মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৩ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৭/০৪/২০০১ |
আমেরিকা |
মার্স ওডিসি (Odyssey) |
মঙ্গলের কক্ষপথে ঢোকা |
মিশন সফল |
মার্স ওডিসি
মার্স ক্লাইমেট অরবিটার ও পোলার ল্যান্ডারের ব্যর্থতার
এক বছর পরেই ২০০১ সালের ৭ এপ্রিল মঙ্গলের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হয় স্যাটেলাইট
মার্স ওডিসি। জ্বালানিসহ ওডিসির ভর ছিল ১,৬০৮.৭ কিলোগ্রাম। ওডিসির পে-লোডে প্রধান বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছিল তিন
ধরনের: ১) থার্মাল এমিসান ইমেজিং সিস্টেম - থেমিস (THEMIS), ২) গামা রে স্পেকট্রোমিটার - জি-আর-এস (GRS), এবং ৩) মার্স রেডিয়েশান এনভায়রনমেন্ট এক্সপেরিমেন্ট - ম্যারি (MARIE)। গামা রে স্পেকট্রোমিটার (জি আর এস) - কক্ষপথে ঘুরে
ঘুরে মঙ্গলের ভূমির উপাদান পরীক্ষা করবে। তাপীয় ক্যামেরা থেমিস মঙ্গলের ভূমির ছবি
তুলবে। মেরি মঙ্গলের বিকিরণ - সৌর বিকিরণ বা গ্যালাক্সি থেকে আসা গ্যালাক্টিক
বিকিরণ বা রেডিয়েশান মাপবে। মঙ্গলে ভবিষ্যতে মানুষ অবতরণ করতে হলে এই বিকিরণ
সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার।
চিত্র:
স্যাটেলাইট মার্স ওডিসি
২০০১ সালের ৭ এপ্রিল পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণের পর প্রায়
২০০ দিন মহাকাশে চলার পর ২০০১ সালের ২৪ অক্টোবর মঙ্গলের চারপাশে একটি কক্ষপথে
প্রবেশ করে ওডিসি। ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ওডিসির বৈজ্ঞানিক
কার্যকলাপ। পরবর্তী ৯১৭ দিন ধরে মঙ্গল গ্রহের ভূমি জরিপ করেছে মার্স ওডিসি। ২০০২
সালের মে মাসে জি-আর-এস মঙ্গলের ভূমিতে প্রথম বারের মত হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব খুঁজে
পায়। তা থেকে প্রমাণিত হয় যে মঙ্গলের জমাট বরফ আসলে পানি - যেখান থেকে হাইড্রোজেন
এসে মিশেছে মঙ্গলের মাটিতে। ২০০৮ সালে ওডিসির পাঠানো ডাটা থেকে দেখতে পান যে মঙ্গল
গ্রহের দক্ষিণ গোলার্ধের প্রায় ২০০টি জায়গায় একসময় প্রচুর পানি ছিল। থেমিস মঙ্গলের
বিভিন্ন ঋতুতে মরু অঞ্চলের তাপমাত্রার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে। ২০০৪ সালের আগস্টে
মার্স ওডিসির প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জিত হয়। কিন্তু স্যাটেলাইটটি তখনো পূর্ণকর্মক্ষম।
নাসার মিশন পরিকল্পনাকারীরা তারপর প্রতি দু'বছর পর পর ওডিসিকে দিয়ে আরো অনেক
বৈজ্ঞানিক কাজ সম্পন্ন করেছেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত মার্স ওডিসি ২ লক্ষ ৮ হাজার ছবি
পাঠিয়েছে দৃশ্যমান আলোক-তরঙ্গে, এবং আরো ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ছবি পাঠিয়েছে থার্মাল-
ইনফ্রারেড বা অবলোহিত আলোক-তরঙ্গে। মার্স-ওডিসি এখনো কাজ করে চলেছে, এবং আশা করা
হচ্ছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকবে।
চিত্র:
মার্স ওডিসির পাঠানো মঙ্গলের ভূমির ছবি
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৪ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০২/০৬/২০০৩ |
ইওরোপ |
