১৯৩৭
মৌলিক গবেষণা তেমন আর হচ্ছে না আইনস্টাইনের। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক
বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছেন নিয়মিত। অসংখ্য চিঠির
উত্তরও দিতে হয় প্রতিদিন। এগুলো করতে গিয়ে এবছর একটি মাত্র গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে
তাঁর। জার্মানি থেকে আমেরিকায় চলে আসা উদ্বাস্তুদের সাহায্য করছেন নিয়মিত। তাঁদের জন্য
চাকরি খুঁজে বের করা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে নিজের বেতন থেকে
অর্থনৈতিক সাহায্যও করে চলেছেন আইনস্টাইন।
এসময় বড়ছেলে হ্যান্স আলবার্ট সুইজারল্যান্ডে
থেকে আমেরিকায় আসেন বাবাকে দেখতে। হ্যান্স আলবার্ট
আগের বছর জুরিখের পলিটেকনিক থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। আইনস্টাইন খুব
খুশি এতবছর পর ছেলেকে দেখে।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের একটিমাত্র গবেষোণাপত্রঃ
পেপারঃ২০৯ “On Gravitational Waves.” Journal of the
Franklin Institute, সংখ্যা ২২৩ (১৯৩৭),
পৃষ্ঠাঃ৪৩-৫৪। (সহলেখকঃন্যাথান
রোজেন)। ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাপত্রে রোজেন ও আইনস্টাইন
অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের প্রভাবে সৃষ্ট গ্রাভিটেশানাল ওয়েভস বা অভিকর্ষজ তরঙ্গের ব্যাখ্যা
দেন।
১৯৩৮
এবছর মার্চ মাসে হিটলার অস্ট্রিয়ার শাসনব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেন এবং অস্ট্রিয়াকে
বাধ্য করেন জার্মানির সাথে দ্বি-রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। অস্ট্রিয়া থেকে
শত হত পেশাজীবী মানুষ পালিয়ে চলে আসছেন আমেরিকায়। প্রতিদিন অনেক
অনেক ইহুদি উদ্বাস্তুকে সাহায্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আইনস্টাইন। শতশত আবেদন আসে
প্রতিদিন। আইনস্টাইনের সঞ্চয়ও প্রায় শেষ। শারীরিকভাবে তো বটেই, অর্থনৈতিকভাবেও
বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন আইনস্টাইন।
আইনস্টাইনের বড়ছেলে হ্যান্স এলবার্ট সুইজারল্যান্ডে থেকে চলে এসেছেন আমেরিকায়। চাকরি নিয়েছেন
সাউথ ক্যারোলাইনার কৃষিবিভাগে। বছরের শেষের দিকে হঠাৎ ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হ্যান্স ও
ফ্রেইডার ছয় বছর বয়সী পুত্র ক্লাউস মারা যায়। আইনস্টাইন ক্লাউসকে
দেখেছিলেন মাত্র একবার। তবুও নাতির মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছেন আইনস্টাইন।
ইউরোপে জার্মানি আর ইটালি ভয়ংকর রকমের গন্ডগোল পাকাবার তালে আছে আঁচ করতে পেরে
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রুজভেলট শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য
হিটলারকে আহ্বান জানান। কিন্তু হিটলার মোটেই পাত্তা দিলেন না রুজভেলটকে। জার্মানি থেকে
আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়া হলো। প্রত্যুত্তরে
জার্মানিও আমেরিকা থেকে ফেরত নিয়ে গেলো তাদের রাষ্ট্রদূতকে। জার্মানি ও আমেরিকার
মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলো।
জার্মানির বিমানবাহিনীর প্রধান হারম্যান গোরিং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত
কিছু ক্ষমতা হাতে পেয়েই ইহুদি ব্যবসায়ীদের ওপর এক মিলিয়ন মার্ক জরিমানা ধার্য করলেন। প্রচন্ড ইহুদিবিদ্বেষী
গোরিং ইহুদি ব্যবসায়ীদের ব্যবসাকে ‘আর্যকরণ’ করার নামে সংগঠিত চাঁদাবাজী শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই
প্রবল ক্ষমতা ও প্রচুর টাকার মালিক হয়ে গেলেন গোরিং। আমেরিকার খ্যাতিমান
