০৩
“হায় চিল, সোনালী
ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে…”
দল বেঁধে ক্লাসে
ঢুকেই কবিতা পেয়ে গেলো ফারুকের। অনেক কবিতা তার মুখস্থ। যখন তখন কবিতা বের হয় তার মুখ
দিয়ে। তার মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল, বিশাল শরীর,
আর উচ্চস্বরের হাসির সাথে পদার্থবিজ্ঞান ঠিক মেলে না। পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ ছাত্রদের
যে গাম্ভীর্য আমরা মোবাশ্বের স্যারের বর্ণনায় পাই, তার একটুও দেখা যায় না ফারুকের মধ্যে।
অবশ্য এ ক’দিনে আমরা যারা সহপাঠী থেকে বন্ধু হয়ে গিয়েছি তাদের কারো মধ্যেই কি আছে সেই
‘আদর্শ গাম্ভীর্য’? যীশু, মৃণাল, আরিফ, হাবিব, আশফাক, মামুন, স্বপন, শাকিল, মিজান,
হাফিজ, ইকবাল – কেউই গম্ভীর নয়। ক্লাসে আরো একজন প্রদীপ আছে –গম্ভীর তো নয়ই, বরং আমার
মতোই হাসির রোগ আছে তারও। প্রচন্ড ভাবগম্ভীর পরিবেশেও হাসি পেয়ে যায় আমাদের। এই যেমন
- ফারুকের উদাত্ত গলায় “হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভেজা মেঘের দুপুরে” বলার সাথে
সাথেই যীশু চেঁচিয়ে উঠলো “হায় কাক, কালো পাখনার কাক, কা কা করো রে।” আর আমরা হেসে উঠলাম
উচ্চস্বরে। সেই হাসি থামলো বেশ কিছুক্ষণ পর – যখন ক্লাসে একজন নতুন স্যার ঢুকলেন।
প্রায় ছয় ফুট
লম্বা, নীল জিন্স আর কালো টি-শার্টে নুরুল ইসলাম স্যারকে ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’ সিনেমার
নায়ক মাহমুদ কলির মতো লাগছে। মোবাশ্বের স্যার যে কথাগুলি বলেছিলেন - ফিজিক্স এমন একটা
সাবজেক্ট যা শরীরের রসকষ সব নিংড়ে নিয়ে তোমাকে ছোবড়া করে দেবে – তার কোন প্রমাণ পাচ্ছি
না নুরুল ইসলাম স্যারকে দেখে। প্রামাণিক স্যার প্রথম ক্লাসেই যেরকম ঝড়ের বেগে সমীকরণের
পর সমীকরণ লিখে খটমট ম্যাথম্যাটিক্যাল ফিজিক্সকে যেরকম ভয়াবহ করে তুলেছিলেন, নুরুল
ইসলাম স্যার এসে আমাদের সেই ভয় অনেকটাই কাটিয়ে দিলেন। শুরু করলেন ভেক্টর অ্যান্ড টেনসর
এনালাইসিস দিয়ে।
পদার্থবিজ্ঞানের
ভাষা হলো গণিত। কিন্তু বড় বড় গাণিতিক সমীকরণের মূল পদার্থবিজ্ঞানের নীতি যদি বোঝা না
যায়, তাহলে সমীকরণগুলি হয়ে পড়ে অর্থহীন। ফিজিক্স আর ম্যাথম্যাটিক্সের মূল সংযোগটা ধরিয়ে
দেয়াই ম্যাথম্যাটিক্যাল ফিজিক্সের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এই মূল কাজটি আমার জন্য মোটেও
সহজ ছিল না। নুরুল ইসলাম স্যারের পড়ানোর স্টাইল এই জটিল কাজটি অনেক সহজ করে দিলো। অ্যাঙ্গুলার
মোমেন্টাম, টর্ক, ক্রস প্রডাক্ট ইত্যাদি বোঝানোর জন্য শুধু বোর্ডে বড় বড় সমীকরণ লিখেই
দায়িত্ব শেষ করলেন না, বোঝানোর সময় এক পায়ে
দাঁড়িয়ে লাটিমের মতো ঘুরে গেলেন। স্যারের কাজকর্ম দেখে মনে হলো – কিছু কিছু ব্যাপার
যেন বুঝতে পারছি। স্যার যখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উচ্চারণে জিজ্ঞেস করলেন, “বুঝিত ফাইজ্জো?”
