তৃতীয়
অধ্যায়
মঙ্গলে অভিযান
১৯৬০ থেকে শুরু করে এপর্যন্ত মোট ৪৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে মঙ্গলের
উদ্দেশ্যে। তার মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৭টি, আমেরিকা ২২টি, রাশিয়া ২টি, ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন
৪টি, জাপান ১টি, চীন ১টি এবং ভারত ১টি মিশন পরিচালনা করেছে। আগামী কয়েক বছরের
মধ্যে আরো অনেক মিশন পরিচালনা করা হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে নভোচারী
পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আমেরিকা। মঙ্গল গ্রহে এপর্যন্ত পরিচালিত অভিযানগুলো
কেমন ছিল দেখা যাক।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১০/১০/১৯৬০ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্সনিক-১ (Marsnik-1) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
উৎক্ষেপণের ৩য় ধাপে (৩০০ সেকেন্ড পরে) মিশন ব্যর্থ হয়। |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১৪/১০/১৯৬০ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্সনিক-২ (Marsnik-2) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
উৎক্ষেপণের ৩য় ধাপে (২৯০ সেকেন্ড পরে) মিশন ব্যর্থ হয়। |
চিত্র: মার্সনিক-১ ও মার্সনিক-২ এর মহাকাশযান
মার্সনিক-১ ও মার্সনিক-২
মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্যাটেলাইট হলো
মার্সনিক-১ ও মার্সনিক-২। ১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল মার্সনিক-১
এবং তার চার দিন পর ১৪ অক্টোবর উৎক্ষেপণ করা হয় মার্সনিক-২। এই দুটো মিশনের লক্ষ্য
ছিল পৃথিবী ও মঙ্গলের মধ্যবর্তী মহাকাশ-অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা, মঙ্গল
গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় গ্রহটির ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠানো, দীর্ঘ
মহাকাশযাত্রায় স্যাটেলাইটের যন্ত্রপাতিগুলোর কাজে কোন পরিবর্তন হয় কি না দেখা, এবং
দূর থেকে পৃথিবীতে বেতার তরঙ্গ পাঠানো।
দুটো মহাকাশযানের গঠন এবং কার্যপদ্ধতি ছিল একই রকমের। স্যাটেলাইটের উচ্চতা
ছিল ২.৩৩ মিটার, ব্যাস ১ মিটার। জ্বালানিসহ
এদের প্রতিটির ভর ছিল ৬৫০ কেজি। দুই বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের দুটো সোলার প্যানেল
যুক্ত ছিল । একটি দুই মিটার লম্বা অ্যান্টেনা যুক্ত ছিল তথ্য পাঠানোর জন্য। পে-লোডের
ভর ছিল ১০ কেজি। পে-লোডে ছিল ম্যাগনেটোমিটার, কসমিক রে কাউন্টার, প্লাজমা-আয়ন
ট্র্যাপ, রেডিওমিটার, মাইক্রোমেট্রিক ডিকেক্টর, স্পেকট্রোমিটার এবং ফটো-টেলিভিশন
ক্যামেরা।
দুটো স্যাটেলাইটই উৎক্ষেপণের প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই
মহাকাশে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ধারণা করা হয় যে ফুয়েল ট্যাংকের কারিগরি সমস্যার
কারণে উৎক্ষেপণের তৃতীয় পর্যায়ে যে থ্রাস্ট বা ধাক্কার দরকার হয় তা তৈরি হতে
পারেনি। ফলে দুটো মিশনই পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২৪/১০/১৯৬২ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
স্পুটনিক-২২ (Sputnik-22) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
উৎক্ষেপণের ৪র্থ ধাপে মিশন ব্যর্থ হয়। |
স্পুটনিক-২২
১৯৬২ সালের ২৪ অক্টোবর উৎক্ষেপণ করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের
মঙ্গল যাত্রার তৃতীয় স্যাটেলাইট স্পুটনিক-২২। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গল গ্রহের
পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠানো। পে-লোডে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
ছিল। মহাকাশযানের মোট ভর ছিল ৮৯৪ কিলোগ্রাম। সোভিয়েত মলনিয়া রকেটের সাহায্যে
যথাসময়ে উৎক্ষেপণ করা হয় স্পুটনিক-২২। রকেটের নিচের ধাপগুলো ঠিকমতোই কাজ করেছিল।
পে-লোড আর স্যাটেলাইটের উপরের অংশ পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে দিয়েছিল মলনিয়া রকেট।
