জুরিখে ফিরে আসার কিছুদিন পর বাবার চিঠি পেলো
আলবার্ট। বাবা লিখেছেন, “এখনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটা তোমার
উচিত হবে না। চাকরি বাকরি নেই, কোন উপার্জন নেই,
এ অবস্থায় বৌয়ের ভরণ-পোষণের সামর্থ্য তোমার নেই। এখন বিয়ে করাটা হবে তোমার
জন্য বিলাসিতা। এরকম বিলাসিতা শুধুমাত্র বড়লোকদেরই মানায়।”
বাবার
চিঠি পড়ে ক্ষোভে অপমানে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে আলবার্ট। বাবা এসব কী লিখলেন? বিয়ে
করাটা কি রক্ষিতা রাখার সমতুল্য নাকি যে সেটা শুধু ধনীদেরই মানায়? ব্যক্তিগত
সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আলবার্টের সহজ পথ হলো পড়াশোনায় ডুবে থাকা। পড়াশোনায়
ডুবে থাকতে চাইলেও পারছে না। বাবার কথাগুলো শুনতে যতই খারাপ লাগুক - সত্যিই তো তার
এখন একটা চাকরি দরকার।
আলবার্ট
আশা করছে পলিটেকনিকে একটা অ্যাসিস্ট্যান্টের চাকরি সে নিশ্চয় জোগাড় করতে পারবে।
প্রফেসর ওয়েবারের কাছে একটা চাকরির দরখাস্ত করলো। ভেবেছিল চাকরিটা তার হবেই। কারণ
আলবার্ট ও মিলেইভাই শুধু ফিজিক্স মেজর নিয়েছিল। মিলেইভা তো এখনো পাস করতে পারেনি।
সুতরাং পলিটেকনিকে ফিজিক্সের প্রফেসরের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিলে
আলবার্টকেই দিতে হবে।
কিন্তু
না, প্রফেসর ওয়েবার আলবার্টকে পছন্দ করতেন না। চাকরি তার হলো না। প্রফেসর ওয়েবারের
অধীনে পি-এইচ-ডি করবে ভেবেছিল আলবার্ট। কিন্তু তার গবেষণা প্রস্তাব পছন্দ হয়নি
ওয়েবারের। তরলের ক্যাপিলারিটি সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র লিখতে শুরু করেছে
আলবার্ট। প্রকাশ করতে পারলে হয়তো চাকরি পেতে সুবিধে হবে।
পলিটেকনিকের
প্রফেসরদের কোন সহযোগিতা না পেয়ে জুরিখ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আলফ্রেড ক্লেইনারের
সাথে দেখা করলো আলবার্ট। প্রফেসর ক্লেইনার রাজি হয়েছেন তাকে পিএইচডি স্টুডেন্ট
হিসেবে গ্রহণ করতে। শুরু হলো আলবার্ট আইনস্টাইনের ফর্মাল গবেষণা।
১৯০১
সালের জানুয়ারি থেকে আইনস্টাইনের পিএইচডি গবেষণা শুরু হলো। মার্চ মাসে তাঁর প্রথম
গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে নামী জার্নাল - অ্যানালেন ডার ফিজিকে।
ভেবেছিলেন এবার হয়তো একটা চাকরি পাওয়া যাবে। কিন্তু না। একটা টিউশনিই তাঁর
উপার্জনের একমাত্র সম্বল।
একের
পর এক চাকরির দরখাস্ত পাঠাচ্ছেন সবগুলো ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু কোথাও কিছু হলো না।
প্রচন্ড হতাশার মধ্যে একদিন বন্ধু মার্সেল গ্রোসম্যানের চিঠি পেলেন। বার্নের
প্যাটেন্ট অফিসে একজন লোক নেয়া হবে। প্যাটেন্ট অফিসের পরিচালক গ্রোসম্যানের বাবার