মার্স এক্সপ্রেস (Mars Express) |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করা এবং মঙ্গলে অবতরণ করা। |
কক্ষপথে প্রবেশ করে, কিন্তু অবতরণে ব্যর্থ হয়। |
মার্স এক্সপ্রেস
ইওরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রথম মঙ্গল মিশন মার্স
এক্সপ্রেস। এই মিশনের দুটো অংশ ছিল। প্রথম অংশ মার্স এক্সপ্রেস অরবিটার - একটি
স্যাটেলাইট যা মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মঙ্গলের ছবি তুলবে এবং অন্যান্য
পরীক্ষা করবে। অপর অংশ ছিল মার্স এক্সপ্রেস ল্যান্ডার - বিগল-২। মঙ্গলের মাটিতে
নেমে এক্সোবায়োলজি বা প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধান এবং জিওকেমিস্ট্রি বা ভূ-রসায়ন
পরীক্ষা করে দেখাই ছিল বিগল-২ এর লক্ষ্য।
জ্বালানিসহ মার্স এক্সপ্রেসের উৎক্ষেপণ ভর ছিল ১,১২৩ কিলোগ্রাম।
২০০৩ সালের ২ জুন ইওরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি রাশিয়ান রকেট সয়ুজের মাধ্যমে
কাজাকিস্তানের বিকনোর থেকে মার্স এক্সপ্রেস উৎক্ষেপণ করে। ইওরোপের বিভিন্ন দেশের
তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সাথে ছিল এই স্যাটেলাইটের। জার্মান কালার স্টেরিওস্কোপিক
ক্যামেরা, ভূমির খনিজ পদার্থ বা মিনারেল মাপার জন্য ফ্রেন্স স্পেকট্রো ইমেজার
- ওমেগা (OMEGA), বায়ুমন্ডল পরীক্ষার জন্য ফ্রেন্স আলট্রাভায়োলেট ও
ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার - স্পাইক্যাম (SPICAM), মাটির নিচে কী আছে অনুসন্ধান করার জন্য এবং পানির
অস্তিত্ব পরীক্ষা করার জন্য ইতালির রাডার। মঙ্গলের ভূমি ভেদ করার জন্য প্রথমবারের
মত রাডার ব্যবহার করা হয় এই মিশনে।
মঙ্গলের
কক্ষপথে প্রবেশের আগে ১৯ ডিসেম্বর মার্স এক্সপ্রেস অরবিটার থেকে বিগল-২ ল্যান্ডার
আলাদা করা হয়। ২৫ ডিসেম্বর তা মঙ্গলের ভূমিতে অবতরণ করার কথা। কিন্তু পৃথিবীর সাথে
একবারও যোগাযোগ করেনি বিগল-২। মনে করা হচ্ছে এটা মঙ্গলের গায়ে আছড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে
গেছে। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৩, মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে মার্স এক্সপ্রেস। বৈজ্ঞানিক
পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করে ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান
চালায় এই মার্স এক্সপ্রেস।
চিত্র:
মার্স এক্সপ্রেসের পাঠানো ছবি - মঙ্গলের দক্ষিণ গোলার্ধে টেরা কিমেরিয়া।
মার্স এক্সপ্রেসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ওমেগার
মাধ্যমে মঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় শুকনো কাদার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া। মঙ্গলের মাটিতে
পাললিক শিলার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে মঙ্গলে এক সময় তরল পানির প্রবাহ ছিল। হিসেব
করে জানা যায় মঙ্গল উদ্ভুত হবার ৫০ কোটি থেকে ৭০ কোটি বছর পর্যন্ত মঙ্গলে পানির
প্রবাহ ছিল। মার্স এক্সপ্রেস মিশন এখনো চলমান। আশা করা হচ্ছে ২০২২ সাল পর্যন্ত