– আমরা হেসে উঠলাম। স্যারও হেসে উঠলেন। আমরা নুরুল ইসলাম স্যারের ভক্ত হয়ে গেলাম।
আমাদের ফার্স্ট
ইয়ারের তিনটি পেপারের জন্য সপ্তাহে তিনটি করে মোট নয়টি অনার্স ক্লাস। ফার্স্ট পেপার
– ম্যাথম্যাটিক্যাল ফিজিক্সের দুটো ক্লাস নিচ্ছেন নুরুল ইসলাম স্যার, অন্য একটি ক্লাস
প্রামাণিক স্যারের। সেকেন্ড পেপার - প্রোপার্টিজ অব ম্যাটার অ্যান্ড সাউন্ড। প্রোপার্টিজ অব ম্যাটারের দুটো ক্লাস আর সাউন্ডের
একটি। থার্ড পেপার - হিট অ্যান্ড থার্মোডায়নামিক্স। থার্মোডায়নামিক্সের দুটো ক্লাস,
আর হিট সপ্তাহে একটি ক্লাস। বেশ নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। একেক স্যারের ব্যক্তিত্ব, পড়ানোর
স্টাইল একেক রকম।
প্রপার্টিজ
অব ম্যাটারের একটি টপিক পড়িয়েছিলেন দেবপ্রসাদ পাল স্যার। বেশ হাসিখুশি স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের
তরুণ দেবপ্রসাদ স্যারের পড়ানোর পদ্ধতি খুব ইফেক্টিভ এবং আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু কয়েকদিন
পরেই স্যার বিদেশে চলে যান পিএইচডি করার জন্য। তাঁর পরে প্রপার্টিজ অব ম্যাটার পড়ানোর
জন্য এলেন ফরাজী কামাল স্যার। প্রথম ক্লাসেই আমরা বুঝে গেলাম এমন প্রাণবন্ত শিক্ষক
খুবই দুর্লভ। বোঝানোর কী দুর্দান্ত স্টাইল। যে টপিক পড়াচ্ছেন, সেটা বোঝার জন্য আমাদের
যা যা জানা দরকার তার সবই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। স্যারের হাতের চক-ডাস্টার ব্ল্যাকবোর্ডের
উপর যেন জাদু দেখাচ্ছে। প্রতিটি সমীকরণ যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে স্যারের বিশ্লেষণে। স্যারের
ক্লাসে আমরা এতটাই মনোযোগী হয়ে গেলাম যে পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় কীভাবে চলে গেল টেরই
পেলাম না।
বিভিন্ন স্যারের
ক্লাস করার পর বুঝতে পারছি কোন সাবজেক্ট ভালোলাগা কিংবা খারাপলাগার অনেকটুকুই নির্ভর
করে সেই সাবজেক্ট কীভাবে পড়ানো হচ্ছে তার উপর। একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে না বুঝেই
হয়তো ভালোবাসতে পারে, কিন্তু ফিজিক্সের কিছু না বুঝেই ফিজিক্স ভালোবাসবে এমন সম্ভাবনা
একেবারেই নেই বলা চলে। মনে হচ্ছে ফিজিক্সের কিছু কিছু টপিক ভালো লাগতে শুরু করেছে।
থার্ড পেপারের
হিট পড়াচ্ছেন এস কে সাহা স্যার। তাঁর পুরো নাম
যে সরিৎ কুমার সাহা, তা বের করতে দু’দিন সময় লেগেছে আমাদের। প্রেমাংকর সরকার
এ ব্যাপারে খুব দক্ষ। স্যারদের ব্যাপারে তথ্য
জোগাড় করতে ওস্তাদ লোক সে। প্রেমাংকরের কল্যাণে আমরা স্যারের পুরো নাম শুধু নয়, স্যার
সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা স্যারের
বড় ভাই। আমাদের প্রামাণিক স্যারের স্যার হলেন এস কে সাহা স্যার। ডিপার্টমেন্টের শুরুতে
যে চার জন স্যার যোগ দিয়েছিলেন, সাহা স্যার তাঁদের একজন।
সাহা স্যারের
সবকিছুই খুব পরিপাটি । স্যারের পোশাক পরিপাটি, পড়ানোর স্টাইল পরিপাটি। স্যার নিজে যেমন
সুদর্শন, তাঁর উচ্চারণ আর বাচনভঙ্গিও সেরকম সুন্দর। স্যারের ব্যক্তিত্ব এত প্রখর যে
স্যারের চোখের দিকে তাকাতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। স্যারের হাতে হাতেলেখা নোট। ক্লাসের
বিশাল ব্ল্যাকবোর্ডের প্রায় পুরোটাই ভরে উঠে ছোট ছোট অক্ষরে স্যারের সুন্দর হস্তাক্ষরে।
ব্ল্যাকবোর্ডে এত ডিটেইল লিখতে আর কোন স্যার-ম্যাডামকে আমি দেখিনি। হাতের পুরো নোটই
বোর্ডে লিখতেন সাহা স্যার। আমরা বোর্ড থেকে কপি করতে করতে অনেক সময়ই স্যারের কথার দিকে
মন দিতে পারতাম না। ফলে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই বোঝা হয়ে যেতো না। বরং জমতে জমতে পরে অনেক
বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াতো আমাদের জন্য।
এপর্যন্ত মোবাশ্বের
স্যার ছাড়া আর কোন স্যারই নিজেদের লেখাপড়া কিংবা গবেষণা সম্পর্কে কোন কিছুই বলেননি
ক্লাসে। আমরা স্যারদের সম্পর্কে যেটুকু জেনেছি তা কোন সুনির্দিষ্ট উৎস থেকে নয়, বরং
ক্যাম্পাসে প্রচলিত বিভিন্ন গুজব কিংবা ধারণা থেকে। মোবাশ্বের স্যারও নিজের সম্পর্কে
যেটুকু বলেছেন তাও খুব একটা উৎসাহজনক নয়। তিনি বলেছেন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসকন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে
পিএইচডি করতে গিয়ে তাঁকে এত বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে যে তাঁর ভেতরের সব ‘রসকষ নিংড়ে
ছোবড়া করে ছেড়ে দিয়েছে’। এটুকুই। এসব শুনলে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি কারো ভালোবাসা জন্মাবে?
