সূর্যের ভবিষ্যৎ
কত বয়স হলো সূর্যের? এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা সূর্যের ভবিষ্যৎ জানার জন্য
দরকারি। দেখো এখানে আমরা সূর্যের যে ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবো তা বৈজ্ঞানিক হিসাবের
ব্যাপার। তোমরা যেন আবার হাতের রেখায় ভবিষ্যৎ আছে বা জ্যোতিষীর ভবিষ্যৎ-বাণীতে
বিশ্বাস করো না। কারণ ওসব হলো ফন্দি-ফিকির করে মানুষকে ধোকা দেয়া। যাই হোক, চলো
আমরা সূর্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু কথা বলি।
আমরা জানি সূর্য একটি
সাধারণ জি-টাইপের নক্ষত্র। এর শক্তিক্ষয়ের পরিমাণ ও অন্যান্য তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা
হিসেব করে দেখেছেন সূর্যের বর্তমান বয়স প্রায় ৪৭০ কোটি বছর। সূর্যের কেন্দ্রে প্রতি সেকেন্ডে ৭০ কোটি টন হাইড্রোজেন হিলিয়ামে
পরিণত হচ্ছে। তা থেকে ৫০ লক্ষ টন বিশুদ্ধ
শক্তি উৎপন্ন হয় প্রতি সেকেন্ডে। তার মানে প্রতি সেকেন্ডে সূর্যের ভর কমে যাচ্ছে।
এই হারে চলতে থাকলে আর পাঁচশো কোটি বছর পরে সূর্যের জ্বালানি হাইড্রোজেন শেষ হয়ে
যাবে।
আগামী ৫০০ কোটি বছর পর
সূর্যের হাইড্রোজেনের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কেন্দ্রে হাইড্রোজেন কমতে থাকলে কেন্দ্রের
চাপ বেড়ে যাবে। সূর্যের স্বাভাবিক
চাপ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের চাপের প্রায় ৩৪০০০ কোটি গুণ। এই চাপ আরো বেড়ে গেলে
কেন্দ্রের তাপমাত্রা এক কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেড়ে প্রায় দশ কোটি ডিগ্রি
সেলসিয়াসে উঠে যাবে। তখন
হাইড্রোজেনের বদলে হিলিয়াম ব্যবহার করতে হবে জ্বালানি হিসেবে। হিলিয়াম ব্যবহারের ফলে সূর্য আরো
উজ্জ্বল হবে। ফলে সূর্য
এত বেশি সম্প্রসারিত হবে যে এটা বুধ শুক্রকে গিলে ফেলবে আর পৃথিবী বাষ্প হয়ে যাবে।
(পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে এখনই মন খারাপ করার কিছু নেই। কারণ ৫০০ কোটি বছর অনেক
লম্বা সময়)।
হলুদ
থেকে সূর্যের রঙ হয়ে যাবে কমলা লাল। সূর্য তখন একটা লাল দৈত্যে (red giant) পরিণত হবে। এখানে দৈত্য শব্দটি ব্যবহৃত
হয়েছে আকারে বড় বোঝানোর জন্য। তোমরা যেন আবার ভেবে বসো না যে সুর্য একটা রূপকথার
দৈত্য হয়ে তোমাদের খেতে আসবে।
সুর্য বড় হতে হতে
বর্তমান আয়তনের চেয়ে ত্রিশ গুণ পর্যন্ত বড় হয়ে যেতে পারে। লাল দৈত্য নক্ষত্র (red giant star) হিসেবে সূর্য কয়েক কোটি বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে।
এই সময় অত্যধিক তাপের কারণে হিলিয়ামগুলো সব
ফিউজ হয়ে আরো ভারী পরমাণুতে পরিণত হবে। সবগুলো হিলিয়াম শেষ হতে প্রায় এক কোটি বছর
লাগবে। সমস্ত হিলিয়াম শেষ হয়ে যাবার পর
কেন্দ্রে যেহেতু আর কোন শক্তি উৎপন্ন হবে না, সূর্য আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে
থাকবে। বাইরের আস্তরণগুলো আসতে আসতে মহাশূন্যে খসে পড়তে থাকবে। ভেতরের সাদা
কেন্দ্রটা রয়ে যাবে শ্বেত বামন (white dwarf) হিসেবে।
চিত্র: সূর্যের ভবিষ্যৎ পরিণতি
শ্বেত বামন হলো জ্বলন্ত পিন্ড যা শুধুমাত্র
গরম বলেই উজ্জ্বল দেখায়, কিন্তু ভেতর থেকে কোন শক্তি উৎপন্ন হয় না। এরা মৃত
নক্ষত্র। ১৯১৫ সালে আমেরিকান
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ওয়াল্টার অ্যাডামস সর্বপ্রথম একটা শ্বেত-বামন আবিষ্কার করেন।
তিনি তার নাম দেন সাইরিয়াস-বি (sirius B)। তিনি হিসেব করে দেখিয়েছেন এই শ্বেত বামনের আকার
পৃথিবীর সমান হলেও এর ভর প্রায় সূর্যের ভরের সমান।
আমাদের
সূর্য শ্বেত বামনে পরিণত হবার পর আস্তে আস্তে
অনেক বছর পরে ঠান্ডা হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন এটা বড় কালো কয়লার পিন্ডে পরিণত হয়ে
মহাশূন্যে ভাসতে থাকবে। এগুলোকে কালো বামনও বলা হয়। আগের পৃষ্ঠার ছবিতে সূর্যের
ভবিষ্যৎ পরিণতি দেখানো হয়েছে।
নতুন সুর্য
সূর্য যখন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন তার ধ্বংসাবশেষগুলো একটা নতুন নেবুলার জন্ম
দেবে। সেই নেবুলা থেকে আবার আস্তে আস্তে কোটি কোটি বছর ধরে তৈরি হবে আরেকটি নতুন
সূর্য।
তথ্যসূত্র
1. John
N. Bahcall, How the Sun Shines, Beam Line Winter 2011.
2. Isaac Asimov, The Sun, Collins
Publishers Australia 1988.
3. Carmel Reilly, Sky Watching
The Sun, Macmillan Library 2011
4. Wonders of the Sun, Student
Guide, NEED National Energy Education Development Project, 2012 (www.NEED.org).
5. How the Sun Shines, Nobel e-Museum, http://www.nobel.se/, June
2000.
6. The Sun, UV, and You: A Guide
to SunWise Behavior, United States Environmental Protection Agency, 2006
(www.epa.gov/sunwise).
7. Ginger Butcher, Mysteries of
the Sun, National Aeronautics and Space Administration (NASA), 2013.
8. Peter
Riley, Light and Colour, Franklin Watts, London, 1998.
9. Hugh
D. Young, Roger A. Freedman, University Physics with Modern Physics, 13th
Edition, Addison-Wesley, Boston, 2012.
আজ এইমাত্র এ বই পড়ে শেষ করলাম। বেশ ভাল লেগেছে পড়ে। অনেক ধন্যবাদ স্যার, এতো সহজে সব গুলো বিষয় সুন্দর করে লেখার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা এবং অনেক অনেক ভালবাসা।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ আজাদ।
Delete