40
“দাদা,
আপনি কি এই প্যাকেটটাও খাবেন?”
“না।“
“তাহলে
আমি খেয়ে ফেলছি“ – বলেই রঞ্জন টেবিলের উপর থেকে প্যাকেটটা নিয়ে দ্রুত খেতে শুরু করলো।
এত দ্রুত কীভাবে খায় সে? আমার প্যাকেটটা খুলতে না খুলতেই তার প্যাকেটটা শেষ করে এখন
এক্সট্রা প্যাকেটটায় হাত দিয়েছে। দেখলাম আস্ত সিদ্ধ ডিম নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। খেতে
খেতে কথা বলছে সে। গত তিন ঘন্টা ধরে সে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে মহাবিশ্বে
শুধুমাত্র চারটি মৌলিক বল নয়, আরো অনেক মৌলিক বল আছে। স্টিফেন হকিং যে থিওরি অব এভরিথিং-এর
কথা বলছেন সেটার আসলে কোন দরকার নেই। একই কথা বারবার বলতে বলতে একটা লুপের ভেতর ঢুকে
গেলে শুধু শব্দটাই কানে যায়, কথাগুলি নয়। রঞ্জন মুখভর্তি খাবার নিয়ে এখন মৌলিক কণার
কথা বলছে। আমি কিছুই শুনছি না। শুধু তাকিয়ে দেখছি কীভাবে তার মুখ থেকে মৌলিক কণার বদলে
ছিটকে পড়ছে খাদ্য-কণা, লালা-কণা, থুথু-কণা।
বিরিয়ানি
বস্তুটা আমার খুব একটা পছন্দ নয়। কিন্তু আজ দুপুরে রঞ্জনের আনা এই খাবারটার আর কোন
বিকল্প বাসায় নেই। রান্না করারও উপায় নেই। কারণ সকাল থেকে কারেন্ট নেই। ক’দিন টানা
হরতালের কারণে খুব ভোরে উঠে কলেজে যেতে হয়েছে কখনো রিক্সায়, কখনো নৌকায়, এবং একদিন
টানা হেঁটে গিয়েছি চকবাজার থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত। আজও ভোরে ঘুম ভেঙে যাবার
পর যখন মনে পড়েছে আজ শুক্রবার – কোথাও যেতে হবে না – কী যে খুশি লেগেছে। লাইট অফ করে
আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। প্ল্যান ছিল সারাদিন ঘুমানোর। কিন্তু হলো না। সাতটা বাজতে না
বাজতেই দরজায় ধুম ধুম শব্দে উঠতে হলো। মনে হচ্ছে দরজায় লাথি মারছে কেউ। সুইচ টিপলাম,
বাতি জ্বললো না। তার মানে কারেন্ট গেছে তার আগেই।
দরজা
খুলে দেখি একজন লুঙ্গিপরা লোক দুইহাতে একটা বড় টেলিভিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
“ইবা
কন্ডে রাইখ্যম?” – খসখসে কর্কশ গলা তার। টেলিভিশন কোথায় রাখবে জিজ্ঞেস করছেন আমাকে।
অবাক হয়ে গেলাম। আমার জন্য এই সকালে পুরনো টেলিভিশন পাঠালো কে? একটা টেলিভিশন আমার
বাসায় আসার কথা, কিন্তু সেটা তো আমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। দিদির বিয়েতে বাবা একটা
সাদা-কালো টেলিভিশন দিয়েছিলেন। অনেক বছর সেই টেলিভিশন চলেছে তাদের বাসায়। তারা রঙিন
টেলিভিশন কেনার পর সাদা-কালো টেলিভিশনটি চলে গেছে দিদির মামা-শ্বশুরের বাসায়। সম্প্রতি
তারাও রঙিন টেলিভিশন কিনেছেন। আমাকে বলা হয়েছে তাদের বাসা থেকে সাদা-কালো টেলিভিশনটি
নিয়ে আসতে। এখনো যাবার সময় পাইনি। তবে কি তারাই লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে? কিন্তু এটা
তো সেই টেলিভিশন নয়।
“ওডা
সেলিম্যা, বাসা হিয়ান নয়, পরর গান।“ - পেছন থেকে কেউ একজন বললেন। টেলিভিশন নিয়ে ‘সেলিম্যা’ দ্রুত পাশের বাসার দিকে
চলে গেলেন। দেখলাম পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটে আসছেন। বাড়িওয়ালার স্ত্রীর বড়বোন থাকতেন
সেখানে। ঘরের ভেতর মুরগির খামার গড়ে তুলেছিলেন। অনেক ঝগড়া-বিবাদ-ঝামেলা করে তাদেরকে
বের করে দেয়া হয়েছে। এখন সেখানে নতুন ভাড়াটের জিনিসপত্র নিয়ে আসা হচ্ছে। ঠেলাগাড়ি নিয়ে
এলেও সেই ডিসি রোডেই রেখে আসতে হবে। গলিতে ঢোকার উপায় নেই। এখন রাস্তা থেকে একটি একটি
করে জিনিস নিয়ে আসা হচ্ছে। তাদের বাসায় কী কী জিনিস আছে তা দেখার কৌতূহল আমার নেই।
দরজা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম। ছুটির দিনে বেলা এগারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠা নিষিদ্ধ
করে দেয়া উচিত।
কিন্তু
একটু পরেই আবার উঠতে হলো। আবার কেউ এসেছে।
“কী
ব্যাপার রঞ্জন, এতো সকালে?”
