পৃথিবীর গঠন
১৮৬৪ সালে লেখা জুলভার্নের "জার্নি টু দ্য
সেন্টার অব আর্থ" বইতে আছে পৃথিবীর কেন্দ্রে জীবন্ত ডায়নোসর পাওয়া যায়।
জুলভার্ন যদি বইটা আজ লিখতেন তাহলে পৃথিবীর কেন্দ্রে ডায়নোসরের কথা লিখতে পারতেন
না। কারণ আজ আমরা জানি পৃথিবীর কেন্দ্রে কী আছে, এবং আমরা এটাও জানি ডায়নোসররা
পৃথিবীর পিঠ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি অজানা বিজ্ঞানকে জানা বিজ্ঞানের
ভিত্তিতে কল্পনা করে নিতে পারে, কিন্তু জানা বিজ্ঞানকে বদলে দিতে পারে না।
পৃথিবীর
ভেতরে কী আছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন কীরকম তা জানার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হতে পারতো
গর্ত খুঁড়ে পৃথিবীর ভেতরের দিকে চলে যাওয়া। এই পৃথিবীর সাত শো কোটি মানুষ পৃথিবীর
উপরের স্তরে ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করে। পৃথিবীর উপরে আকাশের দিকে এক শ' তলা উঁচু
দালান বানায়। কিন্তু পৃথিবীর ভেতরের দিকে ঢুকে বসতি গড়ে না কেন? সম্ভব হলে তা কি
করতো না ভেবেছো? মানুষ চেষ্টা করে না এমন কোন জিনিস নেই। মানুষ পৃথিবীকে খুঁড়তে
শুরু করেছে অনেক বছর আগে থেকে। যখন থেকে মানুষের মাথায় বুদ্ধি এসেছে, হাতে
প্রযুক্তি এসেছে তখন থেকেই মানুষ চেষ্টা করে চলেছে।
মানুষ
মাটির গভীরে খনি আবিষ্কার করেছে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে। তেল গ্যাস কয়লা সোনা হীরা তামা
লোহা ইত্যাদি তুলে আনছে পৃথিবীর ভেতর থেকে। আর নলকূপের পানি তো আমরা প্রতিদিন ব্যবহার
করছি। কিন্তু তার গভীরতা আর কতটুকু? একটা গভীর নলকূপের গভীরতা এক শ' দুই শ'
মিটারের বেশি নয়। তেল-গ্যাস তোলার জন্য যে গর্ত খোঁড়া হয় তার গভীরতা এখনো পর্যন্ত
সর্বোচ্চ সাত থেকে আট কিলোমিটার। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ব্যাস ১২,৭৫৬ কিলোমিটার। অর্থাৎ
পৃথিবীর কেন্দ্রে যেতে হলে মানুষকে কমপক্ষে ছয় হাজার কিলোমিটার গভীরে যেতে হবে।
যদি যাওয়া সম্ভব হতো - মানুষ পৃথিবীর এক পিঠ থেকে অন্য পিঠে সুড়ঙ্গ তৈরি করে
ফেলতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষ সর্বোচ্চ যে গভীরতা পর্যন্ত যেতে পারে তা হলো মাত্র
১২ কিলোমিটার।
তা
হলে পৃথিবীর ভেতরে কী আছে তা জানার উপায় কী? উপায় হলো বিজ্ঞান। যেভাবে সূর্যে
সশরীরে উপস্থিত না হয়েও আমরা সূর্য সম্পর্কে জানি অনেকটা সেভাবে। পড়ে গিয়ে হাড়ে
ব্যথা পেলে কোথাও ভেঙে গেছে কিনা দেখার জন্য নিশ্চয় শরীরের ভেতরটা খুলে দেখতে হয়
না - এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করেই দেখা যায় - সেরকম পৃথিবীটাকেও স্ক্যান করে
ফেললেই দেখা যায় ভেতরে কী কী আছে। কিন্তু পৃথিবীকে স্ক্যান করবো কীভাবে? পৃথিবীতো
আর একটা ক্রিকেট বল নয় যে পকেটে করে নিয়ে গিয়ে এক্স-রে মেশিনের সামনে রেখে দেবো।
বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে ভাবছিলেন কীভাবে করা যায়। কিন্তু প্রকৃতিতেই আছে পৃথিবীর
স্ক্যানার। আর স্ক্যানিংটাও প্রকৃতিই করে দেয়। কীভাবে? ভূমিকম্পের মাধ্যমে।
পৃথিবীতে
প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূমিকম্প হলে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা
কাজে লাগিয়ে জানা যেতে পারে পৃথিবীর ভেতরে কী হচ্ছে। ভূ-তরঙ্গের গতি কঠিন এবং ঘন
পাথরের মধ্যে বেশি, তরল ও হালকা পদার্থের মধ্যে কম। মানুষ ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট
তরঙ্গের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জেনে গেছেন পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন এবং তার
বিভিন্ন স্তরের গতিপ্রকৃতি।
ভূমিকম্প
হলে তিন ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি হয় - (১) সারফেস ওয়েভ বা পৃষ্ঠ-তরঙ্গ, (২) প্রাইমারি
ওয়েভ বা প্রাথমিক তরঙ্গ বা পি ওয়েভ, (৩) সেকেন্ডারি ওয়েভ বা এস ওয়েভ বা এস তরঙ্গ।
এই তরঙ্গগুলো ভূমিকম্পের পর একের পর এক আসতে থাকে।
পি ও এস তরঙ্গ পৃথিবীর ভেতর দিয়ে চলাফেরা করতে পারে, কিন্তু পৃষ্ঠ-তরঙ্গ শুধুমাত্র
পৃথিবীর উপরের তলে চলাচল করতে পারে। পৃষ্ঠ-তরঙ্গ আসতে অনেক সময় নেয় - তাছাড়া
পৃথিবীর ভেতরে ঢুকতে পারে না বলে এই তরঙ্গ থেকে বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। প্রাথমিক
তরঙ্গ বা পি-ওয়েভ পৃথিবীর কেন্দ্রের ভেতর দিয়ে সোজা চলে যেতে পারে। এই তরঙ্গের গতি
সেকেন্ডে দেড় থেকে ৮ কিলোমিটার অর্থাৎ ঘন্টায় ৫৪০০ থেকে ২৮৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত
হতে পারে। একটা বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এই তরঙ্গ ভূমিকম্প
মাপার কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। এই তরঙ্গ যেদিকে যায় সেদিকের ভূমি কাঁপতে থাকে।
এস-তরঙ্গ পি-তরঙ্গের চেয়ে প্রায় ১.৭ গুণ ধীরে চলে। এই তরঙ্গ তরলের ভেতর দিয়ে যেতে
পারে না। গলিত লাভার ভেতর দিয়েও যেতে পারে না। অর্থাৎ পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট
স্তরের ভেতরই এদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ। এস-তরঙ্গ যেদিকে যায় ভূমি তার আড়াআড়ি কাঁপতে
থাকে।
পৃথিবীর ভেতরের স্তরগুলো
পৃথিবীর আকার কীরকম বর্ণনা করার সময় আমরা অনেক সময়
বলে থাকি এটা কমলালেবুর মতো - গোলাকার তবে উপর ও নিচে একটু চাপা। ব্যাপারটা আসলে
সত্যি। তবে পৃথিবীর ভেতরটা মোটেও কমলালেবুর মতো নয়। পৃথিবীর ভেতরের স্তরগুলোর সাথে
সবচেয়ে বেশি মিলে যায় আমের। আকৃতিতে নয়, ভেতরের স্তরের গঠনে। একটা আমকে মাঝবরাবর
আঁটিশুদ্ধ কাটলে বাইরের খোসা থেকে ভেতরের আঁটি পর্যন্ত যতগুলো স্তর পাওয়া যায়,
পৃথিবীর ভেতরেও ঠিক ততটা স্তর আছে এবং প্রত্যেকটা স্তরের তুলনামূলক পুরুত্ব এবং
ঘনত্ব আমের স্তরগুলোর তুলনামূলক পুরুত্ব ও ঘনত্বের সাথে মিলে যায়।
আমের ভেতর মোট চারটি স্তর। বাইরের খুব পাতলা খোসা,
তার ভেতরের স্তরে পুরু শাঁস, শাঁসের ভেতরের স্তরে পুরু বীজের খোসা, তারপর একেবারে
ভেতরে বেশ বড় বীজ। পৃথিবীরও মোট চারটি গাঠনিক স্তর। বাইরে খুব পাতলা ভূ-ত্বক বা
ক্রাস্ট (crust), তার ভেতরে সবচেয়ে পুরু স্তর শাঁস বা ম্যাণ্টল (mantle),
তার ভেতরে বহিঃকেন্দ্র বা আউটার কোর (outer
core), এবং সবচেয়ে ভেতরে
অন্তঃকেন্দ্র বা ইনার কোর (inner core)।
ক্রাস্ট
পৃথিবীর সবচেয়ে বাইরের স্তর হলো ভূ-ত্বক বা
ক্রাস্ট। সিলিকেট[1] জাতীয় পাথরের শক্ত আবরণ এই স্তর। আমরা এই স্তরের
উপরেই থাকি এবং এখানেই আমাদের ঘরবাড়ি সবকিছু। এই স্তরেই আছে পাহাড়-পর্বত-সাগর-মহাসাগর।