বন্ধু। গ্রোসম্যান তার বাবাকে দিয়ে আইনস্টাইনের ব্যাপারে সুপারিশ করিয়ে রেখেছেন।
কিন্তু চাকরিটা কখন হবে তা এখনো জানেন না আইনস্টাইন। ইতোমধ্যে তার আরেক বন্ধু এহ্রাতের
সুপারিশে উইন্টারথুর টেকনিক্যাল স্কুলে একটা ছুটিজনিত পদে মে থেকে জুলাই এই তিন
মাসের জন্য চাকরি পেলেন আইনস্টাইন।
মাত্র
তিন মাসের জন্য হলেও জীবনের প্রথম চাকরি পেয়ে খুবই খুশি আইনস্টাইন। মিলেইভাকে চিঠি
লিখে আসতে বললেন কোমো হ্রদের অবকাশকেন্দ্রে। চাকরি পাবার আনন্দটুকু দু’জনে মিলে উপভোগ করবেন। মিলেইভা পলিটেকনিকে দ্বিতীয়বারের মত ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি
নিচ্ছিলেন। নানা চিন্তায় পড়াশোনা এগোচ্ছে না মোটেও। এরমধ্যে শরীরটাও খারাপ থাকে
প্রায় সময়ই।
এপ্রিলের
শেষের দিকে লেক কোমোতে এসে আইনস্টাইনের সাথে যোগ দিলেন মিলেইভা। আইনস্টাইন আগে
থেকেই অপেক্ষা করছিলেন সেখানে মিলেইভার জন্য। ভীষণ আনন্দে কেটে গেল কয়েকটি দিন,
কয়েকটি রাত। দু’জনে মিলে ঘুরে বেড়ালেন কোমো শহরে।
নৌকাভ্রমণ করলেন কোমো হ্রদের জলে। উঁচু পাহাড়ে উঠে স্লেজ গাড়িতে চড়লেন দু’জনে হানিমুনে আসা আরো সব যুগলের মত। কয়েকদিন তারা
ভুলেই ছিলেন যে তখনো বিয়ে হয়নি তাদের।
কোমো
থেকে ফিরে মিলেইভা চলে গেলেন জুরিখে, আর আইনস্টাইন যোগ দিলেন উইন্টারথুর
টেকনিক্যাল স্কুলের চাকরিতে। সপ্তাহে ত্রিশ ঘন্টা পড়াতে হয় তাঁকে। রবিবার ছুটি -
সেদিন জুরিখে গিয়ে সোজা মিলেইভার বাসায়। আইনস্টাইনের সব হতাশা যেন কেটে গেছে ক’দিনের মধ্যেই।
মাস
দুয়েক পরের এমনি এক রবিবারে মিলেইভা জানালেন আইনস্টাইনকে, “জনি, আমি তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।”
চমকে
উঠলেন আইনস্টাইন। তবে কি মায়ের কথাই ঠিক হলো? এখন কী হবে? মিলেইভার সমস্যার কথা না
ভেবে তিনি নিজে কীভাবে তাঁর মাকে মুখ দেখাবেন তাই ভাবতে লাগলেন। তাছাড়া ইউরোপিয়ান
সমাজে এধরনের ঘটনাকে কলঙ্ক বলে মনে করা হয়। জানাজানি হয়ে গেলে আইনস্টাইনের বন্ধুরা
কী ভাববেন তাঁর সম্পর্কে? প্যাটেন্ট অফিসের চাকরিটি হবার কথা আছে। কিন্তু ব্যক্তিগত
চরিত্রের খুঁত দেখিয়ে যদি চাকরিটি না দেয় তাকে? মিলেইভাকে এসব কিছু বলা যাবে না।
যত শীঘ্র সম্ভব মিলেইভাকে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু একটা চাকরি ছাড়া বিয়ে করবে
কীভাবে? যে চাকরিটি এখন করছেন তা জুলাইতে শেষ হয়ে যাবে। তার আগেই আরেকটা চাকরি
তাকে পেতেই হবে।
মিলেইভাও
বুঝতে পারছেন তার মা হবার খবর গোপন রাখতে হবে। মাত্র কয়েক মাস পরেই তার ফাইনাল
পরীক্ষা। এবারেও পাস না করতে পারলে তার পড়ালেখা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। মিলেইভার কথা
ভেবে আইনস্টাইন যেকোন ধরনের চাকরি করতেও প্রস্তুত। কিন্তু মিলেইভা নিজের জন্য তার