“সকাল
কোথায়? অলরেডি পৌনে ন’টা। এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলেন? কোন ফিজিসিস্ট এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায়
না।“
“তুমি
কি ভেতরে আসবে, না দরজায় দাঁড়িয়ে লেকচার দেবে?”
“না,
এখন ভেতরে আসবো না। আমি দেখতে এসেছিলাম আপনি আছেন কি না। আর ঘন্টাখানেক থাকবেন? নাকি
বের হবেন?”
“আমি
আজ কোথাও যাবো না। সারাদিন ঘুমাবো।“
“ঠিক
আছে। আমি ঘন্টাখানেক পরে আসছি। এদিকে একটা নতুন টিউশনি শুরু করেছি। ওটা শেষ করেই আসছি।
অনেক কথা আছে আপনার সাথে।“
রঞ্জন
প্রায় দৌড়ে চলে গেল। আমি দরজা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়বো ভেবেছিলাম। কিন্তু ঘুম চলে গেছে।
বাইরের রুমটা ভীষণ অগোছালো হয়ে আছে। টেবিলে মেঝেতে বইপত্র ছড়ানো-ছিটানো। টেবিলে টাইপ-রাইটারটাতে
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দরখাস্তটা অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওটা শেষ করা দরকার। ইউনিভার্সিটিতে
গিয়ে প্রামাণিক স্যারের সাথে একবার দেখা করতে হবে রেফারেন্স লেটারের জন্য। আই-ই-এল-টি-এস
দিতে হবে। কোন ধারণাই নেই এই পরীক্ষা সম্পর্কে। চট্টগ্রামের ব্রিটিশ কাউন্সিলে এ-সংক্রান্ত
কিছুই নেই। বলেছে ঢাকার সাত-মসজিদ রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিলে যেতে হবে। রঞ্জন মনে হয়
ঠিকই বলেছে – ফিজিক্স পড়তে গেলে খুব বেশি ঘুমানোর বিলাস ছাড়তে হবে।
ফ্রেশ
হয়ে বইপত্র নিয়ে বসার একটু পরেই আবার উঠতে হলো। বাড়িওয়ালা সালাম সাহেব এসে দাঁড়ালেন
জানালায়।
“আজ
গ্যাস আসবে।“
“গত
এক বছর থেকে শুনছি গ্যাস আসবে।“
“না
না, আজকে সত্যি আসবে। লাইন টানার মিস্ত্রি পাচ্ছিলাম না এতদিন। আজ সব রেডি। আপনি কি
চুলা কিনেছেন?”
“চুলা
তো কিনে রেখেছি সেই ছয় মাস আগে। আপনি বলেছিলেন পরের দিনই গ্যাস আসবে।“
“খোদার
কসম বলছি, আজ কাজ হবে। আপনি আছেন তো বাসায়। মিস্ত্রিরা বাসায় ঢুকবে। আপনার চুলার সাথে
গ্যাসের কানেকশান দিয়ে দেবে। আপনি দুপুর থেকে গ্যাসের চুলায় রান্না করতে পারবেন। এবার
তো আপনি একটা ভাবী নিয়ে আসতে পারেন।“
“ঠিক
আছে, আগে গ্যাস আসুক। তারপর ভাবীকে বলে দেখবো – আসে কি না।“
সালাম
সাহেব ব্যস্ত মানুষ। হে হে করে হেসে নতুন ভাড়াটেদের দিকে চলে গেলেন গ্যাস আসার খবর
দিতে।
রঞ্জন
এলো একটু পরেই। তার হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ। ভাবলাম আমার বইগুলি নিয়ে এসেছে। কিন্তু
সে প্যাকেট নিয়ে ভেতরের রুম দিয়ে কিচেনে চলে গেলো।
“আপনি
একটা ফ্রিজ কিনেন না কেন?” – রঞ্জন কিচেন থেকে প্রশ্ন করে।
“ফ্রিজ
দিয়ে আমি কী করবো?”
