39
“বাঙালি
মধ্যবিত্তের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম টেলিভিশন। টেলিভিশনের সাপ্তাহিক নাটক না দেখে বাঙালি
রাতের ভাত খায় না। গ্রিক শব্দ ‘টেলে’ যার অর্থ দূর এবং ল্যাটিন শব্দ
ভিজিও – যার অর্থ দেখা – এই দুই মিলে উৎপত্তি হয়েছে টেলিভিশন
– যার অর্থ দূরদর্শন। তবে
আমরা বাংলাদেশে টেলিভিশনকে টেলিভিশন রূপেই চিনি। আমাদের দেশে এখন টেলিভিশন আভিজাত্যের
প্রতীক। যাদের বাড়িতে যত বড় টেলিভিশন থাকে –
আমরা তাদেরকে ততই বড়লোক মনে করি। একসময় বিবাহে সাদা-কালো টেলিভিশন যৌতুক দিলে হতো,
এখন আর কেউ সাদা-কালো টেলিভিশন নিতে চায় না। এখন সাদা-কালো টেলিভিশন যৌতুক দিলে মেয়ের
শ্বশুরবাড়ির লোকজন খোটা দেয়। রঙিন টেলিভিশন না দিলে অনেক সময় বিবাহ ভেঙে যায়।“
“এসব কী ফাজলামি হচ্ছে বনকুসুম?” – খুবই
বিরক্ত হয়ে ধমক দিলেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম। বনকুসুম এতক্ষণ খুবই সিরিয়াস ভঙ্গিতে বিতর্কের
স্ক্রিপ্ট পড়ছিলো। ম্যাডামের ধমক খেয়ে মিনমিন করে বললো, “স্ক্রিপ্টে তো এরকমই লেখা
আছে ম্যাডাম।“
“এই
স্ক্রিপ্ট তোমাকে কে দিয়েছে?” – ম্যাডামের প্রশ্নে এবার আমি শংকিত হয়ে পড়লাম। বনকুসুমকে
চোখের ইশারায় বলতে চাচ্ছিলাম যেন আমার কথা না বলে। আমার কাছে রিপোর্ট আছে – বনকুসুমরা
কলেজে কোন কথা না বলেই অনেক কথা বলে ফেলতে পারে চোখের ইশারায়। ভেবেছিলাম আমার ইশারা
সে বুঝবে। হয়তো বুঝেছেও। কিন্তু একেবারে শিশুর মতো ভালোমানুষের মুখ করে বললো, “প্রদীপ
স্যার দিয়েছেন ম্যাডাম। এই তো একটু আগেই দিলেন।“
রিফাৎ
আরা ম্যাডাম আমার দিকে এমন একটা চাউনি দিলেন – যার সাথে পৌরাণিক কাহিনির দুর্বাশা মুনির
চাউনির মিল আছে। শুনেছি এরকম দৃষ্টিতে নাকি সবকিছু ভস্ম হয়ে যায়। কালের বিবর্তনে সম্ভবত
দৃষ্টিশক্তির ক্ষমতা কমে গেছে। তাই আমি ঠিক ভস্ম হলাম না। কিন্তু রুমে উপস্থিত বাকি
তিন বিতার্কিক - সুরাইয়া, তাসমিন আর নাসরীন মুখ টিপে হাসতে শুরু করলো। মৌখিক পরীক্ষায়
প্রশ্নের উত্তর না জানলে যেরকম করে হঠাৎ গলা পরিষ্কার করতে হয় আমার অবস্থাও সেরকম হলো।
আত্মপক্ষ সমর্থনের আশায় কোন রকমে বললাম, “টেলিভিশনের শুধু ব্যবহারিক দিক নয় ম্যাডাম,
সুরাইয়ার স্ক্রিপ্টে কারিগরি দিকটাও আছে।“
“দেখি
সুরাইয়া, পড়ো দেখি কী এমন কারিগরি দিক আছে?” – সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাৎ আরা ম্যাডাম
হাসিমুখেই বললেন। কী আশ্চর্য – একটু আগেই আমার দিকে তাকালেন দুর্বাশার দৃষ্টিতে, আর
পরক্ষণেই ছাত্রীর দিকে তাকাচ্ছেন মাদার তেরেসার দৃষ্টিতে। বুঝলাম না আমার অপরাধটা কী।
“স্কটল্যান্ডের
বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড ১৯২৫ সালে টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। টেলিভিশন মূলত একটি গ্রাহক
যন্ত্র বা রিসিভার। এই যন্ত্র টেলিভিশন স্টেশন বা সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে যেসব নাচা-গানা
নাটক-খবর ইত্যাদি এবং বিদেশি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয় তা সিগনাল আকারে গ্রহণ করে। তারপর
