Wednesday, 12 February 2020

বুধ - পর্ব ৬



প্রাচীন বিশ্বাস

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে বুধ গ্রহকে দেবতা বলে মানা হয়। হিন্দু ধর্মে বুধ একজন দেবতা। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী বুধ হলেন চন্দ্র অর্থাৎ সোমের পুত্র। পৌরাণিক কাহিনিতে অনেক জটিল প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপার থাকে। এখানেও আছে। দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রীর নাম তারা। কিন্তু তারাকে ভালোবাসতেন চন্দ্র। একদিন চন্দ্র তারাকে অপহরণ করে নিয়ে যান। তারপর চন্দ্র ও তারা সুখে শান্তিতে ঘরসংসার করতে থাকেন। তাদের সন্তান হলো বুধ।
            
বাংলায় আমাদের বুধবার এসেছে বুধ দেবতার নাম অনুসারে। বুধ শব্দের অর্থ পন্ডিত, বিদ্বান বা জ্ঞানী। বুধকে খুব শুভ গ্রহ বলে বিবেচনা করা হয়। বহুল প্রচলিত একটি খনার বচন হলো - মঙ্গলের ঊষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা। এখনো অনেকেই বিশ্বাস করে যে গ্রহের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। অথচ এই গ্রহগুলো এত নিষ্প্রাণ আর এতটাই দূরে যে পৃথিবীর কোন কিছুর উপরেই এদের কোন প্রভাব পড়ে না। তবুও অনেক বিজ্ঞান-পড়া মানুষও এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করে।
            
প্রাচীন রেকর্ড অনুযায়ী দেখা যায় আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে অ্যাসিরিয়রা[1] (Assyrians) সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশে বুধ গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা ভেবেছিলেন এটা আকাশে পূর্ব থেকে পশ্চিমে লাফালাফি করে। তাই তারা বুধ গ্রহের নাম দিয়েছিল লম্ফমান গ্রহ   (Jumping planet) বা লাফানো গ্রহ।
            
গ্রিকরা ভোরবেলার পূর্বাকাশের বুধ আর সন্ধ্যাবেলার পশ্চিমাকাশের বুধকে দুটো আলাদা গ্রহ বলে ভেবেছিল। তারা ভোরবেলার গ্রহের নাম দিয়েছিল অ্যাপোলো আর সন্ধ্যাবেলার গ্রহের নাম দিয়েছিল হারমিস।

গ্রিক দেবতা হারমিস

পরে যখন তারা বুঝতে পারে যে অ্যাপোলো আর হারমিস দুটো আলাদা গ্রহ নয়, তখন তারা গ্রহটির নাম হারমিস-ই রেখে দেয়। গ্রিকদের দেবতা হারমিসকে ঈশ্বরের দূত বলে মনে করা হতো। প্রচন্ড গতিশীলতার কারণে হারমিসকে খেলোয়াড়দের দেবতা বলেও মানা হতো। ব্যবসা-বাণিজ্যের দেবতাও এই হারমিস। টাকা-পয়সা ধন-দৌলতের দেবতাও হারমিস এবং সেই কারণে চোর ডাকাতরাও হারমিসকে দেবতা মানে।
            
রোমানরা যখন গ্রিকদের চেয়ে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে তখন হারমিসকে তারা রোমান নাম দেয় মার্কারি। মার্কারি হলো রোমানদের ঈশ্বরের দূত। জার্মানরা মার্কারিকে বলে ওডিন বা ঊটান। সেখান থেকে ইংরেজিতে বুধবার রূপ নিয়েছে উডেন'স ডে। তারপর সেটা হয়েছে ওয়েন্‌জডে (Wednesday)। আফতাব স্যার যাকে বলেন 'ওয়েটন্যাসডে'।
            
চায়নিজরা প্রায় দুই হাজার বছর আগে বুধ গ্রহকে চেন শিং (Chen Xing) বা সময়ের নক্ষত্র বলে বিবেচনা করেছিলেন। বর্তমান চীন, জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামের ভাষায় বুধ গ্রহের আক্ষরিক অনুবাদ হলো পানির নক্ষত্র (Water Star)। তাঁরা যে গ্রহ ও নক্ষত্রের পার্থক্য জানেন না তা নয়, কিন্তু প্রচলিত ভাষায় তার প্রতিফলন নেই। তাদের ভাষায় তারা যাকে বুধবার বলে আক্ষরিক অনুবাদ করলে সেটার অর্থও দাঁড়ায় পানি দিবস বা ওয়াটার ডে।


[1] প্রাচীন গ্রিস সাম্রাজ্য। বর্তমানে ইরাক, কুয়েত, তুরস্ক ও সিরিয়ার অন্তর্গত।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

বিশ্ব নারী দিবস ২০২৫

  এবছরও ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০২৫ সালের নারী দিবসের মূল স্লোগান – For All women and girls: Rights, Equality and Emp...

Popular Posts