“ফ্রিজ
থাকলে বিরিয়ানির প্যাকেটগুলি রাখতে পারতাম।“
তারপর
প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে বাসায় ফ্রিজ থাকার উপকারিতা সম্পর্কে বক্তৃতা দিলো। সে যে কথাগুলি
বললো সেগুলি যে আমি জানি না, তা নয়। কিন্তু আমার ফ্রিজ কেনার টাকা নেই। এখন সেটা তাকে
বলার অর্থ হচ্ছে ‘কীভাবে কম সময়ে ফ্রিজ কেনার টাকা উপার্জন করবেন’ শীর্ষক আরেকটি বক্তৃতার
শ্রোতা হওয়া। ব্যাচের পর ব্যাচ প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা উপার্জন করাটাকে সে শিক্ষকদের কর্তব্য
বলে মনে করে। তাই সেদিকে না গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এত সকালে বিরিয়ানি কোথায় পেলে?”
“বাসার
ফ্রিজে ছিল। আপনার জন্য রেখে দিয়েছিলাম। তিন প্যাকেট নিয়ে এসেছি। ফ্রিজ থাকলে আপনি
তিন বেলা খেতে পারতেন।“
পরবর্তী
তিন ঘন্টা ধরে রঞ্জন কাজের কথা বললো খুব সামান্য। তার থার্ড ইয়ার ফাইনালের ভাইভার সম্ভাব্য
প্রশ্ন নিয়ে কিছু আলোচনা হলো। তারপর তাকে বিদায় করে দেয়া যেতো। কিন্তু ততক্ষণ গ্যাসের
লাইনের মিস্ত্রি চলে এসেছে। কিচেনের দেয়াল দিয়ে গ্যাসের পাইপ ঢুকবে। কিচেনের পরেই খোলা
ড্রেন। সেদিকে দাঁড়িয়ে কাজ করার উপায় নেই। তাই তারা যন্ত্রপাতি নিয়ে আমার কিচেনে ঢুকে
বড় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দেয়াল ভেঙে গ্যাসের পাইপ ঢুকানোর পথ করেছে। এক ইঞ্চি ব্যাসের
একটা পাইপ ঢুকানোর জন্য যে পথটা করেছে – সেটা দিয়ে একটা আস্ত মানুষ ঢুকতে পারবে। আমার
বাইরের ঘর থেকে সেই পথ দিয়ে বাইরের নর্দমার অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে। নর্দমার কালো কালো
ফড়িং সাইজের মশাগুলি নির্বিঘ্নে ঢুকছে সেই পথে। বাড়িওয়ালা সালাম সাহেবকে ডেকে দেখালাম।
তিনি বললেন সিমেন্টের কাজ করার রাজমিস্ত্রি খুঁজে পেলেই তিনি সেই ছিদ্র বুজে দেবেন।
দেড় ফুট ব্যাসের ভাঙা দেয়ালকে কি ছিদ্র বলা যায়?
গ্যাসের
লাইন এসেছে। বলা হচ্ছে সন্ধ্যা নাগাদ সংযোগ দেয়া হবে। কারেন্ট এখনো আসেনি। বাড়িওয়ালা
জানালেন গ্যাস লাইনের কাজ হচ্ছে তাই বিদ্যুৎ-লাইন অফ রাখা হয়েছে। বুঝতে পারছি না মাটির
নিচের গ্যাসের লাইনের সাথে মাটি থেকে অনেক উপরের বিদ্যুৎ লাইনের কী সম্পর্ক।
দুপুরে
রঞ্জন বেশ আগ্রহভরে বিরিয়ানির প্যাকেট বের করলো পলিথিনের ব্যাগ থেকে। এই কয়েক ঘন্টাতেও
গরম হয়নি ফ্রিজের ভেতর থেকে বের হওয়া বিরিয়ানি। ঠান্ডা বিরিয়ানি খাদ্য হিসেবে কতটা
গ্রহণযোগ্য আমি ঠিক জানি না। কিন্তু রঞ্জনের যে কোন অসুবিধা হচ্ছে না, তা চোখের সামনে
দেখতে পাচ্ছি। সে মৌলিক কণা, মৌলিক বল এগুলি নিয়ে কথা বলতে বলতে খেয়ে আঙুল চুষছে।
“বিরিয়ানিটা
কেমন যেন টক টক মনে হয়নি তোমার কাছে?”
“ওটা
লেবুর কারণে মনে হচ্ছে। লেবু দিয়েছে না সালাদে?”
“আমি
তো তোমার সালাদের প্যাকেট খুলিনি। আচ্ছা, এই বিরিয়ানির কাহিনি কী?”
“এক
আত্মীয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ ছিল কালকে – না, পরশু রাতে। ওখানে খাবার কম পড়েছে। পরে দোকান
থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট এনে দিয়েছে। সেই প্যাকেট আবার বেশি হয়ে গেছে। অনেকগুলি প্যাকেট
আমাদের বাসায় চলে এসেছে।“
“পরশু
রাতের বিরিয়ানি তুমি আজ খাচ্ছো?”
“তাতে
সমস্যা কী? ভালো আছে তো, ফ্রিজে ছিল। কস্তুরির বিরিয়ানি। আপনি কস্তুরিতে খেয়েছেন কখনো?
খুবই ভালো তাদের কোয়ালিটি।“
রঞ্জনের
ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আমার হাতের না-খাওয়া প্যাকেটটা এগিয়ে দিলে সে সেটাও খেয়ে নেবে।
কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে সে যদি একটু পরে এখানেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এধরনের বেশি চটপট করা
মানুষগুলিই দেখা যায় চটপট অসুস্থ হয়ে যায়। আমি হাতের প্যাকেট, রঞ্জনের খালি প্যাকেট
সব নিয়ে কিচেনের বিনে ফেলে দিলাম। রঞ্জন চলে যাবার পর ফ্লোরটা মুছতে হবে।
“তোমার
আজকে আর কোন কাজ নেই?”
এটুকুতেই
তার বুঝে যাওয়া উচিত যে আমার কাজ আছে। কিন্তু সে বুঝেও বুঝলো না। সে ম্যাক্সওয়েলের
সমীকরণ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। রঞ্জন ফিজিক্স খুব ভালোবাসে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশ যদি খুব উচ্চস্বরে করা হয়, সেটা রাজনীতিবিদদের ভালোবাসার মতো
গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। রঞ্জন সম্ভবত সেটা জানে না।
“স্যার
আসবো?”
দরজায়
দাঁড়ানো দুজনকে দেখে আমি খুশি হয়ে গেলাম।
“আরে
তোমরা, এসো এসো। ভেতরে এসো। রঞ্জন, এরা আমার কলেজের স্টুডেন্ট।“
“ও
তাই?” রঞ্জন আরো উৎসাহিত হয়ে উঠছে দেখে বললাম, “আমার কাছে একটা দরকারি কাজে এসেছে।
তোমার সাথে আরেকদিন কথা হবে।“
“ঠিক
আছে। আমি তাহলে এখন যাচ্ছি।“রঞ্জন চলে গেলো। আমি ছাত্রদের দিকে ফিরলাম।
“তোমরা
আমার বাসা চিনলে কীভাবে?”
“খুঁজে
বের করেছি স্যার।“
“তা
তো দেখতেই পাচ্ছি। কী ব্যাপার বলো।“
একে
অপরের দিকে তাকাচ্ছে ওরা। কিন্তু কিছু বলছে না। একজনের পরনে জিন্স আর টি-শার্ট, অন্যজন
পাজামা-পাঞ্জাবি। মৃদু পারফিউমের গন্ধও নাকে আসছে। রুমের ভেতর বিরিয়ানির গন্ধ ছিল এতক্ষণ।
তার সাথে এই পারফিউমের গন্ধ মিশেছে। ওদিকে কিচেনের দেয়ালে বিশাল ফুটো দিয়ে ড্রেনের
গন্ধও আসছে।
এরা
কোন একটা সমস্যা নিয়ে এসেছে বুঝতে পারছি। কিন্তু কে বলবে ঠিক করতে পারছে না। তার মানে
সমস্যা এক জনের, অন্যজন এসেছে তার সঙ্গী হয়ে। ধারণা করার চেষ্টা করলাম – সমস্যাটা কী
হতে পারে। মনে হচ্ছে সমস্যাটা ব্যক্তিগত – যা তারা কলেজে বলতে চায়নি, তাই বাসায় এসেছে।
টিচার্স রুমে কিছু আলোচনা আমার কানে এসেছে। কলেজের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে হৃদয়-ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার
ঘটবে সেটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের কোন কোন সহকর্মী এই স্বাভাবিক ব্যাপারটার
ব্যাপারে এমন অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখান যে মনে হয় উনারা অন্য গ্রহের মানুষ। তাঁদের
মুখের উপর কথাও বলা যায় না, আবার এরকম অন্ধ-রক্ষণশীলতা মেনেও নেয়া যায় না।
“ব্যাপারটা
কি হৃদয়-ঘটিত?” – আন্দাজে ঢিল ছুঁড়লাম। মনে হচ্ছে লেগে গেছে। পাঞ্জাবির মুখ আলোকিত
