41
রাতের
রেলগাড়ি
দিল
পাড়ি
কামরায়
গাড়িভরা ঘুম,
রজনী
নিঝুম।
অনেকক্ষণ
থেকেই মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে এই ক’টা লাইন। দু’লাইনে চলা আস্ত রেলগাড়ির একটা কম্পার্টমেন্টের
পুরো দৃশ্য বর্ণনা করে ফেলেছেন মাত্র দু’লাইনে। এজন্যেই তো তিনি বিশ্বকবি। কবিতার আর
কোন লাইন আমার মনে নেই, এই লাইন দুটো কোন্ কবিতার তাও জানি না। পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের
বিজ্ঞাপনে প্রায়ই দেখা যায় এই দুটো লাইন। ঘন্টা দেড়েক আগে রিফাৎ আরা ম্যাডামের কেনা
দেশ পত্রিকায়ও দেখেছি। সেখান থেকেই হয়তো মাথার ভেতর ঢুকে গেছে।
আমাদের
রাতের রেলগাড়ি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাড়ি দিয়েছে ঘন্টাখানেক হলো। এরমধ্যেই কামরায় গাড়িভরা
ঘুম, রজনী নিঝুম। আমারও ঝিমুনি এসেছিল। কিন্তু কিসের একটা ঝাঁকুনিতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে
গেছে। দুইটি সিটজুড়ে আরামে পা তুলে বসেছিলাম। ঘুম ভাঙার পর উঠে দাঁড়িয়ে দেখলাম সামনে
তিন সিট পর রিফাৎ আরা ম্যাডাম আর নাসরীন ম্যাডাম চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিয়েছেন।
তাদের সামনের সিটে আমার দিদির মাথা দেখা যাচ্ছে পেছন থেকে। সে ঘুমিয়েছে কি না বুঝতে
পারছি না।
আমাদের
সকালের ট্রেনেই চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার কথা ছিল। গোল্ডকাপ আর বিতার্কিকদের নিয়ে নাসির
স্যার সকালে চলে গেছেন। রিফাৎ আরা ম্যাডাম আর নাসরীন বানু ম্যাডামের সাথে আমাকেও থেকে
যেতে হলো বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিতর্ক সংক্রান্ত একটা মিটিং-এ অংশ নেয়ার জন্য। স্কুল
বিতর্কের নতুন সিজন শুরু হবে। কীভাবে আরো আকর্ষণীয় এবং উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা
করার জন্য গত দু’বছরে যেসব স্কুলের বিতার্কিকরা সেমিফাইনাল ও ফাইনাল রাউন্ডে বিতর্ক
করেছে সেসব স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ঢাকার বেশ কয়েকটি স্কুলের
শিক্ষকদের সাথে আমরা তিন জনও যোগ দিলাম সেই মিটিং-এ। চ্যাম্পিয়ন দলের শিক্ষক হিসেবে
আমাদের মর্যাদা কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম ঢাকার শিক্ষকরা আমাদের
কাউকেই তেমন কোন কথা বলতে দিলেন না। বিশেষ করে সেন্ট জোসেফ স্কুলের এক শিক্ষক – কথার
মাঝখানেই কথা বলতে শুরু করেন। মনে হলো তাঁর পেটে বিদ্যা টগবগ করে ফুটছে। আর বিদ্যার
বাষ্প ধরে রাখতে পারছেন না বলেই যখন-তখন জাহির করে ফেলছেন। বিদ্যা জাহির করার লোভ সামলানোর
মতো বিদ্যা অর্জন করা তো সহজ কাজ নয়। দু’তিন ঘন্টা ধরে নানা মুনির নানা মত প্রকাশিত
হলো। টেলিভিশন বিতর্ক পরিচালক কিরণ সাহেব চেষ্টা করেছিলেন কিছু গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নেয়া