জনিকে ছোট হতে দেবেন না কিছুতেই। তিনি আইনস্টাইনকে বলেছেন, “তোমার যোগ্যতার চেয়ে ছোট কোন চাকরি তুমি করবে না।
আমি সব কষ্ট সহ্য করতে পারবো, কিন্তু তোমার মেধার অবমূল্যায়ন কিছুতেই সহ্য করতে
পারবো না।”
মিলেইভার
দিন মোটেও ভাল যাচ্ছে না। দু’সপ্তাহ পরেই তার
ফাইনাল পরীক্ষা। প্রস্তুতি মোটেও ভাল হয়নি। মাথার মধ্যে রাজ্যের দুশ্চিন্তা, পেটে
সন্তান, আর ল্যাবে প্রফেসর ওয়েবারের সাথে প্রতিদিনই মনোমালিন্য হচ্ছে। থিসিসটাও
লেখা হয়নি ঠিকমত। এ অবস্থাতে পরীক্ষা দিলে যা হয় তাই হলো। মিলেইভা পাশ করতে পারলেন
না এবারও। তিনি ভাবতে পারছেন না মা-বাবাকে মুখ দেখাবেন কী করে। তার পড়াশোনার জন্য
কত কষ্ট করেছেন তার বাবা। একে তো ফেল করেছেন তার ওপর আইনস্টাইনের সন্তান তার পেটে।
এ অবস্থায় কী ভাববেন তার মা-বাবা?
এদিকে
উইন্টারথুর স্কুলের চাকরিটি শেষ হয়ে গেল আইনস্টাইনের। আবার পূর্ণ বেকার হয়ে তিনি
মিলেইভার কাছে না থেকে চলে গেলেন মা ও বোনের কাছে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। মিলেইভার
চিঠিতে জানলেন তার রেজাল্ট। আবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেই হবে বলে সান্ত্বনা দিলেন
আইনস্টাইন। কিন্তু মিলেইভা জানেন তার পড়াশোনার এখানেই ইতি। মা-বাবার কাছে চলে
যাবার আগে আইনস্টাইনকে অনুরোধ করলেন তিনি যেন একটা চিঠি লিখে দেন মিলেইভার
মা-বাবাকে যে খুব শীঘ্রই তিনি মিলেইভাকে বিয়ে করবেন। আইনস্টাইন তাই করলেন।
নভি
সাদে মা-বাবার কাছে ফিরে মিলেইভা দেখলেন বাড়িতে তার অবস্থানটা ভীষণ নড়বড়ে হয়ে
গেছে। তার পৌঁছানোর আগেই পৌঁছে গেছে আইনস্টাইনের চিঠি। মিলেইভার সন্তানধারণের খবর
তারা পেলেন সেই চিঠিতে। এখন মিলেইভার মুখে শুনলেন তার ফেল করার কথা। মিলেইভার মা
মারিয়া ভীষণ রেগে আছেন আইনস্টাইন ও মিলেইভার ওপর। যে সন্তানের জন্য তারা এত করেছেন
- তার এই ফল? ক’দিন পরে তাদের ক্ষোভের আগুনে পেট্রোল
ঢেলে দিল মিলান থেকে আসা একটা চিঠি। আইনস্টাইনের মা মিলেইভার মা-বাবাকে লিখেছেন
মিলেইভা সম্পর্কে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তিনি চিঠিতে। মিলেইভার মা-বাবাকেও
ছেড়ে দেননি তিনি।
মিলেইভার
বাবা মাইলোস মেরিক সেনাবাহিনীর উচ্চপদে কাজ করতেন। এখন সরকারের উচ্চপদস্থ বেসামরিক
কর্মকর্তা। আর্থিক অবস্থা তুলনা করলেও আইনস্টাইনদের চেয়েও মেরিকদের অবস্থা ভালো।
শুধুমাত্র মেয়ের ভুলের কারণে আজ তাদের অপমান করতে পারছেন আইনস্টাইনের মা। তবুও
ভালো যে তিনি এখনো জানেন না যে মিলেইভা আইনস্টাইনের সন্তান ধারণ করেছে। জানলে
চিঠির ভাষা কেমন হতো তা চিন্তা করেই শিউরে উঠছেন মিলেইভা। মিলেইভার বাবা-মা
প্রতিজ্ঞা করেছেন আইনস্টাইনের সাথে তারা কিছুতেই মেয়ের বিয়ে দেবেন না।
আইনস্টাইন
