32<<<<<<<<<<<<<<<<<
“এভাবে
তো চলতে পারে না। আপনারা এতগুলি টিচার যদি একসাথে অ্যাবসেন্ট থাকেন, তাহলে আমি কলেজ
চালাবো কীভাবে?”
ভাইস প্রিন্সিপাল (এডুকেশান) ম্যাডামের
টকটকে ফর্সা মুখ রাগে থমথম করছে। রাগারাগিটা কার সাথে হয়েছে আমি জানি না, কিন্তু তিনি
রাগটা ঝাড়ছেন আমার উপর। বাংলায় যে প্রবচন আছে –
ঝি-কে মেরে বউকে শেখানো –
সেটা এখানে প্রযোজ্য কি না ঠিক বুঝতে পারছি না। নিজেকে ‘ঝি’
ভাবতে একটু আত্মসম্মানে লাগছে। এই সাত সকালে কী হয়েছে সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। বাস
থেকে নেমে টিচার্স রুমে ব্যাগটা রেখেই ভাইস-প্রিন্সিপালের রুমে এসেছি হাজিরা খাতায়
সাইন করতে।
এই ছোট্ট রুমটাতে এখন দু-জন ভাইস প্রিন্সিপাল
বসেন। নাসির স্যার ভাইস-প্রিন্সিপাল (অ্যাডমিন)। তাঁকে তাঁর চেয়ারে দেখা যাচ্ছে না।
তার মানে তিনি এখন প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে আছেন। শিরিন ম্যাডাম ভাইস-প্রিন্সিপাল
(এডুকেশান)। এখন খুব রেগে আছেন তিনি। শিক্ষকদের হাজিরা খাতা থাকে তাঁর টেবিলে। আমি
মাথা নিচু করে খোলা খাতায় দস্তখত করতে গিয়ে দেখলাম গতকাল আমাকে লাল কালিতে বড় বড় অক্ষরে
ABSENT লিখে দেয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে অক্ষরগুলোর উপর অনেকবার কলম চালানো হয়েছে। সেটা
যে খুব একটা স্নেহবশত করা হয়নি তা বুঝতে একটুও অসুবিধে হচ্ছে না।
গতকাল চব্বিশ ঘন্টার হরতাল ছিল। হরতালের
মধ্যে শহর থেকে আসা অনেক কষ্টকর। হরতালে অনেকবার নৌকা নিয়েও কলেজে এসেছি। কিন্তু না
এলে যে কলেজের লেখাপড়ার বিশাল ক্ষতি হয়ে যায় –
তা নয়। হরতালে কলেজের ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগই আসে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আশা করেন হরতালের
সময় আমরা পাখির মত উড়ে চলে আসবো খুশিতে কিচির মিচির করতে করতে। গত পরশু শিক্ষকদের মধ্যে
কথা হয়েছিল – শহর থেকে আমরা
কেউই আসবো না। কারণ একজন দুজন এলে বাকিদের কথা শুনতে হয়। কিন্তু হাজিরা খাতায় দেখলাম
– আমাকে না আসার জন্য যিনি
বিশেষ করে বলে দিয়েছিলেন –
তিনিই উপস্থিত ছিলেন গতকাল।
সাইন
করতে করতে মৃদুকন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, “গতকালের জন্য কি ম্যাডাম ছুটির দরখাস্ত দেবো?”
“দরখাস্ত
দিয়ে কোন লাভ নেই। অ্যাবসেন্ট মার্ক হয়ে গেছে।“
“গতকাল
হরতাল ছিল ম্যাডাম।“
“হরতাল ছিল তো কী হয়েছে? …………ও তো শহরে থাকেন। তিনি যদি আসতে পারেন, আপনি আসতে পারলেন না কেন? এভাবে তো চলতে পারে না। আপনারা এতগুলি টিচার যদি এক সাথে অ্যাবসেন্ট থাকেন, তাহলে আমি কলেজ চালাবো কীভাবে?”
