নবম অধ্যায়
ইওরোপে
১৯২৪ সালের ১৮
অক্টোবর প্যারিসে পৌঁছলেন সত্যেন বসু। 17 Rue du Sommerard হলো তাঁর প্যারিসের ঠিকানা। এই বাড়িটাতে ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস
অ্যাসোসিয়েশানের অফিস। ইওরোপে ভারতীয় ছাত্র যারা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে
জড়িত তাদের থাকার ব্যবস্থা আছে এখানে। ঢাকা থেকে আসার আগেই এখানে থাকার ব্যবস্থা
করা হয়েছিল সত্যেন বসুর জন্য। সত্যেন বসুর কলকাতার বন্ধু গিরিজাপতি ভট্টাচার্যও
সেই সময় প্যারিসের সেই বাড়িতে ছিলেন। সত্যেন বসুর প্যারিসে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল
মেরি কুরির সাথে দেখা করা এবং যদি সুযোগ পান তাহলে কুরির ল্যাবে কিছুদিন কাজ করা। তাঁর
মূল পরিকল্পনা ছিল ইংল্যান্ডে এক বছর কাজ করা এবং জার্মানিতে এক বছর কাজ করা।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ড[1] এবং ফ্যারাডে ল্যাবের স্যার উইলিয়াম ব্র্যাগের[2] কাছে পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ নেয়ার আশা ছিল সত্যেন বসুর।
রাদারফোর্ড ও ব্র্যাগের ল্যাবে কাজ করার
সুযোগ পেতে সুবিধা হওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হার্টগ দুটো
সুপারিশপত্র লিখে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সত্যেন বসুর প্যারিসের ঠিকানায়। সত্যেন বসু
প্যারিসে পৌঁছাবার আগেই সেগুলো পৌঁছে গিয়েছিল প্যারিসের ঠিকানায়।
স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের কাছে হার্টগ লিখেছিলেন,
"আপনার
সাথে সত্যেন বসুর পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য এই চিঠি। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রিডার। তাঁকে ইওরোপে কাজ করার জন্য দুই বছরের শিক্ষাছুটি
দেয়া হয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট তরুণ পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতজ্ঞ - আইনস্টাইনের
রিলেটিভিটি সম্পর্কিত গবেষণা করছেন। মেঘনাদ সাহার সাথে যৌথভাবে তিনি আইনস্টাইনের
কিছু গবেষণাপত্র ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। আমি এই চিঠির সাথে আইনস্টাইনের একটি
পোস্টকার্ডের অনুলিপি পাঠাচ্ছি। আলোর কোয়ান্টার ওপর সত্যেন বসুর একটি সাম্প্রতিক
পেপার আইনস্টাইন নিজে জার্মানিতে অনুবাদ করে Zeitschrift fur Physik জার্নালে প্রকাশ করার
ব্যবস্থা করেছেন। মিস্টার বোসের পরিকল্পনা এখনো ঠিক হয়নি, তবে আমি মনে করি তিনি কেমব্রিজে
কিছুদিন থাকতে চাইবেন এবং আপনার অনুমতি পেলে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবে কিছুদিন কাজ করতে
চাইবেন। আমার বলা উচিত যে সত্যেন বসু শুধু আমার সহকর্মী নন, তিনি আমার বিশেষ
বন্ধু। আমি নিশ্চিত যে আপনি তার সাথে পরিচিত হলে খুশি হবেন এবং তাকে যথাসাধ্য
সাহায্য করবেন। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানের একটি ভালো গবেষণাগার আছে,
কিন্তু নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি করা খুব কঠিন, যদিও আমাদের একটি ওয়ার্কশপও আছে।"
মূল চিঠিটি ছিল নিম্নরূপ:
Office of the Vice-Chancellor,
Dacca University.
Ramna (Dacca), September 12, 1924.
To
Sir
Ernest Rutherford,
Cambridge.
My dear Rutherford,
This is to introduce to you Mr Satyendra Nath Bose, who is a Reader in Physics in this University and who has been given study-leave to work in Europe for 2 years. He is a distinguished young physicist and mathematician, who has been working on Relativity and cognate subjects. He translated into English some of Einstein's memoirs with Meghnad Saha. I enclose a copy of a postcard recently received by him from Einstein with regard to a paper of his on Light quanta, which Einstein has translated and published in the Zeitschrift fur Physik. Mr Bose's plans are not settled, but I think it is possible that he may wish to stay in Cambridge for a time and work in the Cavendish Laboratory if you would give him permission to do so. I should add that Mr Bose is not only my colleague but also my friend and I am sure you will be glad to know him and help him in any way that you can.
We
have a really good Physics Laboratory here, but it is very difficult to get new
apparatus made on the spot, though we have a workshop and a glass blower.
Yours
sincerely,
(signed)
স্যার উইলিয়াম ব্র্যাগকেও এরকম একটি চিঠি লিখেছিলেন ভিসি হার্টগ। ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখের সেই চিঠিতে প্রফেসর হার্টগ লিখেছিলেন:
"আমার বন্ধু ও সহকর্মী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে
দেয়ার উদ্দেশ্যে এই চিঠি লিখছি। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান
বিভাগের রিডার। তাঁকে ইওরোপে কাটানোর জন্য দুবছরের শিক্ষাছুটি দেয়া হয়েছে। মিস্টার
বোস খুবই প্রতিভাবান তরুণ। আইনস্টাইনের কাছ থেকে সম্প্রতি পাওয়া একটি পোস্টকার্ডের
অনুলিপি আমি এখানে সংযুক্ত করছি। মিস্টার বসুর সাম্প্রতিক একটি পেপার আইনস্টাইন
নিজে অনুবাদ করে Zeitschrift fiir Physik জার্নালে প্রকাশ করেছেন।
মিস্টার বোস তাঁর ছুটির বেশিরভাগ সময় কোথায় কাটাবেন আমি জানি না, কিন্তু তিনি যখন
লন্ডন যাবেন তখন আপনি যদি তাঁকে আপনার সাধ্যমত নির্দেশনা দেন আমি খুবই বাধিত হব।
আমরা আমাদের
পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষাগারগুলো স্থাপন করার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। আমি
মনে করি ভারতের যে কোন ভালো পরীক্ষাগারের সাথে তুলনা করা যায় সেগুলোকে। আমি আপনাকে
আমাদের সাম্প্রতিক তথ্য এবং বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠাবো। সেখান থেকে একটি ধারণা
পাবেন আমরা কী কী করছি এখানে। আমি আগামী বছর গ্রীষ্মের শুরুতে বাড়িতে আসার আশা
রাখি। তারপর ফিরে এসে এখানে আমি আমার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করবো ১৯২৫ সালের ৩০শে
নভেম্বর।"
মূল চিঠিটি ছিল নিম্নরূপ:
Office of the Vice-Chancellor,
Dacca University.
Ramna (Dacca), 30th
Sept., 1924.
To
Sir William Bragg, F R S,
Davy (Faraday) Laboratories,
Albemarle Street,
London. W.
My dear Bragg,
This is to introduce to you my
friend and colleague Mr Satyendra Nath Bose, Reader in Physics in this University, to whom we have just given
two years' study
leave to be spent in
Europe. Mr Bose is a brilliant young man. I enclose a copy of a postcard he has
just received from Einstein who translated and published his
last paper in the Zeitschrift fiir Physik. I am not quite sure where Mr Bose will spend the
greater part of his time, but I should
be very grateful if you
would give him any advice in your power when he goes to London.
We
have spent a considerable amount of money on fitting our Physical and Chemical Laboratories which are I think probably as good as any in
India. I will send you a copy of our
Pamphlet of General Information and of our last Annual Report which will give you some idea of what we are doing. I expect to be home
on leave early in the summer of next
year and I then return to finish up my five years' term of office on November 30th, 1925.
With very kind remembrances,
Yours
sincerely,
sd.
Vice-Chancellor
ইওরোপ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন সত্যেন
বসু। প্যারিসে পৌঁছে ভিসির সুপারিশপত্রগুলোর কপি পেয়ে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে ভিসিকে
লিখেছেন:
17 Rue du Sommerard,
Paris
26th Oct. (1924).
Dear Mr Vice-Chancellor,
I have arrived on the 18th instant and found your letter, with the letters of recommendations waiting for me at R L De's place. Many thanks for kindness. I shall be seeing the people at Paris now, and shall write to you again very soon.
Hoping this will find you in best of health.
I
remain,
Yours
sincerely,
Sd.
S N Bose
ইতোমধ্যে
স্যার রাদারফোর্ড প্রফেসর হার্টগকে জানিয়েছেন যে তাঁর ল্যাবে স্থান সংকুলান না
হবার কারণে তিনি সত্যেন বসুকে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবে কাজ করার সুযোগ দিতে পারছেন না।
ভিসি হার্টগ সেই চিঠি প্যারিসে সত্যেন বসুর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। হার্টগ
রাদারফোর্ডের চিঠির উত্তরে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার চিঠি লিখেছিলেন। এবং আবারো
আইনস্টাইনের পোস্টকার্ডটির অনুলিপি পাঠিয়েছিলেন। দেখাই যাচ্ছে যে আইনস্টাইনের
পোস্টকার্ডটি সত্যেন বসুর জন্য বৈজ্ঞানিক জগতে পাসপোর্টের কাজ করেছে। ২০ নভেম্বর
১৯২৪ তারিখে প্রফেসর হার্টগ রাদারফোর্ডকে যে চিঠিটি লিখেছিলেন তা নিম্নরূপ:
Nov. 20, 1924.
Sir E
Rutherford, F R S,
Cavendish
Laboratory, Cambridge.
My dear Rutherford,
Many thanks for your letter of October 23, which I will send on to Bose who is now in Paris. I can quite understand the pressure on your space.
I
herewith enclose a copy of the postcard fiom Einstein.
With
kind regards,
Yours
sincerely,
P J
Hartog
স্যার উইলিয়াম ব্র্যাগ হার্টগের চিঠির কোন উত্তর
দিয়েছিলেন কি না তা জানা যায়নি। সত্যেন বসু ব্র্যাগের ল্যাবে (ফ্যারাডে ল্যাব) কাজ
করেননি। তবে তিনি মরিস ডি ব্রগলির[3] এক্স-রে ল্যাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
ফ্রান্সের ডি-ব্রগলি স্টেটে অতিথি হয়েছিলেন সত্যেন বসু।
মেরি
কুরির সাথে দেখা করে তাঁর সাথে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। মেরি কুরি[4] পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে দু'বার নোবেল পুরষ্কার
পেয়েছেন। প্যারিসে গড়ে তুলেছেন রেডিয়াম ইন্সটিটিউট। সত্যেন বসুর ইচ্ছা মেরি কুরির
ল্যাবে হাতে-কলমে শিক্ষা নেওয়া। গাণিতিক তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হলেও সত্যেন বসু
পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে খুব ইচ্ছুক। ইওরোপে তিনি পরীক্ষণ
পদার্থবিজ্ঞানে অনেক কাজ করেছেন এবং শিখেছেন। পরে ঢাকায় ফিরে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতা
কাজে লাগিয়েছেন। সেই কথায় আমরা পরে আসবো।
মেরি কুরির সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের বিবরণ তিনি নিজের একটি প্রবন্ধে লিখেছেন। পিয়ের কুরির ছাত্র এবং মেরি কুরির বন্ধু বিজ্ঞানী পল লাঁজেভির ইন্সটিটিউটেও সাদর অভ্যর্থনা ও কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন সত্যেন বসু। "মাদামকুরী সান্নিধ্যে" প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন,
"যে মিউনিসিপাল স্কুলে
রেডিয়ামের আবিষ্কার হয়েছিল, সেখানে পিয়ের কুরীর শিষ্য লাঁজ-ভ্যাঁ (Lange-vin) অধ্যক্ষতা করেছেন। আমার
প্রবন্ধ দেখেছেন - সাদরে অভ্যর্থনা করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন - কী শিখতে চাই - কত দিন
থাকবো ইত্যাদি। এঁরই পরিচয়পত্র নিয়ে গেলাম মাদাম কুরীর কাছে। ইচ্ছা - তাঁর
ইন্সটিটিউটে কিছুদিন থেকে তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কিত কাজ নিজ হাতে করতে শিখি। ছোট
খাসকামরায় প্রবেশ করবার অনুমতি পেলাম - বর্ষিয়সী মহিমময়ী মহিলা কালো পোশাক পরে
রয়েছেন। ছবি দেখেছি আগে। চিনলাম ইনি সেই। তাঁর হাতে পরিচয়পত্র দিলাম। সস্নেহে
আপ্যায়ন করলেন - বললেন, যাঁর কাছ থেকে সুপারিশ এনেছ - তাঁর কথা তো ঠেলতে পারি না।
তুমি নিশ্চয়ই আমার কাছে কাজ করবার সুযোগ পাবে - অবশ্য এখনই নয় - ৩/৪ মাস বাদে।
তুমি ভাষাটা একটু দুরস্ত কর, তা না হলে ল্যাবরেটরিতে কাজ করবার বড় অসুবিধা হবে। আর
তোমার তো বিশেষ তাড়া নেই।
মাদাম বলছিলেন বিশুদ্ধ ইংরেজিতে অবলীলাক্রমে প্রায় মিনিট দশেক হবে। কোন সুযোগ জুটলো না তখন জানাতে যে, চলনসই ফরাসী তখনই আমি জানি। এই নিয়ে দেশেই ১০ বছর চেষ্টা করেছি। মাদামের নির্দেশ শিরোধার্য করে ফিরলাম। তারপর ৪/৫ মাস পারী শহরে থেকে যথারীতি কিছুদিন রেডিয়াম ইন্সটিটিউটে কাজ করবার সুযোগ পেয়েছিলাম।"[5]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হার্টগকে কাজের অগ্রগতির কথা জানিয়ে নিয়মিত চিঠি লিখেছেন সত্যেন বসু। সেই সময়ে তারিখবিহীন (সত্যেন বসু তারিখ লিখতে প্রায়ই ভুলে যেতেন) একটি চিঠিতে সত্যেন বসু লিখেছেন মেরি কুরীর সাথে তাঁর সাক্ষাৎকারের কথা। চিঠিটি সম্ভবত ১৯২৪ সালের ডিসেম্বরের কোন এক সময়ে লেখা। তিনি লিখেছেন,
"গত মেইলে আপনার চিঠি
পেয়েছি। আমি এখন মরিস ডি ব্রগলির এক্স-রে ল্যাবে কাজ করছি। মাদাম কুরি আমাকে
আশ্বাস দিয়েছেন যে আগামী বছরের শুরু থেকে তাঁর রেডিয়াম ইন্সটিটিউটে আমাকে কাজ করার
সুযোগ দেবেন।
এই চিঠির সাথে Z. fiir
Physik.-এ প্রকাশিত আমার
পেপারগুলো পাঠাচ্ছি।"
মূল চিঠিটি ছিল নিম্নরূপ:
17 Rue du Sommerard
Paris
Dear Mr Hartog,
Received
your kind letter of the last mail. I am at present working at the X-ray
Laboratory of M de Broglie. Madame Curie also has given me hopes of allowing me
facilities for work in the Radium Institute fiom the beginning of the new year.
I am also sending by this mail the reprint of the papers
that have appeared in Z. fiir Physik.
Hope this will find you in perfect health, With best wishes for happy new year,
I
remain,
Yours
sincerely,
Sd.
S N Bose.
চিঠির সাথে গবেষণাপত্রগুলো পাঠানোর কথা ভুলে
গিয়েছিলেন সত্যেন বসু। ১৯২৫ সালের ২২ জানুয়ারি আরেকটি চিঠির সাথে তিনি
গবেষণাপত্রগুলো পাঠিয়েছিলেন ভিসি হার্টগকে। সেই চিঠিতে তিনি আরো জানিয়েছেন যে
বছরের শুরু থেকে তিনি মেরি কুরির ইন্সটিটিউটে কাজ শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, কলেজ
ডি ফ্রান্সে প্রফেসর লাঁজেভির ক্লাসেও তিনি নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। লাঁজেভি তাঁকে
রিলেটিভিটি থিওরির ওপর একটি তত্ত্বীয় সমস্যার সমাধান করতে বলেছেন।
মূল
চিঠিটি ছিল নিম্নরূপ:
22nd January 25
17 Rue du Sommerard
Paris
Dear Mr Vice-Chancellor,
I am
sending herewith the reprints which I forgot to send you along with my previous
letter. You shall be glad to know, that I have been granted facilities to work
in the Curie Laboratory fiom the beginning of this year. I am also attending
the course of lectures by Prof. Langevin, in the College de France. He
has been also very kind to me, and has suggested me a theoreticalproblem on the
Relativity Theory to work on.
I hope
you are in the best of health and spirits,
Yours
sincerely,
Satyendranath Bose
চিত্র: প্যারিসে আড্ডায় সত্যেন বসু (১৯২৫) |
কলেজ ডি ফ্রান্সে প্রফেসর লাঁজেভি'র ক্লাস করার সময় সত্যেন বসুর সাথে পরিচয়
একুশ বছর বয়সী ফরাসি তরুণী জ্যাকুলিনের। জ্যাকুলিন ভারতীয় দর্শন এবং বৌদ্ধ দর্শনের
প্রতি খুবই আকৃষ্ট হয়েছিল। সেই আকর্ষণে সত্যেন বসুর সাথে তার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে
যায়। প্রফেসর লাঁজেভি সত্যেন বসুর গবেষণার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। স্বয়ং আইনস্টাইন
সত্যেন বসুর দুটো পেপার জার্মানিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছেন সবচেয়ে সম্মানজনক
জার্নালে। তরুণী জ্যাকুলিন স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় প্রতিভার প্রতি দুর্বল। বেশ ভালো
বন্ধুত্ব হয়ে যায় সত্যেন বসু ও জ্যাকুলিনের মধ্যে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা
সত্যেন বসুর। কিছু কিছু বই তিনি জ্যাকুলিনকেও পড়তে দেন। জ্যাকুলিনের বড়ভাই
বারট্রান্ডের সাথেও বন্ধুত্ব হয়ে যায় সত্যেন বসুর। প্যারিসের আনন্দ-উল্লাস-আড্ডার
আনন্দ আরো বেড়ে যায় তাঁর এদের সংস্পর্শে এসে।
চিত্র: জ্যাকুলিন - প্যারিসে সত্যেন বসুর সাথে বন্ধুত্ব হয় তার |
সত্যেন বসু আত্মপ্রচারবিমুখ ছিলেন। তিনি যে আইনস্টাইনের কাছ থেকে স্বীকৃতি
পেয়েছেন তা প্যারিসে তাঁর ভারতীয় বন্ধুদের কাউকে বলেননি শুরুতে। যে বাড়িতে থাকতেন
সেখানে আরো অনেক ভারতীয় ছাত্র ছিলেন সেই সময়। তিনি কাউকে জানাননি যে তিনি
পদার্থবিজ্ঞানের কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিরিজাপতি
ভট্টাচার্যের লেখা[6] থেকে জানা যায় প্যারিসে পৌঁছার প্রায় চার মাস পর ১৯২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে
সত্যেন বোস গিরিজাপতিকে দেখান তাঁর গবেষণাপত্র যেটা আইনস্টাইন জার্মানিতে অনুবাদ
করে প্রকাশ করেছেন। যে প্রবন্ধের শেষে আইনস্টাইনের স্বীকৃতি "Bose's method of derivation of Planck's Law, in
my opinion, signifies a forward step. The method applied here yields the Quantum
theory of ideal gases as I will show elesewhere." ছাপানো হয়েছে। এত বড় একটা
ব্যাপার নিজের মাঝে রেখে চুপচাপ ছিলেন সত্যেন বসু। গিরিজাপতি দেখলেন এর মধ্যেই
সত্যেন বসু শান্ত চুপচাপ দান্তের 'La Divina Commedia' পড়ছেন মূল ইতালিয়ান ভাষায়।
বন্ধুদের কাছে তাঁর গবেষণাপত্র সম্পর্কে কিছু না বললেও সত্যেন বসু নিয়মিত চিঠি লিখছেন বার্লিনে আইনস্টাইনের কাছে। আইনস্টাইনকে তিনি গুরু মানেন। তাই সব চিঠিতে তিনি আইনস্টাইনকে 'রেসপেক্টেড স্যার', ' ডিয়ার মাস্টার', 'রেসপেক্টেড মাস্টার' ইত্যাদি সম্বোধন করেন। বার্লিনে গিয়ে আইনস্টাইনের অধীনে গবেষণা করার সাধ তাঁর অনেক দিনের। আইনস্টাইনকে পাঠানো তাঁর প্রথম গবেষণাপত্রটি যে প্রকাশিত হয়েছে তা ঢাকা থেকে রওনা দেওয়ার আগে জেনে এসেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় পেপারটির ব্যাপারে তাঁর নিজের ধারণা প্রথমটির চেয়েও উঁচুতে ছিল। তিনি তাঁর ছাত্রদেরও বলেছেন যে দ্বিতীয় পেপারটিতে তিনি অনেক নতুন কিছু দেখিয়েছেন। সেই পেপারটির কোন খবর না পেয়ে তিনি প্যারিস থেকে আইনস্টাইনকে চিঠি লিখলেন প্যারিসে পৌঁছানোর এক সপ্তাহ পর ২৬ অক্টোবর। চিঠিতে তিনি লিখলেন,
"আমার পেপারটি আপনি নিজে কষ্ট করে অনুবাদ
করেছেন এবং প্রকাশ করার ব্যবস্থা করেছেন সেজন্য আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা
জানাচ্ছি। ভারতবর্ষ ছেড়ে আসার আগে আমি পেপারটির প্রিন্ট দেখে এসেছি। জুন মাসের
মাঝামাঝি আমি আপনাকে 'Thermal Equilibrium in
the Radiation Field in the Presence
of Matter' শিরোনামে আরেকটি পেপার
পাঠিয়েছিলাম।
আমি এই পেপারটির ব্যাপারে আপনার মতামত
জানার জন্য উৎসুক হয়ে আছি, কারণ আমি মনে করি এই পেপারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি
জানি না এই পেপারটিও Zeitschrift fiir Physik জার্নালে প্রকাশ করা সম্ভব
কি না।
আমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের ছুটি দেয়া হয়েছে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে আমি প্যারিসে এসে পৌঁছেছি। আমি জানি না জার্মানিতে আপনার
অধীনে কাজ করার সুযোগ আমার হবে কি না। আমি খুবই খুশি হব যদি আপনি আমাকে আপনার
অধীনে কাজ করার অনুমতি দেন। যদি দেন তাহলে সেটা হবে আমার দীর্ঘদিনের লালিত
স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
আমি আপনার সিদ্ধান্ত এবং আমার দ্বিতীয় পেপার সম্পর্কে আপনার
মতামত জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি এখানে প্যারিসে।
যদি কোন কারণে দ্বিতীয় পেপারটি এখনো আপনার হাতে গিয়ে না
পৌঁছায়, দয়া করে আমাকে জানান। আমি আপনাকে আমার কাছে যে কপি আছে সেটা পাঠিয়ে
দেবো।"
মূল চিঠিটি ছিল নিম্নরূপ:
17 Rue du Sommerard
Paris
26-10-1924
Dear Master,
My
heartfelt gratitude for taking the trouble of translating the paper yourself
and publishing it. I just saw it inprint before I left India. I have also sent
you about the middle of
June a second paper entitled 'Thermal Equilibrium in the Radiation Field in the Presence of Matter'.
I am rather anxious to know your opinion about it, as I
think it to be rather important.
I don't know whether it will be possible also to have
this paper published in Zeitschrift fiir Physik.
I have been granted leave by my university for 2 years.
I have arrived just a week ago in Paris. I don't know whether it will be
possible for me to work under you in Germany. I shall be glad, however, if you
will grant me the permission to work under you, for it will mean for me the
realization of a long-cherished hope.
I shall wait for your decision as well as your opinion of
my second paper here in Paris.
If the second paper has not reached you by any chance,
please let me know. I shall send you the copy I have with me.
With respects,
Yours
sincerely,
S N Bose
সত্যেন বসুর দ্বিতীয় পেপারটিও যে আইনস্টাইন অনুবাদ
করে ইতোমধ্যে প্রকাশ করে ফেলেছেন তা সত্যেন বসু জানতেন না। আইনস্টাইনও তাঁকে
জানাননি আগে। এবার চিঠির উত্তরে আইনস্টাইনের চিঠি পেয়ে সত্যেন বসু জানতে পারলেন যে
পেপারটি প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠিতে আইনস্টাইন লিখেছেন,
"আপনার ২৬ অক্টোবরের
চিঠির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। খুব শীঘ্র আপনার সাথে দেখা হবে এটা জেনে আমি খুব খুশি
হয়েছি। আপনার পেপার কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রিপ্রিন্টগুলো
আপনার বদলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। আপনি যেকোনো সময় সেগুলো নিতে পারেন। বিকিরণ ও
পদার্থের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাবনার মূল নীতির ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত
নই। তার কারণ আমি আমার মন্তব্যে ব্যাখ্যা করেছি যেটা আপনার পেপারের সাথে প্রকাশিত
হয়েছে। নিচের দুটো শর্তে আপনার নীতি উপযুক্ত নয়:
১) শোষণ সহগ
(absorption coefficient) বিকিরণ ঘনত্বের
উপর নির্ভর করে না।
২) বিকিরণ
ক্ষেত্রে অনুনাদকের (resonator) আচরণ পরিসংখ্যানের
নিয়ম মেনে ঘটা উচিত।
আপনি যখন এখানে আসবেন তখন
দুজনে বসে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারি। "
মূল চিঠিটির ইংরেজি অনুবাদ:
Berlin W. 30
3 November 1924
Dr S
Bose
17,
Rue du Sommerard
Paris.
Dear
Colleague :
Thank you sincerely for your letter of 26 October. I am glad that I shall have the opportunity soon of making your personal acquaintance. Your papers have already appeared sometime ago. Unfortunately the reprints have been sent to me instead of you. You may have them at any time. I am not in agreement with your basic principle concerning the probability of interaction between radiation and matter and have given the reason in a remark which has appeared together with your paper. Your principle is not compatible with the following two conditions :
1) The
absorption coefficient is independent of the radiation density.
2) The behaviour of a resonator in a radiation field should follow fiom the statistical laws as a limiting case.
We may
discuss this together in detail when you come here.
With
kind regards.
Yours
A Einstein
আইনস্টাইনের এই চিঠি পেয়ে সত্যেন বসু কিছুটা আশাহত হলেন। তাঁর ২য় পেপারটিও
যে প্রকাশিত হয়েছে তাতে তাঁর খুশি হবার কথা। কিন্তু তাঁর কাছে আইনস্টাইনের মতামতের
গুরুত্ব অনেক বেশি। আইনস্টাইন তাঁর পেপারের মূল নীতির সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন।
তাহলে আর ঐ পেপারের গ্রহণযোগ্যতা কোথায়? সেই ১৯২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইনের
সাথে দ্বিমত করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই দ্বিতীয় পেপারটার ব্যাপারেই বেশি
আশাবাদী ছিলেন সত্যেন বসু। তিনি আইনস্টাইনের যুক্তিগুলি নিয়ে ভাবলেন। ভাবতে ভাবতে
তাঁর নিজের যুক্তিগুলিকে বিশ্লেষণ করে আরেকটি পেপার লিখলেন। পেপারটি তিনি প্রফেসর
লাঁজেভিকে দেখিয়েছেন। লাঁজেভি বলেছেন পেপারটি প্রকাশযোগ্য। ১৯২৫ সালের ২৭ জানুয়ারি
সত্যেন বসু একটি দীর্ঘ চিঠি লিখলেন আইনস্টাইনকে। আলাদা আরেকটি খামে পাঠালেন তাঁর
কোয়ান্টাম থিওরির তৃতীয় পেপারটি।
সত্যেন বসু আইনস্টাইনকে লিখলেন,
"আমি আপনার ৩রা নভেম্বর লিখিত চিঠি পেয়েছি যেখানে আপনি উল্লেখ করেছেন
সম্ভাবনার সূত্রের মূল নীতির কথা। আমি আপনার আপত্তির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম
এতদিন, তাই সাথে সাথে আপনার চিঠির উত্তর দিইনি। আমার মনে হচ্ছে এই সমস্যার সমাধান
সম্ভব। আমি আমার ধারণাগুলো একটি পেপারের আকারে লিখেছি এবং আলাদা খামে আপনার কাছে
পাঠালাম। মনে হচ্ছে নেগেটিভ আইনস্ট্রালাং[7]-এর ধারণা সঠিক, যেটা আপনিও বলছেন, যেটা
পরিবর্তনশীল বিকিরণ ক্ষেত্রে অনুনাদকের চিরায়ত আচরণের প্রতিফলন। কিন্তু স্বাধীনভাবে
স্বতস্ফূর্ত পরিবর্তনের আরেকটি অতিরিক্ত ধারণার দরকার মনে হয় নেই। আমি নতুন
দৃষ্টিভঙ্গিতে বিকিরণ ক্ষেত্রকে বিবেচনা করার চেষ্টা করেছি। শক্তির কোয়ান্টার
প্রবাহকে তড়িৎচৌম্বকের প্রভাব থেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছি। আমার কেমন যেন মনে
হচ্ছে যে এরকম আলাদা করার দরকার আছে যদি আমরা কোয়ান্টাম থিওরিকে জেনেরালাইজড
রিলেটিভিটি থিওরির সাথে একই লাইনে নিয়ে আসতে চাই।
বিকিরণ ক্ষেত্র সম্পর্কে
যে ধারণার কথা আমি বলতে চাচ্ছি সেটা মনে হয় বোরের পেপার যেটা ১৯২৪ সালে
ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনের মে সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে তার সাথে মিলে যায়। কিন্তু
সেটা আমার ধারণা মাত্র। সত্যি বলতে কী, ভার্চুয়াল ফিল্ড আর ভার্চুয়াল অসসিলেটর
সম্পর্কে আমি সবকিছু ঠিকমত বুঝেছি এমন দাবি করতে পারবো না।
আমি এ সম্পর্কে আপনার
মতামত জানতে বেশি আগ্রহী। আমি প্রফেসর লাঁজেভিকে পেপারটা দেখিয়েছি। তিনি বলেছেন
এটা কৌতূহলোদ্দীপক এবং প্রকাশযোগ্য।
আপনি যে আমাকে উৎসাহ
দিয়েছেন এবং আমার পেপারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন তার জন্য আপনার কাছে আমি কীরকম
কৃতজ্ঞ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমার একটা সংকট মুহূর্তে আপনার পোস্টকার্ড
আমার কাছে এসেছে। এবং সেটা আমার ইওরোপে আসার ব্যাপারে অন্য সবকিছুর চেয়েও বেশি
সাহায্য করেছে। এই শীতের শেষেই আমি বার্লিনে যাবো ঠিক করেছি। আমি আশা করছি সেখানে
আপনার অমূল্য সহযোগিতা এবং নির্দেশনা পাবো।"
মূল চিঠিটি ছিল এরকম:
17 Rue
du Sommerard
Paris
27th January 25
Respected Master,
I
received your kind note of 3rd November in which you mentioned your objections
against the elementary law of probability. I have been thinking about your objections
all along and so did not answer immediately. It seems to me there is a way out
of this difficulty, and I have written down my ideas in the form of a paper
which I send under a separate cover. It seems that the hypothesis of negative
Einstrahlung stands, which, as you have yourself expressed, reflects the
classical behaviour of a resonator in a fluctuating field. But the additional
hypothesis of a spontaneous change, independent of the state of the field,
seems to me not necessary. I have tried to look at the radiation field from a
new standpoint and have sought to separate the propagation of Quantum of energy
from the propagation of electro-magnetic influence. I seem to feel vaguely that
some such separation is necessary if Quantum theory is to be brought in line
with Generalised Relativity Theory.
