১৯২৯
টাইম ম্যাগাজিন আইনস্টাইনের ওপর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবছর ১৮
ফেব্রুয়ারি সংখ্যায়। মার্চের চৌদ্দ তারিখ আইনস্টাইন পঞ্চাশতম জন্মদিন পালন করলেন।
সারাপৃথিবী থেকে শতশত মানুষ তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেন। এ উপলক্ষে তাঁর বন্ধুরা
তাঁর জন্য একটি চমৎকার উপহারের কথা ভাবছিলেন। অনেকদিন থেকে তাঁরা চেষ্টা
চালাচ্ছিলেন বার্লিন সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আইনস্টাইনকে যেন একটি গ্রীষ্মকালীন
বাড়ি উপহার দেয়া হয়। সিটি কাউন্সিল রাজিও হয়েছিলো অনেকটা। কিন্তু বাধ সাধলো রাজনৈতিক
নেতারা। আইনস্টাইনের মত একজন ইহুদিকে রাষ্ট্রের খরচে একটি বাড়ি দেয়া হবে তা মেনে
নিতে পারছিলেন না জাতীয়তাবাদী নেতারা। সিটি কাউন্সিল মুখ রক্ষার্থে বললো জার্মানির
সম্পত্তি-আইনে বাধা আছে বলে বাড়ি উপহার দেয়া সম্ভব নয়।
আইনস্টাইন খুব বিরক্ত হয়ে নিজের টাকায় জমি কিনে একটি গ্রীষ্মকালীন
অবকাশকেন্দ্র বানিয়ে নিলেন। বার্লিনের কাছের একটি গ্রাম ক্যাপুথের(Caputh) এ বাড়ি
থেকে মাত্র তিন মিনিট হাঁটলেই বিশাল হ্রদ। সেপ্টেম্বরে আইনস্টাইন উঠে এলেন এ
বাড়িতে। বার্লিনের এপার্টমেন্টটিও অবশ্য ছাড়লেন না। নতুন বাড়িতে আইনস্টাইনের জন্য
একটি চমক অপেক্ষা করছিলো। আইনস্টাইনের বন্ধুরা একটি চমৎকার পালতোলা নৌকা উপহার
দিয়েছেন তাঁকে। হ্রদের পাড়ের মুক্ত হাওয়ায় নৌকায় চড়ে কিছুদিনের মধ্যেই আইনস্টাইনের
স্বাস্থ্য ফিরতে শুরু করলো।
নবশক্তিতে তিনি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আবার। জিওনিস্ট ও শান্তিবাদী আন্দোলনে
প্রচুর সময় দিতে লাগলেন। বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার
দিচ্ছেন,লিখছেন,বক্তৃতা দিচ্ছেন-আইনস্টাইন। সবচেয়ে বড়কথা হলো এবছর তিনি ইউনিফাইড
ফিলড থিওরির ওপর একটি পেপার প্রকাশ করলেন (পেপার-১৪৫)। এ পেপারটি প্রকাশিত হবার
আগে থেকেই মিডিয়ার কল্যাণে প্রচুর প্রকাশ পায়। জুন মাসে জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটি
আইনস্টাইনকে প্ল্যাঙ্ক মেডেল প্রদান করে।
এবছর বেলজিয়ামের রাণী এলিজাবেথ ও তাঁর স্বামী রাজা এলবার্টের সাথে বন্ধুত্ব
হয় আইনস্টাইনের। আইনস্টাইন বেলজিয়াম বেড়াতে গেলে রাণী তাঁর প্রাসাদে আইনস্টাইনকে
আমন্ত্রণ জানান। আইনস্টাইনের সম্মানে দেয়া রাণীর পার্টিতে আইনস্টাইন বেহালা
বাজান,নাচেন। এরকম প্রাণখোলা আইনস্টাইনকে খুব পছন্দ করলেন রাণী এলিজাবেথ। রাণীর সাথে
পত্রযোগাযোগ শুরু হলো আইনস্টাইনের। তাঁদের এ বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজীবন অক্ষুন্ন
ছিলো।
জার্মানিতে হিটলার হেনরিখ হিমলারকে (Heinrich Himmler)এস এস বাহিনীর প্রধান
রাইখসফুরার(Reichsfuhrer) পদে নিয়োগ করেন। ওয়ার্লড জিওনিস্ট অর্গানাইজেশান জিউইস
এজেন্সি (Jewish Agency)প্রতিষ্ঠা করেন। লিগ অব নেশানস এর শর্ত অনুযায়ী জিওনিস্ট
নন-জিওনিস্ট সব ইহুদিদের প্রতিনিধিত্ব করবে এই এজেন্সি। প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের
স্বাধীন আবাস গড়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখে জিউইস এজেন্সি।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
পেপারঃ১৪৪ “Text on broadcast on the semicentennial of Thomas
A.Edison’s
incandescent lighting. নিউইয়র্ক টাইমস,২৩
অক্টোবর ১৯২৯। থমাস আলভা এডিসনের বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের অর্ধশত বার্ষিকী
উদযাপন উপলক্ষে আইনস্টাইনের একটি বেতার ভাষণ প্রচারিত হয়। নিউইয়র্ক টাইমসে
তা প্রকাশিত হয়।
পেপারঃ১৪৫ “On the Unified Field Theory.” Koniglich Preussische
Akademie der Wissenschaften (Berlin). Sitzungsberichte (১৯২৯),