হয়ে উঠলো, আর টি-শার্টের মুখে উদ্বেগের ছায়া। বোঝা যাচ্ছে সমস্যাটা টি-শার্টের।
“সমস্যাটা
কার?” – আবার প্রশ্ন করলাম। কেউ কোন উত্তর দিচ্ছে না। টি-শার্টের নাম ধরে বললাম, “মনে
হচ্ছে সমস্যাটি তোমার।“
“জ্বি
স্যার। তার সমস্যা।“ – পাঞ্জাবির মুখে উচ্ছ্বাস। “তোকে বলেছিলাম না স্যারকে বললে স্যার
বুঝতে পারবেন।“ – সে তার বন্ধুকে আশ্বস্ত করে।
“বলো,
পুরো ব্যাপারটা শুরু থেকে বল। যার সমস্যা সে বলবে।“
আশ্চর্য
রকমের একটা প্রেমের গল্প শুনবো আশা করেছিলাম। কিন্তু শুনলাম খুবই গতানুগতিক একটি প্রেম-কাহিনি।
ছেলে মেয়ে পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে। মেয়েটিই প্রথমে ভালোবাসা জানিয়েছে। ছেলেটি পরে
সায় দিয়েছে। প্রেমে পড়ার পর তারা বুঝতে পারছে তাদের পরিবার এটি মেনে নেবে না। কারণ
দুই পরিবারের মধ্যে অনেক পার্থক্য, ইত্যাদি। এরকম মনে হয় কয়েক শ সিনেমা তৈরি হয়েছে
বাংলাদেশে।
“আমি
কী করতে পারি এখানে?” – জিজ্ঞেস করলাম।
“একটু
পরামর্শ দেন স্যার, আমার কী করা উচিত।“
“প্রেম
করার আগে পরামর্শ চাইতে এলে পরামর্শ দেয়া যেতো। এখন পরামর্শ দিয়ে কী হবে? আমি শুধু
বলতে পারি – প্রেমে পড়ার জন্য তেমন কোন যোগ্যতা লাগে না। কিন্তু প্রেম বাঁচিয়ে রাখার
জন্য অনেক যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। যোগ্য হয়ে ওঠার প্রাথমিক কাজ হলো ভালো রেজাল্ট করা। সেটা
করার চেষ্টা করো। ভুলেও বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বা মা-বাবার অমতে বিয়ে করে বসবে না।
এটুকুই আমি বলতে পারি।“
“আমি
তাকে ছাড়া বাঁচবো না স্যার।“
“মানে
কী? এখন তো সে তোমার সাথে নেই। তুমি কি মরে গেছ?”
“সে
তো আমার অন্তরে আছে স্যার।“
“এই
তো হয়ে গেল। তাকে অন্তরে রাখতে তো কোন বাধা নেই।“
“না,
মানে স্যার, তার যদি অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায় – আমি বাঁচবো না স্যার।“ – সে যেভাবে
এই ডায়লগটা দিলো, সিনেমায় দিতে পারলে সালমান শাহকেও হার মানাতে পারতো।
“তুমি
এখনো ইন্টারমিডিয়েটও পাস করোনি। এখনই তোমার বিয়ের কথা মনে হচ্ছে? আজ থেকে অনেক বছর
পর দেখবে তোমার এরকম কিছুই মনে হবে না। দেখা যাবে তাকে ছাড়াও বেঁচে থাকতে একটুও অসুবিধা
হচ্ছে না তোমার। আপাতত ভালো করে পড়াশোনা করো। আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা তো
সম্ভব নয়।“
প্রেমিক
ও তার বন্ধু বিদায় নিলো। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই প্রেমিকের প্রেমটা একপাক্ষিক। কারণ
মেয়েটিকে দেখে আমার কখনোই মনে হয়নি সে এই ছেলের প্রেমে পড়বে। কিন্তু প্রেমের ফাঁদপাতা
ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে।
>>>>>>>>>>>>>>>
শেখ
সাদীর গল্পে পোশাকের দামের সাথে মানুষের সম্মানপ্রাপ্তির সমানুপাতিক যোগসুত্র আমরা
দেখেছি। সেটা শুধুমাত্র যে পোশাকের ক্ষেত্রে ঘটে তা নয়, গাড়ির ক্ষেত্রেও ঘটে। যে ক’বার
আমরা বিতর্কের জন্য এয়ারফোর্স অফিসার্স মেসে থেকেছি – প্রতিবারই গেট দিয়ে ঢুকেছি ট্যাক্সি
করে। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী গোল্ড-কাপ নিতে যখন গেলাম আমরা একটা ঝকঝকে সুন্দর গাড়িতে
করে মেসের গেট দিয়ে ঢুকে গার্ডরুমের সামনে যখন এলাম – স্যালুটটা মনে হলো অনেক জোরে
দেয়া হলো। আমরা সবাই মিলে গিয়েছিলাম রাতের ট্রেনে। তিন বিতার্কিক – রীমা, অন্তরা আর
নাজমুল। আর আমরা তিনজন – রিফাৎ আরা ম্যাডাম, নাসরীন বানু ম্যাডাম – আর আমি। ভোরে কমলাপুর