যায় কি না। কিন্তু ঢাকার শিক্ষকরা বয়স এবং পরিচিতির প্রাবল্যে কিরণ সাহেবকে পাত্তাই
দিলেন না। ফলে শেষ বিকেল পর্যন্ত বক বক করলেন তাঁরা, গপাগপ কেক-পেস্ট্রি খেলেন, চায়ে
চিনির পরিমাণের ভালো-মন্দ সংক্রান্ত মতামত দিলেন, পান পাওয়া গেলে ভালো হতো বললেন, এবং
আবার মিলিত হতে হবে – এব্যাপারে সবাই একমত হলেন। যদিও এই সবাইয়ের দলে আমরা তিন জন নেই
– তাতে কারোরই কিছু যায় আসে না।
মিটিং
রুম থেকে বের হবার সময় রিফাৎ আরা ম্যাডাম কিছু একটা বললেন আমি ঠিক শুনতে পেলাম না।
আমি তখন কাছেই দাঁড়ানো শমী কায়সার আর খালেদ খানের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম টেলিভিশনের
পর্দায় এঁদেরকে এত অন্যরকম দেখায় কেন।
“অ্যাই
প্রদীপ, কী বলছি শুনেছেন?” – রিফাৎ আরা ম্যাডাম বেশ জোরেই বললেন।
“জ্বি
ম্যাডাম, বলেন।“
“আবার
মিটিং-এ আসতে হলে আমি কিন্তু আসবো না।“ – রিফাৎ আরা ম্যাডাম বললেন।
“আপা
না এলে আমিও কিন্তু আসবো না।“ – নাসরীন বানু ম্যাডাম যোগ করলেন। তাঁর কথা শুনে মনে
হচ্ছে আপা যদি কোন কিছু না করেন, তিনিও কিছুতেই সেটা করবেন না। এমন আপা-ভক্ত খুব বেশি
দেখা যায় না।
অফিসার্স
মেসে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রাতে ট্রেন। মিটিং-এ যাবার আগে স্টেশনে এসে টিকেট
করে গিয়েছিলাম। তিন জনের জন্য চারটি টিকেট কিনেছিলাম যাতে অন্তত একজন আরামে যেতে পারেন।
তাড়াতাড়ি ডিনার করে সাড়ে দশটার মধ্যেই স্টেশনে চলে এসেছি।
কমলাপুর
রেলওয়ে স্টেশনের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশিদিনের নয়। ১৯৮০ সালে আমি প্রথমবার ঢাকায় এসেছিলাম
আমার বাবার সাথে বেড়াতে। প্রথম দেখার অনুভূতি স্মৃতিতে রয়ে যায় কোন না কোনভাবে। তারপর
আরো অনেকবার এসেছি এই স্টেশনে। প্রতিবারই সেই প্রথম বারের অনুভূতি ঘুরে ফিরে মনে আসে।
সেই সময় ট্রেনের নামকাওয়াস্তে একটা সময়সূচি ছিল। অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেতো প্লাটফরমে
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। অবশেষে ট্রেন যখন প্লাটফরমে ঢুকতো, কার আগে কে উঠবে
হুড়োহুড়ি লেগে যেতো। মেইল ট্রেন, কোন সিট নম্বর থাকতো না। উচ্চ শ্রেণির টিকেটে হয়তো
থাকতো। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির চেয়ে উঁচুদরের টিকেট কেনার সামর্থ্য ছিল না আমার বাবার।
কিন্তু তৃতীয় শ্রেণিতেও আমাদের সুখের অভাব ছিল না। গাদাগাদি ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢোকার পর
দেখা যেতো সবগুলো সিটেই লম্বা লম্বা গামছা মেলে রেখে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলিষ্ঠ মানুষ।
তাদেরকে টাকা দিলে তারা গামছা সরিয়ে বসতে দিতো। অনেকে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করতো। কিন্তু
গামছাওয়ালারা ভালো করেই জানে তৃতীয় শ্রেণির টিকেটের ক্ষমতা কত। এখন অনেককিছুই বদলে
গেছে।
ট্রেন