পৃথিবীর ব্যাসার্ধের তুলনায় এই স্তরের পুরুত্ব নগণ্য। পৃথিবীর তুলনায় নগণ্য হলেও
এর পুরুত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মানুষ এই স্তরের নিচে এখনো যেতে
পারেনি।
দুই
ধরনের ক্রাস্ট আছে - কন্টিনেন্টাল ক্রাস্ট বা মহাদেশীয় ভূ-ত্বক এবং ওসেনিক
ক্রাস্ট বা মহাসাগরীয় ভূ-ত্বক। মহাদেশগুলোর ভূ-ত্বক ৭০-৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত
পুরু হতে পারে। কিন্তু মহাসাগরের নিচে যে ভূ-ত্বক আছে তার পুরুত্ব ৭-৮ কিলোমিটারের
বেশি নয়। ভূত্বকের উপাদানের শতকরা ৪৭ ভাগ অক্সিজেন আর ২৮ ভাগ সিলিকন। ভূত্বকের
আয়তন পৃথিবীর মোট আয়তনের শতকরা এক ভাগেরও কম, আর এর ভর পৃথিবীর মোট ভরের দুইশ'
ভাগের এক ভাগ।
ম্যান্টল
পাতলা ক্রাস্টের নিচের স্তর ম্যান্টল। সবচেয়ে পুরু
এই স্তর। এর পুরুত্ব ভূপৃষ্ঠের ৭০-৮০ কিলোমিটার নিচ থেকে শুরু করে ২৯০০ কিলোমিটার
গভীরে পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আয়তন দখল করে আছে। পৃথিবীর
মোট আয়তনের শতকরা ৮৪ ভাগ আর মোট ভরের তিন ভাগের দুইভাগ ম্যান্টলের দখলে।
ম্যান্টল-স্তরকে
তিনটি উপস্তরে ভাগ করা হয় - উপরের ম্যান্টল, নিচের ম্যান্টল, আর
তাদের মাঝখানের ট্রানজিশান অঞ্চল।
উপরের
ম্যান্টলের তাপমাত্রা ৫০০ থেকে ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নিচের ম্যান্টলের নিচের
দিকে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সাড়ে চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
তাপমাত্রা এত বেশি হওয়া সত্বেও এই স্তরে যে বিশাল আকৃতির পাথর রয়েছে তা গলে গিয়ে
তরল হয়ে যায়নি - কারণ এখানের
চাপ অনেক বেশি। নিচের ম্যান্টলের চাপ ১২৫ বিলিয়ন বা ১২৫০০ কোটি প্যাসকেল
পর্যন্ত হতে পারে। (এক বর্গ মিটার জায়গায় এক নিউটন বল যে চাপ দেবে তার পরিমাণ এক
প্যাসকেল)। চাপ বেশি হলে গলনাঙ্ক বেড়ে যায়। প্রচুর তাপ এখানে। এই তাপ নিচের
ম্যান্টল থেকে উপরের ম্যান্টলের দিকে চলে যায় ট্রানজিশান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে। নিচের
ম্যান্টলের পাথর যেমন আস্তে আস্তে উপরের ম্যান্টলে চলে আসে, আবার উপর থেকে নিচের
দিকেও চলে যায়। পাথরের এরকম চলাচলের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন হয় ম্যান্টলে। ম্যান্টলে যে
পাথরগুলো আছে - ধারণা করা হয় যে সেই পাথরের ভেতর প্রচুর পানি আছে - সেগুলোর মোট
পরিমাণ বর্তমান পৃথিবীতে যত পানি আছে তার চেয়েও বেশি হতে পারে।
আপার
ম্যান্টল বা উপরের ম্যান্টলের গঠন ও কাজকর্ম বোঝার সুবিধার্থে এটাকে আরো দুটো
উপস্তরে ভাগ করা হয়েছে। লিথোস্ফিয়ার (lithosphere[2]) ও অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার (asthenosphere[3])।
লিথোস্ফিয়ার
লিথোস্ফিয়ার মানে পাথরের গোলক। ক্রাস্ট ও উপরের
ম্যান্টলের শক্ত পাথুরে অংশ নিয়ে লিথোস্ফিয়ার গঠিত। এই স্তরের পুরুত্ব ১০০
কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাহাড়-পর্বতের নিচে এই স্তরের পুরুত্ব বেড়ে একশ বিশ
কিলোমিটার পর্যন্ত হলেও সাগর-মহাসাগরের নিচে এই স্তরের পুরুত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার।
পৃথিবীর ক্রাস্ট বা ভূ-ত্বকের নিচে লিথোস্ফিয়ারকে একটি শক্ত পাথরের খোল বলা যায় -
