ডায়নোসর কেন বিলুপ্ত হলো
পৃথিবীর
জন্মের পর থেকে অনেকবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে হঠাৎ হঠাৎ।
প্রাণ-বিলুপ্তির সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে প্যালেওজোইক যুগে আজ থেকে প্রায় ২৬ কোটি
বছর আগে। পৃথিবীর মোট প্রাণী ও উদ্ভিদের শতকরা ৯০ ভাগ মারা যায় মাত্র ষাট হাজার
বছর সময়ের মধ্যে। পরবর্তী বিশ কোটি বছরে পৃথিবীতে আবার প্রাণের বিস্তার হয়েছে নতুন
উদ্যমে। নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু মেসোজোইক যুগের
শেষে আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে আবার এক প্রাণ-বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে যেখানে
ডায়নোসর সহ মোট প্রজাতির শতকরা ৮৫ ভাগ বিলীন হয়ে যায়।
যদিও ঠিক কী কারণে তারা সব মরে গেছে
বলা যায় না, তবে বেশ কয়েকটা গ্রহণযোগ্য কারণ অনুমান করা যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তন,
রোগ, গাছপালা মরে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি। সাম্প্রতিক তত্ত্ব অনুসারে
বিশাল এক গ্রহাণু পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত করে (মেক্সিকোর উপকুলে)। এই বিশাল বিস্ফোরণে
ভূপৃষ্ঠ ধ্বংস হয়ে এত বেশি ধুলা হয়েছিল যে সূর্যের আলো আসতে পারেনি অনেকদিন। ফলে
চেইন রি-অ্যাকশান। সূর্যালোক না পেয়ে গাছপালা সব মরে যায়। গাছ না থাকার ফলে সব
তৃণভোজী ডায়নোসর খেতে না পেয়ে মরে যায়। তৃণভোজীরা মারা যাবার পর মাংসভোজীরা মারা
যায় খেতে না পেয়ে। গ্রহণযোগ্য মনে হলেও একটা সমস্যা থেকে যায় এই সূত্রে। পৃথিবীতে
যে সময়কালে গ্রহাণু আঘাত হেনেছিল - সেই সময়কালের কোন ডায়নোসরের কঙ্কাল এখনো পাওয়া
যায়নি। যেগুলো পাওয়া গেছে সবই সেই সময়কালের আগের।
বিজ্ঞানীরা আরেকটা
গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব দিলেন। সেটা হলো সেই সময় সাইবেরিয়াতে প্রচন্ড আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ
হয়েছিল। বিশাল লাভার স্রোত ও বিষাক্ত গ্যাসে সব প্রাণী ও উদ্ভিদ মারা যায়।
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে এখনো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী মারা যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন
জায়গায়। শুধু গ্রহাণুর আঘাত বা আগ্নেয়গিরির লাভার স্রোত নয়, ঠান্ডায় জমে গিয়েও
বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রজাতি। প্রাচীন পাথরের রাসায়নিক বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীরা
জানতে পেরেছেন যে ৪৫ কোটি বছর আগে একটা ভয়ানক বরফ যুগে প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ
সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যু হয়েছিল।
No comments:
Post a Comment