১৯০২
জানুয়ারিতে আলবার্ট আইনস্টাইন ও
মিলেইভা মেরিকের বিবাহ বহির্ভূত সন্তান লিজেলের (Lieserl)জন্ম হয়। মেয়ের জন্মের
সময় আইনস্টাইন উপস্থিত ছিলেন না। আইনস্টাইন কোনদিনই দেখেননি তাঁদের প্রথম
সন্তানকে। লিজেলের ব্যাপারটি এখনো রহস্যময়। পরবর্তীতে আইনস্টাইন বা মিলেইভা কেউই
মেয়েটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি কোথাও। ধারণা করা হয় দুবছর বয়সী মেয়েটিকে কারো কাছে
দত্তক দিয়ে দেয়া হয়েছে বা অসুখে ভুগে মারা গেছে মেয়েটি। লিজেলের জন্মের আগে
মিলেইভা ও আইনস্টাইনের মধ্যে চিঠিপত্রে লিজেলের প্রসঙ্গে কিছু কথা আর মেয়ের জন্মের
দেড়বছর পর্যন্ত সামান্য কিছু আলোচনার আভাস পাওয়া যায়। এরপর আর কিছুই জানা যায় না
লিজেল প্রসঙ্গে। কোন বার্থসার্টিফিকেট বা ডেথসার্টিফিকেটও পাওয়া যায়নি। তখনকার
সমাজে বিবাহ বহির্ভুত সন্তান ও সন্তানের বাবা-মাকে খুব একটা সহজভাবে নেয়া হতো না।
লিজেলের ঘটনা প্রকাশিত হয়ে পড়লে আইনস্টাইনের সরকারি চাকরি পেতে সমস্যা হতে পারে
ভেবেই হয়তো মেয়ের জন্মের ব্যাপারটি একেবারে মুছে ফেলা হয়েছে।
নুয়েশের সাথে আইনস্টাইনের সম্পর্ক বেশ খারাপ এখন। আইনস্টাইন ছাত্র লুইসকে
বার্নে নিয়ে যাবার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী। কিন্তু কথাটি জেনে ফেলেছেন নুয়েশ। একদিন
আইনস্টাইনের সাথে এ ব্যাপারে জোরালো কথা কাটাকাটি হলো নুয়েশের। নুয়েশ আইনস্টাইনকে
চাকরি থেকে বহিস্কার করলেন।
আইনস্টাইন এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না। বার্নের চাকরিটি কখন হয় জানেন না।
একটা কাজ করা যায়, বার্নে গিয়ে অপেক্ষা করা যায়। বার্নে যাবার আগে একবার জুরিখে
প্রফেসর ক্লেইনারের কাছে যাওয়া যাক। ক্লেইনার থিসিসটি পড়েছেন। কিন্তু ড্রুডি ও
বোলজম্যান প্রসঙ্গে আইনস্টাইনের সাথে একমত হতে পারছেন না তিনি। তিনি থিসিসটি বাতিল
করে দিচ্ছেন না, তবে পরামর্শ দিলেন থিসিসটি আবার লিখে জমা দিতে। থিসিসের ফিও অনেক
২৩০ ফ্রাঙ্ক। আবার লিখে জমা দিলে থিসিস ফি দিতে হবে না। আর আইনস্টাইন যদি এখন
থিসিসটি প্রত্যাহার করতে চান তাহলে ২৩০ ফ্রাঙ্ক ফেরত পাবেন। কিন্তু থিসিস যদি
বাতিল হয়ে যায়, তাহলে থিসিস ফি আর ফেরত পাওয়া যায়না। আইনস্টাইনের ইচ্ছে করছে না
আবার থিসিস লিখতে। তাছাড়া হাতে টাকাপয়সা কিছুই নেই। ভাবলেন থিসিস প্রত্যাহার করে
নিলে ২৩০ ফ্রাঙ্ক যদি ফেরত পাওয়া যায় তা দিয়ে বার্নে অন্তঃত কয়েকমাস চলতে পারবেন।
ফেব্রুয়ারির এক তারিখে তিনি থিসিস প্রত্যাহার করে থিসিস ফি ফেরত পাবার জন্য আবেদন করলেন।
ফেব্রুয়ারির এক তারিখে তিনি থিসিস প্রত্যাহার করে থিসিস ফি ফেরত পাবার জন্য আবেদন করলেন।
ফেব্রুয়ারি মাসের চার তারিখে বার্নে এলেন আইনস্টাইন। নাইডিগ(Nydegg)
ব্রিজের কাছে একটি এক রুমের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিলেন। প্যাটেন্ট অফিসের চাকরিটি
কখন হবে ঠিক নেই। হাতে মাত্র কয়েকমাস চলার মত টাকা আছে আইনস্টাইনের। মনে বড় হতাশা
তাঁর। গ্র্যাজুয়েশন করেছেন দুবছর হয়ে গেলো। এখনো স্থায়ী কোন চাকরি হলোনা। পিএইচডির
থিসিসটাও ঠিকমত লিখতে পারেননি। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন
দিলেন, যদি কারো গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের প্রাইভেট টিউটরের দরকার হয়। প্রতি সেশানের
প্রতি দুই ফ্রাঙ্ক করে নেবেন, আর প্রথম সেশানটি ফ্রি।
বিজ্ঞাপনে খুব একটা সাড়া পাওয়া গেলো না। একজন ফরাসীভাষী সুইস টেকনিশিয়ান
এলেন ফিজিক্সের কিছু বিষয় জানতে। কিন্তু দুয়েক সেশান পরেই তাঁর প্রয়োজন মিটে গেলো।
বার্নের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান আইনস্টাইন। শহরের ছাউনি দেয়া ফুটপাতে হাঁটতে
বেশ ভালোই লাগে তাঁর। একদিন এভাবে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হয়ে গেলো আরাউ স্কুলের
সহপাঠী হ্যানস ফ্রোশের (Hans Frosch)সাথে। ফ্রোশ এখন বার্ন ইউনিভার্সিটিতে
মেডিকেলের ছাত্র। ফ্রোশ আইনস্টাইনকে নিয়ে গেলেন ফরেনসিক প্যাথোলজির একটি লেকচারে।
আইনস্টাইন খুব আনন্দ পেলেন এই লেকচারে। মানসিক বিকারগ্রস্থ অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব ও
শরীরতত্ত্ব বিষয়ক লেকচারটি আইনস্টাইনের ভালো লেগে যায়। এরপর তিনি প্রায় প্রতি
সপ্তাহেই এই লেকচারে আসতে লাগলেন।
আইনস্টাইনের আরেকবন্ধু কনরাড হ্যাবিশটও থাকেন বার্নে। হ্যাবিশট এখন
বার্ন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন। আইনস্টাইনের সময় বেশ ভালোই কাটছে বন্ধুদের
সাথে। মিলেইভাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন তিনি বন্ধুদের কথা। অভিমান করে মিলেইভা
লিখলেন, “বন্ধুদের পেয়ে তুমি আমার কথা তো ভুলে গিয়েছোই, নিজের
মেয়েটির কথাও তোমার মনে নেই। মেয়েটিকে একবার দেখতেও ইচ্ছে করে না তোমার?”
প্রথম বিজ্ঞাপনে কাজ হয়নি দেখে আইনস্টাইন আরেকটি বিজ্ঞাপন দিলেন বার্নের সংবাদপত্রে,
পড়াতে চাই
পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত
প্রতি ক্লাস তিন ফ্রাঙ্ক
আলবার্ট আইনস্টাইন
৩২
গেরেখটিগকেইটসগ্যাসি, বার্ন।
কয়েকদিন পরে আইনস্টাইনের ঘরের কড়া নড়লো। পাইপমুখে দরজা খুলেই আইনস্টাইন দেখেন একজন তরুণ,
- আলবার্ট আইনস্টাইন?
-হ্যাঁ
-আমি সলোভাইন, মরিস সলোভাইন(Maurice Solovine) । কাগজে আপনার বিজ্ঞাপন দেখে
এসেছি।
-আসুন আসুন, ভিতরে আসুন।
ঘরে ঢুকেই নাকে হাতচাপা দিলেন সলোভাইন। ছোটগুদামের মত ঘর, আসবাবপত্রগুলো জরাজীর্ণ, ঘরভর্তি তামাকের গন্ধ। সলোভাইন তামাকের গন্ধ সহ্য করতে পারেননা। কিন্তু আইনস্টাইনকে তাঁর ভালো লাগছে। সলোভাইন বার্ন ইউনিভার্সিটিতে ফিলোসফি ও ফিজিক্সের ছাত্র। ফিলোসফি ভালো লাগলেও শিক্ষকদের কারণে এখন আর ভালো লাগছে না। ফিজিক্সেরও একই অবস্থা।
-আমাদের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের হেড এইমি ফরেস্টারের (Aime) ক্লাস করে কোন
মজা পাই না আমি। তিনি এস্ট্রোনমি আর মেটিওরোলজি পড়ান। কিন্তু আমার মনে হয় আধুনিক
পদার্থবিজ্ঞানের কিছুই জানেন না তিনি। ক্লাসে গৎবাধা কিছু কথা বলে যান। প্রশ্ন
করলে ধমক দেন।
-আমি বুঝতে পারছি আপনার সমস্যা। আমারও একই সমস্যা হয়েছিলো। আরে পদার্থবিজ্ঞানে
বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে না, কেন তত্ত্বটা দরকারী এবং কীভাবে তা কাজ
করে? আমি যদি নিজের চোখে কিছু না দেখি, নিজের মত করে উপলব্ধি করতে না পারি, তাহলে
কেন শুধু শুধু একটি তত্ত্ব সত্যি বলে বিশ্বাস করবো?
