পৃথিবীর শৈশব
জন্মের
প্রথম বিশ থেকে পঞ্চাশ কোটি বছর পর্যন্ত পৃথিবী ছিল প্রচন্ড গরম আগুনের গোলার মতো।
অনবরত ধ্বংসযজ্ঞ চলছিলো নতুন পৃথিবীতে। বিরাট বিরাট গ্রহাণু আছড়ে পড়ছিলো তার পিঠের
ওপর, ধুমকেতু করছিলো আগুনের গোলাবর্ষণ। আবহাওয়া বলতে কোনকিছুই ছিল না পৃথিবীর।
পুরো গোলকটি ছিল উত্তপ্ত নরম থলথলে। সূর্যের তাপ তখন ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। দূরত্বের
কারণে সূর্যের তাপ সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে বুধ, তারপর শুক্র, এবং তারপর পৃথিবী।
উত্তপ্ত পৃথিবী আস্তে আস্তে কিছুটা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। ফলে বাইরের আবরণ আস্তে
আস্তে শক্ত হচ্ছে। পৃথিবী যতই ঠান্ডা হচ্ছিলো ভেতরের গ্যাস এবং হালকা পদার্থগুলো
উপরের দিকে ভেসে উঠছিলো আর ভারী লোহা-সমৃদ্ধ খনিজ পদার্থগুলো কেন্দ্রের দিকে চলে
যাচ্ছিলো মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে। প্রচন্ড বেগে
নিজের অক্ষের ওপর এবং সাথে সাথে সূর্যের চারদিকের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী গোল
হচ্ছিলো। কিন্তু একই সাথে তার পিঠের উপর চলছিলো গ্রহাণুর ঝড়। আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণে গোলকের ভেতর থেকে বেরিয়ে
আসছিলো উত্তপ্ত গ্যাস ও গলিত লাভা। হাইড্রোজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড, সালফার
ইত্যাদিতে ভরে উঠতে শুরু করলো পৃথিবীর উপরিতল। মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে এই গ্যাসগুলি
পৃথিবীর চারপাশে একটা হালকা বায়বীয় আবরণ তৈরি করতে শুরু করলো।
চাঁদের জন্ম
পৃথিবীর
বয়স যখন দশ কোটি বছর তখনো পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক সংঘর্ষ চলছিলো। বিশাল আকৃতির
গ্রহাণু আছড়ে পড়ছিলো পৃথিবীর ওপর। এসময় পৃথিবীর দিকে প্রচন্ড গতিতে ধেয়ে এলো বিশাল
আকৃতির একটা পাথর। পরে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন থেইয়া (Theia)। থেইয়ার আকার ও আয়তন মঙ্গল গ্রহের সমান। থেইয়ার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে
পৃথিবীর একপাশ থেকে বিরাট একটা অংশ ভেঙে গেলো, থেইয়া গেলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে।
সংঘর্ষের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হলো তাতে এতদিন ধরে পৃথিবীর যে বায়বীয় আবরণ তৈরি
হচ্ছিলো তা একেবারে বাষ্প হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। পৃথিবীর ঘূর্ণন কিন্তু থামেনি
একটুও। থেইয়ার ধ্বংসাবশেষ আর পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়া অংশগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবে
মিশে গিয়ে একটা পিন্ডে পরিণত হয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে শুরু করলো। এই গোলাকার পিন্ডটিই
হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ - চাঁদ। সৌরজগতে যত চাঁদ আছে পৃথিবীর চাঁদ তাদের মধ্যে
সবচেয়ে বড় এবং ভারী।
পরবর্তী চারশ' চল্লিশ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে চলেছে চাঁদ।
পৃথিবীর অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে চাঁদেরও অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু
চাঁদের পরিবর্তনে পৃথিবীর মতো এত বৈচিত্র্য দেখা যায়নি কখনো। চাঁদের পিঠেও আছড়ে
পড়েছে অনেক গ্রহাণু। চাঁদ ক্রমশ ঠান্ডা হতে হতে কঠিন হয়েছে। চাঁদের গায়েও তৈরি
হয়েছে পাহাড় আর উপত্যকা। চাঁদের উপর আছড়ে পড়ে বড় বড় গ্রহাণুগুলো গভীর গর্ত সৃষ্টি
করেছে। চাঁদের পিঠ পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি অসমতল।
কিন্তু চাঁদের কোন বায়ুমন্ডল নেই। খুব সামান্য পরিমাণে হিলিয়াম, নিয়ন,
হাইড্রোজেন আর আর্গনের অস্তিত্ব আছে চাঁদে। কিন্তু হাইড্রোজেন ছাড়া বাকিরা সবাই
নিষ্ক্রিয় গ্যাস - ফলে চাঁদে কোন বায়ুমন্ডল গড়ে ওঠেনি।
চাঁদ একটি ঠান্ডা
উপগ্রহ। দিনের বেলায় চাঁদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠলেও
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গড় তাপমাত্রা মাইনাস
২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পৃথিবীর ওপর চাঁদের
প্রভাব আছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীতে
জোয়ার-ভাটা হয়, চাঁদের কারণে সূর্যগ্রহণ হয়। মানুষ চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে ১৯৬৯
সালে, এবং চাঁদের মাটি ও পাথর নিয়ে এসেছে পৃথিবীতে। চাঁদের মাটি ও পাথর বিশ্লেষণ
করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন।
চাঁদ সম্পর্কে আমরা
বিস্তারিত জানবো অন্য কোনদিন। এখন পৃথিবীর আলোচনায় ফিরে আসি।
স্যার চাঁদের সর্বনিম্ব তাপমাত্রা যদি মাইনাস ২৩০ ডিগ্রী অপেক্ষা আরো কম মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রী হতো, তাহলে চাঁদের পরিণতি কি হতো?
ReplyDeleteমাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো পরম শূন্য তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রায় আসলে পৌঁছানো অসম্ভব, কারণ তাতে বস্তু বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবনে চলে যাবে।
Delete