কিন্তু আবারো বিপর্যয় দেখা দিলো পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে যাবার সময়। মূল ইঞ্জিনে আগুন
লেগে ধ্বংস হয়ে গেলো স্যাটেলাইট। আগের দুটো মিশনের মতো এই তৃতীয় মিশনও ব্যর্থ হলো
সোভিয়েত ইউনিয়নের।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০১/১১/১৯৬২ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্স-১ (Mars-1) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
উৎক্ষেপণের পর মঙ্গলের পথে যেতে ব্যর্থ হয়। |
মার্স-১
স্পুটনিক-২২ মিশন ব্যর্থ হবার আট দিনের মাথায় ১৯৬২ সালের
১ নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স-১। সোভিয়েত মার্স প্রোব প্রোগ্রামের প্রথম প্রোব
মার্স-১। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলের ১১ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ভেতর দিয়ে
উড়ে যাওয়া এবং যাবার সময় মঙ্গলের উপরিতলের ছবি তোলা এবং মহাজাগতিক বিকিরণ, মঙ্গলের
উপর ছোটছোট গ্রহাণুর প্রভাব, মঙ্গলের ভূমিতে চৌম্বক ক্ষেত্র, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, জলবায়ুর
গঠন, এবং জৈবযৌগের অস্তিত্ব নিরূপণ সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠানো।
স্যাটেলাইটটির
গঠন ছিল মার্সনিক-১ ও মার্সনিক-২-এর মতোই, তবে আরো বড়। সিলিন্ডার আকৃতির
স্যাটেলাইটটি ছিল ৩.৩ মিটার
লম্বা এবং ১ মিটার চওড়া। সোলার প্যানেল ও অ্যান্টেনাসহ যার দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৪
মিটার। দুটো কম্পার্টমেন্টে বিভক্ত ছিল স্যাটেলাইটটি। উপরের কম্পার্টমেন্টের
দৈর্ঘ্য ২.৭ মিটার। সেখানে ছিল অরবিটাল মডিউল, গাইডেন্স ও
প্রপালসান সিস্টেম। নিচের কম্পার্টমেন্টে ছিল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। ১.৭ মিটার চওড়া অর্ধবৃত্তাকার অ্যান্টেনা ছিল পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের
জন্য। সাথে অমনি-ডিরেকশানাল অ্যান্টেনা ও সেমি-ডিরেকশানাল অ্যান্টেনাও ছিল দুটো।
সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য দুটো সোলার প্যানেল ছিল যাদের মোট ক্ষেত্রফল ২.৬ বর্গমিটার।
চিত্র: মার্স-১ স্যাটেলাইট
নির্দিষ্ট সময়ে উৎক্ষেপণের পর প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ
পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে রকেট থেকে স্যাটেলাইট বিচ্ছিন্ন
হয়েছে। স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেল খুলেছে। তারপর উপাত্ত পাঠানো শুরু করেছে। সেই
সময় স্যাটেলাইটের দিকনির্ণায়ক যন্ত্রের একটি গ্যাস-ভাল্বে ছিদ্র দেখা দিল। ফলে
স্যাটেলাইটটিকে নির্দিষ্ট দিকে ঘোরানো যাচ্ছিলো না। তবুও স্যাটেলাইটটি মঙ্গলের
দিকে যাচ্ছিলো। প্রায় চার মাস ধরে কিছু কিছু তথ্য পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। ১৯৬৩ সালের
২১ মার্চ এই স্যাটেলাইট থেকে সর্বশেষ তথ্য এসেছে। তখন এর অবস্থান ছিল পৃথিবী থেকে
১০ কোটি ৬৭ লক্ষ ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরে। তারপর আর কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও হিসেব
করে দেখা গেছে ১৯৬৩ সালের ১৯ জুন মার্স-১ মঙ্গল গ্রহ থেকে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার
কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছেছিল। তারপর স্যাটেলাইটটি হারিয়ে যায় মহাকাশে। মূল উদ্দেশ্য
পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের এই মিশনটিকেও আরেকটি ব্যর্থ মিশন হিসেবে
ধরা হয়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৫ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৪/১১/১৯৬২ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
স্পুটনিক-২৪ (Sputnik-24) |
মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করা। |
পৃথিবীর কক্ষপথেই মিশন ব্যর্থ হয়। |
স্পুটনিক-২৪