চিত্র: ২৭/১/১৯২৫ তারিখে আইনস্টাইনকে লেখা সত্যেন বসুর চিঠির প্রথম পৃষ্ঠা |
The
views about the radiation-field, which I have ventured toput forward, seem to
be verymuch like what Bohr has recently expressed in May Phil. Mag. 1924. But
it is only a guess, as I cannot say honestly to have exactly understood all he
means to say, about virtual fields and virtual oscillators.
I am rather anxious to know your opinion about it. I have
shown it to Professor Langevin here and he seems to think it interesting and
worth publishing.
I cannot exactly express how grateful I feel for your
encouragement and the interest you have taken in my papers. Your first post
card came at a critical moment and it has more than any other made this sojourn
to Europe possible for me. I am thinking of going to Berlin at the end of this
winter, where I hope to have your inestimable help and guidance.
Yours
sincerely,
S N Bose
চিত্র: ২৭/১/১৯২৫ তারিখে আইনস্টাইনকে লেখা সত্যেন বসুর চিঠির দ্বিতীয় পৃষ্ঠা |
সত্যেন বসুর এই
তৃতীয় পেপারটির আর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি। আইনস্টাইন এই ব্যাপারে আর কোন মন্তব্য
করেননি, সত্যেন বসুও পেপারটি প্রকাশের কোন চেষ্টা আর করেননি। তিনি আইনস্টাইনকে
এমনভাবে গুরু মানতেন যে আইনস্টাইনের কথা বা মতের বাইরে কিছু করেননি। তিনি যদি পল
লাঁজেভির কথা শুনে পেপারটি ফ্রান্সের কোন জার্নালে প্রকাশ করতেন তাহলেও কিছু কাজ
হতো। এই পেপারের পর পুরো দুই বছর ইওরোপে থাকলেও সত্যেন বসু আর কোন পেপার প্রকাশ
করেননি। কোয়ান্টাম থিওরির উপর আর কোন কাজও তিনি করেননি। তাঁর লক্ষ্য অন্যদিকে ঘুরে
গিয়েছিল। তিনি এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে
গেলেন মরিস ডি ব্রগলির সংস্পর্শে এসে। ঢাকায় ফিরে তিনি এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির
ল্যাবরেটরি গড়ে তুলেছিলেন।
মরিস ডি
ব্রগলির সাথে সত্যেন বসুর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রফেসর পল লাঁজেভি। মরিস ডি
ব্রগলির ছোট ভাই লুই ডি ব্রগলি ছিলেন পল লাঁজেভির ছাত্র। ১৯২৪ সালে তাঁর পিএইচডি
থিসিস শেষ হয়েছে। তাঁর থিসিসে তিনি ম্যাটার ওয়েভ অর্থাৎ যে কোন বস্তুও যে তরঙ্গের
মত আচরণ করতে পারে সে তত্ত্ব দিয়েছিলেন এবং সেজন্য ১৯২৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার পেয়েছিলেন। মরিস এক্স-রে স্পেকট্রোসকোপি নিয়ে গবেষণা করছেন। ডি ব্রগলিরা ফ্রান্সের
ছোটখাট রাজা। তাঁদের নিজেদের আধুনিক ল্যাবরেটরি আছে। তাঁদের বিরাট বাড়িতেও অনেক বড়
ল্যাবরেটরি আছে। সত্যেন বসু মরিসের দুটো ল্যাবেই কাজ করেছেন অনেকদিন। মরিসের
ল্যাবরেটরির প্রধান সহকারী দ্যাভিলিয়র সত্যেন বসুকে হাতে কলমে শিখিয়েছেন এক্স-রে
ক্রিস্টালোগ্রাফির কাজ। ঢাকায় ফিরে সত্যেন বসু ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে এক্স-রে
ক্রিস্টালোগ্রাফির ল্যাব গড়ে তুলেছিলেন।
১৯২৫ সালের অক্টোবর মাসে ফ্রান্স থেকে
বার্লিনে পাড়ি জমালেন সত্যেন বসু। বার্লিন পৌঁছেই আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ পাবার
চেষ্টা করলেন। কিন্তু আইনস্টাইন তখন বার্লিনে ছিলেন না। আইনস্টাইন বার্লিনে ফিরে
আসার পর অনেকবার দেখা হয়েছে সত্যেন বসু ও আইনস্টাইনের। অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে
তাঁদের। সত্যেন বসু আইনস্টাইন প্রসঙ্গে তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন সেসব কথা। কিন্তু আইনস্টাইনের
কাছে তাঁর পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা করার যে কথা ছিল, সে বিষয়ে সত্যেন বসু কোথাও
কিছু লিখেননি।
আইনস্টাইন সত্যেন বসুকে একটি 'লেটার অব
ইনট্রোডাকশান' বা পরিচয়পত্র লিখে দিয়েছিলেন। সেটার ফলে বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে
অনেক সুযোগসুবিধা পেলেন সত্যেন বসু। লাইব্রেরি থেকে বই ইস্যু করে বাসায় নিয়ে আসতে
পারলেন। যেকোনো সেমিনার ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের অনুমতি পেলেন। তিনি সেসব সুযোগের
পূর্ণ সদ্ব্যাবহার করেছিলেন।
সত্যেন বসুর সাথে আইনস্টাইনের নাম
বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স এবং বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশানের কারণে চিরদিনের
জন্য জুড়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু সত্যেন বসু ও আইনস্টাইন কখনোই কোন যৌথ গবেষণা করেননি।
বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশান-এর পেপারটি সত্যেন বসুর ধারণা কাজে লাগিয়ে আইনস্টাইন
নিজেই লিখেছিলেন ১৯২৪ সালের শেষে। সত্যেন বসু তখন ফ্রান্সে ছিলেন কিন্তু তিনি
জানতেনই না যে আইনস্টাইন কী কাজ করছেন।
কীভাবে বোসন কণার নামকরণ হলো,
বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স এবং বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবনের তত্ত্ব কীভাবে