-ঠিক এই কথাটাই আমি বোঝাতে চাচ্ছি। প্রফেসর ফরেস্টার রেডিয়ামের রেডিয়েটিভ
প্রোপার্টিজ পড়াচ্ছেন। কিন্তু একবারও বললেন না কেন রেডিয়ামে এই তেজস্ক্রিয়তা আছে।
মরিস সলোভাইনের সাথে প্রথম আলাপেই প্রায় দুঘন্টা কেটে গেলো। পরে মরিসকে
সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আরো আধঘন্টা কথা হলো। পরদিন থেকে
মরিস আসতে শুরু করলেন আইনস্টাইনের কাছে। কদিন পরেই দুজনে বুঝতে পারলেন
ইউনিভার্সিটির সিলেবাস ধরে না পড়ে ফিজিক্সের মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে আরো অনেকবেশি
জানা যাবে। শুরু হলো তাঁদের পদার্থবিদ্যার মুক্ত আলোচনা।
সপ্তাহখানেক পরেই তাঁদের সাথে যোগ দিলেন আইনস্টাইনের বন্ধু কনরাড হ্যাবিশট।
শুরু হলো তিনজনের নিয়মিত বিজ্ঞানের আসর। তাঁদের আড্ডার নাম রাখা হলো অলিম্পিক
একাডেমি। আইনস্টাইন নিয়মিত ভাবে পদার্থবিজ্ঞান ও দর্শন ব্যাখ্যা করেন বন্ধুদের
কাছে। সলোভাইন এখন বন্ধু হয়ে গেছেন আইনস্টাইনের। একেক দিন একেকজনের বাসায় বৈঠক
বসে।
জ্ঞানচর্চা অব্যাহত গতিতে চললেও উপার্জনের কিন্তু কোন উপায় হয়নি এখনো।
আইনস্টাইনের জমা টাকা ক্রমেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঠিকমত খাওয়াও জোটে না এখন। মিলেইভা
মাঝে মাঝে খাবারের প্যাকেট পাঠান। কিন্তু খয়রাতি সাহায্যে আর কদিন চলবে? সলোভাইন ও
হ্যাবিশট বুঝতে পারেন আইনস্টাইনের অবস্থা। আইনস্টাইনের জন্মদিনে আইনস্টাইনকে ভালো
করে খাওয়ানোর পরিকল্পনা করলেন তাঁরা। একদিন রেস্টুরেন্টে ক্যাভিয়ার দেখিয়ে
আইনস্টাইনকে জ্ঞিজ্ঞেস করেছিলেন, পছন্দ করেন কিনা। আইনস্টাইন কখনো ক্যাভিয়ার
খাননি। অত দামী খাবার কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর।
১৪ মার্চ আইনস্টাইনের জন্মদিনে আইনস্টাইনের বাড়িতে বসেছে অলিম্পিক একাডেমির
আসর। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাভিয়ার এনে প্লেটে সাজিয়ে আইনস্টাইনের সামনে রাখা
হলো। সলোভাইন ও হ্যাবিশটের ইচ্ছা ক্যাভিয়ার খেয়ে আইনস্টাইনের কী প্রতিক্রিয়া হয়
দেখা। এদিকে আইনস্টাইন বস্তুর জড়তার ধর্ম বিষয়ে চিন্তা করছেন কয়েকদিন থেকে। তিনি
ঠিক করে রেখেছেন আজ সেটা নিয়ে আলোচনা করবেন। দুই বন্ধু আসার সাথে সাথেই তিনি
আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। খেতে খেতেই বলে চলেছেন প্রোপার্টি অব ইনারশিয়া প্রসঙ্গে।
আলোচনা শেষ হবার আগেই প্লেটের খাবার শেষ হয়ে গেলো। হ্যাবিশট জ্ঞিজ্ঞেস করলেন,
-তুমি আজ কী খেয়েছো বুঝতে পারছো?
-কী খেলাম আজ?