টেলিভিশনের ভিতরে যে বড় ক্যাথোড রে টিউব থাকে সেখানে সেই সিগনাল ছবি এবং শব্দে রূপান্তরিত
হয়। ক্যাথোড রে হলো প্রধানত ইলেকট্রনের প্রবাহ। ইলেকট্রন আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৯৭ সালে।
বিজ্ঞানী জোসেফ জন থমসন ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন।“ – সুরাইয়া একনাগাড়ে দ্রুত পড়ে যাচ্ছে।
সে প্রথমবার পড়ছে – কিন্তু একটি শব্দেও আটকাচ্ছে না। বিতার্কিক নির্বাচন ঠিকমতোই হয়েছে
বুঝতে পারছি। রিফাৎ আরা ম্যাডাম ধৈর্য ধরে শুনছিলেন। কিন্তু আর ধৈর্য রাখতে পারলেন
না। বিরক্ত হয়ে বললেন, “এগুলির সাথে আমাদের
বিতর্কের বিষয়ের তো কোন সম্পর্কই নেই।“
ম্যাডাম
বিরক্ত হলেও রেগে যাচ্ছেন না দেখে আমি আরেকটু সাহসী হয়ে বললাম, “বিতর্কের বিষয়ের সাথে
সরাসরি সম্পর্ক আছে অন্য স্ক্রিপ্টে। তাসমিন পড়ো দেখি একটু।“
তাসমিন
খুবই নার্ভাস হয়ে আছে এখন থেকেই। বিতর্কের দলে মনোনীত হবার পর থেকেই সে বলছে সে মুখস্থ
করতে পারে না। বিতর্কে সব যে মুখস্থ করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। যুক্তি প্রয়োগ, যুক্তিখন্ডন,
উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি সবকিছুই তার চমৎকার। কিন্তু তার মানসিক চাপটা আসছে অন্যদিক থেকে
– সেটা আমি বুঝতে পারছি। তার ছোটবোন তানজীবার নেতৃত্বে আমাদের স্কুল জাতীয় টেলিভিশন
বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সে মনে করছে তার কাছ থেকেও আমরা তানজীবার মতো পারদর্শিতা
আশা করছি। কিন্তু আমরা কেউই তা করছি। প্রত্যেক মানুষই স্বতন্ত্র। প্রত্যেকের পারঙ্গমতা
আলাদা। এই যে আমার লেখা স্ক্রিপ্ট নিয়ে হাসি-তামাশা হচ্ছে – তাতে কি আমার মনের উপর
খুব একটা চাপ পড়ছে? মোটেও না। কারণ আমি জানি – রিফাৎ আরা ম্যাডামের মতো করে চ্যাম্পিয়ন
ক্লাস স্ক্রিপ্ট আমি কখনোই লিখতে পারবো না।
“আমার
প্রতিপক্ষের বন্ধুরা বলছেন জাতীয় চেতনাবোধ অক্ষুন্ন রাখার জন্য টেলিভিশনে বিদেশি অনুষ্ঠান
প্রচার বন্ধ করা উচিত। আমি সঙ্গত কারণেই এর বিরোধিতা করছি। টেলিভিশন নিজেই একটি বিদেশি
জিনিস। টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য যা যা লাগে তার সবই বিদেশি। টেলিভিশন ক্যামেরা বিদেশি,
লাইট বিদেশি, সাউন্ড বিদেশি, অ্যান্টেনা বিদেশি, ট্রান্সমিটার বিদেশি, স্যাটেলাইট বিদেশি,
ট্রেনিং বিদেশি, পরিচালকরা যে সিগারেট খায় সেটা বিদেশি। আর বিদেশি অনুষ্ঠান যা ভালো
– সন্ধ্যাবেলার আলিফ লায়লা, রাতের বেলার ম্যাকগাইভার – কী অপূর্ব। একটা থেকে আমরা জাদুটোনা
দৈত্য-দানব ইত্যাদি দেখি, অন্যটা থেকে শিখি টেকনোলজির দক্ষতা। আলাদিনের চেরাগের দৈত্যই
তো হলো আধুনিক যুগের ম্যাকগাইভার।“
এটুকু
শোনার পর রিফাৎ আরা ম্যাডাম হাহাহা করে হেসে উঠলেন। বিতার্কিক চারজনও সেই হাসিতে যোগ
দিলো। নাসরীন ম্যাডাম এখন ক্লাসে। তিনি থাকলে আমার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতো। তিনি