প্রতিষ্ঠিত হলো তা আমরা পরের অধ্যায়ে আলোচনা করবো। আপাতত দেখা যাক বার্লিনে সত্যেন
বসু কী কী করেছিলেন প্রায় এক বছর ধরে।
বার্লিন ছিল সেই সময় আধুনিক
পদার্থবিজ্ঞানের মূল সূতিকাগার। বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের অনেক নায়ক তখন
বার্লিনে। ফ্রিটজ হ্যাবার[8], অটো হ্যান[9], লিসা মেইটনার[10], ওয়াল্টার
বোথে[11], হ্যান্স
গেইগার[12], পিটার ডিবাই,
ম্যাক্স ফন লাউই[13], উলফগং পাউলি[14], ভার্নার
হাইজেনবার্গ[15] - সবার সাথে
দেখা হয়েছে সত্যেন বসুর। তিনি তাঁদের বক্তৃতা শুনেছেন, ক্লাস অ্যাটেন্ড করেছেন।
যখন যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন তাঁদের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখতে চেয়েছেন। আর স্বয়ং
আইনস্টাইন তো আছেনই। আইনস্টাইনের প্রশংসাপত্র প্রকাশিত হয়েছে সত্যেন বসুর
গবেষণাপত্রের সাথে। এর চেয়ে বেশি পরিচিতি তো লাগে না সত্যেন বসুর। বিজ্ঞানীদের
সভায় তখন তাঁর অবারিত দ্বার।
বার্লিনের দিনগুলি সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত
হয়ে সত্যেন বসু তাঁর বন্ধু জ্যাকুলিনকে দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন প্যারিসে। সেখানে
অন্যান্য অনেক বিষয়ের সাথে তিনি লিখেছেন,
চিত্র: বার্লিন থেকে প্যারিসে বন্ধু জ্যাকুলিনকে লেখা সত্যেন বসুর চিঠির ১ম পৃষ্ঠা। ১৯২৬ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত জ্যাকুলিন এই চিঠি আগলে রেখেছিলেন নিজের কাছে। |
চিত্র: বার্লিন থেকে প্যারিসে বন্ধু জ্যাকুলিনকে লেখা সত্যেন বসুর চিঠির ২য় পৃষ্ঠা |
খুব শীঘ্র
শ্রোডিংগারের পেপার নিয়ে আলোচনা হবে। আইনস্টাইনকেও মনে হচ্ছে খুব উত্তেজিত। সেদিন
আমরা একই কম্পার্টমেন্টে আসছিলাম বক্তৃতা শুনে। তিনি খুব উত্তেজিত হয়ে আলোচনা
করছিলেন বক্তৃতার বিষয়বস্তু নিয়ে। তাঁকে স্বীকার করতে হয়েছে যে এটা একটা চমৎকার
ব্যাপার। এই যে নতুন তত্ত্ব সেগুলোর সাথে বিজ্ঞানের অনেক কিছুই জড়িত। অনেক কিছুই
বদলে যাবে। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বের মাঝে মাঝে অযৌক্তিক কার্যকলাপে তিনি একটু
অস্বস্তিতে আছেন। আমরা সবাই চুপ করে ছিলাম। কিন্তু তিনি সারাক্ষণই কথা
বলেছেন।"
সত্যেন বসু আইনস্টাইনের সাথে তাঁর
বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিছু করেছিলেন কি না সে প্রসঙ্গে নিজের কোন লেখায় কিছু প্রকাশ
করেননি। তবে সত্যেন বসুর সাথে পারিবারিকভাবে পরিচিত বিজ্ঞানী অমিতাভ চক্রবর্তী
জানিয়েছেন একটি ঘটনার কথা। সত্যেন বসু আইনস্টাইনের দেয়া সমস্যা নিয়ে তিন দিন অনবরত
চিন্তা করেছিলেন। তারপর একটা সমাধানে পৌঁছে সেই সমাধান নিয়ে আইনস্টাইনের সাথে দেখা
করেছিলেন। আইনস্টাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন সত্যেন বসুর সমাধান। তারপর বললেন,
"বুঝলাম। এই সমাধান ভুল নয়। কিন্তু আমি যেভাবে চাচ্ছি সেভাবে হয়নি। এই সমাধান
থেকে তো নতুন কোন সম্ভাবনা বেরিয়ে আসছে না। দয়া করে এরকম আজেবাজে জিনিস নিয়ে আমার
সময় নষ্ট করো না।"[16] আইনস্টাইনের
কাছ থেকে এরকম কথা শোনার পর সত্যেন বসু হয়তো রাগে দুঃখে অপমানে মনে মনে ঠিক করে
ফেলেছিলেন যে কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে আর কোন কাজ করবেন না। তিনি আর করেনও নি।
পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে সত্যেন বসু
'বোসন' কণার মাধ্যমে তাঁর আসন স্থায়ী করে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে যারা কাজ
করেছেন এই ফিল্ডে, তাঁরা সেখানে সত্যেন বসুর অনুপস্থিতি দেখে ধরে নিয়েছেন যে নতুন
কোয়ান্টাম মেকানিক্সে সত্যেন বসুর তেমন দখল ছিল না।
সত্যেন বসু তারপরও আইনস্টাইনের সঙ্গ
ছাড়েননি যতদিন বার্লিনে ছিলেন। তাঁর স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন,
"১৯২৫
সালে বার্লিন পৌঁছাই। তখন 5 Heberland Strasse এ একটা ছোট Flat-এ আইনস্টাইন পরিবার বাস করতেন। সেখানে অনেক সময় যাবার ও বহুক্ষণ ধরে
নানাবিষয় আলোচনা করার সৌভাগ্য জুটে ছিল আমার।"
... .... .. ... ... ...
আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন
এ দেশে ইংরেজবর্জন আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। বিপ্লবীরা ব্যর্থচেষ্টা করছে সংগ্রাম
করে ইংরেজদের হঠাতে, কংগ্রেস তুলেছে অসহযোগের কথা। আইনস্টাইনের কাছে এটা একটা
রহস্যের মত ঠেকতো।
একদিন তিনি আমাকে প্রশ্ন
করে বসলেন, দেখো ঔপনিবেশিক পশ্চিমী জাতিদের মধ্যে আমার তো ইংরেজদের ভাল মনে হয় -
ফরাসী বা ওলন্দাজের থেকে এরা অনেক ভাল বলেই তো আমার বিশ্বাস - যদিও আমার মত একজন
জার্মান - যে ইংরাজদের (বিশ্বযুদ্ধের পরে) সুখ্যাতি করছে শুনে আশ্চর্য হয়ো না।
আচ্ছা বলতো, সত্যি সত্যি কি তোমরা চাও, যে ইংরেজ তোমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাক।
আমি
বললাম, "নিশ্চয়ই আমরা সকলেই নিজেদের ভাগ্যবিধান নিজেরাই করতে চাই"
তাতেও
তাঁর পুরোপুরি বিশ্বাস হলো না। ঠিক বুঝতে একটি কাল্পনিক প্রশ্ন তুললেন। বললেন,
"ধরো তোমার হাতের কাছে একটা বোতাম রয়েছে, যেটি টিপলে সব ইংরেজ তোমার দেশ থেকে
চলে যাবে তাহলে সত্যই কি তুমি সেই বোতাম টিপে দেবে?"
