Sunday, 5 May 2019

ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন - একত্রিংশ পর্ব


০৬ আগস্ট ১৯৯৮ বৃহস্পতিবার

                প্রাডিব, আই থিংক আই নিড ইওর হেল্প
                প্রাডিব, ক্যান ইউ চেক আওয়ার সার্কিট প্লিজ
                প্রাডিব, ইজ দিস দি রাইট রেজিস্ট্যান্স?
শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকাটা অনেকটা আয়ত্বে এসে গেছে এ কদিনে। কিন্তু ক্লাসের মধ্যে আমার শিক্ষার্থীরা যখন আমাকে আজ নাম ধরে ডাকছিল বেশ অন্যরকম লাগছিলো। সত্যি বলতে কী- বেশ ভালই লাগছিলো।
                ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্সের ইলেকট্রিসিটি ল্যাব। দশটা থেকে একটা পর্যন্ত ক্লাস। আমি পৌনে দশটায় ল্যাবে চলে গেলাম। শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খোলা হলো ঠিক দশটায়। আমাদের বাংলাদেশের ল্যাবের সাথে এদের ল্যাবের পার্থক্য অনেক। এদের ক্লাস-সাইজ ছোট, মাত্র চৌদ্দ জনের ক্লাস। চৌদ্দ জনের জন্য সাতটা ডেস্কে সাতটা কম্পিউটার। দুজন করে গ্রুপ করা হলো। শিক্ষার্থীরাই যার যার ল্যাব-পার্টনার বেছে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো। প্রতি ডেস্কেই পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি রাখা আছে। ল্যাব ম্যানুয়েল দেখে দেখে যন্ত্রপাতি সেট করা, ডাটা সংগ্রহ করা। পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া। ডাটা বিশ্লেষণ ও গ্রাফের জন্য এরা এক্সেল ব্যবহার করে। ক্লাসে বসেই ল্যাব রিপোর্ট তৈরি করে শিক্ষার্থীরা। ল্যাবেই প্রিন্টার আছে। ল্যাব-বুক ল্যাবেই রেখে যেতে হয়। তাদের ল্যাব-রিপোর্ট দেখে মার্ক দেয়া হয়। প্রত্যেক ল্যাবের জন্যই আলাদা আলাদা মার্ক থাকে। আমাদের মত বছর শেষে আলাদা করে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে হয় না। সিস্টেমটা বেশ ভাল লাগল।
                আমার ভয় ছিল তাদের ঠিকমত বোঝাতে পারবো কি না, আমার ইংরেজি তারা বুঝতে পারবে কি না। অবশ্য ভয়টা কেটে গেছে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই। ঘুরে ঘুরে তাদের কাজ দেখা, প্রশ্নের উত্তর দেয়া, আটকে গেলে দেখিয়ে দেয়া। বেশ ভালো লেগেছে সব কিছুই।
                একজন শিক্ষার্থীর নাম পিয়া হায়াত। চেহারা আর নাম দেখে মনে হলো বাংলাদেশী। ক্লাস শেষে ল্যাব-বুক জমা দিয়ে চলে যাবার সময় কৌতূহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি বাংলাদেশী?খাঁটি অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজিতে সে যা বললো তাতে জানলাম সে বাংলাদেশে জন্মালেও বাংলা জানে না। সেই ছোটবেলায় এদেশে চলে এসেছে বাবা-মায়ের সাথে। অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা পিয়া হায়াত এখন পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ান।
            ক্লাস শেষে স্টাফরুমের কম্পিউটারে আমার পাস-কোড দিয়ে ঢুকে ক্লাস এনট্রি করতে হলো। এটা দেখেই আমাকে বেতন দেয়া হবে। ল্যাব-বুক মার্কিং এর পর স্টুডেন্টদের গ্রেড-বুকে মার্কস এন্ট্রি করলে মার্কিং এর জন্য আলাদা বেতন।
            চৌদ্দটা ল্যাব-বুক সাথে নিয়ে অফিসে এসে বিকেলের মধ্যেই মার্কিং করে ফেললাম। আর চারটার দিকে ল্যাবে গিয়ে কম্পিউটারে এন্ট্রি করে ফেললাম। আসলে অনেক দিন পর কাজ করতে শুরু করেছি তো- তাই কাজের উৎসাহটা এখন একটু বেশিই মনে হচ্ছে। জানি না এ উৎসাহ কতদিন থাকবে।
______________
PART 32

No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts