মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪১ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৯/১১/২০১১ |
রাশিয়া |
ফোবোস-গ্রান্ট (Phobos-Grunt) |
মঙ্গলের উপগ্রহ ফোবোসে নেমে মাটির নমুনা সংগ্রহ করা। |
পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করতে পারেনি। মিশন ব্যর্থ। |
ফোবোস-গ্রান্ট
ফোবোস-গ্রান্ট ছিল রাশিয়ার আরেকটি উচ্চাভিলাসী মঙ্গল
মিশন। এই মিশনের লক্ষ্য ছিল মঙ্গলের চাঁদ ফোবোসে গিয়ে ২০০ গ্রাম পরিমাণ ফোবোসের
মাটি পৃথিবীতে নিয়ে আসা। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে গিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য
চাই অনেক বেশি জ্বালানি এবং অনেক জটিল রকেট-সায়েন্সের প্রয়োগ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭০
এর দশকে চাঁদে নভোযান পাঠিয়ে চাঁদের মাটি নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। সেই প্রযুক্তি
এবং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ফোবোস-গ্রান্টের স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়েছিল। বিশাল এই
স্যাটেলাইটের জ্বালানিসহ উৎক্ষেপণ ভর ছিল ১৩,৫০৫ কিলোগ্রাম। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর
উৎক্ষেপণ করা হয় ফোবোস-গ্রান্ট। চীনের প্রথম স্যাটেলাইট ইংগুও-১ও ছিল এই
ফোবোস-গ্রান্ট স্যাটেলাইটের ভেতর। কিন্তু উৎক্ষেপণ রকেট এই স্যাটেলাইটকে মঙ্গলের
ট্রানজিট অরবিটে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে স্যাটেলাইটটি লো আর্থ অরবিটে আটকে পড়ে।
অনেকবার চেষ্টা করেও এটাকে মঙ্গলের কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। নভেম্বরের ২৪
তারিখের পর এই স্যাটেলাইটের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ২০১২ সালের ১৫
জানুয়ারি এই বিকল স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ফিরে আসার সময় ধ্বংস হয়ে
প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে যায়।
চিত্র:
স্যাটেলাইট ফোবোস-গ্রান্ট
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪২ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৯/১১/২০১১ |
চীন |
ইংগুও-১ (Yinghuo-1) |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করা। |
মিশন ব্যর্থ। |
রাশিয়ার সাথে কারিগরি সহযোগিতায় চীন তাদের প্রথম মঙ্গল
মিশন ইংগুও-১ উৎক্ষেপণ করে ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর। রাশিয়ার মঙ্গল মিশন
ফোবোস-গ্রান্টের সাথেই উৎক্ষেপণ করা হয় চীনের এই ছোট্ট স্যাটেলাইট। এই
স্যাটেলাইটের আকার ছিল মাত্র ৭৫ সেন্টিমিটার x ৭৫ সেন্টিমিটার x ৬৫ সেন্টিমিটার। আর
ভর ছিল ১১৫ কিলোগ্রাম। রাশিয়ান স্যাটেলাইট ফোবোস-গ্রান্টের ভেতরের একটা প্রকোষ্টে
স্থাপন করা হয়েছিল ইংগুও-১। পরিকল্পনা ছিল ফোবোস-গ্রান্টের সাথেই এটা পৌঁছে যাবে
মঙ্গলের কক্ষপথে। কিন্তু ফোবোস-গ্রান্ট মিশন ব্যর্থ হওয়ায় চীনের প্রথম মঙ্গল মিশনও
ব্যর্থ হয়ে যায়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪৩ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২৬/১১/২০১১ |
আমেরিকা |
মার্স সায়েন্স ল্যাবরেটরি - কিওরিওসিটি (Curiosity) |
মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করা। |
মিশন সফল। ২০১২ সালের ৬ আগস্ট মঙ্গলে অবতরণ করে। |
কিওরিওসিটি
মঙ্গলে পাঠানো রোভারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে
আধুনিক রোভার - কিওরিওসিটি। একটি পূর্ণাঙ্গ আকারের গাড়ির সমান এই স্বয়ংক্রিয়
মঙ্গল-গাড়ি যাকে বলা চলে একটি চলমান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার। কিওরিসিটি রোভার আসলেই
নাসার 'মার্স সায়েন্স ল্যাবরেটরি'।
কিওরিওসিটি রোভারসহ স্যাটেলাইটের ভর ছিল ৩,৮৯৩
কিলোগ্রাম। কিওরিওসিটি রোভারের ভর ৯০০ কিলোগ্রাম এবং তার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ভর
৭৫ কিলোগ্রাম। প্রায় দুই মিটার উচ্চতাসম্পন্ন এই রোভারের গায়ে লাগানো আছে একটি দুই
মিটার লম্বা রোবটিক হাত যা দিয়ে মঙ্গলের বুকে যে কোন নমুনা সংগ্রহ করে তার
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে পারে। এই রোভারের মূল উদ্দেশ্য মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান
- এখানে কোন প্রাণ কখনো উদ্ভব হয়েছিল কি না। ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা
হয় রোভার কিওরিওসিটি। ২০১২ সালের ৬ আগস্ট মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করে এই রোভার।
প্রথম ২৩ মাসে যেসব বৈজ্ঞানিক কাজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, প্রথম আট মাসের
মধ্যেই সেসব কাজ সম্পন্ন করে কিওরিওসিটি।
চিত্র: মঙ্গলের মাটি থেকে সেলফি তুলে
পাঠিয়েছে রোভার কিওরিওসিটি
চিত্র: মঙ্গলের গেইল ক্রেটার -
অপরচুনিটির ল্যান্ডিং সাইট
কিওরিওসিটি অবতরণ করেছিল ১৫৪ কিলোমিটার ব্যাসের একটি
গহ্বর - গেইল ক্রেটারে। ৩৫০ থেকে ৩৮০ কোটি বছর আগে এই গহ্বর সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলের
বুকে। ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট থেকে মঙ্গলের বুকে চলতে শুরু করে কিওরিওসিটি। ২৭ সেপ্টেম্বর কিওরিওসিটি একটি
জায়গা খুঁজে পায় যেখানে অনেক বছর আগে প্রচুর পানিপ্রবাহ ছিল। কিওরিওসিটির লেজার
কেমিস্ট্রি দিয়ে দূর থেকেও মঙ্গলের মাটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করা যায়। কিউওরিওসিটির
ল্যান্ডিং সাইট গেইল ক্রেটারের মাটির উপাদান পরীক্ষা করে। সময়ের সাথে মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক
পরিবর্তন কী কী হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য গেইল ক্রেটার ছিল সঠিক স্থান। মঙ্গলের
জলবায়ুর পরিবর্তন, ভূমি থেকে বিকিরণ, মাটিতে জৈবযৌগ আছে কি না তাও খুঁজে বের করা -
সবই করেছে কিওরিওসিটি। স্বয়ংক্রিয় ড্রিলিং মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়ে সেখানকার উপাদান
পরীক্ষা করে কিওরিওসিটি খুঁজে পেয়েছে সালফার, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন,
ফসসরাস এবং কার্বন। এ থেকে নিশ্চিন্ত প্রমাণ পাওয়া গেল যে মঙ্গল গ্রহে প্রাণধারণের
জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান আছে। কিওরিওসিটি মিশন এখনো চলমান।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪৪ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৫/১১/২০১৩ |
ভারত |
মার্স অরবিটার মিশন - মঙ্গলায়ন-১ (MOM) |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করা। |
মিশন সফল। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে।
|
মঙ্গলায়ন-১
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশান - ইসরো'র প্রথম
মিশন মঙ্গলায়ন-১ হলো মার্স অরবিটার মিশন। মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে
মঙ্গলের ভূমির উপরিস্তর পর্যবেক্ষণ করবে, খনিজ পদার্থের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ
করবে, বায়ুমন্ডলের উপাদান বিশ্লেষণ করবে - এই লক্ষ্যেই স্যাটেলাইটটি পাঠানো হয়েছে
মঙ্গল গ্রহে। অ্যালুমিনিয়াম ও কম্পোজিট ফাইবার রিইনফোর্সড প্লাস্টিকের বডির
স্যাটেলাইটের আকার ১.৫
মিটার X ১.৫ মিটার X ১.৫
মিটার। তিনটি সোলার প্যানেলের মোট ক্ষেত্রফল ৭.৫৬
বর্গমিটার। সৌরশক্তি থেকে ৮৪০ ওয়াট বিদ্যুৎ-শক্তি উৎপাদন করা যায় এই সোলার
প্যানেলের সোলার সেল থেকে। উৎক্ষেপণের সময় জ্বালানিসহ স্যাটেলাইটের ভর ছিল ১,৩৩৭.২ কিলোগ্রাম। পে-লোডে বৈজ্ঞানিক
যন্ত্রপাতির ভর ১৩.৪ কিলোগ্রাম। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির
মধ্যে আছে লাইম্যান-আলফা ফটোমিটার, মিথেন সেন্সর, এক্সোস্ফেরিক নিউট্রাল
কম্পোজিশান এনালাইজার, থার্মাল ইনফ্রারেড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার, এবং মার্স কালার
ক্যামেরা। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের প্রথম লঞ্চ প্যাড
থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় মঙ্গলায়ন-১। ২৫ দিন ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরার পর ৩০ নভেম্বর
মঙ্গলের ট্রানজিট অরবিটে পৌঁছায় মঙ্গলায়ন-১। ২৯৮ দিন পর ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের
কক্ষপথে পৌঁছায় মঙ্গলায়ন-১। এশিয়ার প্রথম সফল মঙ্গল মিশন মঙ্গলায়ন-১। শুধু তাই নয়,
