পৃথিবীর ভবিষ্যৎ
পৃথিবীতে
মানুষের বাস প্রায় দুই লক্ষ বছর আগে থেকে। প্রাণের উদ্ভব হয়েছে এই পৃথিবীতে প্রায়
৩৫০ কোটি বছর আগে। পৃথিবীর বয়স হলো প্রায় সাড়ে চারশ' কোটি বছর। ২০১৫ সালে পৃথিবীর
জনসংখ্যা সাত শ' কোটির বেশি। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে নয় শ' থেকে
এক হাজার কোটিতে। এই জনসংখ্যার বেশিরভাগ বাস করবে উন্নয়নশীল দেশে। তাদের সবার জন্য
খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার জোগান দিতে অনেক কষ্ট
করতে হবে পৃথিবীর মানুষের।
পৃথিবী খুবই গতিশীল একটি গ্রহ। খুবই
সক্রিয় আর চঞ্চল গ্রহ। প্রচন্ড গতির পাশাপাশি এখানে চলছে আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ,
মহাদেশ দু'ভাগ হয়ে যাচ্ছে, সমুদ্র মরে যাচ্ছে, আবার জেগে উঠছে পর্বত-মালা। ভবিষ্যতে
পৃথিবীর আরো অনেক রকম পরিবর্তন হতে পারে।
আগামী ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ বছর পরে
পৃথিবী ভয়াবহ তুষার যুগে প্রবেশ করতে পারে। পৃথিবীর উপরিতল পুরোটাই বরফে ঢেকে
যাবে। তারপর বরফ যুগ কেটে গিয়ে আবার হয়তো জেগে উঠবে পৃথিবী।
৫০ কোটি বছর পর পৃথিবীর বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পরিমাণ কমতে কমতে একেবারে শেষ হয়ে যেতে পারে। তখন উদ্ভিদের সালোক-সংশ্লেষণ
প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন
অক্সিজেন নির্ভর প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে।
আজ থেকে ২৩০ কোটি বছর পর
পৃথিবীর চুম্বকত্বের পরিমাণ শূন্য হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর বায়মন্ডলের বাইরের
চৌম্বকক্ষেত্র উধাও হয়ে যাবে। তখন সূর্যের তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ সরাসরি পৃথিবীতে চলে
আসবে। পৃথিবী তেজষ্ক্রিয় গোলকে পরিণত হবে। পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তন তখন
সাংঘাতিকভাবে বদলে যাবে। পৃথিবীর প্রাণী হয়তো তেজষ্ক্রিয় বিকিরণে অভ্যস্ত হয়ে
উঠবে।
মহাশূন্যের যেখানে আমাদের পৃথিবী এবং
সৌরজগৎ অবস্থিত সেটা খুব একটা নিরাপদ জায়গা নয়। সেখানে পুরনো বিশাল নক্ষত্র বড় হতে
হতে সুপারনোভা হয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে। সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় পৃথিবীর
বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীতে মহাজাগতিক বিকিরণ
এসে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে পৃথিবীর প্রাণের অস্তিত্ব।
এত কিছু সম্ভাবনার মধ্যে কোনটা হতে
পারে আবার কোনটা নাও হতে পারে। কিন্তু যেটা অবধারিত তা হল সূর্যের মৃত্যু। সূর্যের
হাইড্রোজেন একদিন শেষ হয়ে যাবে। মরে গিয়ে সূর্য রেড জায়ান্ট[1]
বা লাল দৈত্যে পরিণত হবে। এটা কিন্তু ঠাকুরমার ঝুলির কাল্পনিক দৈত্য নয়। এটা
মহাকাশের বাস্তব দৈত্য। তারপর কয়েক হাজার বছরের মধ্যে সেই লাল দৈত্য পৃথিবীকে
গ্রাস করে ফেলবে।
এসব ঘটবে আরো প্রায় পাচ শ' কোটি বছর
পর। তবে আমাদের এখনই সেটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা
অনেক। ততদিনে মানুষ হয়তো পৃথিবীর চেয়েও নিরাপদ কোন গ্রহ আবিষ্কার করে সেখানে বসবাস
করতে শুরু করবে। মানুষ তখন সত্যিকার অর্থেই ইউনিভার্সাল হয়ে উঠবে। হয়ে উঠবে
বিশ্ব-নাগরিক থেকে মহাবিশ্ব-নাগরিক।
তথ্যসূত্র
1. Isaac
Asimov, Our Planet Earth, Gareth Stevens Publishing, Wisconsin, USA, 1995.