পৃষ্ঠাঃ২-৭। স্পেস-টাইম
জিওমেট্রিতে গ্র্যাভিটেশান ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিজমের সমন্বয় ঘটিয়ে আইনস্টাইনের এ পেপারটি
প্রকাশিত হবার আগে থেকেই সাংবাদিকরা প্রচার করতে শুরু করেছেন যে আইনস্টাইন মহাবিশ্বের
সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। আগের বছর গ্রান্ড ইউনিফাইড
থিওরির ওপর একটি গবেষণাপত্র (পেপার-১৪২)
প্রকাশিত হবার পর থেকেই সাংবাদিকরা আইনস্টাইনের সমন্বিত সূত্রের গুজব
ছড়াতে থাকেন। ফলে এবছর এ পেপারটি প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই সবগুলো কপি
বিক্রি হয়ে যায়। আইনস্টাইন নিজেই অবাক হয়ে যান এরকম প্রতিক্রিয়ায়। কারণ যাঁরা গবেষণাপত্রটি
কিনছেন, তাঁদের সবার পক্ষে তো বোঝা সম্ভব নয় এ জটিল তত্ত্ব এবং ততোধিক জটিল গাণিতিক
ভাষা। কিছুদিনের মধ্যেই প্রাথমিক উত্তেজনা কমে এলো। সমালোচনাকারীরা
আইনস্টাইনের তত্ত্বে ভুল দেখতে পেলেন। আইনস্টাইন বেশ কিছু সংশোধনী
দিলেন এ গবেষণাপত্রে। শেষপর্যন্ত তিনবছর পর তিনি স্বীকার করলেন যে, গবেষণাপত্রে
প্রকাশিত তত্ত্বে ভুল ছিলো।
পেপারঃ১৪৬ “The New Field Theory.” নিউইয়র্ক
টাইমস, ৩ ফেব্রুয়ারি,১৯২৯। আইনস্টাইনের
সমন্বিত তত্ত্বের ওপর প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি নিয়ে আইনস্টাইনের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদনটি
প্রকাশিত হয় নিউ ইয়র্ক টাইমসে।
পেপারঃ১৪৭ “Unified Interpretation of Graviation and Electricity.” Koniglich Preussische
Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte (১৯২৯),পৃষ্ঠাঃ১০২। প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েনসের অধিবেশনে আইনস্টাইন তাঁর গ্র্যাভিটেশান
ও ইলেকট্রিসিটির সমন্বয়ের সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন এই ছোট্ট পেপারে।
পেপারঃ১৪৮ “unified Field Theory and the Hamiltonian Principle.” Koniglich Preussische
Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte (১৯২৯),
পৃষ্ঠাঃ১৫৬-১৫৯। প্রুসিয়ান একাডেমি
অব সায়েন্সের অধিবেশনে ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরি এবং হ্যামিলটনের নীতির ব্যাখ্যা দেন আইনস্টাইন।
১৯৩০
এবছর প্রথমবারের মত ঠাকুরদা হলেন আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের
বড়ছেলে হ্যান্স এলবার্ট ও ফ্রেইডার একটি ছেলে হয়েছে। নাম বার্নহার্ড(Bernhard)। এলসার ছোটমেয়ে
মার্গট বিয়ে করেছে মাঝারি মানের সাংবাদিক দিমিত্রি ম্যারিয়ানফকে(Dmitri Marianoff)। সে সূত্রে তৃতীয়বার
শ্বশুর হলেন আইনস্টাইন।
মার্গটের বিয়ে করার ঘোষণায় আইনস্টাইন ও এলসা উভয়েই খুব অবাক হয়েছিলেন। কারণ মার্গট
এতই লাজুক যে তার কোন ছেলেবন্ধু ছিলো না। কারো সামনে যেতে হলে লজ্জায়
কুঁকড়ে যেতো মার্গট। একদিন আইনস্টাইনের সাথে খাবার টেবিলে বসে আছে মার্গট, এসময়
একজন দেখা করতে আসেন আইনস্টাইনের সাথে। আইনস্টাইন তাঁকে
খাবার টেবিলে আহ্বান জানালে মার্গট অতিথির সামনে দিয়ে যেতে না পেরে টেবিলের নিচে টেবল
ক্লথের আড়ালে বসেছিলো অতিথি চলে না যাওয়া পর্যন্ত। সাংবাদিক ম্যারিয়ানফ
লাজুক মাগর্টকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিয়েতে রাজী করান। পরে অবশ্য জানা
যায় যে ম্যারিয়ানফের স্বার্থ ছিলো তাতে।
এলসার বড়মেয়ে আইলস এর স্বামী রুডলফ কেইজার আইনস্টাইনের জীবনী প্রকাশ করেন এবছর
অ্যান্টন রেইজার(Anton Reiser) ছদ্মনামে। এটি আইনস্টাইনের
প্রথম জীবনী। কিন্তু আইনস্টাইন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই প্রকাশ করতে চাননা। আইনস্টাইন কেইজারের
বইটি প্রকাশের আগে বেশ কয়েকবার পড়ে দেখেন এবং অনেক কিছু বাদ দিতে বলেন। তারপরও তিনি