প্লাটফরমেই দাঁড়ানো ছিল। আমরা আস্তে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে এসে বগি খুঁজে বের করে জায়গামতো
বসলাম। আমাদের তিন জনের জন্য চারটি সিট। রিফাৎ আরা ম্যাডাম আর নাসরীন ম্যাডাম জানালার
পাশে মুখোমুখি বসলেন। আমি নাসরীন ম্যাডামের পাশে বসলাম। হকারের কাছ থেকে সানন্দা আর
দেশ কিনলেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম। হকার টাকা নিয়ে চলে গেলো। অন্য যাত্রীদের কেউ কেউ কিনলেন,
বেশিরভাগই ম্যাগাজিনগুলির প্রচ্ছদ উল্টেপাল্টে দেখে ফেরত দিলেন। হকার অন্য কম্পার্টমেন্টে
চলে গেলো। কিন্তু একটু পর প্লাটফরম দিয়ে দৌড়ে এসে দাঁড়ালো আমাদের জানালায়। জানালার
কাচ নামানো ছিল। কাচে টোকা মেরে কিছু একটা বলছে দেখে দাঁড়িয়ে জানালার কাচ উঠালাম।
“ম্যাডাম,
আপনি টাকা বেশি দিছেন। পঞ্চাশ টাকা বেশি দিছেন।“ বলে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট এগিয়ে দিলো
জানালার লোহার শিকের ভেতর দিয়ে। রিফাৎ আরা ম্যাডাম ব্যাগ থেকে ৬৫ টাকা ভাঙতি দিয়েছিলেন
পঞ্চাশ দশ আর পাঁচ টাকায়। পঞ্চাশ টাকার নোট একটার বদলে দুইটা চলে গিয়েছিল। যখন ম্যাগাজিন
নিয়ে কম্পার্টমেন্টের ভেতর কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল তখন তাকে খেয়ালও করিনি। সানন্দার প্রচ্ছদের
ঝলমলে মডেলের দিকে তাকিয়েছিলাম, হকারের মুখের দিকে তাকাইওনি। এখন তাকে দেখছি অপার বিস্ময়ে।
তেরো চৌদ্দ বছরের এক কিশোর। কিন্তু সে তো ভালো করে দেখার সুযোগও দিলো না। রিফাৎ আরা
ম্যাডাম টাকাটা নিতেই সে শীর্ণ হাতটা টেনে নিয়ে দ্রুত চলে গেল অন্যদিকে। আরো অনেকগুলি
ম্যাগাজিন বিক্রি করতে পারলে হয়তো সে পঞ্চাশ টাকা কমিশন পাবে। সেটা তার ন্যায্য পাওনা।
কেউ ভুল করে তাকে টাকা বেশি দিয়েছে বলে সে তা রেখে দেবে – এমন অসৎ সে নয়। কিন্তু মানুষের
অসততায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া আমরা নির্ভেজাল সততা দেখলে ধাক্কা খাই। কয়েক মিনিট লাগলো
আমাদের এই ধাক্কা সামলাতে।
“আপনি
কি প্রায় সময়ই এরকম বেশি টাকা দিয়ে দেন?” – হাসতে হাসতে রিফাৎ আরা ম্যাডামকে জিজ্ঞেস
করলাম।
“কই,
আর কেউ তো কখনো টাকা ফেরত দিতে আসেনি।“ – রিফাৎ আরা ম্যাডাম দেশ-এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে
উদাসভাবে বললেন।
জানালার
বাইরে তাকালাম। প্লাটফরমে মানুষ ছুটতে শুরু করেছে। ট্রেন ছাড়ার আর বেশি দেরি নেই। হঠাৎ
মনে হলো তরণীদাকে দেখলাম। তরণীদা আমার দিদির কলিগ। আমাকে খুব স্নেহ করেন। নেমে একটু
সৌজন্য দেখানো দরকার। দ্রুত নামলাম। নেমেই দেখলাম তরণীদার সামনে দিদি দাঁড়িয়ে আছে।
সে যে ঢাকায় এসেছে তাও আমি জানি না। অফিসের কাজে তাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া করতে
হয় অনেক। আমাকে দেখে সেও একটু অবাক হলো। বললো, “তোর না সকালে চলে যাওয়ার কথা ছিল?”
