Wednesday, 20 January 2021

লাল গ্রহ মঙ্গল - পর্ব ১২

 



সপ্তম অধ্যায়

মঙ্গলে বসতি

 

স্পেস-এক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন আগামী কয়েক দশকের মধ্যে তিনি মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বাস করবেন। শুধু তাই নয়, তিনি পৃথিবী থেকে অন্য যারা মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বাস করতে ইচ্ছুক, তাদেরকেও নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবেন।  তার জন্য আপাতত খরচ ধরা হচ্ছে জনপ্রতি পাঁচ লক্ষ ডলার বা চার কোটি টাকা। নিসন্দেহে এটা একটি উচ্চাভিলাসী প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবার পথে এখনো অনেক বাস্তব বাধা আছে। যদি ধরেও নেয়া যায় যে মঙ্গলে যাওয়ার জন্য মঙ্গল-যান তৈরি সম্পন্ন হয়েছে, এবং মানুষ মঙ্গলে পৌঁছে গেছে, কিন্তু মঙ্গলে যাওয়ার পর প্রথম বাধা হলো মঙ্গল গ্রহের বর্তমান পরিবেশ। মঙ্গল গ্রহের বর্তমান বায়ুচাপ মাত্র ৬০০ প্যাসকেল, আর গড় তাপমাত্রা -৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গল গ্রহের বায়ুচাপ আর্মস্ট্রং লিমিটের অনেক নিচে। আর্মস্ট্রং লিমিট হলো বায়ুচাপের সেই সীমা - যার কম হলে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পানি ফুটতে শুরু করে। পৃথিবীতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার উপরে বায়ুর চাপ ৬.৩ কিলো-প্যাসকেল। এই চাপে পানি ফুটতে শুরু করে। মঙ্গলের বায়ুচাপ আর্মস্ট্রং লিমিটের দশ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। সেই চাপে কোন মানুষ যদি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়া মঙ্গলে যায় - তার শরীরের সমস্ত জলীয় অংশ মুহূর্তেই বাষ্প হয়ে যাবে।

          অনেকেই বলছেন মঙ্গল গ্রহে বাস করার জন্য প্রয়োজনীয় কলোনি গড়ে তোলা হবে। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহে যদি মানুষ কলোনি গড়ে তুলতে চায় তাহলে মঙ্গল গ্রহই তুলনামূলকভাবে উপযুক্ত গ্রহ। কারণ পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য আর মঙ্গলের দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান। পৃথিবী ও মঙ্গলের অক্ষের নতিও প্রায় একই ধরনের। ফলে পৃথিবীর মতো মঙ্গলেও ঋতু পরিবর্তন হয়। মঙ্গলের বুকে অনেক সমতল জায়গা আছে যেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করা যাবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী কীভাবে নিয়ে যাওয়া হবে - নিয়ে যেতে কী পরিমাণ সময় ও খরচ লাগবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

          সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পরিবেশ। মঙ্গলের বায়ুমন্ডল পৃথিবীর প্রাণির জন্য উপযুক্ত নয়। বায়ুমন্ডলের ৯৫% কার্বন-ডাই-অক্সাইড, গড় তাপমাত্রা -৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের শতকরা মাত্র ৩৮ ভাগ, সর্বোপরি পানির উৎস সম্পর্কে এখনো কোন নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় এ শতাব্দীর মধ্যেই মানুষ মঙ্গলে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করবে বলাটা খুব বেশি যুক্তিগ্রাহ্য নয়। অনেকে প্রস্তাব করছেন মঙ্গলে আগে রোবট পাঠানো হবে। তারা ঘরবাড়ি তৈরি করবে, তারপর আস্তে আস্তে মানুষ যাবে।

পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব মাত্র ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। এই দূরত্বে পৃথিবী থেকে চার লিটার পানি চাঁদে পাঠাতে খরচ হবে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব চাঁদের দূরত্বের ১৪২ গুণ বেশি। সে হিসেবে মঙ্গলে যদি পৃথিবী থেকে নিয়মিত খাবার ও পানীয় পাঠাতে হয়, তাহলে যে পরিমাণ খরচ হবে তা অকল্পনীয়। যদি মানুষকে মঙ্গলে কলোনি তৈরি করতে হয়, তাহলে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে খাদ্য ও পানীয়ের সমস্যার সমাধান কীভাবে করবে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য অনেকেই এখন মহাকাশ-বাগান বা অ্যাস্ট্রো-গার্ডেনিং এর কথা বলছেন।

          মানুষ মঙ্গলে যাবার সময় সাথে করে নিয়ে যাবে প্রচুর বীজ ও উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করবে আর অক্সিজেন ত্যাগ করবে। মানুষের বর্জ্য গাছের সার হিসেবে দেয়া যাবে। মঙ্গলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ বাতাসে টিকতে পারে এরকম উদ্ভিদের চাষ করতে হবে। তার জন্য দরকার হবে মঙ্গলে প্রচুর গ্রিন হাউজ গড়ে তোলা। পৃথিবীতে যে গ্রিন হাউজ সমস্যার সৃষ্টি করছে, মঙ্গলে সেই গ্রিন হাউজ হতে পারে খুবই দরকারি একটি উপায়।

 

চিত্র: মঙ্গলে গ্রিন হাউজের কল্পিত চিত্র

 

মঙ্গল গ্রহে জমাট পানি আছে নিশ্চিত। এই পানিকে গলানোর জন্য মঙ্গলের তাপমাত্রা বাড়াতে হবে। পুরো মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা এক সাথে বাড়ানো সম্ভব নয়। মানুষকে নিজেরা থাকার জন্য মঙ্গল গ্রহের ঘরের ভেতর পৃথিবীর পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে। যেমন আমরা প্লেনে ভ্রমণ করার সময় আকাশে বায়ুচাপ, তাপমাত্রা, অক্সিজেন লেভেল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে রাখি, সেভাবেই করতে হবে। পৃথিবীর বাইরে ছোট্ট একটা এলাকাতে পৃথিবীর পরিবেশ তৈরি করাকে বলা হয় প্যারা-টেরাফর্মিং (paraterraforming)। এরকম প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকতে থাকতে মানুষ মঙ্গলের সামগ্রিক পরিবেশ বদলে পৃথিবীর মতো করে ফেলার একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেবে। এটাকে বলা হয় টেরাফর্মিং (terraforming) বা পৃথিবীকরণ। লক্ষ লক্ষ বছর লেগে যেতে পারে মঙ্গলের পরিবেশ বদলাতে।

           

চিত্র: মঙ্গলের পৃথিবীকরণের কল্পিত চিত্র

 

মঙ্গলের পরিবেশ বদলে পৃথিবীর মত করতে তিনটি প্রধান পরিবর্তন ঘটাতে হবে - ১) জলবায়ুর পরিবর্তন, ২) তাপমাত্রা বৃদ্ধি - যেন তরল পানির প্রবাহ ঘটে, ৩) জলবায়ু সুরক্ষা - যে অক্সিজেন তৈরি হবে তা যেন হারিয়ে না যায়। এগুলো করার জন্য নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি নেই। জীবনের বিকাশ ঘটলে এগুলো জীবনচক্রের মধ্যেই আস্তে আস্তে গড়ে উঠবে।

          শুরুতেই বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে, এবং তার সাথে গ্রহটির সামগ্রিক তাপমাত্রা বাড়াতে হবে। মঙ্গলের মাটি থেকে গ্রিন-হাউজ গ্যাস পারফ্লুরোকার্বন নিসরণ করে বাতাসে ছেড়ে দিতে হবে। মাটিতে অনেক জমাট কার্বন-ডাই-অক্সাইড আছে। ভূস্তরের তাপমাত্রা বাড়লে সেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসে পরিণত হবে। সেগুলো বাতাসের সাথে মিশে বায়ুচাপ বাড়তে শুরু করবে। বায়ুচাপ বাড়লে তরল পানির প্রবাহ পাওয়া যাবে। তখন মঙ্গলের লাল পাথরে আটকে পড়া মিথেন গ্যাস বেরিয়ে আসবে বেশি পরিমাণে। তারপর শুরু হবে ব্যাকটেরিয়া ও শ্যাওলার চাষ যেগুলো প্রচন্ড বৈরি পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। গাঢ় রঙের উদ্ভিদ ও শৈবালের চাষ করলে মঙ্গলের ভূমিস্তরের রঙ গাঢ় হবে এবং সূর্য থেকে অনেক বেশি তাপ শোষণ করবে। ফলে ভূস্তরের তাপমাত্রা বাড়বে। এভাবে হাজার বছর পরে হয়তো মঙ্গলে উদ্ভিদ জন্মানো শুরু হবে। তাতে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করবে।

