ষষ্ঠ
অধ্যায়
স্যাটেলাইটের গঠন
স্যাটেলাইট যুগের শুরু
থেকে এপর্যন্ত অসংখ্য স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়েছে। এদের আকার আকৃতি বিভিন্ন রকমের।
বিজ্ঞান ও কারিগরী দিক থেকে আমরা যতই উন্নত হচ্ছি - স্যাটেলাইটের গঠনও তত উন্নত
হচ্ছে এবং কর্মক্ষমতাও তত বাড়ছে। বৈজ্ঞানিক স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে যেমন আছে
একেবারে ছোট্ট বাস্কেটবলের আয়তনের স্যাটেলাইট - তেমনি আছে
ফুটবল খেলার মাঠের চেয়েও বড় আয়তনের স্পেস স্টেশন।
স্যাটেলাইটের গঠন, আকার ও আকৃতি মূলত
নির্ভর করে স্যাটেলাইটের কাজের উপর। যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্যাটেলাইটটি তৈরি করা হয় -
সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে যে যন্ত্রপাতি দরকার হয় সেগুলো সেই স্যাটেলাইটে
সংযুক্ত করা হয়। সেই যন্ত্রপাতিগুলো মহাকাশের পরিবেশে কার্যকর রাখার জন্য যে
কারিগরী সহায়তা দরকার সেগুলোও স্যাটেলাইটে সংযুক্ত করা হয়। এসবের জন্য যতটুকু
জায়গা লাগে - তার উপর ভিত্তি করে স্যাটেলাইট বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে।
স্যাটেলাইটের মূল কাজ বা মিশন সম্পন্ন
করার জন্য প্রধান যে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি স্যাটেলাইটে সংযুক্ত থাকে কারিগরী ভাষায়
তাদেরকে বলা হয় - পে লোড (pay load)। আর এই
পে-লোড স্যাটেলাইটের যে প্লাটফরমে থাকে সেই প্লাটফরম এবং স্যাটেলাইটের বাকি অংশের
নাম - বাস (bus)।
বিশ্বের প্রথম
স্যাটেলাইট সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটনিক-১ এর পে-লোড ছিল দুটো ছোট্ট ট্রান্সমিটার।
আর তার 'বাস' ছিল বাস্কেটবলের আয়তনের সমান অ্যালুমিনিয়ামের একটি গোলক। আমেরিকার
প্রথম স্যাটেলাইট এক্সপ্লোরার-১ এর পে-লোড ছিল গেইগার কাউন্টার, মাইক্রো মেটিওরাইট
ডিটেক্টর এবং আউটার অ্যান্ড ইনার টেম্পারেচার সেন্সর। আর বাস ছিল ২০ সেন্টিমিটার
ব্যাসের দুই মিটার লম্বা একটি ধাতব নল। বিশ্বের প্রথম টেলিকমিউনিকেশান স্যাটেলাইট
টেলস্টার-১ এর পে-লোড ছিল ট্রান্সমিশান অ্যান্টেনা। গোলাকার স্যাটেলাইটটির ব্যাস
ছিল তিন ফুটেরও কম। বিশ্বের প্রথম আবহাওয়া স্যাটেলাইট TIROS-1
(Television
and Infrared Observation Satellite-1) এর পে-লোড ছিল দুটো টিভি
ক্যামেরা। আর সেই স্যাটেলাইটের আকার ছিল সাড়ে তিন ফুট বাই দুই ফুট। আমেরিকার প্রথম
মহাকাশ স্টেশন স্কাইল্যাব-এর পে-লোড ছিল ছয়টি এক্স-রে টেলিস্কোপ, ক্যামেরা,
স্পেক্ট্রোমিটার, স্ক্যানার, মাইক্রোওয়েভ রেডিওমিটার, ইলেকট্রিক ফার্নেস,
ম্যাটেরিয়েল ডিটেক্টর ইত্যাদি। এই মহাকাশ স্টেশনের আকার বিরাট - প্রায় ২৫ মিটার বাই ৮ মিটার।
চিত্র ৩৫: মহাকাশ স্টেশন স্কাইল্যাব
বৈজ্ঞানিক
স্যাটেলাইটগুলো তৈরি করা হয় বিশেষ বিশেষ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে। তাদের
একটির সাথে অন্যটির পে-লোড ও 'বাস'-এর মধ্যে প্রচুর পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু ব্যবহারিক
স্যাটেলাইটগুলোর পে-লোড মিশন আলাদা আলাদা হলেও তাদের প্লাটফরম বা 'বাস'-এর গঠন
প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে। প্রায় সব কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটের প্লাটফরমের গঠন,
জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ট্র্যাকিং, টেলিমেট্রি, কমান্ড, মনিটরিং, পজিশানিং,
পয়েন্টিং, তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি একই রকমের হয়ে থাকে। স্যাটেলাইট
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিভিন্ন সাইজের স্ট্যান্ডার্ড স্যাটেলাইট
প্লাটফরম প্রস্তুত করে রাখে। তারপর অর্ডার অনুযায়ী সেখানে প্রয়োজনীয় পে-লোড স্থাপন
করে দেয়। এত বছর ধরে এপর্যন্ত যত
স্যাটেলাইট প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই কমিউনিকেশান এবং ব্রডকাস্টিং
স্যাটেলাইট। এই স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহার করছে বিভিন্ন সরকারি, বাণিজ্যিক এবং
মিলিটারি সংস্থা। বিজ্ঞান ও কারিগরী দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে স্যাটেলাইট প্লাটফরম
ডিজাইনের ক্ষেত্রেও বেশ উন্নতি হচ্ছে। প্লাটফরম ডিজাইনের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি
বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয় তা হলো:
- পে-লোড এর ক্ষমতা বৃদ্ধি
- স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কালের
মধ্যে জ্বালানি সরবরাহ
- স্যাটেলাইটের দিক
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
- স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনার
দিক নিয়ন্ত্রণ
- আয়ুষ্কাল শেষে কক্ষপথ থেকে
কীভাবে স্যাটেলাইটকে সরিয়ে নেয়া হবে
বর্তমানে অতিক্ষুদ্রাকৃতির ন্যানোস্যাটেলাইট বা মাইক্রোস্যাটেলাইট থেকে
শুরু করে বিশালাকৃতির স্যাটেলাইট প্লাটফরম তৈরি হচ্ছে। সবগুলো প্লাটফরমেই যে
উপাদানগুলো থাকে তা হলো:
- সোলার প্যানেল (বৈদ্যুতিক
শক্তির প্রধান উৎস)
- ব্যাটারি (জরুরি বিদ্যুৎ
সরবরাহের জন্য এবং সূর্যগ্রহণের সময় যখন সোলার পাওয়ার পাওয়া যায় না সেই সময়ের
জন্য)
- স্যাটেলাইটের উপাদানগুলোকে
একত্রে ধরে রাখার জন্য হালকা অথচ শক্ত ধাতব কাঠামো
- স্যাটেলাইটের যন্ত্রপাতি ও
ইলেকট্রনিক্সকে খুব ঠান্ডা বা খুব গরম থেকে রক্ষা করার জন্য কার্যকরী
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
- পৃথিবীর গ্রাউন্ড
কন্ট্রোলের সাথে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা
- স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে ধরে
রাখার জন্য যান্ত্রিক থ্রাস্টার এবং তার জন্য জ্বালানির উৎস
- পয়েন্টিং অ্যান্ড
ওরিয়েন্টেশান সিস্টেম - যার মাধ্যমে স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা এবং গ্রাউন্ড
অ্যান্টেনার মধ্যে সংযোগব্যবস্থা সবসময় কার্যকর থাকে।
বাস বা স্যাটেলাইট প্লাটফরমের প্রত্যেকটি সাব-সিস্টেমই খুব দরকারি। এর কোন
একটা যদি ঠিকমত কাজ না করে তাহলে স্যাটেলাইটের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং অনেক
ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
চিত্র ৩৬: কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটের
যান্ত্রিক উপাদান
স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর পে-লোড
বাংলাদেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশান স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এই স্যাটেলাইটের মূল কাজ হলো টেলিভিশন সম্প্রচার, ডাটা সরবরাহ এবং অন্যান্য যেসব কাজ কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটগুলো করে থাকে সেগুলো। এই স্যাটেলাইটের পে-লোডে আছে:
