অ্যাপোলো-১১
মিশন
|
অ্যাপোলো-১১
|
কমান্ডার
|
নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong)
|
কমান্ড মডিউল পাইলট
|
মাইকেল কলিন্স (Michael Collins)
|
লুনার মডিউল পাইলট
|
এডউইন অলড্রিন (Edwin Aldrin)
|
কমান্ড মডিউলের ডাক নাম
|
কলম্বিয়া (Columbia)
|
লুনার মডিউলের ডাক নাম
|
ঈগল (Eagle)
|
উড্ডয়নের তারিখ
|
১৬/০৭/১৯৬৯
|
চাঁদে নামার তারিখ
|
২০/০৭/১৯৬৯
|
প্রত্যাবর্তনের তারিখ
|
২৪/০৭/১৯৬৯
|
মহাকাশে অতিবাহিত সময়
|
৮ দিন ৩ ঘন্টা
|
চাঁদে অবস্থানের সময়
|
২১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট ২০ সেকেন্ড
|
মিশনের লক্ষ্য
|
নিরাপদে নভোচারীদের চাঁদে
নামা এবং সেখানে কিছু সময় থেকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসা।
|
ফলাফল
|
সফল। পৃথিবীর মানুষ
প্রথমবারের মতো চাঁদে পা রাখলো। নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদের বুকে
হাঁটলেন।
|
চাঁদে নামার স্থান
|
সি অব ট্রাংকুইলিটি
|
অ্যাপোলো-১১ এর তিনজন নভোচারী |
অ্যাপোলো-১১
পৃথিবী থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে উড়ে যায় ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। প্রথমবারের মতো
পৃথিবীর মানুষ চাঁদের বুকে হাঁটবে এই কর্মযজ্ঞ শুরু থেকে দেখার জন্য সাধারণ মানুষ
ক্যাম্প তৈরি করে থাকতে শুরু করে উড্ডয়নস্থলে। নাসা এ উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র দেয়।
অ্যাপোলো-১১ এর উড্ডয়ন দেখার জন্য মানুষ ক্যাম্প তৈরি করে অবস্থান নেয় |
স্যাটার্ন-ফাইভ রকেটে অ্যাপোলো-১১ |
লুনার মডিউল যাচ্ছে চাঁদের দিকে |
১৯শে জুলাই রকেট অ্যাপোলো-১১ এর কমান্ড মডিউল কলম্বিয়া ও লুনার মডিউল ঈগলকে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে দিয়ে যথাসময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কমান্ড মডিউল চাঁদের কক্ষপথে ত্রিশ বার প্রদক্ষিণ করে চাঁদে নামার নির্দিষ্ট স্থান দেখে নেয়। ২০ জুলাই লুনার মডিউল ঈগলে চড়ে বসেন নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন। কলম্বিয়ার পাইলট মাইকেল কলিন্স কলম্বিয়ার দায়িত্ব নেন। কলম্বিয়া ও ঈগল যথাসময়ে আলাদা হলো। ঈগলের পাইলট এডউইন অলড্রিন। কলম্বিয়া চাঁদের কক্ষপথে ঈগলের পিছনে পিছনে অনেকদূর গিয়ে নিশ্চিত হয় যে সবকিছু ঠিক আছে।
যথাসময়ে ঈগল চাঁদের কক্ষপথ থেকে
বেরিয়ে চাঁদের দিকে অগ্রসর হলো। লুনার মডিউল ঈগলের নেভিগেশন সিস্টেম পরিচালিত
হচ্ছিলো সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে। তোমরা অবাক হবে
জেনে যে সেই সময় মানে ১৯৬৯ সালে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ কম্পিউটার দেখা তো দূরের
কথা, নামও শোনেনি। লুনার মডিউল ঈগলের যে কম্পিঊটার ছিল তার মেমোরি ছিল মাত্র ৭৪
কিলোবাইট। এখন শিশুদের একটা খেলনা ইলেকট্রনিক্সেও এর চেয়ে বেশি মেমোরি থাকে। সে
যাই হোক, চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার উঁচুতে ঘন্টায় প্রায় ছয় হাজার
কিলোমিটার বেগে উড়ছিলো ঈগল। ঈগলের র্যাডারে তখনো চাঁদের পিঠ দেখা যাচ্ছিলো না।
কারণ ঈগল তখনো পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে উড়ছিলো। যথাসময়ে ঈগল উল্টে গেলো। এবার চাঁদের
পিঠ দেখা গেলো। পৃথিবীতে কন্ট্রোল রুমের সাথে সারাক্ষণ যোগাযোগ আছে। অবশেষে ঈগলের
গতিবেগ আস্তে আস্তে কমতে থাকলো এবং চাঁদের পিঠে নেমে আসতে শুরু করলো।
আর্মস্ট্রং দেখলেন সামনেই একটা বিরাট
পাথর। ওটার গায়ে ধাক্কা লাগলে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে ঈগল। ঈগল চালানোর প্রায়
সব দায়িত্বই তখন পালন করছিলো কম্পিউটার। খুব সামান্য যেটুকু নিয়ন্ত্রণ হাতে ছিল
সেটা প্রয়োগ করে পাথরের ধাক্কা এড়ালেন নীল আর্মস্ট্রং।
অবশেষে ঈগলের ভেতর থেকে হিউস্টনের কন্ট্রোলরুমে
ভেসে এলো দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত বার্তা: Houston,
Tranquility base here. The Eagle has landed.
চাঁদের বুকে অ্যাপোলো-১১ এর লুনার
মডিউল ঈগল নেমেছে দু'জন মানুষ নিয়ে। বদলে গেলো পৃথিবীর ইতিহাস, সাথে সাথে বদলে
গেলো চাঁদেরও ইতিহাস। চাঁদ প্রথমবারের মতো কোন মানুষের স্পর্শ পেলো।
অ্যাপোলো-১১ এর চাঁদে নামার স্থান |
ঈগল
নিরাপদে চাঁদে নামার পর নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন ছয় ঘন্টা ঈগলের ভেতরেই
থাকলেন। বাইরের সবকিছু চেক করে দেখছিলেন। চাঁদে কোন বাতাস নেই। তাই সেখানে
তেজষ্ক্রিয়তা অনেক বেশি। পৃথিবীতে অনেক পুরু বায়ুমন্ডল থাকাতে আমাদের দিকে আসা সব
তেজষ্ক্রিয়তা বায়ুমন্ডলে শোষিত হয়ে যায়। ফলে আমরা পৃথিবীতে নিরাপদে থাকি। কিন্তু
চাঁদে পৃথিবীর আরাম নেই।
ছয় ঘন্টা ঈগলের ভেতর থাকার পর নীল
আর্মস্ট্রং চাঁদের পিঠে পা রাখলেন। তারপরে নেমে এলেন এডউইন অলড্রিন। চাঁদের বুকে
পরবর্তী আড়াই ঘন্টা ছিলেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন। চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর
মাধ্যাকর্ষণের ছয়ভাগের একভাগ। তাই হাঁটার সময় মনে হচ্ছিলো তাঁরা প্রায় ভেসে
বেড়াচ্ছেন। পৃথিবীতে কোন জিনিস যদি ৬০ কেজি ভারী মনে হয়, চাঁদে সেটা ১০ কেজির মতো
মনে হবে।
টিভি ক্যামেরা অন করে চাঁদের ছবি তোলা
হলো। চাঁদের ধুলো, মিহি বালি ও পাথর সংগ্রহ করা হলো। চাঁদের বুকে আমেরিকান পতাকা
টাঙিয়ে দেয়া হলো। চাঁদে বাতাস নেই। তাই পতাকা বাতাসে উড়বে না। তারা পতাকা টেনে
মেলে দিলেন। চাঁদের বুকে বসিয়ে দেয়া হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। যার মধ্যে
একটি বিশেষ আয়না, যাতে পৃথিবী থেকে লেসার পাঠালে তা প্রতিফলিত হয়ে আবার পৃথিবীতে