চাননি জার্মানির মানুষ তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার জানুক। সেজন্য বইটি
জার্মানি থেকে প্রকাশ না করে আমেরিকা থেকে প্রকাশ করা হয়।
এবছর ১৪ জুলাই আইনস্টাইনের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে নোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সাথে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আইনস্টাইনের ক্যাপুথের বাড়িতে এসে আইনস্টাইনের সাথে দেখা
করেন। তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞান,দর্শন ও সংগীত প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। এই সাক্ষাতের
ফলে আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়।
আইনস্টাইন আবার আমেরিকা সফরের আমন্ত্রণ পেলেন। এবার প্যাসাডেনার
ক্যালটেকে বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ। আইনস্টাইন ও এলসা আমেরিকা সফরের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।
জার্মানির রাজনৈতিক ক্ষমতা ক্রমশ উগ্র ডানপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে। নির্বাচনে হিটলারের
নাৎসি বাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। হেনরিখ ব্রুনিং (Heinrich Bruning)ডানপন্থী কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছেন। আইনস্টাইন উগ্র
জাতীয়তাবাদীদের এ উত্থানের বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দিলেন। সমাজতন্ত্রের
সমর্থক হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান বাম থেকে মধ্যপন্থী। তিনি কমিউনিস্ট
নন, আবার কমিউনিস্টদের সংস্পর্শকে বিপজ্জনকও মনে করেন না। তবে উগ্র কমিউনিস্টদের
তিনি এড়িয়ে চলেন।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত সলভে কংগ্রেসে যোগ দেন আইনস্টাইন। তবে তিনি জানতেন
না যে এটাই হবে তাঁর শেষ সলভে কংগ্রেস। এবছর জুরিখের পলিটেকনিক
ইনস্টিটিউট আইনস্টাইনকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে।
ডিসেম্বরে আইনস্টাইনের জাহাজ ভিড়লো নিউইয়র্কে। এ সফরে আইনস্টাইনের
সাথে আছেন এলসা,সেক্রেটারি হেলেন ডুকাস ও গবেষণা-সহকারী ওয়ালথার মেইয়ার। ডক্টর ওয়ালথার মেইয়ারকে
আইনস্টাইন সহকারী হিসেবে নিয়োগ করেছেন মূলত তাঁর লম্বা লম্বা গাণিতিক হিসেবগুলো করার
জন্য। আইনস্টাইন মেইয়ারকে মাঝে মাঝে ক্যালকুলেটর বলে সম্বোধন করেন। আমেরিকায় আসার
সময় আইনস্টাইন মেইয়ারকে সাথে নিয়ে এসেছেন,কারণ তিনি জাহাজে বসেই তাঁর ইউনিফায়েড
থিওরি নিয়ে কাজ করছেন।
নিউইয়র্কে পাঁচদিন যাত্রাবিরতিতে আইনস্টাইনকে ঘিরে ধরলেন আমেরিকান সাংবাদিকরা। অনেক
বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে দেখা হলো তাঁর। জুনিয়র জন ডি রকফেলার দেখা করলেন
আইনস্টাইনের সাথে। ম্যানহ্যাটেনের আপার ওয়েস্ট সাইডের রিভারসাইড চার্চ দেখতে গেলেন
আইনস্টাইন। চার্চের প্রধান ফটকের স্তম্ভে অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশে নিজের
মূর্তি দেখে ভালোই লাগলো তাঁর। জাহাজ নিউইয়র্ক থেকে ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া আসার পথে
কিউবাতে দুদিন যাত্রাবিরতি করলেন আইনস্টাইন।
নিউইয়র্ক বা ক্যালিফোর্নিয়ার যেখানেই বক্তৃতা দিয়েছেন আইনস্টাইন,শান্তির
পক্ষে ও যুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলেছেন, সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
মিলিটারির বিরুদ্ধে আইনস্টাইনের খোলামেলা কথাবার্তায় অনেকসময় তাঁর হোস্টরাও বিব্রত
বোধ করেছেন।
এসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশগুলোতেও এন্টি-সিমেটিজম দ্রুত ছড়িয়ে
পড়ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিট্রিশরা প্যালেস্টাইনের শাসনভার হাতে নেয়। পূর্ব