-ক্যাভিয়ার।
-ক্যাভিয়ার! ওটা ক্যাভিয়ার ছিলো? আগে বললে না কেন? বস্তুটাকে একটু ভালো করে
তাকিয়ে দেখতাম। হাহাহা! ক্যাভিয়ার। দেখলে তো চাষার পেট, ক্যাভিয়ার সে হজম করতে
পারে, কিন্তু তারিফ করতে জানে না।
আরেকদিন একাডেমির বৈঠক বসার কথা সলোভাইনের বাসায়। কিন্তু সলোভাইন সেদিন
একটি কনসার্টের টিকেট কেটেছেন। আইনস্টাইনকে অনুরোধ করেছিলেন বৈঠক বাতিল করতে।
কিন্তু আইনস্টাইন রাজী হননি। পড়াশোনার ব্যাপারে কোনধরনের ছাড় দিতে রাজী নন তিনি।
সলোভাইন আইনস্টাইন ও হ্যাবিশট আসার আগে টেবিলে চারটি সিদ্ধ ডিম আর একটি চিরকূট
রেখে চাবিটা বাড়িওয়ালীর হাতে দিয়ে চলে গেলেন কনসার্টে। আইনস্টাইন ও হ্যাবিশট এলে
বাড়িওয়ালী বললেন, হঠাৎ জরুরী কাজে চলে যেতে হয়েছে সলোভাইনকে। তাঁরা বুঝতে পারলেন,
জরুরী কাজ কী। বাসায় ঢুকে দেখলেন চিরকূটে লেখা আছে, “প্রিয়
বন্ধুদের জন্য কয়েকটি সিদ্ধ ডিম ও একটি সেলাম”।
আইনস্টাইন ও হ্যাবিশট ভাবলেন সলোভাইনকে একটি শিক্ষা দেয়া দরকার। তাঁরা জানেন সলোভাইন তামাকের ধোঁয়া সহ্য করতে পারেন না। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে আইনস্টাইন পাইপ ধরালেন, আর হ্যাবিশট জ্বালালেন চুরুট। সারাঘর তামাকের ধোঁয়ায় ভর্তি হওয়া পর্যন্ত পাইপ আর চুরুট টানলেন দুজনে। তারপর ঘরের সব আসবাবপত্র বিছানার উপর তুলে যাবার সময় একটি চিরকূটে লিখলেন, “আমাদের প্রিয়বন্ধুর জন্য কিছু ঘন ধোঁয়া ও একটি সেলাম”।
আইনস্টাইন ও হ্যাবিশট ভাবলেন সলোভাইনকে একটি শিক্ষা দেয়া দরকার। তাঁরা জানেন সলোভাইন তামাকের ধোঁয়া সহ্য করতে পারেন না। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে আইনস্টাইন পাইপ ধরালেন, আর হ্যাবিশট জ্বালালেন চুরুট। সারাঘর তামাকের ধোঁয়ায় ভর্তি হওয়া পর্যন্ত পাইপ আর চুরুট টানলেন দুজনে। তারপর ঘরের সব আসবাবপত্র বিছানার উপর তুলে যাবার সময় একটি চিরকূটে লিখলেন, “আমাদের প্রিয়বন্ধুর জন্য কিছু ঘন ধোঁয়া ও একটি সেলাম”।
মে মাসের শেষের দিকে প্যাটেন্ট অফিসের চিঠি পেলেন আইনস্টাইন। ডিরেক্টর
ফ্রেডরিখ হলার ইন্টারভিউতে ডাকলেন আইনস্টাইনকে। ইন্টারভিউতে প্রায় দুঘন্টা ধরে
আইনস্টাইনের জ্ঞান যাচাই করা হলো। আইনস্টাইন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হলেও তাঁর
ল্যাবোরেটরির দক্ষতা আছে অনেক। প্রফেসর ওয়েবারের ল্যাবে অনেক কাজ করেছেন তিনি।
তাছাড়া প্যাটেন্ট অফিসে যে সব ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখা হয়,
সেগুলোর সাথে আইনস্টাইনের পরিচয় ছোটবেলা থেকে। আইনস্টাইনের কাকা জ্যাকব ছিলেন
ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, উদ্ভাবক। আইনস্টাইনদের ছিলো ইলেকট্রিক্যাল সাপ্লাইয়ের
ব্যবসা। সুতরাং প্যাটেন্ট অফিসের কোন কিছুই তেমন নতুন নয় আইনস্টাইনের কাছে।
জুনের ১৬ তারিখে নিয়োগপত্র হাতে পেলেন আইনস্টাইন। থার্ড ক্লাস টেকনিক্যাল
এক্সপার্ট হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে তাঁকে নিয়োগ দেয়া হলো। বাৎসরিক বেতন ৩৫০০
ফ্রাঙ্ক। ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেলে যত বেতন পেতে পারতেন, এখন তার
দ্বিগুণ বেতনে শুরু করেছেন তিনি। সে হিসেবে খুশি হবার কথা, কিন্তু এই বেতনে বিয়ে করে
সংসার চালানো যাবে না।
জুনের ২৩ তারিখে আইনস্টাইন প্যাটেন্ট অফিসে যোগ দিলেন। অফিসের ফর্মালিটি
কিছুই জানেন না আইনস্টাইন। ডিরেক্টর হলার প্রথম কয়েক সপ্তাহ আইনস্টাইনকে সবকিছু
