১৯০৯
তরুণ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে দ্রুত বিখ্যাত হয়ে উঠছেন আইনস্টাইন। ইউরোপের প্রতিষ্ঠিত
পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে এখন। পদার্থবিজ্ঞানের
দিকপালদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় ঘটছে তাঁর। জুরিখ ইউনিভার্সিটির
প্রফেসর ক্লেইনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন আইনস্টাইনকে তাঁর ডিপার্টমেন্টে নিয়োগ দিতে। সম্ভাবনাময় পদার্থবিজ্ঞানী
ও মেধাবী গবেষক হিসেবে আইনস্টাইনের যোগ্যতা নিয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সিলেকশান
কমিটি তাঁর নিয়োগের ব্যাপারে আপত্তি তুলছে অন্যখানে। আইনস্টাইন ইহুদি। প্রফেসর ক্লেইনার
কমিটিকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন, “সব ইহুদি একরকম নয়। আইনস্টাইন ইহুদি
হলেও ভালো-ইহুদি। তাকে আমি এতদিন ধরে চিনি, তার ভেতর খারাপ কিছু চোখে
পড়েনি আমার”।
অনেক চেষ্টায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে কমিটিকে রাজী করিয়েছেন ক্লেইনার। আইনস্টাইনের
পড়ানোর ক্ষমতা কেমন তা ক্লেইনার জানেন না। না জেনে তো সুপারিশ তিনি
করতে পারেন না। তাই নিজের চোখে দেখার জন্য আইনস্টাইনকে কোন খবর না দিয়েই তিনি একদিন বার্নে
এসে হাজির হলেন। ক্লাসে তখন মাত্র একজন ছাত্র। আর আইনস্টাইন তেমন কোন প্রস্তুতিও নিয়ে আসেননি।ক্লেইনার আইনস্টাইনকে
পরীক্ষা করে দেখতে এসেছেন শুনে আইনস্টাইন নার্ভাস হয়ে পড়লেন। প্রফেসর ক্লেইনার
আইনস্টাইনের পড়ানোর অক্ষমতা দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে গেলেন। জুরিখে ফিরে
গিয়ে সবাইকে বললেন তাঁর হতাশার কথা। ফ্রেডরিখ এডলারের সাথে আইনস্টাইনের সম্পর্ক বেশ ভালো। এডলার আইনস্টাইনকে জানালেন যে ক্লেইনার খুব অসন্তুষ্ট হয়েছেন আইনস্টাইনের পড়ানোর ক্ষমতা নেই দেখে।
আইনস্টাইনের ভালো লাগলো না এসব। তবে কি জুরিখ ইউনিভার্সিটি
আইনস্টাইনকে বাদ দিয়ে এডলারকেই নিয়োগ করবে এখন?
কিন্তু না, ফ্রেডরিখ এডলার তাঁর দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সিলেকশান কমিটির কাছে এডলার লিখেছেন, “যদি আইনস্টাইনের মত মানুষকে নিয়োগ করা সম্ভব হয়, তাহলে আমাকে বিবেচনা করাও হবে অর্থহীন। আমি মনে করি, গবেষক হিসেবে আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করার মত কোন যোগ্যতা আমার নেই”। ক্লেইনার আইনস্টাইনকে এখনো নিয়োগ করতে চান। তিনি মনে করেন পড়ানোর দক্ষতা একদিন নিশ্চয় অর্জিত হবে তাঁর। ক্লেইনার আইনস্টাইনকে লিখলেন, আরেকটি সুযোগ তিনি আইনস্টাইনকে দিতে চান। স্থির হলো জুরিখের ফিজিক্যাল সোসাইটিতে আইনস্টাইন একটা লেকচার দেবেন। লেকচার ভালো হলে আইনস্টাইনকে নিয়োগপত্র দেয়া হবে।
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে লেকচার দিলেন আইনস্টাইন। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন। লেকচার খুব ভালো হলো। সিলেকশান কমিটির ভোট নেয়া হলো আবার। এগারোজন সদস্যের মধ্যে দশজন আইনস্টাইনের পক্ষে ভোট দিলেন, একজন ভোটদানে বিরত থাকলেন। কয়েকদিন পরেই আইনস্টাইন জুরিখ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগপত্র হাতে পেলেন। কিন্তু যে বেতন তাঁকে অফার করা হয়েছে,তার চেয়ে বেশি বেতন তিনি প্যাটেন্ট অফিসেই পাচ্ছেন, তিনি জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিতে অসম্মতি জানিয়ে দিলেন। ক্লেইনার সেন্ট্রাল কমিটির সাথে কথা বললেন। কমিটি এবার প্যাটেন্ট অফিসে আইনস্টাইনের বর্তমান বেতনের সমান (বছরে ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক) বেতনে তাঁকে নিয়োগপত্র পাঠালো।
