পৃথিবীর রাসায়নিক উপাদান
পৃথিবীর ভেতরে এবং বায়ুমন্ডলে প্রায় আশি রকমের
রাসায়নিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। তবে পৃথিবীর মোট রাসায়নিক উপাদানের বেশির ভাগ
হলো - লোহা, অক্সিজেন, সিলিকন ও ম্যাগনেশিয়াম। ক্রাস্টের বেশিরভাগ হলো অক্সিজেন ও
সিলিকন। তবে সামান্য পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
সোডিয়াম, পটাশিয়াম, টাইটানিয়াম সহ প্রায় ৬৪ রকম মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া
গেছে ক্রাস্টে।
উপরের ম্যান্টলে বেশির ভাগ লোহা ও ম্যাগনেসিয়াম
সিলিকেট। নিচের ম্যান্টলে আছে সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম সালফাইড ও অক্সাইড। কেন্দ্রের
প্রায় পুরোটাই হলো লোহার তৈরি। সাথে অবশ্য সামান্য নিকেলও আছে। তাছাড়া খুবই
সামান্য পরিমাণে সালফার, কার্বন, অক্সিজেন ও পটাশিয়াম আছে বলেও ধারণা করা হয়।
পৃথিবীর মৌলিক পদার্থগুলো পরস্পরের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন যৌগিক পদার্থে
পরিণত হয়ে মিলেমিশে আছে পৃথিবীর ক্রাস্ট ও ম্যান্টেলে।
পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক
সূর্যের আলো পৃথিবীপৃষ্ঠে আসার সময় বায়ুমন্ডলের
অনেকগুলো স্তরের ভেতর দিয়ে আসতে হয় বলে বেশ পরিশ্রুত হয়ে আসে। সূর্যের আলোর
তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের অংশটুকুকে পৃথিবীতে ঢুকতে দেয় না পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র।
বায়ুমন্ডলের শেষ সীমায় ম্যাগনেটোস্ফিয়ার না থাকলে সূর্যের তেজষ্ক্রিয় বিকিরণে আমরা
ঝলসে যেতাম। পৃথিবীকে একটা বিরাট আকারের চুম্বক বলা যায়। একটা কম্পাসের কাঁটা সব
সময় উত্তর-দক্ষিণ মুখ করে থাকে তা আমরা দেখেছি। এর কারণ হচ্ছে পৃথিবীর দুই মেরুর
সাথে চুম্বকের মেরুর সাদৃশ্য আছে।
পৃথিবীর
একেবারে কেন্দ্রে বা অন্তঃকেন্দ্রে আছে প্রায় চাঁদের সমান আয়তনের একটা বিশাল লোহার
গোলক। এটার তাপমাত্রা প্রায় ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এত তাপে কোন স্থায়ী চুম্বক তৈরি
হতে পারে না। তাই লোহার বলটা চুম্বক নয়। কিন্তু এই লোহার বলকে ঘিরে রয়েছে আউটার
কোর বা বহিঃকেন্দ্র। সেখানে আছে লোহার তরল (অনেকটা ঘন কাদার মতো)। পৃথিবীর
ঘূর্ণনের ফলে এই তরলেও একটা স্রোত তৈরি হয়েছে - যার ফলে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি
হচ্ছে। বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত হলে তাকে ঘিরে চুম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। পৃথিবীর
কেন্দ্রেও তাই হয়েছে। পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটা বিরাট আকারের চুম্বকে। কিন্তু
যেহেতু বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশ কম, পৃথিবীর চুম্বকক্ষেত্রের
শক্তিও খুব একটা বেশি নয়। পৃথিবীপৃষ্ঠে এর পরিমাণ মাত্র ২৫ থেকে ৬৫ মাইক্রো-টেসলার[1] মতো।
পৃথিবীর
চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তি সর্বোচ্চ সীমায় ওঠার পর আস্তে আস্তে কমতে থাকে তারপর এক সময়
দিক পরিবর্তন করে। তারপর তার চৌম্বকশক্তি আবার ক্রমশ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ এই
দিকপরিবর্তন ঘটেছিল প্রায় সাড়ে সাত লাখ বছর আগে। কেন এটা ঘটে তা এখনো জানা যায়নি।
১৮৩৫ সাল থেকে চৌম্বকক্ষেত্র আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে ১৭০০
বছর পর পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মান শূন্য হয়ে যাবে। তারপর আবার দিক বদলে যাবে এবং
চৌম্বকক্ষেত্রের মান আবার বাড়তে শুরু করবে।
পৃথিবীর ভেতরের
তাপমাত্রা একটু একটু করে কমছে। ফলে কেন্দ্রের ভর ও
আয়তন বাড়ছে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক হাজার টন লোহা যোগ হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রে।
কিন্তু এই সাড়ে চারশ' কোটি বছরে কেন্দ্রে মাত্র চার শতাংশ লোহা যোগ হয়েছে। এই
প্রক্রিয়ায় প্রচুর তাপ বেরিয়ে আসছে অন্তঃকেন্দ্র থেকে এবং চলে যাচ্ছে বাইরের দিকে
যেটা বাইরের কেন্দ্রের তরল লোহার স্রোতকে ঘুরতে সহায়তা করছে এবং চৌম্বকক্ষেত্র
জিইয়ে রাখছে।
সূর্য সবসময় যে আলোর কণা ছড়াচ্ছে তাতে প্রচুর চার্জ আছে। সোলার উইন্ড বা
সৌরঝড়ও পৃথিবীকে ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র একে বাধা দেয়। তবে
মাঝে মাঝে মেরুর দিকে কিছু কিছু চার্জিত কণা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। তখন
চার্জিত কণার সাথে বায়ুমন্ডলের গ্যাসের সংঘর্ষের ফলে আলোর সৃষ্টি হয়। আকাশ তখন
নানা রঙের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। এগুলোকে অরোরা (aurora) বলে। উত্তর মেরু অঞ্চলে এর
নাম অরোরা বোরাইলিস (aurora borealis), এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে এর নাম অরোরা অস্ট্রালিস (aurora australis)।
No comments:
Post a Comment