ফিরে আসবে। চাঁদে ভূমিকম্প হয় কিনা তা মাপার জন্য একটা আধুনিক ভূমিকম্প-মাপক
যন্ত্রও বসানো হলো চাঁদের পিঠে।
এসময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন ফোন
করলেন নীল আর্মস্ট্রংকে। এটাও আরেকটি রেকর্ড - পৃথিবীর মানুষ টেলিফোনে সরাসরি কথা
বললো চাঁদে।
সমগ্র মানবজাতির পক্ষ থেকে একটা ধাতব
ফলক চাঁদের পিঠে স্থাপন করে দেয়া হলো। সেখানে লেখা আছে:
Here Men from the Planet Earth First Set Foot Upon the Moon July 1969
AD. We Came in Peace for All Mankind. "এখানে
পৃথিবী গ্রহের মানুষ প্রথম পা রেখেছিল চাঁদে ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে। আমরা এসেছিলাম
সমগ্র মানবজাতির শান্তির জন্য।"
চাঁদের
বুকে পুরু ধুলোর আস্তরণ। এই ধুলো খুবই মিহি। এর ওপর নভোচারীদের বুটের চিহ্ন
গভীরভাবে বসে যায়। চাঁদে যেহেতু কোন বাতাস নেই, তাই ধুলোর উপর এই দাগ মুছে না দিলে
নিজে নিজে কখনো মুছে যায় না। এত বছর পরে গেলেও দেখা যাবে সেই দাগ এখনো একই রকম রয়ে
গেছে। চাঁদের ধুলোকে বলে রেগোলিথ (regolith)।
আড়াই
ঘন্টা চাঁদের বুকে হেঁটে এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ফিট করে আবার ঈগলের
ভেতর ঢুকে গেলেন নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন। ঘুম দরকার তাদের। চাঁদের পিঠের
ওপর ঘুমিয়ে নিলেন দুজন। ঘুম থেকে ওঠে ঈগলকে নিয়ে কমান্ড মডিউল কলম্বিয়ায় ফিরে আসার
প্রস্তুতি। চাঁদে নামার বুট এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির আর দরকার নেই। সেগুলো তারা
চাঁদেই ফেলে দিলেন। ঈগলের চাঁদে নামার যন্ত্রপাতিরও আর দরকার নেই। সেগুলোও ফেলে
দিলেন।
এবার চাঁদের কক্ষপথে ফিরে আসার
যন্ত্রপাতি চালু করে ঈগলকে নিয়ে এলেন কলম্বিয়ায়। চাঁদের মাটি ও পাথরের নমুনা সংগ্রহ
করা হয়েছে একুশ কেজির বেশি। সেগুলো সব কলম্বিয়ায় উঠানোর পর ঈগলের প্রয়োজন ফুরিয়ে
গেলো। লুনার মডিউল ঈগলকে সেখানেই ফেলে দেয়া হলো। কলম্বিয়ায় চড়ে তিন নভোচারী
পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করলেন।
প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকান নৌবাহিনীর
বিশেষ জাহাজ 'হর্নেট' অপেক্ষা করছিল অ্যাপোলো-১১ এর কমান্ড মডিউল কলম্বিয়ার
প্রত্যাবর্তনের। কলম্বিয়া প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়লো জাহাজ থেকে প্রায় ৩৮
কিলোমিটার দূরে। হ্যালিকপ্টার আগে থেকেই লক্ষ্য রাখছিলো সেখানে। পানি থেকে
পরিকল্পনামতোই উদ্ধার করা হলো নভোচারীদের। সাবধানে নিয়ে যাওয়া হলো পরিশোধনাগারে।
স্বতন্ত্র শোধনাগারে অ্যাপোলো-১১ এর নভোচারীদের সাথে দেখা করতে এসেছেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন |
No comments:
Post a Comment