“মিটিং
ছিল তাই সকালে যেতে পারিনি।“
দিদির
সিটও আমাদের কম্পার্টমেন্টে। তার সাথে উঠে এলাম। তার সিট আমাদের তিন সিট আগে। সেও দুইটা
সিট নিয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে একা ভ্রমণ করতে গেলে মেয়েদের যে কত ধরনের সমস্যায়
পড়তে হয়। সেই অবাঞ্ছিত সমস্যা এড়ানোর জন্য তাদের কত কষ্ট সহ্য করতে হয়। ম্যাডামদের
সাথে আমার দিদির এই প্রথম দেখা। তাদের তিনজনকে একসাথে বসতে দিয়ে আমি দিদির সিটে গিয়ে
বসলাম। ট্রেন যথাসময়ে ছেড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কম্পার্টমেন্ট চুপচাপ হয়ে গেছে। রাত
নিঝুম হবার সাথে সাথে গাড়িভরা ঘুম নেমে এসেছে। আমার সামনের দুজন যাত্রীই নাক ডাকছেন।
একজন একটু মৃদু, অন্যজন একটু জোরালো। নাক ডাকার ফ্রিকোয়েন্সির পদার্থবিজ্ঞানের নীতি
অনুযায়ী কোন এক সময় এই দুইজনের নাক একসাথে তীব্র জোরে ডেকে উঠবে, অর্থাৎ রেজোনেন্স
বা অনুরণন হবে। সেই অদূর ভবিষ্যতের অনুরণনের কথা ভেবে একটু হাসি পেলো।
জানালার
বদ্ধ কাচে বিন্দু বিন্দু শিশির জমেছে। এই ট্রেন সব স্টেশনে থামে না। বিমানবন্দর পার
হয়ে এসেছে অনেক আগে। এরপর সম্ভবত ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থামবে। জানালার কুয়াশা ভেদ
করে মাঝে মাঝে গুচ্ছ গুচ্ছ আলো জোনাকির মত পিছু হটে যাচ্ছে। ট্রেনের একঘেয়ে তীব্র যান্ত্রিক
শব্দে ঝিমুনি চলে আসছে। মনে হচ্ছে ঐ দূরে কোন গ্রামের বাড়িতে সবাই গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।
ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে অতল ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম কেউ তীব্র স্বরে
চিৎকার করছেন, “ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে, ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে, ব্যাগ ।“ স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে
হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম রিফাৎ আরা ম্যাডাম “ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে” বলে চিৎকার
করছেন। আমি দেখলাম কেউ একজন ম্যাডামের ব্যাগটা নিয়ে কম্পার্টমেন্টের ভেতর দৌড়ে দরজার
দিকে চলে যাচ্ছে। আমি কোন কিছু চিন্তা না করেই তাকে ধরার জন্য দৌড় দিলাম। আমি মোটেও
ভালো দৌড়াতে পারি না। কিন্তু লোকটা দৌড়ে আমার চেয়েও খারাপ। আমি তাকে ধরে ফেললাম। ব্যাগটা
এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে তার কলার ধরে ফেললাম। লোকটার গায়ের জোর আমার চেয়েও কম। নইলে
সে আমার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে পারতো। তাকে টেনে নিয়ে ম্যাডামদের কাছে
আসতে নাসরীন ম্যাডাম দ্রুত ব্যাগটা নিয়ে নিলেন নিজের কাছে। বুঝতে পারলাম ব্যাগটা তাঁর।
এবার আর উপরে রাখলেন না, সিটের নিচে পায়ের কাছে রাখলেন।
কামরার
গাড়িভরা ঘুম টুটে গেল। অনেকেই ম্যাডামের চিৎকার শুনেছেন। লোকটি ব্যাগ নিয়ে যেদিকে যাচ্ছিলেন
সেদিকের যাত্রীরাও শুনেছেন। কিন্তু কেউই উঠে দাঁড়াননি, ধরার চেষ্টা করেননি। হয়তো ভয়ে
করেননি, বা সাঁতে-পাঁচে-থাকেন-না বলেই করেননি। এখন লোকটিকে নিয়ে আমি কী করি? আমার পায়ের
জুতা খুলে রেখেছিলাম। শুধু মোজা পায়েই ছুটে গিয়েছিলাম। এখন লোকটাকে কি বলবো, ভাই আপনি
আমার সিটে একটু বসেন, আমি জুতাজোড়া পরে নিই, তারপর আপনাকে রেলপুলিশের কাছে হস্তান্তর
করবো। আমার সিটের আশেপাশে কিছু যাত্রী সিটে বসে বাক্য-বীরত্ব দেখাচ্ছেন। কত হিংস্র
তাঁদের মন্তব্য। একজন বলছেন, তার চোখ দুটো গেলে দেন। একজন উঠে লোকটির মুখে ঘুষি মারতে
উদ্যত হলেন। “কী করছেন আপনি? প্লিজ। গায়ে হাত দেবেন না। বসেন আপনি।“ – বেশ জোরে ধমক
দিতে হলো।
এ
তো মহা বিপদে পড়লাম। এদের হাতে এই লোককে তুলে দিলে এরা তো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। রাতের ট্রেনে
পুলিশ থাকার কথা। যে যাত্রীরা বীরত্ব দেখাচ্ছেন, তাদের একজনকে বললাম, কাইন্ডলি আপনাদের
কেউ কি রেল পুলিশকে খবর দিতে পারেন?
