Wednesday, 20 January 2021

লাল গ্রহ মঙ্গল - পর্ব ২

 



দ্বিতীয় অধ্যায়

সূর্যের চতুর্থ গ্রহ

 

সৌরজগতের আটটি গ্রহকে দুটো প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। সূর্যের কাছকাছি চারটি কঠিন গ্রহ - বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল। সে হিসেবে আমাদের পৃথিবীর দু'পাশের দুই প্রতিবেশী গ্রহ - শুক্র ও মঙ্গল। সূর্যের চারপাশে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে শুক্র ও পৃথিবী সবচেয়ে কাছাকাছি যে দূরত্বে আসে সেটা হলো ৩ কোটি ৮০ লক্ষ কিলোমিটার। আবার একইভাবে মঙ্গল ও পৃথিবী পরস্পর সবচেয়ে কাছে যে দূরত্বে আসে তা হলো প্রায় ৫ কোটি ৪৬ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্যের সবচেয়ে কাছের দুটো গ্রহ বুধ ও শুক্রের কোন চাঁদ নেই। পৃথিবী থেকে শুরু করে সূর্য থেকে দূরবর্তী গ্রহগুলোর একাধিক চাঁদ আছে। মঙ্গল গ্রহের পরে সূর্যের চারপাশে কয়েক শ' কোটি ছোট-বড় গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেই জায়গাটা জুড়ে এরা মহাশূন্যে ভেসে ভেসে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে তাকে বলা হয় অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট। অ্যাস্টেরয়েড বেল্টের বাইরের দিকের চারটি গ্রহের প্রত্যেকটিই বিশাল আকৃতির গ্রহ হলেও তাদের শরীরের পুরোটাই ঘন গ্যাস দিয়ে তৈরি, কোন কঠিন পদার্থ নেই সেখানে। কঠিন গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। আকার ও আয়তনের দিক থেকে দ্বিতীয় ছোট গ্রহ হলো মঙ্গল। পৃথিবীর আকাশে মঙ্গল গ্রহ খালি চোখে দেখা যায় - তবে সব সময় নয়। সূর্যের চারপাশে নিজ নিজ অক্ষে যে যার মতো ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী ও মঙ্গল পরস্পর খুব কাছে চলে আসে। সেই সময় পৃথিবী থাকে মঙ্গল ও সূর্যের মাঝখানে। মঙ্গল তখন সূর্যের বিপরীতদিকে থাকে, তাই এ অবস্থাকে বলা হয় অপজিশান। ২৬ মাস পর পর অপজিশান আসে। অপজিশানের সময় পৃথিবীর আকাশে মঙ্গলকে খালি চোখেই দেখা যায়।

          এই অধ্যায়ে চলো দেখি মঙ্গল গ্রহের আকার, আয়তন, ভর, ঘনত্ব, সূর্য ও পৃথিবী থেকে দূরত্ব, কক্ষপথের গতিপ্রকৃতি, মাধ্যাকর্ষণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি কেমন।

 

 


মঙ্গলের আকার-আকৃতি, ভর ও ঘনত্ব

সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ মঙ্গল। সূর্যের আটটি গ্রহের মধ্যে শুধুমাত্র বুধ-ই মঙ্গলের চেয়ে ছোট, বাকি সবগুলি গ্রহ মঙ্গলের চেয়ে বড়। মঙ্গলের গড় ব্যাস ৬,৭৯২ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক। মঙ্গল গ্রহের সাথে পৃথিবীর চাঁদের আকৃতিগত মিল আছে অনেক। চাঁদের যেমন একপিঠ খানাখন্দে ভর্তি এবং অন্যপিঠ মসৃণ, মঙ্গলেরও এক গোলার্ধ খানাখন্দে ভর্তি, অন্য গোলার্ধ অপেক্ষাকৃত মসৃণ। পৃথিবীর যেমন উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকটা কিছুটা চাপা, মঙ্গলেরও তাই। নিজের অক্ষের উপর পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে প্রচন্ডভাবে ঘুরছে বলে গ্রহের ভেতরের পদার্থগুলো গ্রহের পেট বরাবর বাইরের দিকে বেরিয়ে আসতে চায়। তাই পূর্ব-পশ্চিম বরাবর নিরক্ষীয়-ব্যাস  উত্তর-দক্ষিণ বরাবর মেরু-ব্যাসের চেয়ে কিছুটা বড় হয়। মঙ্গলের নিরক্ষীয় ব্যাস ৬,৭৯২ কিলোমিটার, এবং মঙ্গলের মেরু-ব্যাস ৬,৭৫২ কিলোমিটার।