আমরা দুই-তিনজন অনুপস্থিত থাকলে শাহীন কলেজের চলতে কষ্ট হয় শুনে নিজেকে অনেক দরকারি ভেবে আমার খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। এই জানুয়ারি মাসে কলেজে ক্লাস তেমন হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই রমজান আরম্ভ হচ্ছে। তাই সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। রোল কল করার পরেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ষোল কোয়ার্টারের মাঠে। সেখান থেকে ফিরে কলেজের বারান্দায় অস্থায়ী মঞ্চে হচ্ছে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। তাই কলেজের পড়ালেখার ক্ষতি হয়ে গেছে আমি কলেজে না আসাতে – এটা খুব একটা ঠিক কথা নয়। ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে এটা বলতে গিয়েও বললাম না। কারণ ছোট বড় সব বস্ই বিশ্বাস করেন যে – বস ইজ অলওয়েজ রাইট। তাঁদের সামনে তাঁদের অধীনস্ত কেউ যুক্তিপূর্ণ কথা বললেও তাঁদের ইগোতে লাগে। পদোন্নতির সাথে সাথে মানুষের ইগোও বেড়ে যায়। সেই ইগো আবার খুব অল্পেই আহত হয়।
ভেবেছিলাম টিচার্স রুমে এসে ওই স্যারকে জিজ্ঞেস করবো – কেন তিনি আমাকে আসতে মানা করে নিজে এসেছিলেন গতকাল। কিন্তু কিছুই বললাম না। কারণ এসব ব্যাপারে তাঁর উত্তর রেডি থাকে। তিনি এত সুন্দর করে মোলায়েম ভাষায় বুঝিয়ে দেবেন যে মনে হবে স্বয়ং প্রিন্সিপাল স্যার সকালে তাঁর বাসায় গিয়ে তাঁকে ডেকে নিয়ে এসেছেন কলেজে।
“প্রদীপ,
আগামী কালের প্রোগ্রাম তুমি জানো তো? সকাল আটটার মধ্যে কলেজে চলে আসবে।“ – সাঈদ স্যার
ব্যস্তভাবে বললেন।
আগামীকাল
তো শুক্রবার। হরতালে আসিনি বলে কি শুক্রবারে এসে তা পূরণ করে দিতে হবে? গতকাল কি এই
সিদ্ধান্তও হয়ে গেছে?
“আগামী
কাল তো স্যার শুক্রবার। কেন আসতে হবে?” – ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“তুমি
জানো না? কাল তো কলেজের পিকনিক। সবাই জানে, আর তুমি জানো না। ছোলাইমান ভাই, আপনি প্রদীপকে
বলেননি কিছু?”
“আমি
তো ভেবেছি সে জানে।“
জানা
গেলো, আগামীকাল কলেজের পিকনিক। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই এর প্রস্তুতি চলছে। কমিটি করা
হয়েছে শিক্ষকদের নিয়ে। সাঈদ স্যার কমিটির হেড। ছোলাইমান স্যার ডেপুটি হেড। সবাই সবকিছু
জানেন, আর আমি এসব কিছুর খবরই রাখলাম না?
ছোলাইমান
স্যার বিরক্ত হয়ে ধমক দিলেন আমাকে, “আপনি কি কানে খাটো নাকি? এতদিন ধরে পিকনিকের কথা
হচ্ছে, আপনি কিছুই শোনেননি? আপনাকে কি বাসায় গিয়ে দাওয়াত দিয়ে আসতে হবে? কোন্ জগতে
থাকেন আপনি?”
সত্যিই
তো – কোন্ জগতে থাকি আমি?