স্টেশনে আমাদের রিসিভ করলেন রীমার আম্মু। তাঁর গাড়িতে করে ভোরবেলার ফাঁকা রাস্তায় সাঁ
করে চলে এলাম অফিসার্স মেসে। এবার আমাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ভি-আই-পি রুম। স্বয়ং
প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গোল্ড কাপ নেবে আমাদের বিতার্কিকরা। তারা অবশ্যই ভি-আই-পি।
আর তাদের কোচ হিসেবে তাদের কৃতিত্বের অংশীদার যেভাবে হচ্ছি, সেভাবে সুযোগ-সুবিধার অংশীদারও
হচ্ছি। তারপরও আমার কেমন যেন সংকোচ লাগছে।
ভি-আই-পি
এরিয়া একটু বিশেষভাবে সজ্জিত। আলাদা আলাদা একেকটা ধবধবে সাদা বাড়ি। সামনে সুন্দর ফুলের
বাগান। সবুজ ঘাসে মোড়ানো লন। বেশ সুন্দর একটা হ্রদের মতো পুকুর। স্বচ্ছ পানি টলটল করছে।
সবকিছু একটু বেশি সুন্দর, একটু বেশি নির্জন নিরব। তিনটি রুম- ম্যাডামদের জন্য, রীমা
আর অন্তরার জন্য এবং আমার আর নাজমুলের জন্য। স্ট্যান্ডবাই একজন ব্যাটম্যান আছেন হুকুম-তামিল
করার জন্য।
এবারে
বিতর্কের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করার ব্যাপার আছে, বক্তৃতা অনুশীলনের ব্যাপারও আছে। কারণ
তাদের প্রত্যেককে আড়াই মিনিট করে বক্তৃতা দিতে হবে। কিন্তু মনের ওপর কোন চাপ নেই। কারণ
এই প্রীতি বিতর্কে কোন বিচারক নেই, কোন হারজিৎ নেই। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দুই দলের
সবারই বিষয় এক – ইহার চেয়ে হতেম যদি। এই বিতর্কের তিনটি স্ক্রিপ্টই ধরতে গেলে এক বসাতেই
লিখে ফেলেছেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম। আমি তো বিষয়টাই বুঝতে পারিনি। এটা যে রবীন্দ্রনাথের
কবিতার একটি লাইন সেটাই আমি জানতাম না। রিফাৎ আরা ম্যাডাম বই খুলে দেখালেন মানসী কাব্যের
দুরন্ত আশা কবিতার মাঝখানের একটি লাইন – ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন! চরণতলে বিশাল
মরু দিগন্তে বিলীন। ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি – এরকম অনেক লম্বা কবিতা। যাই হোক – আসলে
কল্পনার ডানা মেলে দিয়ে আমরা কী হতে চাই, কী হতে পারতাম এটাই মূল বিষয়। আমরা সবাই তো
কিছু না কিছু হতে চাই। যা আছি, যা হয়েছি তা নয়, অন্য কিছু। যা হবার ইচ্ছে ছিল, বা ইচ্ছে
জন্মেছে, কিন্তু হতে পারিনি – এরকম। আমার মাথা বৈজ্ঞানিকভাবে সীমাবদ্ধ। আমার কল্পনা
বড়বেশি লাগামটানা। কিন্তু রিফাৎ আরা ম্যাডাম কত সুন্দরভাবে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন।
সারাদিন
হাসি-আনন্দ আড্ডা আর কিছু অনুশীলনে কেটে গেলো। সন্ধ্যাবেলা আরেকবার ফাইনাল প্র্যাকটিস
করতে হবে। সবাই যার যার রুমে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। এই সময় দরজায় টোকা পড়লো কয়েকবার।
একটু পরেই ব্যাটম্যানের গলা – স্যার আপনাদের একজন গেস্ট এসেছেন। কে হতে পারেন! আমজাদ
স্যারও আসতে পারেন। নাসির স্যারের রাতের ট্রেনে আসার কথা। হতে পারে তিনি আগে চলে এসেছেন।
ভাবতে ভাবতে দরজা খুললাম।
“আরে
মোরশেদ ভাই, আপনি?”
কৃষিবিজ্ঞানের
মোরশেদ স্যার যে আজ এখানে আসবেন ভাবতেই পারিনি। তাঁর তো ঢাকা আসারই কথা নয়। এখানে আসার
তো প্রশ্নই উঠেনি।
“বদ্দা,
অনরারে বহুত তোয়াই তোয়াই আইদ্দে।“
মোরশেদ
স্যার আমাকে পেয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। বলছেন অনেক খুঁজে
খুঁজে তিনি এখানে চলে এসেছেন আমরা আছি জেনে।
“আমরা
যে এখানে এসেছি আপনি কীভাবে জানলেন?”
“অ্যাকাউন্ট্যান্ট
কাদের সাহেবের কাছ থেকে।“
“তাহলে
আপনি তো ঢাকায় রওনা হবার আগেই জানতেন আমরা কোথায় উঠছি। তাহলে খুঁজে খুঁজে বলছেন কেন?”
“এখানে
আপনাদের রুম খুঁজে পাচ্ছিলাম না।“
“শুটকি
মাছের গন্ধ পাচ্ছি কোত্থেকে? আপনি কি শুটকি মাছ নিয়ে এসেছেন?”
“এই
যে” – পেপার মোড়ানো বেশ বড় একটা পুটলি দেখালেন তিনি।
“শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের একজনকে দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছি। একটা চাকরির কথা হচ্ছে। সরকারি চাকরি –
বুঝেন তো।“
“শুধু
শুটকি মাছে হবে?”
“না
না। টাকা-পয়সাও লাগবে। সব কথাবার্তা হয়ে গেছে। কাল এখান থেকে গিয়ে সব ব্যবস্থা করে
ফেলবো। আজকে রাতে এখানে থাকবো, আপনাদের সাথে।“
মোরশেদ
স্যারের কথায় আমি একটু অবাক হলাম। এভাবে হুট করে চলে এসে থাকা যায় কি? ভদ্রলোক তো বিপদে
ফেলে দিলেন। আমাদের কারো ব্যক্তিগত বাসা হলে কোন সমস্যা ছিল না। তাছাড়া পর্যাপ্ত জায়গা
থাকলেও কোন সমস্যা ছিল না। এখানে তো এক্সট্রা কোন বেড নেই। তাছাড়া নিজের ব্যক্তিগতকাজে
ঘুষ দেয়ার জন্য তিনি এসেছেন। আমরা এসেছি কলেজের কাজে। একটা পেশাগত ঔচিত্যবোধ তো সবার
থাকা উচিত।
“আমি
তো এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না আপনাকে। রিফাৎ আরা ম্যাডাম হলেন আমাদের ক্যাপ্টেন।
তিনি যা বলবেন তা হবে।“ – আমি বিনীতভাবে বললাম।
তাঁর
শুটকিমাছ থেকে এত তীব্র গন্ধ বের হচ্ছে যে একটু আগেও রুমে যে ফ্রেশনেসটা ছিল তা এখন
শুটকিময় হয়ে গেছে। নাজমুল গিয়ে রিফাৎ আরা ম্যাডামকে খবর দিলো। ম্যাডাম রুমে ঢুকেই নাকে
আঁচলচাপা দিলেন। আমি চট্টগ্রামের মানুষ। আমারই এত দুর্গন্ধ লাগছে, আর ম্যাডামের যে
কত তীব্রভাবে তা লাগছে তা বলাবাহুল্য। মোরশেদ স্যার বারবার বলছেন আমি এখানে আছি বলেই
তিনি এসেছেন। মনে হচ্ছে আমি তাঁকে দাওয়াত করে নিয়ে এসেছি – কিন্তু সেটা ম্যাডামদের
জানাইনি। আমার খুব লজ্জা লাগছে। শিক্ষিত মানুষ অনেক সময় না বুঝেই বিব্রতকর পরিস্থিতি
তৈরি করে ফেলেন। রিফাৎ আরা ম্যাডাম এরকম পরিস্থিতিও স্বাভাবিক করে ফেলতে পারেন সহজেই।
তিনি সন্ধ্যাকালীন চায়ের অর্ডার দিলেন। আদর যত্ন করে মোরশেদ স্যারকে চা-নাস্তা খাওয়ালেন।
তারপর বললেন, “আমাদের এক্সট্রা রুম থাকলে আপনাকে অবশ্যই এখানে থাকতে বলতাম। কিন্তু
মেসে তো ভিজিটরকে বুকিং ছাড়া থাকতে দেবে না।“
মোরশেদ
সাহেবকে খুব স্বাভাবিক বিষয়টা বুঝাতে অনেক সময় লাগলো। তিনি যাবার পরেও রুম থেকে শুটকি
মাছের গন্ধ তাড়াতে অনেক কষ্ট হয়েছে। রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করার পরেও তেমন কাজ হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যে কর্মকর্তাকে তিনি এই মাছ ঘুষের টাকার সাথে দেবেন তিনি সহ্য
করতে পারলেই হয়। অবশ্য না পারার কারণ নেই। ঘুষের টাকার দুর্গন্ধ তো শুটকি মাছের গন্ধের
চেয়েও বেশি হবার কথা।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
প্রধানমন্ত্রী
আসার অনেক আগেই টেলিভিশন ভবনে উপস্থিত থাকতে বলে দেয়া হয়েছিল। আমরা যথাসময়ে পৌঁছে গিয়েছি।
নাসির স্যার রাতের ট্রেনে সকালে এসে পৌঁছেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আসা উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা তল্লাশী পার হয়ে আমরা অডিটরিয়ামে যার যার
