মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৭ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
৩০/০৫/১৯৭১ |
আমেরিকা |
ম্যারিনার-৯ (Mariner-9) |
মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা। |
মঙ্গলের চারপাশে ঘুরে ঘুরে অনেকগুলো ছবি পাঠিয়েছে।
মিশন সফল। |
ম্যারিনার-৯
ম্যারিনার-৮ উৎক্ষেপণের ২২ দিন পর ৩০ মে উৎক্ষেপণ করা হয়
ম্যারিনার-৯। পৃথিবী থেকে পাঁচ মাস ধরে মহাকাশে উড়তে উড়তে ১৩ নভেম্বর মঙ্গলের কাছে
পৌঁছে যায় ২.৩ মিটার উঁচু ৬.৯ মিটার চওড়া স্যাটেলাইট ম্যারিনার-৯। এর পে-লোড বা বৈজ্ঞানিক
যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল টিভি সিস্টেম, আলট্রাভায়োলেট স্পেকট্রোমিটার, ইনফ্রারেড
রেডিওমিটার, ও ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার।
ম্যারিনার-৯
যখন মঙ্গলে পৌঁছেছিল তখন ভীষণ ধুলিঝড় হচ্ছিল সেখানে। এক মাস ধরে চললো সেই ধুলিঝড়।
সেই এক মাস কোন ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।
চিত্র:
ম্যারিনার-৯ স্যাটেলাইট
মঙ্গলের ধুলিঝড় থেমে যাবার পর ম্যারিনার-৯ মঙ্গলের
চারপাশে ঘুরে ঘুরে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পাশাপাশি খুব কাছ থেকে ছবি তুলে
পাঠিয়েছে। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহের চারপাশে ঘুরার প্রথম স্যাটেলাইট ছিল
ম্যারিনার-৯। মঙ্গলের চারপাশে ৭০০বার ঘুরে ৭৩২৯টি ছবি পাঠিয়েছে ম্যারিনার-৯।
মঙ্গলের ভূমির ৯৮ শতাংশ কভার করেছে ম্যারিনার-৯।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৮ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২১/০৭/১৯৭৩ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্স-৪ (Mars-4) |
মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা। |
মিশন ব্যর্থ |
মার্স-৪
মার্স-২ ও মার্স-৩ এর আংশিক সাফল্যের পর ১৯৭৩ সালের
জুলাই মাসের ২১ তারিখ ও ২৫ তারিখে আরো দুটো স্যাটেলাইট মার্স-৪ ও মার্স-৫ উৎক্ষেপণ
করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই দুটো স্যাটেলাটেরও গঠন ছিল মার্স-২ ও মার্স-৩ স্যাটেলাইটের
মতো, তবে শুধুমাত্র অরবিটার অংশটা ছিল, ল্যান্ডার অংশটি ছিল না। জ্বালানিসহ স্যাটেলাইটের
ভর ছিল ৩,৪৪০ কিলোগ্রাম। দুটো মিশনেরই লক্ষ্য ছিল মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরে ঘুরে
ছবি ও উপাত্ত সংগ্রহ করা। স্যাটেলাইটের পে-লোডে ছিল ক্যামেরা, রেডিও টেলিস্কোপ,
ইনফ্রারেড রেডিওমিটার, একাধিক ফটোমিটার, পোলারিমিটার, ম্যাগনেটোমিটার, ও গামা-রে
স্পেকট্রোমিটার।
১৯৭৩
সালের ২১ জুলাই যথাসময়ে উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স-৪। উৎক্ষেপণের প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপ
পর্যন্ত সবকিছু ঠিকমতোই এগোচ্ছিল। ৩০ জুলাই স্যাটেলাইটের দুটো কম্পিউটার বিকল হয়ে
যায়। ফলে স্যাটেলাইটের গতি পরিবর্তন করা যায়নি। স্যাটেলাইটটি মঙ্গলের কক্ষপথে
প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। মহাকাশে ঘুরতে ঘুরতে ১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এটা মঙ্গল
থেকে ১,৮৪৪ কিলোমিটার দূরে ছিল। মার্স-৪ মিশনটি ব্যর্থ হয়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ১৯ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২৫/০৭/১৯৭৩ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্স-৫ (Mars-5) |
মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরা। |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিশন ব্যর্থ। |
মার্স-৫
১৯৭৩ সালের ২৫ জুলাই উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স-৫।
উৎক্ষেপণের সব ধাপ ঠিকমতোই পার হয়ে যায় স্যাটেলাইটটি। পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে
মঙ্গলের দিকে ট্রানজিট অরবিট থেকে পরিকল্পনামতোই দু'বার গতি পরিবর্তন করে ১৯৭৩
সালের ৩ আগস্ট ও ১৯৭৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তারপর ১৯৭৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের
কক্ষপথে প্রবেশ করে মার্স-৫। মঙ্গলের চারপাশে ঘুরার জন্য নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবেশ
করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই স্যাটেলাইটের যন্ত্রপাতির চেম্বার সূক্ষ্ম গ্রহাণুর আঘাতে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে কয়েকদিন পরেই ১৯৭৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্স-৫ স্যাটেলাইটের
সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ১৮০টি ছবি পাঠিয়েছিল মার্স-৫, যেখান
থেকে ৪৩টি ছবি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ছিল।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২০ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৫/০৮/১৯৭৩ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্স-৬ (Mars-6) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে গ্রহটিতে অবতরণ করা। |
মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে মঙ্গলে অবতরণ করার পর
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিশন আংশিক সফল। |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২১ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৯/০৮/১৯৭৩ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মার্স-৭ (Mars-7) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে গ্রহটিতে অবতরণ করা। |
মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু অবতরণ করতে
ব্যর্থ হয়। |
মার্স-৬, মার্স-৭
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে পর পর দুটি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়
মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। মার্স-৬ ও মার্স-৭ স্যাটেলাইট দুটোর গঠন ও লক্ষ্য ছিল একই
রকমের। দুটোই ছিল মার্স ল্যান্ডার - অর্থাৎ মঙ্গলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মঙ্গলের
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করবে, তারপর মঙ্গলে নামবে - এরকম পরিকল্পনা ছিল।
চিত্র:
মার্স-৬ ও মার্স-৭ স্যাটেলাইট
জ্বালানিসহ স্যাটেলাইটের মোট ভর ছিল ৩,২৬০ কিলোগ্রাম,
যার মধ্যে ল্যান্ডারের ভর ৬৩৫ কিলোগ্রাম। ল্যান্ডারের পে-লোডে বৈজ্ঞানিক
যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল থার্মোমিটার, ব্যারোমিটার, রেডিও আল্টিমিটার ও মাস
স্পেকট্রোমিটার। মূল স্যাটেলাইটে ছিল চৌম্বকক্ষেত্র মাপার জন্য ম্যাগনেটোমিটার,
প্লাজমা ট্র্যাপস, মহাজাগতিক রশ্মি ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম গ্রহাণু শনাক্ত করার
ডিটেক্টর। সূর্য থেকে আসা প্রোটন ও ইলেকট্রন প্রবাহ মাপার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও
ছিল স্যাটেলাইটে।
১৯৭৩ সালের ৫ আগস্ট উৎক্ষেপণ করা হয় মার্স-৬। রকেট থেকে
স্যাটেলাইট যথাসময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৩ আগস্ট তারিখে ট্রানজিট অরবিট থেকে মঙ্গলের
দিকে রওনা দেয় স্যাটেলাইট মার্স-৬। ১৯৭৪ সালের ১২ মার্চ মঙ্গলের ভূমি থেকে ৪৮
হাজার কিলোমিটার দূরে ল্যান্ডারটিকে স্যাটেলাইট থেকে আলাদা করে দেয়া হয়। তারপর
স্যাটেলাইটটি মঙ্গল গ্রহের ১,৬০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে মঙ্গল অতিক্রম করে। মার্স-৬
ল্যান্ডার মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার সময় তার গতিবেগ ঘন্টায় ২০,১৬০
কিলোমিটার থেকে কমে ঘন্টায় ২,১৬০ কিলোমিটারে নেমে আসে। তখন প্যারাসুট খোলা হয় এবং
রেট্রো-রকেটের ইঞ্জিন চালু করে ল্যান্ডারের গতি আরো কমানো হয়। মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের
উপরিস্তর থেকে ভূমিতে নেমে আসার সময় মোট ২২৪ সেকেন্ড ধরে ডাটা ট্রান্সমিট করে
ল্যান্ডার। কিন্তু ভূমি স্পর্শ করার কয়েক সেকেন্ড আগে ল্যান্ডারের সাথে সমস্ত
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মার্স-৬ মিশনটির মূল কাজ শুরু হবার আগেই মিশনটি ব্যর্থ
হয়ে যায়।
মার্স-৬ উৎক্ষেপণের চার দিন পর ৯ আগস্ট ১৯৭৩ মার্স-৭
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণ থেকে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে যাওয়া পর্যন্ত
সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। ১৯৭৪ সালের ৯ মার্চ মার্স-৭ স্যাটেলাইট থেকে ল্যান্ডারকে
আলাদা করা হয়। শুরুতে ল্যান্ডারকে স্যাটেলাইট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে কিছুটা
যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধান করে
ল্যান্ডারকে আলাদা করা হলেও ল্যান্ডারটি মঙ্গলের ভূমিতে নামার বদলে মঙ্গলের পাশ
দিয়ে মহাকাশে হারিয়ে যায়। মার্স-৭ মিশনও ব্যর্থ হয়ে যায়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২২ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২০/০৮/১৯৭৫ |
আমেরিকা |
ভাইকিং-১ (Viking-1) |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে গ্রহটিতে অবতরণ করা। |
মিশন সফল। |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২৩ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৯/০৯/১৯৭৫ |
আমেরিকা |
ভাইকিং-২ (Viking-2) |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে গ্রহটিতে অবতরণ করা। |
মিশন সফল। |
ভাইকিং-১ ও ভাইকিং-২
নাসার ম্যারিনার প্রোগ্রামের সাফল্যের পর এবার পরিকল্পনা
করা হলো মঙ্গল গ্রহের ভূমিতে স্বয়ংক্রিয় রোবট পাঠানোর। মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান করার
জন্য আমেরিকা ভাইকিং-১ ও ভাইকিং-২ স্যাটেলাইট দুটি পাঠায় মহাকাশে। দুটো স্যাটেলাইটেই
দুটো করে অংশ ছিল - অরবিটার ও ল্যান্ডার। অরবিটার মঙ্গলের চারপাশে ঘুরবে এবং
ল্যান্ডার মঙ্গলে নামবে। অরবিটার মঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে ছবি তো তুলবেই,
ল্যান্ডার যেসব তথ্য ও ছবি তুলবে - সেগুলোও রিসিভ করে পৃথিবীতে পাঠাবে।
ম্যারিনার-৯
এর ছবি ও ডাটা থেকে মঙ্গল গ্রহের ভূমির প্রায় ৯৮% অংশের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা হয়ে
গিয়েছিল। সেই তথ্য থেকে বাছাই করা হয়েছিল মঙ্গল গ্রহের ঠিক কোন্ কোন্ জায়গায়
ভাইকিং-১ ও ভাইকিং-২ এর ল্যান্ডার অবতরণ করবে। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে
কি না তার প্রমাণ খুঁজে বের করার জন্য মঙ্গলের মাটির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা
দরকার, বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার, এবং সবচেয়ে যেটা বেশি
দরকার সেটা হচ্ছে মঙ্গলে প্রাণ ধারণের পরিবেশ আছে কি না। তা দেখার জন্য মঙ্গলের
ভূমিতে নেমে ডাটা সংগ্রহ করার বিকল্প নেই। ভাইকিং-১ ও ভাইকিং-২ স্যাটেলাইট দুটোর
ল্যান্ডারদুটো মঙ্গলের দুটো আলাদা জায়গায় নেমে এসব তথ্য সংগ্রহ করবে।
চিত্র:
ভাইকিং অরবিটার
জ্বালানি ও ল্যান্ডারসহ ২.৫ মিটার উঁচু ও ৩.৩ মিটার চওড়া ভাইকিং
স্যাটেলাইটের মোট ভর ছিল ৩৫২৭ কিলোগ্রাম। মঙ্গলগ্রহের স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে
সবচেয়ে ভারী ছিল ভাইকিং। অরবিটারের পে-লোডে ছিল: ২টি
ভিডিকন ক্যামেরা, ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার, ইনফ্রারেড রেডিওমিটার, মাস স্পেকট্রোমিটার,
চাপ, তাপ ও ত্বরণ মাপার যন্ত্র, ইনফ্রারেড ম্যাপিং সিস্টেম এবং বায়ুমন্ডলে জলীয়
বাষ্পের অস্তিত্বসন্ধানী যন্ত্র। প্রত্যেক ল্যান্ডারের ভর ছিল ১৫০০ কিলোগ্রাম।
ল্যান্ডারের পে-লোডে ছিল: ২টি টেলিভিশন ক্যামেরা, গ্যাস
ক্রোমাটোগ্রাফ, মাস স্পেকট্রোমিটার, এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, চাপ-তাপ ও
বায়ুপ্রবাহের বেগ মাপার যন্ত্র, ম্যাগনেটোমিটার।
১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট মহাকাশে পাঠানো হয় ভাইকিং-১। তিন
সপ্তাহ পর ৯ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয় ভাইকিং-২। কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই দুটো
স্যাটেলাইট মঙ্গলের পথে যাত্রা শুরু করে। দশ মাস পর ১৯৭৬ সালের ১৯ জুন মঙ্গলে
পৌঁছে ভাইকিং-১। ভাইকিং-২ পৌঁছে ৭ আগস্ট। ভূমিতে নেমেই ল্যান্ডার যে ছবিটা
পাঠিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে মঙ্গলের ভূমিতে অসংখ্য পাথর। ভাইকিং-১ ল্যান্ডারের পা
ধুলিময় ভূমিতে খুব বেশিদূর দেবে যায়নি। তাতে বোঝা যায় ধুলির নিচে শক্ত ভূমি আছে
মঙ্গলে। ভাইকিং-১ এর পাঠানো রঙিন ছবিতে দেখা যায় মঙ্গলের ভূমির রঙ লালচে মরিচার
মতো। কিন্তু মঙ্গলের আকাশের রঙ গোলাপী। মঙ্গলের শুষ্ক সূক্ষ্ম লালচে ধূলি সূর্যের
আলো শোষণ করে গোলাপী আকার ধারণ করেছে বলেই মঙ্গলের আকাশের রঙ গোলাপী।
চিত্র:
ভাইকিং-১ ল্যান্ডারের পাঠানো মঙ্গলের ভূমির ছবি
ভাইকিং-২ নামার স্থান নির্ধারিত ছিল সাইডোনিয়া প্ল্যানিটিয়াতে।
কিন্তু দেখা গেল সেখানে প্রচুর পাথরে ভর্তি। তখন জায়গা পরিবর্তন করে ইউটোপিয়া
প্ল্যানিটিয়াতে অবতরণ করলো ভাইকিং-২ ল্যান্ডার ১৯৭৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। ভাইকিং-২
এর অবতরণের স্থান থেকে ভাইকিং-১ এর অবতরণের স্থানের দূরত্ব ছিল প্রায় সাড়ে ছয়
হাজার কিলোমিটার।
চিত্র:
ভাইকিং-২ ল্যান্ডারের পাঠানো মঙ্গলের ভূমির ছবি
ভাইকিং-২ ল্যান্ডারের পাঠানো ছবি থেকে দেখা গেলো
ইউটোপিয়া প্ল্যানেটিয়া আগ্নেয়গিরির ফলে সৃষ্ট। ভাইকিং-২ ল্যান্ডারে ভূমিকম্পমাপক
যন্ত্র ছিল। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মত মঙ্গলের ভূমিকম্প রেকর্ড করা
হয়।
ভাইকিং-১
ও ভাইকিং-২ রোবটিক বাহু দিয়ে মঙ্গলের মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে। সেখান থেকে দেখা
গেলো মঙ্গলের মাটিতে প্রচুর লোহা থাকার কারণে অক্সিডাইজড হয়ে আছে, তবে জৈব যৌগের
অস্তিত্ব সেখানে নেই। জীববৈজ্ঞানিক কোন কার্যকলাপ মঙ্গলের মাটিতে দেখা যায়নি। ভাইকিং-এর
আরেকটি কাজ ছিল বাষ্প সংগ্রহ। উত্তর মেরু থেকে যে বাষ্প সংগ্রহ করা হয় সেগুলো
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই বাষ্প পানি থেকে উদ্ভুত। এটা প্রমাণ করে যে মঙ্গলের মেরুতে
কিছু জমাট পানি আছে।
পরিকল্পনা
ছিল ভাইকিং-১ ও ভাইকিং-২ ৬০ দিন ধরে মঙ্গলে কাজ করবে। সেই জায়গায় ভাইকিং-১ ছয় বছর
এবং ভাইকিং-২ তিন বছর কাজ করেছে। ভাইকিং অরবিটার মঙ্গলের ভূমির শতকরা ৯৭ ভাগ জরিপ
করেছে। প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ মিটার রেজ্যুলেশানে ৫১,৫০০ ছবি তুলে পাঠিয়েছে ভাইকিং
অরবিটার, ভাইকিং ল্যান্ডার ছবি তুলেছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি। ১৯৮০ সালের ১১ এপ্রিল
ভাইকিং-২ ল্যান্ডার মিশন শেষ হয়। ভাইকিং-১ ল্যান্ডার মিশন শেষ হয় ১৯৮২ সালের ১৩
নভেম্বর। ভাইকিং-২ অরবিটার সক্রিয় ছিল ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত। ভাইকিং-১ এর
অরবিটারের সাথে পৃথিবীর সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে ১৯৮০ সালের ৭ আগস্ট। মঙ্গলের
চারপাশে ১৪০০ বার ঘুরেছে ভাইকিং-১।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২৪ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৭/০৭/১৯৮৮ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
ফোবোস-১ (Phobos-1) |
মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করা। |
মঙ্গলের কক্ষপথে যাবার আগেই মিশন ব্যর্থ। |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ২৫ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১২/০৭/১৯৮৮ |
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
ফোবোস-২ (Phobos-2) |
মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করা। |
কক্ষপথে প্রবেশের একটু পরেই মিশন ব্যর্থ হয়। |
ফোবোস-১ ও ফোবোস-২
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ দুটি মঙ্গল মিশন ছিল ফোবোস-১ ও
ফোবোস-২। মঙ্গল গ্রহের দুটি উপগ্রহ ফোবোস ও ডিমোস। ফোবোস মিশনের লক্ষ্য ছিল মঙ্গল
গ্রহের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মঙ্গল ও তার উপগ্রহ দুটোর বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা।
পরিকল্পনা ছিল মঙ্গলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে ফোবোস উপগ্রহের ৫০ মিটারের মধ্যে গিয়ে
উপগ্রহটির পরিবেশ, বায়ুমন্ডল, ভূমি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যাবলি পরীক্ষা করে দেখা।
ফোবোস-১ ও ফোবোস-২ স্যাটেলাইট দুটোর গঠন ছিল একই রকমের।
পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহে আগে পাঠানো স্যাটেলাইটের সবগুলোর চেয়ে ভারী ছিল ফোবোস-১ ও
ফোবোস-২। জ্বালানি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিসহ স্যাটেলাইটের ভর ছিল ৬,২২০ কিলোগ্রাম।
পে-লোডের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল রাডার ট্রান্সমিটার, এক্স-রে ও
আলফা-ব্যাকস্ক্যাটার স্পেকট্রোমিটার, ক্যামেরা, লেজার ভ্যাপারাইজার।
চিত্র:
ফোবোস-১ ও ফোবোস-২ স্যাটেলাইট
১৯৮৮ সালের ৭ জুলাই ফোবোস-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। সফলভাবে
উৎক্ষিপ্ত হবার পর স্যাটেলাইটটি প্রত্যেকটি ধাপ অতিক্রম করে মঙ্গলের দিকে
এগোচ্ছিল। কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর ফোবোস-১ থেকে সিগনাল আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফোবোস-১
মহাকাশে হারিয়ে যায়। ফোবোস-১ মঙ্গলে পৌঁছাতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই মিশনটিও
ব্যর্থ হয়ে যায়। ফোবোস-১ উৎক্ষেপণের পাঁচদিন পর ১৯৮৮ সালের ১২ জুলাই ফোবোস-২
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। এটা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ মঙ্গল মিশন। ১৯৮৯ সালের
২৯ জানুয়ারি মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ফোবোস-২। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাওয়ার পুরো
সময়টাতে মহাকাশের অনেক ছবি এবং উপাত্ত পাঠিয়েছে ফোবোস-২। মঙ্গলের চারপাশে ঘুরে
গ্রহটির ভূমির ৩৭টি ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে এই স্যাটেলাইট। মিশনের শেষ ধাপ পূরণ
করার জন্য মঙ্গলের উপগ্রহ ফোবোসের খুব কাছে যাবার সময় ২৭ মার্চ ১৯৮৯ তারিখে
ফোবোস-২ পৃথিবীর সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে
জানা গেছে ফোবোস-২ এর কম্পিউটারে সমস্যার কারণেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সোভিয়েত
ইউনিয়নের শেষ মঙ্গল মিশনটিও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।
No comments:
Post a Comment