বৈমানিক চার্লস লিন্ডবার্গের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গোরিং-এর। লিন্ডবার্গকে
জার্মানির ‘মেডেল অব অনার’ দিয়ে সম্বর্ধনা দিলেন গোরিং। আমেরিকায় তিক্ত
প্রতিক্রিয়া হলো এ ঘটনার। আমেরিকানরা ধিক্কার দিলো লিন্ডবার্গকে। প্রেসিডেন্ট
রুজভেলট সমালোচনা করলেন লিন্ডবার্গের। কিন্তু লিন্ডবার্গ মেডেল
ফেরত দেননি।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
পেপারঃ২১০ “Our Debt to Zionism.”New Palestine, বর্ষ ২৮, সংখ্যা ২ (২৯
এপ্রিল ১৯৩৮), পৃষ্ঠাঃ২-৪। এপ্রিলের ১৭
তারিখে নিউইয়র্কে প্যালেস্টাইনের ন্যাশনাল লেবার কমিটির মিটিং এ আইনস্টাইন যে ভাষণটি
দেন, তার ওপর ভিত্তি করে এ প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের
বর্তমান দুঃসময়ে আইনস্টাইন স্বীকার করেন যে জিওনিজম ইহুদিদের সংগঠিত হতে সাহায্য করেছে। জিওনিজমের ফলশ্রুতিতেই
ইহুদিরা এন্টি-সিমেটিজমের হাত থেকে পালিয়ে এখন প্যালেস্টাইনে নিজেদের ভূমিতে
কাজ করতে পারছে।
পেপারঃ২১১ “Why Do They Hate the Jews?” Collier’s Weekly,সংখ্যা ১০২(২৬ নভেম্বর ১৯৩৮), পৃষ্ঠাঃ৯-১০। পৃথিবীর অনেকে
ইহুদিদের ঘৃণা করেন। এর কারণ কী? আইনস্টাইন এ প্রবন্ধে সে প্রশ্নের উত্তর
খোঁজার চেষ্টা করেছেন। প্রবন্ধটি তিনি লিখেছিলেন জার্মান ভাষায়। পরে রুথ নরডেন
তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন কোলিয়ার উইকলিতে। আইনস্টাইনের
মতে, ইহুদিরা বিচ্ছিন্নভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু তারা কখনো সংগঠিত ছিলো না। অন্যায় অত্যাচারের
প্রতিবাদ তারা কখনোই করেনি, ফলে তাদের ওপর উৎপীড়ন করা সহজ হয়েছে। তবে তিনি এটাও
বলেন যে ভিন্ন ভিন্ন মতের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই প্রকৃত সভ্যতার লক্ষণ।
পেপারঃ২১২ “Gravitational Equations and the Problems of Motion”, প্রথম
পর্ব।(সহলেখকঃলিওপোল্ড ইনফেল্ড(Leopold Infeld) ও ব্যানেশ
হফম্যান(Banesh Hoffmann)। Annals of Mathematics, বর্ষ ৩৯ (১৯৩৮), পৃষ্ঠাঃ৬৫-১০০। লিওপোলড ইনফেলড
ও ব্যানেশ হফম্যানের সাথে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন আইনস্টাইন। আণুবীক্ষনিক
ভরের ওপর অভিকর্ষজ বলের প্রভাব বর্ণনা করে তাঁরা দেখিয়েছেন যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভরের
বস্তুর গতির সমীকরণগুলোও আইনস্টাইনের অভিকর্ষজ ক্ষেত্রসমীকরণ মেনে চলে।
পেপারঃ২১৩ “Generalization of Kaluza’s Theory of
Electricity.”(সহলেখকঃপিটার বার্গম্যান (Peter Bergmann)).Annals of
Mathematics,বর্ষ ৩৯ (১৯৩৮), পৃষ্ঠাঃ৬৮৩-৭০১। প্রিন্সটনে আইনস্টাইনের
সহকারী পিটার বার্গম্যানের সাথে লেখা এ গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন কালুজার বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের
সমীকরণগুলোর বিশ্লেষণ করেন।
পেপারঃ২১৪ “The Evaluation of Physics: The Growth of Ideas from
Early Concepts to Relativity and Quanta” সহলেখকঃলিওপোল্ড ইনফেল্ড।প্রকাশকঃ Simon and Schuster,নিউইয়র্ক (১৯৩৮)। লিওপোল্ড ইনফেল্ডের
সাথে আইনস্টাইন এই জনপ্রিয় বইটি লিখেছেন সাধারণ পাঠকের কথা বিবেচনা করে। কোন ধরণের জটিল
গাণিতিক বিশ্লেষণ ব্যবহার না করে সহজ ভাষায় গ্যালিলিওর সময় থেকে শুরু করে সমসাময়িক
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে যেগুলো তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আবিষ্কারে অনুপ্রেরণা