প্রতিবছর কলেজের শিক্ষকদের পিকনিক হয়। গতবছর কাপ্তাই গিয়েছিলাম। প্রিন্সিপাল স্যার বায়বীয় চা খাইয়েছিলেন। এবার যাওয়া হচ্ছে মেরিন একাডেমিতে। তাই সকালে কলেজে আসতে হবে। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে মেরিন একাডেমিতে।
পিকনিক সংক্রান্ত আলোচনা আরো কিছুদূর গড়াবার আগেই শংকর স্যারের হুইসেল বেজে উঠলো। মাঠে যেতে হবে। ছেলেমেয়েদের সাথে সার্জেন্ট মেসের পাশ দিয়ে গিয়ে বড় পুকুরের পাড় ধরে ঝোপ-ঝাড় পার হয়ে ষোল কোয়ার্টারের মাঠ।
শীতের সকাল। রোদের তেজে কিছু আরাম লাগছে। কিন্তু একটু পরেই রোদের তেজ বাড়তে শুরু করেছে। ক্রীড়াবিদ ছাত্র-ছাত্রীদের হাউজভিত্তিক প্রতিযোগিতার কিছু কিছু ইভেন্টের ফাইনাল হয়ে যাচ্ছে। মনযোগ দিয়ে দীর্ঘ লাফ দেখছি। আলী আশরাফ অনেকক্ষণ থেকেই কানের কাছে ফিজিক্সের থিওরি কপচাচ্ছে। দীর্ঘ লাফের সাথে গতিজড়তার সম্পর্ক নিয়ে সে বেশ উত্তেজিত। মনে হচ্ছে নিউটন নয়, সে নিজেই আবিষ্কার করেছে গতি জড়তা, স্থিতি জড়তা এসব।
“স্যার দেখেন, এই ছেলেটা যদি আরেকটু বেশি স্পিডে দৌড়ে এসে লাফটা দিতো – তাহলে আরো কয়েক ফুট বেশি যেতে পারতো। ই ইকুয়েল টু হাফ এম ভি স্কয়ার। এখানে ভি যদি একটু বেশি হতো …”
ফিজিক্সের
প্রতি এরকম উৎসাহ দেখে আমার খুশি হবার কথা। কিন্তু যে ছেলেটার কথা বলছে আলী আশরাফ,
তার নাম আবদুর রহিম। তাকে তো নিউটনের সূত্র বুঝানোর কোন উপায় নেই। সে ক্লাস সেভেনকে
এতই ভালোবেসে ফেলেছে যে ক্লাস এইটে উঠতে পারেনি। এবছর তার ক্লাস সেভেন সেকেন্ড ইয়ার
চলছে। গতি জড়তার বিন্দু-বিসর্গ না জেনেও সে এত লম্বা দূরত্ব লাফ দিয়ে পার হচ্ছে। আর
আলী আশরাফ গতি জড়তার সমস্ত সূত্র জানার পরেও লাফ দিয়ে এর অর্ধেকটাও পার হতে পারবে না
– সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
দীর্ঘলম্ফ
শেষ হলো। আমার বন্ধু আবুল হোসেন খান মাসুদ হাউজের মানুষ। তাদের হাউজ থেকে মনে হয় কেউ
ফার্স্ট হচ্ছে। দীর্ঘলম্ফের রেজাল্টে সে যেভাবে উচ্চলম্ফ দিতে শুরু করেছে – বুঝতে পারছি
তার উৎসাহ কোন্ মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমার হামিদ হাউজের ক্যাপ্টেন হলেন সুপাল স্যার।
তিনি এসব ব্যাপারে কর্তব্যের বাইরে তেমন কোন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না।
এর
পরের ইভেন্ট বর্শা নিক্ষেপ। ওটা হবে মাঠের একেবারে দূরপ্রান্তে। ইলেভেনের রেজাউল করিম
খুবই দক্ষ ক্রীড়াবিদ। সে বর্শা ছুড়লে মনে হয় – মাঠের এক দিক থেকে অন্য দিকে গিয়ে পড়বে।
সে কোত্থেকে দৌড়ে সামনে এসে বললো – স্যার আমার হিটটা একটু দেখবেন।
আমি
আলী আশরাফকে বললাম, “আশরাফ, তুমি রেজাউলকে প্রোজেক্টাইল মোশানটা ভালো করে বুঝিয়ে দাও।
কীভাবে বর্শা নিক্ষেপ করলে সবচেয়ে বেশি দূরে যাবে – সেই ফিজিক্স তো তুমি জানো। এবার
প্র্যাক্টিক্যালি দেখিয়ে দাও।“
“পঁয়তাল্লিশ
ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে মারতে হবে স্যার।“ – আশরাফ গম্ভীরভাবে বললো।
“তুই
গিয়ে মার্ না দেখি – কতটুক নিতে পারস। দেখবি নিজের বর্শা নিজের গায়ে বিঁধে আছে পঁয়তাল্লিশ
ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে।"
ইকবালের
কথায় হো হো করে হেসে উঠলো তার বন্ধুরা। দেখলাম ইকবাল, নোমান, ইরফান, আদেল, মতিন, নাসির
– সবাই এসে জুটেছে। খেলাধুলায় এদের খুব দক্ষতা আছে বলে শুনিনি – কিন্তু দুষ্টুমিতে
ওস্তাদ সবাই।
“স্যার,
স্যার –“
দেখলাম
পিয়ন ইদ্রিস ছুটতে ছুটতে আসছেন।
“কী
ব্যাপার ইদ্রিস ভাই?”
