Saturday, 18 April 2020

জগদীশচন্দ্র বসু - পর্ব ২৪




বৈজ্ঞানিক সফর - ১০, ১১

১৯২৯ সালের মাঝামাঝি দশম বৈজ্ঞানিক সফরে লন্ডন এসে পৌঁছান জগদীশচন্দ্র। নতুন ভারতসচিব উইলিয়াম ওয়েজউড বেন জগদীশচন্দ্রকে সম্বর্ধনা জানিয়ে ইন্ডিয়া অফিসে একটি বক্তৃতাসভার আয়োজন করেন। জগদীশচন্দ্র সেখানে বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা দেন। ভারতবর্ষে তখন স্বাধীনতার আন্দোলন তুঙ্গে। ইন্ডিয়া অফিসের সভায় সে প্রসঙ্গেও কথা হয়।
          জগদীশচন্দ্র বসু নিজেকে আশ্চর্য উপায়ে স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে দূরে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর বিজ্ঞান-মন্দিরের জন্য সুযোগ সুবিধা আদায় করেছেন। 'ভারতের গণ-অসন্তোষ' সম্পর্কে তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি উত্তর দেন অর্থনৈতিক সঙ্কট-ই এর জন্য দায়ী এবং বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের দ্বারাই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।[1] ভারতে যে স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে সে প্রসঙ্গে তিনি কিছুই বলেননি।
          জুলাই মাসের মাঝামাঝি জগদীশচন্দ্র লন্ডন থেকে ভিয়েনায় যান ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য। কয়েকদিনের সমাবেশ শেষে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই বয়সে এত ধকল সহ্য করা তো সহজ কথা নয়। ফিনল্যান্ড অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স জগদীশচন্দ্রকে সম্মানিত সদস্যপদ দিয়ে সম্মানিত করে এসময়। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় জগদীশচন্দ্রের ১৪তম ও শেষ বই Growth and Tropic Movements of Plants.
          ১৯৩০ সালে শেষবারের মতো ইন্টেলেকচুয়াল কো-অপারেশান কমিটির অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য ভিয়েনা যান জগদীশচন্দ্র। ওটাই ছিল তাঁর কমিটির সদস্যপদের শেষ বছর। এতদিন কমিটির সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী লরেঞ্জ। তাঁর মৃত্যুর পর কমিটির নতুন সভাপতি হয়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গ্রিক-সাহিত্যের অধ্যাপক গিলবার্ট মারে। আর সহ-সভাপতি হয়েছেন নোবেল-বিজয়ী বিজ্ঞানী মেরি কুরি। তাঁদের সাথে পরিচয় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয় জগদীশচন্দ্রের। মেরি কুরির শরীরও তখন খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না। কমিটিতে সেবছর জগদীশচন্দ্রের শেষ বছর হিসেবে গত পাঁচ বছর ধরে কমিটিতে জগদীশচন্দ্রের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়।
          জার্মান অ্যাকাডেমি ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ জগদীশচন্দ্রকে মেম্বারশিপ প্রদান করে সম্মান জানায়।
          ১৯৩০ সালটা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানের জন্য একটি নতুন মাইলফলক। এবছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন। শুধু ভারত নয়, সমগ্র এশিয়ায় বিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরষ্কার পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানী রামন।


চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন




         
তিনি তাঁর পুরো গবেষণা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহেন্দ্রলাল সরকারের কাল্টিভেশান সেন্টারে। জগদীশচন্দ্রের পরোক্ষ ছাত্র এবং সহকর্মী ছিলেন রামন। কাল্টিভেশান সেন্টারে জগদীশচন্দ্র বসুও বিজ্ঞান-বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি - জগদীশচন্দ্র কখনোই রামনের গবেষণার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাননি। এমনকি তাঁর নোবেল পুরষ্কার পাবার ব্যাপারটি নিয়েও কিছু বলেছেন বলে শোনা যায়নি।



[1] লন্ডন টাইম্‌স, ২০ জুলাই ১৯২৯।

No comments:

Post a Comment

Latest Post

Doesn't Rachi's death make us guilty?

  Afsana Karim Rachi began her university life with a heart full of dreams after passing a rigorous entrance exam. She was a student of the ...

Popular Posts