দেখিয়ে দিলেন। হলারের কথাবার্তা বেশ কর্কশ আর অপরিশীলিত বলে শুরুতে একটু অস্বস্তি
লাগছিলো আইনস্টাইনের। কিন্তু কয়েকদিন পরেই তিনি বুঝতে পেরেছেন হলার খুব ভালো
মানুষ, আর কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস।
নিয়মিত চাকরি পাবার পর আইনস্টাইন কিছুটা গুছিয়ে উঠেছেন। অলিম্পিক একাডেমির
নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। আইনস্টাইন অফিস ছুটির পর নিজস্ব পড়াশোনা নিয়ে বসেন। চিন্তাভাবনাগুলো
ব্যাখ্যা করেন সলোভাইন ও হ্যাবিশটের কাছে। তাঁরা নানারকম প্রশ্ন করে আইনস্টাইনের
ধারণাগুলোকে আরো পরিষ্কার করে দেন।
মিলেইভা মেয়েকে তাঁর মায়ের কাছে রেখে জুরিখে ফিরে এসেছেন। আইনস্টাইনের সাথে
অনেকদিন পর দেখা হলো তাঁর। বিয়ের ইচ্ছে আছে আইনস্টাইনের, কিন্তু মায়ের বিরোধীতার
কথা চিন্তা করে বিয়ের ব্যাপারে এগোতে সাহস পাচ্ছেন না।
অক্টোবরের শুরুতে মিলান থেকে খবর এলো আইনস্টাইনের বাবা খুব অসুস্থ।
আইনস্টাইন ছুটে গেলেন মিলানে। হারম্যান আইনস্টাইনের বয়স মাত্র পঞ্চান্ন। অথচ পরপর
তিনবার ব্যবসায় দেউলিয়া হয়ে, ঋণগ্রস্থ হয়ে একবারে ভেঙে পড়েছেন তিনি। তাঁর খুড়তুতো
ভাই রুডলফ কিছু টাকা ধার দিয়েছিলেন হারম্যানকে। ব্যবসা দেউলিয়া হয়ে যাবার পরও
রুডলফ টাকার জন্য খুব হেনস্থা করেছেন হারম্যানকে। আইনস্টাইন তাঁর বাবার এ অবস্থার
জন্য কাকা রুডলফকেই দায়ী করেন অনেকটা। বাড়ি পৌঁছে আইনস্টাইন দেখেন তাঁর বাবার
অবস্থা খুবই খারাপ। আইনস্টাইনকে কাছে ডেকে তাঁর বাবা মিলেইভাকে বিয়ে করার অনুমতি
দেন। এ অবস্থায় মা পলিন বাবার কথার প্রতিবাদ করতে পারলেন না। অক্টোবরের দশ তারিখে
মারা যান হারম্যান আইনস্টাইন।
প্রকাশনা
এবছর দুটো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আইনস্টাইনের।
পেপারঃ২ “On the
Thermodynamic Theory of the Potential Difference Between Metals and Fully
Dissociated Solutions of Thier Salts and on an Electrical Methods for
Investigating Molecular Forces.” Annalen der Physik, সংখ্যা ৮ (১৯০২), পৃঃ ৭৯৮-৮১৪। এ
প্রবন্ধে আইনস্টাইন থার্মোডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্রের বিভিন্ন শর্ত ব্যাখ্যা
করেন। পরবর্তীতে তাঁর অন্যান্য গবেষণায় থার্মোডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পেপারঃ৩ “Kinetic
Therory of Thermal Equilibrium and of the Second Law of Thermodynamics”. Annalen
der Physik, সংখ্যা ৯ (১৯০২), পৃঃ ৪১৭-৪৩৩। তাপের সাধারণ তত্ত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ
গাণিতিক ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আইনস্টাইন এ প্রবন্ধে তাপতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ
কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করেন। এর আগে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন লুডউইক বোলটজম্যান।
১৯০৩
জানুয়ারীর ছয় তারিখে আইনস্টাইন ও মিলেইভা মেরিক বিয়ে করেন। বিয়ের আগে
নিয়মানুযায়ী বার্ন,জুরিখ ও নভি সাদের স্থানীয় সংবাদপত্রে তাঁদের বিয়ের নোটিশ
প্রকাশ করা হয়। বার্নের ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে আইনস্টাইন ও মিলেইভা
স্বামী-স্ত্রী হিসেবে স্বাক্ষর করেন। তাঁদের কারো পরিবার থেকেই কেউ আসেননি বিয়েতে।