মাত্র ৭ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার বা ৪৫০ কোটি রুপি ব্যয়ে মঙ্গল গ্রহে স্যাটেলাইট পাঠানোর
ক্ষেত্রেও রেকর্ড গড়েছে ভারতের এই মিশন। এপর্যন্ত এর চেয়ে কম খরচে আর কোন মঙ্গল
মিশন সফল হয়নি। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে পাঁচ বছর পূর্ণ করেছে
মঙ্গলায়ন-১। এই পাঁচ বছরে দুই টেরাবাইট ডাটা ও ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে এই
স্যাটেলাইট।
চিত্র:
মঙ্গলায়ন-১
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪৫ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১৮/১১/২০১৩ |
আমেরিকা |
ম্যাভেন (MAVEN) |
মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা। |
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে।
মিশন সফল। |
ম্যাভেন
মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডলের উপরিস্তরের ধর্মাবলি পরীক্ষার
জন্য 'মার্স অ্যাটমোস্ফিয়ার অ্যান্ড ভোলাটাইল ইভ্যুলিউশান (ম্যাভেন) স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ
করা হয় ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর।
চিত্র: স্যাটেলাইট ম্যাভেন মঙ্গলের
চারপাশে ঘুরছে
২,৪৫৪ কিলোগ্রাম ভরের এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর দশ
মাস ধরে মহাকাশের পথ পাড়ি দিয়ে ২০১৪ সালের
২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছায় স্যাটেলাইট ম্যাভেন। শুরুতে যে কক্ষপথে
ম্যাভেনকে স্থাপন করা হয়েছিল সেখানে মঙ্গলের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগতো
প্রায় ৩৫ ঘন্টা। তারপর কক্ষপথ আরো ছোট করে ম্যাভেনকে নামিয়ে আনা হয় মঙ্গলের
বায়ুমন্ডলের উপরিস্তরে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১২৫ কিলোমিটার উঁচুতে। সেখানে মঙ্গলের
চারপাশে একবার ঘুরতে ম্যাভেনের সময় লাগে সাড়ে চার ঘন্টা। ২০১৪ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি
বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম শুরু করে ম্যাভেন। মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের উপরের স্তর, আয়নোস্ফিয়ার
এবং সৌর-বায়ুর মিথস্ক্রিয়া নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে ডাটা পাঠাচ্ছে ম্যাভেন। ম্যাভেনের
পাঠানো ডাটা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডল একসময় উষ্ণ এবং
আর্দ্র ছিল - যা প্রাণ ধারণের সহায়ক ছিল। কিন্তু পরে ক্রমবিবর্তনে বায়ুমন্ডল শুষ্ক
ও ঠান্ডা হয়ে যায়। মাত্র দু'বছর কাজ করার জন্য পাঠানো হলেও স্যাটেলাইট ম্যাভেনের
যে পরিমাণ জ্বালানি এখনো অবশিষ্ট আছে তাতে আশা করা হচ্ছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত
কর্মক্ষম থাকবে স্যাটেলাইট ম্যাভেন।
চিত্র: স্যাটেলাইট ম্যাভেনের তোলা
মঙ্গল গ্রহের ছবিতে দেখা যাচ্ছে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডলের উপরিস্তরে মেঘ সৃষ্টি
হচ্ছে।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪৬ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১৪/০৩/২০১৬ |
ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন |
এক্সোমার্স-২০১৬ (ExoMars-2016) |
মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা। |
মিশন সফল। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর মঙ্গলের কক্ষপথে
প্রবেশ করে। |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪৭ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১৪/০৩/২০১৬ |
ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন |
শিয়াপারেল্লি ল্যান্ডার |
মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করা। |
মিশন ব্যর্থ। |
এক্সোমার্স ও শিয়াপারেল্লি ল্যান্ডার
মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানের মিশন এক্সোমার্স।
এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো মঙ্গলে যে সামান্য পরিমাণ মিথেন গ্যাস আছে সেই
মিথেনের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা। তাছাড়া অন্যান্য যে গ্যাসের
অস্তিত্ব আছে প্রাণ ধারণের জন্য সেসব গ্যাসের কোন ভূমিকা আছে কি না তা পরীক্ষা করে
দেখা। এক্সোমার্স স্যাটেলাইটের আকার ৩.২ মিটার x ২ মিটার x ২ মিটার। পুরোপুরি
খোলা অবস্থায় সোলার প্যানেলের দৈর্ঘ্য ১৭.৫
মিটার। দুই কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় এই সোলার প্যানেলে। ৪৩৩২ কিলোগ্রাম
ভরের স্যাটেলাইটের দুটো অংশ ছিল। এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার ও ৫৭৭ কিলোগ্রাম
ভরের শিয়াপারেল্লি ল্যান্ডার। এর পে-লোডের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ভর ছিল ১১৩.৮ কিলোগ্রাম। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ উৎক্ষেপণ করা হয় এক্সোমার্স
স্যাটেলাইট। মঙ্গলের কক্ষপথের কাছে এসে ১৬ অক্টোবর স্যাটেলাইট থেকে শিয়াপারেল্লি
ল্যান্ডার আলাদা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ল্যান্ডারটির মঙ্গলে অবতরণ করার কথা।
কিন্তু শিয়াপারেল্লি ল্যান্ডার ঘন্টায় ৫৪০ কিলোমিটার বেগে মঙ্গলের ভূমিতে আছড়ে পড়ে
ধ্বংস হয়ে যায়।
এক্সোমার্স অরবিটার মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছে যায় ১৯
অক্টোবর। ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল থেকে বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম শুরু করে এক্সোমার্স
অরবিটার। ২০২০ সালে মঙ্গলে রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন রোভার পাঠানো হবে। এক্সোমার্স
অরবিটার এই রোভারের ডাটা সঞ্চালনে সাহায্য করবে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই মিশন চলবে।
চিত্র:
এক্সোমার্স স্যাটেলাইট
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪৮ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৫/০৫/২০১৮ |
আমেরিকা |
ইনসাইট |
মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করা। |
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর মঙ্গলে নামে। মিশন সফল। |
ইনসাইট
মঙ্গল গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার
জন্য নাসার প্রথম মিশন ইনসাইট। ইন্টেরিয়র এক্সপ্লোরেশান ইউজিং সিসমিক
ইনভেস্টিগেশান্স, জিওডেসি অ্যান্ড হিট ট্রান্সপোর্ট - এর সংক্ষিপ্ত রূপ ইনসাইট (InSight)। ৪৫০ কোটি বছর আগে মঙ্গল গ্রহের উদ্ভবের সময়কাল থেকে
এপর্যন্ত মঙ্গলের অভ্যন্তরে কী কী পরিবর্তন হয়েছে তা দেখার উদ্দেশ্যেই ইনসাইট
ল্যান্ডার মঙ্গলে পাঠানো হয়েছে। এই রোবট ল্যান্ডার মঙ্গলের মাটিতে নেমে মঙ্গল
গ্রহের ক্রাস্ট, ম্যান্টল ও কোর সম্পর্কে ডাটা সংগ্রহ করবে। এই মিশনের প্রধান
উদ্দেশ্য হলো সৌরজগতের গ্রহগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছে তা খুঁজে বের করা।
চিত্র:
মঙ্গলের বুকে ইনসাইট ল্যান্ডার
২০১৮ সালের ৫ মে উৎক্ষেপণ করা হয় ৩৬০ কিলোগ্রাম ভরের
ইনসাইট মিশন। রকেট Atlas V401
ইনসাইট ল্যান্ডারকে মহাকাশে পাঠানোর সাথে সাথে আরো দুটো ছোট মহাকাশযান - মার্স
কিউব ওয়ান (Mars Cube One) বা মার্কো (MarCO) উৎক্ষেপণ
করে। ছোট্ট সুটকেস আকারের (৩৬.৬ সেমি x ২৪.৩
সেমি x ১১.৮ সেমি) ক্ষুদ্র-নভোযানদুটো ইনসাইটের পাশে পাশে থেকে
পৃথিবী থেকে মঙ্গল পর্যন্ত গিয়েছে এবং ইনসাইটের ল্যান্ডিং-ডাটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছে।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর মঙ্গলের সমতল ভূমি ইলিসিয়াম (Elysium) প্ল্যানেটিয়াতে অবতরণ করে ইনসাইট। নামার পরেই কাজ শুরু
করে দেয় ইনসাইট। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল ইনসাইট মঙ্গল গ্রহের ভূমিকম্প রেকর্ড করে।
ইনসাইটের ভূমিকম্প সংক্রান্ত ডাটা ম্যানেজ করে জুরিখের সুইস রিসার্চ ইউনিভার্সিটি।
ইনসাইট ল্যান্ডার মঙ্গল গ্রহের প্রতিসেকেন্ডের আবহাওয়া রিপোর্ট পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে।
রিপোর্টে থাকছে প্রতিসেকেন্ডের তাপমাত্রা, বাতাসের বেগ, ও বায়ুচাপের পরিমাণ। ২০১৮
সালের ১ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত মঙ্গল গ্রহের বায়ুপ্রবাহের শব্দ রেকর্ড করেছে
ইনসাইট। হিসেব করে দেখা গেছে মঙ্গলে বাতাসের বেগ ঘন্টায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার।
No comments:
Post a Comment