Sunday, 18 April 2021

আইনস্টাইন স্মরণে

 


আজ ১৮ এপ্রিল ২০২১, আইনস্টাইনের ৬৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।

 

আলবার্ট আইনস্টাইনের জীবন ও কর্ম নিয়ে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায়। আইনস্টাইনের জীবদ্দশায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যে আইনস্টাইন-জীবনী প্রকাশিত হয়েছিল সেই Einstein: His Life and Times  লিখেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ফিলিপ ফ্রাংক। ফিলিপ ফ্রাংক ছিলেন আইনস্টাইনের চেয়ে মাত্র পাঁচ বছরের ছোট। তাঁর জন্ম হাঙ্গেরিতে, ১৮৮৪ সালের ২০ মার্চ। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী লুডভিগ বোল্টজম্যানের তত্ত্বাবধানে তিনি পিএইচডি করেছিলেন। ১৯১২ সালে আইনস্টাইন যখন জার্মান ইউনিভার্সিটি অব প্রাগের অধ্যাপক পদ ছেড়ে জুরিখ ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিলেন, তাঁর ছেড়ে আসা পদের জন্য তিনি যাঁর নাম সুপারিশ করেছিলেন তিনি হলেন ফিলিপ ফ্রাংক। ফিলিপ ফ্রাংক ১৯১২ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জার্মান ইউনিভার্সিটি অব প্রাগে অধ্যাপনা করেছিলেন। আইনস্টাইনের সাথে ছিল তাঁর বৈজ্ঞানিক-বন্ধুত্ব। কিন্তু ১৯৩৮ সালে হিটলারের বাহিনী প্রাগ দখল করে নেয়। অন্যান্য সব ইহুদীদের মতোই ফিলিপ ফ্রাংককেও ইওরোপ ছেড়ে আমেরিকায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। ফিলিপ ফ্রাংক যোগ দেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আইনস্টাইন-জীবনী। এই বই লেখার জন্য সেই সময় আইনস্টাইনের সাথে দিনের পর দিন অনেক কথাবার্তা বলেছেন তিনি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কে আইনস্টাইনের দর্শন ছিলো অনেকটাই আলাদা। ফিলিপ ফ্রাঙ্ক ১৯৪৯ সালে Review of Modern Physics-এ Einstein’s philosophy of science প্রবন্ধে দুটো উদাহরণের মাধ্যমে সেটা প্রকাশ করেছেন এভাবে:

 

“প্রায় দশ বছর আগে আমি আইনস্টাইনের সাথে আলোচনা করছিলাম যে চার্চের অনেক উঁচু পর্যায়ের পাদ্রীরাও তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আইনস্টাইন বলেন – তাঁর নিজের অনুমানে তিনি মনে করেন আপেক্ষিকতা সম্পর্কে যতজন পদার্থবিজ্ঞানী আগ্রহী, তারচেয়ে বেশি আগ্রহী হলেন চার্চের যাজকরা। আইনস্টাইনের কথায় আমি একটু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এটা তো আশ্চর্যের বিষয়। এই বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা কী? মৃদু হেসে তিনি উত্তর দিলেন, “যাজকরা প্রকৃতির সার্বিক নিয়মের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানীরা প্রায়ই সার্বিক ব্যাপারে আগ্রহী নন।“

 

আরেকদিন  আলোচনা করছিলাম একজন বিজ্ঞানীর কাজ সম্পর্কে – যিনি তাঁর গবেষণায় খুব একটা নাম করতে পারেননি। এই বিজ্ঞানী যে বিষয়ে গবেষণা করেন – সেই বিষয়টা ভীষণ জটিল, এবং সেখানে সাফল্য পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রায়ই দেখা যায় – সেই বিষয়ে নতুন কিছু জানার পরে বিষয়টা আরো জটিল হয়ে যায়। তাই তিনি গবেষণার ফল নিয়ে খুব একটা হৈ চৈ করতে পারেন না। ফলে তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে অবমূল্যায়ন করেন। আইনস্টাইন সব শুনে এই বিজ্ঞানী সম্পর্কে বললেন, “আমি এই ধরনের মানুষদের খুব শ্রদ্ধা করি। যেসব বিজ্ঞানী এক টুকরা কাঠ নিয়ে সেই কাঠের সবচেয়ে নরম ও পাতলা অংশটা খুঁজে বের করে সেখানে একটার পর একটা ছিদ্র করতে থাকেন, কারণ সেখানে ছিদ্র করাটা সহজ, এবং সেটা নিয়ে সারাক্ষণ হৈ চৈ করতে থাকেন – সেসব বিজ্ঞানীদের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই।“ 


2 comments:

  1. বিজ্ঞানীর চোখে আরেক বিজ্ঞানী। দুজনকেই শ্রদ্ধা!

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

      Delete

Latest Post

R. K. Narayan's 'The Grandmother's Tale'

There are many Indian authors in English literature. Several of their books sell hundreds of thousands of copies within weeks of publication...

Popular Posts