- রিপিটার (মাইক্রোওয়েভ রিসিভার, রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি
মাল্টিপ্লেক্সার, পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার, চ্যানেল প্রসেসিং ও সুইচিং)
- ২৬টি Ku-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার
- ১৪টি C-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার
- অ্যান্টেনা (রিফ্লেক্টরস, ফিডস, ফিড নেটওয়ার্ক্স,
সাপোর্ট স্ট্রাকচার এবং পয়েন্টিং মেকানিজম)
পে-লোডের মেকানিক্যাল,
ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিগুলো স্যাটেলাইটের 'বাস'-এর সাথে
সংযুক্ত থাকে। এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পৃথিবীর গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের কমান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হয়।
জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটগুলোর পে-লোড
সাধারণত একই ধরনের হয়ে থাকে। তবে এই কক্ষপথের স্যাটেলাইটগুলোর একটির সাথে অন্যটির
পার্থক্য থাকে ট্রান্সপন্ডারের সংখ্যা ও কম্পাঙ্কের উপর এবং কক্ষপথের কোন্
দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত তার উপর।
এবার পে-লোডের যন্ত্রপাতিগুলোর গঠন
কীরকম এবং কীভাবে কাজ করে দেখা যাক।
স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা
পৃথিবীর ভূমি থেকে জিওস্টেশনারি
স্যাটেলাইটের দূরত্ব ৩৬,০০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে পাঠানো
সিগনাল স্যাটেলাইটে গিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে অনেক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়।
ফলে সিগনাল অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়ক্ষেপণও অনেক বেড়ে যায়। স্যাটেলাইটের
ক্ষমতা নির্ভর করে স্যাটেলাইটের শক্তি উৎপাদন ক্ষমতার উপর। স্যাটেলাইটের শক্তি
উৎপাদনের প্রধান উৎস হলো সোলার প্যানেল। স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনায় পাওয়ার সাপ্লাই
আসে সোলার সেল থেকে।
স্যাটেলাইটের
অ্যান্টেনাগুলো সাধারণত উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে। [চিত্র ৩৬ দেখুন]। অ্যান্টেনাগুলোর
মূল কাজ হলো পৃথিবী থেকে প্রেরিত লো লেভেল সিগনাল রিসিভ করে সেটাকে পাওয়ার
অ্যামপ্লিফায়ারের সাহায্যে হাই লেভেল সিগনালে পরিণত করে আবার পৃথিবীতে ট্রান্সমিট
করা। এজন্য অ্যান্টেনার আকার যত বড় হয় তত ভালো। কিন্তু মহাকাশে স্যাটেলাইটের
জ্বালানির সীমাবদ্ধতা এবং অন্যান্য কারিগরী দিক বিবেচনা করে অ্যান্টেনার ব্যাস
সাধারণত ৭ থেকে ১০ ফুটের মধ্যে রাখা হয়। বেশিরভাগ কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটের C (কম্পাঙ্ক ৪ - ৮ গিগাহার্টজ) এবং
Ku
(কম্পাঙ্ক ১২ -১৮
গিগাহার্টজ) ব্যান্ড অ্যান্টেনা থাকে।
অ্যান্টেনার ফুটপ্রিন্ট
কোন স্যাটেলাইট
পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে তার সেবা প্রদান করতে পারে - সেই ভৌগোলিক অঞ্চলকে বলা হয় স্যাটেলাইটের
ফুটপ্রিন্ট। অনেক সময় এটাকে ডাউনলিংক ফুটপ্রিন্টও বলা হয়। স্যাটেলাইট
যখন কোন ডাটা ট্রান্সমিট করে - তখন সেটাকে বলা হয় ডাউনলিংক। আর স্যাটেলাইট পৃথিবীর