2. Chris Cooper, Pam Spence, Carole Stott, Stars + Planets an illustrated
guide, Star Fire, London, 2007.
3. Stuart
Malin, Story of the Earth, Eagle Books, London, 1991.
4. John
Gribbin, Planet Earth a Beginner's Guide, OneWorld, Oxford, 2012.
5. Martin
Redfern, The Kingfisher Book of Planet Earth, Kingfisher, London, 2001.
6. Gerard
Cheshire, The Solar System and Beyond, Evans, London, 2006.
7. Giles
Sparrow, Planets and Moons, Hinkler Books, Australia, 2006.
8. Dr
Brian Knapp, Spaceship Earth, Atlantic-Europe Publishing, 2004.
9. Cally
Hall and Scarlett O'Hara, 1001 Facts About Planet Earth, Dorling Kindersley,
London, 2003.
10. John
Farndon, Planet Earth, Anness Publishing Ltd, Leicestershire, 2013.
11. Steve
Parker, Solar System, Ticktock Media Ltd, Great Britain, 2006.
12. Colin
Ronan, The Universe Explained, Ken Fin Books, Australia, 1997.
13. Susanna
van Rose, Eyewitness Earth, DK Publishing, USA, 2005.
14. Heather
Couper and Nigel Henbest, Encyclopedia of Space, DK Publishing, UK, 2003.
[1] নক্ষত্রের সব হাইড্রোজেন যখন শেষ হয়ে যায় তখন তার
নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নক্ষত্রটি তখন আয়তনে অনেক বড় হয়ে যায়। জ্বালানি
শেষ হয়ে যাবার ফলে তাদের তাপমাত্রা কমতে কমতে নক্ষত্রটি লাল রঙ ধারণ করে। এই
মৃতপ্রায় বিশাল আকৃতির নক্ষত্রকে রেড জায়ান্ট বা লাল দৈত্য বলা হয়।
এইমাত্র পড়ে শেষ করলাম। খুব ভাল লেগেছে এই বই টা, পুরো solar system নিয়ে এভাবে সিরিজ আকারে বই প্রকাশ করার পর, আমাদের উচিত আমাদের solar system টা কেন এমন আছে, কেনই বা কক্ষপথে ঘুরছে এসবের ব্যাখা দেওয়া নিউটনের চিরায়ত বলবিদ্যা দিয়ে এবং যখন চিরায়ত বলবিদ্যা আমাদের বেশ আয়ত্তে এসে যাবে তারপর আমাদের উচিত আকর্ষন শব্দটা কে উরিয়ে দিয়ে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার দিয়ে ধীরে ধীরে স্পেস এবং টাইম দিয়ে ব্যাখা করা। এটা আমার ধারণার কথা বললাম,আপনি লেখক এবং পদার্থ বিজ্ঞানী কোনটার পর কোনটা ব্যাখা করতে হবে সেটা আপনি আমার থেকে ভাল বলতে পারবেন। অনেক অনেক শুভকামনা। এবার পরের বই পড়া শুরু করবো।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ আজাদ। এই বইগুলি আসলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে লেখা। তবে পুরোপুরি ব্যাখ্যার জন্য অবশ্যই স্পেস-টাইম আসতেই হবে। সেজন্য কোনো বইই কোন বিষয়ের শেষ বই নয়।
Delete