সব জানতে পারেন মিলেইভার চিঠিতে। কিন্তু মাকে তিনি কী বলবেন? মিলেইভাকেও বা কী বলে
সান্ত্বনা দেবেন? নভি সাদে গিয়ে মিলেইভার সাথে দেখা করাও সম্ভব নয় তার পক্ষে।
মিলেইভার বাবা-মা তাকে সহ্য করতে পারবেন না। মিলেইভাও বোঝেন এসব। তিনিও ঠিক কী
করবেন বুঝতে পারেন না। মনের দুঃখে বান্ধবী হেলেনকে চিঠিতে লিখলেন আইনস্টাইনের মা
সম্পর্কে - “মানুষ এরকম নিষ্ঠুর কীভাবে হতে পারেন
আমি জানি না। তিনি যেন ব্রত নিয়েছেন যেভাবেই পারেন আমাকে শেষ করে ফেলবেন। তিনি
শুধু আমার জীবনই নষ্ট করে দিচ্ছেন না, নিজের ছেলের জীবনও নষ্ট করে ফেলছেন। মানুষ
যে এত খারাপ হতে পারে আমি কখনো ভাবতেই পারিনি।”
উইন্টারথুরের
বাসা ছেড়ে আইনস্টাইন চলে গেলেন প্রায় পনের মাইল দূরে জার্মান সীমান্ত ঘেঁষা
সুইজারল্যান্ডের একটা গ্রাম স্যাফুসেনে। ওখানে একটা ফেল করা ছাত্রকে পড়িয়ে পাস
করানোর চাকরি পেয়েছেন তিনি। বেতন মাসে ১৫০ ফ্রাঙ্ক। মিলেইভাকে চিঠি লিখে জানালেন
তার চাকরির কথা।
কয়েক
দিন পর মিলেইভার চিঠি এলো। আইনস্টাইনের সাথে দেখা করতে চান তিনি। মা-বাবার বাড়িতে
ভালো লাগছে না তার। তিনি চান আইনস্টাইনের সাথে থাকতে। কিন্তু মা-বাবা জানতে পারলে
তাকে জোর করে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। তাই মিলেইভা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনস্টাইন এখন
যেখানে আছেন সেখান থেকে বারো মাইল দূরে স্টেইন-আম-রেইন নামে একটি গ্রামে এসে
থাকবেন। আইনস্টাইন যেন সেখানে গিয়ে দেখা করেন তার ডলির সাথে।
এ
পর্যন্ত মিলেইভাকে লেখা প্রতিটি চিঠিতে আইনস্টাইন লিখেছেন তার ডলিকে দেখার জন্য
তিনি অস্থির হয়ে আছেন, ডলিকে ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারছেন না, দিন কাটতে চাইছে না
ডলিকে কবে দেখবেন সেই আশায়, ইত্যাদি। কিন্তু প্রায় সাত মাসের অন্তসত্ত্বা মিলেইভা
বাড়ি থেকে পালিয়ে আইনস্টাইনের কর্মস্থল থেকে মাত্র বারো মাইল দূরে এসে অপেক্ষা
করছেন তার জনির জন্য। অথচ আইনস্টাইন একবারও মিলেইভাকে দেখতে গেলেন না।
মিলেইভা
চিঠির পর চিঠি লিখছেন। তিনি নিজে যেতে পারতেন আইনস্টাইনের কাছে - কিন্তু
আইনস্টাইনের চাকরির ক্ষতি হবে ভেবে তা করছেন না। আইনস্টাইন নানারকম অজুহাত
দেখাচ্ছেন দেখা না করার জন্য। একবার লিখলেন তার কাছে গাড়িভাড়ার টাকা নেই। মিলেইভা
টাকাও পাঠাতে চেয়েছেন। কিন্তু আইনস্টাইন দেখা করেন নি। অনেকদিন অপেক্ষা করার পর
মিলেইভা মাথা নিচু করে ফিরে গেলেন মা-বাবার বাড়িতে।
১৯০২
সালের জানুয়ারিতে মিলেইভা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়ের
জন্মের সময় উপস্থিত থাকা তো দূরের কথা - জন্মের পরেও একবারের জন্যেও নিজের মেয়েকে
দেখেন নি আইনস্টাইন। মিলেইভা মেয়ের নাম রাখেন লিজেরেল। পরবর্তীতে আইনস্টাইন ও