জাগিয়েছে-সেগুলোর ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন। লিওপোল্ড ইনফেল্ড
আমেরিকায় এসেছিলেন পোলান্ড থেকে। প্রিন্সটনে আইনস্টাইনের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৩৬ থেকে
১৯৩৮ পর্যন্ত। ১৯৩৮ সালে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোতে যোগ দেন তিনি। সেখানে কাজ করেছেন
১৯৫০ সাল পর্যন্ত। ১৯৫০ সালে কানাডার সরকার ইনফেল্ডের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নে
পারমাণবিক বোমার তথ্য সরবরাহের অভিযোগ আনেন। কানাডা থেকে বের করে দেয়া
হয় ইনফেল্ডকে। পোলান্ডে ফিরে যান তিনি। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৮ সালে।
১৯৩৯
আইনস্টাইনের বোন মায়া ইটালি থেকে আমেরিকায় এসে পৌঁছেন। তাঁর স্বামী
পল উইন্টেলারকে স্বাস্থ্যগত কারণে আমেরিকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। পল ইটালি থেকে
সুইজারল্যান্ডে চলে যান। মায়া চলে আসেন প্রিন্সটনে আইনস্টাইনের কাছে। প্রিন্সটনের
মার্সার স্ট্রিটে আইনস্টাইনের বাড়িতে এখন আইনস্টাইনের সাথে আছেন বোন মায়া, সৎকন্যা
মার্গট, সেক্রেটারি হেলেন ডুকাস, কুকুর ‘চিকো’ ও বিড়াল ‘টাইগার’। এরা সবাই আমৃত্যু
এই বাড়িতেই ছিলেন।
ষাটবছর বয়সে আইনস্টাইন এখন পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার মূলস্রোত থেকে কিছুটা ছিটকে
পড়েছেন। নতুন আবিষ্কারের খোঁজখবর রাখেন যতটুকু পারেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স
নিয়ে বির্তক চলছে, আর তাঁর সমন্বিত ক্ষেত্রতত্ত্ব বা ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরি
বিষয়ে কাজ করে চলেছেন যখনই সময় পাচ্ছেন। থিওরিটি নিয়ে
তিনি এখনো আশাবাদী- তবে তেমন কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। তরুণ সহকারীদের
সাথে গবেষণা করে আনন্দ পাচ্ছেন আইনস্টাইন। তবে নতুন কোন গবেষণায় হাত
দিচ্ছেন না অনেকদিন। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে তিনি এখনো সমান সক্রিয়।
জিনিয়াস হিসেবে আইনস্টাইন এখন সর্বজনগ্রাহ্য। সামাজিক, রাজনৈতিক
বা বৈজ্ঞানিক যে কোন বিষয়ে আইনস্টাইনের নাম জড়িত থাকলে সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আইনস্টাইন গরমের
ছুটি কাটান রোড আইল্যান্ডের অবকাশকেন্দ্রে। জুলাইয়ের একদিন সেখানে তাঁর
সাথে দেখা করতে এলেন বন্ধু শিলার্ড। শিলার্ডের সাথে আইনস্টাইন রেফ্রিজারেটর ডিজাইন করা থেকে শুরু
করে অনেক কাজ করেছেন। শিলার্ডের সঙ্গে এসেছেন পদার্থবিজ্ঞানী ইউজিন উইগনার। শিলার্ড ও উইগনার
খবর নিয়ে এসেছেন যে জার্মানিতে মারাত্মক পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি জার্মান
রসায়নবিদ অটো হ্যান ও ফ্রিটজ স্ট্র্যাসম্যান ইউরেনিয়াম নিয়ে পরীক্ষার সময় দেখেছেন যে
ইউরেনিয়াম-২৩৫ বিভাজিত হয়ে প্রচুর পারমাণবিক শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।
অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী লাইস মেইটনার হিটলারের অস্ট্রিয়া দখল করে নেবার পর
সুইডেনে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি হ্যান ও স্ট্র্যাসম্যানকে নিউক্লিয়ার ফিশানের
ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এখন এই নিউক্লিয়ার ফিশান থেকে সহজেই নিউক্লিয়ার চেইন-রি-অ্যাকশান ঘটানো সম্ভব, যা কাজে লাইয়ে বিপুল শক্তির
মারাত্মক ফিশান বোমা বানানো যেতে পারে। শিলার ও উইগনার
ধারণা করছেন জার্মানি হয়তো এরকম একটি বোমা বানানোর প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে। তাঁরা আরো খবর