কিন্তু ফিজিক্সের প্রতি আমাদের ভালোবাসা জন্মালো কি জন্মালো না তাতে কোন স্যারেরই কিছু
যায় আসে বলে মনে হচ্ছে না। বরং মনে হচ্ছে, আমরা নিজেদের ইচ্ছেয় ফিজিক্স পড়তে এসেছি,
এখানে টিকে থাকার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। অথচ আমরা যে ফিজিক্স সম্পর্কে অনেক কিছু
জেনে এবং বুঝে ফিজিক্সে ভর্তি হয়েছি তা নয়। অনেকে ভর্তি হয়েছি এখানে চান্স পেয়েছি বলে।
আমাদের বেশিরভাগেরই ফিজিক্সে ভর্তির ঘটনা যতটুকু বাই চয়েজ, তার চেয়েও বেশি বাই চান্স।
“আচ্ছা, সাহা
স্যার যে বইটার রেফারেন্স দিয়েছেন, সেটা কি স্যারের নিজের লেখা?” – সরোজের প্রশ্নে
একটু অবাক হলাম। আমরা এসেছি দুপুরের খাবার খেতে সোহরাওয়ার্দীর মোড়ের ক্যান্টিনে। প্র্যাকটিক্যাল
শুরু হচ্ছে আজ থেকে। আমাদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস বিকেলে। সায়েন্স ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্টদের
সাথে আর্টস বা কমার্স ফ্যাকাল্টির প্রধান পার্থক্য হলো – সায়েন্সের স্টুডেন্টরা ক্যাম্পাসেই
সূর্যাস্ত দেখে, আর বাকিরা দেখে না। থিওরি ক্লাসের পর ঘন্টাখানেক সময় পাওয়া যায় প্র্যাকটিক্যাল
ক্লাসের আগে। সেই সময়ের মধ্যে দুপুরের ভাত খেয়ে আবার ডিপার্টমেন্টে হাজির হওয়া। যারা
হলে থাকে – তাদের অনেক সুবিধা। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে পারে। আমাদের এখনো সেই সুযোগ
নেই। হলগুলির সামনের রাস্তায় অনেকগুলি রেস্টুরেন্ট আছে পাশাপাশি। কিছু প্রাইভেট ক্যান্টিনও
আছে। সোহরাওয়ার্দী হলের কাছে রাস্তায় এই ক্যান্টিনটি বেশ বড় এবং পরিচ্ছন্ন। আলো-বাতাস
প্রচুর বলে এখানেই আসি আমরা। যীশু, প্রদীপ, সরোজ, শিমুল, মুরাদ, কফিল আর আমি এসেছি।
“কোন্ বই?”
– প্রদীপ প্রশ্ন করলো। আমি আর প্রদীপ একে অপরকে যখন নাম ধরে ডাকি – তখন মনে হয় নিজেই
নিজেকে ডাকছি। বেশ মজাই লাগে। ক্লাসে আমাদেরকে আলাদাভাবে চেনার জন্য নাম দেয়া হয়েছে
‘লম্বা প্রদীপ’ আর ‘বেঁটে প্রদীপ’।
“হিট এর বই?
সাহা অ্যান্ড শ্রীবাস্তব?”
“হ্যাঁ, এটা
কি সাহা স্যারের নিজের লেখা বই?”