স্ক্রিপ্ট লেখেন না সেটা ঠিক, কিন্তু বাজে স্ক্রিপ্ট একদম সহ্য করতে পারেন না। তিনি
স্ক্রিপ্টের মাঝে মাঝে কিছু কিছু শব্দ এমনভাবে বদলে দেন যে সেই শব্দগুলি স্ক্রিপ্টের
মাঝখানে স্টিলের পেরেকের মত কাজ করে। আমাদের বিতার্কিকরা মাঝে মাঝে সেই পেরেকে হোঁচট
খেতে চায়। কিন্তু ম্যাডাম কঠিন হস্তে তা সামলান। স্ক্রিপ্ট যখনই শরৎচন্দ্রের গদ্যের
মতো সরল হয়ে ওঠে, তখন তাঁর নির্বাচিত শব্দগুলি সেখানে বঙ্কিমচন্দ্রের ভূমিকা পালন করে।
শরৎ-বঙ্কিম যুগলবন্দী হয়ে আমাদের স্ক্রিপ্ট তখন নতুন টিনের চালের মতো টানটান হয়ে উঠে।
বিপক্ষের যুক্তি-বৃষ্টির ফোঁটা সেখানে পড়ে শব্দ করে ঠিকই, কিন্তু পিছলে যায়। কিন্তু
আমার লেখা স্ক্রিপ্ট টিনের চাল হওয়াতো দূরের কথা, পাতার ছাউনিও হতে পারেনি।
রিফাৎ
আরা ম্যাডাম হাসি থামিয়ে আমাকে বললেন, “প্রদীপ, আপনি সবকিছু নিয়েই এরকম হাসি-ঠাট্টা
কেন করেন? আপনাকে বললাম এই বিতর্কের সবগুলি স্ক্রিপ্ট আপনাকে লিখতে হবে। এই আপনার স্ক্রিপ্ট
লেখার নমুনা?”
জাতীয়
টেলিভিশন কলেজ বিতর্কের চিঠি এসেছে দু’দিন আগে। বিতর্কের বিষয় ‘জাতীয় চেতনাবোধ অক্ষুণ্ণ
রাখার জন্য টেলিভিশনে বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করা উচিত।‘ আমাদের বলতে হবে এর বিপক্ষে।
পক্ষে বলবে আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। দু’সপ্তাহ পরেই রেকর্ডিং।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চিঠি আসতে যে সময়টা লেগেছে সেটা আমাদের নষ্ট হয়েছে। আদমজি ক্যান্টনমেন্ট
ঢাকায় – চিঠি পেয়েছে অন্তত তিন-চারদিন আগে। প্রিন্সিপাল স্যার চিঠি পাওয়ার সাথে সাথেই
বিতর্কের টিম গঠন করে ফেলেছেন। আগের টিম ছিল পাপ্পুর নেতৃত্বে। সেই টিমে যারা ছিল তারা
১৯৯৪ আর ১৯৯৫-এ উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ফেলেছে। এবারের টিমের সবাই ১৯৯৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক
দেবে। বনকুসুম বড়ুয়া আবৃত্তি, গান, বিতর্ক এসব সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে যুক্ত বহুদিন
থেকে। সে কলেজের কালচারাল প্রিফেক্ট। তাকে দলনেতা করা হলো। সুরাইয়া ইসলাম প্রথম বক্তা
আর তাসমিন সুলতানা দ্বিতীয় বক্তা। অতিরিক্ত বক্তা মনোনীত হলো নাসরীন পারভিন। সবাইকে
যুক্তি নিয়ে ভাবতে এবং একটা করে স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে বলা হলো। কিন্তু চূড়ান্ত স্ক্রিপ্ট
তৈরি করবেন রিফাৎ আরা ম্যাডাম – সেটাই আমরা জানি। কিন্তু মিটিং-এর পর প্রিন্সিপাল স্যারের
রুম থেকে বের হয়ে রিফাৎ আরা ম্যাডাম আমাকে বললেন, “এবারের সব স্ক্রিপ্ট আপনি লিখবেন।
কোন অজুহাত আমি শুনবো না।“
অজুহাত
যখন শুনবেন না বলেই দিয়েছেন, তখন আর অজুহাত খোঁজার দরকার নেই। কিন্তু আমি কীভাবে স্ক্রিপ্ট
লিখবো? আমি তো স্ক্রিপ্ট লেখারই বিপক্ষে। আমি মনে করি স্ক্রিপ্ট লিখবে শিক্ষার্থীরা।
আমরা শুধু তাদের গাইড করবো। কিন্তু সেটা তো হয় না, হয়নি। প্রিন্সিপাল স্যার আমার যুক্তি
শুনলে রেগে গিয়ে হয়তো আমাকে জিওনার্দো ব্রুনোর মতো পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেবেন। যাই
