Monday, 4 November 2019

পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় গ্রহ - পর্ব ১৭


অভিকর্ষজ ত্ব্বরণের পরিবর্তন

পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূ-পৃষ্ঠের দূরত্ব সব জায়গায় সমান নয়। কারণ পৃথিবী একেবারে জ্যামিতিকভাবে গোল নয়। এর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে কেন্দ্র থেকে দূরত্ব সবচেয়ে কম। আবার বিষুব অঞ্চলে কেন্দ্র থেকে পিঠের দিকের দূরত্ব সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর ব্যাস বিষুবরেখা বরাবর ৩৮ কিলোমিটার বেশি মেরুর তুলনায়। এর কারণ হলো পৃথিবীর ভেতরের পদার্থের ভর। যেহেতু পৃথিবী প্রচন্ডবেগে ঘুরছে এবং ঘুরতে ঘুরতে চলছে - পৃথিবীর ভেতর যে বস্তুগুলো আছে  তা একটু বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে।
            পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল বস্তু থেকে কেন্দ্রের দূরত্বের বর্গের বিপরীত অনুপাতিক। সেই হিসেবে পারস্পরিক দূরত্ব বেড়ে গেলে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কমে যায়, আবার দূরত্ব কমে গেলে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বেড়ে যায়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের গড় মান ৯.৮৩২ মিটার/বর্গ-সেকেন্ড এবং বিষুবীয় অঞ্চলে এই মান ৯.৭৮০ মিটার/বর্গ-সেকেন্ড। ভূ-পৃষ্ঠে পাহাড়-পর্বতের কারণেও উচ্চতার তারতম্য ঘটে। ফলে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তিত হয়। ভূগর্ভস্থ বস্তুর ভরের তারতম্যের কারণেও অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বাড়ে-কমে। বস্তুর ভর বাড়লে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বাড়ে, আর কমলে ত্বরণের মান কমে। বর্তমানে পৃথিবীর বাইরে স্থাপিত স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পর্যবেক্ষণ করতে পারে খুব সহজেই। কোথাও পাহাড়-পর্বত ও ভরের কারণে টান বেশি হলে স্যাটেলাইটের গতি বেড়ে যায়। আবার ত্বরণের মান কমে গেলে স্যাটেলাইটের গতি কমে যায়। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভরের পরিবর্তন হলে তা স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে। কিন্তু পৃথিবীর ভরের কি কোন পরিবর্তন ঘটছে?



পৃথিবীর ভরের পরিবর্তন

পৃথিবী একটি গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল গ্রহ। মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। সেগুলোর ভর পৃথিবীর ভরের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তবে বড় গ্রহাণুর চেয়ে সবসময় পৃথিবীতে এসে পড়ছে মহাকাশের ধুলো। বছরে প্রায় চল্লিশ হাজার টন মহাজাগতিক ধুলো এসে পড়ে পৃথিবীর ওপর পৃথিবীর মহাকর্ষণের টানে।
            পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সাথে পৃথিবীর শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শক্তিকে ভরে পরিবর্তন করলে বছরে ১৬০ টন ভর বাড়ছে পৃথিবীর। তাহলে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর ভর বাড়ছে বছরে প্রায় একচল্লিশ হাজার টন। পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভরের কোন তারতম্য ঘটে না কারণ পৃথিবীর উপাদান থেকেই এদের জন্ম হয়।
            তাহলে কি আমরা ধরে নেবো পৃথিবীর ভর বেড়ে যাচ্ছে? না, ঠিক তা নয়। পৃথিবীতে যেমন প্রতি বছর ৪১,০০০ টন ভর জমা হচ্ছে - সেরকম দেখা দরকার কোন ভর পৃথিবী থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে কিনা।
            পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে তাপ শক্তি বেরোচ্ছে প্রতিক্ষণে। এই শক্তিক্ষয়কে ভরে পরিণত করলে যা পাওয়া যায় তার পরিমাণ খুবই কম। বছরে মাত্র ১৬ টন। কিন্তু পৃথিবী থেকে প্রতি বছর ৯৫ হাজার টন হাইড্রোজেন চলে যাচ্ছে মহাকাশে। হিলিয়াম চলে যাচ্ছে বছরে ১৬০০ টন।
            এভাবে পৃথিবীর ভরের জমা-খরচ হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে বছরে প্রায় ৫৫ হাজার টন ভর কমে যাচ্ছে পৃথিবীর। এটা পৃথিবীর মোট ভরের তুলনায় খুবই সামান্য - মাত্র দশ লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ। এটা নিয়ে ভাববার কোন কারণ আছে? মনে হয় নেই, কারণ পৃথিবী এখন তার মধ্যবয়স পার করছে। তার জীবনের শেষার্ধে এই অতি সামান্য ওজন হারানো পৃথিবীর স্বাভাবিক কাজের কোন ক্ষতি করবে না। 


No comments:

Post a Comment

Latest Post

Doesn't Rachi's death make us guilty?

  Afsana Karim Rachi began her university life with a heart full of dreams after passing a rigorous entrance exam. She was a student of the ...

Popular Posts