চালু থাকবে এই মিশন।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৫ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১০/০৬/২০০৩ |
আমেরিকা |
মার্স এক্সপ্লোরেশান রোভার-এ (স্পিরিট) (Spirit) |
মঙ্গলের ভূমিতে অবতরণ করে স্বয়ংক্রিয় রোভার চালিয়ে
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো। |
মিশন সফল |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৬ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৭/০৭/২০০৩ |
আমেরিকা |
মার্স এক্সপ্লোরেশান রোভার-বি (অপরচূনিটি) |
মঙ্গলের ভূমিতে অবতরণ করে স্বয়ংক্রিয় রোভার চালিয়ে
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো। |
মিশন সফল |
মার্স এক্সপ্লোরেশান রোভার্স: স্পিরিট ও অপরচুনিটি
মার্স ওডিসির পাঠানো ছবি এবং উপাত্ত থেকে দেখা গেছে
মঙ্গলের কোন কোন জায়গার আর্দ্রতা অপেক্ষাকৃত বেশি। সেসব জায়গা আরো ভালোভাবে দেখার
লক্ষ্যে নাসা মার্স এক্সপ্লোরেশান প্রোগ্রামের আওতায় দুটি রোভার বা স্বয়ংক্রিয়
গাড়ির আকারের রোবট মঙ্গলে পাঠায় ২০০৩ সালের জুন ও জুলাই মাসে। দুটি রোবটের গঠন এবং
বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম হুবহু এক। মঙ্গল গ্রহের দুই দিক থেকে একই সময়ে গবেষণা চালানোর
জন্য একই ধরনের এই দুটো রোভারস - স্পিরিট ও অপরচুনিটি মঙ্গলে পাঠানো হয়। এই রোভার
দুটোর মূল বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন ধরনের পাথর ও মাটি পরীক্ষা
করে সেখানে আগে কখনো পানি ছিল কি না নির্ণয় করা। যে মহাকাশযানে করে রোভারদুটো নিয়ে
যাওয়া হয়েছিল তাদের প্রত্যেকটির ভর ছিল ১,০৬২ কিলোগ্রাম। ২.৩ মিটার দৈর্ঘ্য, ১.৫ মিটার
প্রস্থ আর ১.৬ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট রোভারের ভর ছিল ১৮৫
কিলোগ্রাম। ছয় চাকাবিশিষ্ট রোভারদুটো মঙ্গলের ভূমির উপর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে
সেখানকার মাটি ও পাথর পরীক্ষা করে দেখবে এবং সে এলাকার ছবি তুলবে।
চিত্র:
মার্স রোভার স্পিরিট/অপরচুনিটি
২০০৩ সালের ১০ জুন উৎক্ষেপণ করা হয় স্পিরিট। ২০০৪ সালের
৪ জানুয়ারি মঙ্গলের পিঠে অবতরণ করে রোভার স্পিরিট। নামার আগে রেট্রোরকেট,
প্যারাসুট আর বড় বড় এয়ারব্যাগের সাহায্যে গতি কমানো হয় স্পিরিটের। ভূমিতে পড়ার সময়
তার গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এয়ারব্যাগে মোড়ানো রোভার স্পিরিট
মঙ্গলের মাটিতে পড়ে ২৮ বার লাফালাফি করে প্রথমে যেখানে ভূমি স্পর্শ করেছে সেখান
থেকে ৩০০ মিটার দূরে গিয়ে থামে। স্পিরিট যেখানে নামে সেই জায়গাটার নাম গুসেভ
ক্রেইটার (গহ্বর) - যেখানে আগে হয়তো একটি হ্রদ ছিল।
এয়ারব্যাগ
চুপসে যাওয়ার পর রোভার স্পিরিট সেখান থেকে বের হয়ে আসে এবং বৈজ্ঞানিক ডাটা পাঠাতে
শুরু করে মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘূর্ণায়মান ওডিসির মাধ্যমে। পরের দিন স্পিরিট পাথর
ভাঙার যন্ত্র - রক অ্যাব্রেশান টুল (র্যাট - RAT) ব্যবহার করে একটি পাথর ভাঙে এবং তার ভেতরের উপাদান পরীক্ষা করে। এভাবে
মঙ্গল গ্রহের মাটির উপাদানের অনেক দরকারি তথ্য পাওয়া গেছে। ৯০ দিন সক্রিয় পরীক্ষা
চালানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ৯০ দিনের জায়গায় ছয় বছরেরও বেশি সময়ধরে কাজ করেছে
রোভার স্পিরিট।
চিত্র:
রোভার স্পিরিটের ক্যামেরায় মঙ্গল গ্রহের কলম্বিয়া হিল্স
রোভার অপরচুনিটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ২০০৩ সালের ৮
জুলাই। ছয় মাস পর ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করে অপরচুনিটি।
মঙ্গলের যেদিকে রোভার স্পিরিট অবতরণ করেছিল রোভার অপরচুনিটি নামে তার বিপরীত দিকে
- মেরিডিয়ানি প্লেনামে - যেটা ফেরিক অক্সাইডে পূর্ণ ছিল। এয়ারব্যাগসহ ভূমিতে পড়ে
২৬ বার লাফালাফি করে তারপর থেমেছে রোভার অপরচুনিটি। মেরিডিয়ানি প্লেনামের ইগল ক্রেটারে নেমেছিল অপরচুনিটি। ২০০৪ সালের ২২
মার্চ ইগল ক্রেটার থেকে বের হয়ে ৭৫০ মিটার দূরে এনডুরেন্স ক্রেটারের দিকে চলতে
শুরু করে অপরচুনিটি।
২০০৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অপরচুনিটি ভিক্টোরিয়া ক্রেটারে
যায়। ২০০৭ সালে প্রচন্ড ধুলিঝড়ে অপরচুনিটির সোলার প্যানেলে ধুলো জমে বিদ্যুৎ
উৎপাদন কমে যায়। ফলে এর সমস্ত বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম স্থগিত করতে হয়। ছয় সপ্তাহ পর
ধুলিঝড় থেমে গেলে অপরচুনিটির সোলার প্যানেলের ধুলি চলে যায়। অপরচুনিটি আবার
কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভিক্টোরিয়া ক্রেটারে নামে
অপরচুনিটি। পুরো এক বছর ধরে ভিক্টোরিয়া ক্রেটারের অনেক ছবি পাঠায় অপরচুনিটি।
চিত্র:
মঙ্গলের মাটিতে রোভার অপরচুনিটি
ভিক্টোরিয়া ক্রেটারের পর রোভার অপরচুনিটি ২২ কিলোমিটার
ব্যাসের বিশাল এনডেভার ক্রেটারের দিকে রওনা দেয়। ২০১১ সালের ৯ আগস্ট এনডেভার
ক্রেটারে পৌঁছায় অপরচুনিটি। অপরচুনিটি মঙ্গলের ভূমিতে প্রথমবারের মত সালফার
হাইড্রেটের উপস্থিতি সনাক্ত করে। তা থেকে প্রমাণিত হয় যে একটা সময়ে মঙ্গলের পরিবেশ
আর্দ্র ছিল এবং অম্লীয় বা এসিডিক ছিল।
এনডেভার ক্রেটার পরিক্রমা করে অনেক ছবি পাঠিয়েছে রোভার অপরচুনিটি।
২০১৬ সালের অক্টোবরে এনডেভার ক্রেটারের পশ্চিম কিনারায় বিটাররুট ভ্যালিতে
অনুসন্ধান চালায় অপরচুনিটি। প্রমাণ পাওয়া যায় যে এনডেভার ক্রেটারে এক সময় পানি
ছিল। ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অপরচুনিটি মঙ্গলের উপত্যকা - পারসিভারেন্স ভ্যালির
দিকে অগ্রসর হয়। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সেখানে পৌঁছে যায় অপরচুনিটি। জুলাই মাসের
মাঝামাঝি উপত্যকায় প্রবেশ করে অপরচুনিটি। ২০১৮ সালে মঙ্গল গ্রহে প্রচন্ড ধুলিঝড়
হয়। সেই ধুলিঝড় অপরচুনিটির সোলার প্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৮ সালের ১০ জুন শেষ বারের মত সিগনাল পাঠায়
অপরচুনিটি। ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অপরচুনিটি রোভারের মিশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা
হয়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৭ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০২/০৩/২০০৪ |
ইওরোপ |
রোসেটা (Rosetta) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে যায়। |
