সত্যেন্দ্রনাথ বসু: বোসন কণার জনক
প্রথম
অধ্যায়
বোস থেকে বোসন
বিজ্ঞানের
প্রধান উদ্দেশ্য হলো অজানাকে জানা। কোন বৈজ্ঞানিক কাজকর্মই হঠাৎ করে শুরু হয় না,
বা হঠাৎ করে শেষ হয়ে যায় না। বিজ্ঞান হলো দীর্ঘ ধারাবাহিকতার ফসল। বিজ্ঞানের
ধারাবাহিক গবেষণা ও আবিষ্কারের ফসল আমরা ভোগ করছি প্রতিনিয়ত। পৃথিবীর মোট
জনসংখ্যার তুলনায় বিজ্ঞান গবেষকের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু পৃথিবীর প্রত্যেকটি
মানুষ কোন না কোনভাবে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সুফল ভোগ করছে। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে
দিনে দিনে করে তুলছে অনেক বেশি সুখকর এবং নিরাপদ।
বিশাল বিজ্ঞানবৃক্ষের মূল কান্ড হলো
পদার্থবিজ্ঞান। এখান থেকে বের হয়েছে অনেকগুলো শাখা প্রশাখা। কয়েক হাজার বছর আগে
মানুষের হাতে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বলতে কিছুই ছিল না। তখন মানুষ নিজের চারপাশে যা
কিছু দেখা যায়, যা কিছু ঘটে সেসব পর্যবেক্ষণ করতে করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে
পৌঁছেছে। তাই বড় বড় বস্তু - যেমন সূর্য, চাঁদ, গ্রহ-উপগ্রহ ইত্যাদি নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের
গবেষণা শুরু হয়েছে সবার আগে।
সপ্তদশ শতাব্দীতে স্যার আইজাক নিউটনের
হাত ধরে ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের উদ্ভব হওয়ার পর যান্ত্রিক বল বা mechanical
force এবং
মহাকর্ষ বল বা gravitational force এর গাণিতিক সংজ্ঞা আমরা পাই। তারপর অষ্টাদশ শতাব্দীতে চার্লস কুলম্ব[1] সংজ্ঞা দেন তড়িৎচুম্বক বল বা electromagnetic force-এর।
প্রকৃতির সব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে
বের করার অবিরাম চেষ্টা চলতে থাকে। পদার্থ কী দিয়ে তৈরি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে
শুরু করেছে মানুষ হাজার বছর আগে থেকে। গ্রিক দার্শনিকরা ধারণা দিয়েছেন অ্যাটম (atom)-এর, যার অর্থ হলো অবিভাজ্য বা যাকে ভাঙা যায় না। আমরা অ্যাটমের বাংলা নাম
দিয়েছি পরমাণু। যে পরমাণুকে অবিভাজ্য বলে ধরে নিয়ে প্রায় দু'হাজার বছর কাটিয়ে
দিয়েছে মানুষ, উনবিংশ শতাব্দীর শেষে বিজ্ঞানীরা সেই পরমাণু বিশ্লেষণ করে পেয়ে গেছে
তার একটি মৌলিক উপাদান ইলেকট্রন (electron)।
১৮৯৭ সালে স্যার জে জে থমসন[2] ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন। পরমাণুর একটি মৌলিক উপাদান হলো ইলেকট্রন যা
ইলেকট্রিক চার্জ বা বৈদ্যুতিক আধান বহন করে। পদার্থবিজ্ঞানে মৌলিক উপাদান বলতে
বোঝানো হয় সেইসব উপাদানকে যাদেরকে আর ভাঙা যায় না। এই মৌলিক উপাদানগুলোকে বলা হয়
মৌলিক কণা বা fundamental particles।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দশকে ইলেকট্রন
ছাড়াও আরো অনেকগুলো নতুন আবিষ্কার পুরো পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি পরিবর্তন করে দেয়। ১৮৯৫
সালে বিজ্ঞানী উইলহেল্ম রন্টগেন[3]
এক্স-রে আবিষ্কার করেন। ১৮৯৬ সালে ফ্রান্সের পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি বেকোয়েরেল[4]
আবিষ্কার করেন রেডিও-অ্যাক্টিভিটি বা তেজষ্ক্রিয়তা। পরীক্ষাগারে এক্স-রে আবিষ্কৃত
হলো, তেজষ্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ শনাক্ত করে তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কৃত হলো। কিন্তু
তখনো এক্স-রে কিংবা রেডিও-অ্যাক্টিভিটির সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়নি। দেখা
গেলো এক্স-রে'র বৈশিষ্ট্য অনেকটা আলোর মত, কিন্তু ঠিক আলো নয়। যেমন আলো প্রতিফলত
হয়, কিন্তু এক্স-রে প্রতিফলিত হয় না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, আলো কিংবা
এক্স-রে কী দিয়ে তৈরি? সপ্তদশ শতাব্দীতে নিউটন বলেছেন আলো কণার সমষ্টি। তা যদি ঠিক
হয়ে থাকে, তাহলে কী ধরনের কণা আলো? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলো বিংশ শতাব্দীর
শুরুতে।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ বছর ১৯০০
সালে ম্যাক্স প্ল্যাংক[5] তাঁর black-body radiation law প্রকাশ করেন। প্রকাশিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের
সবচেয়ে প্রভাবশালী গাণিতিক উপাদান প্ল্যাংকের ধ্রুবক, প্রতিষ্ঠিত হয় শক্তির
কোয়ান্টাইজেশান - যেখান থেকে শুরু হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্স। নিউটনের ক্ল্যাসিক্যাল
মেকানিক্স দিয়ে বিজ্ঞানের অনেক সূক্ষ্ম ব্যাপার-স্যাপার ঠিকমতো ব্যাখ্যা করা
যাচ্ছিলো না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স সেসব বিষয়ের সমাধান করতে শুরু করলো কিছুটা
অদ্ভুত পদ্ধতিতে। ম্যাক্স প্ল্যাংকের পথ ধরে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দশকেই আলবার্ট
আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এলেন। ১৯০৫ সালে তিনি প্রকাশ করলেন চারটি
যুগান্তকারী গবেষণাপত্র। তিনি ব্যাখ্যা করলেন কেন এবং কীভাবে ফটো-ইলেকট্রিক ইফেক্ট
(photoelectric effect) ঘটে। তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ তথা
আলোর কণা ফোটনের (photon) প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো।[6]
১৯০৫ সালে আইনস্টাইন যখন ফটো-ইলেকট্রিক
ইফেক্ট সম্পর্কিত গবেষণাপত্র প্রকাশ করছিলেন তখন কলকাতায় সত্যেন বসুর বয়স মাত্র
১১। আইনস্টাইনের নামও তিনি শোনেননি তখনও। সেদিন কেউ জানতো না যে একদিন আইনস্টাইনের
নামের সাথে জুড়ে যাবে একজন বাঙালির নাম - সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ইলেকট্রন ও ফোটনের
মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য আছে তার গাণিতিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিজ্ঞানী
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর হাতে। এবং তা করতে গিয়ে তাঁর নাম আইনস্টাইনের সাথে জুড়ে গিয়েছে
চিরদিনের জন্য। এই বইতে আমরা সেই মানুষটির কথা জানবো।
মহাবিশ্বে যত মৌলিক কণা আছে তাদের
সবগুলোকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। স্টিফেন হকিং তাঁর বিখ্যাত 'ব্রিফ হিস্ট্রি
অব টাইম' (Brief
History of Time)[7]
বইতে খুব সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মহাবিশ্বের সবকিছুকেই (পদার্থ, শক্তি, আলো,
অভিকর্ষ সবকিছু) কণার (particles) ধারণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা
যায়। মৌলিক কণাগুলোকে যে দুভাগে ভাগ করা যায় তাদের একভাগের নাম ফার্মিয়ন (Fermion), অন্যভাগের নাম বোসন (Boson)[8]।
তাদের আবার অনেক শ্রেণিবিভাগ আছে। কণা-পদার্থবিজ্ঞানের (particle physics) স্ট্যান্ডার্ড মডেলে (standard model) ফার্মিয়ন ও বোসনের সব বৈশিষ্ট্য হিসেব করা আছে। ফার্মিয়ন কণার নাম দেয়া
হয়েছে ইতালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির (Enrico Fermi)[9]
নাম অনুসারে। ফার্মি থেকে ফার্মিয়ন। আর বোসন কণার নাম দেয়া হয়েছে আমাদের
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম অনুসারে। বোস থেকে বোসন।
বিজ্ঞানের জগতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর
প্রতি এটা যে কতবড় সম্মান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে আবিষ্কারের জন্য
সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সেই আবিষ্কারটি তিনি করেছিলেন ১৯২৪
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময়। সে হিসেবে বোসন কণার জন্মস্থান ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্যেও আমাদের গর্বের শেষ নেই। কিন্তু শুধুমাত্র গৌরব বোধ করেই
যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করি তাহলে তো হবে না। আমাদের কিছুটা হলেও
বিস্তারিতভাবে জানা উচিত বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর জীবন ও কাজ সম্পর্কে।
যে ফার্মিয়ন ও বোসন কণার কথা আমরা
বললাম, তাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের প্রধান পার্থক্য হলো: ফার্মিয়ন কণাগুলো ফার্মি-ডিরাক স্ট্যাটিসটিক্স মেনে চলে, আর বোসন
কণাগুলো মেনে চলে বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স। ইলেকট্রন হলো ফার্মিয়ন, আর ফোটন
হলো বোসন।
'ফার্মিয়ন' ও 'বোসন' নাম দুটো দিয়েছিলেন
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেকজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব পল ডিরাক।[10]
যে বোস থেকে বোসন কণার নামকরণ হয়েছে সেই
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা আমাদের দেশের সব
বিজ্ঞানপ্রেমীর থাকা উচিত। এই বইতে আমরা সত্যেন বসুর সমগ্র জীবনের উপর আলোকপাত
করার চেষ্টা করবো। কীভাবে কলকাতার এক বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সত্যেন বসু
সরাসরি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও হয়ে উঠলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী।
কীভাবে তিনি গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে, কীভাবে তিনি এলেন
আইনস্টাইনের সংস্পর্শে, খ্যাতির চূড়ান্তে পৌঁছানোর পরেও কতটা নিরাসক্ত ছিলেন তিনি
নাম ও যশের প্রতি। বাবার প্রচন্ড নিষেধ সত্ত্বেও অনুরাগী হয়েছিলেন সঙ্গীতের। বাংলা
ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ সত্যেন বসু স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন
বিজ্ঞান রচনায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বিশ্বপরিচয়' বইটি উৎসর্গ করেছিলেন সত্যেন
বসুকে।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কর্মের ব্যাপ্তি
বিরাট। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করার পর বিশ্বভারতীর উপাচার্য
হয়েছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন। তারপর তিনি
হয়েছিলেন ভারতের জাতীয় অধ্যাপক।
ভারতে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন ও
বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা অব্যাহত আছে। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে S. N. Bose National
Centre for Basic Sciences. কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে
সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে খুব একটা উৎসাহ সাধারণত চোখে পড়ে না। অবশ্য বিজ্ঞান ও
বিজ্ঞানী সম্পর্কে আমাদের উৎসাহ তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।
২০১২ সালে হিগ্স বোসন আবিষ্কার এবং তার
পরের বছর ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী পিটার হিগ্স ও বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস
ইংলার্টের নোবেল পুরষ্কার পাবার পর সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে বাঙালিদের উৎসাহ
হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল কিছুদিনের জন্য। এর কারণ হলো প্রচারমাধ্যমে হিগ্স বোসন
সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার। হিগ্স বোসন সম্পর্কে এত বেশি প্রচারের কারণ হলো
ঘটনাচক্রে হিগ্স বোসনের নাম হয়ে গিয়েছে 'গড পার্টিক্যাল'। নোবেলবিজয়ী
পদার্থবিজ্ঞানী লিওন লেডারম্যান[11]
তাঁর 'দি গড পার্টিক্যাল' বইটা প্রকাশের পর হিগ্স বোসনের প্রচলিত নাম হয়ে যায় গড়
পার্টিক্যাল। এই নামের কারণে বিজ্ঞানের চেয়েও অবৈজ্ঞানিক প্রচার বেশি চলেছে।
হিগ্স বোসনের নামে যেহেতু বোসন আছে
সেহেতু অনেকেই - বিশেষ করে ভারতীয় বাঙালিরা এই বলে হায় হায় করতে শুরু করে যে
সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে প্রাপ্য সম্মান থেকে, প্রাপ্য নোবেল পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত করা
হয়েছে। এটা সত্যেন বসুর প্রতি ভালোবাসার বহিপ্রকাশ। কিন্তু নোবেল পুরষ্কারের
শর্তগুলো মনে রাখলে এত হা-হুতাশ করতে হতো না। হিগ্স বোসনের অস্তিত্ব সংক্রান্ত
তত্ত্বীয় গবেষণাপত্র ১৯৬৪ সালে প্রথম প্রকাশ করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার হিগ্স[12]।
একই বছর আলাদাভাবে এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন আরো দুইটি বৈজ্ঞানিক দল। এ সংক্রান্ত মোট
তিনটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। তত্ত্ব যতই ভালো হোক, যতই সুন্দরভাবে
গাণিতিকভাবে প্রমাণিত হোক তাতে নোবেল পুরষ্কার দেওয়ার রীতি নেই। সেই তত্ত্ব যদি
পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয় তবেই তা নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
১৯৬৪ সালের তত্ত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে ২০১২ সালে। ইওরোপের সার্ন (CERN) যদি হাজার কোটি ডলার খরচ করে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (LHC) নির্মাণ করে পরীক্ষা না চালাতো, কিংবা পিটার হিগ্স বা ফ্রান্সিস
ইংলার্টের জীবদ্দশায় হিগ্স বোসন পাওয়া না যেতো তাহলে পিটার হিগ্সও হিগ্স বোসনের
জন্য নোবেল পুরষ্কার পেতেন না। এই বইয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নোবেল পুরষ্কার না
পাওয়া নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এটা ঠিক যে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সাথে
কাজের উল্লেখ না করে আইনস্টাইনের যে কোন পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক জীবনী লেখা অসম্ভব।
কিন্তু সবাই যে তা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে করবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যেমন স্টিফেন
হকিং তাঁর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম-এ বোসন-এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ সত্যেন বসুর
কথা এক লাইনও লিখেননি। ধরে নিলাম সেখানে বোসের চেয়েও বোসন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কিন্তু তিনি যখন পাউলির এক্সক্লুশান প্রিন্সিপালের কথা লিখলেন তখন কিন্তু বিজ্ঞানী
পাউলি সম্পর্কে বেশ কয়েকলাইন লিখলেন। পাউলি সম্পর্কে প্রচলিত মিথও তিনি বাদ দেননি।
আলবার্ট আইনস্টাইন সম্পর্কে ওয়াল্টার আইজাক বেশ বড় একটি জীবনী 'Einstein: His Life and Universe' লিখেছেন ২০০৭ সালে। সেখানে তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে লিখেছেন যে -
সত্যেন বসু যা আবিষ্কার করেছেন তার মর্মার্থ তিনি নিজেই বুঝতে পারেননি, পেরেছিলেন
আইনস্টাইন।[13]
এরকম কথা শুনে আমাদের রাগ হতেই পারে। কিন্তু
বিজ্ঞানে রাগ-অনুরাগের গুরুত্ব খুব একটা নেই। বিজ্ঞান চায় প্রমাণ। সত্যেন্দ্রনাথ
বসু যে তাঁর এত বড় আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন তার প্রমাণ তাঁর
গবেষণাপত্রে নেই। ১৯২৪ সালে দুটো গবেষণাপত্র প্রকাশের পর এ সংক্রান্ত আর কোন
গবেষণাপত্র তিনি প্রকাশ করেননি। বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স সম্পর্কে সব
পদার্থবিজ্ঞানীই জানেন। কিন্তু আইনস্টাইনের সাথে যে 'বোস' জড়িত আছেন তিনি যে একজন
ভারতীয় বাঙালি তা ভারত ও বাংলাদেশের বাইরে অনেকেই জানেন না। এই বাস্তবতা আমাদের
মেনে নিতে হবে। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পরোক্ষ উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো
তাঁকে জানা। শুরু করা যাক তাঁর ছেলেবেলা থেকে।
[1] চার্লস
