34<<<<<<<<<<<<<<
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী – ৩৪
“বদ্দা,
ছালা ইবা ত বেশি গরম!”
কৃষিবিজ্ঞানের
নতুন শিক্ষক মোরশেদ স্যার কথাটা বলার সময় আমার কানের এত কাছে মুখ নিয়ে এসেছেন যে তাঁর
গরম নিশ্বাসে আমার একটু অস্বস্তিই লাগছে। সুচরিত স্যার চলে যাবার পর মোরশেদ স্যার বসছেন
তাঁর জায়গায়, অর্থাৎ আমার মুখোমুখি। তিনি কথাবার্তা প্রধানত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাতেই
বলেন, তাতে আমার বেশ আনন্দই হয়। তবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা যাদের কানে চায়নিজ কিংবা
বার্মিজ ভাষার মতো লাগে, তাদের জন্য মোরশেদ স্যার মাঝে মাঝে শুদ্ধ ভাষাও প্রয়োগ করেন।
যেমন একটু আগে বলছিলেন, “আজ একটু মেউলা মেউলা। ঝর পরতে পারে।“ এখন যদি কেউ ‘মেউলা’
কী জিনিস, ‘ঝর’ কী জিনিস বুঝতে না পারেন, তার জন্য মোরশেদ স্যার দায়ী নন। কেউ যদি চট্টগ্রামে
থেকে এসব ‘শুদ্ধ চট্টগ্রামী’ বুঝতে না পারেন তাহলে চলবে কেন? – এরকমই একটা ভাব মোরশেদ
স্যারের।
টিচার্স
রুমের দেয়ালে লাগানো স্টিলের আলমারির ছোট ছোট খোপের মধ্যে আমাদের সামান্য কিছু জিনিসপত্র
থাকে। সুচরিত স্যারের ছেড়ে যাওয়া খোপ খুলে মোরশেদ স্যার অ্যাপ্রনটি বের করেছেন। আমাকে
আর সুচরিত স্যারকে খুবই মোটা তাবুর কাপড়ের অ্যাপ্রন দেয়া হয়েছিল। মোরশেদ স্যারকে কিন্তু
ভালো কাপড়ের নতুন অ্যাপ্রন দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেটা তিনি বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন
ধোয়ার জন্য। আজ আনতে ভুলে গেছেন। অ্যাপ্রন ছাড়া ক্লাসে যে যাওয়া যায় না তা নয়। কয়েকটা
ক্লাস তিনি করেও এসেছেন অ্যাপ্রন ছাড়া। কিন্তু একটু আগে ক্লাস থেকে ফিরে টিচার্স রুমে
ঢুকার সময় প্রিন্সিপাল স্যার দেখে ফেলেছেন।
“মিস্টার
মোরশেদ, হোয়ার ইজ ইওর অ্যাপ্রন?”
প্রিন্সিপাল
স্যারের প্রশ্নে কিছুটা হতভম্ব হয়ে মোরশেদ স্যার উত্তর দিলেন, “ইয়েস স্যার, অ্যাপ্রন
স্যার, আছে স্যার।“
এক
বাক্যে তিন বার স্যার বলা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল কতটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলেন মোরশেদ স্যার।
প্রিন্সিপাল
স্যারকে দেখে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছি। তিনি বললেন, “ওয়েল জেন্টলম্যান, ইউ নো – এ-ও-সি
ইজ কামিং টু ভিজিট আস টুডে।“
এ-ও-সি
কী? এই টার্মটা তো আগে শুনিনি। কোন কিছুর সংক্ষিপ্ত ইংরেজি নাম হবে হয়তো। আমাদের ইংরেজি
জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা প্রিন্সিপাল স্যার ভালো করেই জানেন। তাই তিনি আবার বাংলাতে
বললেন, “আজ নতুন এ-ও-সি স্যার কলেজ ভিজিটে আসছেন, আপনারা জানেন নিশ্চয়। টিফিন আওয়ারের
পর এনি টাইম। উই নিড টু ইমপ্রেস হিম। আপনারা রেডি থাকবেন।“
প্রিন্সিপাল