 

চিত্র: মঙ্গল গ্রহের নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ ও মেরু ব্যাসার্ধ

 

মঙ্গলের পরিসীমা ২১,৩৪৪ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর পরিসীমার শতকরা ৫৩ ভাগ। মঙ্গলের ক্ষেত্রফল ১৪,৪৭,৯৮,৫০০ বর্গ কিলোমিটার, যা পৃথিবীর মোট ক্ষেত্রফলের শতকরা মাত্র ২৮ ভাগ। মঙ্গল গ্রহের আয়তন ১৬,৩০০ কোটি ঘন কিলোমিটার - যা পৃথিবীর আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ বা প্রায় ১৫%। অর্থাৎ আমাদের পৃথিবীর আয়তন ছয়টি মঙ্গল গ্রহের আয়তনের সমান।

          মঙ্গল গ্রহের ভর ৬৪২ কোটি কোটি কোটি কিলোগ্রাম (৬.৪২x১০২৩ কিলোগ্রাম)। মঙ্গলের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের শতকরা ১৫ ভাগ হলেও মঙ্গলের ভর পৃথিবীর ভরের মাত্র ১০.৭%। দেখা যাচ্ছে পৃথিবী যে উপাদান দিয়ে তৈরি তা মঙ্গল গ্রহ যে উপাদান দিয়ে তৈরি তার চেয়ে ভারী।

          মঙ্গল গ্রহের গড় ঘনত্ব ৩,৯৪০ কিলোগ্রাম/ঘন মিটার বা ৩.৯৪ গ্রাম/ঘন সেমি। পৃথিবীর গড় ঘনত্ব ৫,৫১০ কিলোগ্রাম/ঘন মিটার বা ৫.৫১ গ্রাম/ঘন সেমি। মঙ্গল গ্রহের গড় ঘনত্ব পৃথিবীর গড় ঘনত্বের শতকরা ৭১.৫ ভাগ।    

 

 


পৃথিবীর সাথে মঙ্গল গ্রহের আকৃতিক বৈশিষ্ট্যের একটি তুলনামূলক চিত্র নিচের সারণিতে দেয়া হলো।

 

সারণি:  মঙ্গল ও পৃথিবীর আকারের তুলনা

বৈশিষ্ট্য

মঙ্গল

পৃথিবী

গড় ব্যাস

৬,৭৯২ কিমি

১২,৭৪২ কিমি

পরিসীমা

২১,৩৪৪ কিমি

৪০,০৭৫ কিমি

ক্ষেত্রফল

১৪,৪৭,৯৮,৫০০ বর্গ কিমি

৫১,০১,০০,০০০ বর্গ কিমি

আয়তন

১৬,৩০০ কোটি ঘন কিমি

১,০৮,০০০ কোটি ঘন কিমি

ভর

৬৪২ কোটি কোটি কোটি কিলোগ্রাম

৫,৯৭২ কোটি কোটি কোটি কিলোগ্রাম

ঘনত্ব

.৯৪ গ্রাম/ঘন সেমি

.৫১ গ্রাম/ঘন সেমি

 

 


অভিকর্ষজ ত্বরণ

মঙ্গল গ্রহের উপরের তলে অভিকর্ষজ ত্বরণের গড় মান ৩.৬৯ মিটার/বর্গ সেকেন্ড। পৃথিবীপৃষ্ঠে এই মান ৯.৮১ মিটার/বর্গ সেকেন্ড। অর্থাৎ মঙ্গলের অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের প্রায় ৩৮%। তার মানে পৃথিবীতে কোন কিছুর ওজন যদি ১০০ নিউটন হয়, মঙ্গলে তার ওজন হবে ৩৮ নিউটন। পৃথিবীতে কেউ যদি উচ্চলাফ দিয়ে দুই মিটার লাফাতে পারে, মঙ্গল গ্রহে সে ৫ মিটারেরও বেশি লাফাতে পারবে।

 

মঙ্গলের মুক্তিবেগ

পৃথিবী থেকে যখন মহাকাশে রকেট পাঠানো হয় তখন সেই রকেটের বেগ এমন হতে হয় যেন সেটা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীতে ফিরে না আসে। মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে মুক্তি পাবার জন্য সর্বনিম্ন যে বেগের দরকার হয় তাকে মুক্তিবেগ (escape velocity) বলে। পৃথিবীর মুক্তিবেগ ঘন্টায় ৪০,২৮৪ কিলোমিটার। মঙ্গলপৃষ্ঠের মাধ্যাকর্ষণ বলের টান অতিক্রম করতে হলে সর্বনিম্ন যে বেগের দরকার হয় অর্থাৎ মঙ্গলের মুক্তিবেগ হলো ৫.০৩ কিমি/সে বা ঘন্টায় ১৮,১০৮ কিলোমিটার।