অগাস্টিন ডি কুলম্ব (১৪/০৬/১৭৩৬ - ২৩/০৮/১৮০৬) ছিলেন ফ্রান্সের মিলিটারি
ইঞ্জিনিয়ার এবং পদার্থবিজ্ঞানী।
[2] ইংরেজ
পদার্থবিজ্ঞানী স্যার জোসেফ জন থমসন (১৮/১২/১৮৫৬ - ৩০/০৮/১৯৪০) ইলেকট্রন আবিষ্কার
করেন। এজন্য তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান ১৯০৬ সালে।
[3] জার্মান
বিজ্ঞানী উইলহেল্ম রন্টগেন (২৭/০৩/১৮৪৫ - ১০/০২/১৯২৩) ১৮৯৫ সালে এক্স-রে আবিষ্কার
করেন। পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় তাঁকে।
[4] ফ্রান্সের
পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি বেকোয়েরেল (১৫/১২/১৮৫২ - ২৫/০৮/১৯০৮) রেডিও-অ্যাক্টিভিটি বা
তেজষ্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন এবং সেজন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান ১৯০৩
সালে।
[5] জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স কার্ল
আর্নস্ট লুডভিগ প্ল্যাংক কোয়ান্টাম মেকানিক্সে অবদানের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার পান ১৯১৮ সালে।
[6] ফটো-ইলেকট্রিক ইফেক্টের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
আবিষ্কারের জন্য আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯২১ সালে।
আইনস্টাইনের গবেষণাপত্রগুলো সম্পর্কে আরো জানার জন্য পড়ুন প্রদীপ দেবের
'আইনস্টাইনের কাল', মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০০৬, ২০১২।
[7] Stephen
Hawking, A Brief History of Time, Bantam Books, New York, 1988.
[8] boson উচ্চারণ বোজন।
[9] এনরিকো
ফার্মি (২৯/০৯/১৯০১ - ২৮/১১/১৯৫৪) পৃথিবীর প্রথম নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর উদ্ভাবন
করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
[10] ইংরেজ
পদার্থবিজ্ঞানী পল অ্যাড্রিয়েন মরিস ডিরাক (০৮/০৮/১৯০২ - ২০/১০/১৯৮৪)
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৩৩ সালে। পল ডিরাক সম্পর্কে আরো জানার
জন্য পড়ুন প্রদীপ দেবের 'কোয়ান্টাম ভালোবাসা', মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৪।
[11] আমেরিকান
পদার্থবিজ্ঞানী লিওন ম্যাক্স লেডারম্যান
(Leon Max Lederman) (১৫/০৭/১৯২২
- ০৩/১০/২০১৮) পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯৮৮
সালে। ১৯৯৩ সালে তাঁর জনপ্রিয় বিজ্ঞানের
বই 'The God Particle: If the
Universe Is the Answer, What is the Question?' প্রকাশিত হবার পর হিগ্স বোসনের নাম হয়ে যায় গড পার্টিক্যাল। অথচ তিনি কিন্তু বইটার নাম দিতে চেয়েছিলেন গডড্যাম পার্টিক্যাল (goddamn particle)। প্রকাশক শুধুমাত্র ব্যবসার খাতিরে বইটার নাম বদলে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। গডের নামে ব্যবসা সব সময়েই খুব ভালো ব্যবসা।
[12] ব্রিটিশ তত্ত্বীয়
পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগ্স (জন্ম: ২৯/০৫/১৯২৯)
১৯৬৪ সালে হিগ্স বোসনের তত্ত্ব দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে হিগ্স বোসন সার্নের লার্জ
হ্যাড্রন কোলাইডারে হিগ্স বোসন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। ২০১৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে
নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় পিটার হিগ্স ও ফ্রান্সিস ইংলার্টকে।
[13] Walter Isaacson, Einstein
His Life and Universe, Simon & Schuster, New York, 2007. Page 329.
I want to be Bose...I love particle physics
ReplyDeleteThank you. I admire your love for particle physics. I hope life and works of SN Bose will inspire you.
DeleteThank you for this biography.it will inspire bengali student.
ReplyDeleteThank you too. If it inspire our students, that would be great.
Delete