“এদিকে
আসবে ওরা একটু পরেই।“ – বলে দায়িত্ব এড়ালেন তিনি। কিল ঘুষি মারতে উৎসাহ আছে, আইননিষ্ঠ
কাজ করতে উৎসাহ নেই।
আমি
চোরের দিকে তাকালাম। বয়স ৩০-৩৫ এর বেশি হবে না। খুবই দুর্বল। পোশাক পরিচ্ছদে আধুনিক।
পরিষ্কার শার্ট-প্যান্ট আর শীতের জ্যাকেট। হাতেনাতে না ধরলে আমি নিজেই বিশ্বাস করতে
পারতাম না যে এই লোক ট্রেন থেকে একটা ব্যাগ চুরি করে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো।
রেলপুলিশ
যখন এদিকে আসবেই – তাহলে তাদের আর খোঁজার দরকার নেই। লোকটিকে আমার সিটে জানালার পাশে
বসিয়ে তার পাশে আমি বসলাম। আমার সামনের সিটের যাত্রীদ্বয়ের নাসিকা-গর্জন অনুরণন পর্যায়ে
পৌঁছার আগেই থেমে গেছে। দেখলাম তাঁরা দু’জনই চোখ বড় বড় করে আমার পাশে বসা ‘চোর’-এর
দিকে তাকাচ্ছেন। আমি পায়ে জুতা পরতে পরতে জিজ্ঞেস করলাম, “চুরি করছিলেন কেন?”
“বিলিভ
মি, আমি ওটা আমার ব্যাগ মনে করেছিলাম। খোদার কসম।“ – লোকটা গলা নিচু করে অনেকটা কাঁদো-কাঁদো
ভাবে বললো। মানুষ মিথ্যা বলার সময়ও কী কারণে খোদার নামে কসম খায় জানি না। এরা কি আসলেই
খোদায় বিশ্বাস করে?
“আপনার
সিট কি এই কম্পার্টমেন্টে?”
লোকটা
কোন উত্তর দিলো না। আমি তাঁকে বুঝাতে চাইলাম যে তার কথাগুলি কতটা অবিশ্বাস্য।
“অন্য
একটা কম্পার্টমেন্টে আপনি এতক্ষণ বসেছিলেন। আর আপনি ভেবেছিলেন যে আপনার ব্যাগটা এখানে
ম্যাডামদের সিটের উপরে আছে। আর আপনি নামার সময় তা নিয়ে নেমে যাবেন। এটা কেউ বিশ্বাস
করবে?”
আমি
লোকটার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলছি দেখে আমার সামনে বসা যাত্রীদ্বয় এমনভাবে আমার দিকে
তাকাচ্ছেন যেন আমিও এই লোকের খালাতো ভাই।
জুতা
পরে উঠে দাঁড়ালাম। এই লোককে এবার রেলপুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। লোকটা বললো, “ভাই
আমারে ছেড়ে দেন। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেমে যাবো।“
“আমি
আপনাকে কীভাবে ছাড়ি বলেন। পুলিশকে দেবো। নইলে এরা আপনাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। দ্যাখেন
সবাই কীভাবে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। ছেড়ে দিলেই আপনাকে ছিঁড়ে ফেলবে সবাই মিলে।“
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
স্টেশন চলে আসছে। কয়েকজন যাত্রী এখানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় দু’জন রেলপুলিশের
দেখা পাওয়া গেল। হাতে অস্ত্রশস্ত্র কিছুই নেই। পোশাক দেখে এপার্টমেন্ট হাউজের নাইটগার্ডের
মতো লাগছে।
“কী
হয়েছে এখানে?”
“এই
লোকটা ব্যাগ চুরি করে পালাচ্ছিল। ধরা পড়েছে।“
“এই
ব্যাটা? দেখতে তো ভালা মানুষের পোলা মনে হয়।“ – একজন পুলিশ মন্তব্য করলেন।
“নিয়ে
যান একে।“ – বললাম।
লোকটাকে
নিয়ে পুলিশ দুজন যেদিক থেকে এসেছিলেন সেদিকে চলে গেলেন। সম্ভবত অন্য কম্পার্টমেন্টে
তাদের কাজকর্মের জায়গা। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার দিদি চোখ বড়
বড় করে পেছন ফিরে দেখছে আমাকে। দরকার না হলে সে কিছুই বলবে না। নিজের অফিসিয়াল পরিচয়ও
দেবে না।
ভেবেছিলাম
আমার দায়িত্ব শেষ। কিন্তু একটু পরেই একজন পুলিশ আবার এলেন আমার কাছে। “আপনাকে একটু
আসতে হবে। ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে হবে।“
একেবারে
দাপ্তরিক পরিভাষা ব্যবহার করছেন তিনি। পুলিশের সাথে হাঁটতে হাঁটতে কয়েকটা কম্পার্টমেন্ট
পার হয়ে পাওয়ার কারের কাছাকাছি চলে এলাম। লোকটাকে একটা সিটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আরেকজন
পুলিশ লোকটার সামনের সিটে বসে পা নাচাচ্ছেন।
“কী
হয়েছিল বলেন তো?” – পুলিশটি পা নাচাতে নাচাতে মাথা কাৎ করে বললেন।
“এই
লোকটা ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছিল। আমি ধরে ফেলেছি।“
“আপনি
কী করেন?”
“আমি
কী করি সেটা কি জরুরি?”
“জি,
আমাদের তো সবার পরিচয় লাগবে।“
“আমি
বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের …” – পুরোটা বলার আগেই পা নাচানো পুলিশ ইলেকট্রিক শক খাওয়া মানুষের
মত তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে হাত-পা তুলে একটা স্যালুট দিয়ে ফেললেন।
“সরি
স্যার। আপনারে চিনতে পারি নাই। কিন্তু ঠিকই আন্দাজ করছিলাম যে ডিফেন্সের কেউ হবেন।
নইলে এদেরকে ধরে ফেলা তো এত সহজ না। সরি স্যার। আপনাকে কষ্ট দিছি।“
এরা
আমাকে এয়ারফোর্সের অফিসার মনে করছে। শরীরের স্নেহপদার্থ আর চুলের দৈর্ঘ্য বাড়তে না
দিলে মাঝে মাঝে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। মনে মনে হয়তো এই সুবিধাটা আমি চাচ্ছিলামও। নইলে
সরাসরি শাহীন কলেজ না বলে এত ঘটা করে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স বলার দরকার কী ছিল? এদের
ভুল ভাঙিয়ে ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নেই। শেষে আবার আমাকেই ভুয়া অফিসার বলে বেঁধে রাখবে।
“স্যার,
চিটাগং-এ স্টেশানে আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। স্টেশনেই স্যার ফর্মাল কমপ্লেইনটা
করতে হবে। আমি সব ঠিক করে রাখবো স্যার।“ – কাঁচুমাচু হয়ে বললেন পুলিশ। আমার হঠাৎ বন্ধু
বিশু, নুপুর, আর শৈবালের কথা মনে পড়লো। তারা তিনজন একটা নাটকে আর্মি অফিসারের ভূমিকায়
অভিনয় করেছিল। নাটকের আগে এবং পরে তাদের কথাবার্তা চাল-চলন সবকিছুই মিলিটারিদের মতো
হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে কিছু জিজ্ঞেস করলেও তারা খেঁকিয়ে উঠতো, চিবিয়ে চিবিয়ে কথা
বলতো। এখন আমার অবস্থাও অনেকটা সেরকম হয়ে যাচ্ছে। ফিরে আসার সময় মনে হলো মেরুদন্ড একটু
বেশি সোজা করে হাঁটছি।
কম্পার্টমেন্টে
ফিরে এসে দেখলাম আবার সবাই ঘুমে নিস্তেজ হয়ে গেছে। দিদির কাছে গেলাম। দেখলাম নাসরীন
ম্যাডাম চোখ বন্ধ করে আছেন। ঘুমাচ্ছেন কি না জানি না। রিফাৎ আরা ম্যাডাম জেগে আছেন।
“কী
বললো তোকে?” – দিদি জিজ্ঞেস করলো।
“না,
কী হয়েছিল এসব। বললো ওরা সব ঠিক করবে। স্টেশনে নামার পর আসবে ওরা আবার ফর্মালিটির জন্য।“
“আমি
তো ভয়ে ভয়ে ছিলাম আপনি যদি আবার তাকে মারতে শুরু করেন।“– খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন
রিফাৎ আরা ম্যাডাম। আমি একটু অবাক হলাম। ম্যাডাম কি আমাকে গুন্ডা-টুন্ডা মনে করেন নাকি?
আর
কোন ঘটনা ছাড়াই চট্টগ্রামে পৌঁছে গেলাম। ট্রেন থেকে নেমে সবাই ওভারব্রিজের দিকে যাচ্ছি।
দেখলাম নাসরীন বানু ম্যাডাম আমাদেরকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। আমরা ব্রিজের
উপর থেকেই দেখলাম তিনি ব্রিজ থেকে নেমে তাঁর ব্যাগ নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে চলে গেলেন।
আমরা ব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে ট্যাক্সি দরদাম করে উঠতে যাবো – এমন সময় সেই পুলিশ
দৌড়ে এলেন।
“স্যার,
চলে যাচ্ছেন?”