কিন্তু না, ফ্রেডরিখ এডলার তাঁর দরখাস্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সিলেকশান কমিটির কাছে এডলার লিখেছেন, “যদি আইনস্টাইনের মত মানুষকে নিয়োগ করা সম্ভব হয়, তাহলে আমাকে বিবেচনা করাও হবে অর্থহীন। আমি মনে করি, গবেষক হিসেবে আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করার মত কোন যোগ্যতা আমার নেই”। ক্লেইনার আইনস্টাইনকে এখনো নিয়োগ করতে চান। তিনি মনে করেন পড়ানোর দক্ষতা একদিন নিশ্চয় অর্জিত হবে তাঁর। ক্লেইনার আইনস্টাইনকে লিখলেন, আরেকটি সুযোগ তিনি আইনস্টাইনকে দিতে চান। স্থির হলো জুরিখের ফিজিক্যাল সোসাইটিতে আইনস্টাইন একটা লেকচার দেবেন। লেকচার ভালো হলে আইনস্টাইনকে নিয়োগপত্র দেয়া হবে।
মধ্য ফেব্রুয়ারিতে লেকচার দিলেন আইনস্টাইন। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলেন আইনস্টাইন। লেকচার খুব ভালো হলো। সিলেকশান কমিটির ভোট নেয়া হলো আবার। এগারোজন সদস্যের মধ্যে দশজন আইনস্টাইনের পক্ষে ভোট দিলেন, একজন ভোটদানে বিরত থাকলেন। কয়েকদিন পরেই আইনস্টাইন জুরিখ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগপত্র হাতে পেলেন। কিন্তু যে বেতন তাঁকে অফার করা হয়েছে,তার চেয়ে বেশি বেতন তিনি প্যাটেন্ট অফিসেই পাচ্ছেন, তিনি জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিতে অসম্মতি জানিয়ে দিলেন। ক্লেইনার সেন্ট্রাল কমিটির সাথে কথা বললেন। কমিটি এবার প্যাটেন্ট অফিসে আইনস্টাইনের বর্তমান বেতনের সমান (বছরে ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক) বেতনে তাঁকে নিয়োগপত্র পাঠালো।
জুলাইয়ের ছয় তারিখে আইনস্টাইন প্যাটেন্ট অফিসে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন। অক্টোবরের ১৫
তারিখ থেকে তা কার্যকরী হবে। প্যাটেন্ট অফিসের ডিরেক্টর হলার ভাবলেন আইনস্টাইন ঠাট্টা
করছেন। কিন্তু যখন দেখলেন ব্যাপারটি সত্যি, অবাক হয়ে গেলেন। তিনি কিছুতেই
বুঝতে পারছেন না জুরিখ ইউনিভার্সিটি আইনস্টাইনের মত মানুষকে কী কারণে প্রফেসরশিপ অফার
করেছে।
আইনস্টাইন প্যাটেন্ট অফিসে শেষ দুই মাস কাটাচ্ছেন। এসময় ডাকযোগে
বেশ বড় একটি খাম এলো তাঁর নামে। খুলে দেখেন ভেতরে ল্যাটিন ভাষায় ছাপানো রঙিন কিছু কাগজপত্র। আইনস্টাইন কোন
পণ্যের বিজ্ঞাপন মনে করে ছুড়ে ফেলে দিলেন ওয়েস্ট-বাস্কেটে। কিন্তু ওটা ছিলো
ইউনিভার্সিটি অব জেনেভার ৩৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের
আমন্ত্রণপত্র। ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অনেক বিজ্ঞানীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট
ডিগ্রি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মেরি কুরি, উইলহেলম
অস্টওয়াল্ড, আর্নেস্ট সলভে প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর
সাথে আইনস্টাইনকেও ডিগ্রি গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু আইনস্টাইন
কিছুই জানেন না, তিনি তো খামটি ফেলেই দিয়েছেন।
জেনেভা ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা আইনস্টাইনের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আইনস্টাইনের
ছাত্র লুইস শ্যাভেনকে পাঠালেন তাঁর কাছে। লুইস শ্যাভেনকে আইনস্টাইন
পড়িয়েছিলেন প্যাটেন্ট অফিসে যোগ দেয়ার আগে। শ্যাভেন আইনস্টাইনকে রাজী
করালেন জেনেভা ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠানে যেতে, কিন্তু সম্মানসূচক ডিগ্রির কথা কিছুই
বললেন না আইনস্টাইনকে। অনুষ্ঠানে আসার পর আইনস্টাইন যখন শুনলেন তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি
দেয়া হচ্ছে,
তিনি অবাক হয়ে গেলেন। সবাই একাডেমিক
গাউন পরে এসেছেন, অথচ তিনি যেন তেন একটি প্যান্ট আর ঢোলা কোট পরে চলে এসেছেন। দেখা গেলো সমাবর্তনের
মিছিলে একাডেমিক গাউন পরা প্রফেসরদের সাথে একেবারে সাধারণ পোশাকের আইনস্টাইন। তিনি খুব উপভোগ
করলেন ব্যাপারটা। তাঁদের সম্মানে বিশাল এক ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। ডিনার শেষে আইনস্টাইন
রসিকতা করে বললেন, এত বেশি খাওয়া আমার উচিত হয়নি।
আইনস্টাইন যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করলেন তা হলো প্রফেসর অস্টওয়াল্ডও
আজ তাঁর সাথে সম্মানসূচক ডক্টরেট
ডিগ্রি নিয়েছেন। এই প্রফেসরের কাছে পরপর দুবার চিঠি লিখেও কোন জবাব পাননি
আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের বাবাও চিঠি লিখেছিলেন এই অস্টওয়াল্ডের কাছে। এ বছর অস্টওয়াল্ড
রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পান, আর কয়েকবছর পরে অস্টওয়াল্ডই প্রথম ব্যক্তি
যিনি নোবেল পুরষ্কারের জন্য আইনস্টাইনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন।
অক্টোবর মাসে আইনস্টাইন সপরিবারে জুরিখে চলে এলেন। জুরিখে ভাড়াবাসার
খুব সমস্যা চলছে। গত কয়েকবছর যাবত নির্মাণ শ্রমিকেরা ধর্মঘট করাতে বাড়ি নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ। কোনরকমে ছোট
একটি বাসা জোগাড় করতে পারলেন আইনস্টাইন। মিলেইভা বার্ন ছেড়ে আসতে
চাননি। আইনস্টাইনের খ্যাতি ও যশ যত বাড়ছে, মিলেইভার আত্মবিশ্বাস তত কমছে। তিনি দেখছেন
আইনস্টাইন দিন দিন বর্হিমুখী হয়ে যাচ্ছেন। গবেষণা এখন আইনস্টাইনের
ধ্যানজ্ঞান। স্ত্রী বা সন্তানকে সময় দেয়ার মত সময় বা মানসিকতা কোনটাই নেই আইনস্টাইনের। মিলেইভা এসময়
এক বান্ধবীকে লেখেন, “আমি শুধু কামনা করি যেন খ্যাতি ও যশ তাঁর মানবতাটুকু কেড়ে না নেয়”। ইউরোপের মেয়েদের
মধ্যে এখন আইনস্টাইনের ভক্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। পার্টিতে আইনস্টাইনের
মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা থাকে প্রায় সব মেয়েদের। আইনস্টাইনও পছন্দ
করেন মেয়েদের সঙ্গ। এসব দেখে মিলেইভার মাথা ঠিক থাকে না। ঈর্ষায়, রাগে
জ্বলতে থাকেন তিনি। নিজেকে খুব অপমানিত ও অবহেলিত মনে হয় তাঁর।
জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে আইনস্টাইনের যোগদানের ব্যাপারটি বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে
প্রকাশিত হয়। অ্যানা স্মিড আইনস্টাইনকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। এই সেই অ্যানা
স্মিড, যার খাতায় অনেক বছর আগে আইনস্টাইন একটি কবিতা লিখে দিয়েছিলেন। সেদিনের কিশোরী
অ্যানা এখন যুবতী। জর্জ মেয়ার নামে একজন উকিলের সাথে বিয়ের পর অ্যানা এখন ব্যাসেলে
থাকেন। আইনস্টাইন খুব খুশি হয়েছেন অ্যানার চিঠি পেয়ে। তিনি সবার চিঠিরই
উত্তর দেন। অ্যানাকে লিখলেন সময় পেলে জুরিখে এসে বেরিয়ে যেতে। আইনস্টাইনের
চিঠি পেয়েই অ্যানা চিঠি লিখেছেন আবার। চিঠিটা পড়লো মিলেইভার হাতে। তিনি চিঠি খুলে
পড়লেন। ভাবলেন অ্যানার সাথে গোপন প্রণয় চলছে আইনস্টাইনের। এমনিতেও মেজাজ
ভালো থাকেনা মিলেইভার। প্রচন্ড রেগে গিয়ে তিনি চিঠি লিখলেন অ্যানার স্বামী জর্জ
মেয়ারকে। মিলেইভা জর্জ মেয়ারকে আকমণাত্মক ভাষায় লিখেছেন যেন বৌকে সামলে রাখেন।
আইনস্টাইন ব্যাপারটি জানার পর রাগে ক্ষোভে অপমানে ছোট হয়ে গেলেন। অ্যানার সাথে
তাঁর সেরকম কোন সম্পর্ক নেই যা নিয়ে মিলেইভা এরকম করতে পারেন। আইনস্টাইন জর্জ
মেয়ারের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখলেন। অ্যানার সাথে যে তাঁর অনেকবছর
দেখাও নেই এবং তাঁদের মধ্যে যে কোন সম্পর্ক নেই তা বুঝিয়ে লিখলেন। অ্যানার স্বামী
যথার্থ ভদ্রলোক। তিনি আইনস্টাইনের সম্মানহানী হয় এরকম কিছু করলেন না। ব্যাপারটা মিটে
গেলেও আইনস্টাইন ও মিলেইভার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক আরো নড়বড়ে হয়ে গেলো। এরমধ্যেও মিলেইভা
আবার বুঝতে পারলেন যে তিনি আবার সন্তানসম্ভবা।
অক্টোবর মাসের শেষের দিকে আইনস্টাইন জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে তাঁর লেকচার শুরু
করেন। দুটি কোর্স পড়ান তিনি শুরুতে, মেকানিক্স ও থার্মোডায়নামিক্স। এই প্রথম একটি
ফিজিক্স সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইনস্টাইন।
এবছর থেকে জার্মানির ইউনিভার্সিটিগুলোতে মেয়েদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়া হলো। এর আগে শুধুমাত্র
বাছাই করা কয়েকজন বিদেশী মেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলো। এখন জার্মানির
মেয়েদের আন্ডারগ্রেড কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেয়া হলেও পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ে মেয়েদের
ভর্তির সুযোগ এখনো নেই।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের দুটো উল্লেখযোগ্য গবেষণাপত্র-
পেপারঃ২২ “On the Present Status
of the Radiation Problem.” Physikalische Zeitschrift,সংখ্যা ১০
(১৯০৯),পৃষ্ঠাঃ ১৮৫-১৯৩। এই জার্নালের একই সংখ্যায় (পৃঃ ৩২৩-৩২৪) একই শিরোনামে। আরেকটি প্রবন্ধ
প্রকাশিত হয়। সেখানে আইনস্টাইন ও ওয়ালটার রিজ (Walter Ritz)রেডিয়েশান বিষয়ে তাঁদের মতের
পার্থক্যগুলো আলোচনা করেন। এর আগেরবছর এইচ এ লরেঞ্জ, জেমস জিনস ও ওয়ালটার রিজ
বিভিন্ন গবেষণাপত্রে রেডিয়েশান বা বিকিরণ বিষয়ে তাঁদের মতবাদ প্রকাশ করেন। আইনস্টাইন এ
প্রবন্ধে রেডিয়েশান বিষয়ে তাঁর ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল প্রোব্যাবিলিটি অব এ স্টেট’ মতের
পক্ষে বিস্তারিত যুক্তি দেখান। ব্ল্যাকবডি রেডিয়েশানের
