২৮ জুলাই ১৯৯৮ মঙ্গলবার
কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। অপমান লাগছে খুব। মুখের
উপর সহজ সত্যি কথা কেউ বললে তা হজম করতে এত কষ্ট কেন লাগে বলতে পারো? আসলে অপ্রিয়
সত্য কথা বলা যত সহজ সহ্য করা তত সহজ নয়। যাক একটা শিক্ষা হলো- সোজাসাপ্টা কথা
বলার পাশাপাশি সোজাসাপ্টা কথা সহ্য করার অনুশীলনও করতে হবে। ব্যাপারটা ঘটেছে ফিলের
সাথে। তেমন মারাত্মক কিছু নয়- তবুও কেন যে এত খারাপ লাগছে।
বিকেলে
আলী সাহেব ফোন করেছিলেন অফিসে। জিজ্ঞেস করলেন আমি বিট্টুর সাথে কথা বলেছি কিনা।
বিট্টুর সাথে এর মধ্যে কোন কথা হয়নি আমার। তাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু পাইনি।
“কাল রাতে তুমি বাসায় ছিলে না?”
“ছিলাম তো”
“তবে ফিল যে বললো তুমি নেই! বিট্টু তোমাকে অনেকদিন বাসায় ফোন করেছে। তুমি
কোন ম্যাসেজ পাওনি?”
“না, ফিল তো আমাকে কিছু বলেন নি”
“কালকে আমিও ফোন করেছি। ফিলকে বললাম তোমাকে ডেকে দিতে। সে বললো তুমি বাসায়
নেই”
“আমি তো কাল সন্ধ্যা থেকে বাসায়। ফিল তো আমাকে কিছু বলেনি”
“বুঝতে পারছি। তুমি বিট্টুকে ফোন করো। সে তোমার জন্য কী একটা কাজ জোগাড়
করেছে”।
ফিলের
ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। তিনি কেন আমাকে ডেকে দিলেন না? বিট্টু এতদিন ফোন করেছে,
একটা বারও তো ফিল আমাকে কিছু বলেন নি। হঠাৎ মনে পড়লো সেফওয়েতে যে চাকরির দরখাস্ত জমা
দিয়ে এসেছিলাম সেখানেও ফিলের নম্বর দিয়েছিলাম। খোঁজ নেয়া দরকার।
সেফওয়েতে
গিয়ে স্টোর ম্যানেজারের সাথে কথা বললাম। তিনি ফাইল খুলে বললেন, “তোমাকে তো ডেকেছিলাম ইন্টারভিউর জন্য। তুমি তো আসো নি, কোন খবরও দাওনি”
“আপনারা কি ফোন করেছিলেন?”
“হ্যাঁ, তাই তো করি। তোমার দেয়া নম্বরেই তো ফোন করেছিলাম। গতকাল আসতে
বলেছিলাম। আমি খুব দুঃখিত, আমরা তো লোক নিয়ে ফেলেছি যতজন দরকার। তুমি চাইলে তোমার
দরখাস্ত আবার বিবেচনার জন্য রেখে দিতে পারি”।
কোন
রকমে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বাসায় ফেরার পথে রাগে মাথায় রক্ত উঠে গেল। ফিল কেন এরকম
করবে? আমার টেলিফোন এসেছে আমাকে বলবে না? কিন্তু ফিলের ওপর রাগ করে আমি যে কত
অনধিকারচর্চা করেছি তা বুঝতে পেরেছি ফিলের সাথে কয়েকটা বাক্য বিনিময়ের পরেই।
রেগে
গেলে কথাবার্তা ঠিকমত গুছিয়ে বলতে পারি না আমি। যুক্তিবোধগুলোও কেমন যেন ভোঁতা হয়ে
যায়। বাসায় ঢুকেই সরাসরি চলে গেলাম লাউঞ্জরুমে। ফিল মদের পাত্র হাতে টিভির সামনে
বসে আছেন। তাঁর সঙ্গিনী এখনো আসেন নি।
“হাই ফিল”
“প্রাডিব। হাউ আর ইউ মাইট?”
“গুড। আপনার সাথে কি একটু কথা বলতে পারি?”
“অবশ্যই। কী ব্যাপার?”
“আমার কি কোন ফোন এসেছিল?”
“তোমার ফোন? তোমার ফোন এখানে আসবে কেন?”
“আপনার নম্বরটা আমি দিয়েছিলাম কাজের জন্য। ওখান থেকে ফোন করে আমাকে ডেকেছিল
ইন্টারভিউর জন্য। আপনি আমাকে জানাননি”
“তাতে কী হয়েছে?”
“ফোনটা জরুরি ছিল”
“হু কেয়ার্স?”
“আই কেয়ার। আমাকে জব ইন্টারভিউর জন্য ডেকেছিল, কিন্তু আপনি আমাকে জানাননি।”
“থামো থামো। এই ফোনটা তোমার না আমার?”
“আপনার।”
“আমার নম্বর অন্যকে দেবার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে?”
“জ্বি না।”
“এই টেলিফোনের জন্য তুমি আমাকে কোন পয়সা দাও?”
