বুধের
অভ্যন্তরীণ গঠন
সৌরজগতের গ্রহগুলোর
মধ্যে বুধের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের প্রবল চাপে পৃথিবী কিছুটা
সংকুচিত হয়ে থাকে, ফলে পৃথিবীর আয়তন কিছুটা কমে গিয়ে গড় ঘনত্ব বুধের ঘনত্বের চেয়ে
সামান্য বেশি হয়। কিন্তু এই বায়ুমন্ডলের চাপকে হিসেব থেকে বাদ দিলে বুধের ঘনত্ব
পৃথিবীর ঘনত্বের চেয়েও বেশি হয়। সবচেয়ে ছোট গ্রহের সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব হওয়ার প্রধান
কারণ হলো এর কেন্দ্রে বিরাট আকারের ঘন ভারী গোলাকার পিন্ড –
যাকে ‘কোর’ (core)
বলা হয়।
বুধ গ্রহের
মোট ভরের দুই তৃতীয়াংশ দখল করে আছে
এর কেন্দ্রের বড়
কঠিন লোহার পিন্ড বা কোর। বুধের চৌম্বকক্ষেত্রের উপস্থিতি
প্রমাণ করে যে ভেতরের কেন্দ্রের বাইরে একটা অংশ আছে যেটা কিছুটা তরল এবং বুধের
নিজস্ব ঘূর্ণনের সাথে আস্তে আস্তে ঘুরছে। ফলে দুর্বল বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি হয়েছে
এবং তার ফলে বুধে খুব দুর্বল একটা চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
বুধের ব্যাসার্ধ ২৪৪০ কিলোমিটার। এই ২৪৪০ কিলোমিটার
ব্যাসার্ধের গোলকের ভেতরে ২০৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি শক্ত লোহার গোলক হলো
বুধের কেন্দ্র। এই কেন্দ্র কঠিন লোহার তৈরি এবং এত ভারী যে এর ঘনত্ব প্রায় ৬.৯ গ্রাম/সিসি।
অর্থাৎ ৬৯০০ কিলোগ্রাম/ঘন মিটার। ভেবে দেখো – বুধের কেন্দ্রের এক ঘন মিটার জায়গার ভর হলো প্রায় ৭ টন।
কেন্দ্রের বাইরে মাত্র ৪১০
কিলোমিটার পুরু সিলিকেটের স্তর – যার ঘনত্ব ৩.৪ গ্রাম/সিসি যা কোরের প্রায় অর্ধেক। চিত্র দেখলেই বুঝতে
পারবে ভেতরের কোর কত বড় আর তার বাইরের আবরণ কত পাতলা।
বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন |
ভেতরের কোর কঠিন লোহার তৈরি। তার বাইরের আবরণে
লোহার সাথে মিশে আছে সালফার ও সিলিকন। মোট ভরের প্রায় ৩৬% সালফার এবং ১৭% সিলিকন
আছে সেখানে। সেই লোহা-সালফার-সিলিকনের আবরণটি কিছুটা নরম বা তরল জেলির মতো। এর আনুমানিক
পুরুত্ব প্রায় দুই-তিন শ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
এই
তরল অংশের উপরে আয়রন সালফাইডের একটি শক্ত আবরণ তৈরি হয়েছে – যার পুরুত্ব প্রায় এক শ কিলোমিটার। এটাকে অ্যান্টি ক্রাস্ট
বা বিপরীত ক্রাস্ট বলা হয়।
অ্যান্টি-ক্রাস্টের
বাইরের আবরণে লোহার পরিমাণ খুবই কম। বুধ গ্রহের সব লোহা উপরের স্তর থেকে ভেতরের
কেন্দ্রে গিয়ে জমা হয়েছে। অ্যান্টিক্রাস্টের বাইরে প্রায় দুই শ কিলোমিটার পুরু
সিলিকেটের স্তরের নাম ম্যান্টেল।
ম্যান্টেলের
বাইরে হলো বুধের উপরের স্তর বা ক্রাস্ট। বুধের উপরের স্তরের গড় পুরুত্ব ৫০
কিলোমিটারের মতো। তবে এই পুরুত্ব গ্রহের সব জায়গায় সমান নয়। কোন কোন জায়গায় এর
পুরুত্ব ৩০ কিলোমিটার, আবার কোন কোন জায়গায় এই পুরুত্ব ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে
পারে।
নিচের
সারণিতে বুধের অভ্যন্তরীণ গঠনের একটা চিত্র দেয়া হলো।
সারণি:
বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন
স্তর
|
প্রধান
উপাদান
|
পুরুত্ব
|
ক্রাস্ট
|
সিলিকেট
|
৩০ – ১০০ কিলোমিটার
|
ম্যান্টল
|
সিলিকেট
|
১০০ – ২০০ কিলোমিটার
|
অ্যান্টি-ক্রাস্ট
|
আয়রন-সালফাইড
|
~১০০ কিলোমিটার
|
তরল বহিকেন্দ্র বা বাইরের কোর
|
আয়রন, সালফার, সিলিকন
|
২০০ – ৪০০ কিলোমিটার
|
কোর বা অন্তকেন্দ্র
|
লোহা
|
১৬০০ – ১৮০০ কিলোমিটার
ব্যাস প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার
|
No comments:
Post a Comment