“আপনাকে
প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন। এখনি যেতে বলেছেন।“
প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন শুনলেই আমার কেমন যেন ভয় লাগে। কর্তাব্যক্তিদের ব্যাপারে আমার ফোবিয়া আছে। আবার পুকুর-পাড়ের ঝোপ-ঝাড় পেরিয়ে কলেজে ফেরার সময় ভাবছি – কী কারণে প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ডাকতে পারেন। গতকাল যে আসিনি সে ব্যাপারে কি ভাইস-প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আবার অভিযোগ করেছেন? আমি তো কোন প্রতিবাদ করিনি। অ্যাবসেন্ট দিয়েছেন হিসেবে এক দিনের বেতন কাটতেই পারেন, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এখন আবার ডেকে নিয়ে ধমক দিলে তো মুশকিল। আর কী কাজে ডাকতে পারেন? আমি কলেজের প্রশাসনিক কোন কাজের উপযুক্ত নই। তবে কি আবার স্কোয়ার্ডন লিডার সোবহান সাহেবের আগমন ঘটেছে? সোবহান সাহেবের সঙ্গে কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর কোয়ান্টাম মেথড সংক্রান্ত আলোচনার পর আর কোন যোগাযোগ হয়নি।
জোরে জোরে হেঁটে কলেজে আসতে আসতে ঘেমে গিয়েছি। চোখে-মুখে পানি দেয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকতেই গানের শব্দ কানে এলো। আমাদের বাথরুমের সাথে লাগানো প্রিন্সিপাল স্যারের বাথরুম। ভেন্টিলেটার দিয়ে ভেসে আসছে প্রিন্সিপাল স্যারের গান, “ও তোতা পাখি রে – হে হে হে – শিকল খুলে হে হেহে – উড়িয়ে দেবো হে হে হে –।“ এই গান যদি কোন তোতা পাখিকে শোনানো হয়, শিকল খুলে দিতে হবে না, শিকল ছিঁড়ে পালাবে সে। স্যারের গানের চেয়েও গানের মাঝখানে হে হে হে – শুনে হাসি পেয়ে গেল। জোরে পানি ছেড়ে আমার হাসির শব্দ চাপা দিলাম। এখন এই গানের ব্যাপারটা পুরোটাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। নইলে প্রিন্সিপাল স্যারের সামনে যদি মনে পড়ে যায় এবং হাসি চলে আসে – তাহলে চাকরি থাকবে না।
প্রিন্সিপাল স্যারের দরজায় লাল বাতি জ্বলছে। মানে কী? প্রিন্সিপাল স্যার লাল বাতি জ্বালিয়ে দিয়ে “ও তোতা পাখিরে” গাইছেন? যা খুশি তাই তিনি করতে পারেন তাঁর রুমে। কিন্তু লাল বাতি জ্বলন্ত অবস্থায় আমি তো উঁকি মারতে পারি না। দরজার সামনে সাধারণত টুল নিয়ে বসে থাকেন পিয়ন আবুল হোসেন। এখন তাঁকেও দেখা যাচ্ছে না। কী করি?
বারান্দায়
দাঁড়িয়ে ডানদিকে তাকালাম। দেখলাম সুচরিত স্যার বসে আছেন ম্যাডামদের কমনরুমে দরজার দিকে
মুখ করে। গম্ভীরভাবে হাত নেড়ে কথা বলছেন – সম্ভবত রিফাৎ আরা ম্যাডামের সাথে। আমাকে
দেখেই সুচরিত স্যার বললেন, “এই তো তিনি এসে গেছেন।“
সুচরিত
স্যার বের হয়ে এলেন। তাঁর পেছনে রিফাৎ আরা ম্যাডাম ও নাসরীন বানু ম্যাডাম।
“চলেন
প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে।“– গম্ভীরভাবে বললেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম।
“কী
হয়েছে ম্যাডাম?”