স্টেশন থেকে যখন কোন সিগনাল রিসিভ করে তখন সেটাকে বলা হয় আপলিংক।
চিত্র ৩৭: সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইটের
ফুটপ্রিন্ট
ডাউনলিংক ফুটপ্রিন্ট
কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরী দিক
হলো স্যাটেলাইটটির ডাউনলিংক ট্রান্সমিট পাওয়ার। ট্রান্সমিট পাওয়ারের উপর
নির্ভর করে সম্প্রচারের মান কেমন হবে। সম্প্রচারের মান উন্নত করার জন্য
স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা এবং গ্রাউন্ড স্টেশনের অ্যান্টেনার মধ্যে সংযোগ
উন্নতমানের হতে হবে। তার জন্য দরকার উন্নতমানের গ্রাউন্ড অ্যান্টেনা।
অ্যান্টেনার
ডাউনলিংক ডাটা ট্রান্সমিশানের মান নির্ধারণ করার একটি সূচক হলো ইফেক্টিভ
আইসোট্রপিক রেডিয়েটেড পাওয়ার (EIRP)। অ্যান্টেনা থেকে সম্প্রচারিত সিগনালের শক্তির উপর
নির্ভর করে EIRP। ই-আই-আর-পি যত বেশি
হবে অ্যান্টেনার ক্ষমতা তত বেশি হবে। অ্যান্টেনার ক্ষমতা যত বেশি হবে গ্রাউন্ড
স্টেশনের অ্যান্টেনার আকারও ছোট হতে থাকবে। অর্থাৎ স্যাটেলাইটের ডাউনলিংক যদি
দুর্বল হয় - তবে সেই সিগনাল ধরার জন্য অনেক বড় আকারের অ্যান্টেনার দরকার হয়, যা
অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। ই-আই-আর-পি মাপার একক হলো ডেসিবেল-ওয়াট (dBW)। অর্থাৎ প্রতি ওয়াট ক্ষমতা
খরচ করে কী পরিমাণ ডাটা কার্যকরভাবে ট্রান্সমিট করা যায়। ধরা যাক কোন স্যাটেলাইট
যে পরিমাণ সিগনাল ট্রান্সমিট করে তার বেশিরভাগই চলে যায় স্যাটেলাইটের ডাউন
ফুটপ্রিন্টের বাইরে। তার মানে সিগনালের অপচয় হয় অনেক। সেক্ষেত্রে ই-আই-আর-পি'র মান
কমে যাবে। স্যাটেলাইটের কভারেজ প্যাটার্ন ঠিকমত পরিকল্পনা করা হলে সিগনালের অপচয়
কমানো যায় এবং তাতে ই-আই-আর-পি বেড়ে যায়।
চিত্র ৩৮: স্যাটেলাইটের
আপলিংক, ডাউনলিংক, ও ফুটপ্রিন্ট
আপলিংক ফুটপ্রিন্ট
গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে যে সিগনাল স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়
তার যতটুকু স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা রিসিভ করতে পারে - তাকে বলা হয় স্যাটেলাইটের
আপলিংক ফুটপ্রিন্ট। এই আপলিংক ফুটপ্রিন্ট নির্ভর করে দুটো টেকনিক্যাল ফ্যাক্টরের
উপর: গেইন টু নয়েজ টেম্পারেচার র্যাশিও
(G/T), এবং
সেচুরেশান ফ্লাক্স ডেনসিটি (SFD)। এই সূচকগুলো হিসেব করার জন্য অনেক কারিগরী বিষয়
হিসেবে রাখতে হয়। তার মধ্যে আছে সিগনালের মধ্যে কতটুকু নয়েজ আছে, অ্যান্টেনার
তাপমাত্রা বাড়লে সেই নয়েজের পরিমাণ কীভাবে পরিবর্তিত হয় ইত্যাদি। এই সূচকগুলোর
ভিত্তিতে হিসেব করা হয় আপলিংক অ্যান্টেনার আকার কত বড় হবে, শক্তি কত হবে ইত্যাদি।
চিত্র ৩৯: গ্রাউন্ড স্টেশন অ্যান্টেনা
ট্রান্সপন্ডার
স্যাটেলাইটের কমিউনিকেশান চ্যানেলগুলোকে বলা হয়
ট্রান্সপন্ডার। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে চল্লিশটি ট্রান্সপন্ডার আছে, অর্থাৎ
চল্লিশটি কমিউনিকেশান চ্যানেল আছে। যার মধ্যে ১৪টি ট্রান্সপন্ডার হলো
C ব্যান্ডের, আর ২৬টি হলো Ku ব্যান্ডের। তৃতীয় অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন ব্যান্ডের
কম্পাঙ্ক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। C ব্যান্ডের কম্পাঙ্ক হলো ৪ থেকে ৮ গিগাহার্টজ, এবং Ku ব্যান্ডের কম্পাঙ্ক হলো ১২ থেকে ১৮ গিগাহার্টজ।
C-ব্যান্ড কমিউনিকেশান
স্যাটেলাইটের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ এই ব্যান্ডের কম্পাঙ্ক বৃষ্টির কারণে খুব
একটা বিঘ্নিত হয় না। ক্যাবল টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য এই ব্যান্ড খুব ব্যবহৃত হয়।
ভিস্যাট নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশানের জন্য Ku ব্যান্ড খুব উপযোগী।
ট্রান্সপন্ডারগুলো
কাজ করে অনেকটা বাঁকানো নলের মত নিয়মে। অর্থাৎ এটার একদিকে সিগনাল প্রবেশ করে আর
অন্যদিকে সিগনাল বের হয়। স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে যে আপলিংক সিগনাল রিসিভ
করে তা ট্রান্সপন্ডারের একদিকে ঢুকে অন্যদিকে বর্ধিত আকারে বের হয়ে ডাউনলিংকে চলে
যায়। ডাটা কম্প্রেশান ও মাল্টিপ্লেক্সিং-এর মাধ্যমে একটি ট্রান্সপন্ডারের ভেতর
দিয়ে অনেকগুলো অডিও চ্যানেল ও ভিডিও চ্যানেল সম্প্রচারের কাজ চলতে পারে।
চিত্র ৪০: ট্রান্সপন্ডারের ইলেকট্রনিক্স
প্রত্যেকটি ট্রান্সপন্ডারের ভেতর শুরুতেই থাকে একটি
ইনপুট ফিল্টার। এই ফিল্টার নির্দিষ্ট ব্যান্ডের সিগনাল বাছাই করে নেয়। তারপর সেই
নির্দিষ্ট সিগনালের বিস্তার বাড়ানো হয় প্রি-অ্যামপ্লিফায়ারের মাধ্যমে। তারপর সেই
বর্ধিত সিগনাল প্রবেশ করে একটি ট্রাভেলিং ওয়েভ টিউব অ্যামপ্লিফায়ারের (TWTA) মধ্যে। সেখানে বেতার তরঙ্গের
শক্তি বর্ধিত হয়। তারপর সেই বর্ধিত শক্তির বেতারতরঙ্গ আবার ফিল্টার করা হয় আউটপুট
ফিল্টারের মাধ্যমে।
রিপিটার
স্যাটেলাইটের ট্রান্সমিশান কভারেজ বাড়ানোর জন্য
অনেকগুলো ট্রান্সপন্ডার একসাথে যুক্ত হয়ে স্যাটেলাইটের রিপিটার সার্কিট ডিজাইন করা
হয়। রিপিটারে থাকে মাইক্রোওয়েভ রিসিভার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি মাল্টিপ্লেক্সার,
চ্যানেল প্রসেসিং ও সুইচিং সার্কিট, এবং ট্রান্সপন্ডার। একটি ট্রান্সপন্ডার
সেকেন্ডে ৯০ মেগাবিট ডাটা ট্রান্সমিট করতে পারে। সাধারণত একটি ট্রান্সপন্ডার
অনেকগুলো ভিস্যাট (VSAT - very small aperture terminal) নেটওয়ার্কে ডাটা ট্রান্সমিট করতে পারে। একটি
ট্রান্সপন্ডার দিয়ে ১২টি ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার সম্ভব।
আমাদের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করে ৪৮০টি ডিজিটাল
টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার সম্ভব। রিপিটার সার্কিটে কিছু অতিরিক্ত ট্রাভেলিং ওয়েভ
টিউব অ্যামপ্লিফায়ার (TWTA) থাকে। যদি কোন কারণে কোন
ট্রান্সপন্ডারের TWTA কাজ না করে তাহলে এই অতিরিক্ত
TWTAগুলো কাজে লাগে।
চিত্র ৪১: রিপিটারস
ট্রাভেলিং ওয়েভ টিউবগুলো বেতার তরঙ্গের সিগনালের শক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই ট্রাভেলিং ওয়েভ টিউবগুলো এক ধরনের ভ্যাকুয়াম টিউব যার একদিকে থাকে ইলেকট্রন গান (electron gun) যেখান থেকে ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এই ইলেকট্রনগুলোকে টিউবের ভেতর স্থাপিত চুম্বকের মাধ্যমে সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে বেতার তরঙ্গ প্রবেশ করালে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এবং রেডিও ওয়েভ মিলে বেতার তরঙ্গের শক্তি অনেক বেড়ে যায়। সিগনালের আউটপুট পাওয়ার এভাবেই বেড়ে যায় অনেকগুণ।