আইনস্টাইনের মা বিয়ের অনুমতি দিলেও মিলেইভাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। মায়া
আসতে পারতেন, কিন্তু তিনিও আসেননি। মিলেইভার মা-বাবাও আইনস্টাইনকে জামাই হিসেবে
মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে আইনস্টাইনের মায়ের চিঠি পাওয়ার পর তাঁরা আইনস্টাইন
পরিবারের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে চাননি। ফলে তাঁরাও কেউ আসেননি। বিয়েতে সাক্ষী
হিসেবে রেজিস্ট্রারের সামনে আইনস্টাইনের মাত্র দুজন বন্ধু মরিস সলোভাইন ও কনরাড
হ্যাবিশট উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের পর নবদম্পতির ছবি তোলা হল। সলোভাইন ও হ্যাবিশট একটি
রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আয়োজন করে রেখেছিলেন। প্যাটেন্ট অফিসে চাকরি পাবার
পরে আইনস্টাইন বাসা বদল করেছিলেন। বিয়ে উপলক্ষে বাসাটা একটু গোছানোও হয়নি। তদুপরি সদ্য
বিয়ে করা বউকে নিয়ে বাসায় ঢুকতে গিয়ে দেখা গেলো চাবি খুঁজে পাচ্ছেন না আইনস্টাইন। কোথায় রেখেছেন
কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। শেষে অতরাতে বাড়িওয়ালীর ঘুম ভাঙিয়ে তাঁর কাছ থেকে আরেকটি
চাবি নিয়ে বাসার দরজা খোলা হলো। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন শহরে এভাবেই শুরু হলো মিলেইভা
ও আইনস্টাইনের দাম্পত্যজীবন।
বার্ন শহরটি বেশ প্রাণবন্ত শহর। শিক্ষার্থী আর বুদ্ধিজীবীর
ভীড় লেগেই আছে এখানের ঘরে ঘরে আর ক্যাফেগুলোতে। আইনস্টাইনতো
আগে থেকেই মিশে আছেন এখানে। এখন মিলেইভারও ভালো লাগছে শহরের সবকিছু। তাঁর ভালোবাসার
মানুষকে নিজের করে পেয়ে দারুণ খুশি মিলেইভা। মেয়ে লিজেলকে যে নভি সাদে
রেখে এসেছেন তার জন্য মন কিছুটা খারাপ হলেও ভুলে থাকার চেষ্টা করছেন। লিজেলের কী ব্যবস্থা
করা যায় চিন্তা করছেন দুজনে। লিজেলের ব্যাপারটি আইনস্টাইনের বন্ধুদের কেউই জানেন না। এখন জানাজানি
হয়ে গেলে মানসম্মান কিছুই থাকবে না। ফলে কারো সাথে আলোচনাও করা যাচ্ছে না এ ব্যাপারে। মিলেইভা ঠিক
করেছেন দত্তক দিয়ে দেবেন মেয়েকে।
বিয়ের পর আইনস্টাইন আশা করেছেন আরো গভীরভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় মেতে থাকতে পারবেন। অফিস ছুটির পর
বাসায় এসে আর খাওয়া দাওয়ার চিন্তা করতে হবেনা। এসেই গবেষণা
নিয়ে বসতে পারবেন। আর অলিম্পিক একাডেমি তো আছেই। একাডেমির নতুন
সদস্য হলেন মিলেইভা।
সলোভাইন ও হ্যাবিশটকে খুব ভালো লাগে মিলেইভার। তিনি চুপচাপ
বসে তিনজনের আলোচনা শোনেন। একাডেমিতে সমকালীন দার্শনিক কার্ল পিয়ারসন(karl Pearson), ডেভিড
হিউম(David Hume), আর্নস্ট মাখ(Ernst Mach), জর্জ রাইম্যান(Georg Riemann), বারুখ স্পাইনোজা(Baruch
Spinoza) আর হ্যানরি পয়েনকেয়ার(Henri Poincare) সম্পর্কে নানারকম আলোচনা সমালোচনা চলে। মিলেইভা প্রায়
সময়েই উপস্থিত থাকেন আড্ডায়, কিন্তু কোন আলোচনায় অংশ নেন না।
একসময়ের তুখোড় ছাত্রী মিলেইভা পরপর দুবার চেষ্টা করেও পাস করতে না পেরে নিজেকে
আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিয়েছেন জ্ঞানবিজ্ঞানের জগৎ থেকে। এখন স্বতন্ত্র
ব্যক্তিসত্ত্বা তাঁর আর অবশিষ্ট নেই। আইনস্টাইনকে আঁকড়ে ধরেই তিনি এখন বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। একসময় তিনি স্বপ্ন
দেখতেন মেরি কুরির মত হবেন। সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে কত আগে। পলিটেকনিকে পড়ার