 

থাকে কত দূরে

সূর্যের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল। সূর্য থেকে তার গড় দূরত্ব ২২ কোটি ৭৯ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার। মঙ্গলের একদিকে আছে পৃথিবী, আর অন্যদিকে গ্রহাণুর বেল্ট পার হয়ে বিশাল গ্রহ বৃহস্পতি। পৃথিবী ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মাঝখানে মঙ্গলের কক্ষপথ। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের ন্যূনতম দূরত্ব ৫ কোটি ৪৬ লক্ষ কিলোমিটার। বৃহস্পতি থেকে মঙ্গলের ন্যূনতম দূরত্ব ৫৮ কোটি ৮০ লক্ষ কিলোমিটার। মঙ্গলের নিকটতম প্রতিবেশী হলাম আমরা - আমাদের পৃথিবী।

 

চিত্র: সূর্য থেকে মঙ্গলের সবচেয়ে কাছের ও সবচেয়ে দূরের বিন্দুর দূরত্ব

 

মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ খুবই উপবৃত্তাকার। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপবৃত্তাকার কক্ষপথ হলো বুধের (উৎকেন্দ্রিকতা ০.২০৫৬); তারপরেই মঙ্গলের কক্ষপথ। মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের চেয়েও উপবৃত্তাকার। তাই সূর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরার সময় সূর্য থেকে মঙ্গলের দূরত্ব সবসময় সমান থাকে না। মঙ্গল সূর্যের একেবারে কাছে যে বিন্দু পর্যন্ত যেতে পারে সেখান থেকে সূর্যের দূরত্ব ২০ কোটি ৬৬ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্য থেকে মঙ্গলের কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের এই বিন্দুকে বলে পেরিহিলিয়ন (perihelion) বা অনুসুর বিন্দু। মঙ্গল গ্রহ সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে যে বিন্দু পর্যন্ত যেতে পারে তার দূরত্ব ২৪ কোটি ৯২ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্য থেকে মঙ্গলের কক্ষপথের সবচেয়ে দূরের এই বিন্দুকে বলে অ্যাপহিলিয়ন (aphelion) বা অপসুর বিন্দু। সূর্য থেকে মঙ্গল গ্রহে আলো আসতে সময় লাগে প্রায় ১২ মিনিট ৪০ সেকেন্ড।

 

কত বেগে ঘুরে

সূর্যের চারপাশে মঙ্গলের গড় গতিবেগ সেকেন্ডে ২৪১ কিলোমিটার বা ঘন্টায় ৮৬ হাজার ৭৬০ কিলোমিটার। অনুসুর বা পেরিহিলিয়ন বিন্দুতে মঙ্গলের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি; সেকেন্ডে ২৬. কিলোমিটার বা ঘন্টায় ৯৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। অপসুর বা অ্যাপহিলিয়ন বিন্দুতে এই গতিবেগ সবচেয়ে কম; সেকেন্ডে প্রায় ২২ কিলোমিটার বা ঘন্টায় ৭৯ হাজার ২০০ কিলোমিটার। কক্ষপথে মঙ্গলের গতিবেগ পৃথিবীর গতিবেগের চেয়ে কম।

 

মঙ্গলের বছর

মঙ্গলের কক্ষপথের পরিসীমা ১৪২ কোটি ৯০ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্যের চারপাশে এই কক্ষপথ একবার অতিক্রম করতে মঙ্গলের সময় লাগে পৃথিবীর ৬৮৭ দিনের সমান। সুতরাং মঙ্গলের এক বছর পৃথিবীর ১.৮৮ বছরের সমান।

 