চিত্র ৪২: স্যাটেলাইটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ
স্যাটেলাইট বাস
কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটের প্লাটফরম বা 'বাস'-এর প্রধান যন্ত্রাংশগুলো হলো:
- জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা (Power
Subsystems)
- তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Thermal
Control Systems)
- অবস্থান নিয়ন্ত্রণ ও অভিযোজন ব্যবস্থা (Positioning
and Orientation Systems)
জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা
কক্ষপথে স্থাপন করার আগপর্যন্ত স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেল গুটানো থাকে। কক্ষপথে পৌঁছার পর স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেল পুরোপুরি খুলে যায় এবং সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। সোলার প্যানেল কাজ শুরু করার আগপর্যন্ত স্যাটেলাইটের ব্যাটারি ও তরল জ্বালানি থেকে কাজ চালানো হয়। সোলার প্যানেলের পাশাপাশি রিচার্জেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিসেট থাকে। সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ থেকে এই ব্যাটারিগুলো চার্জ নেয়। মহাকাশে সূর্যগ্রহণের সময় সোলার প্যানেলে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। সেই সময় স্যাটেলাইটে জ্বালানি সরবরাহ করা হয় এই ব্যাটারি থেকে। এই ব্যাটারিগুলো সাধারণত ১৫ বছর পর্যন্ত চলে। সেই কারণেই জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল সাধারণত ১৫ বছর হয়ে থাকে। এখন আরো উন্নত মানের এবং দীর্ঘজীবী ব্যাটারি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেগুলো তৈরি হয়ে গেলে স্যাটেলাইটের আয়ু আরো বাড়বে। স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেল ১২ থেকে ২০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে।
স্যাটেলাইটটি যখন কক্ষপথে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে তখন সোলার প্যানেলগুলোর দিক
সূর্যের দিক থেকে অন্যদিকে ঘুরে যেতে পারে। কিন্তু সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ
উৎপাদনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য সোলার প্যানেলগুলোকে সবসময় সূর্যের দিকে মুখ
করে রাখতে হয়। স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেলগুলোতে সেই ব্যবস্থা করা আছে। সোলার
প্যানেল থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য সান সেন্সর কাজ
করে।
যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন
হয় তার ৭৫% খরচ হয় পে-লোড নিয়ন্ত্রণে। স্যাটেলাইটের অ্যান্টেনা সবসময় পৃথিবীর
গ্রাউন্ড স্টেশনের রিসিভার অ্যান্টেনার দিকে থাকতে হয়। কক্ষপথে স্যাটেলাইটের
অবস্থান ও অ্যান্টেনার দিক নিয়ন্ত্রণেও প্রচুর শক্তি খরচ হয়।
তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
মহাকাশের পরিবেশ খুবই বিপজ্জনক। মহাজাগতিক বিকিরণ,
ভ্যান-অ্যালেন রেডিয়েশান বেল্টের বিকিরণ, সৌরঝড় ইত্যাদি তো আছেই, তার উপর আছে
তাপমাত্রার পার্থক্য। মহাকাশে প্রচন্ড ঠান্ডা, প্রায় পরম শূন্য[1]
ডিগ্রির কাছাকাছি। আবার স্যাটেলাইটের কক্ষপথে
সূর্যের শক্তি খুব প্রবল। সূর্যের তাপে স্যাটেলাইট প্রচন্ড গরম হয়ে উঠতে পারে। সেই