যার ভেতরে আছে আমাদের পুরো পৃথিবীটা।
লিথোস্ফিয়ার
বিশ থেকে বাইশটা বিশাল বিশাল পাথরের প্লেট দিয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে টেকটোনিক
প্লেট (tectonic plates) বলে। মহাদেশীয় টেকটনিক প্লেটের ওপর বসে আছে
মহাদেশগুলো। মহাসাগরগুলোর নিচে আছে মহাসাগরীয় প্লেট। এই টেকটোনিক প্লেটের
নড়াচড়াতেই ভূমিকম্প হয়। কীভাবে হয় তা একটু পরে বলছি।
লিথোস্ফিয়ারে
তাপমাত্রা অনেক বেশি। উপরের দিক থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে প্রতি কিলোমিটারে প্রায়
৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। লিথোস্ফিরের একেবারে নিচের স্তরের তাপমাত্রা ১৩০০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার
লিথোস্ফিরের নিচের নমনীয় উত্তপ্ত স্তরের নাম
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার। মহাসাগরের নিচে এর পুরুত্ব মহাদেশের নিচের পুরুত্বের চেয়ে
বেশি। প্রচন্ড তাপের ফলে এখানের পাথরগুলো নমনীয় অবস্থায় থাকে।
বহিঃকেন্দ্র বা আউটার কোর
ম্যান্টলের নিচের স্তর হলো পৃথিবীর কেন্দ্রের
শুরু। কেন্দ্রের তুলনামূলকভাবে নমনীয় অংশকে বহিঃকেন্দ্র বলা হয়। বহিঃকেন্দ্রের
পুরুত্ব প্রায় ২২০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর উপর থেকে ২৯০০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকলে
বহিঃকেন্দ্রের নাগাল পাওয়া যাবে। সেখান থেকে শুরু হয়ে ৫১০০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত
বহিঃকেন্দ্রের সীমানা ধরা যায়। এখানের তাপমাত্রা ২২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫০০০
ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। চাপ ১২৫ থেকে ৩৩০ বিলিয়ন প্যাসকেল পর্যন্ত হতে
পারে। এখানে সব ভারী পদার্থ - লোহা, নিকেল ইত্যাদি গলিত অবস্থায় আছে। এই
পদার্থগুলো এত ঘন এবং ভারী যে এখানে প্রতি ঘন মিটার পদার্থের ভর হবে ১০ থেকে ১২
টন। (প্রতি ঘন মিটার পানির ভর মাত্র ১ টন।)
পৃথিবী
নিজের অক্ষের ওপর প্রচন্ড বেগে ঘুরছে - তার ফলে এই বহিঃকেন্দ্রে যে উত্তপ্ত তরল
ভারী ধাতু আছে তাতে একটা ধাতব স্রোত তৈরি হয়েছে। ফলে পৃথিবীর কেন্দ্রে তৈরি হয়েছে
চৌম্বকক্ষেত্র। এই চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে পৃথিবী একটা বিরাট আকারের চুম্বকে পরিণত
হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বকত্বের কারণে আমরা রক্ষা পাচ্ছি মহাজাগতিক তেজষ্ক্রিয়তা থেকে।
একটু পরে বিস্তারিত বলবো এ প্রসঙ্গে।
অন্তঃকেন্দ্র বা ইনার কোর
পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রে বসে আছে একটা বিশাল
আকৃতির লোহার গোলক। যার ব্যাসার্ধ প্রায় ১২৭৮ কিলোমিটার। ভূ-গর্ভের ৫১০০ কিলোমিটার
থেকে ৬৩৭৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পৃথিবীর অন্তঃকেন্দ্র। এখানের তাপমাত্রা ৫৫০০ ডিগ্রি
সেলসিয়াস যা প্রায় সূর্যের পিঠের তাপমাত্রার সমান। এই তাপে লোহা গলে যাবার কথা।
কিন্তু এখানের চাপ প্রায় ৩৬৪ বিলিয়ন প্যাসকেল। এত চাপের ফলে লোহার গলনাঙ্ক বেড়ে
গেছে অনেক। ফলে লোহার পিন্ডটি কঠিন অবস্থায় আছে - যার আয়তন প্রায় চাঁদের আয়তনের
সমান। এই পিন্ডের প্রতি ঘন কিলোমিটারের ভর প্রায় ১৩ টন।
No comments:
Post a Comment