ইউরোপের প্রায় দুলাখ ইহুদি এসময় প্যালেস্টাইনে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে চলে আসে।
আরবদের সাথে ইহুদিদের একটি সংঘর্ষে আশংকায় ব্রিটিশরা ইহুদিদের আগমন ঠেকাতে চেষ্টা
করে। প্রায় পঁচানব্বই লাখ ইহুদি বাস করে ইউরোপিয়ান শহরগুলোতে। জার্মানির মোট সাড়ে
ছয় কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র পাঁচ লাখ ইহুদি। জার্মান ইহুদিরা কেউই
প্যালেস্টাইনে যেতে রাজী নন। জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে নাৎসি বাহিনী
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য চৌদ্দটি রচনাঃ
পেপারঃ ১৪৯ “The Compatibility of Field Equations in the Unified
Field Theory.”Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften
(Berlin).Sitzungsberichte (১৯৩০),পৃষ্ঠাঃ১৮-২৩। প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের অধিবেশনে উপস্থাপিত এই গবেষণাপত্রে
আইনস্টাইন তাঁর প্রস্তাবিত ইউনিফায়েড থিওরিতে ফিল্ড থিওরির সমীকরণগুলোর প্রযোজ্যতা
ব্যাখ্যা করেন।
পেপারঃ১৫০ “Two Exact Statistical Solutions of the Field Equations
of the Unified Field Theory”(সহলেখকঃওয়ালথার মেইয়ার)
Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte (১৯৩০),পৃষ্ঠাঃ১১০-১২০। ওয়ালথার মেইয়ারের
সাথে লিখিত এই পেপারটি আইনস্টাইন উপস্থাপন করেন প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের অধিবেশনে। ইউনিফায়েড ফিল্ড
থিওরিতে ব্যবহারের লক্ষ্যে দুটো ক্ষেত্র সমীকরণের পরিসংখ্যানিক সমাধান করা হয়েছে এ
গবেষণাপত্রে।
পেপারঃ১৫১ “On Progress Made by the Unified Field Theory.”(a summary). Koniglich
Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte (১৯৩০),পৃষ্ঠা ১০২। প্রুসিয়ান একাডেমি
অব সায়েন্সের অধিবেশনে আইনস্টাইন তাঁর ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরি প্রতিষ্ঠার অগ্রগতির একটি
সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন এই পেপারে।
পেপারঃ১৫২ “On the Theory of Spaces with the Riemann Metrics and
Distant Parallelism.” Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften
(berlin).Sitzungsberichte (১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ৪০১-৪০২। প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের অধিবেশনে উপস্থাপিত এই গবেষণাপত্রে
আইনস্টাইন স্পেস থিওরিতে দূরবর্তী সমান্তরাল তত্ত্ব ও রাইম্যান মেট্রিক্স ব্যবহার করেন।
পেপারঃ১৫৩ “The Unified Field Theory Based on Riemann Metrics and
Distant Parallelism.” Mathematische Annalen,সংখ্যা ১০২
(১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ৬৮৫-৬৯৭। আইনস্টাইন ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরির ওপর কাজ করে যাচ্ছেন। সমান্তরাল তত্ত্ব
ও রাইম্যান মেট্রিক্স ব্যবহার করে ক্ষেত্রসমীকরণগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছেন এই গবেষণাপত্রে।
পেপারঃ১৫৪ “Space,Ether and Field in Physics.”Forum Philosophicum ,সংখ্যা ১
(১৯৩০),পৃষ্ঠাঃ১৭৩-১৮০। এ পেপারে আইনস্টাইন স্পেস,ইথার ও ক্ষেত্রতত্ত্বের একটি
সহজ ব্যাখ্যা দেন। তিনি দেখান যে ইথারের ধারণার আর প্রয়োজন নেই।
পেপারঃ১৫৫ “About Kepler.” Frankfurter Zeitung, ৯ নভেম্বর,১৯৩০। জোহানেস কেপলারের মৃত্যুর তিনশ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত
এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন কেপলারের সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যে কতরকমের বাধা নিষেধ ছিলো, কেপলারের
নিজের কী কী সমস্যা ছিলো তা আলোচনা করেন। আইনস্টাইন কেপলারের