মাত্রার পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে আইনস্টাইন আলোর কোয়ান্টাম অস্তিত্ব প্রসঙ্গে দুটি যুক্তি
উপস্থাপন করেন। বস্তু ও শক্তি উভয়ের গঠন ব্যাখ্যা করতে পারে এরকম একটি সমন্বিত ফিলড থিওরি বা
ক্ষেত্রতত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাথমিক চেষ্টার পর আইনস্টাইন স্বীকার করেছেন যে এরকম
সমন্বিত সমীকরণের খোঁজ তিনি এখনো পাননি। একটি সমন্বিত ক্ষেত্রতত্ত্ব
বা ইউনিফাইড ফিলড থিওরির খোঁজ তিনি সারাজীবন ধরেই করে গেছেন।
পেপারঃ২৩ “On the Development of Our Views Concerning the Nature
and Constitution of Radiation.” Deutsche Physikalische Gesellschaft.Verhandlungen,সংখ্যা ৭ (১৯০৯), পৃষ্ঠাঃ৪৮২-৫০০। পরের মাসে গবেষণাপত্রটি আবার প্রকাশিত হয় Physikalische
Zeitschrift, সংখ্যা ১০ (১৯০৯),পৃষ্ঠাঃ৮১৭-৮২৫। আইনস্টাইন জীবনের প্রথম যে সায়েন্টিফিক কনফারেনসে অংশ নিয়েছিলেন
তা অনুষ্ঠিত হয়েছে অস্ট্রিয়ার স্যালজবুর্গে এবছর সেপ্টেম্বর মাসে। এসোসিয়েশান অব
জার্মান সায়েন্টিস্টস ও ফিজিশিয়ানস এর ফিজিক্স সেকশান কর্তৃক আয়োজিত এ কনফারেনসে আইনস্টাইন
যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা প্রকাশিত হয়েছে এ প্রবন্ধের আকারে। দুটি জার্নালে
প্রকাশিত হয় এ গবেষণাপত্রে। রেডিয়েশান বিষয়ে তাঁর মত প্রকাশের পাশাপাশি প্রথমবারের মত
তিনি আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের সমন্বয় করেন। আপেক্ষিকতার
তত্ত্ব প্রয়োগে আলো সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার বিরাট পরিবর্তন ঘটে এবং এ পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির
ফলে পুরো পদার্থবিজ্ঞানের অনেক ধারণা আমূল বদলে যায়। তিনি জোর দিয়ে
বলেন যে, যে কোন পদার্থের মতই আলোরও স্বাধীন অস্তিত্ব আছে, আলো অন্য কোন পদার্থের বাই-প্রোডাক্ট নয়।
১৯১০
সারা ইউরোপে জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আইনস্টাইনের খ্যাতি। আইনস্টাইন নিরলসভাবে
প্রকাশ করে যাচ্ছেন তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতবাদ। ইউনিভার্সিটিতে
পড়াচ্ছেন আর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আইনস্টাইন এখন
ইউরোপের উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত ব্যক্তি। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন
ইউনিভার্সিটি চাচ্ছে আইনস্টাইন তাদের ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিন। বছরের প্রথমদিকে
প্রাগের জার্মান ইউনিভার্সিটি তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার প্রধান অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার
প্রস্তাব দিলো আইনস্টাইনকে।
এখানে জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে আইনস্টাইনের ক্লাসলোড খুব বেশি। প্রথমদিকে তো
ক্লাস নিতেই জানতেন না আইনস্টাইন। শিক্ষক হিসেবে তিনি একেবারেই নিম্মমানের। ক্লাস নিতে গিয়ে
তিনি যে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছেন তা নিজেও বুঝতে পারেন। পরে আস্তে আস্তে
সেটা কাটিয়ে ক্লাস নেয়ার প্রচলিত প্রথা বাদ দিয়ে নিজের মত করে আলোচনা করতে শুরু করলেন। ছাত্রছাত্রীদের
স্বাধীন প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন এবং ক্লাসের পরেও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন। ছাত্রছাত্রীদের
কাছে একেবারে মাটির মানুষ হয়ে যাওয়াতে তারা তাঁকে পছন্দ করতে শুরু করলো। কিন্তু ক্লাস
নিতে নিতে আইনস্টাইন গবেষণার সময়ই পাচ্ছেন না। এমনিতেই তো সংসারে
সময় দেননা বলে মিলেইভা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
এরমধ্যেও তিনি কাজ করছেন তাঁর রিলেটিভিটি থিওরির সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে। সূর্যের পাশ
দিয়ে যাবার সময় অন্যকোন নক্ষত্র থেকে আসা আলো সূর্যের অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে বেঁকে
যাবে- আইনস্টাইনের এ ধারণার পরীক্ষামূলক প্রমাণ পাওয়া যায় নি এখনো। আইনস্টাইন সে
ব্যাপারেও কিছুটা উদ্বিগ্ন। এখন অবশ্য তাঁর একজন সহকারী পাওয়া গেছে- যিনি
গবেষণাকাজে তাঁকে সহায়তা করবেন। লুডউইগ হফ (Ludwig Hopf)নামে এই সহকারীর আরো একটি বিশেষ গুণ হলো চমৎকার পিয়ানো বাজান তিনি। আইনস্টাইন পিয়ানোর
সাথে বেহালা বাজানোর সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি। গবেষণার ফাঁকে ফাঁকে একটু
সংগীতচর্চা করতে পারলে আইনস্টাইনের মাথা পরিষ্কার হয়ে যায়।
প্রাগের জার্মান ইউনিভার্সিটি আইনস্টাইনকে দ্বিগুণ বেতন অফার করেছে, ক্লাসলোডও
সেখানে এখানের অর্ধেক। তিনি প্রাগের প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখছেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা
কীভাবে যেন জানতে পারলো যে আইনস্টাইন চলে যাচ্ছেন। সাথে সাথে তাদের
মধ্যে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো। ছাত্রছাত্রীরা জুরিখ ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষের সাথে জোর
আবেদন করলো যেন আইনস্টাইনের বেতন বাড়িয়ে দিয়ে হলেও তাঁকে জুরিখে ধরে রাখে। জুরিখ ইউনিভার্সিটি
আইনস্টাইনের বেতন বছরে এক হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিলো, আর ক্লাসলোডও
কিছুটা কমাবে বললো। এরপর কয়েকমাস প্রাগ থেকে আর কোন খবর পাওয়া গেলো না।
মার্চে আইনস্টাইনের ছোটবোন মায়ার সাথে পল উইন্টেলারের বিয়ে হলো। আইনস্টাইন আরো
ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মিলেইভার এখন একমাত্র সঙ্গী পাঁচবছর বয়সী ছেলে হ্যানস। মাঝে মাঝে আইনস্টাইনের
মা পলিন আসেন বেড়াতে। তখন মিলেইভার কষ্ট আরো বেড়ে যায়। পলিন এখনো মিলেইভার
সাথে কথা বলেন না। আইনস্টাইনের ব্যক্তিত্বে এখন বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। ইউনিভার্সিটিতে
যোগ দেয়ার আগে তাঁর মেজাজ ছিলো ভীষণ তিরিক্ষি, বিশেষ করে ইউনিভার্সিটি
থেকে বারবার প্রত্যাখ্যাত হবার পর। এখন তাঁর সেই বদমেজাজী ভাবটি
একেবারেই চলে গেছে। মিলেইভা রাগে ক্ষোভে চেঁচামেচি করলেও আইনস্টাইন চুপচাপ নিজের
কাজ করে যান। মিলেইভাকে তিনি একপ্রকার পাত্তাই দেন না এখন আর ।
জুলাই এর ২৮ তারিখে আইনস্টাইন ও মিলেইভার দ্বিতীয় পুত্র এডোয়ার্ডের জন্ম হয়। কয়েকদিন কর্তব্যের
খাতিরে স্ত্রী ও ছেলেদের দিকে কিছুটা নজর দেন আইনস্টাইন। কিন্তু কদিন
পরেই আবার আগের মতই। উল্লেখযোগ্য পারিবারিক ঘটনাও আইনস্টাইনের কাছে তেমন গুরুত্ব