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৮ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
১২/০৮/২০০৫ |
আমেরিকা |
মার্স রিকনিসেন্স অরবিটার (MRO) |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করা। |
মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে ২০০৬ এর মার্চে। |
মার্স রিকনিসেন্স অরবিটার
নাসা এ পর্যন্ত মঙ্গলে যতগুলো স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে তাদের
মধ্যে সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট মার্স রিকনিসেন্স অরবিটার (এম-আর-ও)। ৬.৫ মিটার বাই ১৩.৬ মিটার আকারের
এই অরবিটারের ভর ২,১৮০ কেজি। ২০০৫ সালের ১২ আগস্ট উৎক্ষেপণ করা হয় এম-আর-ও। ২০০৬
সালের ১০ মার্চ মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছায় এম-আর-ও। এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো
মঙ্গলের নিখুঁত বিস্তারিত ম্যাপ তৈরি করা যেন ভবিষ্যতে মঙ্গলে অবতরণ করার সময় সঠিক
জায়গায় নামা যায়। উৎক্ষেপণের সাত মাস পর ২০০৬ সালের ১০ মার্চ মঙ্গলের চারপাশে
ঘুরার জন্য নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবেশ করে এম-আর-ও। এই কক্ষপথে মঙ্গলের চারপাশে
একবার ঘুরে আসতে এম-আর-ও'র সময় লাগে সাড়ে পয়ঁত্রিশ ঘন্টা। কক্ষপথে দু'মাস ঘুরার পর
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে এম-আর-ও। ২০০৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৮ সালের
নভেম্বর পর্যন্ত প্রচুর ডাটা সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে মঙ্গলের
মেরুতে কী পরিমাণ বরফ জমা আছে তার হিসেবও করা সম্ভব হয়েছে। এম-আর-ও ২০১০ সালের ৩
মার্চ পর্যন্ত ১০০ টেরাবিট ডাটা পাঠিয়েছে পৃথিবীতে - যা অন্যান্য মিশনগুলোর চেয়ে
তিন গুণ বেশি। মঙ্গল গ্রহে সালফেট ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব পেয়েছে
এম-আর-ও। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে এম-আর-ও'র ডাটা থেকে বিজ্ঞানীরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত
হয়েছেন যে মঙ্গল গ্রহে এক সময় পানি প্রবাহ ছিল।
চিত্র: মার্স রিকনিসেন্স অরবিটারের
হাইরাইজ ক্যামেরায় তোলা ছবিতে মঙ্গলের সাইডোনিয়া অঞ্চল। ভাইকিং-১ এর পাঠানো ছবি
(ইনসেটের ছবি) দেখে অনেকেরই মনে হয়েছিল মঙ্গলের বুকে মানুষের মুখ। এম-আর-ও'র
পাঠানো ছবিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক কারণে মঙ্গলের ভূমিতে এরকম ফিচার
সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৩৯ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
০৪/০৮/২০০৭ |
আমেরিকা |
ফিনিক্স (Phoenix) |
মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করা। |
২০০৮ সালের ২৫ মার্চ মঙ্গলে অবতরণ করে। |
ফিনিক্স
আগের মিশনগুলো থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে মঙ্গল গ্রহের
মাটির নিচে জমাট বরফ আছে। যদি আগে পানি থেকে থাকে সেই পানির ইতিহাস খুঁজে বের করা
এবং মাটি ও বরফের স্তরের মাঝামাঝি কি কোন প্রাণের অস্তিত্ব আছে? এসব জীববৈজ্ঞানিক