পেয়েছেন যে জার্মানির বোমা বানানোর ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে ফ্রান্সের ফ্রেডেরিক জুলিয়ট-কুরি
বেলজিয়াম থেকে ছয়টন ইউরেনিয়াম ও নরওয়ে থেকে প্রচুর পরিমাণ ভারী পানি সংগ্রহ করে ইংল্যান্ডে
পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন। আইনস্টাইন গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন যে জার্মানি নিশ্চয়
পারমাণবিক বোমা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শিলার্ড আইনস্টাইনকে অনুরোধ করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেলটের কাছে একটি
চিঠি লেখার জন্য। চিঠির খসড়াও তিনি তৈরি করে দিলেন। চিঠিতে পারমাণবিক শক্তির
সামরিক প্রয়োগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার পর রুজভেলটকে জার্মানির পারমাণবিক বোমা প্রকল্প
সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলো। যদি জার্মানি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে ফেলে, আর আমেরিকা
পারমাণবিক বোমা তৈরির কোন প্রকল্প হাতে না নেয়, তাহলে জার্মানি
পৃথিবী তছনছ করে ফেলবে। আইনস্টাইন চিঠিতে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট
রুজভেলটের কাছে। প্রেসিডেন্ট চিঠিটির গুরুত্ব বুঝতে পারলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার
একমাস পর। রুজভেলট আইনস্টাইনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিলেন। আর ইউরেনিয়াম
ও পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করলেন।
সেপ্টেম্বরের এক তারিখে জার্মানি পোলান্ড আক্রমণ করে উত্তর পোলান্ডের জার্মানভাষী
বন্দরনগরী ড্যানজিগ দখল করে নিলো। এর দুদিনের মধ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির সাথে যুদ্ধঘোষণা
করলো। আমেরিকা এখনো নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে। জার্মানি পশ্চিম
পোলান্ড দখল করার পর রাজধানী ওয়ারশ দখল করে নিয়েছে। একজন নাৎসি গভর্নর-জেনারেল
নিয়োগ করা হলো পোলান্ড শাসন করার জন্য। একই সময়ে সোভিয়েত
ইউনিয়ন পোলান্ডের পূর্বদিকে আক্রমণ করে বসলো। পোলান্ডের কিছু
অংশ এখন জার্মানির দখলে, আর কিছু অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে।
লন্ডনে হিটলারের বই ‘আমার সংগ্রাম’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। যুদ্ধ অনিবার্য
বুঝতে পেরে লন্ডন থেকে নারী ও শিশুদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হলো। ইউরোপে যুদ্ধ
শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকার অস্ত্রকারখানা গুলো বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের
অর্ডার পেতে শুরু করলো। তারা শত্রুমিত্র সবাইকেই অস্ত্র বিক্রি করতে শুরু করলো। আমেরিকার অর্থনৈতিক
অবস্থা হঠাৎ ভালো হয়ে যেতে শুরু করলো।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের তিনটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
পেপারঃ২১৫ “Our Goal.” প্রিন্সটন থিওলজিক্যাল সেমিনারির কনফারেন্সে
প্রদত্ত ভাষণ, ১৯ মে ১৯৩৯। আইনস্টাইন মনে
করেন, শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ মানুষকে সম্পূর্ণ প্রভাবিত
করতে পারেনা। বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা আছে। সুতরাং ধর্মীয়বোধের
প্রধান ভূমিকা হওয়া উচিত সামাজিক মূল্যবোধগুলোর প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। মানুষের জীবনে
ধর্মের একটি গভীর ভিত্তি রয়েছে। ধর্ম মানব সমাজের একটি প্রধান ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য ক্ষতিকারক
নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর সমাজব্যবস্থা গঠনে সহায়তা করে-সে ঐতিহ্যকে যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার না করলেও চলে।
পেপারঃ২১৬ “Sixtieth Birthday Statement.”Science,সংখ্যা ৮৯ (১৯৩৯), পৃষ্ঠাঃ২৪২। ষাটতম জন্মদিন
উপলক্ষে লিখিত এই প্রবন্ধে আইনস্টাইন আমেরিকানদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন। আমেরিকায় এসে
তিনি যে চমৎকার স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারছেন তার জন্য আমেরিকান সমাজব্যবস্থাকে
ধন্যবাদ জানান।
পেপারঃ২১৭ “Europe Will Become a Barren Waste.” New Palestine, সংখ্যা ২৯ (২৪ মার্চ ১৯৩৯), পৃষ্ঠাঃ১-২। আমেরিকার একটি
ইহুদি সংগঠনের উদ্যোগে প্রচারিত একটি বেতার ভাষণে আইনস্টাইন বিশ্বমানবতা বিষয়ে বলতে
গিয়ে ইউরোপে ইহুদিদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা করে বলেন, এভাবে
চলতে থাকলে একদিন ইউরোপের গৌরব করার মত কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাঁর এই বেতার-ভাষণ
লিফলেট আকারে ছাপিয়ে প্রকাশ করা হয়।
পেপারঃ২১৮ “Stationary Systems with Spherical Symmetry Consisting
of Many Gravitating Masses.”Annals of Mathematics,বর্ষ ৪০
(১৯৩৯), পৃষ্ঠাঃ৯২২-৯৩৬। এই গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন অভিকর্ষজ ক্ষেত্রে অনেকগুলো ভর
একসাথে কাজ করার সময় স্থিতিশীল অবস্থার সাম্য সম্পর্কে আলোচনা করেন।
১৯৪০
প্রেসিডেন্ট রুজভেলটের কাছে চিঠি লেখার প্রায় একবছর পরেও পারমাণবিক বোমা তৈরির
ব্যাপারে আমেরিকা কোন উদ্যোগ নেয়নি। ব্যাপারটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে আইনস্টাইন মার্চমাসে আরেকটি
চিঠি লিখলেন প্রেসিডেন্ট রুজভেলটকে। কিন্তু দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নিলেন না প্রেসিডেন্ট রুজভেলট।
অক্টোবরের এক তারিখে আইনস্টাইন আমেরিকান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। সাথে ছিলেন সেক্রেটারি
হেলেন ডুকাস ও সৎকন্যা মার্গট। পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্বও ধরে রেখেছেন আইনস্টাইন।
ইউরোপে প্রচন্ড যুদ্ধ চলছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিন পদত্যাগ করেছেন। উইনস্টন চার্চিল
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। চার্চিল “কান্না,ঘাম ও
রক্তের যুদ্ধ” বলে দেশকে যুদ্ধের মাঝেও এগিয়ে নিয়ে যাবেন
বলে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিলেন। জার্মানি একে একে নরওয়ে,হল্যান্ড, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ দখল করে নিয়েছে। ইটালি ফ্রান্স
ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেছে। আর জার্মানি ফ্রান্স আক্রমণ
করেছে। জুনমাসে জার্মান সৈন্য প্যারিসে প্রবেশ করলো। জার্মানি লন্ডন
শহরের ওপর সারারাতধরে বোমাবর্ষণ করলো। জার্মানি, জাপান
ও ইটালি একটি সামরিক ও অর্থনৈতিক চুক্তিস্বাক্ষর করে অক্ষ-শক্তি গঠন করলো। ইউরোপের অনেক খ্যাতিমান বিজ্ঞানী এসময় পালিয়ে আমেরিকায় চলে
আসতে শুরু করলেন।
আমেরিকায় ফ্রাঙ্কলিন রুজভেলট টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
হয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কথা বিবেচনা করে রুজভেলট কংগ্রেসকে অনুরোধ করলেন
বিরাট অংকের সামরিক বাজেট অনুমোদনের জন্য। পঞ্চাশ হাজার যুদ্ধবিমান
তৈরির টেন্ডার দেয়া হলো। আমেরিকায় সিলেক্টিভ সার্ভিস সিস্টেমের আওতায় একুশ থেকে ছত্রিশ
বছর বয়স্ক সকল পুরুষ আমেরিকানকে বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভিসে যেতে হলো। আর স্মিথ অ্যাক্ট
(Smith
Act)অনুসারে- আমেরিকায় অবস্থানরত সকল বিদেশী
নাগরিকের নাম রেজিস্ট্রেশান বাধ্যতামূলক করা হলো।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
পেপারঃ২১৯ “Freedom and Science.” জার্মান
থেকে ইংরেজিতে অনুবাদঃজেমস গাটম্যান(James Gutmann)।রুথ অ্যানশেন সম্পাদিত ফ্রিডমঃইটস
মিনিং
(Freedom:Its Meaning)বইতে প্রকাশিত। পৃষ্ঠাঃ৩৮১-৩৮৩। প্রকাশকঃ হারকোর্ট, নিউইয়র্ক
(১৯৪০)। আইনস্টাইনের মতে বেশিরভাগ মানুষ দুটো ব্যাপারে একমত হবেন। প্রথমটি হলো, প্রত্যেক
মানুষই খুব কম পরিশ্রম করে জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারলে খুশি হন। আর দ্বিতীয়টি
হলো, প্রত্যেক মানুষই মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক, বা শৈল্পিক গুণাবলী অর্জন করতে চান। আইনস্টাইন মনে
করেন প্রত্যেকেরই আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত, কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদা
মেটানোর জন্য দীর্ঘসময় ধরে কাজ করার প্রয়োজন হলে নিজের অন্যান্য গুণাবলী অর্জন ও প্রকাশ
করার সময় তার হাতে থাকে না। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় মানুষকে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করার হাত
থেকে মুক্তি দেয়া উচিত। তাহলেই তারা স্বাধীন চিন্তাভাবনার চর্চা ও প্রকাশ করতে সক্ষম
হবেন। তাহলেই প্রকৃত জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি সম্ভব।
পেপারঃ২২০ “New Bond Among Nations.”Aufbau 6,বর্ষ ৬, সংখ্যা ২৬ (২৭
ডিসেম্বর ১৯৪০),পৃষ্ঠাঃ১-২। আমেরিকার নাগরিকত্ব
নেয়ার দিন আইনস্টাইনের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এ প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। আইনস্টাইন আধুনিক
দেশে বহুজাতিকতার সপক্ষে মত ব্যক্ত করেন।
পেপারঃ২২১ “My Position on the Jewish Question.” Aufbau,বর্ষ ৬, সংখ্যা ৫২ (২৭
ডিসেম্বর ১৯৪০), পৃষ্ঠাঃ৯। ইহুদিদের সমস্যা
ও অধিকারের প্রশ্নে আইনস্টাইনের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে।
পেপারঃ২২২ “Statement on the Significance of American Citizenship.” রবার্ট
স্পিয়ার্স বেঞ্জামিন (Robert Spears Benjamin)সম্পাদিত
I am an American: By Famous Naturalized Americans বইয়ের ৪৩-৪৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত। প্রকাশকঃ অ্যালাইয়েনস বুক, নিউইয়র্ক
(১৯৪০)। আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পর আইনস্টাইন তাঁর অনুভূতি
ব্যক্ত করেছেন এই প্রবন্ধে। পৃথিবীর বহু বিখ্যাত ব্যক্তিই আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এই বইটিতে তাঁদের
নিজেদের কথা সংকলিত হয়েছে।
পেপারঃ২২৩ “Gravitational Equations and the Problems of Motion”.দ্বিতীয়
পর্ব।
Annals of Mathematics, বর্ষ ৪১ (১৯৪০),
পৃষ্ঠাঃ৪৫৫-৪৬৪। সহলেখকঃ লিওপোল্ড
ইনফেল্ড। ১৯৩৮ সালে এ গবেষণাপত্রের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে (পেপারঃ২১২)। আইনস্টাইন ও
ইনফেল্ড এ গবেষণাপত্রে অভিকর্ষজ ক্ষেত্রে একাধিক বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল গতির সমীকরণ
কীরূপ হবে তার একটি ব্যাখ্যা দেন।
পেপারঃ২২৪ “Considerations Concerning the Fundamentals of
Theoretical Physics.” Science,সংখ্যা ৯১ (১৯৪০)। পৃষ্ঠাঃ ৪৮৭-৪৯২। মে মাসের ২৪
তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত অষ্টম আমেরিকান সায়েন্টিফিক কংগ্রেসে প্রদত্ত ভাষণে
আইনস্টাইন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত
করেন যে একদিন সমন্বিত তত্ত্বের মাধ্যমে সবগুলো তত্ত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব
হবে। আইনস্টাইনের
বক্তৃতাটি ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে তাঁর ‘আইডিয়াল এন্ড
ওপিনিয়নস’ গ্রন্থে তা পুনঃপ্রকাশিত হয়।
১৯৪১
হ্যান্স এলবার্ট ও ফ্রেইডা ইভলিন নামে একটি সদ্যপ্রসূত মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন। সে হিসেবে আইনস্টাইন
আবার দাদু হলেন এবছর।
সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জার্মানি থার্ড
রাইখের সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে রাশিয়া আক্রমণ করেছে। জার্মানির যুদ্ধজাহাজ
বিসমার্ক (Bismarck)ইতিহাসের ভয়াবহ নৌযুদ্ধে ডুবিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ হুড(HMS
Hood)।পরে অবশ্য মিত্রশক্তি টর্পিডোর আঘাতে বিসমার্ককেও ডুবিয়ে দিয়েছে। জাপানে নিযুক্ত
আমেরিকান রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্ট রুজভেলটকে জানিয়েছেন জাপান আমেরিকা আক্রমণ করতে পারে। কোন সাবধানতা
অবলম্বন করার আগেই ডিসেম্বরের সাত তারিখে জাপান আমেরিকার পার্ল হারবারে বোমা বর্ষণ
করে। আমেরিকা ও ব্রিটেন
জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
অবশেষে আমেরিকা পারমাণবিক বোমা প্রস্তুতির প্রকল্প হাতে নেয়। অতি গোপনীয় ম্যানহাটান
প্রজেক্ট শুরু হয়। সারাদেশের মেধাবী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা প্রজেক্টের কাজে
যুক্ত হন। নিউম্যাক্সিকোর লস আলমোস ন্যাশনাল ল্যাবোরেটরিতে গবেষণা শুরু হয়। ম্যানহাটান প্রজেক্টের
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো বোমার জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক বিস্ফোরক জোগাড় করা। ইউরেনিয়াম-২৩৫ ও
প্লুটোনিয়াম-২৩৯ ব্যবহার করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই দুটো আইসোটোপ
নিউক্লিয়ার ফিশান ঘটাতে সক্ষম।
আইনস্টাইন এই প্রজেক্টে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করতে চাইলেন। কিন্তু তাঁকে
প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা-ছাড়পত্র
পাওয়া যায়নি। আমেরিকান গোয়েন্দাসংস্থা এফ-বি-আই আইনস্টাইনকে কমিউনিস্ট বলে সন্দেহ করে। এফ-বি-আই আইনস্টাইনকে গোপনে অনুসরণ করে আসছে অনেকদিন থেকে। যদিও শেষ পর্যন্ত
আইনস্টাইনের ব্যাপারে কোন ধরণের ক্ষতিকারক কোন তথ্য এফ-বি-আই পায়নি, কিন্তু আইনস্টাইনই যে চিঠি লিখে প্রেসিডেন্ট
রুজভেলটকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন-তাও বিবেচনায় আনেনি এফ-বি-আই।
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আইনস্টাইন স্বীকার করেছেন যে, তিনি
যদি জানতেন জার্মানরা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সক্ষম হবে না, তাহলে তিনি কিছুতেই পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন না। জার্মানরা পারমাণবিক
বোমার সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারেনি বলেই বোমা তৈরি করতে পারেনি। নয়তো সমস্ত কারিগরী
জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের ছিলো।
আমেরিকান সরকার গোপনীয় প্রকল্পে আইনস্টাইনকে অন্তর্ভুক্ত না করলেও অনেক ব্যাপারে
তাঁর সহযোগিতা চেয়েছে বিভিন্ন সময়, আর আইনস্টাইনও খুশি হয়ে সাহায্য করেছেন
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়ে।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের চারটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
পেপারঃ২২৫ “Science and Religion” প্রকাশকঃডেমোক্রেটিক
ওয়ে অব লাইফ, নিউইয়র্ক (১৯৪১)। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত
বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্ম বিষয়ক একটি সম্মেলনে আইনস্টাইন বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে তাঁর
যুগান্তকারী বক্তব্য রাখেন। আইনস্টাইন বলেন, “বিজ্ঞানের সংজ্ঞা কী, তা আমি জানি। কিন্তু ধর্মের
সংজ্ঞা আমি জানিনা”। সুতরাং কোন মানুষকে যখন ধার্মিক বলা হয়, তখন
আইনস্টাইন মনে করেন, মানুষটির সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী
কেউ, যিনি শুধুমাত্র বাস্তববাদী নন, তাদের চেয়েও কিছুটা বেশি। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে
বিরোধ শুরু হয় মারাত্মক ধরণের ভুলবোঝাবুঝি থেকে। ধর্ম তার প্রকৃত
লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বিজ্ঞানের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। মূল সত্যকে আবিষ্কার
করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজ হয়, যা বের করা সকল ধর্মের মূল
উদ্দেশ্য। ধর্মের ভেতর থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক সত্য বের করা যায় এবং তা গ্রহণ করা যায়। কারণ কোন ধর্মই
মিথ্যাবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে বলে না। আবার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের
জন্য কিছু পূর্ব-বিশ্বাস থাকলে ক্ষতির কিছু নেই। এই প্রবন্ধেই
তিনি তাঁর বিখ্যাত উক্তি করেন, “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ
(Science without religion is lame, religion without science is blind)”.
পেপারঃ২২৬ “Five-Dimensional Representation of Gravitation and
Electricity,” সহলেখকঃ ভ্যালেন্টাইন বার্গম্যান ও পিটার বার্গম্যান। Theeodore von Karman
Anniversary Volume-এর ২১২-২২৫ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত। প্রকাশকঃ ক্যালিফোর্নিয়া (১৯৪১)। এ পেপারে আইনস্টাইন
ও সহযোগী গবেষকরা অভিকর্ষণ ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সমন্বিত রূপ প্রকাশের ক্ষেত্রে পাঁচমাত্রিক
ব্যবস্থার প্রয়োগ আসলেই করা সম্ভব কিনা বিশ্লেষণ করেছেন।
পেপারঃ২২৭ “Credo as a Jew.”Universal Jewish Encyclopedia,চতুর্থ খন্ড
(১৯৪১), পৃষ্ঠাঃ৩২-৩৩। ইহুদি হিসেবে তেমন কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ না মানলেও আইনস্টাইন
নিজেকে ইহুদি হিসেবে পরিচয় দিয়ে সংকোচ বোধ করেন না। তো ইহুদি হিসেবে
তাঁর আদর্শ কী? এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে আইনস্টাইন তাঁর নীতি ও আদর্শবোধ ব্যাখ্যা
করেছেন।
পেপারঃ২২৮ “The Common Language of Science.” সেপ্টেম্বরের
২৮ তারিখে লন্ডনের একটি সায়েন্স কনফারেনসে প্রচারের জন্য আইনস্টাইনের এই বক্তৃতা রেকর্ড
করা হয়। আইনস্টাইন বলেন, বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিকভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য একটি বৈজ্ঞানিক
ভাষা থাকা উচিত। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে সবাই যদি একই ধরণের বৈজ্ঞানিক শব্দাবলী
ব্যবহার করে তাহলে চিন্তা ও ভাষার মধ্যে সহজেই সমন্বয় সাধিত হয়।
No comments:
Post a Comment