স্যার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলছিলেন। আমার সিট দরজার একেবারে কাছে। আমি দাঁড়িয়ে
তাঁর পরনের ঘি রঙের সাফারির উজ্জ্বল ধাতব বোতামগুলি দেখছিলাম। ভালো করে তাকালে সেখানে
পুরো রুমের প্রতিবিম্ব দেখা যায়। প্রিন্সিপাল স্যার মোরশেদ স্যারকে জিজ্ঞেস করেছেন
অ্যাপ্রন কোথায়? প্রশাসকদের টেকনিক এটা। জুনিয়র একজনকে বলবেন, বাকিরা নিজগুণে বুঝে
নেবেন। মোরশেদ স্যারকে বলার অর্থ হলো - আমাদের সবাইকে অ্যাপ্রন পরে রেডি হয়ে থাকতে
হবে - কর্তাব্যক্তি আসবেন তাই। মজার বিষয় হচ্ছে প্রিন্সিপাল স্যারকে অ্যাপ্রন পরতে
হয় না। অ্যাপ্রন পরতে হলে এমন চকচকে উজ্জ্বল পোশাক – যাতে ততোধিক উজ্জ্বল ধাতুর বোতাম
লাগানো আছে – মোটা সাদা কাপড়ের নিচে ঢাকা পড়ে যেতো।
প্রিন্সিপাল
স্যার চলে যেতেই মোরশেদ স্যার প্রায় হাহাকার করে উঠলেন।
“অ
বুক, কী গইত্তাম? আঁর ত অ্যাপ্রন নাই। আঁই ত পিন্সিপাল ছারঅরে মিছা কতা কইয়ি।“
অঞ্জন
স্যারের কাছে যে কোন সমস্যারই সমাধান পাওয়া যায়। এখানেও পাওয়া গেল। অঞ্জন স্যার বললেন,
“সুচরিতের ক্যাবিনেটে দেখ। সেখানে তার অ্যাপ্রনটা থাকতে পারে।“
মোরশেদ
স্যার সুচরিত স্যারের খোপ খুলে তাঁর পুরনো অ্যাপ্রনটা গায়ে দিয়েছেন। তাঁর উচ্চতা আর
সুচরিত স্যারের উচ্চতা প্রায় সমান। অ্যাপ্রন গায়ে ফিট হয়েছে। কিন্তু ওটা মোটা ভারী
কাপড়ের তৈরি বলেই ওটাকে ছালার মত লাগছে। মোরশেদ ওটা গায়ে দিয়ে আমার কাছে হেঁটে এসে
কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, “বদ্দা, ছালা ইবা ত বেশি গরম।“
কানের
কাছে মুখ নিয়ে কথা বললে – ফিসফিস করে বলাই প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু মোরশেদ স্যারের কথা
টিচার্স রুমের সবাই শুনতে পেলেন।
ছোলাইমান
স্যার বললেন, “আপনি কি পাঁগল হইছেন? ছালা কোথায় পাইলেন?” ছোলাইমান স্যার পাগলে চন্দ্রবিন্দু
লাগিয়ে দিয়েছেন। শুনতে অদ্ভুত লাগছে।
“আজকে
কে আসবেন বললেন কলেজে?” – ছালার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম।
“এ-ও-সি,
এ-ও-সি আসবেন। নতুন এ-ও-সি।“ – মহিউদ্দিন স্যার বললেন।
“এ-ও-সি
কী?” – আমার প্রশ্নে হাহা করে হেসে উঠলেন ছোলাইমান স্যার।
“এ-ও-সি’র
ভিক্ষা জানেন না আপনি? হাহাহা” – ছোলাইমান স্যার হাসছেন কেন বুঝতে পারছি না। আর ভিক্ষার
প্রশ্ন আসছে কেন? এ-ও-সি কি ভিক্ষা করতে আসবেন? এটা কি কোন সংগঠন – ভিক্ষার নামে চাঁদা
তুলতে আসে?
বললাম,
“জানি না তো। এ-ও-সির ভিক্ষা কী?”
“ভিক্ষা
না, বিক্ষা বিক্ষা। আপনার কানে সমস্যা। এ-ও-সি হলো এয়ার অফিসার কমান্ডিং।“
এতক্ষণে
বুঝতে পারলাম ছোলাইমান স্যার বলছেন ‘ব্যাখ্যা’ – আর আমি শুনছি – ভিক্ষা। মনে হচ্ছে
আসলেই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে আমার।
মহিউদ্দিন
স্যার আমাকে বোঝানোর দায়িত্ব নিলেন। “এ-ও-সি হচ্ছে এয়ার অফিসার কমান্ডিং। এই বেইজের
কমান্ডার তিনি।“
“বেইজ
কমান্ডার?”