আমি হেসে বললাম,
"ভগবান যদি এমন একটা সুযোগ আমাকে দেন, তো ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করে সেটি আমি
টিপে দেব।"
তিনি বললেন,
"বটে।" খানিকক্ষণ চুপ করে রইলেন।
আমি বললাম, "আচ্ছা
আপনারা ইহুদীরা তবে কেন চাচ্ছেন, একটা নতুন ইসরায়েল স্থাপনা করতে, আপনিও তো সেই
দিকে বেশ ঝুঁকেছেন।"
তিনি বললেন, "অবশ্য
এবার তোমার কথা আমি বুঝেছি। এটি প্রাণের আবেগের কথা - একে যুক্তিতর্কে বোঝা যায়
না।"[17]
১৯২৬ সালের মাঝামাঝি
জার্মানি থেকে ভারতে ফিরে এসেছিলেন সত্যেন বসু। আইনস্টাইনের সাথে আর কখনো দেখা
হয়নি সত্যেন বসুর। ১৯৫৫ সালে রিলেটিভিটির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বার্ন শহরে
গিয়েছিলেন সত্যেন বসু। কিন্তু তার কিছুদিন আগে আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়।
১৯২৬ সালের অক্টোবর মাসে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন সত্যেন বসু। এবার তিনি প্রফেসর এবং বিভাগীয় প্রধান।
১৯২৬ সালে পল ডিরাক
বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স এবং ফার্মি-ডিরাক স্ট্যাটিসটিক্সের মধ্যে সম্পর্ক
স্থাপন করে দু'ধরনের মৌলিক কণার নাম রাখেন 'বোসন" ও 'ফার্মিয়ন'। চলুন দেখি
সেসব কীভাবে হলো।
[1] নিউজিল্যান্ডে
জন্ম নেয়া ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (৩০/৮/১৮৭১ -
১৯/১০/১৯৩৭) পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন। তাঁকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের জনক
বলা হয়। ১৯০৮ সালে তিনি রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।
[2] স্যার উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগ (২/৭/১৮৬২ -
১২/৩/১৯৪২) ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী। এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফিতে গবেষণার জন্য
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯১৫ সালে। তাঁর ছেলে লরেন্স ব্র্যাগও
নোবেল পুরষ্কার পান একই সাথে একই কাজের জন্য।
[3] মরিস ডি
ব্রগলি (২৭/৪/১৮৭৫ - ১৪/৭/১৯৬০) ছিলেন ফ্রান্সের পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি এক্স-রে
ডিফ্রাকশান ও স্পেকট্রোসকপি নিয়ে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন এবং সে বিষয়ে ব্যাপক
অগ্রগতি সাধন করেছিলেন। তাঁর ছোটভাই লুই ডি ব্রগলি (১৫/৮/১৮৯১ - ১৯/৩/১৯৮৭)
ম্যাটার ওয়েভের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯২৯ সালে।
[4] মেরি কুরি
(৭/১১/১৮৬৭ - ৪/৭/১৯৩৪) সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন প্রদীপ দেবের 'রেডিয়াম
ভালোবাসা', মীরা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১৪।
[5] সত্যেন্দ্রনাথ
বসু, মাদামকুরী সান্নিধ্যে, জ্ঞান ও বিজ্ঞান, (শারদীয়), অক্টোবর-নভেম্বর, ১৯৬৭।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু রচনা সংকলন, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, কলকাতা, ১৯৯৮। পৃষ্ঠা ২৩৯।
[6] Girijapati
Bhattacharjee, My Friend Satyen, Science Today, January 1974.
[7] Einstrahlung
- জার্মান শব্দ - যার অর্থ shining বা জ্বলজ্বলে
[8] জার্মান
কেমিস্ট ফ্রিট্জ হ্যাবার (৯/১২/১৮৬৮ - ২৯/১/১৯৩৪) নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাস
থেকে অ্যামোনিয়া প্রস্তুত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার
পেয়েছিলেন ১৯১৮ সালে।
[9] জার্মান
কেমিস্ট অটো হ্যান (৮/৩/১৮৭৯ - ২৮/৭/১৯৬৮) নিউক্লিয়ার ফিশান আবিষ্কারের জন্য
রসায়নে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯৪৪ সালে।
[10] লিসা
মেইটনার (৭/১১/১৮৭৮ - ২৭/১০/১৯৬৮) ছিলেন অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি
নিউক্লিয়ার ফিশান আবিষ্কার করেন। কিন্তু তাঁকে নোবেল পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত করা
হয়েছে।
[11] জার্মান
নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ালথার উইলহেল্ম জর্জ বোথে (৮/১/১৮৯১ - ৮/২/১৯৫৭)
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে।
[12] জার্মান
পদার্থবিজ্ঞানী হ্যান্স গেইগার (৩০/৯/১৮৮২ - ২৪/৯/১৯৪৫) তেজষ্ক্রিয়তা মাপার যন্ত্র
গেইগার-কাউন্টার আবিষ্কার করেন।
[13] জার্মান
পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্স ফন লাউই (৯/১০/১৮৭৯ - ২৪/৪/১৯৬০) এক্স-রে ডিফ্রাকশান
আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯১৪ সালে।
[14] অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী উলফ্গং পাউলি
(২৫/৪/১৯০০ - ১৫/১২/১৯৫৮) পাউলি-এক্সক্লুশান প্রিন্সিপাল আবিষ্কারের জন্য
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯৪৫ সালে।
[15] জার্মান তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী ভার্নার
হাইজেনবার্গ (৫/১২/১৯০১ - ১/২/১৯৭৬) অনিশ্চয়তার সূত্র আবিষ্কারের জন্য
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯৩২ সালে।
[16] C. K. Majumdar, Partha Ghose,
Enakshi Chatterjee, Samik Bandopadhyay, Santimay Chatterjee (editors), S. N.
Bose: The Man and His Work, Vol. II, S. N. Bose National Centre for Basic
Sciences, Calcutta, 1994. page57.
[17] সত্যেন্দ্রনাথ
বসু, আইনস্টাইন-৩, আদি মহাকালী পাঠশালা পত্রিকা, মার্চ, ১৯৬৫।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু রচনা সংকলন, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, কলকাতা ১৯৯৮। পৃষ্ঠা
১৯৩-১৯৫।
No comments:
Post a Comment