“ভয় পাচ্ছেন কেন? ভয়ের কিছু নেই। বিতর্কের চিঠি এসেছে। প্রিন্সিপাল স্যার কথা বলবেন বিতর্ক কমিটির সাথে।“– রিফাৎ আরা ম্যাডাম বললেন।
টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শাহীন কলেজ চট্টগ্রাম ইতোমধ্যে ফার্স্ট রাউন্ড ও সেকেন্ড রাউন্ডে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে। বিতর্কের স্ক্রিপ্ট লেখা, তার্কিকদের অনুশীলন করানো ইত্যাদি হাজারো কাজের বেশিরভাগই সামলাচ্ছেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম, নাসরীন বানু ম্যাডাম, আর সুচরিত স্যার। আমাকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে, তবে আমি তেমন কোন কাজে আসি না।
রিফাৎ
আরা ম্যাডাম প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের লালবাতিকে থোড়াই কেয়ার করে দরজার পর্দা সরিয়ে
বললেন, “স্যার আসি?”
“প্লিজ
আসেন।“
আমরা রুমে ঢুকলাম। প্রিন্সিপাল স্যারের টেবিলের সামনে মোট তিনটি চেয়ার আছে। আমার দাঁড়িয়ে থাকতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যার তাঁর কর্কশ কলিংবেল টিপে অর্ডার দিলেন আরেকটি চেয়ার নিয়ে আসতে।
“আপনারা
সবাই আশা করি চিঠিটি পড়েছেন। এবার আমাদের কঠিন পরীক্ষা।“ – প্রিন্সিপাল স্যার বেশ সিরিয়াস
ভঙ্গিতে বলছেন।
“আমরা
এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। বিতর্কের বিষয় – দরিদ্রবিশ্বে শিশুশ্রমের অধিকার দেয়া উচিত।
আমাদের বলতে হবে এর পক্ষে। আর বিপক্ষে বলবে ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল। রেকর্ডিং হবে ফেব্রুয়ারির
৮ তারিখ।“
“আমাদের
হাতে আছে মাত্র বারো দিন।“ – নাসরীন বানু ম্যাডাম বললেন।
“বিতর্কের
বিষয়টা তো স্যার একেবারেই আমাদের বিপক্ষে। শিশুশ্রমের পক্ষে যুক্তি বের করা তো সহজ
নয়। তাছাড়া বিপক্ষে আছে ভিকারুন্নেসা। ভয় লাগছে স্যার।“ – রিফাৎ আরা ম্যাডাম বললেন।
“ভয়কে
জয় করতে হবে ম্যাডাম। কী বলেন মিস্টার প্রদীপ?” – প্রিন্সিপাল স্যার প্রশ্ন করলেন।
এরকম
সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতেই হয়। বললাম, “আমাদের তো চেষ্টা করতে হবে স্যার। অকাট্য
যুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। প্রচুর রেফারেন্স লাগবে। আর সময় যা আছে তাকে কাজে লাগাতে হবে।“
“ঠিক
আছে। আপনাদের চারজনকে ফ্রি করে দিচ্ছি। আমাদের টিমকে নিয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করে দেন।“
“রেফারেন্সের
জন্য তো লাইব্রেরিতে যেতে হবে।“ – সুচরিত স্যার বললেন।
“অবশ্যই
যাবেন। যা করতে হয় করবেন।“ – প্রিন্সিপাল স্যার বললেন।
প্রিন্সিপাল
স্যারের রুম থেকে বের হয়ে একটা খালি ক্লাসরুমে গিয়ে বসলাম। আমাদের তিনজন বিতার্কিককে
ইতোমধ্যেই খবর দেয়া হয়েছে। তারা এসে গেছে। প্রথম বক্তা সৈয়দ নাজমুল কবীর, দ্বিতীয় বক্তা
নাজমুস সেহার অন্তরা, আর দলনেতা তানজীবা সুলতানা রীমা। আগের দুই রাউন্ডেই রীমা শ্রেষ্ঠ