“যদি
কোন গ্রুপ ক্যাপ্টেন বেইজের হেড হন, তাহলে তাঁকে বলা হবে – বেইজ কমান্ডার। আর যদি গ্রুপ
ক্যাপ্টেনের সিনিয়র র্যাংকের কেউ –
অর্থাৎ এয়ার কমোডর র্যাংকের কেউ যদি বেইজের হেড হন, তাহলে তাঁকে বলা হবে এয়ার অফিসার
কমান্ডিং – বা এ-ও-সি। নতুন
যিনি এসেছেন – তিনি এয়ার
কমোডর। আজ তিনি আসবেন কলেজে।“
মহিউদ্দিন স্যারের ব্যাখ্যায় ব্যাপারটা
পরিষ্কার হলো। তাই তো বলি –
কলেজে সকাল থেকে এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে কেন। তবে মনে হচ্ছে এটা খুব সংক্ষিপ্ত
ভিজিট হবে। কারণ আগে তো নোটিস দেয়া হয়নি। না কি হয়েছিল আমি জানি না।
একটু পরেই টিফিন আওয়ার। সাধারণত টিফিনের
ঘন্টা পরার আগেই নিয়তিদি নাস্তা নিয়ে আসেন। কিন্তু আজ এলেন খালি হাতে। বললেন, “আজ স্যার নাস্তা এখন দেয়া হবে
না। এ-ও-সি স্যার এলে নাস্তা দেয়া হবে।“
কাশেম স্যার খুশি হয়ে বললেন, “তাইলে তো আইজ ভালা খানা পাওয়া
যাইব। কী কন্ দাদাভাই?”
“জ্বি,
এ-ও-সি আসবেন, আর খাবার পাবেন না?”
একটু পরেই নাসির স্যার এসে বললেন, “আপনারা যারা ক্লাসটিচার, যার
যার ক্লাসে গিয়ে বলে আসেন –
টিফিন আওয়ারে কেউ যেন ক্লাস থেকে বের না হয়। আজ ক্লাসে বসেই যার যার টিফিন করবে। মনিটরদের
দায়িত্ব দিয়ে আসবেন।“
“টিফিন
যারা কিনে খায়? তাদের কী অবস্থা হবে স্যার?”
“এ-ও-সি
স্যার চলে যাবার পরে টিফিন করতে পারবে। এ-ও-সি স্যার বেশিক্ষণ থাকবেন না।“ নাসির স্যার কথাগুলি দ্রুত বলে দ্রুত বের হয়ে গেলেন। আমি
ছুটলাম ইলেভেনের সি সেকশানে। আজ মনিটর আসেনি। বনকুসুম কালচারাল প্রিফেক্ট। তাকে দায়িত্ব
দিয়ে এলাম সবাইকে ক্লাসে আটকে রাখার জন্য। কতটুকু পারবে কে জানে। ক্লাসের দরজা বন্ধ
করলে জানালা দিয়ে বের হয়ে যাবে। বারান্দার দিকের জানালায় শিক নেই। হয়তো দেখা যাবে –
এ-ও-সি বারান্দায় হাঁটছেন – আর ছাত্ররা জানালা দিয়ে মুখ বের করে বলছে, “আমাদের ক্ষুধা
লেগেছে স্যার।“
হোসনে
আরা ম্যাডামকে দেখা গেলো বারান্দায় গম্ভীরভাবে হাঁটছেন। সাদা শাড়ী পরে এসেছেন আজ। আজ
তিনি ডিউটি অফিসার। সব ক্লাসেই হয়তো রেড এলার্ট জারি করে দেয়া হয়েছে। সবাই চুপচাপ ক্লাসে
বসে আছে।
“এই
শংকর” -
শংকর
স্যারকে ডাকলেন হোসনে আরা ম্যাডাম। বারান্দার অন্যদিকে ছিলেন শংকর স্যার। তিনি মাঠের
মাঝখান দিয়ে দৌড়ে হাজির হলেন হোসনে আরা ম্যাডামের সামনে। শংকর স্যারকে কিছু বলার আগে
আমাকে দেখে বললেন, “প্রদীপ, স্যারদের সবাইকে বলেন টুয়েল্ভ ক্লাসের খালি রুমটাতে গিয়ে
বসতে। ঐ রুমেই মিটিং হবে।“
কয়েক
মিনিটের মধ্যেই স্যার-ম্যাডামদের প্রায় সবাই দ্বাদশ শ্রেণির বড় রুমে বসে গেলাম। টুয়েল্ভ
ক্লাসের এইচএসসির ফরম ফিল-আপ হয়ে গেছে। এখন কোচিং হয় সপ্তাহে পাঁচ দিন। আজ তাদের ছুটি।