হোক, লিখতে পারবো না বলার চেয়ে লিখেই প্রমাণ করতে হবে যে আমি লিখতে পারি না। এক রাতের
মধ্যে টেলিভিশনে বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচারের পক্ষে যুক্তি খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু
কীভাবে করবো? আমি তো জানিই না যে টেলিভিশনে কী কী বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। আমার
তো টেলিভিশন নেই। তাই টেলিভিশন সম্পর্কে আমি যা জানি তা লিখেছি। আমি এটাও জানি যে এই
স্ক্রিপ্ট দেখে রিফাৎ আরা ম্যাডাম রেগে যাবেন, এবং রেগে গিয়ে নিজেই স্ক্রিপ্ট লিখে
ফেলবেন। তিনি যখন রাগ করে লিখতে বসেন – বেশ দ্রুত এবং ভালো লিখতে পারেন। আগের এত সব
বিতর্কের স্ক্রিপ্ট কীভাবে তৈরি হয়েছে দেখেছি তো। এখন তিনি যখন জিজ্ঞেস করছেন এই আমার
স্ক্রিপ্ট লেখার নমুনা কী না – আমি বিনীতভাবে বললাম, “জি ম্যাডাম। নিজেই তো দেখলেন
আমি পারি না। এবার আপনি কলম ধরেন।“
রিফাৎ
আরা ম্যাডাম বুঝলেন যে আমার সাথে আর কথা বলে লাভ নেই। তিনি কাগজ-কলম নিয়ে লিখতে শুরু
করলেন। বিতার্কিকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে বিতর্কের বিষয় নিয়ে। এটাও ভালো লক্ষণ।
বনকুসুমের মধ্যে একধরনের লিডারশিপ কোয়ালিটি আছে। সে জাতীয় চেতনাবোধ কী? তাকে অক্ষুন্ন
রাখা বলতে কী বোঝায়? বিদেশি অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখলে যে আমাদের চেতনাবোধ ক্ষতিগ্রস্ত
হবে না তার পক্ষে কী কী যুক্তি দেয়া যায় এসব নিয়ে কথা বলছে। আমি রুমের চারপাশে তাকাচ্ছি।
এটা আমাদের নতুন লাইব্রেরি। বেশ বড় রুম। চারপাশের দেয়ালে লাগানো আলমারিগুলি এখনো খালি।
পুরাতন বিল্ডিং থেকে এই বিল্ডিং-এ শিফটিং চলছে। আপাতত কলেজের ক্লাসগুলি চলে এসেছে এখানে।
স্কুল সেকশানের পরীক্ষা চলছে পুরাতন ভবনে। নতুন বছরে ক্লাস সিক্স থেকে উপরের দিকের
সব ক্লাস এখানে চলে আসবে। ঝকঝকে নতুন এই বিল্ডিং-এর তিন তলা পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে।
পাঁচ-ছয় তলার প্ল্যান আছে। হরাইজন্টাল অ্যান্ড ভার্টিক্যাল দুই দিকেই সম্প্রসারিত হবে
আস্তে আস্তে ভবিষ্যতে।
“ম্যাডাম
আসি?”
“আরে
পাপ্পু আসো আসো। তোমাকেই দরকার আমাদের।“
পাপ্পুকে
আসতে বলা হয়েছিল আমাদের বিতার্কিকদের অনুশীলন করানোর জন্য। টেলিভিশন কলেজ বিতর্কে পাপ্পু
আমাদের দলনেতা ছিল এবং শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছিল। শুধু প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে নয়, আমাদের
হোসনে আরা ম্যাডামের ছেলে হিসেবেও পাপ্পু আমাদের স্নেহের পাত্র। সেই স্নেহের দাবিতে
তাকে আমরা যখন তখন ডেকে পাঠাই। সে নিজের পড়াশোনাসহ শত কাজ থাকা সত্ত্বেও চলে আসে।
পাপ্পু
রুমে ঢুকে বড় টেবিলের অন্য পাশের বেঞ্চে বসতে বসতে বললো “প্রিন্সিপাল স্যার তো চলে
যাচ্ছেন।“
এখন
বাজে মাত্র এগারোটা। প্রিন্সিপাল স্যার এখনই চলে যাচ্ছেন? জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় যাচ্ছেন?”
“কাতারে।
কাতার এমব্যাসি কলেজে।“
মনে
হলো ছোটখাট বজ্রপাত হয়ে গেল রুমের ভেতর। আমাদের কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হলো না কয়েক
মিনিট। রিফাৎ আরা ম্যাডাম কলম থামিয়ে কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমাদের
এই যে বিতর্কের উদ্যোগ এর নেতৃত্বের পুরো কৃতিত্বই প্রিন্সিপাল স্যারের।
কিছুক্ষণের
মধ্যেই শিক্ষকদের সবাই জেনে গেছেন যে প্রিন্সিপাল স্যার চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যে
এত দ্রুত এক সপ্তাহের মধ্যেই চলে যাবেন তা আমি চিন্তাও করিনি। শুনেছি কলেজ থেকে কেউ
চলে যেতে চাইলে দুই মাসের নোটিশ দিতে হয়। আর দুই মাসের কম নোটিশে চলে যেতে চাইলে দুই
মাসের বেতনের সমান টাকা কলেজকে দিয়ে যেতে হয়। প্রিন্সিপাল স্যার কি দুই মাস আগে নোটিশ
দিয়েছিলেন? না কি দুই মাসের বেতনের সমান টাকা জরিমানা দিয়ে কলেজ থেকে বিদায় নিচ্ছেন?
কিন্তু বিদায় নেয়াটাও সেভাবে হয়নি। প্রিন্সিপাল স্যারের জন্য কোন বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি।
তিনি নিরবেই একদিন চলে গেলেন। আমরা অনেকে জানতেও পারলাম না ঠিক কোন্দিন তাঁর শেষ দিন
ছিল কলেজে।
>>>>>>>>>>>>>>>>>
প্রিন্সিপাল
স্যার চলে যাবার পর ভাইস প্রিন্সিপাল শিরিন ম্যাডামকে অস্থায়ীভাবে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেয়া হলো। কোন জায়গাই কারো
জন্য খালি পড়ে থাকে না। কলেজের কাজকর্ম যথানিয়মেই
চলছে। কলেজ বিতর্কের টিম যথাসাধ্য চেষ্টা করে তৈরি হচ্ছে। এদিকে রেকর্ডিং এর জন্য ঢাকায়
যাবার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে – রিফাৎ আরা ম্যাডাম ততই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিতর্কের
স্ক্রিপ্ট রেডি করে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর শরীরটা
হঠাৎ এত খারাপ হয়ে গেল যে তাঁর পক্ষে বিতর্কের টিমের সাথে ঢাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে
না। নাসরীন ম্যাডামও যাবেন না বলে দিয়েছেন। হোসনে আরা ম্যাডাম এগিয়ে এলেন আমাকে সাহায্য
করার জন্য। তিনি ঢাকা যেতে রাজি হলেন। পাপ্পুকেও রাজি করালাম। চারজন বিতার্কিক, পাপ্পু,
হোসনে আরা ম্যাডাম আর আমি বিকেলের বাসে রওনা দিলাম ঢাকা।
অফিসার্স
মেসে যখন পৌঁছলাম তখন অনেক রাত হয়ে গেছে। আমাদের জন্য তিন বেড রুমের একটা অ্যাপার্টমেন্ট
বুকিং দেয়া ছিল। কিন্তু গার্ডরুমের রিসিপশান থেকে জানালো হলো – সামান্য একটু অসুবিধা
হয়ে গেছে।
“কী
অসুবিধা?”
“সেই
অ্যাপার্টমেন্টের তিন রুমের মধ্যে দুই রুম আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন। আরেক রুমে একজন
অফিসার উঠেছেন তাঁর ওয়াইফসহ। তাঁরা আজকেই এসেছেন। জানেন তো, অফিসারদের প্রায়োরিটি দিতে
হয় আমাদের।“
আমি
হোসনে আরা ম্যাডামের দিকে তাকালাম। পৃথিবীর কোন সমস্যাই তাঁর কাছে সমস্যা নয়। তিনি
বললেন, “কোন অসুবিধা নেই। আমরা দুই রুমে থাকতে পারবো। আমরা মেয়েরা চারজন এক রুমে থাকবো।
আর আপনারা ছেলেরা তিন জন এক রুমে থাকবেন।“
এখানে
যতবারই আসি – সবকিছু নতুন মনে হয়। এই এপার্টমেন্টকেও নতুন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবচেয়ে
বড় রুমটাই কোন এক অফিসার এসে দখল করেছেন। বাইরের দিকে বসার ঘর কাম লিভিং রুমের দুইটা
খাটে আমরা তিনজন জায়গা করে নিলাম। মাস্টার হবার সুবিধা হলো ডাবলিং করতে হয় না।
নাসরিন
খুব হাসিখুশি চঞ্চল। সুযোগ পেলেই কিছু না কিছু বলছে সে। সুরাইয়া আর তাসমিন ভ্রমণ-ক্লান্তিতে
কাহিল হয়ে পড়েছে। কিন্তু নাসরিনের মাঝে ক্লান্তির কোন ছাপ নেই। অবশ্য এটাও হতে পারে
যে অন্য দুজনের মধ্যে আগামীকালের বিতর্ক প্রতিযোগিতার স্নায়ুচাপ কাজ করছে। কিন্তু নাসরিনের
কাজটা তো আরো কঠিন। সে অতিরিক্ত বিতার্কিক হিসেবে এসেছে। সে জানে না কার জায়গা তাকে
নিতে হতে পারে। তাই তাকে তিনটি স্ক্রিপ্টই মুখস্ত করতে হয়েছে। তার স্মৃতিশক্তি দেখে
আমি অবাক হয়ে গেছি। এরা যখন অনুশীলন করে – তখন সে প্রত্যেকের স্ক্রিপ্টের প্রত্যেকটা
শব্দ নিঃশব্দে উচ্চারণ করে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমাদের রুমটা কত বড়? চার জন কীভাবে
থাকবে?”
“রুমটা
ছোট। কিন্তু কোন সমস্যা নেই স্যার। ক্যাম্পিং-এ আমরা এর চেয়ে কত ছোট জায়গায় কত বেশি
মানুষ থাকি।“ – নাসরিনের প্রাণশক্তি দেখে ভালো লাগে। সে বিএনসিসি করে। তাই অনেক রকম
ট্রেনিং আছে তার।
হোসনে
আরা ম্যাডাম খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলেন। তাঁর ভেতর এমন একটা আভিজাত্য আছে – যে তিনি
খুব মৃদুস্বরে কিছু বললেও – যাকে বলা হচ্ছে তিনি তা যথাযথভাবে পালন করেন।
রাতের
খাবারের পর দেখলাম সবার চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে গেছে। বিতর্কের স্ক্রিপ্ট প্র্যাকটিস
করতে বলতে মায়া লাগছে। আবার একটা রুমে ওরা চারজন কীভাবে ঘুমাবে। বসার ঘরে যে যার মতো
বসে আগামীকাল কটায় বের হতে হবে ইত্যাদি নিয়ে একটু কথা বলছি – এমন সময় দরজায় নক করলো
কেউ। বনকুসুম এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
“ও
তোমরা এসেছ চিটাগং থেকে? ম্যাডাম আসেননি?” – বলতে বলতে রুমে ঢুকলেন দু’জন। এরাই সম্ভবত
সেই অফিসার দম্পতি যারা এখানে উঠেছেন।
তরুণ
অফিসার এগিয়ে এসে হঠাৎ হোসনে আরা ম্যাডামকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। তারপর নিচু হয়ে পায়ে
ধরে সালাম করলো।
“ম্যাডাম,
আমি শাহীন। চিনতে পারছেন?”
“আরে
শাহীন। তোমাকে চিনতে পারবো না? কত ছোটবেলা থেকে তোমাকে দেখেছি।“ – হোসনে আরা ম্যাডামের
গলায় স্নেহের সুর।
স্বামীর
দেখাদেখি স্ত্রীও ম্যাডামকে সালাম করলেন। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই দাঁড়িয়ে সালাম
দিলো তাদের। হোসনে আরা ম্যাডাম আমার সাথে শাহীনের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বললেন, “প্রদীপ,
ও হলো শাহীন। আমাদের ছাত্র ছিল। এখন অফিসার।“
শাহীন
আমার দিকে তাকালো এক সেকেন্ড। তারপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর।
“স্টুপিড,
আমাকে দেখেও তুই এভাবে চুপচাপ বসে আছিস?”
“ভুল
হয়ে গেছে, তুই অফিসার মানুষ। তোকে দেখে স্যালুট করা উচিত ছিল।“
“কান
ছিঁড়ে ফেলবো তোর। ম্যাডাম, ও আমার বন্ধু। আমরা এক সাথে হলে ছিলাম এক বছর।“
শাহীন
আমাদের সাথে বছরখানেক ফিজিক্স পড়েছিল ইউনিভার্সিটিতে। তারপর জিডিপি হয়ে এয়ারফোর্সে।
তার ছোটবোন ফারজানা এবছরই এইচএসসি পাস করেছে শাহীন কলেজ থেকে। তারপর কিছুক্ষণ হৈ চৈ
হলো। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী তাদের রুমে ঢুকে গেল। নাসরিন আমার কাছে এসে ফিসফিস করে
বললো, “স্যার, আপনার বন্ধুকে বলেন না রুমটা আমাদের ছেড়ে দিতে।“
“একটু
আগেই না বললে, তোমাদের অসুবিধা নেই।“
“তখন
কি জানতাম নাকি যে আপনার বন্ধু এখানে এসে উঠেছে?”
“একটু
আগে বললে না কেন? এখন তো তারা মনে হয় শুয়ে পড়েছে।“
“ডেকে
তুলে দেন। তারপর ভাগিয়ে দেন।“
“তখন
আমাদের ভাগিয়ে দেবে। অফিসারদের মেস থেকে তুমি অফিসার ভাগিয়ে দেবে?”
“তাইলে
থাক।“
এমন
সময় শাহীন বের হয়ে এলো একটা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে। বললো, “দোস্ত, তোর স্টুডেন্টরা আমাদের
রুমটাতেও থাকতে পারবে। আমরা চলে যাচ্ছি।“
“কোথায়
যাচ্ছিস?”
“এখানেই।
আমাদের আরেকটা ফ্যামিলি ফ্রেন্ড আছে। তাদের ওখানে।“
“অসুবিধা
হবে না তো? বউ নিয়ে এত রাতে?”
“আরে
না। বউ না থাকলেই বরং অসুবিধা হতো।“
একটু
পরেই তারা বিদায় নিয়ে চলে গেল। মেয়েদের ঘুমানোর জায়গার আর কোন অভাব নেই। কিন্তু দেখা
গেল একটু আগে তাদের যে ঘুমের ভাব ছিল – এখন তা আর নেই।
>>>>>>>>>>>>>>>>>
ঢাকা
শাহীন থেকে আমরা অনেক সহায়তা পাই। বিতর্কের রেকর্ডিং বিকেলে। দুপুর দুটায় আমরা রওনা
দিলাম বিমান বাহিনীর বাসে। শাহীন কলেজের প্রায় চল্লিশ জন শিক্ষার্থী এবং দুজন শিক্ষক
আমাদের সাথে গেলেন। রামপুরা টেলিভিশন ভবনের মানুষজন বিমান-বাহিনীর গাড়ি দেখলেই বুঝে
যায় শাহীন কলেজের কোন ব্যাপার আছে।
আমাদের
প্রতিপক্ষ আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজও সেনাবাহিনী পরিচালিত কলেজ। তারা তিনটি গাড়ি নিয়ে
এসেছে। তাদের উপস্থিত ছাত্রসংখ্যা আমাদের তিনগুণ।
বিতর্ক
শুরুর আগে বিতর্কের পরিচালক কিরণ সাহেবের সাথে দেখা হলো। স্কুল বিতর্কে শাহীন স্কুল
চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই সুবাদে কিরণ সাহেব বেশ সমীহ করে কথা বললেন। জানালেন খুব শীঘ্রই
জাতীয় টেলিভিশন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হবে। ১৯৯৩ আর ১৯৯৪
একসাথে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তারিখ জানালেই তা আমাদের জানিয়ে দেয়া হবে। এক-দুই
সপ্তাহের ভিতরেই হয়ে যাবে। একটা প্রীতি-বিতর্কও হবে। বিষয়ও জানিয়ে দেয়া হবে তারিখের
সাথে।
যথাসময়ে
বিতর্ক শুরু হলো। আমাদের বক্তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত জিততে পারলো
না। তবে বনকুসুম বিপক্ষদলের দলনেতার সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ বক্তা হলো। আমাদের এ বছরের
কলেজ বিতর্ক এখানেই শেষ। আবার পরের বছর আমন্ত্রণ পেলে দেখা যাবে।
মেসে
ফিরে আসার পর যাবার প্রস্তুতি। পাপ্পু সকালে গিয়ে ট্রেনের টিকেট করে এনেছিল। রাতের
ট্রেন। অনেক গান-গল্প করতে করতে ফেরা। প্রতিযোগিতায় হারার পরেও আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের
যে মনোবল কমে যায়নি তা দেখে খুব ভালো লাগলো আমার।
পরদিন
কলেজে আসার পর বিমল স্যার বললেন, “প্রদীপবাবু, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।“
“কেন
স্যার? আমি কী করলাম?”
“আপনি
যে বিতর্কে হেরে এসেছেন সেজন্য। আপনাদের অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্লাস করতে করতে টায়ার্ড হয়ে
গেছি।“
বিমল
স্যারের সেন্স অব হিউমারের প্রশংসা করতেই হয়। কিন্তু আমি বিতর্কে হেরে এসেছি বলছেন
কেন? এটা তো একটা টিম-ওয়ার্ক ছিল। যাক, সব কথার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হয় না।
>>>>>>>>>>>>>>>>>
দেশের
রাজনৈতিক অবস্থা দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে। চারদিনের টানা হরতাল শেষ হয় তো ছয় দিনের
হরতাল শুরু হয়। এখানে ওখানে বোমা পড়ছে। হরতালের মধ্যে আমাদের প্রতিদিন কলেজে যেতে হয়।
হরতাল শুরু হয় সকাল ছ’টা থেকে। আমরা প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় রওনা দিয়ে রিক্সা করে ছ’টার
আগে কলেজে চলে আসি। এসে কলেজের গেটের বাইরে বারান্দার সিঁড়িতে বসে থাকি। অনেকক্ষণ পরে
পিয়নদের কেউ এসে গেট খোলার পর আমরা কলেজে ঢুকি। ছুটির পর আবার সেই অবস্থা। কিছুদূর
রিকশা। পিকেটার দেখলে রিকশা থেকে নেমে হাঁটা। কতদিন নৌবাহিনীর ঘাঁটির ভিতর দিয়ে কর্ণফুলির
তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে সল্ট-গোলা ক্রসিং এর ওখানে এসে রাস্তায় উঠেছি। তারপর আবার কিছুদূর
রিকশা। এভাবে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে পরদিন ভোরের জন্য প্রস্তুতি। চকবাজার থেকে লাইলুননাহার
ম্যাডাম, পাঁচলাইশ থেকে রিফাৎ আরা ম্যাডাম, আন্দরকিল্লা থেকে আইভি ম্যাডাম, সংযুক্তা
ম্যাডাম সবাইকেই এভাবে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
এর
মধ্যে একদিন টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে চিঠি এলো। প্রধানমন্ত্রী বিতর্কে বিজয়ীদের পুরষ্কার
দেবেন। এ উপলক্ষে বিটিভিতে প্রীতি-বিতর্ক হবে। প্রীতি-বিতর্ক মানে কোন প্রতিপক্ষ থাকবে
না। কোন বিচারকও থাকবেন না। প্রত্যেক তার্কিক আড়াই মিনিট করে সময় পাবে। আমাদের বিতার্কিকদের
জন্য প্রীতি-বিতর্কের বিষয় হলো “ইহার চেয়ে হতেম যদি”।
রিফাৎ
আরা ম্যাডাম ডাকলেন বিতর্কের স্ক্রিপ্টের ব্যাপারে কথা বলতে। একই বিষয়। কিন্তু তিন
জনের জন্য তিনটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে। কিন্তু বিষয়টাই তো আমি বুঝতে পারছি না।
“ইহার
চেয়ে হতেম যদি – মানে তো কিছু বুঝলাম না ম্যাডাম।“
আমার
বুদ্ধ্যাংক যে খুবই নিচের দিকে তা রিফাৎ আরা ম্যাডাম জানেন। তাই তিনি খুব একটা অবাক
হলেন না। কিন্তু নাসরীন ম্যাডাম খুব একচোট হেসে নিলেন।
“ইহার
চেয়ে হতেম যদি – কী হতেম যদি?”
“সেটাই
তো কথা। ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন – শুনেননি কখনো?” – রিফাৎ আরা ম্যাডাম আমাকে
বুঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার মাথায় ঢুকছে না। আরব বেদুইন হতে চাচ্ছে কেউ। কে হতে
চাচ্ছে? এটা কি কোন কবিতা, নাকি অন্যকিছু? হাতা মাথা কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
নাসরীন
ম্যাডামের মুখে রহস্যময় হাসি। সেই হাসির অর্থ হতে পারে – আমি জানি, কিন্তু বলবো না।
তোমার এই পর্বের কাহিনিটা অনেক মজার। তোমার লিখা এত সুন্দর যে, পড়ে মনে হয় আমি এগুলো আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
Delete