সিটে বসে পড়লাম। প্রচুর ভি-আই-পি আজ। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯২ সাল থেকে বিতর্কের জন্য প্রধানমন্ত্রী
গোল্ডকাপ প্রবর্তন করেছেন। ১৯৯২ সালে একবার প্রদান করা হয়েছে। ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালের
পুরষ্কার এক সাথে দেয়া হচ্ছে আজ। মিলনায়তন কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেছে। আমাদের বিতার্কিকরা
ভেতরে চলে গেছে। মজিদ স্যার আর সুচরিত স্যারকে খুব মিস করছি। উনারা না থাকলে চ্যাম্পিয়ন
হওয়া সম্ভব হতো বলে মনে হয় না।
টেলিভিশনে
সরাসরি প্রচারের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান যে কত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয় – তা চোখের সামনে
দেখলাম। যে মন্ত্রীদের রাজনৈতিক ভাষণ ঘন্টার পর ঘন্টা চলে – সেখানে তথ্যমন্ত্রী মাত্র
এক মিনিটেই তাঁর বক্তৃতা শেষ করছেন। টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার, তথ্যসচিব সবাই মাত্র
এক মিনিট করে বক্তৃতা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে পুরষ্কার দিলেন ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ এর
বিতার্কিকদের। আমাদের তিনজন গোল্ডকাপ হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে যে হাসিটা দিলো
তার গৌরবের কিছুটা অংশ আমাদের মনেও এসে লাগলো। এই মুহূর্তগুলো আর কখনো আসবে না ফিরে।
কেবল স্মৃতি হয়ে থাকবে।
পুরষ্কার
বিতরণের পর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভাষণ দিলেন। তাঁর ভাষণ কে লিখেছেন জানি
না, তবে খুবই মূল্যবান কথা সেখানে আছে – “বিতর্কের চর্চা যত বৃদ্ধি পাবে, মানুষ ততই
অন্ধকার থেকে আলোর দিকে চলবে। প্রতিষ্ঠিত হবে একটি যুক্তিবাদী সমাজ।“
এরপর
হলো প্রীতি বিতর্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ
সভাপতিত্ব করলেন এই প্রীতি বিতর্কের। ১৯৯৩’র ছয় জন বক্তার বিষয় ‘কোথাও আমার হারিয়ে
যাবার নেই মানা’। তাদের কেউ বাংলাদেশে হারাতে চাইলো, কেউ মহাশূন্যে, কেউ চাঁদে, কেউ
হলিউডে, কেউ ভবিষ্যতে। কী চমৎকার সব মজার মজার আইডিয়া। ১৯৯৪’র ছয় জন বললো – ইহার চেয়ে
হতেম যদি। শুরু করলো নাজমুল। সে বললো প্রধানমন্ত্রী হলে সে দেশের পরীক্ষাব্যবস্থা উঠিয়ে
দিতো। সবাই যে কী খুশি হয়েছে তার বক্তৃতায়। অন্তরা আলাদিনের দৈত্য হয়ে বিশ্বে শান্তি
প্রতিষ্ঠা করার কথা বললো, সাথে ঢাকা শহরের যানজট কমানোর কথাও। রীমা বললো জাদুকর হতে
চাওয়ার কথা। তারা কী চমৎকার ভাবে সব বলছে – আমি ভাবছি তাদের মুখের এই কথাগুলি যিনি
যুগিয়ে দিয়েছেন তাঁর কথা। এত চমৎকার ভাবনা কীভাবে ভাবতে পারেন মানুষ! সবাই কিছু না
কিছু হবার বাসনা ব্যক্ত করেছে। একমাত্র হলিক্রসের রেবেকা শফি বললো সে যা আছে তা নিয়েই
ভালো আছে। একজন সৎ, পরিশ্রমী ও বিবেকবান মানুষ হতে পারলে – আর কোন কিছুই হবার দরকার
নেই। আশা করি – এই কথাগুলি শুধু কথার কথা হয়ে থাকবে না। আমাদের সবার চেতনার অংশ হয়েও
থাকবে।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
তোমার ঘুমের প্রতি এই আসক্তিটা শুনে আমার মজাই লাগে।
ReplyDeleteহ্যাঁ, ঘুম আমার খুব প্রিয়।
Delete