আমি চিরকালের ব্যাকবেঞ্চার। যতদূর পেছনে গিয়ে বসা সম্ভব – ততদূরে গিয়ে বসলাম। কিন্তু
মহিউদ্দিন স্যার টেনে নিয়ে গেলেন একেবারে সামনে।
ডায়াসে
তিনটি চেয়ার রাখা হয়েছে পাশাপাশি। এই চেয়ারগুলি ক্লাসরুমের চেয়ার নয়। প্রিন্সিপাল স্যারের
রুমে থাকে – বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য। ডায়াসের পাশে একটা টেবিলে একটা চব্বিশ ইঞ্চি টেলিভিশন
– লাল ফিতা দিয়ে বাঁধা। ব্রান্ড নেম সনি-র ওয়াই ঢাকা পড়ে গেছে লাল ফিতার নিচে। তার
কাঁধের উপর টেলিভিশনের রিমোট। মনে হচ্ছে এই টেলিভিশনের ফিতা কাটবেন – স্বয়ং এ-ও-সি।
এমন
সময় প্রিন্সিপাল স্যার, নাসির স্যার আর শিরিন ম্যাডাম এলেন। তাঁদের পেছনে অঞ্জন স্যার
আর সাঈদ স্যারও এলেন। আমরা সবাই উঠে দাঁড়ালাম।
“প্লিজ,
প্লিজ বি সিটেড। নাসির সাহেব, টিভি-তে কি কানেকশান দেয়া উচিত?” – প্রিন্সিপাল স্যার
বললেন।
অঞ্জন
স্যার ছুটে এসে বললেন, “সেটাই ভালো হবে স্যার। কানেকশান দিয়ে রাখলে এ-ও-সি স্যার রিমোট
টিপে টেলিভিশন উদ্বোধন করতে পারবেন।“ – বলেই টেলিভিশনের চারদিকে হাত বুলাতে লাগলেন।
বুঝলাম টিভির ইলেকট্রিক ক্যাবল খুঁজছেন। বাসার টেলিভিশনের ইলেকট্রিক ক্যাবল আর প্লাগ
টিভির পেছনে পড়ে থাকে। কিন্তু এটাতো নতুন টিভি। বোঝা যাচ্ছে একটু আগে বেরিয়েছে প্যাকেট
থেকে। এটার তার তো এখনো গুটানো থাকার কথা। বললাম, “পেছনে হাত দেন স্যার, পেয়ে যাবেন।
না না স্যার, সেদিকে নয়, টেলিভিশনের পেছনে।“
“মিস্টার
প্রদীপকে দেন – ফিজিক্সের মানুষ। সেট করে দেবেন।“ – প্রিন্সিপাল স্যার বললেন। এটুকুই
আমার জন্য আদেশ।
ক্লাসরুমে
প্লাগের যে পয়েন্টটা আছে সেটা টিভির টেবিল থেকে অনেক দূরে। টেবিল সরাতে হলো। কোন রকমে
সংযোগ দেয়া হলো। কিন্তু টেলিভিশনের একটিমাত্র চ্যানেল – খোলে তো বিকাল পাঁচটায়। এখন
টিভি চালু করলে একটা মাল্টি-কালার স্ক্রিন দেখা যাবার কথা। কিন্তু আউটডোর-অ্যান্টেনা
ছাড়া তো তা হবে না। এখন খুললে ঝাঁঝালো ঝিলিমিলি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না।
“স্যার,
ও-সি-এডমিন স্যার আসছেন” – হোসনে আরা ম্যাডাম দ্রুত এসে খবর দিলেন। প্রিন্সিপাল স্যার
ছুটলেন সবার আগে, তাঁকে অনুসরণ করলেন নাসির স্যার আর শিরিন ম্যাডাম। তাঁদের অনুসরণ
করলেন – অঞ্জন স্যার আর সাঈদ স্যার। আমি টিভি-টা পাওয়ার মোডে রেখে বেঞ্চে বসে পড়লাম।
“টিভি
না চললে আজ তোমার খবর আছে।“ – মহিউদ্দিন স্যার ফিসফিস করে বললেন। আমি কিছু না বলে ম্যাডামদের
দিকে তাকাচ্ছি। ইভার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। মনে হচ্ছে সে খুব আনন্দ পাচ্ছে। আইভী ম্যাডাম
হাসতে হাসতে ডান হাত তুলে কিছু একটা দেখাচ্ছেন। তাঁর ডান হাতের ঘড়িটা থেকে মনে হচ্ছে
আলো বের হচ্ছে।
“প্রদীপ,
টেলিভিশনের ফিতা তো খুলে গেছে।“ – হাসতে হাসতে বললেন আইভী ম্যাডাম।