সময় আইনস্টাইন যখন মিলেইভার সাথে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন নতুন আইডিয়ার কথা বলতেন, মিলেইভা
স্বপ্ন দেখেছিলেন আইনস্টাইনের সাথেই গড়ে ওঠবে তাঁর যৌথ গবেষণা। মেরি কুরি ও
পিয়েরে কুরি যেরকম, সেরকমই হবেন আইনস্টাইন ও মিলেইভা। কিন্তু কোন স্বপ্নই
পূরণ হলো না। এখন তো তিনি বোঝেনও না আইনস্টাইন কী নিয়ে গবেষণা করছেন। আইনস্টাইন এখন
একান্তভাবেই তাঁর, কিন্তু সম্পূর্ণ তাঁর কি? মিলেইভা
বুঝতে পারেন তাঁকে আসলে সতীনের সাথে বসবাস করতে হবে। তাঁর সতীন বিজ্ঞান, এবং
আইনস্টাইন বিজ্ঞানকেই বেশি সময় দেন, বেশি ভালোবাসেন।
প্যাটেন্ট অফিসের কাজে এখন আর কোন নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না আইনস্টাইন। কিন্তু কাজের
বিরাম নেই সেখানে। প্যাটেন্ট অফিসে বসে থাকলে বিজ্ঞানের মূল-স্রোতে
মেশা যাবে না। বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ন্ত্রিত হয় ইউনিভার্সিটি থেকে। ইউনিভার্সিটিতে
একটি কাজ জোগাড় করতে পারলে ভালো হতো। প্যাটেন্ট অফিসে আইনস্টাইনের সিনিয়র সহকর্মী জোসেফ সটার (Josef Sauter)জুরিখের পলিটেকনিক থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন আট বছর আগে। প্রফেসর ওয়েবারের
ল্যাবেও কাজ করেছিলেন তিনি। ফিজিক্সের বিভিন্ন বিষয়ে আইনস্টাইনের সাথে আলাপ হয় সটারের। সটার একদিন আইনস্টাইনকে
নিয়ে গেলেন বার্ন ন্যাচারাল সোসাইটির মিটিং-এ। সটার এ সোসাইটির
সদস্য। এখানে বিজ্ঞানের সব শাখার মানুষ আছে, এবং প্রতি মিটিঙেই কোন না কোন বিষয়ে বক্তৃতা
চলে।
ন্যাচারাল সোসাইটিতে বার্নের একটি হাইস্কুলের শিক্ষক পল গ্রুনারের(Paul
Gruner) সাথে পরিচয় হলো আইনস্টাইনের। গ্রুনার বার্ন ইউনিভার্সিটির প্রাইভেটডোজেন্ট(privatdozent)। আইনস্টাইন গ্রুনারের
সাথে আলাপে আগ্রহী হয়ে ওঠলেন। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হবার সবচেয়ে প্রাথমিক ধাপ হলো এই প্রাইভেটডোজেন্ট। এটা টিউটরের
মতই একটি পদ,
তবে এই পদের জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে কোন বেতন পাওয়া যায়না। ইউনিভার্সিটি
শুধু ক্লাস নেয়ার অনুমতি দেয়। প্রাইভেটডোজেন্ট ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতে পারেন
ইচ্ছে করলে। ইউনিভার্সিটির প্রাইভেটডোজেন্ট হওয়াও সহজ নয়। প্রার্থীকে সমস্ত
একাডেমিক সার্টিফিকেটের সাথে একটি থিসিস জমা দিতে হয়। কমিটি সেগুলো
দেখে সন্তুষ্ট হলে কমিটির সামনে একটি ট্রায়াল লেকচার দিতে হয়। কমিটি এবারও
সন্তুষ্ট হলে প্রাইভেটডোজেন্ট হওয়া যায়। ডক্টরেট ডিগ্রি না থাকলে
প্রাইভেটডোজেন্ট হওয়া যায় না। আইনস্টাইনের এখনো ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। প্রফেসর ক্লেইনারের
কাছে একটি থিসিস জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতো আবার তুলে নিয়েছেন তিনি।
আইনস্টাইনের জন্য একটি সুখবর দিলেন গ্রুনার। বার্ন ইউনিভার্সিটিতে
একটি বিশেষ সুযোগ আছে ব্যতিক্রমধর্মী মেধাবীদের জন্য। পিএইচডি ডিগ্রি
ছাড়াই যদি কারো বিশেষ কোন সাফল্য থাকে, তাহলে ইউনিভার্সিটি তাঁর আবেদন বিবেচনা
করে দেখেন। আইনস্টাইন ভাবলেন এর মধ্যেই তাঁর চারটি পেপার প্রকাশিত হয়েছে, আরেকটির
কাজ চলছে, নিশ্চয় এটা তাঁর বিশেষ সাফল্য হিসেবে ধরা যায়। তিনি দরখাস্ত
করলেন বার্ন ইউনিভার্সিটির প্রাইভেটডোজেন্ট পদের জন্য।
বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান হলেন প্রফেসর এইমি ফরেস্টার। এই সেই ফরেস্টার
যাঁর পড়ানোর স্টাইল সম্পর্কে সমালোচনা করেছিলেন সলোভাইন। আইনস্টাইনের
পেপারগুলো থার্মোডায়নামিক্সের একদম নতুন তথ্য ও তত্ত্বে ভরা। গাণিতিক সমীকরণগুলোও
গণিতে ভালো দখল না থাকলে বোঝা যাবে না। ফরেস্টার সহ কমিটির অন্যরা
কেউই আইনস্টাইনের পেপারগুলো বুঝতেই পারলেন না। তাঁরা ধরে নিয়েছেন, যা বোঝা
যায় না তার কোন গুরুত্ব নেই। আইনস্টাইনকে অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হলো।
আইনস্টাইন প্রচন্ড রেগে গেলেন ফরেস্টারের ওপর। কিন্তু রাগ করলেও
কিছু করার নেই। আইনস্টাইন তাঁর পরবর্তী পেপার লেখায় মনোযোগ দিলেন। এসময় মিলেইভা
তাঁকে মনে করিয়ে দিলেন যে বিয়ের পরে হানিমুন নামে একটা ব্যাপার থাকে। আইনস্টাইন ভাবলেন
তাই তো। বিয়ের পর ছয়মাস কেটে গেলো, এখনো হানিমুনে যাওয়া হয়নি। জুলাই মাসে তাঁরা
বেরিয়ে পড়লেন লেক জেনেভার উদ্দেশ্যে-হানিমুনে।
হানিমুন থেকে ফিরে আইনস্টাইন আবার ব্যস্ত হয়ে গেলেন। সেপ্টেম্বর মাসে
মিলেইভা বেড়াতে গেলেন নভি সাদে তাঁর বাপের বাড়িতে। মেয়ে লিজেলকে
এখানে মায়ের কাছেই রেখে গিয়েছিলেন তিনি। এসময় লিজেল প্রচন্ড অসুস্থ। আইনস্টাইন জানতে
চাচ্ছেন মেয়ের জন্মের রেজিস্ট্রেশান কীভাবে করানো হয়েছে। লিজেলের জন্মের
রেজিস্ট্রেশান কোথাও হয়তো করানো হয়েছিল, কিন্তু তার কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি। এরপর আইনস্টাইন
বা মিলেইভা আর কখনো লিজেলের প্রসঙ্গে কোন কথা উল্লেখ করেননি কোথাও।
আইনস্টাইন ভেবেছিলেন অলিম্পিক একাডেমির কাজ নিয়মিতই চলবে। তাঁর নিজের ভাবনাচিন্তাগুলো
কাউকে বোঝাতে না পারলে ভালো লাগে না তাঁর। একাডেমিই ছিলো তাঁর আদর্শ
মাধ্যম। কিন্তু আইনস্টাইনকে হতাশ হতে হলো। হ্যাবিশট একটি চাকরি পেয়েছেন। সেপ্টেম্বরে
তিনি চলে গেলেন কর্মস্থলে। এর কয়েকদিন পর সলোভাইনও চলে গেলেন অন্য শহরে। অলিম্পিক একাডেমি
বন্ধ হয়ে গেলো।
আইনস্টাইনের মন খুব খারাপ একাডেমি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে। মিলেইভাও নেই। এসময় মিলেইভার
চিঠি এলো নভি সাদ থেকে। মিলেইভা সন্তানসম্ভবা। অন্যরকম একটি
আনন্দে মন ভরে গেলো আইনস্টাইনের। লিজেলকে আইনস্টাইন একবারও দেখেননি,দেখার
ইচ্ছেও তাঁর সেরকম ভাবে হয়নি। কিন্তু এখনকার অনুভূতিটা অন্যরকম আনন্দের। তিনি মিলেইভাকে
অভিনন্দন জানিয়ে লিখলেন যেন তাড়াতাড়ি চলে আসেন বার্নে, তিনি
আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন তাঁর জন্য।
এবছর আইনস্টাইন তাঁর জীবনের প্রথম বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা দিলেন। ডিসেম্বরে বার্নে
ন্যাচারাল সোসাইটির বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তিনি বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের তত্ত্ব সম্পর্কে
বললেন।
প্রকাশনা
এবছর আইনস্টাইনের একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
পেপারঃ ৪ “A Theory of the
Foundations of Thermodynamics”,Annalen der Physik,সংখ্যা ১১
(১৯০৩), পৃষ্ঠাঃ ১৭০-১৮৭। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন আণবিক তত্ত্ব ও শক্তির সূত্র থেকে তাপমাত্রা
ও এনট্রপির ধারণা ব্যাখ্যা করেন। শুধুমাত্র আণবিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই তাপগতিবিদ্যার
মৌলিক ব্যাখ্যা দেন তিনি।
No comments:
Post a Comment