তাপে স্যাটেলাইটের যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক
যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বছরের পর বছর ধরে তাপমাত্রার এই প্রচন্ড
উঠানামার মধ্যে স্যাটেলাইটের সব যন্ত্রপাতি কার্যকর রাখা খুব সহজ কাজ নয়। স্যাটেলাইটে
কার্যকর তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে। স্যাটেলাইটের 'হিট পাইপ' স্যাটেলাইটের
ভেতরের অপ্রয়োজনীয় তাপ বাইরে পাঠিয়ে দেয়। স্যাটেলাইটে তাপ প্রতিফলক থাকে যেন
স্যাটেলাইটটি খুব বেশি তাপ শোষণ না করতে পারে। স্যাটেলাইটের স্বয়ংক্রিয় টেলিমেট্রি
সিস্টেম গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে সিগনাল পাঠায় যদি কোথাও কোন সমস্যা দেখা দেয়।
স্যাটেলাইটের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে স্যাটেলাইটের টেলিমেট্রি
সিস্টেম গ্রাউন্ড স্টেশনের এলার্ম বাজিয়ে দেয়। তখন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা দূর
নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যাবস্থা করেন।
অবস্থান নিয়ন্ত্রণ ও অভিযোজন ব্যবস্থা
আমাদের আকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা বাড়ছে তো বাড়ছেই। প্রত্যেকটি
স্যাটেলাইটের নিজস্ব সম্প্রচার ব্যবস্থা আছে। এক স্যাটেলাইটের সিগনালের সাথে অন্য
স্যাটেলাইটের সিগনালের ব্যাতিচার যেন না ঘটে তার জন্য সব বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা নিশ্চিত
করা হয়। স্যাটেলাইটের আপলিংক ও ডাউনলিংকের মধ্যে সংযোগ অব্যাহত রাখার জন্য
অ্যান্টেনার দিক সবসময় গ্রাউন্ড অ্যান্টেনার দিকে থাকতে হয়। জিওসিঙ্ক্রোনাইজড
কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে অনেক দূরে থাকে বলে সেখান
থেকে সিগনাল আসার সময় সিগনালের শক্তি অনেক কমে যায়। তাতে সিগনালের মান কমে যায়।
সিগনালের মান ঠিক রাখার জন্য অ্যান্টেনা হতে হয় অনেক বেশি শক্তিশালী। স্যাটেলাইট
যদি পৃথিবীর নির্দিষ্ট দিকে সিগনাল না পাঠিয়ে অন্যদিকে পাঠিয়ে দেয় তাহলে সেই
সিগনালের কোন মূল্য থাকে না। তাই স্যাটেলাইটের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
স্যাটেলাইটের দিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা হতে হয় নিখুঁত। স্যাটেলাইটের টেলিমেট্রি ও ট্র্যাকিং সিস্টেম নিখুঁতভাবে এই দায়িত্ব
পালন করে।
স্যাটেলাইটের ডাউনলিংক
ফুটপ্রিন্ট যদি অনেক বড় হয়, অর্থাৎ স্যাটেলাইট যদি অনেক বড় জায়গা জুড়ে সিগনাল
পাঠায় - তাহলে সিগনালের সামান্য অপচয় হলেও তেমন কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু
স্যাটেলাইট যদি তুলনামূলকভাবে ছোট কোন অঞ্চলে সিগনাল পাঠানোর জন্য স্থাপন করা হয়ে
থাকে, সেক্ষেত্রে দিকের সামান্য পরিবর্তনেও সিগনালের ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।
এরকম হলে অনেক সময় স্যাটেলাইটটি তেমন কোন কাজে আসে না।
মিডল আর্থ অরবিট ও লো আর্থ
অরবিট স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রেও দিক নিয়ন্ত্রণ নিখুঁত হতে হয়, তবে এই স্যাটেলাইটগুলো
তুলনামূলকভাবে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে বলে দিকনিয়ন্ত্রণ তুলনামূলকভাবে সহজ।
স্যাটেলাইটের দিক
নিয়ন্ত্রণ ও অভিযোজনের কাজ শুরু হয় একেবারে শুরুতে স্যাটেলাইট কক্ষপথে নির্দিষ্ট
