কথাশিল্পী শংকর তাঁর উপন্যাস থেকে চলচিত্র তৈরির ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন এভাবে - গল্প হলো লেখকের কাছে নিজের কন্যার মতো। আর সেই গল্প যখন সিনেমার জন্য দিয়ে দেয়া হয় - তখন মূলত কন্যাসম্প্রদান করা হয়। কন্যার বিয়ের পর যেমন পিতার আর তেমন কিছু করার থাকে না, তেমনি গল্প থেকে সিনেমা হলে সেখানে পরিচালকের উপর কাহিনিকারের তেমন কিছু বলার থাকে না। সত্যজিৎ রায় শংকর এর উপন্যাস থেকে দুইটি সিনেমা তৈরি করেছেন। জন অরণ্য এবং সীমাবদ্ধ। দুটি সিনেমার কোনটির কাহিনিতেই তেমন কোন পরিবর্তন তিনি করেননি। সত্যজিৎ রায় সবসময় এমন কাহিনিই বাছাই করেন যেন কাহিনির খুব বেশি পরিবর্তন না করতে হয়।
একটি বিদেশী কোম্পানির ফ্যান সেকশানের সেল্স চিফ শ্যামলেন্দু। খুব ধীরে ধীরে খুব ছোট অবস্থা থেকে কোম্পানির অনেক উঁচু লেভেলে উঠেছেন শ্যামলেন্দু। উঁচু পদে উঠতে যত কষ্ট করতে হয়, ধরে রাখতে আরো বেশি কষ্ট করতে হয়। এখানে কষ্ট মানে শারীরিক পরিশ্রম নয়। এখানে কষ্ট মানে কৌশল, অফিসের রাজনীতি আর প্রয়োজনে অন্যায় করার মানসিকতা। শ্যামলেন্দু ঠিক তাই করে - যতটা করতে হয় উপরে উঠার জন্য। মালিকের স্বার্থ দেখার জন্য কারখানায় গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়। তার পুরষ্কারও পায় সে। কোম্পানির ডিরেক্টর হয়। কিন্তু নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যায়। নিজের শ্যালিকার কাছে সে মুখ দেখাতে পারে না। কারণ আদর্শবান শ্যালিকা সব জেনে যায়।
সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা মানে বাস্তব চরিত্রের দৃশ্যায়ন। একটুও বাহুল্য নেই কোথাও, আবার ডিটেল্স এর এক ফোঁটা কমতি নেই কোথাও। কী চমৎকার অভিনয় বরুন চন্দ, শর্মিলা ঠাকুরসহ সবার।
ইউটিউব থেকে সিনেমাটি দেখতে পারেন লিংকে।
No comments:
Post a Comment