“তাড়াতাড়ি
বেঁধে দাও, নইলে খবর আছে তোমার।“ – ইভা বললো। এরা যতই ‘খবর আছে’ বলুক – বিটিভির খবর
তো রাত আটটার আগে পাওয়া যাবে না। তবে ফিতাটা সরে গেছে। তাড়াতাড়ি ওটাকে টেনে স্ক্রিনের
মাঝামাঝি লাল ক্রসের মতো করে রেখে দিলাম।
রিফাৎ
আরা ম্যাডামের হাতে কিছু কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে তিনি টেলিভিশনের উদ্বোধন উপলক্ষে
ভাষণ দেবেন, কিংবা মানপত্র পাঠ করবেন। মানপত্রের ভাষা কী হতে পারে ভাবছি। টিভি সম্পর্কিত
কিছু হবে নিশ্চয়। “হে মহান দূরদর্শন যন্ত্র, আপনার আগমনের ফলে শাহীন কলেজের সাংস্কৃতিক
আবহের বন্যা অপ্রতিরোধ্য হইয়া উঠিবে।“ – এই জাতীয় কিছু? নাকি এ-ও-সির উদ্দেশ্যে বলা
হবে, “হে মহান অতিথি, অত্র বিদ্যাপীঠে আপনার সুকোমল পদার্পণ উপলক্ষে আপনি আমাদের একটি
দূরদর্শন যন্ত্র প্রদান করিয়াছেন, তাহার জন্য অত্র কলেজের সুকোমল বিদ্যার্থী, সুদৃঢ়
অধ্যক্ষ, এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় শিক্ষকমন্ডলীর পক্ষ হইতে আপনাকে জানাই অতলান্তিক কৃতজ্ঞতা।“
– মানপত্রের ভাষা এরকম গম্ভীর দন্তবিনাশক না হলে কি চলে?
“আপনারা
সবাই এদিকে চলে আসুন। গেইটে, গেইটে দাঁড়াতে হবে। আসুন, কুইক কুইক – “ নাসির স্যার এসে
আমাদের সবাইকে তাড়া দিলেন। আমরা যতটা সম্ভব দৌড়ে চলে এলাম গেটের কাছে। দেখলাম পিকনিকে
দেখা সেই মোছো অফিসার হাতে বড় একটা ওয়াকি-টকি নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারকে হাত দিয়ে দেখাচ্ছেন
কে কীভাবে দাঁড়াবেন। গেটের কাছে প্রচন্ড ভীড় হয়ে গেল। সেখানে যেটুকু জায়গা আছে – আমরা
সবাই যদি পাশাপাশি দাঁড়াতে চাই ছয় সাত সারিতে দাঁড়াতে হবে। আর এক লাইনে দাঁড়ালে একেবারে
রাস্তা থেকে শুরু করতে হবে লাইন। সেটাও করা যায়। কিন্তু আমাদের এলোমেলো অবস্থা দেখে
তিনি রেগে গেলেন। রেগে বললেন, “অনলি দি এট্রাকটিভ ফেইসেস উইল বি হিয়ার।“
তাঁর
কথা শুনে প্রিন্সিপাল স্যারও একটু থতমত খেয়ে গেলেন। তৃপ্তি ম্যাডাম যুক্তিবিদ্যার যুক্তিবাদী
মানুষ। তিনি সরাসরি প্রশ্ন করলেন, “এক্ট্রাকটিভ ফেইসের ক্রাইটেরিয়া কী?” তিনি সম্ভবত
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, দেখলাম রিফাত আরা ম্যাডাম পারলে তাঁর মুখ চেপে ধরেন চুপ করানোর
জন্য। তৃপ্তি ম্যাডাম নতুন এসেছেন। অফিসারদের মেজাজ-মর্জি এখনো বুঝতে পারছেন না।
মোছো
অফিসার সম্ভবত তৃপ্তি ম্যাডামের কথাগুলি শুনতে পাননি। তিনি তাঁর হাতের যন্ত্রের নামের
সার্থকতা বজায় রাখছেন – ওয়াকি-টকি নিয়ে ওয়াক করতে করতে টক করছেন। নাসির স্যার বললেন,
“ম্যাডামরা এখানে থাকুন, স্যাররা ভেতরে গিয়ে বসুক স্যার।“ এই প্রস্তাবও যে এক ধরনের
জেন্ডার রেসিজম তা তো এখানে বলা যাবে না।
“হি