মিলেইভা কখনোই লিজেরেলের ব্যাপারে মুখ খোলেন নি। ধারণা করা হয় দু’বছর পর্যন্ত মিলেইভার মা-বাবার কাছে রেখে
মেয়েটিকে দত্তক দিয়ে দেয়া হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন লিজেরেল ছোটবেলাতেই মারা
গেছে।
আইনস্টাইনের
অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। মা-বাবার কাছ থেকেও কোন আর্থিক সাহায্য
পাচ্ছেন না কারণ তার বাবার ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে
পিএইচডি থিসিস জমা দেয়ার সময় ফি দিতে হয়েছে ২৩০ ফ্রাঙ্ক। অথচ প্রফেসর ক্লেইনার
থিসিসটি এখনো অনুমোদন করেননি। কিছু কিছু ব্যাপারে তিনি আইনস্টাইনের সাথে একমত হতে
পারছেন না। তাই বলছেন আবার নতুন করে থিসিস লিখে জমা দিতে। আইনস্টাইনের ইচ্ছে করছে
না এখন থিসিস লিখতে। থিসিসটি প্রত্যাহার করে নিলে থিসিস-ফি ২৩০ ফ্রাঙ্ক ফেরত
পাবেন। এসময় তার টাকার দরকার। থিসিস প্রত্যাহার করে নিলেন আইনস্টাইন।
বার্নের
প্যাটেন্ট অফিসে চাকরিটা হলে বার্নে যেতে হবে। তাই চাকরি হবার আগেই তিনি বার্নে
চলে এলেন। একটা এক রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়ানো হবে মর্মে বিজ্ঞাপন দিলেন।
শুধুমাত্র একজন ছাত্র পাওয়া গেল। অবশেষে জুন মাসের ১৬ তারিখ প্যাটেন্ট অফিসের
চাকরির নিয়োগপত্র পেলেন। বাৎসরিক বেতন ৩৫০০ ফ্রাঙ্ক।
পরবর্তী
ছয় মাসে নিজেকে গুছিয়ে নেন আইনস্টাইন। মিলেইভার সাথে দেখা করে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন
করেন। আইন অনুযায়ী বার্ন, জুরিখ ও নভি সাদের স্থানীয় সংবাদপত্রে বিয়ের নোটিশ
প্রকাশ করা হয়। ১৯০৩ সালের ৬ই জানুয়ারি
বার্নের ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে আইনস্টাইন ও মিলেইভার বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়।
তাদের দু’জনের কারো পরিবার থেকেই কেউ উপস্থিত
ছিলেন না তাদের বিয়েতে। সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনস্টাইনের দুই বন্ধু মরিস
সলোভাইন ও কনরাড হ্যাবিশ্ট। বিয়ের পর নবদম্পতির ছবি তোলা হলো। বন্ধুরা একটি
হোটেলে ডিনারের আয়োজন করে রেখেছিলেন।
বিয়ে
উপলক্ষে এক রুমের বাসা ছেড়ে একটা দু’রুমের বাসায়
উঠেছেন আইনস্টাইন। কিন্তু বাসাটা একটু গোছানোরও সময় করে উঠতে পারেননি। তার ওপর
ডিনার শেষে নতুন বউকে নিয়ে বাসায় ঢুকতে গিয়ে দেখা গেলো বাসার চাবি খুঁজে পাচ্ছেন
না আইনস্টাইন। কোথায় রেখেছেন কিছুতেই মনে করতে পারলেন না। সম্ভাব্য সব জায়গায়
খুঁজেও চাবি না পেয়ে অত রাতে বাড়িওয়ালির ঘুম ভাঙিয়ে তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে বাসার
দরজা খোলা হলো। এভাবেই শুরু হলো আইনস্টাইন ও মিলেইভার দাম্পত্য জীবন।
No comments:
Post a Comment