আইনস্টাইনের তত্ত্ব ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে
গেছে। তাঁর নোবেল পুরষ্কার পাওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। মিলেইভা
ডিভোর্সে রাজি হলেন এই শর্তে যে ভবিষ্যতে আইনস্টাইন যদি নোবেল পুরষ্কার পান,
পুরষ্কারের পুরো টাকাটাই মিলেইভাকে দিয়ে দিতে হবে। আইনস্টাইন শর্ত মেনে নিলেন।
১৯১৮
সালের শেষের দিকে ডিভোর্সের আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। আদালত থেকে দেয়া
বিবাহ-বিচ্ছেদের শর্তগুলো পূরণ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে আইনস্টাইনের। মনের মিল
হচ্ছে না বা ভালোবাসা মরে গেছে জাতীয় যুক্তিগুলো বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য যথেষ্ট কারণ
নয়। আদালতের শর্ত পূরণ করার জন্য আইনস্টাইন নিজেকে ব্যাভিচারী ঘোষণা করে লিখিত বয়ান দিলেন। ফলে
কোর্টের খরচ ছাড়াও ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে মোটা অংকের জরিমানাও দিতে হলো তাঁকে।
সুইজারল্যান্ডের
আদালত আইনস্টাইন ও মিলেইভার বিবাহ-বিচ্ছেদ অনুমোদন করল। অনুমোদনের দিন থেকে দু’মাস পর ডিভোর্স কার্যকর হবে। আইনস্টাইন যেহেতু
আইনগতভাবে স্বীকৃত ব্যাভিচারী তাঁকে শর্ত দেয়া হয়েছে পরবর্তী দু’বছরের মধ্যে তিনি বিয়ে করতে পারবেন না।
১৯১৯
সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলেইভার সাথে আইনস্টাইনের বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যায়।
আইনস্টাইন নিজের বাসা ছেড়ে দিয়ে এলসার বাড়িতে এসে উঠলেন। এলসা আইনস্টাইনের জন্য
থাকার ও পড়ার ঘর সাজিয়ে রেখেছেন। এলসার সাথে বিয়ে হতে এখন আর
কোন বাধা নেই। সুইজারল্যান্ডের আদালত বিয়ের ব্যাপারে যে দু’বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বার্লিনে না মানলেও
চলে। এলসা বিয়ের আয়োজন শুরু করলেন।
আইনস্টাইনের
আপেক্ষিকতা তত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমাণ করা যাচ্ছিলো না সুযোগের অভাবে। সূর্যের
অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের টানে আলোর গতিপথ সত্যিই পরিবর্তিত হয় কিনা তা পরীক্ষা করা
সম্ভব সূর্যের পূর্ণগ্রহণের সময়। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির স্যার আর্থার এডিংটন তাঁর
অবজারভেটরি থেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে দেখলেন সূর্যের পূর্ণগ্রহণের সময়
আলোর গতিপথ সত্যিই বদলে গেছে। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি সত্যি বলে প্রমাণিত
হলো।
এতদিন
ইউরোপে খ্যাতিমান ছিলেন আইনস্টাইন। এখন রাতারাতি পৃথিবীবিখ্যাত হয়ে গেলেন।
পৃথিবীব্যাপী নানারকম মিথ তৈরি হতে লাগলো আইনস্টাইনের প্রতিভা সম্পর্কে। লোকের
মুখে মুখে প্রচারিত হতে হতে তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো পৃথিবীর আনাচে কানাচে।
১৯১৯
সালের ৬ই জুন আইনস্টাইন ও এলসার বিয়ে হলো খুবই ঘরোয়া ভাবে। আইনস্টাইন ও এলসার
বিয়েটা যতটা ভালোবাসার তারচেয়েও বেশি পারস্পরিক প্রয়োজনের। আইনস্টাইনের এমন কাউকে
দরকার ছিলো যাকে তাঁর কষ্টগুলোর ভাগ দিতে পারবেন। এলসার মধ্যে সেরকম একটি মানসিক
আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন আইনস্টাইন। আর এলসা আটত্রিশ বছর বয়সে দুটো কিশোরী মেয়ে নিয়ে
ডিভোর্সি। তাঁর দরকার একটা ভালো সামাজিক পরিচয়। আইনস্টাইনের মত বিখ্যাত মানুষের স্ত্রী
হওয়াটাকেই তিনি সবচেয়ে বড় পরিচয় বলে মনে করেন।