ইজ কামিং। হি উইল বি হিয়ার ইন ফাইভ মিনিট্স” – মোছো অফিসার বেশ কমান্ডিং টোনে বললেন।
“অনলি ফিউ অব ইউ স্টে হিয়ার। দি রেস্ট – ব্যাক টু দি রুম, ব্যাক টু দি রুম।“ ইংরেজি
শব্দগুলির যদি ভর থাকতো তাহলে প্রত্যেকটা শব্দ এসে গুলির মতো লাগতো – এতটাই জোর তাদের।
নাসির
স্যার আবার তাড়া দিলেন, “কুইক কুইক।“
আমরা
যেভাবে ‘কুইক’ এসেছিলাম, আবার সেভাবেই ‘কুইক’ রুমে চলে গেলাম। বারান্দা দিয়ে যাবার
সময় দেখলাম ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেমেয়েরা ক্লাসের ভেতর দাঁড়িয়ে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে।
মাস্টারদের এরকম তাড়া-খাওয়া মুরগির ঝাঁকের মত অবস্থা দেখে তাদের মজা তো লাগবেই।
এবার
আর সামনের বেঞ্চে বসলাম না। মাঝামাঝি একটা বেঞ্চে বসলাম। বিমল স্যার আমার পাশে বসে
আস্তে আস্তে বললেন, “সব আপনাদের দোষ। আপনারা বিতর্কে না জিতলে টেলিভিশনও আসতো না, আর
এই ঝামেলাও হতো না। টিফিনও করতে পারলাম না আজকে।“
কাশেম
স্যার সামনের বেঞ্চে বসেছিলেন। তিনি পেছন ফিরে বললেন, “নাস্তা কই রাখছে? অফিসার মেস
থেকে নাকি নাস্তা আসছে?”
“কী
বলেন, অফিসার্স মেস থেকে নাস্তা আসছে আমাদের জন্য?” – আলী হায়দার স্যার বিস্ময় প্রকাশ
করলেন।
“আসতেও
পারে। শুনেছি নতুন এ-ও-সি খুব ভালো মানুষ।“ – আবুল হোসেন খান বললো। সে বেইজের ভেতরের
অনেক খবর রাখে।
অঞ্জন
স্যার আর সাঈদ স্যার দ্রুত রুমে ঢুকলেন। বুঝতে পারলাম অতিথি চলে এসেছেন। একটু পরেই
প্রিন্সিপাল স্যার যাঁকে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলেন তাঁকে দেখে মনে হলো বাস্তবে নয় – সিনেমার
কোন নায়ক যিনি এয়ার-ফোর্স অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। তাঁকে মোছো অফিসারের চেয়েও
কম বয়সী মনে হচ্ছে। অথচ তিনি এয়ার কমোডর। এয়ারফোর্স অফিসারদের প্রায় সবাই সুদর্শন হয়ে
থাকেন। কিন্তু এই এ-ও-সি একটু বাড়াবাড়ি রকমের সুদর্শন। রুমে ঢুকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে
কী সুন্দর হাসলেন। মিলিটারি অফিসাররা সাধারণত বড় রাজনৈতিক নেতা ছাড়া কোন সিভিলিয়ানের
দিকে তাকিয়ে ভুলেও হাসেন না। কিন্তু এই এয়ার অফিসার কমান্ডিং আমাদের মত সাধারণ মাস্টারদের
দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তারপর যা বললেন তাতে আরো আশ্চর্য হলাম।
“বসেন
বসেন। আপনারা শিক্ষক। আপনারা বসবেন, আমরা দাঁড়াবো – এটাই তো হওয়া উচিত। আমি বেইজে নতুন
এসেছি। আপনাদের সাথে জাস্ট একটু দেখা করতে এলাম। আমি বেশিক্ষণ সময় নেবো না। আমার আসলে
কিছু বলারও নেই। আপনাদের কোন সমস্যা হলে আপনাদের প্রিন্সিপালের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন।
আমি যতটুকু পারি করার চেষ্টা করবো।“
মানপত্র
পাঠ কিংবা বক্তৃতা কিছুই হলো না। প্রিন্সিপাল স্যার হাত কচলাতে কচলাতে অনুরোধ করলেন,