          এসব পরিকল্পনা অনেক লক্ষ বছর পরে কী হতে পারে তার পরিকল্পনা। কিন্তু আর দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যেই যখন মানুষ মঙ্গল গ্রহে পা রাখবে - আমাদের অনেক চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটবে। যে কোন নতুন আবিষ্কার পুরনো অনেক ধারণা বদলে দেয়।

          ২০১০ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০৩৫ সালের মধ্যে আমেরিকা মঙ্গল গ্রহে নভোচারী পাঠাবে এবং তাদের আবার সুস্থ শরীরে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে নাসা এবং আরো অনেক মহাকাশ সংস্থা। মঙ্গল গ্রহে এপর্যন্ত অনেকগুলো মিশন সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইট। মঙ্গলের বুকে নেমে পরীক্ষা চালাচ্ছে যান্ত্রিক রোবট - রোভার। রোবট দিয়ে আমরা যে কাজ করিয়ে নিতে পারছি - সেখানে মানুষ পাঠানোর কী দরকার? দরকার হলো - যে যান্ত্রিক রোবটকে পৃথিবী থেকে মঙ্গলে পাঠানো হয় - তা যতই স্বয়ংক্রিয় হোক না কেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয় পৃথিবীর কন্ট্রোল রুম থেকে। এক টন ওজনের রোভার মঙ্গলের বুকে এক কিলোমিটার যেতে যে সময় নেয়, তার অনেক কম সময়েই একজন নভোচারী তা করে ফেলতে পারে। মঙ্গলের ক্রেটারের দেয়াল বেয়ে একটি রোভারের নামতে বা উঠতে বছর লেগে যায়, সেখানে একজন মানুষ তা কয়েক মিনিটের মধ্যেই করে ফেলতে পারে। মঙ্গলে যদি নভোচারী পাঠানো যায়, তাহলে তারা খুব সহজেই নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের মহাকাশযানে ফিরে এসে ল্যাবরেটরি টেস্ট করে পৃথিবীতে ফলাফল পাঠিয়ে দিতে পারে। তারপর আবার নমুনা সংগ্রহ করতে পারে। মঙ্গলকে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি জানা যাবে, যদি মঙ্গলে মানুষ পাঠানো যায়। মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর বাধা অনেক। প্রথম বাধা হলো দূরত্ব। পৃথিবী এবং মঙ্গল নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে পরস্পর সবচেয়ে কাছের যে দূরত্বে আসতে পারে - সে দূরত্ব ৫ কোটি ৪৭ লক্ষ কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে রকেটে চড়ে সেই দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ৫ থেকে ১০ মাস। ফিরে আসতে লাগবে আবার ৫ থেকে ১০ মাস। মঙ্গলে গিয়ে কিছুদিন কাজ করতে হবে। নভোচারীদের জন্য শুধুমাত্র খাবার ও পানীয় নিতে হবে প্রায় দুই বছরের। কী পরিমাণ ওজন হবে এগুলোর? নভোযানের ভর যত বাড়বে, তার জ্বালানিও লাগবে তত বেশি। তাছাড়া আছে মহাজাগতিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। মঙ্গল গ্রহে নভোচারীদের যাওয়ার সময় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে যেতে হবে।