১৯২০
সালের শুরুতে আইনস্টাইনের মায়ের মৃত্যু হয়। মিলেইভাকে তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেন
নি। মিলেইভার সাথে ডিভোর্স এবং নিজের বোনের মেয়ে এলসার সাথে আইনস্টাইনের বিয়ে
হওয়াতে তিনি খুশি হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে বেশ কিছুদিন তিনি আইনস্টাইন ও এলসার সাথে
ছিলেন। ১৯২১ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে আমেরিকা সফর করেন আইনস্টাইন ও
এলসা।
১৯২২ সালে আইনস্টাইনকে ১৯২১ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল
পুরষ্কার দেয়া হয়। আইনস্টাইন পুরষ্কারের পুরো এক লাখ একুশ হাজার পাঁচশ’ বাহাত্তর সুইডিশ ক্রোনার পাঠিয়ে দেন মিলেইভাকে।
মিলেইভা
সেই টাকা দিয়ে জুরিখে তিনটি বড় বড় বাড়ি কিনে দুটো ভাড়া দিলেন এবং একটিতে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতে শুরু
করলেন।
নোবেল লরিয়েট হবার পর আইনস্টাইনের খ্যাতি আরো
বেড়ে গেল। পৃথিবীর নানা জায়গার বিখ্যাত সব মানুষের সাথে তাঁর ওঠাবসা।
১৯২৪
সালে এলসার বড়মেয়ে আইল্সের বিয়ে হয়ে গেলো সাংবাদিক রুডল্ফ কাইজারের সাথে। আইল্স
এতদিন আইনস্টাইনের সেক্রেটারির কাজ করছিলো। এখন আইনস্টাইনের নতুন সেক্রেটারির
দরকার। বন্ধু হ্যান্স বুশামের তেইশ বছর বয়সী ভাগ্নি বেটি নিউম্যানকে নিজের
সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দিলেন আইনস্টাইন। বেটি নিউম্যান খুবই সুন্দরী। বেটির
প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লেন ৪৫ বছর বয়সী আইনস্টাইন।
এলসা তাঁর স্বামীকে বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকাতে চান না। কারণ তিনি জানেন বাধা দিলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবেন আইনস্টাইন। তিনি এটাও জানেন যে একসময় আপনা-আপনিই কেটে যাবে আইনস্টাইনের মোহ। সত্যিই তাই। বছর খানেক পর বেটি নিউম্যানের প্রতি মোহ কেটে গেল আইনস্টাইনের। তারপর কিছুদিন মার্গারেট লেনবাখ নামে এক অস্ট্রিয়ান মহিলার প্রতি ঝুঁকলেন আইনস্টাইন। এবারো কিছুই বললেন না এলসা।
বয়স বাড়ছে আইনস্টাইনের। বড় ছেলে
হ্যান্সের বয়স এখন ২৩। জুরিখের পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে সে।
বাবার সাথে তার সম্পর্ক মোটেও ভাল নয়। মায়ের কষ্ট কীভাবে ভুলবে হ্যান্স? বাবার কাছ
থেকে সবসময় দূরে থাকতে চেয়েছে সে। কিন্তু আইনস্টাইন পিতৃত্বের অধিকার খাটাতে
চেয়েছেন সবসময়। হ্যান্সের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াটাকে পছন্দ করেননি তিনি। অথচ
হ্যান্স সিভিল ইঞ্জিনিয়ারই হয়েছে। এখন হ্যান্স ফ্রেইডা নেচ নামে এক মেয়েকে বিয়ে
করবে ঠিক করেছে। আইনস্টাইন যখন খবর
পেলেন যে ফ্রেইডা হ্যান্সের চেয়ে বয়সে নয় বছরের বড় - ভীষণ রেগে গেলেন। যেকোন ভাবেই
তিনি হ্যান্সের বিয়ে আটকাতে চাইলেন। তিনি ফ্রেইডা সম্পর্কে যত খবর নেয়া সম্ভব সব
নিলেন। ফ্রেইডা খুবই বেঁটে, ফ্রেইডার মা মানসিক রোগী।
আইনস্টাইন
যুক্তি দেখাচ্ছেন এতে হ্যান্সের ছেলে-মেয়ে হলে তাদের বামন ও পাগল হবার সম্ভাবনা
আছে। এদিকে মিলেইভারও পছন্দ নয় ফ্রেইডাকে। মা-বাবার অমত সত্ত্বেও হ্যান্স বিয়ে করল
ফ্রেইডাকে। বিয়ের পরেও আইনস্টাইন হাল ছাড়েন নি। হ্যান্সকে পরামর্শ দিচ্ছেন যেন কোন
সন্তান না নেয়। তিনটি ছেলে হয় হ্যান্স ও ফ্রেইডার - ডেভিড, ক্লাউস ও ব্যানহার্ড। ডেভিড
ও ক্লাউস শৈশবেই মারা যায়।
১৯২৮