সরোজের এ প্রশ্ন
করার সঙ্গত কারণ আছে। সাহা স্যার এই বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছেন। কিন্তু বলে দিতে পারতেন
এই বইয়ের লেখক এম এন সাহা কে। এই বইটি আমি কিছুদিন আগে কিনেছি অমর বইঘর থেকে। রেলওয়ে
স্টেশনের সামনে উজালা সিনেমার পাশেই পুরনো বইয়ের দোকান অমর বইঘর – আমার নিয়মিত গন্তব্যের
একটি। এম এন সাহা সম্পর্কে আমি কিছুটা জেনেছি এই বইয়ের লেখক পরিচিতি পড়ে। এম এন সাহা
– মেঘনাদ সাহা আমাদের বাংলাদেশের সন্তান, কত বড় পদার্থবিজ্ঞানী – সে সম্পর্কে আমাদের
জানানো কি স্যারদের দায়িত্ব নয়? শুধু সিলেবাসে যা আছে তার বাইরে কি কিছুই বলার নিয়ম
নেই?
ক্যাম্পাসের
বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে যখন দেড়টার ট্রেনে শহরে চলে যাবার জন্য স্টেশনের দিকে যাচ্ছে, তখন
আমরা প্র্যাকটিক্যাল করার জন্য ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। সোহরাওয়ার্দীর মোড়ের শিরীষ গাছগুলি
অনেক বড় হয়েছে। জুলাই মাসের গরমেও তাদের নিচে ছায়া, কিছু আরামদায়ক বাতাস। এসময় ক্যাম্পাসের
দিকের বাসগুলি প্রায় খালিই থাকে। বাস আসতে একটু দেরি হচ্ছে। কফিল হঠাৎ বললো, “তোরা
যা, আমি চলে যাচ্ছি।“
“প্র্যাকটিক্যাল
করবি না?“
“না দোস্ত।
তোদের সাথে আর ক্লাস করা হবে না।“
“ফিজিক্স ছেড়ে
দিচ্ছিস?”
“হুঁ। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ
চান্স পেয়েছি।“
“খাওয়াদাওয়ার
পরে বললি শয়তান?”
হাসতে হাসতে
চলে গেল কফিল। তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি কোনদিন। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সবেমাত্র বি-আই-টি
হয়েছে। ভর্তিপরীক্ষা আমিও দিয়েছিলাম। ওয়েটিং লিস্টেও আসিনি। কফিলকে সারাদিন ক্লাস করতে
দেখে ভেবেছিলাম সেও টিকেনি। কিন্তু সে ইউনিভার্সিটিতে এসে বলে গেলো, বিদায় নিয়ে গেলো,
তাতেই বেশ ভালো লাগছে।
আমাদের প্র্যাকটিক্যাল
ক্লাস তিনতলায়। রুম খোলার পর সবাই হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলাম। কী করতে হবে কোন ধারণা নেই।
বেশ বড় বড় উঁচু প্র্যাকটিক্যাল টেবিল। দুইটি পাশাপাশি রুমের মাঝখানের দরজা দিয়ে আসাযাওয়া
করা যায়। রুমের সাথে লাগানো একটি ছোট রুমে টেবিল নিয়ে বসে আছেন একজন। ভাবলাম ডেমন্সট্রেটর।
কিন্তু না, তিনি যন্ত্রপাতি দেবেন। কিন্তু আগে প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপ তোইরি করতে হবে
পাঁচ ছয় জনের।
যীশু, প্রদীপ,
হাবিব, সাইদ, অর্পণ আর আমি এক গ্রুপে। সিলেবাসে ২২টি প্র্যাকটিক্যাল আছে ফার্স্ট ইয়ারে।
তার মধ্যে আঠারোটির যন্ত্রপাতি আছে। আমাদেরকে এই আঠারোটি প্র্যাকটিক্যালের সবগুলিই
করতে হবে। এক সপ্তাহে একটি করে। একেক সপ্তাহে একেক গ্রুপ একেকটি প্র্যাকটিক্যাল করবে।
তার মানে ১৮টি গ্রুপ করা যাবে পুরো ক্লাসে। সিস্টেমটা ভালো। কিন্তু সবকিছু বুঝতে এবং
গ্রুপ করতে এবং যন্ত্রপাতি নিতে নিতে আমরা এতই হৈ চৈ করতে শুরু করলাম যে একটু পরে চিৎকার
চেঁচামেচির মধ্যে কেউ কারো কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না। ফলে আরো জোরে জোরে কথা বলতে শুরু
করলাম। বদ্ধ রুমের ভেতর মনে হচ্ছে সার্কাস চলছে। হঠাৎ প্রচন্ড গর্জন শোনা গেল – “শাট
আপ”। আমার হাতে একটি তামার ক্যালরিমিটার ছিল। গর্জনের চোটে সেটা হাত থেকে মেঝেতে পড়ে
তাম্রনাদ করে উঠলো। আরো জোরে আরেকটি গর্জন শোনা গেল – “শাট আপ আই সে।“
এভাবেই আমাদের
প্রথম পরিচয় হলো ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের রাফ অ্যান্ড টাফ আদম শফিউল্লাহ স্যারের সাথে।
No comments:
Post a Comment