গবেষণা ও গবেষণা প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন।
পেপারঃ১৫৬ “Religion and Science.” নিউইয়র্ক
টাইমস,৯ নভেম্বর ১৯৩০। ধর্ম ও বিজ্ঞান
সম্পর্কে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত এ প্রবন্ধটি আইনস্টাইন লেখেন নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের
জন্য। আইনস্টাইন তাঁর নিজের ধর্মবিশ্বাসের বর্ণনা দেন এ প্রবন্ধে। প্রচলিত অরগানাইজড
রিলিজিয়ন বা সংগঠিত ধর্মের প্রতি তাঁর বিশ্বাস নেই। তিনি বিশ্বাস
করেন মহাজাগতিক ধর্ম বা কসমিক রিলিজিয়নে। তাঁর মতে মহাজাগতিক ধর্ম
প্রচলিত ধর্মের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চমার্গের আর অনেক বেশি শক্তিশালী। মানুষের দৈনন্দিন
কাজের ভিত্তিতে মানুষকে শাস্তি বা পুরস্কার দেন যে ব্যক্তিগত ঈশ্বর-সে ঈশ্বরে
আইনস্টাইনের বিশ্বাস নেই। আইনস্টাইন বিশ্বাস করেন আরো শক্তিশালী পরমেশ্বরকে-যিনি
প্রকৃতি ও শক্তিকে একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করেছেন- সে শৃঙ্খলা ভাঙার ক্ষমতা সে ঈশ্বরেরও নেই। আইনস্টাইন এ
প্রবন্ধের শেষাংশে বলেন, বিজ্ঞান ও ধর্মে কোন বিরোধ নেই, বরং বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য কসমিক রিলিজিয়নে বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন।
পেপারঃ১৫৭ Science and God:A Dialogue.”সংখ্যা ৮৩ (১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ৩৭৩-৩৭৯। জোসেফ মারফি(Joseph Murphy) এবং জে ডাবলিউ এন সুলিভানের
(J.W..N Sullivan)সাথে আইনস্টাইনের কথোপকথনের ভিত্তিতে এ প্রবন্ধটি
রচিত হয়েছে। জোসেফ মারফি নানাধরণের রহস্যময় ঘটনা, সংস্কার,বিশ্বাস ইত্যাদির আধাভৌতিক বিজ্ঞান চর্চা করেন। আর সুলিভান হলেন
গণিতবিদ ও জনপ্রিয় বিজ্ঞানলেখক। বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাথে কথোপকথনের ভিত্তিতে সুলিভান “ট্যুর অব গ্রেট
ম্যান” নামে একটি বই লিখছিলেন।তারই অংশ হিসেবে তাঁরা আইনস্টাইনের সাথে বিভিন্ন
প্রসঙ্গে কথা বলেন। আইনস্টাইন বিজ্ঞানের সাথে জীবনের অন্যান্য দিকের সম্পর্ক,ইহুদিদের
সাথে বর্ণবৈষম্যের সম্পর্ক,ধর্ম,সমাজনীতি
ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
পেপারঃ১৫৮ “What I Believe.” Forum and Century, সংখ্যা ৮৪
(১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ১৯৩-১৯৪। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন তাঁর ব্যক্তিগত দর্শন ও বিশ্বাসের কথা
খোলাখুলি আলোচনা করেন। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন লিখেছেন, “যে আদর্শগুলো
আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে,তা হলো দয়া,সৌন্দর্য
ও সত্য”, “আমাদের সবচেয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতা প্রায় সময়েই রহস্যময়”।
পেপারঃ১৫৯ “Concept and Space”.Nature,সংখ্যা ১২৫ (১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ৮৯৭-৮৯৮। বিজ্ঞান সাময়িকী
নেচারের জন্য লিখিত সংক্ষিপ্ত এই প্রবন্ধে আইনস্টাইন সহজ ভাষায় স্পেস-টাইমের
ব্যাখ্যা দেন।
পেপারঃ১৬০ “On the Present State of the Theory of Relativity.” Yale University
Library Gazette,সংখ্যা ৬ (১৯৩০),
পৃষ্ঠাঃ৩-৬। ইয়েল ইউনিভার্সিটি
লাইব্রেরি গেজেটে প্রকাশিত আইনস্টাইনের এই পেপারে রিলেটিভিটি থিওরির ক্রম-উন্নতি
ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিশেষ করে স্পেশাল রিলেটিভিটি থিওরি থেকে জেনারেল রিলেটিভিটি
প্রতিষ্ঠার ধাপগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে এ প্রবন্ধে।
পেপারঃ১৬১ “The Space-Time Problem.”Koralle, সংখ্যা ৫ (১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ৪৮৬-৪৮৮। সংক্ষিপ্ত এ পেপারে আইনস্টাইনের স্পেস-টাইম