সালে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন আইনস্টাইন। বেটি নিউম্যানের প্রতি তাঁর আসক্তি কমে যাবার
সাথে সাথেই তাকে বরখাস্ত করেছিলেন এলসা। তারপর ভেবেছিলেন আর কোন সেক্রেটারি নিয়োগ
দেবেন না। এতদিন নিজেই করছিলেন সেক্রেটারির কাজ। কিন্তু আইনস্টাইনের শত শত চিঠির
উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গেলেন তিনি। দেখলেন একজন ফুলটাইম সেক্রেটারি না হলে
চলছেই না।
এবার
সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পেলেন এলসার এক বান্ধবীর ছোটবোন হেলেন ডুকাস। ছিপছিপে
লম্বা সুন্দরী ব্যক্তিত্বময়ী হেলেন ডুকাস শুরুতে খুব ভয়ে ভয়ে ছিলেন এতবড় একজন
বিজ্ঞানীর সাথে কীভাবে কাজ করবেন। কিন্তু আইনস্টাইনের হাসিখুশি অন্তরঙ্গ ব্যবহারে
খুশি হয়ে গেলেন হেলেন ডুকাস।
প্রথম
দিন থেকেই আইনস্টাইনের সমস্ত কাজের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। এরপর আইনস্টাইনের
মৃত্যু পর্যন্ত আইনস্টাইনের পরিবারের একজন হয়েই ছিলেন হেলেন ডুকাস। আইনস্টাইনের
মৃত্যুর পর হেলেন ডুকাস প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড স্টাডির
আর্কাইভে আইনস্টাইনের ডকুমেন্টস আগলে রাখেন মৃত্যুর আগপর্যন্ত। আইনস্টাইনের
ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলো যতদিন পেরেছেন গোপন করে রাখতে চেষ্টা করেছেন হেলেন ডুকাস।
ধরতে গেলে আইনস্টাইনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন হেলেন। আইনস্টাইনের দেখাশোনা
করতে করতে নিজের ব্যক্তিগত সুখদুঃখের কথা ভাবারও সময় পাননি তিনি, বিয়েও করেনি।
জার্মানির
রাজনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। ইহুদিদের অধিকার খুবই কমে
যাচ্ছে। আইনস্টাইনের বিরুদ্ধেও নানারকম গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯২৯ সালে
বার্লিনের কাছে ক্যাপুথ নামে একটা গ্রামে হ্রদের পাশে একটা সামার হাউজ তৈরি
করিয়েছেন আইনস্টাইন। গ্রীষ্মকালটা তিনি এখানেই কাটান।
পরের
বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার আমেরিকায় গেলেন বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে। সামারে
যখনই তিনি ক্যাপুথের বাড়িতে আসেন - টনি মেন্ডেল নামে এক ধনী ইহুদি বিধবা
আইনস্টাইনের সাথে দেখা করতে আসেন সুযোগ পেলেই। শুরুতে এলসার সাথে ভাব জমিয়েছেন
সুন্দরী মেন্ডেল। এলসা চকলেট পছন্দ করেন। মেন্ডেল তাঁর লিমোজিন থেকে নেমেই এলসার
হাতে তুলে দেন চকলেটের প্যাকেট। তারপর আইনস্টাইনকে সাথে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে যান।
বার্লিনের অপেরা হাউজে, কনসার্টে টনি মেন্ডেলের সাথে আইনস্টাইনকে দেখা যায় মাঝে
মাঝেই।
একটা সীমা পর্যন্ত ছাড় দিতে
রাজি আছেন এলসা। কিন্তু যখন মাঝে মাঝে টনি মেন্ডেলের বাড়িতে রাত কাটান আইনস্টাইন,
এলসা সহ্য করতে পারেন না। আইনস্টাইনের সাথে এ নিয়ে কিছুটা মনোমালিন্য দেখা দিতে
শুরু করেছে। এসময় আমেরিকা থেকে ডাক এলে খুশিই হন এলসা।
১৯৩২ সালে আইনস্টাইন যখন ক্যালটেকে ভিজিটিং
প্রফেসর হিসেবে গেলেন, তখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির নবপ্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট ফর
এডভান্সড স্টাডি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আব্রাহাম
ফ্লেক্সনার আইনস্টাইনকে তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
১৯৩৩
সালে হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় এলে বাধ্য হয়ে আমেরিকায় চলে যেতে হলো আইনস্টাইনকে।
অক্টোবরের ১৭ তারিখ আইনস্টাইন, এলসা ও হেলেন ডুকাস আমেরিকায় এসে পৌঁছালেন। এলসার
মেয়েরা তাদের স্বামীর সাথে প্যারিসে রয়ে যায়। আইনস্টাইনের বড় ছেলে হ্যান্স ও তার
পরিবার, মিলেইভা এবং ছোট ছেলে এডোয়ার্ড সুইজারল্যান্ডে। এডোয়ার্ড খুবই অসুস্থ হয়ে
মানসিক হাসপাতালে আছে। আইনস্টাইন আমেরিকায় আসার পর এডোয়ার্ড এবং মিলেইভার সাথে আর
কখনোই দেখা হয়নি তাঁর।
আমেরিকায়
আসার পর আস্তে আস্তে আমেরিকান সমাজে স্থান করে নিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেন আইনস্টাইন। ১৯৩৪ সালে প্যারিসে অসুস্থ হয়ে মারা যায় এলসার
বড়মেয়ে আইল্স। ছোটমেয়ে মার্গট ও তার স্বামী প্যারিস থেকে চলে আসে আইনস্টাইনের
কাছে।
প্রিন্সটন
ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের কাছে মার্সার স্টিটের নতুন বাড়িটি সুন্দর করে
সাজিয়েছিলেন এলসা। কিন্তু বেশিদিন উপভোগ করতে পারলেন না তিনি। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে
১৯৩৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর মারা যান এলসা। এলসার মৃত্যুর পর কেমন যেন বৈরাগ্য দেখা
দেয় আইনস্টাইনের মধ্যে। আইনস্টাইনকে দেখাশোনার পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন হেলেন
ডুকাস।
অনেকদিন
থেকে রোগে ভুগছিলেন মিলেইভা। ছোট ছেলে এডোয়ার্ডের চিকিৎসার জন্য জলের মত টাকা খরচ
হচ্ছে। আইনস্টাইন যে টাকা পাঠান তাতে কুলোয় না। দুটো বাড়ির ভাড়া থেকে যে টাকা পান
তাতে নিজের খরচই ঠিকমত চলে না। মিলেইভা বাড়ি দুটো বিক্রি করে দিলেন। সেই টাকাগুলোও
দ্রুত শেষ হয়ে গেল। বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধা মিলেইভা শংকিত হয়ে পড়লেন অবশিষ্ট
বাড়িটাও যদি বিক্রি করতে হয়। তিনি বাড়িটা আইনস্টাইনের নামে রেজিস্ট্রি করে দিলেন।
ভাবলেন এতে অন্তত তাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁইটা থাকবে।
এর
মধ্যে একদিন বরফের ওপর আছাড় খেয়ে পা ভেঙে ফেললেন মিলেইভা। শয্যাশায়ী মিলেইভার শরীর
দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। আইনস্টাইন খবর পেয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মিলেইভা মারা গেলে
এডোয়ার্ডকে দেখবে কে? এডোয়ার্ডের চিকিৎসা ও দেখাশোনার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠনের
পরিকল্পনা করলেন আইনস্টাইন। তাঁর নামে লিখে দেয়া মিলেইভার বাড়িটা বিক্রি করে তিনি
টাকাটা মিলেইভার নামে পাঠিয়ে দিলেন এডোয়ার্ডের ট্রাস্টে জমা দেয়ার জন্য। বাড়ি
বিক্রি করার সময় আইনস্টাইন পরিষ্কার শর্ত দিয়েছেন যে মিলেইভা যতদিন বাঁচবেন ততদিন
বিনাভাড়ায় ঐ বাড়িতেই থাকতে পারবেন।
মিলেইভার
মৃত্যুর পর আইনস্টাইনের শরীরও খারাপ হতে থাকে। তাঁর মনে হতে থাকে তিনি অবিচার
করেছেন মিলেইভার প্রতি। মনে পড়ে মেরির কথাও।
মেরি
- তাঁর প্রথম প্রেম। ১৯১১ সালে মেরি আলবার্ট নামেরই একজনকে বিয়ে করেছিলেন। দুটো
ছেলে-মেয়ে হয়েছিল তাদের। কিন্তু বিয়েটা বেশিদিন টিকেনি। ১৯২৭ সালে তাদের বিচ্ছেদ
হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪০ সালে মেরি আইনস্টাইনকে লিখেছিলেন আমেরিকায় আসার ব্যাপারে
সাহায্য করার জন্য। আইনস্টাইন কিছুই করতে পারেন নি মেরির জন্য। আমেরিকায় আসা হয়নি
মেরির, পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
No comments:
Post a Comment