পরীক্ষানিরীক্ষাই ছিল ফিনিক্স মিশনের মূল উদ্দেশ্য। জ্বালানিসহ স্যাটেলাইটের মোট
ভর ছিল ৬৬৪ কিলোগ্রাম, আর ফিনিক্স ল্যান্ডার - যেটা মঙ্গল গ্রহে নেমেছিল - তার ভর
ছিল ৩৫০ কিলোগ্রাম। ২০০৭ সালের ৪ আগস্ট উৎক্ষেপণ করা হয় ফিনিক্স স্যাটেলাইট। সেই
সময় মঙ্গলের চারপাশে ঘুরছিল আরো তিনটি মঙ্গল মিশন - মার্স রিকনেসেন্স অরবিটার
(এম-আর-ও), মার্স ওডিসি ও মার্স এক্সপ্রেস। এই স্যাটেলাইটগুলোর সাথে সমন্বয় করে
ফিনিক্সের মঙ্গলে অবতরণের দৃশ্য সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়। ২০০৮ সালের ২৫ মে
ফিনিক্স মঙ্গলের উত্তর মেরুর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে ঘন্টায় প্রায় ২১ হাজার
কিলোমিটার বেগে। তারপর প্যারাসুট, রেট্রোরকেট এবং এয়ারব্যাগের সাহায্যে নিরাপদে
অবতরণ করে মঙ্গলের গ্রিন ভ্যালি - ভেস্টিটাস বরিয়ালিস-এ। এই জায়গায় এক সময় প্রচুর
পানি ছিল এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ফিনিক্সের
প্রথম কাজ ছিলো মাটির নিচে জমাট পানির অস্তিত্ব খুঁজে বের করা। মঙ্গলে অবতরণের
প্রথম চার দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করে দেয় ফিনিক্স। গ্রহটির জলবায়ু পরীক্ষা করে
দেখাও এর কাজ। রোবটিক বাহু প্রসারিত করে মঙ্গলের আবহাওয়া রিপোর্ট দিতে শুরু করলো ফিনিক্স।
ফিনিক্স নিশ্চিত করেছে যে মঙ্গলে মেঘ সৃষ্টি হয় এবং তা বাতাসে চলাচল করে। মঙ্গলের
ঝড় ও বালি চলাচলও পরীক্ষা করেছে ফিনিক্স। রোবটিক হাত উত্তর মেরুর মাটির গভীরে যে
বরফ পেয়েছে তা পানি থেকে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। পরিকল্পনা ছিল তিন মাসের,
কিন্তু পাঁচ মাস ধরে কাজ করেছে ফিনিক্স। ২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবর ফিনিক্স সেফ-মোডে চলে
যায়, কারণ মঙ্গলে তখন শীতের কারণে সূর্যালোক পাওয়া যাচ্ছিল না। নভেম্বরের ২
তারিখের পর ফিনিক্স থেকে আর কোন ডাটা পাওয়া যায়নি। ১০ নভেম্বর ফিনিক্স মিশনের কাজ
সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
চিত্র: এম-আর-ও স্যাটেলাইটের সাহায্যে
ফিনিক্সের মঙ্গলে অবতরণের দৃশ্য ধারণ করা হয়।
মঙ্গল গ্রহে অভিযান ৪০ |
||||
উৎক্ষেপণের তারিখ |
দেশ |
মিশন/ মহাকাশযান |
লক্ষ্য |
ফলাফল |
২৭/০৯/২০০৭ |
আমেরিকা |
ডন (Dawn) |
মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া। |
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায়।
|
ডন
নাসার প্রচন্ড শক্তিশালী স্যাটেলাইট ডন উৎক্ষেপণ করা হয় ২০০৭ সালের ২৭
সেপ্টেম্বর। এই স্যাটেলাইটের লক্ষ্যস্থল মঙ্গল ও বৃহস্পতিগ্রহের মধ্যবর্তী
অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট যেখানে অনেক গ্রহাণু ঘুরছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গল
গ্রহের মহাকর্ষ বলের টান কাজে লাগিয়ে মঙ্গলের পাশ দিয়ে উড়ে যায় এই স্যাটেলাইট।
স্যাটেলাইট থেকে মঙ্গল গ্রহের কিছু ছবি তোলা হয় এবং মঙ্গলের মহাকর্ষ বল সম্পর্কেও
বেশ কিছু দরকারি তথ্য পাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment