বৈজ্ঞানিক সফর
- ৬, ৭, ৮, ৯
পঞ্চম
বৈজ্ঞানিক সফর শেষ করে দেশে ফেরার পর বিজ্ঞান-মন্দিরের গবেষণায় নতুন প্রাণের
সঞ্চার হয়। অতি দ্রুত সেখানে উদ্ভাবিত হয় অনেকগুলো নতুন যন্ত্র। ম্যাগনেটিক
রেডিওমিটার, কন্ডাক্টিভিটি ব্যালান্স, ফটোসিন্থেটিক রেকর্ডার প্রভৃতি যন্ত্রেই
মৌলিক গবেষণার প্রমাণ। খুব কম সময়ের মধ্যেই শতাধিক পরীক্ষা শেষ করে ফলাফলগুলো লিখে
ফেলেন জগদীশচন্দ্র। গবেষণাপত্রের পাশাপাশি সপ্তম গ্রন্থ Life
Movements in Plants, Volumes III and IV (in one volume) প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালে এবং পরের বছর অষ্টম গবেষণাগ্রন্থ The ascent of Sap প্রকাশিত হয়।
এই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর
ভাইস-প্রেসিডেন্ট হবার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লেখেন জগদীশচন্দ্রকে:
"বিশ্বভারতীকে
এইবার সাধারণের হাতে সমর্পণ করে দিচ্ছি। তোমাকে এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট আসনে বসাতে
চাই। সম্মতি লিখে পাঠিয়ো। বেশী দায়িত্ব নেই, কেবল তোমার নামের সঙ্গে যোগ না থাকলে
চলবে না - সময় যদি পাও এই সূত্রে কাজের যোগও ঘটবে। ভেবেছিলুম দার্জিলিঙে তোমাদের
পাড়ায় ঘুরে আসব, অমনি তোমাকে বিশ্বভারতীর constitution দেখিয়ে সভ্য করে আসব।"
জগদীশচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের এই আহ্বানে সম্মতি দিয়েছিলেন।
১৯২৩ সালে
ষষ্ঠবারের মত ইওরোপে যান জগদীশচন্দ্র। এবার সাথে নিয়ে যান নতুন যন্ত্র
ফটোসিন্থেটিক রেকর্ডার। উদ্ভিদের ক্লোরোফিল সূর্যের আলোর সহায়তায় পানি ও
কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে খাদ্য তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ার নাম সালোক-সংশ্লেষণ বা
ফটোসিন্থেসিস। জগদীশচন্দ্রের এই রেকর্ডার সালোক-সংশ্লেষণের মাত্রা পরিমাপ করতে
পারে।
এই যন্ত্রটির উপরের অংশে একটি ছোট কাচের
নলের পাশে একটি সরু ইউ-টিউব সংযুক্ত থাকে। ইউ-টিউবটির বাইরের মুখ ফানেলের আকারে
নির্মিত। কাচের নলের উপরের মুখটি দরকার মতো খোলা ও বন্ধ করা যায়। নলের নিচের অংশটি
একটি রবারের ছিপির মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। একটি পানিপূর্ণ কাচের শিশির মধ্যে জলজ
উদ্ভিদ ভর্তি করে কাচের নল সহ ছিপিটা মুখে এঁটে বসানো হয়। এরপর ফানেলের মুখে ছোট্ট
একটি পারদ-বিন্দু দেয়া হয়। পারদ-বিন্দুটি ইউ-টিউবের মধ্যে বাতাস ঢোকার পথ বন্ধ
করার ভাল্বের কাজ করে। ভাল্বযুক্ত ইউ-টিউবের অংশটিকে বাব্লার বলা হয়। শিশিটিকে
সূর্যের আলোতে রাখলে উদ্ভিদের সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এর ফলে নির্গত
অক্সিজেন শিশির উপরের অংশে জমা হয়ে পারদের ভাল্বটির উপর চাপ দেয়। এই চাপ একটা
নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে পারদের ভাল্বটি উপরে উঠে গিয়ে কিছু পরিমাণ অক্সিজেন
বেরিয়ে যাবার পথ করে দেয়।
স্বয়ংক্রিয় ফটোসিন্থেটিক রেকর্ডার। S- বাব্লার; E- প্লাটিনাম তার, পারদবিন্দু M-এর উপর অবস্থিত; D-ড্রাম; W-তড়িৎ-চুম্বকীয় লেখনী।
|
এভাবে কিছুক্ষণ পর পর ভাল্বটি উপরে উঠে গিয়ে প্রত্যেক বার সমপরিমাণ অক্সিজেন নির্গত হতে সাহায্য করে। পারদ-বিন্দুটির ঠিক উপরে দুটি সূক্ষ্ম প্লাটিনামের তার এমনভাবে বসানো থাকে যেম ভাল্বটি উপরে ওঠা মাত্রই ঐ প্লাটিনামের তার দুটিকে একসঙ্গে স্পর্শ করতে পারে। তার ফলে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপিত হয় এবং শিশিটির পাশে রাখা একটি তড়িৎ-চৌম্বকীয় লেখনীর সাহায্যে ঘুরন্ত ড্রামের উপর একটি করে বিন্দু আঁকা হয়ে যায়। এই বিন্দুর সংখ্যা এবং সময় হিসেব করে সালোক-সংশ্লেষণের হার নির্ণয় করা যায়।[1]
ইওরোপের বিজ্ঞানীরা তাঁর এই যন্ত্র দেখে
খুবই বিস্মিত হন। এবারো তিনি বক্তৃতা করেন লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজে (১৫/১১/১৯২৩),
লীড্স ইউনিভার্সিটি (২০/১১/১৯২৩), লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স
(২৬/১১/১৯২৩), রয়েল সোসাইটি অব মেডিসিন (৬/১২/১৯২৩) এবং আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও
গবেষণা প্রতিষ্ঠানে।
১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রফেসর
অলিভার লজের আমন্ত্রণে লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউজে বক্তৃতা দিলেন জগদীশচন্দ্র। দর্শকদের
মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী রামজে ম্যাকডোনাল্ড, জর্জ বার্নাড
শ, ভারতের প্রাক্তন গভর্নর জেনারেল হার্ডিঞ্জ প্রমুখ। মন্টেগুর বদলে নতুন ভারতসচিব
হয়েছেন লর্ড অলিভিয়ার। মন্টেগুর মতো তিনিও জগদীশচন্দ্রের গুণমুগ্ধ। প্রধানমন্ত্রী
রামজে ম্যাকডোনাল্ড মাত্র ক'দিন আগে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন (২২/১/১৯২৪)। তিনি
শুনেছেন জগদীশচন্দ্রের গবেষণার কথা। তাই নিজে এসেছেন তাঁর বক্তৃতা শুনতে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামজে ম্যাকডোনাল্ড (১৯২৪)
|
সেই বক্তৃতায়
জগদীশচন্দ্র তাঁর বিখ্যাত ফটোসিন্থেটিক বাবলারের কার্যপদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন।
উদ্ভিদ সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোক থেকে যে অক্সিজেন তৈরি করে বের করে
দেয় তা কাজে লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গাছের জৈব প্রক্রিয়ার পরিমাপ করা হয় এ
যন্ত্রের সাহায্যে। চোখের সামনে এ প্রক্রিয়া ঘটতে দেখে বক্তৃতা শেষে জর্জ বার্নাড
শ প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করলেন:
“এই বিজ্ঞানী
শীঘ্রই হয়তো এমন কোন যন্ত্র উদ্ভাবন করবেন যা দিয়ে রাজনীতিবিদদের কার্যক্ষমতা
যন্ত্রলিপির সাহায্যে এঁকে দেখাবেন এবং বিভিন্ন কাজে তাঁদের দক্ষতাও নিখুঁতভাবে
পরীক্ষা করতে সক্ষম হবেন।”
জর্জ বার্নাড শ
|
ইন্ডিয়া-হাউজে বক্তৃতার কিছুদিন পর সরকারি দপ্তর থেকে জগদীশচন্দ্রকে একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে লিগ অব ন্যাশন্স এর ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটিতে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য জগদীশচন্দ্র বসু হবেন সেই কমিটির সদস্য।
লিগ অব ন্যাশন্স-এর ইন্টেলেকচুয়াল
কো-অপারেশান কমিটি গঠিত হয়েছে ১৯২২ সালে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রথিতযশা শিল্পী,