মঙ্গলের দিন

সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে কক্ষপথে যেরকম ঘুরছে, তেমনি ঘুরছে নিজের অক্ষের উপর। মঙ্গল গ্রহ নিজের অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরছে। কোন গ্রহ তার নিজের অক্ষে একবার সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে যে সময় নেয় তাকে বলা হয় গ্রহটির এক দিন। পৃথিবী ২৪ ঘন্টায় এক বার নিজের অক্ষে ঘুরে, তাই ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীর এক দিন। নিজের অক্ষের উপর একবার সম্পূর্ণ ঘুরতে মঙ্গলের লাগে পৃথিবীর সময়ের মাপে ২৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড। মঙ্গলের দিন পৃথিবীর দিনের চেয়ে মাত্র ৩৯ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড লম্বা। পৃথিবীর দিন আর মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য খুব কাছাকাছি হওয়ার কারণে পৃথিবীর দিন ও মঙ্গলের দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রাখার জন্য বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের দিনের নাম দিয়েছেন 'সোল' (sol)। এক সোল সমান ২৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড ধরে নিয়ে মঙ্গল গ্রহের এক বছর সমান ৬৬৮ সোল।

 

মঙ্গলের ঋতু পরিবর্তন

কোন গ্রহ যদি তার কক্ষপথের তলের উপর লম্বভাবে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরে তাহলে ধরতে হবে ঐ গ্রহের কৌণিক নতি (obliquity) শূন্য ডিগ্রি। সৌরজগতের সবগুলো গ্রহেরই কমবেশি কৌণিক নতি আছে। পৃথিবীর কৌণিক নতি ২৩.৪৫ ডিগ্রি। মঙ্গলের কৌণিক নতি ২৫.২ ডিগ্রি। যে গ্রহের কৌণিক নতি যত কম, সূর্যের সাথে তার পারস্পরিক অবস্থানের পরিবর্তনও কম। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনও কম হয়। পৃথিবীর ২৩.৪৫ ডিগ্রি কৌণিক নতির কারণে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়। মঙ্গলের কৌণিক নতি পৃথিবীর চেয়েও সামান্য বেশি। তাই এটা নিশ্চিত যে মঙ্গলে ঋতু পরিবর্তন ঘটে।

 

চিত্র: নিজের অক্ষে মঙ্গল ও পৃথিবীর ঘূর্ণন ও কৌণিক নতি


পৃথিবী ও মঙ্গলের কৌণিক নতি কাছাকাছি হলেও তাদের কক্ষপথ খুবই ভিন্ন। পৃথিবীর কক্ষপথ প্রায় বৃত্তাকার, তাই পৃথিবীর ঋতুগুলো উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে প্রায় সমানভাবে বিন্যস্ত থাকে। যেমন উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল। এই শীতকাল ও গ্রীষ্মকালের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান। কিন্তু  মঙ্গলের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হওয়াতে মঙ্গলের ঋতুপরিবর্তনের ধরনটা পৃথিবীর মত এত সমানভাবে বিন্যস্ত নয়। যেমন, মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল থাকে ১৯৯ দিন, শরৎকাল থাকে ১৪৭ দিন, শীতকাল থাকে ১৬০ দিন, আর গ্রীষ্মকাল থাকে ১৮২ দিন। দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল থাকে ১৪৬ দিন, গ্রীষ্মকাল ১৬০ দিন, শরৎকাল ১৯৯ দিন, ও শীতকাল থাকে ১৮২ দিন।

          মঙ্গল গ্রহের অক্ষের কৌণিক নতি প্রতি ১ লক্ষ ২০ হাজার বছরে ১৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠানামা করে। মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর পারস্পরিক মহাকর্ষ বলের কারণে এই পরিবর্তন ঘটে থাকে। পৃথিবীর অক্ষের কৌণিক নতির পরিবর্তন ঘটে অনেক কম। কারণ পৃথিবীর ঊপর চাঁদের আকর্ষণ বল পৃথিবীর অক্ষের কৌণিক নতির খুব বেশি পরিবর্তন ঘটতে দেয় না। 

 

 

চিত্র: মঙ্গল গ্রহের ঋতু পরিবর্তন

 

মঙ্গল গ্রহের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো দূর থেকে গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে। বর্তমানে শক্তিশালী দূরবীক্ষণের সাহায্যে মঙ্গল গ্রহের গতিপ্রকৃতির সূক্ষ্ম পরিবর্তনও ধরা যায়। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন, রাসায়নিক উপাদান, তাপমাত্রা, আবহাওয়া, চৌম্বকক্ষেত্র, এবং সর্বোপরি মঙ্গলে প্রাণ আছে কি না  ইত্যাদি জানার জন্য গ্রহ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা দরকার।

          বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৬১ সালে। পরের অধ্যায়ে আমরা দেখবো মঙ্গল গ্রহে কী কী বৈজ্ঞানিক অভিযান চালানো হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে আর কী কী অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তারপর আমরা এসব অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।

পর্ব ৩

No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts