Thursday, 13 February 2020

বুধ - পর্ব ১৫


বুধে দ্বিতীয় অভিযান: মেসেঞ্জার

১৯৭৫ সালে বুধ গ্রহের প্রথম অভিযান ম্যারিনার-১০ মিশন শেষ হওয়ার পর পুরো বিংশ শতাব্দীতে বুধ গ্রহে আর কোন অভিযান চালানোর ব্যাপারে আগ্রহ খুব  একটা দেখা যায়নি। কারণ সেই সময় বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায় কি না দেখার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। তাই বিংশ শতাব্দীর শেষে মঙ্গল গ্রহে অভিযান নিয়ে বিজ্ঞানীরা মেতে উঠলেও বুধ গ্রহের কথা যেন সবাই ভুলেই গিয়েছিলেন। কারণ বিজ্ঞানীরা নিশ্চিন্ত যে বুধের যে অবস্থা তাতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। তখন বুধকে অনেকেই 'ভুলে যাওয়া গ্রহ' বা 'the forgotten planet' বলতে শুরু করেছিলেন।
        কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। সৌরজগতের বাইরে অনেক নক্ষত্রের চারপাশে ঘূর্ণনরত প্রায় শ' খানেক নতুন গ্রহ পাওয়া যায় এবং সেগুলো নিজ নিজ নক্ষত্রের খুব কাছ দিয়ে ঘুরছে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন সেই সব গ্রহগুলোর ঘনত্বও সূর্যের বুধের মতো বেশি। সেই সব গ্রহগুলোকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের বুধ গ্রহের সব ব্যাপারগুলো আগে বোঝা দরকার। বুধের প্রথম অভিযান ম্যারিনার-১০ মিশন থেকে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা থেকে অনেক সিদ্ধান্ত যেমন পাওয়া গেছে তেমনি অনেক প্রশ্নেরও উদয় হয়েছে। এই নতুন প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য বুধে আরো একটা দীর্ঘ এবং সম্পূর্ণ অভিযানের দরকার আছে।
            বুধে দ্বিতীয় অভিযান শুরু হয় ২০০৪ সালে। এই অভিযানের নাম দেয়া হয় মেসেঞ্জার (MESSENGER)। বুধ বা প্ল্যানেট মারকারিকে মেসেঞ্জার অব গড বলা হতো। সে হিসেবে অভিযানের এই নাম খুবই যুৎসই। তাছাড়া মেসেঞ্জার শব্দটি হলো MErcury, Surface, Space ENvironment, GEochemistry, and Ranging এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
            মেসেঞ্জার মিশনের নাম থেকেই বুঝতে পারছো যে এই মিশন বুধ গ্রহের উপরিতল, পরিবেশ, গ্রহের ভূমির রাসায়নিক গঠন ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখবে। এই প্রকল্প পরিকল্পনায় নভোযানটি বুধের বুকে নামানোর কথাও ছিল। কিন্তু আমেরিকান সরকার এই প্রকল্পের বাজেট কেটে নেয়ায় নভোযানকে বুধে নামানোর পরিকল্পনা বাদ দিতে হলো।

মেসেঞ্জার মিশনের লক্ষ্য

বুধ গ্রহে প্রথম অভিযান ম্যারিনার-১০ এর পর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার খুব দরকার ছিল:

  • বুধ গ্রহের ঘনত্ব এত বেশি কেন?
  • বুধ গ্রহের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস কী?
  • বুধের কেন্দ্রের গঠন ঠিক কী রকম? এটা কি তরল? যদি তরল হয় তাহলে তরল অংশটা কত বড়?
  • বুধের চৌম্বকত্বের স্বরূপ কী? বুধের চৌম্বকত্ব কি পৃথিবীর চৌম্বকত্বের মত? কী তার উৎস?
  • বুধের মেরু অঞ্চলে সত্যিই কি বরফ আছে?
  • বুধে যে ক্ষীণ বায়ুমন্ডলের আভাস পাওয়া গেছে তার উৎপত্তি হয়েছে কীভাবে?

মেসেঞ্জার মিশনের প্রধান লক্ষ্য ছিল বুধ গ্রহের ১০০% জায়গার ছবি তোলা এবং সেগুলো থেকে বুধের সম্পূর্ণ ম্যাপ তৈরি করা, বুধের গাঠনিক উপাদান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া, বায়ুমন্ডল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা, কী কী মৌলিক পদার্থ আছে তা খুঁজে বের করা, চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎস অনুসন্ধান।
            বুধের জরিপ কাজের জন্য মেসেঞ্জার নভোযানে সাদা-কালো ও রঙিন ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হলো। সাদা-কালো ছবিগুলো হবে বুধের উপরিতলের ক্লোজ-আপ, প্রতি পিক্সেলে ২৫০ মিটারের কম জায়গা। আর রঙিন ছবিগুলো আরেকটু উপর থেকে তোলা। প্রতি পিক্সেলে দুই কিলোমিটারের মতো জায়গা। মেরু অঞ্চলে জমাট বরফ আছে কিনা দেখার জন্য বুধের উত্তর মেরুতে র‍্যাডার দিয়ে দেখার ব্যবস্থা করা হলো। বুধের বায়ুমন্ডলে কী কী পরমাণু আছে দেখার জন্য ম্যারিনার-১০ নভোযানের ব্যবস্থার চেয়েও উন্নত ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হলো। 

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Enigmatic quantum theory

  “ ‘There is actually no such thing as a quantum world. The quantum state exists only inside my head, something I use to do calculations. Q...

Popular Posts