“জ্বি।“
“ওইটাকে
কী করবো স্যার? মামলা করতে হবে তো। আলামত লাগবে। ব্যাগটা লাগবে স্যার।“
“ব্যাগের
মালিক তো ব্যাগ নিয়ে চলে গেছেন।“
“তাহলে
স্যার?”
“রেলওয়ে
অথরিটি বাদী হয়ে নালিশটা করে দেন। মনে করেন আপনি ধরেছেন।“
“কিন্তু
স্যার, ধরেছেন তো আপনি।“
“তাতে
কোন অসুবিধা নেই। আপনার কাজ আমি করে দিয়েছি। বাকিটা আপনারা করেন। আইনগতভাবে যা করার
করেন।“
“ব্যাগের
মালিককে বাদী হয়ে মামলা করতে হবে স্যার। ব্যাগটা লাগবে।“
“মালিক
চলে গেছেন। তাহলে আর কী করবেন। লোকটাকে ছেড়ে দেন।“
চলে
এলাম। আমাদের আইনী ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিল। এই যে চুরির ঘটনা, এটাতে আইনগতভাবে
বাদী হতে হবে নাসরীন বানু ম্যাডামকে। কারণ ব্যাগটা তাঁর। তাহলে তাঁর সমস্ত কাজ ফেলে
কোর্টে হাজিরা দিতে হবে যতদিন এই মামলা চলবে ততদিন। ব্যাগটা চোরের হাত থেকে উদ্ধার
পেলেও থানা থেকে উদ্ধার পাবে না, আলামত হিসেবে রেখে দেবে। অহেতুক ঝামেলায় কে জড়াতে
চায়? নাসরীন বানু ম্যাডাম এসব জানেন বলেই তো নিরবে প্রস্থান করেছেন।
এই
ঘটনার এখানেই শেষ। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ঘটনাটা কীভাবে যেন জেনে গেছে। নাজমুল
খুব সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করলো, “স্যার আপনি নাকি বীরবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে চোর ধরেছেন?”
আমি
হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি তো জানি কেমন বীর, আর কেমন তার বিক্রম!
>>>>>>>>>
বছরের
শেষ দিনগুলিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলছে। মাসের মধ্যে কয়েকটা হরতাল হচ্ছে। নভেম্বরের
শেষে পঞ্চম সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। নতুন নির্বাচনের
তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। বলা হচ্ছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য এই নির্বাচন
হতেই হবে। কিন্তু বিরোধী দলগুলি এই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নয়। এর মধ্যেই আমাদের কলেজে
যেতে হচ্ছে। স্কুল সেকশানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে হরতালের মধ্যেই।
১৯৯৬
শুরু হয়েছে হরতাল রাজনৈতিক সংঘর্ষ ইত্যাদির ভেতর দিয়ে। কলেজে যাওয়া-আসা প্রচন্ড কষ্টদায়ক
হয়ে উঠেছে। খুব ভোরে উঠে কলেজে চলে যাই। আবার ছুটির পর অনেক কষ্টে রিক্সা, ট্যাম্পু
ইত্যাদিতে বাসায় ফেরা। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ভর্তির শর্ত পূরণের জন্য আই-ই-এল-টি-এস
দিতে হবে। ঢাকায় গিয়ে ফর্ম ফিল আপ করে এলাম। জানুয়ারিতে কলেজের স্কুল সেকশানের ভর্তি
পরীক্ষা হলো। ১৯৯৬ সালের উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা হলো। তার কয়েকদিন
পর থেকে রমজান শুরু হলো। কলেজ বন্ধ হয়ে গেল মাসখানেকের জন্য। জানুয়ারির শেষে ঢাকায়
গিয়ে আই-ই-এল-টি-এস পরীক্ষা দিয়ে এলাম। তারপর বাড়িতে গেলাম। কিছুদিন থেকেই বুঝতে পারছিলাম
শরীরে কিছু একটা হয়েছে। মুখের রুচি চলে গেছে একেবারেই। কোন কিছুতেই কোন স্বাদ পাই না।
এর মধ্যে শত বিক্ষোভ, হরতাল, আন্দোলন করেও ১৫ ফেব্রুয়ারির একদলীয় নির্বাচন ঠেকানো গেলো
না। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে অবরোধের হরতাল চলছিলো। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হয়ে
যাবার পর বিএনপি আবার সরকার গঠন করেছে। সম্মিলিত বিরোধী দল সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের
ডাক দিয়েছে। ঈদের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি কলেজ খুলেছে।
ইতোমধ্যে আমার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। বিলিরুবিন বেড়ে গেছে অনেক গুণ। চোখ, চামড়া
ক্রমশ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। জন্ডিজ নামক ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। ডাক্তার বলেছেন মাসখানেক
একেবারে বিছানায় শুয়ে থাকতে। কিন্তু কলেজ থেকে ছুটি নিতে হবে তো। ডাক্তারি সার্টিফিকেট
ব্যাগে নিয়ে অসহযোগের ভেতর কলেজে যাবার জন্য বের হলাম ভোর পাঁচটায়। চকবাজারে গিয়ে রিফাৎ
আরা ম্যাডাম আর লাইলুন নাহার ম্যাডামের সাথে দেখা। তাঁরা আমার কোন কথাই শুনতে চাইলেন
না, আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। আমি ক্ষীণকন্ঠে বলার চেষ্টা করেছিলাম, “ছুটি
না নিয়ে অনুপস্থিত থাকলে যদি কোন সমস্যা করে?”