“না।”
“তোমাকে ঘরভাড়া দেবার সময় কি আমি বলেছিলাম যে তুমি টেলিফোন ব্যবহার করতে
পারবে?”
“ব্যবহার যে করতে পারবো না তাও তো বলেননি।”
“এখন তো বললাম।”
নির্বিকার
ভাবে মদের পাত্রে চুমুক দিচ্ছেন ফিল। আর কথা বাড়ানোর মানে হয় না। রুমে চলে এলাম।
রাগে অপমানে অস্থিরতায় কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। বিছানায় মুখ গুঁজে শুয়ে রইলাম
কিছুক্ষণ। গাল বাড়িয়ে চড়টা নিজে নিজেই খেয়ে এসেছি, যন্ত্রণা তো লাগবেই। কষ্টের ভাগ
দেয়ার জন্য তোমাকে লিখতে বসেছিলাম। লিখতে লিখতেই রাগটা কমে গিয়ে যুক্তিবোধ ফিরে
এসেছে।
“অচেনা অন্ধকার পথে
চলার সময় নিজেকে যথাসম্ভব নমনীয় করে ফেলবি। তখন শক্ত কিছুতে ধাক্কা লাগলেও ব্যথা
কম পাবি।”- আমার ক্লাস-ফোর পাস
বাবার দার্শনিক কথাবার্তা। খুব মনে পড়ছে কথাগুলো, সাথে মানুষটাকেও। এখানকার কিছুই চিনি না, পায়ের
তলায় মাটির নাগাল পাইনি এখনো। রাগ করার কোন যোগ্যতাই নেই আমার। ফিল তো ঠিক কথাই
বলেছেন। কী দায় পড়েছে তাঁর যে আমার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেবেন?
থাক এসব কথা। আজ লেস অ্যালেনের ক্লাস
করলাম। ফোর্থ ইয়ার বা অনার্স ইয়ারের সাত জন শিক্ষার্থী স্ক্যাটারিং থিওরির কোর্সটা
নিয়েছে। আমি সহ আটজন হলাম। পরিচয় হলো সবার সাথে। ম্যাট আর ফিওনা যেভাবে আঁঠার মত
লেগে আছে একে অপরের সাথে- বোঝাই যাচ্ছে নতুন জুটি।
আমি
যে তিনটা ক্লাস মিস করেছি সেগুলোর লেকচার নোট দিয়ে দিলেন লেস। কোয়ান্টাম ফিল্ড
থিওরির জটিল ব্যাপারগুলো যেভাবে বোঝালেন তাতে মনে হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু
কিছু অংশ বুঝতে পারছি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বুঝলেও আবার বিপদ আছে। রিচার্ড ফাইনম্যান বলেছেন “ইফ ইউ থিংক ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড কোয়ান্টাম মেকানিক্স, ইউ ডোন্ট
আন্ডারস্ট্যান্ড কোয়ান্টাম মেকানিক্স”- তুমি যদি মনে করো যে তুমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝ, তুমি আসলে
কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝ না। তাই ঠিক বুঝতে পারছি না বুঝতে পারছি কি না।
আমাদের অনার্স আর মাস্টার্সে কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়াতেন প্রামাণিক স্যার। স্যারকে কষ্ট করে সবগুলো সমীকরণ ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে হতো। পুরো সময়টাই চলে যেতো সমীকরণের পর সমীকরণ লিখতে। আর আমরাও বোর্ড থেকে খাতায় তুলতাম প্রায় কিছু না বুঝেই। পরীক্ষার সময় ঝাড়া মুখস্থ। এখানে মুখস্থ করার ঝামেলা নেই। কারণ এই কোর্সে নাকি ওপেন বুক এক্সামিনেশান। বই খাতা নোট দেখে দেখে পরীক্ষার খাতায় লেখা। এ রকম পরীক্ষার কথা আগে কখনো শুনিনি। কোর্স শেষ হলেই বোঝা যাবে কেমন পরীক্ষা হয়।
আমাদের অনার্স আর মাস্টার্সে কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়াতেন প্রামাণিক স্যার। স্যারকে কষ্ট করে সবগুলো সমীকরণ ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে হতো। পুরো সময়টাই চলে যেতো সমীকরণের পর সমীকরণ লিখতে। আর আমরাও বোর্ড থেকে খাতায় তুলতাম প্রায় কিছু না বুঝেই। পরীক্ষার সময় ঝাড়া মুখস্থ। এখানে মুখস্থ করার ঝামেলা নেই। কারণ এই কোর্সে নাকি ওপেন বুক এক্সামিনেশান। বই খাতা নোট দেখে দেখে পরীক্ষার খাতায় লেখা। এ রকম পরীক্ষার কথা আগে কখনো শুনিনি। কোর্স শেষ হলেই বোঝা যাবে কেমন পরীক্ষা হয়।
আজ
রাখছি এখানে। ঘরে থাকতে ইচ্ছে করছে না আর। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে- টাপুর টুপুর বৃষ্টি।
যাই একটু ভিজে আসি।
__________________
PART 24
PART 24
Thank you. I think this is not the right site.
ReplyDelete