বক্তা হয়েছে। দলের তিনজনই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কিন্তু এবার বিতর্কের বিষয় এবং প্রতিপক্ষ
দুটোই আমাদের প্রতিকুলে। শিশুশ্রমের পক্ষে যুক্তি খুঁজে বের করা অনেক কঠিন হবে। আমাদের
জোর দিতে হবে দরিদ্রবিশ্বের দিকে। প্রমাণ করতে হবে – দরিদ্র বিশ্বে শিশুশ্রমের বিকল্প
এখনো নেই। তারজন্য আমাদের পরিসংখ্যান দরকার। বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের বেশিরভাগই জাতিসংঘের
সংজ্ঞা অনুযায়ী শিশু। এই শিশুদের উপার্জনে তাদের সংসার চলে।
ঠিক
হলো আমি আর সুচরিত স্যার এখনই গিয়ে চট্টগ্রামে যতগুলি লাইব্রেরি আছে সবগুলিতে খোঁজ
করে দরকারি তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করবো। এদিকে রিফাৎ আরা ম্যাডাম আর নাসরীন বানু ম্যাডাম
বিতার্কিকদের নিয়ে স্ক্রিপ্টের মূল পয়েন্টগুলি লিখে ফেলবেন।
“কালকে
আসবেন কীভাবে কলেজে?” – রিফাৎ আরা ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম।
“সকালে
বেইজ থেকে গাড়ি যাবে – কথা হয়েছে। প্রতিদিন যেখান থেকে উঠেন সেখানে থাকবেন সকাল সাতটায়।“
এগারোটায়
কলেজ থেকে বের হলাম আমি আর সুচরিত স্যার। মেইন গার্ডরুমের দিকে যেতে হলে অনেকবেশি হাঁটতে
হবে। তার চেয়ে কাঠগড় দিয়ে গেলে সুবিধা হয়। এদিকে গ্রামের ভেতর দিয়ে কাঠগড় আসার রাস্তাটি
খুবই সরু এবং ভাঙাচোরা। শাহীন কলেজের অনেক স্টুডেন্ট এদিকে মেস করেও থাকে। কাঠগড় এসে
শহর এলাকার বাসে উঠলাম।
“দেখেন
কী অবস্থা। যাচ্ছি কলেজের কাজে। অথচ ট্যাক্সিভাড়া পর্যন্ত দিলো না।“ -সুচরিত স্যার
শহর এলাকার বাসের উপর কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন।
“আপনি
চাইলেই তো পারতেন।“
“চাইতে
হবে কেন? একটা সিস্টেম থাকবে না?”
তারপর
সুচরিত স্যার তাঁর বন্ধুদের গল্প শুরু করলেন। বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানিতে তাঁর বন্ধুরা
গাড়ির সুবিধা পাচ্ছে, কত কত বোনাস পাচ্ছে, লভ্যাংশ পাচ্ছে, শেয়ার পাচ্ছে এসব বললেন।
টাকা-পয়সার এত যে সূক্ষ্ম মাপজোঁক আছে তা আমি জানতামই না।
নিউমার্কেটের
মোড়ে আসতেই সোয়া বারোটা বেজে গেলো। এখানে নেমে মিউনিসিপাল স্কুলের সামনে দিয়ে হেঁটে
রাইফেল ক্লাব পার হয়ে শহীদ মিনারের সামনে এসে পাবলিক লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। এই লাইব্রেরির
কোথায় কী আছে আমি মোটামুটি জানি। চারতলায় রেফারেন্স সেকশানে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লেবার
ল ইত্যাদি ঘাঁটাঘাঁটি করলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু জুতসই তেমন কিছুই পেলাম না। এবার কী করা
যায়? তিন তলায় সমাজবিজ্ঞানের বইপত্রের তাকেও তেমন কিছু পেলাম না।
ক্ষুধা
লেগেছে প্রচন্ড। কোন একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, “লাঞ্চ করে
নেবেন?”
“চলেন।
কোথায় যাবেন?”