পায় না আর । তাঁর কাছে তাঁর গবেষণা ও পেশাগত কাজই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মিলেইভা এসময়
ক্ষোভে দুঃখে তাঁর বান্ধবীর কাছে লেখেন, “এ কেমন ধরণের নামযশ যার কারণে সে নিজের স্ত্রীর জন্যও সামান্য
অবসর পায়না”। আইনস্টাইন শুধুমাত্র গবেষণার জন্য সময় না পেলেও হয়তো কিছুটা মেনে নিতে পারতেন
মিলেইভা। কিন্তু আইনস্টাইনের নারীসঙ্গপ্রিয়তা কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না মিলেইভা। আইনস্টাইন এখন
ইউরোপের খ্যাতিমান পুরুষ। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েরা তাঁর কাছে ভিড় করে। কিন্তু আইনস্টাইন
কেন দূরত্ব বজায় রাখবেন না? মিলেইভা এ প্রশ্নের কোন উত্তর পান না।
প্রাগের জার্মান ইউনিভার্সিটিতে আইনস্টাইনের অফারটির ব্যাপারে একটি সমস্যা দেখা
দিয়েছে। গুস্তাভ ইয়াউম্যান (Gustav Jaumann)নামে একজন অস্ট্রিয়ান হলেন
আইনস্টাইনের প্রতিদ্বন্দী। আইনস্টাইন ইহুদি হবার কারণে এন্টি-সিমেটিক
কর্মকর্তাদের সমর্থন পাচ্ছেন না। কিন্তু ইয়াউম্যান যখন শুনলেন
যে তাঁর প্রতি অনেকের সমর্থন আছে, তিনি বিরাট অংকের বেতন দাবী করলেন। ফলে চাকরিটি
আইনস্টাইনকেই দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু আইনস্টাইনকে নিয়োগপত্র
পাঠানোর ঠিক আগমুহূর্তে বাধ সাধলেন কয়েকজন কর্মকর্তা। আইনস্টাইন তাঁর
দরখাস্তে ব্যক্তিগত ধর্মের সাথে লিখেছেন- কিছুই না। একজন ইহুদিকে
চাকরি দিতে রাজী হলেও ধর্মহীন মানুষকে চাকরি দিতে রাজী নন তাঁরা। আইনস্টাইন বাধ্য
হয়ে ধর্মের স্থানে ইহুদি লিখলেন। এবার আর কোন সমস্যা রইলো না।
প্রকাশনা
এবছর আইনস্টাইনের ছয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
পেপারঃ২৪ “The
Principle of Relativity and Its Consequences in Modern Physics.” Archives
des sciences physiques et naturelles,সংখ্যা ২৯ (১৯১০), পৃষ্ঠাঃ৫-২৮ ও ১২৫-১৪৪। এই পেপারটি জার্মান
ও ইংরেজি ভাষায় একই জার্নালের একই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পেপারটি মূল
জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন এডোয়ার্ড গিলাউমি (Edouard Guillaume)। এ প্রবন্ধে আপেক্ষিকতার
তত্ত্বের উৎপত্তি ও তার ব্যবহার বিষয়ে সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে। আগস্টের ২৭ তারিখে
আইনস্টাইন জ্যাকব ল্যাউবকে লেখা এক চিঠিতে এ প্রবন্ধ সম্পর্কে আইনস্টাইন বলেন, “এ প্রবন্ধে নতুন
কোন ধারণার অবতারণা করা হয়নি। কেবল আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে। কোন ধরণের গাণিতিক
উপস্থাপনা নেই এ প্রবন্ধে”।
পেপারঃ২৫ “On the Theory of Light Quanta and the Question of the
Localization of Electromagnetic Energy”. Archives des sciences physiques et naturelles,সংখ্যা ২৯ (১৯১০), পৃষ্ঠাঃ
৫২৫-৫২৮। মে মাসে নিউশ্যাটেলে অনুষ্ঠিত
সুইস ফিজিক্যাল সোসাইটির মিটিং এ এই পেপারটি উপস্থাপন করেন আইনস্টাইন। কোয়ান্টাম মতবাদের
ওপর তাঁর অনেক আগের গবেষণার সংক্ষিপ্ত রূপ এই পেপার।
পেপারঃ২৬ “On the Pondermotive
Forces Acting on Ferromagnetic Conductors Carrying a Current in a Magnetic
Field”.
Archives des sciences physiques et naturelles,সংখ্যা ৩০
(১৯১০), পৃষ্ঠাঃ ৩২৩-৩২৪। সেপ্টেম্বরের ছয় তারিখে ব্যাসেলে (Basel)অনুষ্ঠিত একটি কনফারেনসে এই গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন আইনস্টাইন। চৌম্বকক্ষেত্রে
কোন ফেরোম্যাগনেটিক পদার্থ রেখে তার মধ্যে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালনা করলে কী ধরণের বলের
উদ্ভব হবে তা আলোচনা করেন আইনস্টাইন। নিউটনের ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার সূত্র প্রয়োগ করে আইনস্টাইন
এধরণের বলের গাণিতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
পেপারঃ২৭ সংখ্যা ৩৩ (১৯১০), পৃষ্ঠাঃ১০৯৬-১১০৪। বিকিরণের সূত্র
সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে
মনে করা হয় যে বিছিন্ন স্বাধীন ঘটনাগুলো অনেক সময় স্বাভাবিক স্বাধীনতার নির্দিষ্ট নিয়ম
মেনে চলে না। এ পেপারে আইনস্টাইন দেখান যে স্বাধীন বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোর ব্যাপারে এরকম সিদ্ধান্ত
নিয়ে স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্সকে উন্নত করা সম্ভব নয়। বা স্ট্যাটিস্টিক্যাল
মেকানিক্সকে দোষ দিয়ে বিকিরণের সূত্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোও সম্ভব নয়।
পেপারঃ২৮ সংখ্যা ৩৩ (১৯১০), পৃষ্ঠাঃ১১০৫-১১১৫। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন
ও লুডউইগ হফ ২৭ নম্বর পেপারের ফলাফল ব্যবহার করে দেখান যে রেডিয়েশান বা বিকিরণের রেলেই-জিনস
নিয়ম হলো স্ট্যাটিস্টিক্সের একটি অপরিহার্য ফল। আইনস্টাইন পরিষ্কার
ভাষায় দাবী করেন যে, কোন পরীক্ষায় ভুল ফলাফলের জন্য স্ট্যাটিস্টিক্স বা পরিসংখ্যানকে
দায়ী করা উচিত নয়।
পেপারঃ২৯ “The Theory of Opalescence of Homogeneous Fluids and
Liquid Mixtures near the Critical State”.সংখ্যা ৩৩ (১৯১০),
পৃষ্ঠাঃ১২৭৫-১২৯৮। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন
কোন তরলের ক্রিটিক্যাল স্টেট বা সংকট অবস্থায় আলোর প্রভাব ব্যাখ্যা করেন। তরলের সংকট অবস্থা
হলো এমন একটি অবস্থা, যে অবস্থায় (তাপ, চাপ ইত্যাদির কারণে) পদার্থটি তরল অথবা বায়বীয়
বা উভয় অবস্থাতেই থাকতে পারে। আইনস্টাইন এখান থেকে আকাশের নীলরঙ ধারণ করার কারণ ব্যাখ্যা
করেন। এ প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের সবচেয়ে দুর্বোধ্য গবেষণাপত্রগুলোর একটি।
No comments:
Post a Comment