মার্স-১ উৎক্ষেপণের তিন দিন পরেই ১৯৬২ সালের ৪ নভেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন মঙ্গল গ্রহের
উদ্দেশ্যে স্পুটনিক-২৪ প্রেরণ করে। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গলের ভূমিতে অবতরণ
করা। সবকিছু ঠিক থাকলে স্পুটনিক-২৪ হতে পারতো মঙ্গলের ভূমিতে পৃথিবী থেকে প্রেরিত
প্রথম প্রোব। কিন্তু উৎক্ষেপণ রকেটের সমস্যার কারণে পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করতে
পারেনি স্পুটনিক-২৪। এ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরপর পাঁচটি মঙ্গল অভিযান ব্যর্থ হয়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৬ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৫/১১/১৯৬২ |
আমেরিকা |
ম্যারিনার-৩ (Mariner-3) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
পে-লোড আলাদা করতে ব্যর্থ হয়। মিশন ব্যর্থ। |
ম্যারিনার-৩
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে
যাবার সময় গ্রহটির ছবি তোলা এবং মঙ্গলের ভূমি ও পরিবেশ পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে
তৈরি হয়েছিল ম্যারিনার-৩ স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটের ভর ছিল ২৬০.৮ কিলোগ্রাম।
স্যাটেলাইটের বাসে ছিল চারটি সোলার প্যানেল। পে-লোডে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মধ্যে
ছিল টেলিভিশন ক্যামেরা, ম্যাগনেটোমিটার, প্লাজমা প্রোব, কসমিক রে টেলিস্কোপ,
ট্র্যাপড রেডিয়েশন ডিটেকটর, কসমিক ডাস্ট ডিটেকটর, ও কসমিক রে আয়নাইজেশান চেম্বার।
১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ফ্লোরিডার কেইপ ক্যানাভেরাল লঞ্চিং স্টেশন থেকে অ্যাটলাস
এলভি-৩ রকেটের সাহায্যে উৎক্ষেপণ করা হয় ম্যারিনার-৩।
চিত্র: ম্যারিনার-৩
স্যাটেলাইট
উৎক্ষেপণের সময় কোন সমস্যা হয়নি। উৎক্ষেপণের এক ঘন্টা পর
ম্যারিনার-৩ থেকে যে সিগনাল আসে সেখান থেকে দেখা যায় স্যাটেলাইটের যন্ত্রপাতিগুলো
ঠিকমত কাজ করছিল, কিন্তু সোলার প্যানেল সিস্টেম থেকে কোন সিগনাল আসছিল না।
গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে কমান্ড পাঠিয়ে জ্বালানি সঞ্চয় করার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু তারপর স্যাটেলাইটকে আর মঙ্গলের ট্রানজিট অরবিটে ঠিকমতো নিয়ে যাওয়া যায়নি।
উৎক্ষেপণের আট ঘন্টা পর স্যাটেলাইটের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায়। মিশনটি পরিত্যক্ত
ঘোষণা করতে হয়। আমেরিকার প্রথম মঙ্গল মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৭ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২৮/১১/১৯৬৪ |
আমেরিকা |
ম্যারিনার-৪ (Mariner-4) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
পৃথিবীর প্রথম স্যাটেলাইট যা মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে
যেতে পারলো। মিশন সফল। |
ম্যারিনার-৪
ম্যারিনার-৩ মিশন ব্যর্থ হওয়ার ২৩ দিন পর ১৯৬৪ সালের ২৮
নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয় ম্যারিনার-৪। ম্যারিনার-৩ ও ম্যারিনার-৪ স্যাটেলাইট দুটো
প্রায় একই ধরনের। তবে ম্যারিনার-৩ যেসব কারণে ব্যর্থ হয়েছিল সেগুলো যেন আবার না ঘটে
সে ব্যবস্থা করা হয়েছিল ম্যারিনার-৪ এ। সাড়ে চার ফুট উঁচু ও সাড়ে নয় ফুট চওড়া এই
স্যাটেলাইটের ভর ছিল ২৬০.৮ কিলোগ্রাম। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল খুব কাছ থেকে মঙ্গলের ছবি
তোলা এবং ছবিগুলো পৃথিবীতে পাঠানো। মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময় মঙ্গলের পরিবেশ
সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছিল
ম্যারিনার-৪ এর পে-লোডে। ১৭৬ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৯০ সেন্টিমিটার চওড়া চারটি সোলার
প্যানেলে ২৮,২২৪টি সোলার সেল লাগানো ছিল ম্যারিনার-৪এ। সূর্যালোক থেকে ৩১০ ওয়াট
ক্ষমতার বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হতো। রিচার্জেবল সিলভার-জিংক ব্যাটারির ব্যবস্থা
ছিল ব্যাক-আপ হিসেবে।
বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল হিলিয়াম ম্যাগনেটোমিটার। মঙ্গল
গ্রহ এবং তার আশেপাশে চৌম্বকক্ষেত্র সনাক্ত করার জন্য এই ম্যাগনেটোমিটার ব্যবহার
করা হয়েছে। চার্জিত কণার তীব্রতা পরিমাপ করার জন্য ছিল আয়নাইজেশান চেম্বার। কম
শক্তিসম্পন্ন চার্জিত কণার উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য ছিল ট্র্যাপড রেডিয়েশান
ডিটেকটর। মহাজাগতিক রশ্মিতে প্রোটন ও আলফা কণা শনাক্ত করার জন্য ছিল কসমিক রে
টেলিস্কোপ। সূর্য থেকে আসা খুব কম শক্তির চার্জিত কণা শনাক্ত করার জন্য ছিল সোলার
প্লাজমা প্রোব। মহাজাগতিক ধূলোর ভরবেগ, ঘনত্ব, এবং দিক নির্ণয় করার জন্য ছিল কসমিক
ডাস্ট ডিটেকটর। স্যাটেলাইটের নিচের ভূমির দিকে মুখ করে বসানো ছিল টেলিভিশন
ক্যামেরা যার সাহায্যে মঙ্গলের ভূমির ছবি তুলে পাঠানো হয়েছে পৃথিবীতে।
চিত্র: ম্যারিনার-৪ এর পাঠানো
ছবিতে মঙ্গলের বুকে অসংখ্য ক্রেটার বা গর্ত
কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই মহাকাশে
সবগুলো ধাপ অতিক্রম করে মঙ্গলের কাছে পৌঁছে যায় ম্যারিনার-৪ ১৯৬৫ সালের ১৪ জুলাই।
মঙ্গলের সবচেয়ে কাছে যে দূরত্বে ম্যারিনার-৪ পৌঁছেছিল মঙ্গল থেকে সে দূরত্ব ছিল
৯,৮৪৬ কিলোমিটার। আর পৃথিবী থেকে সে দূরত্ব ছিল ২১ কোটি ৬০ লক্ষ কিলোমিটার। পৃথিবী
থেকে মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি পৌঁছানো প্রথম স্যাটেলাইট ম্যারিনার-৪। স্যাটেলাইটের ক্যামেরা মঙ্গলের দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে ২১টি
ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। ছবিগুলোতে দেখা যায় মঙ্গলের বুকের অজস্র গর্ত আর
ধুলো। তরল পানি নেই কোথাও। পৃথিবীর চাঁদের মতই একটি মৃতগ্রহ মঙ্গল। প্রথমবারের মত
মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের চাপ মাপা হলো। ৪.১
থেকে ৭ মিলিবার বায়ুচাপ যা পৃথিবীর বায়ুচাপের মাত্র ০.৭
শতাংশ। পৃথিবীর বায়ুচাপ ১০১৩.২৫ মিলিবার। মঙ্গলের দিনের
বেলায় তাপমাত্রা হিসেব করে দেখা গেছে -১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোন ধরনের
চৌম্বকক্ষেত্রের অস্তিত্ব পায়নি ম্যারিনার-৪।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৮ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
৩০/১১/১৯৬৪ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
জন্ড-২ (Zond-2) |
মঙ্গল গ্রহের গায়ে ধাক্কা দেয়া। |
মঙ্গলে পৌঁছার আগেই হারিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মিশন ব্যর্থ। |
জন্ড-২
১৯৬৪ সালের ৩০ নভেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের ষষ্ঠ মিশন
জন্ড-২ উৎক্ষেপণ করা হয় মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। এই মিশনের লক্ষ্য ছিল মঙ্গলের পাশ দিয়ে
উড়ে যাবার সময় মঙ্গলের ভূমি জরিপ করা এবং শেষে মঙ্গলের গায়ে ধাক্কা দেয়া। এই
স্যাটেলাইটটির মোট ভর ছিল ৮৯০ কিলোগ্রাম। এর পে-লোডের মধ্যে ছিল রেডিয়েশান
ডিটেক্টর, চার্জড পার্টিক্যল ডিটেক্টর, ম্যাগনেটোমিটার, রেডিও টেলিস্কোপ, আলট্রাভায়োলেট
ও এক্স-রে রেডিয়েশান ইমেজিং সিস্টেম।
চিত্র: জন্ড-২ স্যাটেলাইট
উৎক্ষেপণের ছয় মাস পর্যন্ত মহাকাশে মঙ্গলের অভিমুখে
চলেছে জন্ড-২। কিন্তু ১৯৬৫ সালের মে মাসে পৃথিবীর সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়
জন্ড-২ এর। দুটো সোলার প্যানেলের একটি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে স্যাটেলাইটের ক্ষমতা
অর্ধেক হয়ে যায়। হিসেব করে দেখা গেছে ১৯৬৫ সালের ৬ আগস্ট মঙ্গল গ্রহের ১৫০০
কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছেছিল জন্ড-২। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক না থাকাতে কোন
তথ্য পাঠাতে পারেনি জন্ড-২। সে হিসেবে এই মিশনকেও ব্যর্থ বলে ধরে নিতে হয়েছে।
No comments:
Post a Comment