“স্যার, কাইন্ডলি আমাদের টেলিভিশনটা যদি উদ্বোধন করতেন।“
“টেলিভিশন
একটা উদ্বোধন করার জিনিস হলো?” – মৃদু হেসে বললেন এ-ও-সি। তিনি সম্ভবত জানতেনও না যে
এখানে তাঁকে দিয়ে একটা টেলিভিশনের ফিতা কাটানো হবে।
একটা
ট্রেতে করে কাঁচি দেয়া হলো। টেলিভিশনের গায়ে লাগানো লাল-ফিতার ফাঁস টুক করে কেটে ফেলা
হলো। আমরা সবাই জোরে হাততালি দিলাম। মনে হলো একটা বিরাট ভুল হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের
খবর দেয়া হয়নি। টেলিভিশন উদ্বোধনের খবর টেলিভিশনে দেখানো হতে পারতো। কিন্তু হলো না।
কোন ক্যামেরা-ম্যানকেও খবর দেয়া হয়নি। মনে হচ্ছে এর পরের বার একটা ক্যামেরা কিনতে হবে
শাহীন কলেজে।
প্রিন্সিপাল
স্যার রিমোটটা এ-ও-সি’র হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “স্যার, যদি রিমোট টিপে টিভিটা চালু
করতেন।“
“এখন
তো টিভিতে কিছু দেখা যাবে বলে মনে হয় না। আমি তো ফিতা কাটলাম। ও-সি-এডমিন সাহেবকে রিমোটটা
দেন। তিনি টিভি অন করুক।“
মোছো
অফিসার রিমোট নিয়ে অন/অফ বাটন ছাড়া অন্যান্য বাটনগুলোর কয়েকটা টিপাটিপি করলেন কিছুক্ষণ।
বুঝাই যাচ্ছে – উনার টেলিভিশনও কোনদিন নিজেকে অন-অফ করতে হয় না। তাঁর টেলিভিশন অন-অফ
করার জন্যও নিশ্চয় সরকারি লোক আছে। আমি আরেকটু হলেই বলে ফেলতাম, উপরের কোণার লাল বাটনে
চাপ দিন। কিন্তু নিজেকে সামলালাম। আমার কাছ থেকে কমান্ড শুনলে হয়তো উনি রেগে গিয়ে এমন
ব্যবস্থা করবেন যে আমাকে হাসপাতালে গিয়ে শরীরের ভেতর থেকে রিমোট বের করাতে হবে। রিমোট
কীভাবে কোন্ দিক দিয়ে প্রবেশ করেছিল তা কাউকে লজ্জায় বলতেও পারবো না।
বেশ
কিছুক্ষণ পর রিমোটটা চোখের সামনে এনে সঠিক বাটন খুঁজে পেলেন। টেপার সাথে সাথে এমন জোরে
শব্দ করে ঝিঁঝঁইঝঁই করে উঠলো টেলিভিশনের পর্দা – মনে হলো ভলিউমটা এত বাড়িয়ে না রাখলেও
পারতাম।
এর
পরেই দ্রুত চলে গেলেন এ-ও-সি। কাশেম স্যার দরকারি প্রশ্নটা করলেন, “আমাদের খানা গেল
কই? অফিসার মেস থেকে নাকি খানা আসতেছে?”
“টেলিভিশন
পাইছেন। খুশি হন। এত খানা খানা কইরেন না।“ – হাসতে হাসতে বললেন সুপাল স্যার।
“বদ্দা,
খানা ন দিব?” – মোরশেদ স্যার প্রশ্নটা আমাকে না করে নাসির স্যারকে করলেই ভালো করতেন।
কিন্তু নাসির স্যার তখন প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে গেটের বাইরে এ-ও-সির গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে
প্রোটোকল রক্ষা করছেন।
“একটা
টেলিভিশন চালু করার জন্য এত আয়োজন আর কোথাও দেখেছেন?” – ফারুকী স্যার কম কথা বলেন।
কিন্তু যেটুকু বলেন – নির্জলা সত্য কথা বলেন।
আমরা
এবার আস্তে ধীরে টিচার্স রুমের দিকে এগোলাম। যেতে যেতে মহিউদ্দিন স্যার বললেন, “ইনি
বেশিদিন থাকবেন না।“
“কীভাবে
বুঝলেন?”