সমস্যার একটি সহজ-বোধ্য ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
পেপারঃ১৬২ “Speech at the Broadcasting Exhibition.” Naturwissenschaften, সংখ্যা ৪৯(১৯৩০), পৃষ্ঠাঃ৩৩। আগস্টের ২২ তারিখে
আইনস্টাইন বার্লিন ব্রডকাস্টিং এক্সিবিশনে একটি ভাষণ দেন। তাঁর এ ভাষণটির
রেকর্ড থেকে কথাগুলো নিয়ে এটি পেপার আকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৩১
আইনস্টাইন নিউ ইয়ার্স ডে পালন করলেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়। জানুয়ারির মাঝামাঝি
চার্লি চ্যাপলিনের আমন্ত্রণে হলিউডে চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইট’ ছবির
প্রিমিয়ার শোতে প্রধান অতিথি হলেন। পৃথিবীব্যাপী প্রচারিত হলো
চার্লি চ্যাপলিনের সাথে আইনস্টাইনের ছবি। এসময় আইনস্টাইনের সাথে হেলেন
কেলার সহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাৎ ঘটে। জানুয়ারির শেষে
আইনস্টাইন মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে এডউইন হাবলের সাথে দেখা করতে গেলেন। দুবছর আগে হাবল
প্রমাণ করেছেন যে মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে, যার ফলে আইনস্টাইন তাঁর ‘কসমোলজিক্যাল
কনস্ট্যান্ট’ যে ভুল ছিলো তা বুঝতে পেরেছেন।
মার্চে আইনস্টাইন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউইয়র্ক ফিরে এলেন ট্রেনে। পথে গ্র্যান্ড
ক্যানিয়নের কাছে হুপি ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশানে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করেন। আমেরিকান আদিবাসী
হুপি ইন্ডিয়ানরা আইনস্টাইনকে খুব সমাদর করলেন। আইনস্টাইনের
শান্তিবাদী আন্দোলনের জন্য হুপিরা আইনস্টাইনকে ‘গ্রেট রিলেটিভ’ হিসেবে
সম্মান জানান এবং একটি শান্তির বাঁশি উপহার দেন। সেখান থেকে যাত্রা
শুরু করে শিকাগোতে আবার কিছুক্ষণের জন্য থামেন। শিকাগোতে আইনস্টাইন
ছোট্ট একটি শান্তিবাদী বক্তৃতা দেন। শিকাগো থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছে প্যালেস্টাইনের জন্য তহবিল সংগ্রহের
উদ্দেশ্যে অ্যাস্টর হোটেলে আয়োজিত একটি সমাবেশে ভাষণ দেন আইনস্টাইন। প্যালেস্টাইনে
আরবদের সাথে ইহুদিদের সমস্যার ব্যাপারটা এখন বুঝতে পেরে তিনি আরবদের সাথে শান্তিপূর্ণ
সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ইহুদিদের প্রতি আহ্বান জানান। ক’দিন পরেই জার্মানি
ফেরার জাহাজে চেপে বসেন আইনস্টাইন।
জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখন খুব খারাপ। আইনস্টাইন মার্চে
আমেরিকা থেকে ফিরে প্রুসিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সের দুটো অধিবেশনে দুটো পেপার উপস্থাপন
করে মে মাসেই আবার জার্মানি ছাড়লেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির
আমন্ত্রণে তিনি রোডিস লেকচার দিলেন সেখানে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির
লেকচারের সময় যে ব্ল্যাকবোর্ডে আইনস্টাইন কিছু সমীকরণ লিখেছিলেন, সেই
ব্ল্যাকবোর্ডটি সংরক্ষিত আছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এসময় অক্সফোর্ড
ইউনিভার্সিটি আইনস্টাইনকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে। একমাস পরে ইংল্যান্ড
থেকে জার্মানিতে ফিরলেন আইনস্টাইন।
আইনস্টাইন পুরো গ্রীষ্মকাল কাটালেন ক্যাপুথের সামার হাউজে। ক্রমাবনতিশীল
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও নিরলসভাবে লিখে চলেছেন শান্তির পক্ষে,যুদ্ধের
বিপক্ষে, মিলিটারি সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তার বিপক্ষে। আইনস্টাইন বুঝতে
পারছেন এডলফ হিটলারের নেতৃত্ব জার্মানি এগোচ্ছে একটি সাংঘাতিক একনায়কতন্ত্রের দিকে।
ডিসেম্বরে আইনস্টাইন ও এলসা আবার আমেরিকা পাড়ি দিলেন। জার্মানি থেকে
