঠেছে
ডাবল-ট্রি হোটেলে। হায়াত রিজেন্সির এক ব্লক
পরেই ডাবল-ট্রি। একটু পরেই
আমাদের সাথে যোগ
দিলো একদল চায়নিজ
ছেলেমেয়ে। আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে তারা
এসেছে আলাদা আলাদাভাবে। এখানে এসেই একটা
গ্রুপ হয়ে গেছে। নিজেদের ভাষায় কথা বলতে
পারার সুযোগ পেলে বন্ধু
হয়ে যেতে দেরি
হয়না। জানলাম এখানে আসার আগে
তারা কেউ কাউকে
চিনতোও না। কিন্তু
এখন কে বলবে
যে তারা একসাথে
বেড়ে ওঠেনি।
ডেজার্টের টেবিলে ভীড় শুরু
হতেই মেইন কোর্সের
টেবিলে জনসংখ্যা হ্রাস পেলো। ছুটলাম
সেদিকে। বেশ কয়েক
প্রকারের কন্টিনেন্টাল আর লোকাল
ফুড। আজকের সব খাবার
ফ্রি। কিন্তু পানীয়? যারটা তাকেই কিনে খেতে
হবে। হুঁ হুঁ
বাবা। এর নাম
হায়াত রিজেন্সি। এখানের এক পেগ
মদের দাম বাইরের
এক বোতলের দামের চেয়েও বেশি। কিন্তু
বারে ভীড় দেখে
মনে হচ্ছে না দামের
ব্যাপারটা নিয়ে কেউ
বিচলিত। আসলে এখানে
নিজের পকেট থেকে
দাম দিলেও সে পকেটের
টাকা জোগাচ্ছে গৌরি সেন। এখান থেকে গিয়েই
বিল করে দেবে
ডেইলি এলাউন্স বাবদ। রিসার্চ
ফান্ড থেকে নিজের
মদের দামও উশুল
করে নেবে সবাই।
বাতাসে অ্যালকোহলের তীব্র গন্ধ। মিনিট
পনের পরে পুরো
পরিবেশটাই অসহনীয় হয়ে উঠলো
আমার কাছে। রুমে
চলে এলাম। ঘরে
এখন পড়ন্ত সূর্যের সোনালী আলো। বসে
পড়লাম কাচের দেয়াল ঘেঁষে অস্তগামী সূর্যের দিকে মুখ
করে। সূর্যের এই শতদেখা
রূপ আমার কাছে
চিরনতুন- চিরসুন্দর।
No comments:
Post a Comment