“ইনি
বেশি ভালো মানুষ। আমাদের কপালে ভালোমানুষ সয় না। আমার কথা মিলিয়ে দেখতে পারো।“
ফার্স্ট
ইয়ারের প্র্যাক্টিক্যাল আছে বিকেলে। প্র্যাক্টিক্যাল করানোর জন্য ডেমন্ট্রেটর আছে কলেজে।
আবুল হোসেন খান আমাদের ফিজিক্সের ডেমনেস্ট্রেটর। অথচ তাকে প্র্যাকটিক্যাল করানোর বদলে
দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ক্লাস থ্রির গণিত, সিক্সের ইসলামিয়াত ইত্যাদি পড়ানোর। কেমিস্ট্রির
ডেমোনেস্ট্রেটর পূর্ণিমা এবং বায়োলজির ডেমনেস্ট্রেটর আলী হায়দারেরও একই অবস্থা। প্র্যাকটিক্যাল
আমাকে আর আয়েশা ম্যাডামকেই করাতে হয়। ইদ্রিস ভাই পিয়ন কাম ল্যাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট। চিটাগং
কলেজে দেখেছি একই সাইজের ল্যাবরেটরিতে দুই জন অ্যাসিস্ট্যান্ট আছেন। তাঁদের আর কোন
দায়িত্ব পালন করতে হয় না। এখানে আমার ল্যাবের সময় ইদ্রিস পুরো সময়টা ল্যাবে থাকতেও
পারেন না। কিছুক্ষণ পর পরই তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে অন্য কাজে পাঠানো হয়। আজকেও ল্যাবের
আগে আমাকে ল্যাবের চাবি দিয়ে চলে গেল – ব্যাংকে। মানাও করতে পারি না। কারণ ব্যাংকে
যাচ্ছেন শিক্ষকদের চেক নিয়ে।
এয়ারপোর্টের
অগ্রণী ব্যাংকে আমাদের বেতন জমা হয়। সেই বেতনের টাকা উঠানোর জন্য আমরা চেক দিয়ে পাঠাই
ইদ্রিসভাই, কিংবা কাসেম ভাই, কিংবা মিজান ভাইকে। এই কাজটা তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে
না। অথচ হাসিমুখে করে দেন। আমাদের কোন কাজেই এঁরা কখনো না করেন না। তাই এরা ল্যাবে
থাকতে না পারলেও আমরা কোনভাবে কাজ চালিয়ে নিই।
প্র্যাকটিক্যাল
শেষ করে যন্ত্রপাতিগুলি তাকে তুলে রেখে ল্যাবে তালা দিয়ে টিচার্স রুমে এসে দেখলাম মহিউদ্দিন
স্যার বেশ উস্কোখুস্কোভাবে উদ্বিগ্নমুখে বসে আছেন। তিনি সাধারণত হাসিখুশি মানুষ। তাঁকে
দেখেই বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে। সিনিয়ররা নিজে থেকে না বললে জিজ্ঞেসও করা যায় না
– কী হয়েছে। তাঁর দিকে কয়েকবার তাকালাম। তিনি বিমর্ষমুখে বললেন, “অ্যাক্সিডেন্টের খবর
শুনেছ?”
“কী
অ্যাক্সিডেন্ট?” আঁৎকে উঠলাম আমি।
“ক্লাস
থ্রি’র একটা মেয়ে বেঞ্চের কোণায় পড়ে গিয়ে কপাল কেটে ফেলেছে। বাচ্চা একটা মেয়ে। তুমি
চিনবে – গুলশানের ছোট বোন।“
গুলশানের
ছোট বোন! নিশু! মনে পড়লো গুলশানের সাথে দেখেছি তাকে। লিকলিকে হাত-পা, জোরে বাতাস বইলে
মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে তাকে।
মহিউদ্দিন
স্যারের কাছ থেকে জানলাম, সিক্স পিরিয়ডে হ্যাংগারে ক্লাসের মধ্যেই কীভাবে যেন সে পড়ে
গিয়ে বেঞ্চের কোণায় গিয়ে লাগে। বেঞ্চের কোণা ঢুকে গেছে তার চোখের ঠিক উপরে ভ্রুর মাঝামাঝি।
আরেকটু হলেই চোখে ঢুকে যেতো। তার মা-বাবাকে খবর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এত বাচ্চা একটা মেয়ে, এত কষ্ট পাচ্ছে।
বাসায়
এসে বিকেলে আবার বের হলাম। বাসা থেকে মেডিকেলের দূরত্ব বেশি না। কিন্তু কোন্ ওয়ার্ডে
আছে তো জানি না। হাসপাতালের কোথায় কী আছে কিছুই চিনি না। তথ্যকেন্দ্র নিশ্চয় থাকবে।
ঘন্টাখানেক
পর। শুনেছি হাসপাতালের বেড নাকি পরিষ্কার হয় না। কিন্তু নিশু শুয়ে আছে ধবধবে পরিষ্কার
বিছানার মাঝখানে। মাথা-কপাল-একটা চোখ সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই
সে একচোখে আমাকে দেখলো। আমাকে তার চেনার কথা নয়। বিছানার পাশে একটা টুলে বসা ভদ্রমহিলা
– সম্ভবত তার মা। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। আমি নিশুর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি মনে হয়
একটু হাসতে চেষ্টা করলাম। নিশু ফিক করে হেসে ফেললো। তার সামনের দুটো দাঁত নেই। অদ্ভুত
কার্টুনের মত লাগছে তাকে।
No comments:
Post a Comment