চাঁদের গঠন
গোলাকার চাঁদের উপরের
স্তরকে চাঁদের ক্রাস্ট (Crust) বলা হয়। শক্ত পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি এই
ক্রাস্টের পুরুত্ব চাঁদের দুই পিঠে দুই রকমের। চাঁদের যে পিঠ আমরা সবসময় দেখি
সেদিকে এই পুরুত্ব ৬৫ কিলোমিটারের মতো। আর যেদিকটা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না,
সেদিকের পুরুত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। চাঁদের ক্রাস্ট সব জায়গায়
সমান নয়। কোন কোন জায়গায় এই আবরণ প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পুরু। আবার কোন কোন
জায়গায় এই আবরণ নেই বললেই চলে। যে মুখ পৃথিবী থেকে দেখা যায় সেদিকে ক্রাস্ট হালকা।
জন্মের সময় এই স্তর নরম ও গরম ছিল। আস্তে আস্তে ঠান্ডা ও শক্ত হয়েছে চারশ চল্লিশ
কোটি বছর ধরে।
চাঁদের একেবারে উপরের স্তরে কয়েক
মিটার পুরু খুবই মিহি ধুলোর আস্তরণ। এগুলোকে চাঁদের মাটি বলা যায়। এই চাঁদের
মাটিকে ইংরেজিতে বলা হয় রেগোলিথ (regolith)। চাঁদের
পিঠে ক্রমাগত আঘাত হেনে চলেছে ছোট বড় গ্রহাণু। সেগুলো সেখানে গুড়ো গুড়ো হয়ে মিহি
পাউডারে পরিণত হয়েছে। চাঁদে যেহেতু কোন বায়ুমন্ডল নেই, তাই এই ধুলোগুলো কখনো উড়ে
না। যেভাবে আছে সেভাবেই রয়ে গেছে শত কোটি বছর।
ক্রাস্টের নিচে প্রায় এক হাজার
কিলোমিটার পর্যন্ত পুরু পাথরের স্তরের নাম ম্যান্টল (Mantle)। এই পাথরগুলো
কঠিন ও তরলের মাঝামাঝি। ম্যান্টলের নিচের দিকের পাথরগুলো এখনো কিছুটা গরম ও আংশিক
তরল। আগ্নেয়গিরির সময় এখান থেকেই লাভার স্রোত বেরিয়ে পড়েছিল ক্রাস্ট ভেদ করে।
চাঁদের যে পিঠ আমরা দেখতে পাই সেদিকেই কালো কালো দাগ বেশি। এই কালো দাগগুলো লাভার
স্রোতে তৈরি সমতল ক্ষেত্র। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে চাঁদের সমুদ্র বা মারিয়া।
এগারোটি ছোট বড় মারিয়া আছে সেদিকে। সেদিকে
ক্রাস্টের পুরুত্ব কম ছিল বলে লাভার স্রোত সেদিকেই বেশি বের হয়েছিল। চাঁদের বিপরীত
পিঠে ক্রাস্টের পুরুত্ব বেশি বলে সেদিকে লাভার স্রোত বেশি বের হতে পারেনি। তাই
সেদিকে কালো দাগ কম। সেদিকে শুধুমাত্র একটি বড় মারিয়া আছে।
চাঁদের গোলকের একেবার কেন্দ্রে ছোট
একটা কোর (Core) বা অন্তকেন্দ্র আছে। তবে সেটা পৃথিবীর কোরের মত অত বড়
নয় এবং তত শক্তও নয়। কোরের ব্যাসার্ধ প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ধরা যায়।
একেবারে ভেতরের শক্ত কোরের ব্যাসার্ধ বা পুরুত্ব ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সেখানে
কোন লোহা নেই বলে মনে হচ্ছে। ফলে চাঁদের কোন চৌম্বকক্ষেত্র নেই।
চাঁদের গোলকের ভেতরে কোন কাজকর্ম নেই।
সক্রিয় কোন আগ্নেয়গিরি নেই। বলা চলে চাঁদ একটি মৃত গোলাকার প্রাচীন পাথরখন্ড। চাঁদের ভূমিকম্প মাপার জন্য যন্ত্রপাতি রেখে দেয়া হয়েছিল
চাঁদের পিঠে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেখানে ভূমিকম্প নেই বললেই চলে।
No comments:
Post a Comment