দ্রাঘিমাংশে স্থাপনের মধ্য দিয়ে। জিও-স্যাটেলাইটগুলো একেবারে নিখুঁতভাবে কক্ষপথে
স্থাপন করা না গেলে অনেকসময় পুরো প্রক্রিয়াটিই ব্যর্থ হয়ে যায়।
ইওরোপিয়ান স্যাটেলাইট
অপারেটর ইউটেলস্যাট (Eutelsat)-এর কমিউনিকেশান স্যাটেলাইট W3B মহাকাশে প্রেরণ করা হয় ২০১০
সালের অক্টোবর মাসে। সফলভাবে উৎক্ষেপণ করার পর স্যাটেলাইটটিকে যখন জিওস্টেশনারি
অরবিটে স্থাপন করা হবে তখন স্যাটেলাইটের ফুয়েল ট্যাংক ছিদ্র হয়ে সমস্ত তরল
জ্বালানি বের হয়ে যায়। ফলে যে থ্রাস্টার ব্যবহার করে স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে স্থাপন
করার পরিকল্পনা ছিল, জ্বালানির অভাবে সেই থ্রাস্টার ব্যবহার করা যায়নি। পুরো
স্যাটেলাইট মিশনটি ব্যর্থ হয়। দুইশ মিলিয়ন ডলার বা বিশ কোটি ডলার মূল্যের স্যাটেলাইট
মুহূর্তেই মহাকাশের আবর্জনায় পরিণত হয়।
স্যাটেলাইটকে কক্ষপথের
নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করার জন্য স্যাটেলাইটের 'বাস'-এ প্রপালসান (propulsion) সিস্টেম বা
পরিচলন ব্যবস্থা থাকে। থ্রাস্ট বা যান্ত্রিক ধাক্কা দেয়ার জন্য অরবিট মেন্যুভার
থ্রাস্টার ও আল্টিটিউট অ্যান্ড অরবিট কন্ট্রোল থ্রাস্টার থাকে। রকেট স্যাটেলাইটকে
কক্ষপথের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে স্যাটেলাইটের অরবিট মেন্যুভার থ্রাস্টার
স্যাটেলাইটকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করে। কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটে এরকম একটি
হাই থ্রাস্ট মেন্যুভার থ্রাস্টার থাকে।
আবার কক্ষপথে স্যাটেলাইটটি
দিনের পর দিন নির্দিষ্ট কৌণিক বেগে ঘুরার সময় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে এবং
অন্যান্য কারণে কক্ষপথ থেকে মাঝে মাঝে সামান্য পরিমাণে সরে যেতে পারে। তখন
স্যাটেলাইটটিকে আবার কক্ষপথের সঠিক অবস্থানে নিয়ে আসতে হয়। সেই কাজটি করে
আল্টিটিউট অ্যান্ড অরবিট কন্ট্রোল থ্রাস্টার। কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটে সাধারণত
এরকম বারোটি থ্রাস্টার থাকে।
এই থ্রাস্টারগুলোর জন্য
তরল জ্বালানি লাগে। প্রপেল্যান্ট ট্যাংকে তরল জ্বালানি থাকে। স্যাটেলাইটগুলো
বিভিন্ন ধরনের তরল জ্বালানি ব্যবহার করে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাইড্রাজিন অথবা
হাইড্রাজিন/অক্সিডাইজার মিশ্রণ। এই জ্বালানির পরিমাণ নির্ভর করে স্যাটেলাইটের
প্রকৃতির উপর। জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটগুলোতে সাধারণত ১৫ বছর চলার মত
জ্বালানি থাকে। স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কার শেষে স্যাটেলাইটটিকে জিওস্টেশনারি আর্থ
অরবিট থেকে ঠেলে বের করে আরো উপরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্যও কিছু জ্বালানি লাগে। সর্বশেষ
জ্বালানিগুলো এই কাজে ব্যবহার করা হয়।
চিত্র ৪৩: কমিউনিকেশান স্যাটেলাইটের থ্রাস্টার
কক্ষপথে স্যাটেলাইটের দিক ঠিক রাখার জন্য স্যাটেলাইটে বেশ কিছু সেন্সর সংযুক্ত
থাকে। পৃথিবীর দিক নির্দেশ করার জন্য আর্থ সেন্সর, সূর্যের দিক নির্দেশ করার জন্য
সান সেন্সর এবং আরো কিছু নক্ষত্রের দিক নির্দেশক স্টার সেন্সর থাকে। এই সবগুলো
সেন্সরের সাহায্যে স্যাটেলাইটের দিক নিয়ন্ত্রণ করা হয় নিখুঁতভাবে।
No comments:
Post a Comment