“এরপর
আমরা যাবো ব্রিটিশ কাউন্সিল আর মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরিতে। দুটোই এক জায়গায় – লালদিঘীর
পাড়ে। ওদিকে চলেন, ওখানেই কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেবো।“
“আজ
বৃহস্পতিবার। আমার তো নিরামিষ।“
এরকমই
কিছু একটা আশংকা করেছিলাম। আমি সর্বভূক। ফুটপাতে ইট বিছানো ইটালিয়ান হোটেল থেকে শুরু
করে সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোন জায়গায় খেতে পারি। কিন্তু সুচরিত স্যার হাতের আঙুলে গ্রহ-নক্ষত্র
বেঁধে রাখা সাত্ত্বিক মানুষ। যে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে তাঁর সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক।
তার উপর আজ আবার বৃহস্পতিবার। শুধুমাত্র নিরামিষ রান্না হয় এমন জায়গা খুঁজতে হলে তো
কোন বৈষ্ণবের আখড়ার খোঁজ করতে হয়।
“আমি
বাসায় চলে যাই।“ – সুচরিত স্যার বললেন।
হায়
হায়। কী বলেন তিনি। যে কাজে এসেছি – তার তো কিছুই করা হয়নি। বললাম, “কাজ শেষ না করে
কীভাবে যাবেন? আপনার নিরামিষ খাবারের ভালো ব্যবস্থা আছে একটা জায়গায়। বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণের
পাক। চলেন।
কে
সি দে রোড লালদিঘীর কাছে গিয়ে মিশেছে সিরাজদৌল্লা রোডের সাথে। আন্দরকিল্লার দিকে যাবার
সময় বাম দিকে ছোট্ট একটা গলির ভেতর নবগ্রহ বাড়ি। সেখানেই একটা রেস্টুরেন্টে নিরামিষ
পাওয়া যায়। সুচরিত স্যার সারাজীবন বাসায় থেকেছেন, তাই সম্ভবত বাইরে খেতে অভ্যস্ত নন।
আর আমি শহরের অলিগলি চষে বেড়াই, যেখানে খুশি খেয়ে নিই। তাই এসব চিপাগলির কোথায় কী আছে
– মোটামুটি চিনি।
খাওয়ার
পর ব্রিটিশ কাউন্সিলে ঢুকলাম। এখানে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ঘাঁটাঘাঁটি করলাম কিছুক্ষণ।
বিতর্কে কয়েক লাইন ইংরেজি উদ্ধৃতি দিতে পারলে বক্তৃতার ওজন বাড়ে। তাই শিশুশ্রম সম্পর্কে
ব্রিটিশদের নীতি কী তার কিছু নোট নেয়া হলো।
সেখান
থেকে বের হয়ে পাশের গেট দিয়ে মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। এখানে বেশিরভাগ বই এত
পুরনো যে হাত দিতে ভয় হয়। মনে হয় ধরলেই বইয়ের পাতাগুলি ঝুরঝুর করে ঝরে পড়বে। যে রুমে
সংবাদপত্র আছে – সেখানে প্রচন্ড ভীড়। পাবলিক লাইব্রেরিতেও একই দশা দেখেছি। কি এক দুর্বোধ্য
কারণে সংবাদের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ আমাদের জাতির।
এবার?
যা চাচ্ছিলাম তার আশানুরূপ কোন তথ্য তো পেলাম না। একবার আমার নিজের বাসার বইপত্র ঘেঁটে
দেখবো নাকি? সুচরিত স্যারকে বললাম, “আমার নিজের কিছু বাংলাদেশি ম্যাগাজিন আছে। একবার
দেখবেন না কি – যদি কিছু পাওয়া যায়?”
“চলেন
যাই।“
লালদীঘির
পাড় থেকে রিকশা নিয়ে আমার বাসায় আসতে বেশিক্ষণ লাগলো না। কিন্তু সুচরিত স্যার রিকশায়
উঠেই ঝিমাতে শুরু করেছেন। মনে হচ্ছিলো রিকশা থেকে পড়ে যাবেন যে কোন মুহূর্তে। নিরামিষ
খাবার কি এতটাই নিদ্রাসহায়ক?
গলির
মুখে রিকশা থেকে নামার সময় সুচরিত স্যার চোখ কচলে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় এলাম?”
সরু গলির ভেতর ঢুকে দেখা গেলো সারা পথজুড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত গরুর তরল গোবর ছড়িয়ে আছে। তীব্র দুর্গন্ধে বাতাস ভারী। ভেবেছিলাম সুচরিত স্যার অ্যাবাউট টার্ন করে চলে যাবেন। কিন্তু না, মনে হচ্ছে গোবরের গন্ধটাকে তিনি গন্ধ বলেই মনে করছেন না। নাকি এখনো চোখে ঘুমের ঘোর লেগে আছে জানি না।
বাসায় এসে পুরনো বিচিত্রা ঘেঁটে বাংলাদেশের শিশুশ্রম সম্পর্কে অনেক তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া গেল। মনে হচ্ছে অন্য কোথাও না গিয়ে সরাসরি নিজের বাসায় চলে এলেই হতো। খুশি হয়ে সুচরিত স্যারকে একটা সংখ্যা দেখাতেই তিনি সেটা হাতে নিয়ে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর নাসিকা-গর্জনের শব্দ শোনা গেল।
শিশুশ্রমের
পক্ষে বিপক্ষে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেল। এখন এগুলোকে কাজে লাগিয়ে স্ক্রিপ্ট
রেডি করতে পারলেই হলো। প্রায় দু’ঘন্টা পর পাঁচটার দিকে মশার কামড় খেয়ে জেগে গেলেন সুচরিত
স্যার।
“ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম।“
“হ্যাঁ।
আরো কিছুক্ষণ ঘুমাবেন নাকি?”
“না।
টিউশনিতে যেতে হবে।“
“আমি
বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করেছি। এগুলি কি আপনি নিয়ে যাবেন, নাকি আমি নিয়ে যাবো?”
“না,
আমাকে দেন। আমি দেখি টিউশনি সেরে রিফাৎ আপার বাসায় গিয়ে স্ক্রিপ্টটা রেডি করতে পারি
কি না। আর আপনার হকিং এর বইটা আমাকে দেন। একটু পড়ে দেখি।“
আমার
বুকশেল্ফ থেকে স্টিফেন হকিং এর ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইটা টেনে নিলেন সুচরিত স্যার।
“এইটা
তো ফটোকপি মনে হচ্ছে।“
“মূল
বই কেনার সামর্থ্য কোথায় বলুন। মূল বইয়ের দাম আঠারো শ টাকা। আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে
মূল বইটা নিয়ে ফটোকপি করিয়েছি দুইশ টাকায়।“
“বাংলা
অনুবাদও তো আছে দেখছি। বাংলা ইংরেজি দুটোই নিয়ে যাচ্ছি। পড়া হয়ে গেলে ফেরত দিয়ে দেবো।“
“আপনাকে
কি এগিয়ে দিয়ে আসবো?”
“না,
দরকার নেই। যেই জায়গায় বাসা নিয়েছেন, খুন করে এসে এখানে লুকিয়ে থাকলেও কেউ খুঁজে পাবে
না।“
“একটু
চা খেয়ে যাবেন না কি?”
“খেলে
মন্দ হয় না। বানাবেন?”
“না,
বাসায় চা বানানোর ব্যবস্থা নেই। দোকানে যেতে হবে। গলির মুখেই চায়ের দোকান। ভালো চা
বানায়।“
“না,
না” – প্রায় আঁৎকে উঠলেন সুচরিত স্যার। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আজ বৃহস্পতিবার। তাঁর
চা-ও নিশ্চয় খুব সাত্ত্বিক নিরামিষ চা হতে হবে আজ।
সুচরিত
স্যার আমার বইদুটো আর সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে চলে গেলেন।
>>>>>>>>
গুলজার
সিনেমার সামনে রিকশা থেকে নেমেই দেখলাম ছোলাইমান স্যার, লাইলুন্নাহার ম্যাডাম আর রিফাৎ
আরা ম্যাডাম কথা বলছেন। কাছেই দাঁড়িয়ে আছে ম্যাডামের দুই মেয়ে রেহনুমা ও সানজিদা। আমাকে
দেখেই রিফাৎ আরা ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন, “গতকাল কিছু জোগাড় করতে পেরেছিলেন?”
“সব
তো সুচরিত স্যারকে দিয়ে দিয়েছি গতকাল। তিনি তো রাতেই আপনার বাসায় গিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখবেন
বলেছেন আমাকে।“
“কই
তিনি তো বাসায় আসেননি।“ – রিফাৎ আরা ম্যাডাম কিছুটা অবাক হলেন।
“হয়তো
আজ পিকনিকে নিয়ে যাবে।“ – ছোলাইমান স্যার বললেন।
গতবছরও
পিকনিকে গিয়ে বিতর্কের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম। এবছরও একই ঘটনা ঘটতে চলেছে।
একটা
মিনিবাস এলো কিছুক্ষণ পর। তবুও ভালো – বেইজ থেকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করা গেছে। গাড়িতে
উঠে সংযুক্তা ম্যাডাম, আইভী ম্যাডাম, বিমল স্যার, সুপাল স্যার – সবাইকে দেখলাম। কিন্তু
সুচরিত স্যার নেই। আন্দরকিল্লা থেকেই তাঁর ওঠার কথা।
রিফাৎ আরা ম্যাডাম বেশ হতাশ হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“সুচরিত তো এলেন না। এখন উপায়?”
No comments:
Post a Comment