সাহিত্যিক, বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের
মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। এতদিন কোন ভারতীয় সেই কমিটিতে ছিলেন না।
জগদীশচন্দ্র বসুই হলেন সেই কমিটির প্রথম ভারতীয় সদস্য।
মার্চের শেষে ব্রাসেল্স-এ এই কমিটির
একটি সভা ছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে জগদীশচন্দ্র সেই সভায় যোগ দিতে পারেননি।
ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে এপ্রিল মাসে দেশে ফিরে আসেন জগদীশ।
১৯২৪ সালে দেশে ফিরেই তিনি প্রকাশ করেন
তাঁর নবম গ্রন্থ - Physiology of Photosynthesis.
১৯২৪-এর ডিসেম্বরে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন জগদীশ।
১৯২৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের পদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয় জগদীশচন্দ্রকে। কিন্তু তিনি প্রশাসক
হবার চেয়ে গবেষক হওয়াটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সেই প্রস্তাব ধন্যবাদের সাথে
প্রত্যাখ্যান করেন।
বসু-বিজ্ঞান-মন্দিরের জন্য সরকারি
অর্থসাহায্য বছরে এক লক্ষ টাকা থেকে না বাড়লেও সেই এক লক্ষ টাকা প্রতি বছর পাবার
সরকারি অঙ্গীকার পাওয়া গেছে। ১৯৩১-৩২ সাল পর্যন্ত সরকারি এই অনুদান বলবৎ ছিল।
লিগ অব ন্যাশন্স এর ইন্টেলেকচুয়াল
কমিটির সভায় যোগদানের জন্য ১৯২৬-এর এপ্রিলে ইওরোপে যান জগদীশচন্দ্র। শুধু কমিটি
মিটিং নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক বক্তৃতাও ছিল তাঁর কাজের অঙ্গ।
ইতোমধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকার
পরিবর্তন হয়ে গেছে। রামজে ম্যাকডোনাল্ডের পর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কনজারভেটিভ
পার্টির স্ট্যানলি ব্যাল্ডুইন। লেবার দলের প্রধানমন্ত্রী রামজে ম্যাকডোনাল্ড দেখা
করেছিলেন জগদীশচন্দ্রের সাথে। ব্যালডুইনও জগদীশচন্দ্রকে তাঁর অফিসে আমন্ত্রণ করে
দীর্ঘ অন্তরঙ্গ আলোচনা করলেন ইংল্যান্ড ও ভারতবর্ষের মধ্যে সুসম্পর্ক বিষয়ে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি ব্যাল্ডুইন (১৯২৬)
|
জগদীশচন্দ্র
ভারতের স্বাধীনতা চাইতেন ঠিকই কিন্তু তেমন উগ্র জাতীয়তাবাদী ছিলেন না। নিজের
সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পেলে তিনি ব্রিটিশ শাসনেও সন্তুষ্ট। তাই তিনি যেটা করলেন সেটা
হলো তাঁর বিজ্ঞান-মন্দিরে সরকারি অনুদান যেন ঠিকমতো থাকে এবং সেটা যে ভারতবর্ষে
বিজ্ঞান-চর্চার জন্য দরকারি তা বললেন। এটাও বললেন যেন সরকার ভারতের তরুণদের
কর্মক্ষেত্র প্রসারের ব্যবস্থা নেয়।
লন্ডন থেকে প্যারিসে গেলেন জগদীশ।
সেখানে সরবোঁ বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব মিউজিয়ামে বক্তৃতা দেন। সেখান
থেকে গেলেন বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের রাজা ও রানি কলকাতা গিয়ে বসু-বিজ্ঞান-মন্দির
পরিদর্শন করেছিলেন। তখন জগদীশচন্দ্রের কাজে মুগ্ধ হয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন
বেলজিয়ামে আসার জন্য। ব্রাসেল্স বিশ্ববিদ্যালয়ে জগদীশচন্দ্রের বক্তৃতা সভায়
সভাপতিত্ব করেছিলেন বেলজিয়ামের রাজা অ্যালবার্ট। বক্তৃতার পর জগদীশের সম্মানে
রাজকীয় ভোজসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজপরিবারে সদস্যদের সাথে অন্তরঙ্গ আলোচনা হয়
জগদীশচন্দ্র ও অবলার। সেই সভায় জগদীশচন্দ্রকে বেলজিয়ামের রাজকীয় সম্মান ‘কমান্ডার অব দি
অর্ডার অব লিওপোল্ড’ উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।
বেলজিয়ামের রাজা অ্যালবার্ট (১৯২৬)
|
১৯২৬ সালের
২৬শে জুলাই জেনিভায় লিগ অব ন্যাশন্স এর ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির
অধিবেশনে যোগ দেন জগদীশচন্দ্র। এই কমিটিতে এটাই ছিল তাঁর প্রথম উপস্থিতি। কমিটির
সবাই জগদীশচন্দ্রকে স্বতস্ফূর্ত অভিবাদন স্বাগতম জানালেন।
অধিবেশন শেষ হবার পর জেনিভা
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তৃতা দেন জগদীশচন্দ্র। সেই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে
উপস্থিত ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন ও পদার্থবিজ্ঞানী লরেঞ্জ। আইনস্টাইন এর দু'বছর
আগে কাজ করেছেন জগদীশবসুর ছাত্র সত্যেন বসুর সাথে। তিনি জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক
আবিষ্কারের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “জগদীশচন্দ্র
পৃথিবীকে যেসব অমূল্য তত্ত্ব উপহার দিয়েছেন, তার যে কোনটির জন্যে বিজয়স্তম্ভ
স্থাপিত হওয়া উচিত।”
সপ্তম বৈজ্ঞানিক সফর শেষ করে ১৯২৬ সালের
অক্টোবরে দেশে ফেরেন জগদীশচন্দ্র। সেই বছরই প্রকাশিত হয় তাঁর দশম গ্রন্থ Nervous mechanism of plants.
১৯২৭ সালের জানুয়ারি মাসে লাহোরে
অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করেন জগদীশচন্দ্র।
ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির
বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য ১৯২৭ সালের এপ্রিলে আবার ইওরোপ যাত্রা করেন
জগদীশচন্দ্র। এটা তাঁর অষ্টম বৈজ্ঞানিক সফর। মে মাসের ৬ তারিখ তিনি ফ্রান্সের
মার্শেল্স-এ পৌঁছেন। ফ্রান্সের দক্ষিণ অঞ্চলের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন
তিনি এবার। বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী সাহিত্যিক রোমাঁ রোঁলা বসু-দম্পতিকে নিমন্ত্রণ করেন
নিজের বাড়িতে এবং নিজের লেখা বই উপহার দেন জগদীশচন্দ্রকে।
জগদীশচন্দ্র বসু (১৯২৬)
|
ফ্রান্স থেকে
জগদীশ আসেন ইংল্যান্ডে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একাদশ গ্রন্থ Plant autographs and their revelations। বইটি ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে
ইংল্যান্ডে। ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা বইয়ের রিভিউতে জগদীশচন্দ্রকে প্রকৃতির রহস্য
উন্মোচনে নিউটন ও গ্যালিলিওর সমকক্ষ বলে মন্তব্য করেছে। জুন মাসে জগদীশচন্দ্র
ইন্টারন্যাশনাল হোমিওপ্যাথিক কংগ্রেস উপলক্ষে লন্ডনের কিংস হলে 'Mechanism of Life' শীর্ষক বক্তৃতা দেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে জর্জ বার্নাড শ নিজের এক সেট বই
জগদীশচন্দ্রকে উপহার দেন। বইতে তিনি লিখেছিলেন, "From the least to the greatest of living
biologist. G. Bernard Shaw to Sir Jagadish Bose."
তারপর লন্ডন থেকে জেনিভা
যান জগদীশ। জুলাই মাসে ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির অধিবেশনে যোগ দেন।
১৯২৭ সালে লন্ডনের লং
ম্যান অ্যান্ড গ্রিন কোম্পানি জগদীশচন্দ্রের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাপত্রগুলোর
সংকলন Collected physical papers প্রকাশ করে।
তাঁর অন্যান্য বইয়ের মতো এই সংকলনটিও ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়।
প্রতি বছর জগদীশচন্দ্রের জন্মদিন ৩০
নভেম্বর বিজ্ঞান-মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়। সেদিন বিজ্ঞান-মন্দিরের
বার্ষিক সভায় বিজ্ঞান-মন্দিরের সারা বছরের গবেষণার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
১৯২৮ সালের মে মাসে আবার ইওরোপে যাত্রা
করেন জগদীশচন্দ্র। এটা তাঁর নবম বৈজ্ঞানিক সফর। ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির
সদস্য হিসেবে অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য গত তিন বছর ধরে তিনি ভিয়েনা যাচ্ছেন। কিন্তু
তিনি তাঁর বিদেশ-ভ্রমণকে বৈজ্ঞানিক মিশনে পরিণত করেছেন প্রতিবারই। বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করে বিজ্ঞান-মন্দিরের গবেষণার সুযোগ
বাড়ানোও তাঁর অন্যতম লক্ষ্য।
এবার বিশেষ আমন্ত্রণে তিনি ভিয়েনা ও
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটো বক্তৃতা দেন। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর অধ্যাপক
মোলিশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জগদীশচন্দ্রের। এবছর অধ্যাপক মোলিশের তৎপরতায়
ভিয়েনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য মনোনীত হয়েছেন জগদীশচন্দ্র। ভিয়েনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অনেক ভারতীয় ভেষজ উদ্ভিদের রোগনাশক গুণ সম্পর্কে
জানার জন্য জগদীশচন্দ্রের গবেষণা গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করছে।
ভিয়েনা থেকে জার্মানির মিউনিখে আসেন
জগদীশ। সেখানে বক্তৃতা দিয়ে এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সাথে গবেষণা-আলোচনা শেষ করে
গেলেন জেনিভায়। সেখানে ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির অধিবেশন শেষ করে দেশে
ফেরার যখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন মিশরে যাবার আমন্ত্রণ পান। মিশরের কৃষি-মন্ত্রী
তখন জেনেভায় ছিলেন। তারই উদ্যোগে মিশর সরকারের আমন্ত্রণে ১৩ই সেপ্টেম্বর মিশরের
আলেকজান্দ্রিয়ায় বাদশাহ ফুয়াদের আতিথ্য গ্রহণ করেন জগদীশচন্দ্র। রয়্যাল
জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি অব ইজিপ্টের সম্মেলনে বক্তৃতা দেন তিনি।
সেপ্টেম্বরের শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
[1] শ্রী বিমলেন্দু মিত্র, শ্রী আশুতোষ গুহঠাকুরতা, শ্রী
বিনয়কৃষ্ণ দত্ত, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, ২য় খন্ড, বসু বিজ্ঞান মন্দির, ১৯৬৫। পৃ
১৫৭-১৫৮।
No comments:
Post a Comment