“আপনার
চাকরিও যদি চলে যায়, তাহলেও আমি আপনাকে এই অবস্থায় কলেজে যেতে দেবো না।“ – রিফাৎ আরা
ম্যাডামের এত কঠোর স্নেহ আগে কখনো দেখিনি। বাসায় এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। নড়াচড়া করার
শক্তিও আমার অবশিষ্ট নেই।
পরের
একমাস সারাদেশে যে প্রচন্ড রাজনৈতিক ঝড় বয়ে গেছে তার খবর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে পেয়েছি।
অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল, এতকিছুর ভেতরেও কলেজে ক্লাস হয়েছে। স্যার-ম্যাডামদের যেতে হয়েছে।
এত কষ্ট করে কলেজে যাবার পর আবার আমার বাসায় এসে আমাকে নিয়মিত দেখে গেছেন রিফাৎ আরা
ম্যাডাম, হোসনে আরা ম্যাডাম, পূর্ণিমা ম্যাডাম, শংকর স্যার, ইভা – সবাই। অনেক ছাত্রও
এসেছিল। এঁদেরকে ঠিকমতো বসানোর জায়গাও আমার নেই। অথচ পরম স্নেহে আমার বিছানার পাশে
এসে বসেছেন উনারা। এত ভালোবাসা আমি কোথায় রাখি!
অবশেষে
দেশের রাজনীতির আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে গেল। ৩০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগ
করলেন। ষষ্ঠ সংসদ ভেঙে দেয়া হলো। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক
সরকার গঠিত হলো।
এর
এক সপ্তাহ পর আমি কলেজে গেলাম। নতুন বিল্ডিং-এ নতুন বছরের ক্লাস শুরু করলাম এপ্রিলে।
এবছরও ক্লাস ফাইভে অংক দিয়েছে আমাকে। ফার্স্ট ইয়ারের ফিজিক্স তো আছেই। সেকেন্ড ইয়ারের
কোচিং-ও চলছে। একটা ক্লাস করে টিচার্স রুমে ফিরছি, করিডোরে ফার্স্ট ইয়ারের একজন ছাত্রী
সালাম দিয়ে প্রশ্ন করলো, “স্যার, আপনি নাকি বিয়ে করেছেন?”
“তোমাকে
কে বললো?”
“সবাই
জানে স্যার। আপনি বিয়ে করেছেন বলেই এতদিন ছুটিতে ছিলেন।“
আমি
বুঝতে পারছি না আমার কী করা উচিত। জন্ডিজের সময় শুয়ে থাকতে থাকতে মানুষ একটু নাদুসনুদুস
হয়ে যায়। আমার অবস্থাও হয়তো সেরকম হয়েছে। অসুস্থ ছিলাম বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না।
আমি একটা অর্থহীন হাসি দিলাম। সে কী বুঝলো কে জানে।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
তুমি যে চোর ধরেছ-এটা পড়ে আমার অনেক আনন্দ লেগেছে। তোমার জীবনের ঘটনাগুলো পড়ে আমি যেমন বিস্মিত হয়ে যায় তেমনি আবার আনন্দ পাই। তুমি এভাবে লিখে যাও।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য।
Delete