          মঙ্গলে যাওয়া-আসার পুরো সময়টাতে নভোচারীদের থাকতে হবে অনেকটা ওজনহীন অবস্থায়। মহাকাশে মহাকর্ষ বল শূন্য নয়। কিন্তু পৃথিবী থেকে আমরা যতই দূরে যাবো আমাদের মহাকর্ষ বলের মান ততই কমতে থাকবে। আমরা নিজেদের ওজনহীন বলে মনে করবো। দিনের পর দিন এরকম ওজনহীন অবস্থায় থাকার ফলে শারীরিক ও মানসিক অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরজন্য দরকার অনেকদিনের ট্রেনিং। নভোচারীদের সে ট্রেনিং থাকে। তবে মঙ্গলের মত এত দীর্ঘ মহাকাশভ্রমণের ট্রেনিং এখনোপর্যন্ত কোন নভোচারীর নেই, সাধারণ মানুষের থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না।

          মহাকাশবিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মঙ্গল গ্রহে যাবার পথ আরো সুগম হয়ে উঠবে। এই শতাব্দীতে না হলেও ভবিষ্যত শতাব্দীতে হয়তো গড়ে উঠবে মঙ্গলে মানুষের বসতি।

 

তথ্যসূত্র 

1.    Clare Gibson, the Solar System, King Books, UK, 2012

2.    Giles Sparrow, Planets and Moons, Hinkler Books, Australia, 2006.

3.    Colin Ronan, The Universe Explained, Ken Fin Books, Australia, 1997.

4.   David A Rothery, Planets a very short introduction, Oxford University Press, Great Britain, 2010.

5.    Chris Cooper, Pam Spence, Carole Stott, Stars + Planets an illustrated guide, Star Fire, London, 2007.

6.    Gerard Cheshire, The Solar System and Beyond, Evans, London, 2006.

7.    Steve Parker, Solar System, Ticktock Media Ltd, Great Britain, 2006.Clare

8.    Heather Couper and Nigel Henbest, Encyclopedia of Space, DK Publishing, UK, 2003.

9.    Robin Kerrod & Carole Stott, Hubble the Mirror on the Universe, Third Edition, David and Charles, London, 2008.

10.  Patrick Moore, Mission to the Planets, Cassell, New York 1995.

11. Linda T. Elkins-Tanton, Mars, Chelsea House Publishers, New York, 2006.

12. Eric Burgess, To The Red Planet, Columbia University Press, New York, 1978.

13.  NSSDC Master Catalog, http://nssdc.gsfc.nasa.gov/nmc/

14.  Oliver De Goursac, Visions of Mars, Harry N. Abrams, Inc., Publishers., 2004.

15.  National Space Science Data Center,

       http://nssdc.gsfc.nasa.gov/

16.  Solar System Log by Andrew Wilson, published 1987 by Jane's Publishing Co. Ltd.

17. Mars Science Fiction to Colonization, Lighting Guides, Berkeley, California, 2015.

18.  Louisa Preston, Goldilocks and the Water Bears, the Serach for Life in the Universe, Louisa Preston, Bloomsbury Sigma, 2016.

19. Donald Rapp, Human Missions to Mars, Springer, Uk, 2008.

20. William K Hartmann, Mars The Mysterious Landscapes of the Red Planet, New York, 2003.

21.  Rod Pyle, Destination Mars New Explorations of the Red Planet, Prometheus Books, New York, 2012.

22.  Andrew Chaikin, A Passion for Mars, HNA Inc., 2008.

23.  To Mars and Beyond Search for the Origins of Life, National Museum of Australia, Canberra, 2001.

24.  Alfred S McEwen, Francis Rocard, Xavier Barral, This is Mars, Aperture, New York, 2013.

25.  Marc Kaufman, Mars Up Close Inside the Curiosity Mission, National Geographic, USA, 2014.

26.  Peter Bond, Space Recognition Guide, Collins, UK, 2008.

 ______


No comments:

Post a Comment

Latest Post

The Rituals of Corruption

  "Pradip, can you do something for me?" "Yes, Sir, I can." "How can you say you'll do it without even know...

Popular Posts