জাহাজে চেপে সোজা লস এঞ্জেলেসে। আইনস্টাইন পাকাপাকিভাবে জার্মানির ত্যাগ করার কথা ভাবছেন। চাকরির চেষ্টা
করছেন জার্মানির বাইরে অন্যকোন দেশে। ইউরোপে থাকাটাই পছন্দ তাঁর। তবে আমেরিকাতেও
চেষ্টা করছেন। ক্যালটেকে কোন ব্যবস্থা হয় কিনা দেখার জন্য তিনি ক্যালটেকে এসেছেন এখন। কিন্তু আমেরিকায়
এসে তিনি যখনই সুযোগ পাচ্ছেন শান্তির পক্ষে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আর আমেরিকান
হোস্টদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে প্রায় সময়েই আমেরিকার বর্ণ-সাম্প্রদায়িকতার
সমালোচনা করছেন। পৃথিবীজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। জার্মানির অর্থনৈতিক
ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে জার্মানির সমস্ত বাণিজ্যিক
ব্যাংক।
প্রকাশনা
এবছর প্রকাশিত আইনস্টাইনের বারোটি উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
পেপারঃ১৬৩ “Science and Dictatorship”.অটো ফোর্স্ট-ব্যাটাগালিয়া(Otto Forst-Battaglia) সম্পাদিত Dictatorship
on Trial বইতে প্রকাশিত। জার্মান থেকে
ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন হান্টলি প্যাটারসন(Huntley Paterson)।বইটির ভূমিকা লিখেছেন উইনস্টন
চার্চিল(Winston
Churchill)। প্রকাশকঃজর্জ হ্যারোপ(George G. Harrop),লন্ডন ১৯৩০। হিটলার,স্ট্যালিন
ও মুসোলিনের উত্থানকালে প্রকাশিত এই বইতে বিখ্যাত মনিষীরা একনায়কতন্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে
তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আইনস্টাইন মাত্র দু’লাইনের একটি লেখায় একনায়কতন্ত্র
সম্পর্কে বলেন, “একনায়নকতন্ত্র মানেই হলো জনগণকে কামানের মুখে চুপ করিয়ে রাখা।একমাত্র বাকস্বাধীনযুক্ত
গণতান্ত্রিক পরিবেশেই বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সম্ভব”।
পেপারঃ১৬৪ “Science and Happiness” ক্যালিফোর্নিয়া
ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে প্রদত্ত ভাষণ। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২২ ফেব্রুয়ারি
১৯৩১। এপ্রিলে সায়েন্স পত্রিকায় ভাষণটি পুনঃপ্রকাশিত হয় (সায়েন্স,বর্ষ ৭৩, সংখ্যা ১৮৯৩,১০ এপ্রিল ১৯৩১, পৃষ্ঠাঃ৩৭৫-৩৮১)। বক্তৃতায় আইনস্টাইন বিজ্ঞানের সাথে সাধারণ মানুষের সুখের
সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন। বিজ্ঞান কি মানুষকে সুখী করতে পারে? এখনো
খুব একটা পারে না। কারণ কী? আইনস্টাইন বলেন,কারণ বিজ্ঞান এখনো সাধারণ মানুষের মনের কাছাকাছি আসতে পারেনি। বিজ্ঞানীদের
ভুলে গেলে চলবে না যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আবিষ্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ
মানুষকে সুখী করা।
পেপারঃ১৬৫ “Militant Pacifism.”World Tomorrow,সংখ্যা ১৪(১৯৩১),পৃষ্ঠাঃ৯। বেলজিয়ামের একটি
শান্তি সমাবেশে যুদ্ধের বিরুদ্ধে হিংসাত্মুক স্লোগান ও উগ্র কথাবার্তার সমালোচনা করে
আইনস্টাইন বলেন, অস্ত্র হাতে নিয়ে শান্তির পক্ষে আন্দোলন করা যায় না।
পেপারঃ১৬৬ “Cosmic Religion,with Other Opinions and Aphorisms.” প্রকাশকঃ
Covici-Friede,নিউইয়র্ক (১৯৩১)। ছোট্ট এই বইতে
আইনস্টাইনের সংক্ষিপ্ত জীবনীর সাথে ধর্ম,শান্তিবাদ ও ইহুদিদের প্রসঙ্গে আইনস্টাইনের
মতামত সংকলিত হয়েছে।
পেপারঃ১৬৭ “Tagore Talks with Einstein,” এশিয়া,সংখ্যা ৩১ (১৯৩১),পৃষ্ঠাঃ১৩৮-১৪২। বিশ্বকবি রবীব্দ্রনাথ ঠাকুর ও আইনস্টাইনের দেখা হয় এবছর। বিভিন্ন প্রসঙ্গে
তাঁদের কথোপকথনের ওপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এশিয়া পত্রিকায়।
পেপারঃ ১৬৮ “The Nature of Reality,” মডার্ন রিভিউ (কলকাতা),
সংখ্যা ৪৯ (১৯৩১),পৃষ্ঠাল৪২-৪৩।কলকাতার মডার্ন রিভিউ পত্রিকা
সত্য ও সুন্দরের প্রকৃতি প্রসঙ্গে আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথোপকথনের ওপর ভিত্তি
করে এ প্রবন্ধটি প্রকাশ করে।
পেপারঃ১৬৯ “The 1932 Disarmament Conference.” নেশান(Nation),
সংখ্যা ১৩৩(১৯৩১), পৃষ্ঠাঃ৩০০। নিরস্ত্রিকরণ সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন
যুদ্ধ ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র
হবে জনগণের সেবক, জনগণ রাষ্ট্রের নয়। পৃথিবীর সবদেশকে
নিয়ে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হওয়া উচিত। বাধ্যতামূলক
মিলিটারি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া উচিত। মিলিটারি কায়দায় পরিচালিত
শিক্ষাব্যবস্থারও আমূল সংস্কার করা উচিত। আইনস্টাইন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস
করেন,জাতীয়তাবাদ যেকোন জাতির জন্যই ক্ষতিকর। জাতীয়তাবাদ থেকেই
জন্ম নেয় আধিপত্যবাদ ও সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় যুদ্ধ ও সংঘাত। আইনস্টাইন আশাবাদ
ব্যক্ত করেন যে দায়িত্ববোধ সম্পন্ন নেতারা সততার সাথে চেষ্টা করবেন যেন পৃথিবী থেকে
চিরতরে যুদ্ধ বন্ধ করা যায়।
পেপারঃ১৭০ “About Zionism :Speeches and Letters”। অনুবাদ ও সম্পাদনাঃলিয়ন
সাইমন
(Leon Simon),প্রকাশকঃম্যাকমিলান,নিউইয়র্ক
(১৯৩১)। জিওনিজম প্রসঙ্গে আইনস্টাইনের বিভিন্ন বক্তৃতা ও বিবৃতির
সংকলনটি প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক থেকে। মূল জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন স্যার লিয়ন সাইমন।
পেপারঃ১৭১ “On the Cosmological Problem of the General Theory of
Relativity.”Koniglich
Preussische Akademie der Wissenschaften (Berlin).Sitzungsberichte(১৯৩১), পৃষ্ঠাঃ২৩৫-২৩৭। প্রুসিয়ান একাডেমি
অব সায়েন্সের অধিবেশনে উপস্থাপিত এই গবেষণাপত্রে আইনস্টাইন মেনে নেন যে মহাবিশ্বের
আয়তন সুনির্দিষ্ট নয় এবং মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বকে সুনির্দিষ্ট
আয়তনে ধরে রাখার জন্য তিনি তাঁর জেনারেল রিলেটিভিটির ক্ষেত্রসমীকরণে যে কসমোলজিক্যাল
কনস্ট্যান্ট ব্যবহার করেছিলেন তা বাদ দিয়ে আরো সহজভাবে সমীকরণগুলো উপস্থাপন করেন।
পেপারঃ১৭২ “Unified Theory of Gravitation and Electricity”. প্রথম
পর্ব।সহলেখকঃ ওয়ালথার মেইয়ার। Koniglich Preussische Akademie der Wissenschaften
(Berlin).Sitzungsberichte(১৯৩১),
পৃষ্ঠাঃ৫৪১-৫৫৭। ইউনিফায়েড থিওরি অব গ্রাভিটেশানের ওপর প্রথম দুটো পেপারের এটি
প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হয় পরের বছর (পেপার ১৭৭)। প্রুসিয়ান একাডেমি অব
সায়েন্সের অধিবেশনে আইনস্টাইন এ পেপারটি উপস্থাপন করেন।
পেপারঃ১৭৩ “Foreword” to Sir Isaac
Newton,Opticks, ম্যাকগ্রো-হিল, নিউইয়র্ক
(১৯৩১)। স্যার আইজ্যাক নিউটনের অপটিকস বইটির আধুনিক ইংরেজি সংস্করণ
প্রকাশ করে নিউইয়র্কের ম্যাকগ্রো-হিল কোম্পানি। সে বইয়ের ভূমিকা
লেখেন আইনস্টাইন। নিউটন সম্পর্কে তিনি বলেন, নিউটন একাই একটি প্রতিষ্ঠান, একাধারে তিনি পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানী, তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী,গণিতবিদ,কারিগর ও আবিষ্কারের শিল্পী।
পেপারঃ১৭৪ “Relativity:The Special and General Theory”অনুবাদকঃ আর লওসন (R.Lowson), প্রকাশকঃ পিটার স্মিথ, নিউইয়র্ক (১৯৩১)। সাধারণ পাঠক যাঁরা পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব সম্পর্কে আগ্রহী, কিন্তু
জটিল গাণিতিক জ্ঞান সীমিত তাঁদের উদ্দেশ্যে সহজভাবে লিখিত আইনস্টাইনের স্পেশাল ও জেনারেল
রিলেটিভিটি বিষয়ক এই বইটি জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করে নিউইয়র্কের
পিটার স্মিথ পাবলিশার্স।
No comments:
Post a Comment